আসক্তি #Mr_Arrogant_4,পর্ব_১৩

0
1987

#আসক্তি #Mr_Arrogant_4,পর্ব_১৩
#Writer_Sanjana_Shabnam_Fahmida

?
বারান্দায় কারো সাথে ফোনে কথা বলছে রওশন। কথা বলা শেষ হতেই পেছনে ঘুরে ও। কিন্তু হঠাৎ পিছলে ঘুরে সুবহাকে দেখে কিছুটা হচকে পা পিছিয়ে নেয় ও।

রওশনঃ তুমি আমার পেছনে কি করছিলে?( নিজেকে সামলে )

সুবহাঃ অপেক্ষা!

রওশনঃ অপেক্ষা? কিসের অপেক্ষা?

সুবহাঃ আপনার কথা বলা শেষ হওয়ার অপেক্ষা। আপনার সাথে গুরুত্বপূর্ণ কিছু কথা আছে আমার।

সুবহার কথায় রওশনের আর বুঝতে বাকি নেই যে ও কোন বিষয়ে বলছে।

সুবহা যেন সন্দেহ না করে তাই সাধারণ ভঙ্গিতেই বলল রওশন।

রওশনঃ কি বলবে তুমি?

সুবহাঃ আপনি কি আমাকে অফিস জয়েন করার আগে থেকে চিনতেন?

রওশনঃ নাতো!( সাথে সাথে )

সুবহাঃ তাহলে আপনি আমাকে আমার গ্ৰেজুয়েশনের দিন ফুল কেন দিয়েছিলেন?

রওশনঃ ফুল! গ্ৰেজুয়েশন! কি বলছো সুবহা? আমি কোনো ফুল দেই নি তোমাকে।

সুবহাঃ আপনি দেন নি কিন্তু নীল দিয়েছিল!

রওশনঃ ওয়েট ওয়েট ওয়েট! তুমি একবার বলছো আমি ফুল দিয়েছি আবার বলছো আমি দেইনি নীল
দিয়েছে! প্রথমে নিজের কাছে ক্লিয়ার করো যে কে দিয়েছে।

রওশনের কথায় সুবহা যেন বেকুব বনে যায়। ও নিজেই যেন কনফিউজড হয়ে যাচ্ছে এখন। রওশন সুবহার মুখের এক্সপ্রেশন দেখে আন্দাজ করতে পারছে যে সুবহা ওর কথায় আঁটকে পরছে। তাই সুবহাকে আরো বিভ্রান্ত করার জন্য রওশন বলতে শুরু করে।

রওশনঃ ওয়েট আমার কিছু একটা মনে পড়ছে।( মনে করার ভনিতা করে ) ওহ, নাও আই গেট ইট তুমি কোন দিনের কথা বলছো‌। আমি তোমাকে বলছি সেদিন কি হয়েছিল।

আমি আর নীল বাসায় ফিরছিলাম, তখনি ও কিছু ফুল দেখে পছন্দ করে। আমি ওকে ফুল গুলো কিনে দিয়ে বাসার দিকে যাচ্ছিলাম। পথেই কলেজের সামনে ও তোমাকে দেখতে পায়। একা দাঁড়িয়ে ছিলে তুমি। ও হঠাৎ করেই তখন গাড়ি থামিয়ে দৌড়ে বের হয়ে যায় আর ফুল গুলো তোমাকে দিয়ে ফিরে আসে।

সুবহাঃ কিন্তু ও আমাকেই কেন ফুল গুলো দিলো?

রওশনঃ আমিও এটাই জিজ্ঞেস করেছিলাম নীলকে। জবাবে ও শুধু বলল যে, তোমাকে স্যাড দেখাচ্ছিল তাই তোমার মন ভালো করার জন্য। এতো টুকুই, তাছাড়া আর কিছুই না। আর এই ঘটনায় আমার একদমই কোনো হাত ছিল না। আমি তো এই মাত্র জানলাম যে মেয়েটা তুমি ছিলে।

সুবহার যেন এখনো রওশনের কথায় বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে। রওশন যদিও একদম স্পষ্ট ভাবে সব বুঝিয়ে বলেছে তবুও ওর কথায় কিছু একটা মিথ্যা মিথ্যা গন্ধ পাচ্ছে সুবহা। সুবহার সন্দেহের দৃষ্টি রওশনের চোখ এড়োলো না। নীল ওকে যেভাবে বলতে বলেছিল ও সেভাবেই বলেছে। এখন সুবহা সেটাকে বিশ্বাস করবে কি না সেটা এখন শুধু সুবহার উপর নির্ভরশীল।

রওশনঃ এখন যেহেতু তোমাকে আমি সব ঘটনা খুলে বলেছি তোমার উচিত নিজের কাজে যাওয়া। গিয়ে নিজের কাজে মনোযোগ দাও। আমাকে জ্বালিয়ো না।

কথাটা বলেই রওশন দ্রুত পায়ে ওর কেবিনে চলে যায়। রওশনের এভাবে চলে যাওয়াটা যেন সুবহার সন্দেহকে আরও গাঢ় করে দিল।

সুবহাঃ হাহ্ আমাকে কি বোকা পেয়েছে? আমি কি ছোট বাচ্চা, যেভাবে বুঝাবে সেভাবেই বুঝবো? রওশনের একটা কথাতেও আমার বিশ্বাস হচ্ছে না। কিছু একটা তো লুকাচ্ছেন ইনি। কিন্তু কি? জানতে হবে আমায়।

?
রওশনের চেয়ারে দু হাত ছড়িয়ে বসে টিভি দেখছে নীল। রওশন কেবিনে ঢুকতেই টিভি থেকে চোখ সরিয়ে ওর দিকে তাকায় নীল।

রওশনঃ চলো নীল সময় হয়েছে আমাদের বের হতে হবে।

নীলঃ ওকে।( চেয়ার থেকে নেমে ) আচ্ছা আমরা কি সুবহাকেও আমাদের সাথে নিতে পারি না?

রওশনঃ একদম না। ও এমনিতেই আমার দিকে কেমন সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকাচ্ছিল। হয়তো আমার কথায় বিশ্বাস করতে পারছে না ও। আরেকটা কথা, সুবহা তোমার বড় সো ওকে নাম ধরে না আপি বলে ডাকো‌।

নীলঃ কিন্তু আপি অনেক ওল্ড ফ্যাশন! আর ওতো আমার থেকে ইট্টু বড় তাই আমি ওকে নাম ধরে ডাকতেই পারি। কিন্তু কথা সেটা না কথা হচ্ছে সুবহা তোমার কথায় বিশ্বাস করে নি কেন? এর দু’টো কারন হতে পারে। হয়তো সুবহা খুব চালাক নয়তো!

রওশনঃ নয়তো!( কপাল কুঁচকে )

নীলঃ তুমি খুব বাজে এক্টর।

রওশনঃ আর একটা কথা বললে ট্রিপ ক্যান্সেল করে দিব কিন্তু।

রওশনের কথায় নীল চুপ হয়ে যায় তারপর একদম ভদ্র ভাবে ওর পাশে গিয়ে দাঁড়ায়।‌

রওশনঃ গুড বয়। তোমার ক্যাপ কোথায়? ক্যাপ পড়ো বাইরে রোদ অনেক।

নীলঃ তুমি কত ওল্ড ফ্যাশন! ক্যাপ না হেড’পিস। আদিম যুগে টুপিকে ক্যাপ বলা হতো কিন্তু এটা মর্ডান যুগ। এখন ক্যাপ না হেড’পিস বলে টুপিকে। – বলেই সোফা থেকে ওর ক্যাপ নিয়ে মাথায় পড়ে আবারো রওশনের পাশে এসে দাঁড়ালো।

নীলের কথা গুলো শুনে রওশন কিছুক্ষণ স্তব্ধ হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে থাকলো তারপর বড় একটা নিঃশ্বাস ফেলে বিরবিরিয়ে বলল,,,

রওশনঃ ধৈর্য্য রওশন ধৈর্য্য। চলো এখন,,, – রওশন সামনে হাঁটছে ওর পিছু নীল।

কেবিন থেকে বের হতেই সুবহার সামনে পরলো রওশন। ডেস্কের পাশেই দাঁড়িয়ে ছিল ও। হঠাৎ রওশনের পেছন থেকে দৌড়ে সুবহার পাশে চলে গেলো নীল।

নীলঃ সুবহা তুমি যাবে আমাদের সাথে? ফ্যান্টাসি পার্কে যাচ্ছি আমরা। খুব ইন্জয় করবো। তুমিও চলো প্লিজ প্লিজ প্লিজ! – সুবহার হাত ধরে বায়না করে কথা গুলো বলছে নীল।

নীলের এমন কান্ডে রওশনের যেন ফেসে যাওয়া অনুভূতি হচ্ছে। ছেলেটাকে যেটার জন্য বারন করা হয় সেটাই বেশি বেশি করে। সুবহা নীলের থেকে চোখ সরিয়ে রওশনের দিকে তাকায়। রওশন চুপচাপ দাঁড়িয়ে। না হ্যাঁ বলছে, আরনা না বলছে। সুবহা রওশনের থেকে চোখ সরিয়ে নীলের দিকে তাকিয়ে ওকে বুঝিয়ে বলতে শুরু করে।

সুবহাঃ না নীল আমার আজকে অনেক কাজ, আমি অন্য কোনো দিন তোমার সাথে টাইম স্পেন্ড করবো, ঠিক আছে?

নীলঃ না না অন্য দিন না আজকেই। আজকে মানে আজকেই। ( জেদ করে )

নীল গাল ফুলিয়ে জেদ ধরে আছে সাথে সুবহার হাত এমন ভাবে ধরেছে যেন ছাড়লেই পালিয়ে যাবে ও। ওর এমন জেদ দেখে রওশনের দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকায় সুবহা। কিন্তু রওশন এখনো আগের ন্যায় চুপ করে আছে।

হুট করেই নীল পেছন ফিরে রাগি দৃষ্টিতে রওশনের দিকে তাকিয়ে ওকে ঝাড়ি মেরে বলতে শুরু করে।

নীলঃ তুমি ওকে ইশারা করছো কেন? আমি কিন্তু জানি তুমি ওকে ইশারা করে না করছো আমার সাথে আসার জন্য তাই না?

নীলের কথায় রওশন হচকিয়ে যায়। বেচারা চুপ করে দাঁড়িয়ে ছিল এর মধ্যেই কত বড় একটা অপবাদ এসে পরলো মাথায়।

আসে পাশে তাকায় রওশন, সব স্টাফরা এদিকেই আড়ি পেতে আছে। লজ্জা জনক বিষয়, যেখানে সবাই ওকে ভয় পেয়ে চলে সেখানে একটা পুঁচকে ছেলে ওকে ঝাড়ি মারছে।

রওশন কোনো উত্তর দিল না চুপ থাকলো। কারন ও জানে নীলকে কিছু বললে, ওকে আরো বেশি শুনতে হবে।

নীল আবারো সুবহার দিকে ফিরে তাকায় তারপর বলে,,,

নীলঃ তোমাকে যেতে হবেই। নাহলে, নাহলে আমি!

রওশনঃ নাহলে তুমি কি?

নীলঃ আমি ( ভেবে ) হ্যাঁ, আমি এখানেই বসে থাকবো। ( ফ্লোরে বসে পরে ) এক ইঞ্চিও নড়বো না আমি এখান থেকে।

নীল ফ্লোরে বসে পড়লো পা ছড়িয়ে। ওর এমন কাজে রওশন আর সুবহা দু’জনেই হতবাক। ছেলেটা সত্যিই নিজের কথা মানানোর জন্য সব করতে পারে।

রওশন কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে নীলের কান্ড দেখে, তারপর আচমকা ওকে কোলে তুলে নেয়। সাথে সাথে চেঁচিয়ে উঠে নীল।

নীলঃ আমি যাব না। নামাও আমায় বলছি, আমি সুবহাকে ছাড়া যাব না,,,,( ছোটাছুটি করে )

রওশনঃ তোমার যেতে হবে না। আমিই তোমাকে নিয়ে যেতে পারবো। ( শক্ত করে নীলকে ধরলো ও ) আর তুমি ( সুবহাকে ) ফলো মি! – নীলকে কোলে নিয়েই হাঁটা ধরলো রওশন। আর সুবহাও রওশনের কথা মতো ওর পিছু চলে গেল।

সুবহাকে সাথে আসতে দেখে ছুটাছুটি বন্ধ করে শান্ত হয়ে গেলো নীল।

নীলঃ গুড গার্ল! ( সুবহার দিকে তাকিয়ে হেসে। ) আর তুমি ( রওশনকে ) ব্যাড বয়!

গাড়ির সামনে এসে থেমে যায় রওশন সাথে সুবহাও। পেছন ঘুরে সুবহার দিকে তাকিয়ে বলে ও।

রওশনঃ ওপেন ইট,,,( গাড়ির দরজায় ইশারা করে )

সুবহা সাথে সাথে দরজা খুলে দিল। দরজা খুলতেই নীলকে ভিতরে বসিয়ে দিলো রওশন।

নীলঃ সুবহাপি তুমি এখানে এসে বসো আমার পাশে,,,

নীলের কথা শুনে রওশনের দিকে তাকায় সুবহা। রওশন মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিতেই নীলের পাশে গিয়ে বসে পরলো ও। রওশনও অন্য সাইডে বসলো।

মাঝখানে নীল আর দু পাশে রওশন আর সুবহা বসেছে।

ওরা বসতেই নীল ড্রাইভারকে চেঁচিয়ে বলতে শুরু করে।

নীলঃ তাড়াতাড়ি গাড়ি স্টার্ট দিন দেরি হয়ে যাচ্ছে।

ড্রাইভার সাথে সাথে গাড়ি স্টার্ট দেয়। পুরো পথ রওশন আর সুবহা চুপ ছিল, শুধু নীলই বকবক করে ওদের মাথা ধরিয়ে ফেলেছে।

?
ডেস্কে বসে গাড়ির নাম্বার দিয়ে মেয়েটার সব ইনফরমেশন বের করার চেষ্টা করছে আভি।

দরজার পাশেই ওর লাগেজ আর ব্যাগ লাইন করে রাখা। যদি কেউ হুট করে ভিতরে ঢুকে নিশ্চিত ব্যাগে পা বেজে পরবে সে। কিন্তু সেদিকে ওর খেয়াল নেই।
আজকে ও যেভাবেই হোক মেয়েটাকে খুঁজে বের করবেই। তাই সব ধরনের পন্থা অবলম্বন করছে ও গাড়ির মালিকের ইনফো বের করার জন্য।

অনেক চেষ্টার পর অবশেষে ইনফো গুলো পেলো আভি। কিন্তু গাড়ি যার নামে রেজিস্ট্রার তার নাম দেখে অবাক হয় ও।

আভিঃ অর্নব খাঁন?( অবাক স্বরে ) তারমানে এটা স্যারের গাড়ি?( কনফিউজড হয়ে ) কিন্তু ওটাতো একটা মেয়ে ছিল। ওয়েট ওয়েট এমন নাতো যে, স্যার মেয়েদের পোশাক পরে কোনো সিক্রেট মিশন করছেন?

কিন্তু এমনটা হলে তো আমি জানতাম। তাহলে ঘটনা টা কি হতে পারে?

ওহ মাই গড! – হঠাৎ চেঁচিয়ে দাঁড়িয়ে যায় আভি। চোখে মুখে বিস্ময় ওর।

আভিঃ এমন নয়তো যে স্যারের মেয়েদের পোশাক পড়া শখ? ওহ নো নো নো কিসব বলছি, ছিঃ ছিঃ এমন হবে কেন?

কিন্তু একটা কথা বুঝতে পারছি না স্যার কেন আমাকে লুকিয়ে লুকিয়ে স্টক করেন। আহ্ মাথা গুলিয়ে যাচ্ছে আমার। – দু হাত দিয়ে চুল গুলো এলোমেলো করে বসে পরে ও।

হঠাৎ দরজা খোলার শব্দ হয়। আভি দরজার দিকে তাকাতেই দেখে অর্নব খাঁন ভিতরে ঠুকছে।

দরজাটা খুলে ভিতরে ঢুকতেই লাগেজের সাথে বারি খেয়ে পড়ে যান অর্নব। সাথে সাথে পড়ে গিয়ে কোমর ধরে চেঁচিয়ে উঠেন তিনি। আভি থ হয়ে দাঁড়িয়ে।

অর্নবঃ আমার কোমর!!! কোন গাধার বাচ্চা এটাকে দরজার সামনে রেখেছে রে?( চেঁচিয়ে )

আভিঃ আ আমি! – অসহায় মুখ করে ডান হাত তুলে জবাব দিলো‌।

আভির মুখে অসহায়ত্ব। অর্নব খাঁন এখনো ফ্লোরে পরে আছেন। আভি বুঝতে পারছে না, গিয়ে অর্নবকে তুলবে নাকি তুলবে না। যদি তুলতে গেলে আরো শুনিয়ে দেয় তখন? বেচারা যেন কনফিউশনে ভুগছে।

আভিকে এখনো দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে অর্নব খাঁন এবার আরো জোরে চেঁচিয়ে বলতে শুরু করলেন।

অর্নবঃ আরে গাধার বাচ্চা ছাগল তোল আমায়! ( এক হাত তুলে বাড়িয়ে দিয়ে ) আমার মাজা ভেঙ্গে গেছে।

আভিঃ স স স্যরি স্যার, এখনি তুলছি,,,

আভি দ্রুত অর্নবের হাত ধরে তাকে টেনে তুলে দাঁড় করায়।

অর্নব দাঁড়ালেও সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারছে না। কোমরে এক হাত দিয়ে কুঁজো হয়ে আছেন। উনার অবস্থা দেখে আভিরই কান্না আসছে। না জানি এখন ওর সাথে কি হয়।

To be continued……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here