আসক্তি?Mr_Arrogant_4 #পর্ব_২৯

0
691

#আসক্তি?Mr_Arrogant_4
#পর্ব_২৯
#Writer_Sanjana_Shabnam_Fahmida

বন্ধ কক্ষ, নীরব পরিবেশ। একদম পিনপতন নীরবতা।‌ লাল বাতির আলো‌ যেন এই নীরবতাকে আরও ভ*য়ং*কর করে দিচ্ছে।

স্তব্ধতার মধ্যেই রি*ভ*লভারের ভেতরে গু*লি ভরার শব্দ যেন গাঁয়ে কাটা দেওয়ার মতো। অয়ন ভয়ে জমে আছে। ভয়ত বেঁধে রাখা লোকটিও পাচ্ছে কিন্তু সেটা প্রকাশ করছে না। যেন সে এমন কিছুর জন্য প্রথম থেকেই প্রস্তুত ছিল।

ব*ন্দু*কে গু*লি ভরা শেষ করে রওশন ঠোঁটে অদ্ভুত একটা হাঁসি টানল তারপর লোকটির দিকে তাকিয়ে বলতে শুরু করে, “কে পাঠিয়েছে তোকে?”

রওশনের প্রশ্নে লোকটি মাথা উঁচু করে তার দিকে তাকিয়ে বলল, “তোর এতো শত্রু যে তুই নিজে থেকে অনুমানও করতে পারিস না যে আমি আসলেই বা কার লোক?”

লোকটির এমন কথায় রওশনের চোয়াল শক্ত হয়ে গেল, হাতের মুঠো শক্ত করে রাগ সংবরণে রাখছে ও। “পাল্টা প্রশ্ন পছন্দ না আমার। শেষ সুযোগ দিচ্ছি, জাস্ট আন্সার মাই কোয়েশ্চন’স।”

লোকটি কিছুক্ষণ চুপ থাকলো তারপর অদ্ভুত ভাবে হেসে বলতে শুরু করল, “ যদি আমি সব সত্যি সত্যি বলে দেই তাহলে তাদের হাতে মর*ব আর যদি না বলি তবে তোর হাতে। দুই দিক থেকেই আমার মৃ*ত্যু
নিশ্চিত।”

“তার মানে তুই তোর লয়ালিটি নিয়ে ম*রতে চাচ্ছিস?” হাসলো রওশন। তারপর উঠে দাঁড়িয়ে অন্য পাশ ফিরে ব*ন্দু*কটা নাড়তে-চাড়তে বলে ও।

“ আই লাইক লয়াল পিপল*স বাট আফসোস তোর লয়ালিটি আমার শত্রুর প্রতি।” কথাটা বলার সাথে সাথেই টানা চারটা গুলির শব্দ হয়। অয়ন দু হাত দিয়ে নিজের কান চেপে ধরে।

রওশনের হাত আর শরীরে রক্তের ছিটে লেগে আছে। চেহারায় ও‌ কয়েকটা ছিটে ফোঁটা পরেছে। সামনেই লোকটি নিস্তেজ হয়ে পড়ে আছে। রক্তে একদম মাখামাখি অবস্থা তার।

রওশনের হাতের‌ রিভ*লভার থেকে ধোঁয়া উঠছে। অয়ত কান থেকে হাত সরিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়ায় তারপর কাঁপা কাঁপা পায়ে রওশনের পাশে এসে ওর হাত থেকে গা*নটা নিয়ে নেয়।

রওশন একটা‌ গভীর নিঃশ্বাস ফেলে নিজের পকেট থেকে রুমাল বের করল, তারপর নিজের হাতে লেগে থাকা র*ক্তের ছিটে গুলো মুছতে লাগলো।

অয়ন রিভ*লভা*রটা মুছলো তারপর সেটা আবার রওশনের হাতে দিয়ে দিতে দিতে বলল, “বস আমার মনে হচ্ছে ও শানের লোক।”

অয়নের কথা শুনে রওশন তার দিকে ফিরে তাকায়। তারপর নিজের রুমালটা অয়নের শার্টের পকেটে ঢুকিয়ে দিয়ে বলে, “ও শানের লোক ছিল না।”

“ত‌ তাহলে কার লোক ছিল?” ভয়ে ভয়ে বলল অয়ন।

“সেটাই তো তোমাকে খুঁজে বের করতে হবে। কী, পারবে তো?” রওশন অয়নের কাঁধে হাত রেখে বলল, অয়ন ভয়ে ভয়ে‌ মাথা নাড়ায়।

“গুড। এখন এই লয়াল কুকুরটাকে তার ঠিকানায় পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব তোমার।” কথাটা বলেই রওশন বেড়িয়ে গেল।

রওশন যেতেই অয়ন বুকে হাত রেখে জোরে জোরে নিঃশ্বাস ফেলল। পকেট থেকে র*ক্ত মাখা রুমালটা বের করে কাঁপা কাঁপা হাতে সেটা নিচে ফেলে দেয় ও। ওর হাতেও র*ক্ত লেগে গেছে, তাড়াতাড়ি নিজের হাত মুছে নিল অয়ন। “বসের এই রুপটা ভয়*ঙ্কর, ভ*য়*ঙ্করের থেকেও ভয়*ঙ্কর। গড্‌ কবে যেন আমিই হার্ট অ্যাটাক করে বসি।”

এইদিকে রওশন গাড়িতে উঠেই‌ নিজের ফোন বের করে কাউকে ফোন করলো। “আমার কিছু ইনফরমেশন লাগবে। আজকের মধ্যেই। ডিটেইলস পাঠিয়ে দিচ্ছি, যত দ্রুত সম্ভব কাজটা করো।”

ফোন কেটে দেয় রওশন। পাশের সীটে সেই বক্সটা রাখা যেটা নীলের রুমে রাখা হয়েছিল। বক্সটা খোলে রওশন। ভেতরে কিছু ছবি। ছবি গুলো আয়ুশের। আয়ুশকে যখন মা*রা হয়েছিল সে সময়ের ছবি। অবাক করার বিষয় কেউ সেই ঘটনার ছবি তুলেছে। আর সবচেয়ে অদ্ভুত বিষয়‌ যেই-ই ছবি গুলো তুলেছে তার উদ্দেশ্য ছিল নীলকে আয়ুশের মৃ*ত্যুর
বিষয়ে জানানো।

কিন্তু কেন? আর কেই-ই বা নীলকে এমন একটা কথা জানাতে চাচ্ছে। আর কী লাভ এতে তার। হাজারো প্রশ্ন মাথায় নাড়া দিচ্ছে রওশনের।

ভাগ্যবসত রওশন সময় মত বক্সটা খুঁজে বের করে ফেলেছিল। নাহলে খুব খারাপ কিছু হয়ে যেত।

যখন রওশন নীলের রুমে গিয়েছিল ফ্লোরে সেই খেলনা গাড়িটা চোখে পড়ে ওর। যে গাড়িটার উপর সে লোকটি পা রেখে পড়ে গিয়েছিল। রওশন খেয়াল করে পর্যবেক্ষণ করে। গাড়িটা ভেঙে গেছে। এমন মনে হচ্ছে কেউ গাড়িটার উপর পা রেখেছিল। রওশন আরও খেয়াল করে বেডের সেই সাইডের চাদরটা কুঁচকে আছে। যেন কেউ পড়ে যাওয়া থেকে বাঁচার জন্য চাদর খামচে ধরেছে। রওশন বুঝে যায় কেউ রুমে এসেছিল আর অবশ্যই মানুষটি আ*হত
হয়েছে। কিন্তু যেহেতু কেউ লুকিয়ে এসেছিল অবশ্য অযথা তো আসেনি। নিশ্চয়ই কোনো কারণে এসেছে।

রওশন দ্রুত পুরো রুম চেক করে। কিন্তু কোথাও কিছু পায় না সন্দেহ করার মতো। তখনই ও কিছু একটা ভেবে বেডের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়, একটু‌ খেয়াল করতেই ও সে বক্সটা দেখতে পায়।

বক্সটা খুলে রওশন। আর সেটার মধ্যে এই ছবি গুলো দেখতে পায়।

রওশন দ্রুত রুম থেকে বেরিয়ে আসে। বাইরে এসে বাড়ির প্রতিটা স্টাফ আর গার্ডদের দিকে লক্ষ করে। এর মধ্যেই ওর চোখে পড়ে একজন স্টাফ খুড়িয়ে হাঁটছে। পায়ে ব্যথা পেয়েছে সে। রওশনের আর বুঝতে এক মিনিটও সময় লাগল না যে এই লোকটাই গু*প্ত*চর।

রওশন উপরে দাঁড়িয়ে লোকটার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো। “ লুকোচুরি খেলাটার‌ সমাপ্তি টানার সময় চলে এসেছে।”

বর্তমানে,,

বড় সোফাটার এক কোণে আভি আরেক কোণে বসেছে সুবহা ওদের মাঝে বসেছে নীল। আর ওদের সামনের সিঙ্গেল কুরসিতে পায়ের উপর পা তুলে বসেছে রওশন।

আভি গোমড়া মুখ করে অসহায় ভাবে বলে উঠে, “ব্রো ট্রাস্ট মী আমার কোনো দোষ নেই, সব দোষ এই ম্যাডামের।” সুবহার দিকে আঙুল তাক করে বলল ও।

সুবহা চোখ বড় করে তাকায় আভির দিকে। তারপর রেগে উঠে দাঁড়িয়ে কিছু বলতে যাবে তখনই রওশনের রাগী মুখ দেখে চুপ করে যায় ও। একদম ভেজা বেড়ালের মতো মুখ করে চুপসে আবারো সোফার কোণ ঘেঁষে বসে পরে।

রওশন তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিয়ে তাকায় সুবহার দিকে তারপর দৃষ্টি দেয় আভির দিকে। আপাতত দু’জনেই চুপচাপ। রওশন একটু নড়েচড়ে বসল। শার্টের হাতা ফোল্ড করে কনুই অব্দি‌ তুলল, তারপর দু হাঁটুতে দু হাতের কনুই ঠেকিয়ে ঝুঁকে বসল ও।

একটু শব্দ করে গলা পরিষ্কার করে বলতে শুরু করে ও, “নাও টেল মী! কী‌ সমস্যা হয়েছে তোমাদের মধ্যে?”

আভি কিছু বলার জন্য মুখ খুলবে তার আগেই সুবহা বলতে শুরু করে। “ রওশন হয়ত আপনি জানেন না কিন্তু টাইসেল এনারই পোষা ছিল আর ইনিই সে লোক যে বেচারা টাইসেলকে ওখানে একা ঠান্ডার মধ্যে অসহায় অবস্থায় ফেলে রেখে গিয়েছিল। হার্টলেস লোক একটা।” আভির দিকে তাকিয়ে নাক ফুলিয়ে রাগি চোখে তাকিয়ে বলল সুবহা।

এইদিকে সুবহার কথায় আভি পুরো হতভম্ব, স্তব্ধ। সুবহা কী সব উল্টাপাল্টা কথা বলছে? সবকিছুই আভির মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে।

“ আর ইউ ম্যাড? কিসব উল্টাপাল্টা কথা বলছ? আমি এমন কিছুই করি নি। টাইসু আমার ছেলের মতো, আই কান্ট অ্যাবন্ড হিম লাইক দ্যাট।” তাজ্জবের সাথে কথা গুলো বলে আভি।

রওশন কী বলবে ভেবে পাচ্ছেনা। এমনিতেই ওর মাথায় হাজারটা চিন্তা তার উপর এখন আবার এই ঘটনা। যদিও আজকের এই বিবাদের জন্য ও নিজেই দায়ী।

এইদিকে,,,

বড় একটা ওয়াল-বোর্ডে রায়জাদা ফ্যামিলির প্রতিটি মানুষের ছবি লাগানো। রওশন, আভি, আদনান এমনকি নীল আয়ুশ অয়ন শান আর ওদের পরিচিত সবার।

সব গুলো ছবির সাথে স্টিকি নোট দিয়ে কিছু লিখা আর লাল রঙের মোটা সুতো দিয়ে প্রতিটা ছবি একটা আরেকটার সাথে কানেক্ট করা।

বোর্ডটার দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে একজন লোক। তার ডান হাতে একটা কালো রঙের বলপেন।
ছবি গুলোর দিকে তাকিয়ে কলমটা হাতে ঘুরাতে ঘুরাতে বলে সে, “রায়জাদা পরিবার সত্যিই রহস্যে‌ ঘেরা। এই পরিবারের প্রতিটা মানুষও একেকটা রহস্য।

ইনট্রাস্টিং! ভেরি ইনট্রাস্টিং। এই রহস্য সমাধান সহজ হবে না কিন্তু সহজ জিনিস আমার টাইপেরও না।”

লোকটি রওশনের ছবির উপর কলমটা দিয়ে মার্ক করে বলে,

“মিস্টার রওশন রায়জাদা! খুব শীঘ্রই দেখা করব তোমার সাথে।”

To be continued…

এখন দেখি আপনারা বলেন তো, নতুন মানুষটি নেগেটিভ চরিত্র নাকি পজিটিভ? কী মনে হয় আপনাদের??

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here