#আসক্তি #Mr_Arrogant_4
#পর্ব_21
#Writer_Sanjana_Shabnam_Fahmida
?
ভিতরে ঢুকেই রওশনের কেবিনে সার্চ করে আভি আর নীল। কিন্তু রওশন নেই সেখানে। ডেস্কের উপরেই ওর ফোন আর গাড়ির চাবি রাখা, ল্যাপটপও খোলা।
নীলঃ স্যী! বলেছিলাম না যে ভাইয়া এখনো অফিসেই আছে।
আভিঃ এই মুহুর্তে আমি শুধু তার ফোন আর গাড়ির চাবি দেখতে পাচ্ছি তাকে না।
( আশেপাশে চোখ বুলিয়ে ) তাই বলা মুশকিল যে তোমার আন্দাজ সঠিক কি ভুল।
আভির কথাটা যেন নীলের পছন্দ হলো না। আভির দিকে তাকিয়ে নাকটা কুঁচকে নেয় ও।
আভি নীলের মুখের রিয়েকশন দেখেও না দেখার ভান করে অন্য দিকে চলে যায়। ও নীলকে রাগাতে চায়না কিন্তু মুখ ফসকে যে কিভাবে এমন সব কথা বেরিয়ে আসে যা নীলকে রাগিয়ে দেয়। পিচ্চিটার রাগ যেন একদম নাকের ডগায় এসে থাকে। একদম অল্পতেই রেগে যায়। বলতে গেলে যে কথা গুলো ওর পছন্দ হয় না সে গুলোই ওর রাগের মুখ্য বিষয়। আর রাগ করলেই ছোট নাকটা কুঁচকে নেয়।
নীল আভির থেকে চোখ সরিয়ে রওশনের ডেস্কে উঠে বসে তারপর ল্যাপটপটা অন করে। প্রিভিয়েস ফাইল গুলো বের করতেই
ফুটেজ গুলোর ফাইল চলে আসে।
নীলঃ পেয়ে গেছি! ( চেঁচিয়ে )
নীলের এমন আকস্মিক প্রতিক্রিয়ায় আভি হচকিয়ে যায়। সাথে সাথে নীলের পাশে গিয়ে স্ক্রিনের দিকে তাকায় ও।
প্রায় কয়েক ঘন্টা আগের ফুটেজ। রওশন রুমটার ভিতরে যেতেই কেউ বেরিয়ে বাইরে থেকে লক করে দিয়েছে। এর পর আর রওশনকে বের হতে দেখা যায় নি।
আভিঃ ভাইকে কেউ রুমে লক করে দিয়েছে? ( হেসে ) যেই করেছে তার অবশ্যই নোবেল প্রাপ্য। কিন্তু আপাতত নোবেল ক্যান্সেল করে রেস্কিউ মিশনে কনসনট্রেট করি।
তাহলে আর দেরি না করে চলো নীল ভাইকে মুক্ত……কথাটা বলতে বলতে নীলের দিকে তাকিয়েই কথা বন্ধ হয়ে যায় আভির। নীল অলরেডি বেরিয়ে গেছে।
আভিঃ ছেলেটা খুবই ফাস্ট! ( বিরবির করে) আরে পিচ্চি ওয়েট আমিও আসছি…. দ্রুত নীলের পিছু ছুট দেয় আভি।
এইদিকে,,,,
দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে চোখ দুটো বন্ধ করে আছে রওশন। আর সুবহা! সে মুখে অমাবস্যার ছাপ নিয়ে হাতের ফাইলটা দিয়ে বাতাস করছে ওকে। একটু পর পর ঝিমিয়ে মাথাটা দেয়ালের সাথে লাগছে আর জেগে উঠছে সুবহা। ব্যথা পেয়ে মাথাটা ডলে আবারো বাতাস করায় মনোযোগ দেয় ও। মনে মনে হয়তো এ পর্যন্ত হাজারটা গালি দিয়ে ফেলেছে সুবহা রওশনকে।
কতক্ষন ধরে বাতাস করছে, হাত দুটো ধরে গেছে ওর। ঘুম আসছে কিন্তু ঘুমাতে পারছে না। ঘাড় ব্যথা করছে চোখ জ্বালা করছে। তার উপর হাত দুটো আর যেন চলতে চাইছে না, সুবহা যেন নিজের হাত দুটোর আকুতি করা কথা গুলো স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছে। যেন তারা একটু আরাম চাচ্ছে।
হঠাৎ বাতাস করা বন্ধ করে দেয় সুবহা।রেগে আছে ও। যথেষ্ট হয়েছে আর না। অফিস টাইম সেই কখন শেষ! কিন্তু ওকে দিয়ে এখনো খাটুনি খাটাচ্ছে রওশন। কিছুতেই এ অন্যায় মানা যায় না।
হাত দুটো ব্যথা হয়ে গেছে সুবহার। ঘুমও আসছে প্রচুর। চোখ দুটো জ্বলছে। তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিয়ে আড়চোখে তাকায় সুবহা রওশনের দিকে। কি সুন্দর আরামে ঘুমাচ্ছে। কতটা নিষ্পাপ আর মাসুম দেখাচ্ছে। কিন্তু রিয়েল লাইফে তো কোনো ডেভিলের থেকে কম না। তাও এমন তেমন ডেভিল না ভয়ঙ্কর বজ্জাত ডেভিল।
মুখ ফুলিয়ে দেয়ালের সাথে আরেকটু লেগে বসে মাথাটা ঠেকিয়ে চোখ দুটো বন্ধ করে নেয় সুবহা। চোখ বন্ধ করতেই যেন সারা রাজ্যের ঘুম ওর চোখে এসে জড়ো হতে শুরু করে। শরীর হালকা হয়ে যায়। মিনিটেই ঘুমের রাজ্যে হারিয়ে যায় সুবহা।
সুবহা গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। এমন সময় হঠাৎ মাথাটা কাত হয়ে রওশনের কাধে ঢলে পরলো।
হঠাৎ কাধে ভারি কিছু অনুভব হতেই ঘুম ভেঙ্গে যায় রওশনের। মিটমিট করে চোখ খুলতেই সুবহাকে দেখতে পায় ও। বেঘোরে ঘুমাচ্ছে সে। মুচকি হাসে রওশন। আরেকটু এগিয়ে এসে সুবহার মাথাটা ঠিক করে নিজের কাধে রাখলো রওশন।
?
দরজার সামনে আসতেই থেমে যায় নীল। হঠাৎ মনে পড়লো ওতো লক কোডই জানে না । কোড ছাড়া দরজা খুলবেই বা কি করে ও। দরজার সামনে দাঁড়িয়ে লক দেখছে আর কোড কি হতে পারে ভাবছে নীল।
এমন সময় আভি এসে দাঁড়ায় ওর পাশে।
আভিঃ কি হলো পিচ্চি? কোড জানো না? আফসোস! আগে এসেও লাভ হলো না। সেই আমার জন্যই অপেক্ষা করতে হলো।
নীলঃ আমি অপেক্ষা করছি না, দাঁড়িয়ে ভাবছি কোড কি হতে পারে।
আভিঃ আমি জানি। ( হাত তুলে )
নীলঃ তুমি জানো? ( অবাক হয়ে ) কিন্তু কিভাবে?
আভিঃ কারন কোডটা আমিই দিয়েছি। অবশ্য সেটা অনেক আগের কথা, কিন্তু আমি জানি ভাই কোড বদলায় নি।
নীলঃ এতো কনফিডেন্স? আমার মনে হয়না আগের লকটাই এখনো আছে।
আভিঃ চ্যালেঞ্জ করতে চাও? যদি আমি জিতি তোমাকে আমার কথা শুনতে এবং মানতে হবে।
নীলঃ আর যদি লক না খোলে তোমায় আমার কথা শুনতে আর মানতে হবে।
আভিঃ ডান,,,
আভি দ্রুত কোড টাইপ করে সাথে সাথে ডোর আনলক হয়ে যায়।
নীল যেন বাকরুদ্ধ। আভি মুচকি হাসছে। অবশেষে জব্দ করতে পারলো ও নীলকে। ভেবেই নিজের উপর গর্ব হচ্ছে ওর।
হেরে গিয়ে নীলের মুখ পুরো চুপসে যাওয়া বিড়ালের মতো হয়ে গেছে। নীলকে দেখে হাসি পাচ্ছে আভির, কিন্তু এই মুহুর্তে সেটা প্রকাশ করা যাবে না।
দরজার দিকে এক পলক তাকিয়ে নীলের তাকায় আভি। তারপর হালকা ভাবে ঝুঁকে নীলকে বলে ও।
আভিঃ তুমি এখানেই দাঁড়াবে, আগে আমি ভিতরে যাব। ঠিক আছে?
নীলঃ হুম। – উপরে নিচে মাথা দুলিয়ে।
আভিঃ গুড বয়, আই’ল বি ব্যাক স্যুন।
আভি একটা গভীর নিঃশ্বাস ফেলে দরজার খুলে ভেতরে ঢুকে পরে। ভেতরে ঢুকেই আভির চোখ কপালে উঠে আসে। মনে হচ্ছে যেন ইতিমধ্যে ওর চারপাশটা ঘুরতে শুরু করেছে। বজ্রপাতের ধ্বনি কানে ভেসে আসছে। দু আঙ্গুল দিয়ে ভালো করে চোখ দুটো ডলে আবার তাকায় আভি, নাহ এটা ওর ভ্রম না সত্যি। অবিশ্বাস্য স্বরে বলে উঠে আভি,,,
আভিঃ ইম্পসিবল! ( হা হয়ে )
To be continued….