আসক্তি?Mr_Arrogant_4 #পর্ব_৩০

0
639

#আসক্তি?Mr_Arrogant_4
#পর্ব_৩০
#Writer_Sanjana_Shabnam_Fahmida

সুবহার মাত্র এক সপ্তাহ হয়েছিল রওশনের অফিসে জয়েন করেছে। এই অফিসের কড়া নিয়মকানুন, টাইম টেবিল ভালো করে আয়ত্তে আনতে এখনো হিমশিম হাচ্ছিল‌ ও।

এমন‌ ভাবেই সেদিন অফিসের জন্য লেট করে ফেলে সুবহা। ভ*য় আর আ*তং*ক নিয়ে তাড়াহুড়া করে অফিসে আসছিল ও।

সেদিনই রওশন টাইসেলকে নিয়ে অফিসে এসেছিল। টাইসলকে তার রেগুলার ভ্যাক্সিন দিবে তাই। রওশন ভেবেছিল অফিসের কাজ তাড়াতাড়ি শেষ করে টাইসেলকে নিয়ে বের হবে ও।

কিন্তু রওশন কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকার সুযোগে টাইসেল অফিস থেকে বেরিয়ে যায়। সবাই নিজেদের কাজে এতটাই ব্যস্ত ছিল যে কারো নজরই পরেনি‌ টাইসেলের উপর।

এইদিকে টাইসেল অফিস থেকে বেরিয়ে গ্ৰাউন্ড‌ ফ্লোরে চলে যায়, যেখানে গাড়ি পার্ক করা হয়। সেদিন প্রচুর পরিমাণে বৃষ্টি হচ্ছিল, এতটাই যে পার্কিং লটেও পানি ঢুকে পড়েছিল। অনেকটুকু জায়গায় পানি জমে গিয়েছিল।

টাইসেল বাইরে বের হতে নেয় কিন্তু বৃষ্টির পানি গাঁয়ে পড়তেই ভিতরে ঢুকে পড়ে ও। টাইসেল এমনিতেই পানিতে ভিজা অপছন্দ করে তাই বের হওয়ার চেষ্টা করলো না ও। উল্টো অফিসের ভিতরে যাওয়ার জন্য দৌড় দিতেই ছোট একটা গর্তে পড়ে গেল ও। গর্ত একদম ছোট ছিল তাই টাইসেলের বেশি ক্ষতি হয়নি বরংচো ও পুরো কাঁদা মাখা আর ভিজে চুপচুপে হয়ে যায়। ওর ফোলা ফোলা লোম গুলো নিমিষেই চুপসে একদম নুইয়ে পড়ে।

টাইসেল গর্তটা থেকে বেরিয়ে গাঁ ঝাড়া দেয় কিন্তু তেমন কোনো পরিবর্তন হয়না। ভিজে যাওয়ার ফলে ঠান্ডা লাগতে শুরু করে ওর। টাইসেল কাঁপা কাঁপা অবস্থায় ধীরে ধীরে হাঁটছে, কিন্তু হঠাৎ করেই ও বসে পরে।

এর মধ্যেই সুবহা চলে আসে। গাড়ি পার্ক করে দৌড়ে অফিসের ভেতরে যেতে নিলেই টাইসেলের দিকে নজর পড়ে ওর। সুবহা দ্রুত টাইসেলের সামনে যায়।ওর পা হালকা ছিলে গেছে, এজন্যই বসে পড়েছে ও।

অন্যদিকে অফিসের ভেতরে হৈচৈ লেগে গেছে। টাইসেল মিসিং, রওশন একেকটার ক্লাস লাগাচ্ছে। এতো গুলো মানুষের চোখের সামনে দিয়ে কিভাবে টাইসেল বের হলো? রওশন সব গুলোর ক্লাস নিয়ে অয়নকে নিয়ে বের হয় টাইসেলকে খুঁজতে।

কিন্তু পার্কিংয়ে এসে টাইসেলকে সুবহার সাথে দেখে আস্বস্ত হয় ও, সুবহা টাইসেলকে একটা কাপড় দিয়ে পরিষ্কার করাচ্ছে।

রওশন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল, ওদের কাছে যাওয়ার জন্য পা বাড়াল। কিন্তু হঠাৎ থেমে গেল ও, সুবহাকে টাইসেলের সাথে কতটা খুশি দেখাচ্ছে। টাইসেলের সাথে দুষ্টুমি করছে সুবহা আর মন খুলে খিলখিলিয়ে হাসছে। এতো দিনে এই প্রথম সুবহাকে এতোটা আনন্দে দেখছে রওশন।

সুবহা টাইসেলকে আদর করছে আর ইচ্ছে মতো সে মানুষটাকে বকছে যার পোষা টাইসেল। “হার্টলেস, ব্রেইলেস, কীভাবে একটা কুকুরকে এমন অবস্থায় এভাবে ফেলে যেতে পারে? মাথায় বুদ্ধি আছে কী নেই? যদি কখনো তাকে সামনে পায় আচ্ছা মতো শুনিয়ে দিবে।” কথা গুলো এমন ছিল।

রওশন মৃদু হাসে সুবহার এমন কথায়। সুবহা সামনে তাকাতেই রওশনকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখতে পায়। ও টাইসেলকে নিয়ে রওশনের সামনে চলে আসে। আর রওশনের কাছে তার নামেই নালিশ দিতে শুরু করে, বকাঝকা করতে শুরু করে।

সেদিন রওশন বলতে গিয়েও বলতে পারে না যে টাইসেল ওরই পোষা। একদম চুপ ছিল সেদিন ও, কারণটা আজও জানে না রওশন যে কেন সে সেদিন কিছু বলল না। রওশন সেদিন সুবহাকে ডে অফ দিয়ে টাইসেলকে নিয়ে ক্লিনিকে যেতে বলে, আর এটাও বলে আজ থেকে টাইসেলের দায়িত্ব তার।‌

টাইসেলের গলায় তার নামের চেইন থাকায় সুবহার টাইসেলের জন্য আর নতুন নাম রাখতে হয়নি। এর পর থেকে টাইসেল সুবহার সাথেই আছে।

বর্তমানে,,,

”কীহ? ইমপসিবল! ভাই তুই সিরিয়াসলি বলছিস? মজা করছিস নাতো?” – আশ্চর্যের চরম পর্যায়ে পৌঁছে কথা গুলো বলল আভি।

”তোর মনে হয় আমি মজা করছি?” – গম্ভীর গলায় উত্তর দিল রওশন।

“সিরিয়াসলি? তুই! রওশন রায়জাদা এমন স্টুপিডি করতে পারে আমি ভাবতেও পারিনি।” – হাসছে আভি। কিন্তু ওর হাসি যে রওশনের পছন্দ হচ্ছে না তা স্পষ্ট রওশনের চেহারা দেখে বুঝা যাচ্ছে।‌

“তুই একটা মেয়ের জন্য এমন বোকামি করতে পারিস ব্যপারটা সত্যিই অবিশ্বাস্য। লাইক‌ একটু ভেবে দেখ, তোর রাইভেলরা‌ যদি জানতে পারে যে তোর দ্বারাও এমন কোনো বোকামি সম্ভব তাহলে কী ভাববে তারা? তাদের নজরে তোর প্রেস্টিজ পুরোই পাঞ্চার।

এমনকি এতো দিন যারা তোর নাম শুনেও ভয়ে কাঁপত তারাও হাসবে তোর উপর।”

রওশন আভির কথা শুনে টেবিলে পিঠ ঠেকিয়ে দু হাত বুকে গুঁজে বলল – “হাসবে তো তখন যখন জানবে। তাদের জানাবে কে? তুই?”

“এত বড় দুঃসাহস করার সাহস আমার নেই।” – ভীতু হেসে বলল আভি।‌ পরক্ষনে‌ হালকা ক্ষেপে বলতে শুরু করে ও,

“কিন্তু ব্রো এটা কিন্তু ঠিক না, তুই এখন সব দোষ আমার ঘাড়ে চাপিয়ে আমাকে স্যরি বলতে বলছিস। লাইক সিরিয়াসলি? টাইসেলকে আমি তোর দায়িত্বে রেখে গিয়েছিলাম কিন্তু তুই উল্টো সে দায়িত্ব অন্য কারো ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়েছিস। রাগ করার উচিত আমার, ঝগড়া চেঁচামেচি করা উচিত আমার কিন্তু হচ্ছে উল্টোটা। এখানে আমাকেই কথা শোনানো হচ্ছে, আর তুইও আমাকে দিয়েই স্যরি বলাতে চাচ্ছিস।‌ বাট আই অ্যাম স্যরি‌ যে আমি কাউকে এমন কিছুর জন্য স্যরি বলব না যেটা আমি করিই নি। ভুলে যা।”

আভি দু হাত বুকে ভাঁজ করে মুখ ফুলিয়ে কথা গুলো বলল। রওশন এমন কিছুই যেন আশা করছিল।

কয়েক কদম এগিয়ে আভির সামনে এসে দাঁড়ায় রওশন তারপর ওর কাঁধে এক হাত রেখে ওকে বলতে শুরু করে, “আমি শুনেছি তুই নতুন একটা কেস পেয়েছিস কিন্তু কেসটা সল্ভ করতে পারছিস না?”

আভি একটু নড়েচড়ে বলল, “হ্যাঁ কারন ক্রিমিনালটা অনেক ইন্টেলিজেন্ট,একটাও প্রুফ খুঁজে পাচ্ছি না। বাট খুব শীঘ্রই পাব হাহ”

রওশন মৃদু হেসে বলল, “আমার কাছে এমন কিছু আছে যেটার সাথে তোর কেস এখনি সলভড্ হয়ে যাবে।”

চমকে উঠে আভি, চোখ বড় বড় করে রওশনের দিকে বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে বলে ও, “হোয়াট? রিয়েলি? কী জিনিস?”

রওশন সরে গিয়ে অন্য পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে বলল, “সেটার জন্য তোকে আমার কথা গুলো মানতে হবে।”

আভি এক মিনিটও নিল না ভাবতে, ঝটপট বলে উঠল ও “আই নো তুই কী বলছিস। ডোন্ট ওয়ারি শুধু একটা স্যরিই তো বলতে হবে। হয়ে যাবে। এমনিতেই সারাদিন কম স্যরি বলি না, আরও একবার নাহলে বলে নিব। ব্যপার না।”

“গুড”- রওশন বলল।

হঠাৎ আভি কিছু ভাবলো তারপর রওশনের পাশে গিয়ে ওর সাথে ঘেঁষে দাঁড়িয়ে বলতে শুরু করল, “ব্রো! তোর মনে হয়না চার্জ হিসেবে আমাকে আরও কিছু পে করা উচিত তোর? ফীস ইউ নো?”

ভ্রু কুঁচকে বলল রওশন, “কত?”

রওশনের কথায় আভিতো মহা খুশি, ফটাফট বলে ও “বেশি না দুই দিলেই চলবে।”

“মাত্র দুই?” – রওশন বলল।

“হুম, মাত্র দুই।” – হেসে বলল আভি।

রওশন কিছুক্ষণ ভাবে তারপর বলে, “ওকে ডান।”

আভি যেন চাঁদ হাতে পেলো। “থ্যাংক ইউ ব্রো,আই লাভ ইউ!” রওশনকে জড়িয়ে ধরে ও। রওশন আভিকে ছাড়িয়ে ওর দিকে চোখ গরম করে তাকায়। আভি রওশনের এমন রাগি লুক দেখে মুখ বাঁকিয়ে বলে, “ভাই আজকাল তুই কিন্তু একটু বেশিই চোখ গরম করছিস। আমি জাস্ট জড়িয়েই তো ধরেছি, কিস তো আর করি নি! অ্যাজ আ ব্রাদার একটু জড়িয়ে তো ধরতে পারি।”

রওশন কিছু বলল না, এই সুযোগে আভি আবারো লাফিয়ে রওশনের কাঁধ জড়িয়ে ধরে বলতে শুরু করে। “লাভ ইউ ভাই, ইউ আর দ্য বেস্ট!”

আভি আর রওশন লাইব্রেরীতে বসে কথা বলছে।‌আর এইদিকে সুবহা এখনো ড্রইংরুমে বসে। ওর সাথে নীলও বসে আছে। রওশন নীলকে সুবহার উপর নজর রাখতে বলে গেছে। যেন সুবহা আড়ি পেতে ওদের কথা শুনতে না পারে। নীলও নিজের দায়িত্ব খুব ভালো ভাবে পালন করছে, একদম কড়া ভাবে সুবহার উপর নজর রেখে।

সুবহা সোফায় বসেই গালে হাত রেখে দরজার দিকে তাকিয়ে বলে, “কী কথা হচ্ছে তাদের মধ্যে?”

নীলও সুবহার মতো গালে হাত দিয়ে দরজার দিকে তাকিয়ে বলে, “আমি কীভাবে জানবো? আমিও তো তোমার সাথেই বসে আছি।”

কিছুক্ষণ চুপ থেকে দু’জনেই এক সাথে হাফ ছাড়ল, তারপর আবার চুপ হয়ে গেল।

এইদিকে,,,

শান আর আদনান মুখোমুখি বসে আছে। শান আদনানের দিকে বিরক্তিকর দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে বলতে শুরু করে, “তোমার সাহসের তারিফ করতে হয় আদনান রায়জাদা, নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আমার সাথে দেখা করতে এসেছো। বাহ্! তা কী এমন বলার জন্য নিজের শত্রুর দরজায় কড়া নাড়তে চলে আসলে শুনি।”

আদনান শানের কথায় মুচকি হাসলো, তারপর পায়ের উপর পা তুলে বলতে শুরু করল। “কথায় আছে, শত্রুর শত্রু বন্ধু হয়। তুমি আর আমি শত্রু এটা সত্য কিন্তু এটাও সত্য যে রওশন আমাদের দুজনেরই শত্রু। তুমি বুঝতেই পারছ আমি কী বলতে চাচ্ছি।

শান সোজা হয়ে বসলো তারপর বলল, “কী বলবে স্পষ্ট করে বলো। জিলিপির মতো পেঁচানো কথা পছন্দ না আমার।”

আদনান হেসে বলতে শুরু করে, “শুনেছি তুমি রওশনকে মারার চেষ্টা করেছো কিন্তু প্রতিবারের মতো রওশনের হাতে নাকানিচোবানি খেতে হয়েছে তোমাকে। আমার কাছে একটা প্রস্তাব আছে। আমি চাই তুমি রওশনকে না মা*রো। কারন এর‌ থেকেও ভালো প্ল্যান আছে আমার কাছে।

তোমার কাছে পাওয়ার আছে আর আমার কাছে প্ল্যান। তাই দু’জনে একসাথে কাজ করলে অবশ্যই সফলতা আমাদেরই হাতেই‌ আসবে।”

শান‌ আদনানের কথায় ভাবনায় পড়ে গেল। খুব গভীর মনোযোগ নিয়ে ভাবছে ও। “প্ল্যান কী?” – প্রশ্ন করলো আদনান।‌

“প্ল্যানটা খুবই সিম্পল শান!” – মুখে শয়তানি হাসি টেনে উত্তর দিল আদনান।

To be continued……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here