ফোনটা বেজে উঠতেই ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখলো টায়রা লাজুক ফোন করেছে!
জোরে জোরে কটা শ্বাস ফেলে ফোনটা রিসিভ করলো!
— হ্যালো!
ওপাশ থেকে লাজুকের আওয়াজ আসলো,
— কোথায় তুমি?
— আ..আমি একটু বাইরে এসেছি! একটা ফ্রেন্ডের সাথে দেখা করতে!
— ওকে! তবে তারাতারি বাড়ি ফিরো!
— হুহহ!
— বাই!
— ওকে বাই!
ফোনটা রেখে দিয়ে টায়রা রেস্টুরেন্টে ঢুকলো! কনারেরই একটা টেবিলে বসে রিয়ান! ধীর পায়ে টায়রা হেটে সেখানেই গেলো!
টায়রাকে দেখতেই রিয়ান এক গাল হেসে বসা থেকে উঠে দাড়ালো!
— এসে গেছিস তুই! কখন থেকে ওয়েট করছি!
একটু হাসার চেষ্টা করে টায়রা বলল,
— সরি ইয়ার! বাড়ি থেকে বেরতে লেট হয়ে গেলো!
— ইট’স ওকে! তোর জন্য তো আমি সারা জীবন ওয়েট করতে পারবো!
রিয়ানের কথা শুনে ভ্রূ কুচকে গেলো টায়রার! কিন্তু কিছু বলল না! চেয়ার টেনে রিয়ানের সামনে বসে পরলো!
এর মধ্যে ওয়েটার দুটো কফি নিয়ে এলো!
টায়রা কফিতে চুমুক দিতে দিতে রিয়ান কে জিগ্গেস করলো,
— বল কি বলার জন্য ডেকেছিস?
— আসলে…….[ একটা শ্বাস ফেলে বলতে লাগলো রিয়ান ]
সন্ধ্যা সাতটার পর লাজুক অফিস থেকে বাড়ি ফেরার পর জানতে পারলো টায়রা এখনো বাড়ি ফেরেনি!
এটা শুনতেই লাজুকের মেজাজ গরম হলো! আবার টেনশনও হতে লাগলো! সন্ধ্যা পেরিয়ে গেছে এখনও কেনো ফিরলো না টায়রা?
তিতলিদের কাছ থেকে জানতে পারে যে টায়রা একটা রেস্টুরেন্টে গেছে ওর ফ্রেন্ডের সাথে দেখা করতে!
তৎক্ষণাৎ বেরিয়ে পরলো টায়রাকে খুজতে! রাগ আর টেনশনে যেনো মাথা ছিরে যাচ্ছে লাজুকের! ফাস্ট ড্রাইভ করে রেস্টুরেন্টে পৌছে,ভেতরে ঢুকেই রাগ তার সপ্তম আসমানে পৌছে গেছে!
হাত দুটো শক্ত করে মুঠো বেধে, রক্ত চোক্ষু নিয়ে তাকিয়ে রইলো সামনে থাকা টায়রা আর রিয়ানের দিকে!
রিয়ান জরিয়ে ধরে আছে টায়রাকে! আর টায়রা চুপ করে দাড়িয়ে!
এটা দেখার পর লাজুক আর নিজেকে শান্ত রাখতে পারলো না!
একেতো এত টাইম উবদি কাউকে কিছু না বলে টায়রা বাইরে রয়েছে! তার উপরে এমন একটা অবস্থায় পরলো লাজুকের সামনে!
লাজুক টায়রাকে সন্দেহ বা খারাপ কিছুই ভাবে নি ওকে এভাবে দেখে!
বাট তার প্রচন্ড রাগ উঠেছে! লাজুক টায়রার সামনে গিয়ে টান মেরে রিয়ানের থেকে ছুটিয়ে নিজের সামনে দাড় কারালো!
লাজুক কে দেখেই ভয়ে আত্মা কেপে উঠলো টায়রার! চোখ দিয়ে যেনো ভষ্ম করে দিবে ওকে!
রিয়ানও ভয় পেয়ে গেছে লাজুক কে দেখে!
টায়রা লাজুক কে কিছু বলতে নিবে, এর মধ্যেই তার বা গালে ঠাসসসস করে একটা শব্দ হলো!
অটমেটিক টায়রার হাত তার বা গালে চলে গেলো! রিয়ানও কেপে উঠলো ভয়ে টায়রার গালে পরা চড়ের আওয়াজে!
গালে হাত দিকে ফুপিয়ে কেদে উঠলো টায়রা! গালটা মনে হচ্ছে জ্বলে যাচ্ছে তার! আশেপাশেও সবাই তাকিয়ে ওদের দিকে!
হঠাৎ লাজুক ভারী আওয়াজ শুনতেই কেপে উঠলো টায়রা!
— তোমাকে সন্ধ্যার আগে আমি বাড়ি ফিরতে বলেছিলাম না? আর তুমি এখানে বসে এসব করছো?
চুপ করে নিচের দিকে তাকিয়ে ফুপিয়ে কাদছে টায়রা!
লাজুক চেচিয়ে উঠে বলতে লাগলো,
— সাহস কি করে হয় আমার কথার অমান্য করার?কোন সাহসে তুমি আমার কথা না শুনে তোমার বন্ধুর সাথে এখানে আছো?
টায়রা কেদেই যাচ্ছে মাথা নিচু করে! তা দেখে লাজুক বিরক্ত নিয়ে বলল,
— ইচ্ছে তো করছে মেরে হাত পা ভেঙ্গে ফেলি তোমার!
চোখ বোটে বন্ধ করে ফেললো টায়রা লাজুকের কথা শুনে!
প্রচন্ড অপমানিত বোধকরছে সে!
সবার সামনে কি ভাবে লাজুক তার গায়ে হাত তুললো? তার উপরে আবার এতগুলো বকা!
একবার অন্তত তার কথাটা শোনা উচিৎ ছিলো! কিছু না শুনেই এভাবে মারলো!
মাথা নিচু করে দাড়িয়ে টায়রা! চোখ তুলে আশেপাশে তাকানোর সাহস নেই! ব্যাথার থেকে লজ্জা বেশি পাচ্ছে সে এই মুহূর্তে !
রেস্টুরেন্টে থাকা সবাই তাদের দিকে তাকিয়ে!
লাজুক আর কিছু না বলে টায়রার হাত ধরে গটগট করে হেটে বেরিয়ে গেলো ওখান থেকে!
পেছনে রিয়ান স্তব্ধ হয়ে বোকার মতন তাকিয়ে!
খুব দ্রুতো ড্রাইভ করছে লাজুক! তার পাশেই চুপ চাপ মাথা নিচু করে বসে ফুপিয়ে কেদে যাচ্ছে টায়রা! সে এক বারের জন্যও লাজুকের দিকে তাকায়নি! প্রচন্ড অভিমান হচ্ছে লাজুকের উপর!
হবেই বা না কেনো? সে তো যথেষ্ট বড় হয়েছে! এভাবে সবার সামনে কিভাবে হাত তুললো তার গায়ে!
আর তারউপর টায়রাকে তো কিছু বলার সুযোগও দিলো না! শুধু যা দেখলো তাই বিশ্বাস করলো!
আসলে সেখানেতো হয়েছিলো অন্য কিছু!
আসলে টায়রা তখন রিয়ান কে জিগ্গেস করার পর রিয়ান ওকে বলল, সে টায়রাকে খুব ভালোবাসে! সেই প্রথম থেকে যখন তাদের দেখা হয়েছে!
টায়রা রিয়ানের মুখে এমন কথা শুনে পুরো অবাক!
রিয়ানের থেকে এমন কিছু আশাই করেনি সে!
শান্ত হয়ে রিয়ানকে বোঝিয়েছিলো টায়রা! তারপর তার আর লাজুকের কথাও বলেছে! তাদের এংগেজমেন্টের কথা সব! এসব শুনেই রিয়ান অনেক কষ্ট পায়! আর সব কিছু শুনে বলেছিলো! ঠিক আছে টায়রা যেহেতু লাজুক কে ভালোবাসে!বন্ধুত্বের খাতিরে না হয় সে টায়রার থেকে দুরে থাকবে! এসব কিছু বলতে বোঝাতেই অনেক সময় পার হয়ে গিয়েছিলো! তাই তো সন্ধ্যা হয়ে গেছে!
আর টায়রা যখন রিয়ানের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আসতে যাবে তখনই রিয়ান কেদে ওকে জরিয়ে ধরেছিলো! শত হোক রিয়ানেরও তো প্রথম ভালোবাসা ছিলো টায়রা! সেও অল্প বয়সের একটা ছেলে তাই নিজের আবেগ কে কন্ট্রোল করতে পারেনি!
ঠিক সেই সময়টাই লাজুক এসে পরে!
বাড়ির সামনে এসে লাজুক গাড়ি থামাতেই টায়রা কোনো প্রকার কথা ছাড়াই গাড়ি থেকে নেমে সোজা বাড়ির ভীতরে ঢুকে যায়! লাজুক শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো টায়রার যাওয়ার পানে!
সেও বুঝে গেছে টায়রার এই অভিমান ভাঙ্গতে তার যথেষ্ট কাটখর পোড়াতে হবে!
দীর্ঘশ্বাস ফেলে সেও গাড়ি থেকে নেমে বাড়ির ভীতরে গেলো!
টায়রা কারোর কোনো প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে সোজা নিজের রুমে গিয়ে দরজা লক করে দিলো!
ড্রেসিং টেবিলের সামনে গিয়ে দাড়াতেই বা গালে স্পষ্ট চারটা আঙুলের ছাপ দেখতে পেলো!
ফুলে লাল হয়ে আছে!
আবার সে ফুপিয়ে কেদে উঠলো!
হঠাৎই টায়রার মনে হচ্ছে সে সত্যিই লাজুকের যোগ্য না!
সে জন্যই তো সব সময় তার বকা খেতে হয়! সে লাজু়কের মনের মত নয়! কোনো দিক থেকেই সে লাজুকের জন্য পার্ফেক্ট নয়!
এসব ভাবতেই আবার মুখে হাত দিয়ে চেপে ফুপিয়ে কেদে উঠলো!
হঠাৎই তার মাথায় এই কথা গুলো ঘুরতে লাগলো, সে লাজুকের যগ্য নয়! লাজুক ভালো কাউকে ডিজার্ভ করে!
তার মত ইডিয়েট বোকা টাইপ’স মেয়েকে না!
রাতে খাবার খেতে অনেক বার ডাকলো সবাই টায়রাকে, কিন্তু টায়রা দরজা খোলেনি! বিছানায় চুপ করে বসে ছিলো!
রুমের এক্সট্রা চাবিটাও নিজের কাছে রেখে দিয়েছে যাতে কেউ না ঢুকতে পারে!
লাজুকও বেশ কয়েক বার এসেছিলো! বাট লাভ হয়নি!
চুপচাপ টায়রা গিয়ে বেলকিনিতে বসে রইলো! চোখ মুখ ফুলে গেছে তার কাদতে কাদতে!
প্রচন্ড শীতের মধ্যেও সে পাতলা একটা জামা পরে দাড়িয়ে বাইরে!
টায়রার ঠিক পাশের বেলকিনিতে দাড়িয়ে লাজুক টায়রার দিকে তাকিয়ে! সে দিকে বিন্দু মাত্র খেয়াল নেই টায়রা!
হঠাৎ নজর সেদিকে যেতেই টায়রা রুমে চলে গেলো! লাজুক তাকিয়ে এখনও টায়রার যাওয়ার পথে! আজ বোধ হয় সে টায়রাকে একটু বেশিই কষ্ট দিয়ে ফেলেছে সে!
পরের দিন লাজুক অফিসে যাওয়ার পরেই রুম থেকে বেরলো টায়রা! নিচে গিয়ে চুপচাপ খাবার খেয়ে নিলো! সবার সাথে বেশ স্বাভাবিক ব্যাবহার করতে দেখে সাজিদা, মোর্শেদা নিশ্চিন্ত হলো!
বিকেল বেলা হঠাৎ তিতলি রিমপিদের কাছে গিয়ে টায়রা বলল,
— তোদের সাথে আমার খুব জরুরি কথা আছে! আমাকে হেল্প করতে হবে!
সবাই অবাক হলো টায়রার এমন কথা শুনে!
রিমপি শান্ত কণ্ঠ টায়রাকে জিগ্গেস করলো,
— কি হয়েছে টায়রা? কি হেল্প করতে হবে?
রিমপির কথার জবাবে টায়রা যা বললো তাতে বাকিদের চোখ বেরিয়ে যাওয়ার মত অবস্থা!
তিতলি চিন্তিত হয়ে বলল,
— টায়রা আর ইউ থিংক কি তুই যা বলছিস ভাই তা হতে দেবে?
বেধে রাখবে এসব শুনলে! ইউ নো না ভাই কেমন!
টায়রা অসহায় ভাবে বলল,
— তাই তো তোদের সাহায্য চাইছি! কাজ হওয়ার আগ পর্যন্ত কাউকে কিছু বলবি না তোরা! তোরা শুধু খুব ভোরে ড্রাইভার কাকাকে ম্যানেজ করে দিস!
রিমি ভীতু চোখে বলল,
— দেখ টায়রা ভাই যদি জানতে পারে তোর এই বোকামিতে আমরা সাথ দিয়েছি! তাহলেতো আর দেখতে হবে না!
টায়রা অভয় দিয়ে বলল,
— তোদের কিছু হবে না! শুধু আমি যেমন বলছি তেমন করবি!
নিশু পাশ থেকে টায়রাকে পেচিয়ে ধরে বলল,
— দেখ টায়রা তুই কিন্তু ভুল করছিস!এই সিদ্ধান্ত নেওয়া কিন্তু মোটেও ঠিক হয়নি! ভাই লাভ’স ইউ ইয়ার!
— প্লিজ নিশু! আমি তোদের নিজের বোন ভেবে আমার প্রবলেম টা বলেছি! আর তোরা যদি এমন বলিস…
— ওকে ওকে স্যরি স্যরি! আমরা সব ব্যাবস্থা করে দেবো! আর এমনই তুই থাকতেও বা পারবি কদিন! দেখবি ধরে বেধে আবার এখানে নিয়ে এসছে ভাই!
হেসে উঠলো সবাই তিতলির কথা শুনে! আর টায়রা চুপ করে রইলো মাথা নিচু করে!
পরের দিন সকালে লাজুক টায়রাকে না দেখতে পেয়ে খুজতে ওর রুমে গেলে তিতলি বলে,
— ভাই তুমি অফিস যাও! ও হয়তো ছাদে আছে!
লাজুক আর কিছু বলল না! চলে গেলো অফিসে! দুপুরের পরে বাড়ি থেকে ফোন এলো টায়রাকে কোথাও খুজে পাওয়া যাচ্ছে না!
হন্তদন্ত হয়ে তৎক্ষণাৎ বাড়ি ফিরে এলো! সারা বাড়ি ময় খুজে বেরিয়েও পেলো না কোথাও টায়রাকে!
অস্থির লাজুক টায়রাকে না পেয়ে! কি করবে ভেবে পাচ্ছে না!
টায়রার রুমে গিয়ে দেখে তার বেশ কিছু জিনিসই নেই এখানে! বিছানাতে কিছু কাপড় চোপড় অগোছালো হয়ে পরে আছে!
এর মধ্যেই পেছন থেকে রিমি এসে বলল,
— ভাই এটা সকালে টায়রার রুম থেকে পেয়েছি!
লাজুক রিমির দিকে ফিরে দেখলো হাতে একটা চিরকুট !
সেটা হাতে নিয়ে পরতেই চোখ গুলো লাল হয়ে ঘাড়ের রগ ফুলে উঠলো লাজুকের!
শান্ত কণ্ঠে রিমি রিমপিদের উদ্দেশ্যে বলল,
— যা এখান থেকে!
কেউ আর দাড়ালো না সেখানে! কারন লাজুক প্রচন্ড রেগে আছে এখন!
ওরা রুম থেকে বেরিয়ে যেতে প্রচন্ড রেগে লাথি মারলো সামনের চেয়ারটাতে! ছিটকে গিয়ে সেটা ড্রেসিং টেবিলের সাথে ধাক্কা খেতেই! বিকট শব্দ করে আয়নাটা ভেঙ্গে পরলো!
হাতের মুঠোয় চিরকুট টা চেপে ধরে দাত কিলিয়ে বলল,
— খুব বড় ভুল করেছো টায়রা আমার থেকে দূরে যাওয়ার চেষ্টা করে! ভুগতে হবে তোমাকে এর জন্য! এমন শাস্তি দেবো যে আমার থেকে দূরে যাওয়াতো দূর চোখের আড়ল হওয়ার চিন্তাও করতে পারবে না!
দরজার পাশে দাড়িয়ে রিমপি রিমি নিশু তিতলি!
করুন কণ্ঠে নিশু বলল,
— সুনামি বয়ে যাবে টায়রার উপর দিয়ে!
পাশ থেকে তিতলি বলতে লাগলো,
— টায়রা বোন আমার দুঃখ আছে তোর কপালে.!ঘূর্ণি ঝড় লাজুক প্রবল বেগে ছুটে যাচ্ছে মৃনাক্ষী গ্রামে! সাবধান, নিরাপত আস্রয় এস্থানে জলদি ভাগ! নয়তো তান্ডব বাধিয়ে দেবে!
To be continue ……
shuchona zannat..