আসক্ত?
জান্নাত
পর্ব : ১১
শুনসান নিরবতা পুরো বাড়ি জুরে! যে বাড়িতে সারাদিন হইচই তে ভর পুর থাকে তার ছিটে ফোটাও নেই!
বর্ষার বিদায়ের সাথে সাথে বাড়িটাও নিরবতায় ঢেকে গেছে! মেয়েকে বিদায় দিয়ে অসুস্থ হয়ে পরেছে সাজিদা! শাহেদও নিজের রুমে স্ত্রীর পাশে চুপ চাপ বসে আছে!
আর লাজুক, সে তো রুমের মধ্যে নিজের অফিসের ফাইল নিয়ে বসেছে!
শুধু টায়রাই এক মাত্র এখানে সেখানে ছটফট করে বেরাচ্ছে! তার ছোট্ট মনে যে নিস্তব্ধতার বিতৃষ্ণায় ভরে আছে!
এই বাড়িতে আসার পর, এমন ভাবে একটা দিন ও পার করতে হয়নি তাকে!
রিমপি,রিমি,নিশু,তিতলি তারা তো বর্ষার সাথে সাথেই চলে গেছে! গেস্ট জারা ছিলো তারাও কিছু চলে গেছি! বাকিরা গেস্ট হাউজে!
এই মুহূর্তে টায়রার কি পরিমান অসহ্য লাগছে বোঝাতে পারবে না সে!
মিউজিক বক্সে হালকা আওয়াজ করে গান ছেড়ে দিয়ে সে, রুমের সাথের মিনি ছাদের দোলনাটাতে গিয়ে শুয়ে পরলো!
কালো আকাশের দিকে তাকিয়ে টায়রা! টুকরো টুকরো মেঘ দেখাচ্ছে, আর তাদের আরালে উকি দিচ্ছে ছোট ছোট তারা গুলো!
সেভাবেই শুয়ে থাকতে থাকতে কখন যেনো ঘুমিয়ে পরলো টায়রা!
লাজুক টায়রার রুমে এসে তাকে না দেখতে পেয়ে চলে গেলো ছাদে! টায়রা শীতের কারনে গুটিশুটি মেরে দোলনাতে শুয়ে!
রুম থেকে হালকা আলোতে মুখটা দেখা যাচ্ছে তার! চুল গুলো এলো মেলো হয়ে মুখের উপর পরে!
শীতে কাপনি দিচ্ছে তা স্পস্ট বোঝা যাচ্ছে!
ধীর পায়ে টায়রার কাছে গিয়ে কোলে তুলে নিয়ে রুমে চলে এলো! তারপর বিছানায় শুইয়ে দিয়ে গায়ে ভালো ভাবে কম্বলটা জরিয়ে দিয়ে,চলে আসতে নিয়েও আবার ফিরে এসে টায়রার পাশে বসলো!
কপালের চুল গুলো সরিয়ে দিয়ে বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো ঘুমন্ত টাুয়রার দিক!
দু হাতে ভর রেখে ঝুকে গিয়ে টায়রার কপালে ছোট্ট করে একটা চুমু খেলো!
তারপর আবার কম্বলটা গায়ে ভালো ভাবে জরিয়ে দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে নিজের রুমে চলে গেলো লাজুক!
______________________
সকালে ঘুম থেকে উঠে নিজেকে বিছানায় দেখে বেশ অবাক হয়ে গেলো টায়রা! সে বুঝতে পারছে না যে এখানে কিভাবে এলো!
হঠাৎ একটা চেনা স্মেইল পেতেই তার বুকটা ধুকধুক করে উঠলো!
গায়ের টিশার্টটা কিছটা উচু করে নাকের কাছে নিয়ে শুকতেই লাজুকের শরীরের গন্ধ পেলো সে!
শিরশির করছে তার শরীর , ঝিম ঝিম করছে হাত পা! ভাবতেই কাল রাতে তবে কি লাজুক তাকে রুমে এনে শুইয়ে দিয়ে গেলো?
অদ্ভুত একটা কাজ করলো টায়রা এই প্রথম বার! কেনো যে এমনটা করলো সে নিজেও যানে! এরকম পাগলামির মানে কি?
গায়ের টিশার্টটা খুলে সে সেটা যত্ন করে আলমারিতে তুলে রেখে দিলো! কিন্তু কেনো?
শুধু মাত্র লাজুকের গন্ধ লেগে আছে বলে তাতে?
মাথা ঘোরাচ্ছে টায়রার! হঠাৎ করে কেনো জানি তার খুব লাজুক কে দেখতে ইচ্ছে করছে! তার সাথে সময় কাটাতে মন চাইছে!
রুম থেকে ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে ধীর পায়ে লাজুকের রুমের সামনে গিয়ে দাড়ালো!
দরজাটা খোলাই আছে! লাজুক রুমে বসে লেপটপে কিছু একটা করছে!
কালো টিশার্ট-এ বেশ লাগছে দেখতে,চুল গুলো ভেজা ভেজা! হয়তো শাওয়ার নিয়েছে!
কিছুটা সময় লাজুকের দিকে তাকিয়ে থেকে সেখান থেকে চলে গেলো!
নিচে নামতেই দেখলো শাহেদ সোফায় খবরের কাগজ পরছে! কিচেনের দিকে উকি মেরে দেখলো রেশমি হয়তো ব্রেকফাস্ট তৈরীতে লেগে! তা দেখে ভেতরে ঢুকলো টায়রা!
– রেশমি ফুল মা কোথায়?
– সে তো তার রুমে সকালে একবার নিচে এসেছিলো! আমাকে ব্রেক ফাস্ট বানাতে বলে আবার চলে গেছে!
– ও আচ্ছা!
– ছোট মনি আপনার কি কিছু লাগবে? হঠাৎ কিচেনে এলেন যে?
– না, এমনিই আসলাম! ফুল মা কিচেনে আছে কি না দেখার জন্য!
– ওওহ! আপনি টেবিলে গিয়ে বসেন! আমি ব্রেকফাস্ট বানিয়ে আনি!
কিচেনের বাসন-কোসন নাড়তে নাড়তে টায়রা বললো,
– তুমি গিয়ে অন্য কাজ করো! আজ আমি ব্রেকফাস্ট বানাবো সবার জন্য!
টায়রার কথায় রেশমি করুন মুখ করে বললো,
– ছোট মনি আপনি পারবেন না! হাত-টাত পুড়ে গেলে ছোট সাহেব বোকবে আমাকে!
– আরে কিছু হবে না! তুমি যাও তো! আমি এখন বড় হয়ে গেছি, আর ছোট নই!
– কিন্তু ছোট মনি..
– আবার?
– আচ্ছা ঠিকআছে! তবে কিছু লাগলে বলবেন!
রেশমি কিচেন থেকে চলে যেতেই, টায়রা লেগে পরলো ব্রেকফাস্ট বানানোর কাজে!
এক এক করে সব টেবিলের উপর এনে সাজিয়ে রাখলো টায়রা! পুরো মুখ লাল হয়ে গেছে, এতোক্ষন কিচেনে আগুনের কাছে থাকায়! গলার স্কার্ফটা কোমড়ে বাধা! চুল গুলো হাত খোপা করা!
অবাক চোখে দেখছে লাজুক টায়রা কে!
একে বারে ভিন্ন রকম লাগছে আজ তার পিচ্চি কে!
সাজিদা বেগম অবাক হয়ে জিগ্গেস করলো,
– টায়রা এই গুলো তুই রান্না করেছিস?
এক গাল হেসে মাথা নাড়িয়ে জবাব দিলো টায়রা,
– হ্যা!
– সে কি ? তুই কেনো এতো কষ্ট করতে গেলি আম্মু?
– আরে কি হয়েছে বলো করেছি তো? এমনিই একা একা কিই বা করবো বলো! ভালো লাগছিলো না তাই ব্রেকফাস্ট রেডি করলাম! তোমরা বস আমি তোমাদের কে সার্ভ করে দিচ্ছি!
টায়রার কথায় হেসে সাজিদা আর শাহেদ দুজনেই টেবিলে বসলো! লাজুকও সোফা থেকে উঠে টেবিলে গিয়ে বসলো!
টায়রা সবাই কে সার্ভ করে দিচ্ছে! হঠাৎ করেই সবার বিষন্ন মন ভালো হয়ে গেলো টায়রার জন্য!
আর লাজুক তো শুধু টায়রাকেই দেখে যাচ্ছে! কয়েক দিন যাবত সে টায়রার মধ্যে আমুল পরিবর্তন দেখতে পাচ্ছে!
আগের সেই পিচ্চি টায়রার স্বভাব এখন আর তার মাঝে খুব একটা দেখা যায় না!
বড় বড় একটা ভাব চলে এসেছে! এগুলোর জন্যই তো এতো অপেক্ষা তার!
শাহেদ খাবার মুখে দিয়ে বললো,
– বাহ্ অসাধারন রান্না করেছো মামনি!
মুচকি হাসলো টায়রা শাহেদের কথায়!
সাজিদা বললো,
– সত্যিই দারুন হয়েছে! তোর রান্নার হাত তো দারুন, একদম মায়ের মত!
টায়রা আড় চোখে লাজুকের দিকে তাকিয়ে দেখলো সে চুপ চাপ খাচ্ছে! মনটা ভারী হয়ে উঠলো টায়রার! আজ সে প্রথম রান্না করলো,অথচ লাজুক কিছু বললো না কেনো! অন্তত কেমন হয়েছে সেটাতো বলা উচিৎ ছিলো!
শাহেদ খেতে খেতে বললো,
– সবাই মিস করে গেলো তোমার রান্না!
শাহেদের কথায় টায়রা মৃদু হেসে জিগ্গেস করলো,
– দিদুন কবে ফিরবে?
– কালকেই হয়তো চলে আসবে!
– ওও আচ্ছা!
খাবার শেষে টেবিল ছেড়ে উঠতেই লাজুক বললো,
– সন্ধার পর আমরা চট্টগ্রাম-এ যাওয়ার জন্য বের হবো, রেডি হয়ে থেকো!
লাজুকের কথায় মাথা নাড়ালো টায়রা!
_______________________
সন্ধ্যা পেরিয়ে গেছে কিছুক্ষণ আগে! নিজের রুমে রেডি হতে ব্যাস্ত টায়রা! মনের মধ্যে একটা এক্সসাইটমেন্ড কাজ করছে ওর!
লাজুকের সাথে এতোটা সময় কাটাবে তাই ভেবে! আর তারউপরে শীতের রাত ব্যাপারটা আরো রোমাঞ্চকর করে তুলেছে!
ধূসর রঙের একটা কামিজ পরে নিলো সাথে ম্যাচিং ওড়নাটা খুজে গায়ে জরাতেই নিচে লাজুকের ডাক শুনতে পেলো!
বিছানা থেকে ফোন আর ব্যাগ টা নিয়ে ভোঁ দৌড়!
সাজিদার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে লাজুকের পেছন পেছন ছুটলো!
ড্রাইভিং সিটে লাজুককে বসতে দেখে টায়রা জিগ্গেস করলো,
– আপনি ড্রাইভ করবেন? ড্রাইভার কে নিয়ে গেলেই তো হয়!
টায়রার দিকে ভ্রূ কুচকে তাকালো লাজুক!
– কেনো আমার ড্রাইভিং-এ কি বিশ্বাস নেই? নাকি ভাবছো এক্সসিডেন্ট হতে পারে?
মাথা নাড়িয়ে টায়রার জবাব,
– না না তা ভভা..ভাববো কেনো? আ..আমি তো শুধু বলতে চাইছি এতো টা রার..রাস্তা আপনি কি ভাবে…
গাড়ি স্টার্ট দিয়ে লাজুক বললো,
– গাড়িতে উঠবে নাকি রেখেই চলে যাবো?
– উঠছিতো!
টায়রা মুখ গোমড়া করে গাড়িতে উঠে বসলো! লাজুকের দিকে না তাকিয়ে জানালার দিকে ফিরে গেলো সে!
আড় চোখে টায়রা কে দেখে বাকা হেসে গাড়ি স্টার্ট দিলো লাজুক!
শোঁ শোঁ বাতাস বইছে! অন্ধকার রাত! হাত পা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে টায়রার তাও জানালা খুলে বাইরে তাকিয়ে সে!
লাজুক টায়রার দিকে তাকিয়ে বললো,
– জানালার কাচ টা তুলে দেও!ঠান্ডা বাতাস আসছে, শরীর খারাপ করবে!
কোনো জবাব দিলো না টায়রা চুপ করে রইলো যেমন ছিলো তেমন!
হঠাৎ গাড়ি থেমে যেতেই জানালা থেকে মুখ সরিয়ে লাজুকের দিকে তাকালো টায়রা!
ততক্ষণে লাজুক গাড়ি থেকে বেরিয়ে গেছে!
– কই যাচ্ছেন আপনি?
– চুপচাপ বসে থাকো! এক পাও নোড়বে না! আমি গাড়ি লক করে দিয়েছি!
টায়রাকে আর কিছু বলতে না দিয়ে হনহন করে লাজুক চলে গেলো ওখান থেকে!
অবাক টায়রা! লাজুক কি রেগে গেলো তার কথা না শোনায়!
বেশ কিছুক্ষণ পর লাজুক ফিরে এলো, হাতে বড় সড় সাইজের একটা প্যাকেট নিয়ে!
গাড়িতে ঢুকে বসতেই সেটা টায়রাকে দিয়ে বললো,
– এখানেই দোকান-পাঠ শেষ! এর পর মেইন রোডের পাশে আর কিছু পাওয়া যাবে না!
তাই আপাদতো এগুলো খেয়ে পার করো!
অবাক টায়রা প্যাকেটটা খুলে দেখলো, চিপস,বিস্কুট,চকলেট, জুস,পেপসি এরকম নানান জিনিসে ভর্তি করে এনেছে!
– এ..এতো কিছু কেনো?
ড্রাইভ করতে করতে লাজুক জবাব দিলো,
– খেতে মন না চাইলে ফেলে দেও!
কোনা চোখে তাকিয়ে টায়রা লাজুকের দিকে!ভাবতে লাগলো সে এই লোকটা কি একটু ভালো ভাবে কথা বলতে শিখবে না?ঘাড় ত্যারা কোথা কার!
To be continue…………