আসক্ত, পর্ব -১৭

0
1227

রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে, টায়রাকে গাড়িতে বসিয়ে নিজেও উঠে গাড়ি স্টার্ট দিলো লাজুক!
আড় চোখে লাজুকের দিকে তাকিয়ে টায়রা প্রশ্ন করলো,
– আমরা কোথায় যাচ্ছি?
কোনো জবাব দিলো না লাজুক, তেমন ভাবেই ড্রাইভ করে যাচ্ছে! তা দেখে টায়রা আবার বলল,
– কিছু জিগ্গেস করছি তো আমি!
– তোমার প্রশ্নের জবাব দেওয়া প্রয়োজন মনে করছি না!
মুখ বাকিয়ে বিচ্ছিরি মেজাজ নিয়ে, জানালার দিকে সরে বসে বাইরে তাকিয়ে গেলো টায়রা! সে জানে লাজুক কে কোনো কিছু জিগ্গেস করে লাভ নেই! কারন তার থেকে কোনো উত্তরই পাবে না!
মানুষ যতই চেঞ্জ হোক না কেনো, তার অভ্যাস থেকেই যায়! লাজুকও ঠিক তেমন!

চারদিক ঘুটঘুটে অন্ধকার হয়ে এসছে! নিজের মত করে সামনে তাকিয়ে ড্রাইভ করে যাচ্ছে লাজুক! তার পাশেই টায়রা গাল ফুলিয়ে বসে আড় চোখে লাজুক কে দেখে যাচ্ছে ! কথা নেই বার্তা নেই, সেই কখন থেকে শুধু ড্রাইভই করে যাচ্ছে!

কিছু জিগ্গেসও করছে না! কেনো করবে সে তো রেগে আছে লাজুকের উপর! টায়রা ভেবে নিয়েছে সেও আর লাজুকের সাথে কথা বলবে না!
সব সময় তাকেই কেনো লাজুকের গোয়ারামি সহ্য করতে হবে? হুহ!

হঠাৎ লাজুক গাড়ি থামিয়ে টায়রাকে বলল,
– গাড়িতে বস! আমি 10 মিনিটের মধ্যে আসছে!
টায়রা অবাক হয়ে লাজুকের দিক তাকিয়ে প্রশ্ন করলো,
– কোথায় যাচ্ছেন আপনি?
– একটু কাজ আছে! তুমি অপেক্ষা কর! গাড়ি থেকে বেরবে না!
মাথা নাড়ালো টায়রা লাজুকের কথায়! গাড়ি লক করে দিয়ে সামনে শপিং মলের দিকে চলে গেলো লাজুক! আর সে দিকে তাকিয়ে রইলো টায়রা!

বেশ খানিক্ষুণ পর লাজুক বেরিয়ে এলো শপিং মল থেকে, হাতে কিছু শপিংব্যাগ নিয়ে! শপিং ব্যাগের দিকে তাকিয়ে ভাবতে লাগলো টায়রা “এগুলোতে আবার কি?”
কিন্তু মুখে কিছুই বলল না!
ব্যাগ গুলো ব্যাকসিটে রেখে লাজুক গাড়িতে স্টার্ট দিলো!

কিছুক্ষণ পর আবার গাড়ি থামিয়ে নেমে দাড়িয়ে টায়রাকে বলল,
– বাইরে এসো!
টায়রা গাড়ি থেকে বেরিয়ে দাড়াতেই লাজুক ব্যাক সিটে রাখা ব্যাগ গুলো নিয়ে টায়রার হাত ধরে সামনের দিকে হাটতে লাগলো!
এবার আর টায়রা চুপ থাকতে পারলো না! জিগ্গেস করেই ফেললো,
– কোথায় যাচ্ছি আমরা?
– গেলেই দেখবে!
আর কিছু বলল না টায়রা! লাজুকের পিছন পিছনই যেতে লাগলো!

একটা বিউটি পার্লারে ঢুকলো লাজুক টায়রাকে নিয়ে! টায়রাকে দাড় করিয়ে রেখে সামনে একটা মেয়ের কাছে গিয়ে কি কি যেনো বলে হাতের ব্যাগ গুলো ধরিয়ে দিলো!
মেয়েটা মুচকি হেসে টায়রার দিকে এগিয়ে গিয়ে বলল,
– আমার সাথে আসুন ম্যাম!
টায়রা অবাক হয়ে জিগ্গেস করলো,
– কে..কেনো?
পাশ থেকে লাজুক বলল,
– চুপচাপ ওনার সাথে যাও!
টায়রা করুন চোখে লাজুকের দিক থেকে চোখ সরিয়ে সামনের মেয়েটার দিকে তাকাতেই, সে বলল,
– ম্যাম প্লিজ কাম!
কি আর করার ব্যাধ্য হয়ে টায়রাকে মেয়েটার সাথে যেতে হলো!

আয়নাতে নিজেকে দেখে অবাক হয়ে চোখ ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখে যাচ্ছে নিজেকে টায়রা! কালো একটা বার্বি গ্রাউন পরনে তার! সাথে এক হাতে কালো দুটো ব্যাঙ্গাল, অন্য হাতে কালো ব্রেসলাইট! কালো স্টোনের কানের দুল আর গলায় নেকলেস!
চুল গুলো খোলা নিচের দিকে কিছুটা কার্লি করা!
পুরোই বার্বি ডলের মত লাগছে নিজেকে!

পাশ থেকে একটা মেয়ের ডাকে সেদিকে তাকালো টায়রা!
– ম্যাম স্যার আপনার জন্য অপেক্ষা করছে!
– হুমম! যাচ্ছি!
ধীর পায়ে বেরিয়ে এলো টায়রা ভেতর থেকে! বাইরে বেরতেই টায়রার মুখটা হা হয়ে গেলো লাজুক কে দেখে!
লাজুকও পুরো ব্লাক ড্রেসআপে আছে! ব্লাক শার্টের প্রথম দুটা বাটন খোলা! তার উপরে ব্লাক সুট, তবে সুটের বাটন খোলা রেখে হাতা গুটিয়ে নিয়েছে কনুই পর্যন্ত , ব্লাক প্যান্ট, সু! স্পাইক চুল! মানে মোট কথা বলিউড হীরোকে মাত দিতে সক্ষম এই মিস্টার !
দুনিয়া উড়ে যায় যাক! বাট এ নিজের পরিপাটি জোন থেকে বেরবে না!
এই রকম ভাবে লাজুক কে দেখলে না জানি কত মেয়ে ফিদা হয়! ভাবতেই কান্না পাচ্ছে টায়রার! যদি তার লাজুক কে কেউ নিয়ে যায়!

হেটে লাজুকের সামনে গিয়ে দাড়ালো টায়রা!তার উপস্থিতি অনুভব করে সামনে তাকাতেই দাড়িয়ে গেলো লাজুক!
মুগ্ধ কর তার চাহনি! যা দেখতেই লাজ্জায় মাথা নিচু করে নিলো টায়রা!
কয়েক সেকেন্ড পর আবার পলক তুলে লাজুকের মুখের দিকে তাকাতেই দেখলো সে, সে ভাবেই তাকিয়ে এখনো!

লাজুক হাত বারিয়ে টায়রার চোখের পাশ থেকে কাজল নিয়ে ওর কানের লতিতে লাগিয়ে দিলো!
বুঝতে পেরে চোখ বন্ধ করে ব্লাশিং হয়ে মুচকি হাসলো টায়রা! তা দেখে হাসলো লাজুলও!
লাজুক হাত বাড়িয়ে টায়রার কপালের চুল গুলো হালকা সরিয়ে দিতেই চোখ তুলে তাকালো লাজুকের দিকে!
লাজুক টায়রার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলল,
– পাগল হয়ে যাচ্ছি আমি!
লজ্জায় লাল হয়ে উঠলো টায়রা লাজুকের কথায়! গায়ে কেমন কাটা দিয়ে উঠলো তার!

লাজুক নিজের বা হাতটি টায়রার দিকে বাড়িয়ে দিলে টায়রাও লাজুকের হাতের উপর নিজের হাত রাখে!
– এবার যাওয়া যাক!
মাথা নাড়ালো টায়রা লাজুকের কথায়! তারপর লাজুকের সাথেই বেরিয়ে গেলো সেখান থেকে!
_________________
বাড়িতে ঢুকতেই যেনো টায়রার চোখ বেরিয়ে যাওয়ার মত অবস্থা! পুরো বাড়ি ফুল বাতি দিয়ে সাজানো, যেনো কোনো অনুষ্ঠান হতে যাচ্ছে!
টায়রা এলিয়েনের মত গোল গোল চোখে লাজুকের দিকে তাকালো! তার মানে হচ্ছে? এসব কি হচ্ছে বাড়িতে?

টায়রার চোখে চোখে করা প্রশ্নের উত্তরে বাকা হাসলো লাজুক! টায়রার হাত ধরে ভেতরে নিয়ে গেলো!
ভেতরে গিয়ে আরেক দফা চমকালো টায়রা!
বাড়ির বাইরেটা এতো সুন্দর করে সাজানো কিন্তু ভেতরটা এতো অন্ধকার হয়ে আছে কেনো?

– কি হচ্ছে এখানে এসব?
টায়রার প্রশ্নে লাজুক বলল,
– আমি কি করে জানবো? তুমি যেখানে ছিলে আমিও তো সেখানেই ছিলাম!
– কিন্তু এত্তো অন্ধকার কেনো? কই যাচ্ছি কিছুই তো বুঝতে পারছি না!
কথা গুলো বলে হাতরাতে হাতরাতে আর একটু সামনে আগাতেই কিছুর সাথে ঠোকোর খেয়ে পরে যেতে নিলেই ভয়ে চোখ খিচে নিয়ে চেচিয়ে ওঠে টায়রা!
– আল্লাহগোহহহহহহ!

কিন্তু টায়রা অনুভব করলো সে পরে যাওয়ার আগেই কারো শক্ত হাত দিয়ে তার কোমড় চেপে ধরে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নিয়েছে!
বুঝতে ভুল হলো না এটা লাজুক! তার শরীরের স্মেইলটাই জানান দেয় টায়রাকে লাজুকের পরিচয়!
টায়রা দু হাতে লাজুকরে শার্টের কলার্ট মুচড়ে ধরে তার বুকে মুখ গুজে দাড়িয়ে আছে!

হঠাৎ লাইট জ্বলতেই চমকে চোখ মেললো টায়রা! আশেপাশে তাকাতেই তৃতীয় বারের মত চমকালো সে!
তাদের চারপাশে বাড়ির সবাই ঘীরে দাড়িয়ে! সাথে অনেক অপরিচিত গেস্টরাও আছে!
পুরো বাড়ি ভর্তি লোকজন দেখে চোখ কপালে টায়রার!
এসব দেখে এতটাই শকড হয়ে আছে টায়রা যে তার খেয়ালই নেই সে লাজুকের বুকে!

রিমপি রিমি তিতলি নিশু হেসে চেচিয়ে উঠলো,
– ওয়াও ওয়াও! হোয়াট অ্যা রোমান্টিক সিন!
সাথে সাথে তারা পিক তুলতে লাগলো ওদের!
বড়রাও মিটমিট করে হাসছে!

নিজের দিকে তাকাতেই লাজ্জায় টায়রা লাজুক কে ধাক্কা মেরে দু কদম পিছিয়ে গেলো!
লজ্জায় যেনো সে মাটির সাথে মিশে যাচ্ছে!
সবার সামনে এমন একটা পরিস্থিতিতে পরতে হবে আশা করেনি সে!
আর এসবের মধ্যে সে ভাবতে ভুলেই গেলো, কেনো বাড়ি ভর্তি এতো লোক? এবং তার মা বাবাও যে সেখানে উপস্থিত আছে নজরেই এলো না টায়রার!

To be continue…
shuchona zannat..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here