আসক্ত
জান্নাত
পর্ব : ৪
বিকেল গরিয়ে প্রাই সন্ধ্যে হতে চলেছে! তিতলি টায়রা আগে আগে হাটছে, আর ঠিক তাদেরই পিছনে রিমপি আর রুহান নিজেদের মত প্রেমালাপ করতে ব্যাস্ত! তা দেখে মজা করছে ওরা দুজন!
– জিজু আমার বোনের সাথেই কি শুধু কথা বলবেন? আমাদের সাথে কি কথা বলা যায় না? আফটার অল আমরাও আপনার শালী!
– হ্যা হ্যা অবশ্যই, শালী মানে তো আধী ঘারওয়ালী!
রুহানের কথায় লজ্জায় লাল হয়ে গেলো রিমপি!
তিতলি আবারও বললো,
– শুধু আধী ঘারওয়ালী বললেই তো আর হবে না! খরচা আছে বুঝেছেন! আমরা কিন্তু চার জন আছি আপনার শালী ! আজ আমরা দুজন এলাম!
তিতলির কথায় সায় দিয়ে টায়রা বললো,
– হ্যা, আগে আমাদের ইম্প্রেস করেন, দেন আমাদের বোনকে পাবেন, নয়তো মুড়ি খান!
কথাটা বলেই হেসে রিমপি কে টেনে নিজের পাশে নিয়ে এলো!
রুহান হেসে উঠে বুকে হাত রেখে মাথা নিচু করে ঝুকিয়ে বললো,
– জো হুকুম মহারানীরা! তো বলেন কি ভাবে আপনাদের খেদমত করে নিজেকে ধন্য করতে পারি?
তিতলিও রাণীদের মত পাট নিয়ে বললো,
– তেমন কিছু না, আপাদত আমাদের কে ফুচকা খাওয়ার ব্যাবস্থা করে দিন!
– ওকে চলুন তাহলে!
ফুচকার দোকানে গিয়ে চারজন চার প্লেট নিলো! টায়রা একটা ফুচকা হাতে নিয়ে রুহানের মুখে তুলে দিয়ে বললো,
– নিন জিজু, শালীকাদের হাতের প্রথম খাবার!
রুহান মুচকি হেসে খেয়ে নিলো, তারপর তিতলিও খাইয়ে দিলো রুহানকে!
– এবার আমি খাইয়ে দিবো!
রুহান প্রথমে তিতলিকে খাইয়ে দিয়ে, টায়রাকে খাইয়ে দিতে যেই ফুচকা মুখের কাছে নিলো!
ওমনি ঝড়ের গতিতে কেউ টায়রাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিলো!
তারপর ঠাসস করে একটা শব্দ হলো, আর টায়রার বা হাত তার বা গালে!
হতভম্ব সবাই দাড়িয়ে! রিমপি সামনে তাকাতেই আতকে উঠলো ভয়ে! লাজুক রক্ষচোক্ষু নিয়ে তাকিয়ে টায়রার দিকে! চোখ দিয়ে মনে হচ্ছে আগুন বের হবে!
আর বেচারি টায়রা লজ্জায় অপমানে ভয়ে মাথা নিচু করে ফুপিয়ে কেদে যাচ্ছে!
লাজুকের হঠাৎ এমন কাজে সে নিজেও আহতো! কেনো মারলো তাকে? তাও এতো মানুষের সামনে! সবাই কেমন করে তাকিয়ে আছে তাদের দিকে!
হঠাৎ লাজুকের আওয়াজ শোনা গেলো!
– রিমপি তিতলি গাড়িতে ওঠ!
লাজুকের কথায় মাথা নাড়িয়ে তারাতারি গাড়িতে গিয়ে বসে পরলো!ভয়তো তারাও পেয়েছে! রিতিমত রিমপি কাপছে, যদি টায়রার মত ওকেও এমন ভাবে থাপ্পড় দেয়! লাজুককে বিশ্বাস নেই দিতেও পারে! কথাটা ভাবতেই নিজের গালে হাত বোলাতে লাগলো!
লাজুক টায়রার হাত টেনে ড্রাইভিং সিটের পাশের সিটে বসি দিয়ে নিজেও গাড়িতে উঠে পরলো!
মাথা নিচু করে আছে টায়রা, ভয়ংকর অভিমান হচ্ছে লাজুকের উপর, কই এর আগেও তো লাজুক তাকে মেরেছে তখন তো এমন খারাপ লাগেনি!
তবে আজ কেনো এতো অভিমান হচ্ছে?
সে যাই হোক না কেনো, আর কথা বলবে না সে লাজুকের সাথে! ঠিক করে ফেলেছে টায়রা!যদি তাকে এতোই অপছন্দ তাহলে মৃনাক্ষী গ্রামে রেখে আসলেই পারে! সে তো সেখানেই ভালো ছিলো!
অন্তত লাজুকের এই ভয়ংকর অত্যাচার থেকে মুক্ত ছিলো!
লাজুক কয়েক বার বলার পরেও টায়রা সিট বেল না বেধে মাথা নিচু করে বসে রইলো! তাই সে নিজেই বেল লাগিয়ে দিয়ে ড্রাইভ করতে লাগলো! ড্রাইভ করতে করতে বেশ কয়েক বার টায়রার দিকে দেখেছে কিন্তু সে এক বারও মাথা তোলেনি!
বাসায় ফিরতেই টায়রা সোজা নিজের রুমে ঢুকে গেলো! কেওর সাথে আর কোনো কথাও বললো না! কাদতে কাদতে চোখ মুখের ভয়ংকর অবস্থা হয়েছে!
অনেক বার খাবারের জন্যও ডাকা হয়েছে, কিন্তু লাভ হয় নি!
দরজা খোলার শব্দ হতেই টায়রা চেচিয়ে বলে উঠলো,
– বলেছি না আমি খাবো না! আর কত বার বলতে হবে? এখন কি মাইক নিয়ে সারা বাড়ি ঘুরে ঘুরে বলতে হবে?
কারোর কোনো সারা শব্দ না পেয়ে মাথা তুলে তাকাতেই দেখলো, লাজুক স্থির দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে! লাজুক কে দেখতেই আরো কান্না পাচ্ছে তার ভিষন রকমের! চোখের পানি গুলো টপ টপ করে গাল গরিয়ে পরছে! মাথা নিচু করে হাত পা গুটিয়ে বসে রইলো টায়রা!
লাজুক টায়রার কাছে এসে বিছানায় বসে বড় একটা টেডি বেয়ার টায়রার দিকে এগিয়ে দিলো!
– এটা তোমার জন্য!
টায়রা এক পলক টেডি টাকে দেখে মুখ ফিরিয়ে নিলো!
লাজুক একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে টেডিবেয়ারটা বিছানার পাশে রেখে টায়রার দিকে আর একটু এগিয়ে গেলো!
দু হাতে টায়রার মুখ তুলে আলতো করে চোখের পানি গুলো মুছে দিলো!
ফর্সা গাল লাল হয়ে আছে! হাতের বুরো আঙুল দিয়ে সেই লাল হওয়া স্থানটা ধীরে ধীরে স্পর্শ করতে লাগলো!
কেপে উঠলো টায়রা,ঢোক গিলে চোখ চেপে বন্ধ করে নিলো! বুক ধুকধুক করছে তার! শিরশির করছে পুরো শরীর ! লাজুকের স্পর্শ করা জায়গাটাও কেমন শীতল হয়ে গেছে!
লাজুকের দৃষ্টি টায়রার ফোলা ফোলা চোখের দিকে! নাকটা লাল হয়ে আছে, কান্নার কারনে ঠোট গুলোও কাপছে! যেটা এই মুহূর্তে খুবই ভয়ংকর মনে হচ্ছে লাজুকের কাছে!
গালে হাত বোলাতে বোলাতে শান্ত কন্ঠে বললো,
– আমি তোমাকে বলেছিলাম যেনো কোনো ছেলের সাথে মিশতে না দেখি! আমাকে না বলে কোথাও না যে! কিন্তু তুমি কি করলে? আমার কথা অমান্য করে সেই বাইরে ঘুরতে গেলে! তারউপর আবার একটা ছেলেকে ফুচকা খাইয়ে দিয়েছো, আবার তার থেকে খেতেও যাচ্ছিলে! [ কিছুক্ষণ চুপ থেকে ] ফের আমার কথা অমান্য করলে এমনটা আবার হবে!
কোনো ছেলের আশে পাশে যাতে না দেখি সে যেই হোক না কেনো!
টায়রা একদম চুপ, লাজুকের এরুপ কথার মানে সে খুজে পায়না!
– খেতে এসো সবাই অপেক্ষা করছে!
লাজুকের কথায় কোনো রিয়াক্ট করলো না টায়রা, সে আগের মতই বসে!
লাজুক ভারী আওয়াজ করে বললো,
– আমি কিছু বলছি!
মাথা নিচু করে জবাব দিলো,
– আ..আমি খা…খাব না!
এই মুহূর্তে লাজুকের একটা ধমক দিতে মনে চাইছিলো টায়রাকে, কিন্তু নিজের রাগটাকে গিলে ফেললো!এমনিতেই কেদে গাল মুখ ফুলিয়ে ফেলেছে!
তাই আর কোনো কথা না বলে, হুট করেই টায়রাকে কোলে নিয়ে হাটা ধরলো!
অবাক হয়ে লাফিয়ে উঠে নেমে যেতে চাইলো টায়রা!
– আ…আরে কি করছেন কি? নামান আমাকে, নামান বলছি! দে..দেখেন সবাই দেখবে! প্লিজ নামিয়ে দিন!
লাজুকের থেকে নিজেকে ছাড়ানোর জন্য ছোটা ছুটি করতে লাগলো!
হঠাৎ লাজুকের আওয়াজে থেমে গেলো সে!
– ডোন্ট ফাইট টায়রা! চুপ করে থাকো!
লাজুকের আওয়াজেই থেমে গেলো সে! সোজা নিচে ডাইনিং টেবিলের কাছে নিয়ে গিয়ে চেয়ারে বসিয়ে দিলো লাজুক টায়রাকে! সামনে খাবারের প্লেট এগিয়ে দিয়ে,
– তারা তারি খাও নয়তো অন্য গালটাও লাল হয়ে যাবে!
লাজুকের দিকে নাক ফুলিয়ে তাকালো টায়রা! এই মুহূর্তে ভয়ংকর কিছু গালি দিতে মন চাইছে! কিন্তু আফসোস সে পারবে না সেটা করতে! তাহলে লাজুকের বলা কথাটাই সত্যি হয়ে যাবে!
রুমে এসেই প্রথমে বিছানায় টেডিটার দিকে নজর গেলো! বেবি পিংক কালারের বড় একটা টেডি!
গুটি মেরে ঘুমনোর সময় টায়রার হাইট টাও এর মতই হয়ে যায়!
বিছানায় গিয়ে টেডিটা জরিয়ে ধরলো টায়রা!এটা বেশ পছন্দ হয়েছে তার! তখন তো রেগে ছিলো তাই তাকায়নি! কিন্তু মনের মধ্যে ঠিকই আকুপাকু করছিলো এটা ধরার জন্য!
টেডিকে জরিয়ে ধরে শুয়ে পরতেই একটা স্মেইল এলো নাকে! ভালো ভাবে চেক করে দেখলো হ্যাএটা লাজিকের শরীরের গন্ধ! লাজুকের দেওয়া টেডিটা আর তার শরীর থেকেই আসছে স্মেইল টা!
কেমন যেনো ভালো লাগছে টায়রার, বার বার গন্ধটা নিচ্ছে!
কেমন যানি মনে হচ্ছে লাজুক তার পাশেই আছে!
_______________
ড্রইং রুমের সোফায় বসে বার বার হাচ্ছি দিচ্ছে টায়রা, রুমাল দিয়ে নাক মুছতে মুছতে লাল হয়ে গেছে! চোখ গুলোও ফুলে লাল হয়ে আছে!
কালকের কাদার ফল এটা! টায়রা বেশি কাদলেই তার এমন ঠান্ডা লাগে! হাচিঁ হয় শুধু!
টায়রার পাশে বসেই মোর্শেদা তার লাল হয়ে যাওয়া গালে হাত বোলাচ্ছে!
নাতির কাজে খুবই অসন্তুষ্ট সে! কিছুদিনের জন্য মেয়ে বাড়ি গিয়েছিলো!আজ ফিরেছে, এসেই দেখে তার আদরের টায়রার গাল লাল পাচ আঙুলের ছাপ! কেদে ঠান্ডা বাধিয়ে ফেলেছে!
লাজুক শিরি বেয়ে নিচে নামতেই তিনি বললেন,
– ছোটো সাহেব তুমি কিন্তু কাজটা একদম ঠিক করনাই! আমার ছোট্ট পুতুলটার কি অবস্থা করছো দেখছো কি একবার?
মোর্শেদার কথা শুনে আড় চোখে টায়রার দিকে একবার তাকালো লাজুক, তারপর আবার সোফায় বসে পেপারে মনযোগ দিলো!
তা দেখে মোর্শেদা বললেন,
– তোমাকে ফের যাতে না দেখি আমার পুতুলরে কিছু বলতে!
পেপার পরতে পরতে জবাব দিলো,
– তোমার পুতুলকে বলে দিও যাতে সেও আমার কথার অমান্য না হয়!
মোর্শেদা তাকিয়ে রইলো নাতির মুখের দিকে, আর টায়রা অসহায় চোখে তাকিয়ে মোর্শেদার দিকে!
– দিদুন আমি উপরে যাচ্ছি!
– যাও!
টায়রা আড় চোখে একবার লাজুকের দিকে তাকিয়ে শিরি বেয়ে উপরে চলে গেলো!
রিমপির রুমে গিয়ে ঢুকতেই রিমপি কাচুমুচু মুখ করে টায়রাকে বললো,
– আম সরি ইয়ার! আমার কারনে তোকে ভাইয়ের থেকে বকা খেতে হলো! তোর কথাটা শোনা উচিৎ ছিলো আমার!
টায়রা আহাত কন্ঠে বললো,
– তুই কেনো সরি বলছিস? সরি তো আমার বলা উচিৎ , আমার কারনে তোদের কালকের ডেটটা মাটি হয়ে গেলো! রুহান ভাইয়া না জানি কি না কি ভাবলো! ইসস বেচারা!
– আরে তুই রুহানের চিন্তা করিস না! ওকে আমি সব বলেছি, ওতো আরো তোর জন্য টেনশন করছে! তুই ঠিক আছিস কি না তার জন্য!
– তোরা না হয় আবার এক দিন চলে যাস ঘুরতে! বেচারা ঠিক মত তোর সাথে টাইম স্পেন্ডও করতে পারলো না!
টায়রার কথা শুনে লজ্জা পেয়ে হেসে দিলো রিমপি!
তিতলি বললো,
– ভাই নাকি কাল তোকে একটা টেডি বেয়ার গিফ্ট করেছে?
মুহূর্তেই মুখটা গোমরা হয়ে গেলো টায়রার!
– হু জুতো মেরে গরু দান!
হেসে উঠলো ওর কথায় সবাই!
রিমপি সিরিয়াস ফেইস বানিয়ে বললো,
– ইয়ার রুহান না আমাকে একটা কথা বলেছে ভাইয়ের ব্যাপারে! কিন্তু আমার একটুও বিশ্বাস হচ্ছে না! হবেই বা কি করে কোথায় ভাই আর কোথায়….. [ এটুকু বলেই থেমে গেলো ] আমার মনে হয় না এটা পসিবল!
রিমপির কথা শুনে অবাক হয়ে তাকালো ওর দিকে সবাই! তিতলি আগ্রহি কন্ঠে জিগ্গেস করলো,
– কি ব্যাপারে বলতো! কি বলেছে সে?
রিমপি আড় চোখে টায়রার দিকে তাকালো সেও আগ্রহ ভরা চোখে তাকিয়ে!
– আ…আসলে আমি এটা শিওর না, তাই তো..তোদের পরেই বলবো! ও কি ভেবে কি বলেছে কে জানে!
রিমি বললো,
– তুইও না, বলবি না যখন তো এতটুকু বলার কি দরকার ছিলো? খালি খালি মনের মধ্যে এখন খুত খুত করবে! হু…
টায়রা রিমির কথা শুনে হালকা হেসে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো! গালটা এখনো লাল হয়ে আছে! জোমরাজ কি শুধু শুধু বলে সে! কি জরেই না মেরেছে বাবাহ্! ঐ জিম করা বডি ওয়ালা লোক যদি তার এই তুলোর মত শরীরে আঘাত করে, তাহলে কি আর তা আস্ত থাকে নাকি?
To be continues ….