আসক্তি #Mr_Arrogant_4 #পর্ব_২০

0
1620

#আসক্তি #Mr_Arrogant_4
#পর্ব_২০
#Writer_Sanjana_Shabnam_Fahmida

?
রাত প্রায় এগারোটা ছুঁইছুঁই। অন্ধকার আকাশে চাঁদ মেঘের সাথে লুকোচুরি খেলছে‌। কখনো নিজের রশ্নি দিয়ে চারপাশটা উজ্জ্বল করে দিচ্ছে তো কিছুক্ষণের জন্য মেঘের আড়ালে লুকিয়ে অন্ধকার।

রুমের এক কোনে গুটিশুটি মেরে বসে আছে সুবহা। দু পা ভাঁজ করে বসে এক গালে হাত ওর। গভীর দৃষ্টি নিয়ে দেখছে ও রওশনকে। রওশন! যিনি এই মুহূর্তে দরজা খোলার জন্য বৃথা চেষ্টা করেই যাচ্ছেন।

চেষ্টা ব্যর্থ হতেই আবার একটু পর পর রেগে দরজায় লাথি বসাচ্ছে ও। প্রথম প্রথম রওশনের এমন কাজে‌ ভয় পেলেও এখন আর সেই ভয়টা কাজ করছে না। বরং হাঁসি পাচ্ছে ওর। ঠোঁটে ঠোঁট চেপে হাসি নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছে সুবহা কিন্তু লাভ হচ্ছে না। হাসিও পাচ্ছে আবার ভয়ও করছে। এই বুঝি রওশনের রাগ দরজা থেকে ট্রান্সফার হয়ে ওর উপর চলে আসে।

বেশ কিছুক্ষন দরজার সাথে ধস্তাধস্তি করে হাঁপিয়ে পেছন ফিরে রওশন। সুবহা সাথে সাথে মুখটা ছোট করে সোজা হয়ে বসে। ওকে দেখে মনে হচ্ছে যেন খুব ভয় আর আতঙ্কে আছে ও। কিন্তু সত্য তো এটা যে, ও সময়টা খুব করে উপভোগ করছে। কিন্তু বিষয়টা রওশনকে বুঝতে দেওয়া যাবে না তাই নিজের রিয়েকশন বদলে নেয় ও।

পেছনে ফিরে সুবহার দিকে তাকায় রওশন, বেচারি ভীতু মুখ করে বসে আছে।খারাপ লাগছে রওশের কাছে। চেষ্টা করেও এখান থেকে বের হতে পারছে না ওরা। বের হবেই বা কি করে? লোকটা বাইরে থেকে দরজা বন্ধ করে চলে গেছে। এই রুমটা সাউন্ড প্রুফ তাই ডাকাডাকি করেও লাভ নেই। তাছাড়া এই টাইমে অফিসে কেউই নেই হয়তো। কিভাবে কি করবে বুঝতে পারছে না রওশন।

দরজার দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সুবহার পাশে দেয়াল ঠেকে বসে পরলো ও। সুবহা আড়চোখে তাকায় রওশনের দিকে, তারপর আমতা আমতা করে বলার চেষ্টা করে ও,,,

সুবহাঃ রওশন একটা কথা বলি?

রওশনঃ হুম বলো, – সুবহার দিকে ঘুরে বলল ও,,,

সুবহাঃ ওই লোকটা কে হতে পারে?

রওশনঃ জানি না কিন্তু খুব শীঘ্রই জেনে যাব। কিন্তু তুমি চিন্তা করোনা, লোকটা যেই-ই হোক না কেন তোমার ফ্যামিলি মেম্বারদের মধ্যে কেউ ছিল না এটা সিউর।
রওশনের কথায় সুবহা কপাল কুঁচকে তাকায় তার দিকে। পাল্টা জবাবে কিছু বলতে গিয়েও থেমে যায় ও।

রওশনের ঠোঁটে মৃদু হাসির রেখা দেখা যাচ্ছে। এ হাসি যে কতটা বিরল তা একমাত্র সুবহাই জানে।

রওশন সামনের দিকে তাকিয়ে আছে, ঠোঁটে মৃদু হাসি ওর। এক পা ভাঁজ করে আরেক পা টান করে বসেছে ও। হাটুর উপর দু হাত।

আরামে দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে বসেছে ও। সুবহাকে চুপ থাকতে দেখে ঘাড় ঘুরিয়ে ওর দিকে তাকায় রওশন।

চোখ ছোট করে প্রশ্ন ভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে ও,,,

রওশনঃ হোয়াট! এভাবে তাকিয়ে আছো কেন?

সুবহা সাথে সাথে মুখ ঘুরিয়ে নেয়। ডানে বামে মাথা নাড়িয়ে বুঝায় ”কিছু না”।

রওশন কিছু বলল না। এমনিতেই মাথা ব্যথা করছে তার উপর এই গরম। মনে হচ্ছে যেন সেদ্ধ হয়ে যাচ্ছে ও।

আড়চোখে রওশনের দিকে তাকায় সুবহা। ঘেমে একদম চুবে গেছে ও। চুল গুলো অব্দি ভিজে গেছে।

সুবহা নিজের দিকে তাকায়। ওর ততটা গরম ‌লাগছে না আর না তেমন ঘেমেছে ও। কিন্তু রওশনের অবস্থা করুন। দেখেই বোঝা যাচ্ছে ও গরম সহ্য করতে একদমই পারে না।

রওশন ডানে বামে ঘাড় বাঁকিয়ে ব্যথা কমানোর চেষ্টা করছে। গরমে মাথা আর ঘাড় ধরে গেছে। সহ্য করা বেশ অসহ্যকর।

হঠাৎ রওশন নড়েচড়ে বসে। গাঁয়ের কোটটা খুলতে শুরু করে ও। রওশনের এমন কাজে হচকিয়ে যায় সুবহা। রওশন নিজের কোট খুলছে কেন হঠাৎ বুঝতে পারছে না ও।

রওশন কোটটা খুলে সাইডে রেখে দেয়। গাঁ পুরো ভিজে গেছে বেচারার। শরীরের শার্ট একদম লেগে গেছে শরীরের সাথে। চুল থেকে পা অব্দি পুরো অগোছালো হয়ে আছে।

সুবহা আড়চোখে দেখছে রওশনকে। যেন না চাইতেও ওর চোখ অবাধ্য হয়ে রওশনের দিকেই যাচ্ছে।

একটা মানুষকে অগোছালো ভাবেও এতোটা মুগ্ধকর লাগতে পারে তা রওশনকে আজ না দেখলে বুঝতোই না ও।

রওশন হঠাৎ সুবহার দিকে তাকাতেই সুবহা নিজের চোখ সরিয়ে নেয়। রওশন কিছুক্ষন স্থির দৃষ্টি নিয়ে সুবহার দিকে তাকিয়ে হুট করে ওর দিকে ঝুঁকে পড়ে।

সুবহা সাথে সাথে পেছনের দিকে এলিয়ে যায়। বড় বড় চোখ করে তাকায় ও রওশনের দিকে। রওশন ওর দিকে এভাবে ঝুঁকছে কেন হঠাৎ? কি চলছে রওশনের মনে? রওশনের এভাবে সুবহার দিকে হঠাৎ ঝুঁকা, সুবহার মনে ভয়ঙ্কর চিন্তাভাবনার সৃষ্টি করছে। হৃৎস্পন্দনের গতি দ্বিগুণ হচ্ছে। রওশনের চোখে চোখ পড়তেই কেঁপে উঠে ও। একদম পেছনের শেলফের সাথে লেগে গেছে সুবহা। রওশন আরেকটু কাছে আসতেই চোখ খিঁচে বন্ধ করে ফেলে ও। হাতের মুঠো শক্ত করে জামা খামছে ধরে আছে ।

কিন্তু পেছনের শেলফে নাড়াচাড়ার শব্দে চোখ খুলে তাকায় ও।

রওশন ওর দিকে ঝুঁকেছে ঠিকই কিন্তু হাত বাড়িয়ে পেছনের শেলফ থেকে কিছু নেওয়ার জন্য।

পেছন থেকে একটা ফাইল নিয়ে আগের মতো জায়গায় বসে পরে রওশন। ফাইলটা থেকে কাগজ পত্র বের করছে
ও। সুবহা শুধু তাকিয়ে দেখছে আর বুঝার চেষ্টা করছে যে রওশন কি করতে চাইছে।

কাগজ গুলো বের করা শেষে ফাইলটা সুবহার হাতে ধরিয়ে দেয় রওশন, তারপর আদেশের স্বরে বলে,,,

রওশনঃ বসে না থেকে বাতাস করো আমায়।

সুবহাঃ কিহ! ( হচকিয়ে )

সুবহা রওশনের কথায় হা হয়ে যায়। বিস্মিত দৃষ্টি নিয়ে বলে ও,,,

সুবহাঃ বাতাস করবো মানে?

রওশনঃ বাতাস করবে মানে বাতাস করবে! গরম লাগছে আমার দেখতেই পাচ্ছ। এখন এই মুহুর্তে এখানে ফ্যান বা এসির ব্যবস্থা তো করতে পারবো না। তাই আপাতত এইটার বাতাস দিয়েই কাজ চালাতে হবে।

সুবহা পুরোই থ হয়ে যায় রওশনের কথায়।কোথায় ও রোমান্টিক কিছুর আশায় ছিল, আর কোথায় এখন বাতাস করার চাকরি জুটে গেল।

এইদিকে,,,

রওশনের অফিসের বাইরে দাঁড়িয়ে আছে আভি আর নীল। সবে মাত্র পৌঁছেছে ওরা। বাসায় গিয়ে যখন জানতে পারে রওশন এখনো ফিরেনি, তখন অনেক চিন্তায় পরে যায় ওরা। সাধারনত কখনো রওশন রাতে এতো দেরি অব্দি বাইরে থাকে না তার উপর আবার ফোন‌ও ধরছে না।

আভি আর নীল আসতেই দারোয়ান গেইট খু্লে দেয়। কিন্তু ভেতরে ঢোকার আগেই আভি থেমে যায়। নীলের দিকে তাকিয়ে কনফিউজড লুক নিয়ে প্রশ্ন করে ওকে।

আভিঃ তুমি সিউর র‌‌ওশন ভাই অফিসেই আছেন?

নীলঃ হান্ড্রেট পার্সেন্ট।

আভিঃ এতো কনফিডেন্ট?

নীলঃ তুমি সত্যিই কি সিবিআই অফিসার পরীক্ষায় পাশ করে হয়েছো নাকি ঘুষ দিয়ে?

আভিঃ হোয়াট ডু ইউ মিন? ( ভরকে গিয়ে ) অব’ভিয়েসলি আমি নিজের যোগ্যতায় এই পদ পেয়েছি।

নীলঃ আমার তো সন্দেহ হয়! ( বিরবিরিয়ে বলল ) তোমাকে আমি লজিক বুঝাচ্ছি শোনো,

ভাইয়ার ফোন লোকেশন অফিস, তাছাড়া দারোয়ান আঙ্কেল‌ও বলল যে ভাইয়াকে অফিস থেকে বের হতে দেখা যায় নি, অ্যান্ড মোস্ট ইম্পর্টেন্টলি ভাইয়ার গাড়িও অফিসে পার্ক করা। এর মানে কি বের হয়? লজিকেলি ভাইয়া এখানেই আছে।

নীলের কথা গুলো শুনে আভির সব কনফিউশন দূর হয়ে যায়। বিস্ময় নিয়ে বলে ও।

আভিঃ আমি তো এভাবে ভেবেই দেখিনি!

নীলঃ স্যরি টু স্যে বাট, আমার মনে হয়না চাকরিটা তোমার বেশি দিন আর টিকবে। ( আড়ি চোখে তাকিয়ে )

To be continued………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here