আসক্তি Mr_Arrogant_4 #পর্ব_৩১

0
449

#আসক্তি Mr_Arrogant_4
#পর্ব_৩১
#Writer_Sanjana_Shabnam_Fahmida

‘স্যরি মিস সুবহা, আসলে ভুলটা আমারই ছিল। আমিই টাইসেলের খেয়াল‌ রাখতে পারিনি ঠিক মতো, এজন্যই সেদিন ও এভাবে হারিয়ে গিয়েছিল।’ – মুখটা একদম ছোট হয়ে গেছে আভির। তবুও গোমড়া মুখ নিয়েই কথা গুলো বলল ও সুবহাকে।

সুবহা কিছুক্ষণ চুপ থাকলো, ভালো ভাবে ভাবলো তারপর বলল ‘টাইসেল হারিয়ে গিয়েছিল? আপনি ওকে ইচ্ছে করে ওখানে ফেলে জাননি?’

‘একদমই না। টাইসু আমার বেবি আমি কিভাবে ওকে ফেলে দিতে পারি? সবকিছুই অসতর্কতার বসে হয়েছিল।’ – আড়ি চোখে রওশনের দিকে তাকিয়ে বলল আভি।‌

এতক্ষণে সুবহা এতটুকু তো বুঝতেই পারে যে আভি টাইসেলকে কতটা ভালোবাসে। তাই অযথা একটা ভুলের জন্য আভিকে আরো দোষারোপ করাটা নেহাতই বোকামি মনে করছে সুবহা।

বিষয়টা এখানেই শেষ করার জন্য বলে সুবহা – ‘ওকে ফাইন, আমি আর এই বিষয়ে কিছু বলব না আপনাকে। কিন্তু আমার একটা শর্ত আছে।’

সুবহার মুখে শর্তের কথা শুনে কপাল কুঁচকায় আভি, তারপর চোখ ছোট ছোট করে বলে – ‘শর্ত? কেমন শর্ত?’

‘এটাই‌ যে টাইসেল আমার সাথেই থাকবে। আর ওর উপর সর্বপ্রথম অধিকার আমারই।’ এক নিঃশ্বাসে কথা গুলো বলে ফেলল সুবহা। আর এইদিকে সুবহার এমন শর্তে আভির চোখ কপালে।‌ এমন না যে সুবহা টাইসেলের ভাগ চাইছে উল্টো ওতো পুরো টাইসেলকেই নিয়ে নিচ্ছে।

আভি সুবহার কথার প্রতিউত্তরে কিছু বলবে তখনই ওর চোখ যায় রওশনের দিকে। রওশন চোখ দিয়ে ইশারা করে কিছু বলছে।

রওশনের ইশারায় আভিকে রাজী হতে বলছে।কী আর করার, বেচারা আভির মুখের কথা মুখেই রয়ে গেল।

শুধু গোমড়া মুখ করে মাথা উপর নিচ করে সম্মতি দিল ও।

সুবহা মুচকি হাসলো‌। এর মধ্যেই রওশন বলে উঠে, – ‘নাও এভরিওয়ান গো টু ইউর রুম। রাত হয়েছে গেছে ঘুমাও।’

‘গুড নাইট!’ – সুবহা খুশি খুশি মেজাজে কথাটা বলে হাত নাড়িয়ে বিদায় দিয়ে নিজের রুমের দিকে চলে গেল।

‘এমন শোকাহত ভাব নিয়ে দাঁড়িয়ে না থেকে নিজের রুমে গিয়ে ঘুমা।’ আভির উদ্দেশ্যে বলল রওশন।‌ তারপর নীলের দিকে তাকিয়ে ওকে বলল, – ‘ইউ টু?’

ওরা দু’জনই চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকল। রওশন কিছুক্ষণ ওদের দিকে তাকিয়ে জোরে হাঁফ ছেড়ে উপরে চলে গেল। নীল দাঁড়িয়ে রইল আভির সাথে। হঠাৎ আভির কাছ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে নিচু স্বরে বলতে শুরু করে নীল, – ‘আমার খুব জানতে ইচ্ছে করছে, কিসের বিনিময়ে নিজেকে আর টাইসেলকে বিক্রি করলে?’

নীলের এমন কথায় আভি ওর দিকে কপাল আর ভ্রু কুঁচকে তাকায়, তারপর ওর প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে কথা ঘুরিয়ে বলে – ‘ও কী আমাদের বাসায় থাকছে?’ সুবহার উদ্দেশ্যে বলল আভি।

নীল নিজের ছোট ছোট হাত জোড়া বুকে ভাঁজ করে মাথা নাড়িয়ে উত্তর দিল, – ‘ইয়েস! ফ্রম টুডেই শী ইজ আওয়ার নেইবর। আই মিন রুম প্রতিবেশী।’

নীলের কথা শুনে আভি নিজের ভ্রু জোড়া উঁচু করে কিছু ভাবে, তারপর পকেটে হাত ঢুকিয়ে বিরবির করে বলে, ‘তার মানে এখন থেকে বাসায় বসেই রোমান্টিক মুভি দেখা যাবে। নো নো রোমান্টিক মুভি না, ভাই আর যাই করুক রোম্যান্স করতে পারবে না। যেই পরিমাণে খারুস ও, দেখা যাবে রোম্যান্স করতে গিয়ে পান থেকে চুন খসলেই ধমক মেরে বেচারিকে কাঁদিয়ে দিবে।’

কথা গুলো নিজে নিজেই বিরবির করে হাসছে আভি। কিন্তু নীল বোকার মতো তাকিয়ে আছে আভির দিকে। ও বুঝতে পারছে না কী এমন ভেবে হাসি পাচ্ছে আভির। কৌতুহল দমাতে না পেরে জিজ্ঞেসই করে ফেলে নীল।

‘কী ভেবে নিজে নিজে হাসছ তুমি?’

আভি নীলের প্রশ্ন শুনে ওর দিকে তাকিয়ে আরো জোরে হেসে দেয়, তারপর কিছু না বলেই নিজের রুমের দিকে হাঁটা ধরে।

আভির ওকে এভাবে ইগনোর করাটা যেন একদমই পছন্দ হলো না নীলের। নাক ফুলিয়ে বলতে শুরু করে ও,

‘ইগনোর? তাও আমাকে? এইযে অফিসার….’ – নীল আভির পেছনে চেঁচাতে চেঁচাতে ছুটে যায়। ওকে এভাবে নিজের দিকে আসতে দেখে দৌড় দেয় আভি, আর ওকে ধরার জন্য ওর পেছনে নীল।

পরের দিন,

ঘুম থেকে উঠেই নিজের বালিশের পাশে একটা খাম পায় নীল। ওর আর বুঝতে বাকি নেই যে এটা ওর ভাইয়ের পাঠানো চিঠি।

এই একটা চিঠির জন্য সারাটা বছর অপেক্ষা করে নীল। আর আজ অবশেষে ওর জন্মদিনের দিনে এই চিঠিটা পেয়েছে ও।

মুখ ভরা খুশি আনন্দ আর উত্তেজনা নিয়ে খামটা খোলে‌ নীল। এ বছরের চিঠিটা একটু বেশিই বড়, উৎফুল্ল হাসি নিয়ে খামটা খুলে চিঠিটা পড়তে শুরু করে নীল।

এইদিকে,

একটা বিশাল পরিত্যক্ত গোডাউন। যেখানে দেশের নামকরা এবং বড় রিয়েল এস্টেট কোম্পানির মালিক আইয়ুব খন্দকার তার কয়েকজন বডিগার্ড এর সাথে আছেন। অন্যদিকে তাদের বিপরীতে আছে সেই কোম্পানিরই দ্বিতীয় মালিক আর আইয়ুব সাহেবের ছোট ভাই শফিক খন্দকার। আর তাদের কিছুটা দূরেই দাঁড়িয়ে আছে বাংলাদেশের নামকরা এডভকেট অপূর্ব শেখাওয়াত।

অপূর্ব শেখাওয়াত! নজরকাড়া ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন মানুষ সে। আইনি জগতে এমন কোনো মানুষ হয়ত নেই যে এই নামটা না জানে। অপূর্ব এমন একজন মানুষ যাকে ভুলাই অসম্ভব তাদের কাছে। তার একমাত্র কারণ হচ্ছে অপূর্বর কাজ করার ধরন, ওর ব্যক্তিত্ব আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ওর কনফিডেন্স। আজ অবধি কোনো কেস হারে নি অপূর্ব, এমনকি হেরে যাওয়ার মতো কেসও সে নিজের চতুরতা আর
সাহস দিয়ে জিতে দেখিয়েছে। অবশ্য এটা নিয়ে নিজের উপর যেমন গর্ব ওর তেমনটাই অহংকার।

অপূর্ব যদিও একজন এডভকেট কিন্তু আইনি জগতের‌ বেশিরভাগই ওকে কোনো গুন্ডা বা মাফিয়ার থেকে কম ভাবে না।‌ কারন ওইযে একটাই, ওর কাজ করার ধরণ। ধীরে ধীরে ওর বিষয়ে বিস্তারিত জানা যাবে। এখন গল্পে ফেরা যাক।

হাতের হকি স্টিকটা দিয়ে সামনে দাঁড় করানো গাড়িটার কাঁচ গুঁড়িয়ে দিল অপূর্ব। মুহুর্তেই যেন চারপাশের ভাবমূর্তি অন্য‌ রকম হয়ে গেল। ওর সামনের মানুষজন সবাই হতভম্ব। আচমকা এমন কাজে সবাই যেন বিস্মিত, স্তব্ধ।‌

তারা যেন নিজেরাই কনফিউজড হয়ে গেছে অপূর্বের কাজে। একে একে গাড়ির‌ সবগুলো গ্লাস ভেঙ্গে শেষমেশ হেডলাইট দুটোও ভেঙ্গে ফেলল ও।

ভাঙচুর শেষ করে হকি স্টিকটা মাটিতে ঘেঁষাতে ঘেঁষাতে কিছুটা এগিয়ে আসলো সবার দিকে।

আইয়ুব সাহেব ওর পাগলামো দেখে চেঁচিয়ে উঠলেন, ‘এই তুমি পাগল হয়ে গেছ? কী করছ এসব হ্যাঁ? এভাবে গাড়িটা ভাঙচুর করছ কেন?’

তার কথায় অপূর্ব রহস্য ঘেরা একটা হাসি দিল। তারপর হকি স্টিকটা হঠাৎ উঁচিয়ে নিজের মাথায় আঘাত করল।

সাথে সাথে ডান পাশের কপালের উপর থেকে র*ক্ত চুঁইয়ে নামতে লাগল অপূর্বর মুখে, আর মুখ থেকে বেয়ে গলার নিচে।

কয়েক সেকেন্ড অপূর্ব চোখ বন্ধ করে ছিল, হয়ত আঘাতটা একটু জোরে লাগায় মাথা ঘুরিয়ে উঠেছিল। কিন্তু নিজেকে সামলে চোখ খোলে ও। চুলের নিচ থেকে অনবরত র*ক্ত পরছেই এখনো।

অপূর্ব কপালে হাত দিতেই ওর হাতেও র*ক্ত লেগে গেল। হাতটা নিচে নামিয়ে বাঁকা হেঁসে পেছনের গাড়িটার সাথে ঘেঁষে দাঁড়িয়ে বলতে শুরু করে ও,

‘দন্ডবিধি ১৮৬০ এর ধারা ৩০৭ অনুযায়ী কাউকে এটেম্পট টু মা*র্ডা*র বা খু*নের চেষ্টায় দশ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড আর অবশ্যই মোটা অংকের অর্থ দন্ডে দন্ডিত করা হয়। কিন্তু যদি সেই চেষ্টায় ভিকটিম আঘাতপ্রাপ্ত হয় তাহলে অপরাধীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডেও দন্ডিত করা হতে পারে।

এখন আপনারাই বলুন আপনাদের কী শাস্তি হতে পারে। প্রথমত আমি আঘাতপ্রাপ্ত আবার আমার গাড়িটাকেও ভাংচুর করা হলো আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আমি‌ একজন লয়্যার। একজন অন-ডিউটি উকিলের উপর আক্রমণ করেছেন আপনারা, তাকে আঘাতপ্রাপ্ত করেছেন মা*রার চেষ্টা করেছেন, তার গাড়ি ভাঙচুর করেছেন। গড! কতগুলো ক্রা*ইম একসাথে!

আহ্ আইয়ুব সাহেব অনেক খারাপ ভাবে ফেঁসে গেলেন যে।’

অপূর্বর এমন কথায় আইয়ুব সহ বাকী সবাই হতভম্ব। কী সব উল্টাপাল্টা কথা বলছে অপূর্ব? নিজেই নিজেকে আঘাত করল, নিজের গাড়ি ভাঙচুর করলো আর‌ এখন দোষ ফেলছে তাদের উপর। তারাতো ওকে টাচ পর্যন্ত করল না।

To be continued…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here