আসক্ত, পর্ব -৫

0
1355

আসক্ত
জান্নাত
পর্ব : ৫

টায়রা ড্রইং রুম পেরিয়ে যেতে গিয়ে দেখলো সোফায় কিছু লোক বসে আছে! এরা কারা চিনলো না ও! কিছু মুরুব্বি টাইপস লোক, সাথে একজন ছেলে! বেশ হ্যান্ডসাম বলা চলে! তবে ছেলে বলা ভুল হবে, সেই বয়স পেরিয়ে গেছে হয়তো কিছু আগেই! তবে তাও ভালো লাগছে!

শাহেদ মোর্শেদা সাজিদা লাজুক তারাও আছে সেখানে! আড় চোখে লাজুকের দিকে তাকাতেই চোখাচোখি হয়ে গেলো তার সাথে! চোখ নামিয়ে সোজা উপরে বোনেদের রুমে চলে গেলো!

সেখানে ঢুকতেই দেখলো কি নিয়ে যেনো জটলা পাকাচ্ছে তারা!
– কি হয়েছে বলতো? নিচে দেখলাম লোকজন বসে আছে! তোরা আবার এমন করছিস কাহিনী কি?

টায়রার কথা শুনে সবাই এগিয়ে এসে ওকে টেনে বিছানায় বসিয়ে দিলো! তারপর রিমপি বলতে শুরু করলো,
– বর্ষা দির সে ফিরে এসেছে!

অবাক চোখে তাকিয়ে টায়রা, আগা মাথা কিছুই বুঝলনা সে!
– সে টা আবার কে?

– আরে তুই জানিস না বর্ষা দি কলেজে থাকতে একজন কে ভালোবাসতো! যার জন্য এতো বছর অপেক্ষা করেছে!

– হ্যা হ্যা জানিতো! তারা নিজেদের মনের কথা প্রকাশের আগেই হঠাৎ করে ছেলেটা দেশের বাইরে চলে যায়! আর তাদের মাঝে যোগাযোগের কোনো ব্যবস্থাও ছিলো না!

– হুমম! সেই ফিরে এসেছে! কাল নাকি হঠাৎই শপিং মলে দেখা হয়ে যায়! প্রথমে তো দু জনেই ভেবেছিলো তাদের বিয়ে হয়ে গেছে! কিন্তু যখন সে জানলো বর্ষা দি বিয়ে করেনি, আর সেও করে নি!
তখনি সেখানেই দি কে বিয়ে করার জন্য প্রপোজ করে দিলো!

টায়রা অবাক হয়ে শুনতে লাগলো সব কিছু! কেমন যেনো ফিল্মের কাহিনীর মত! দুজন মানুষ একে অপরের মনের কথা না জেনেই অপেক্ষা করে গেছে, কবে তাদের দেখা হবে!
আর ভাগ্য দেখো ঠিক সেই আবার তাদের এক করে দিলো!

তিতলি বলে উঠলো,
– জানিস তারা দু একদিনে নাকি বিয়েরও ডেট জানিয়ে দিবে!

টায়রার মুখে হাসি ফুটে উঠলো!
– ইসস! বর্ষা দি এখন কত খুশি না! সে তার ভালোবাসার মানুষটাকে অবশেষে পেয়ে যাচ্ছে!

টায়রার কথা শুনে রিমপি বললো,
– উফফফ! আমার যে কবে রুহানের সাথে বিয়েটা হবে?

রিমি রিমপির মাথায় চাটি মেরে বললো,
– গাধী এর মধ্যেই বিয়ের জন্য পাগল হয়ে গেলি! প্রেম তো শুরু করলি ২৪ ঘন্টাও হয় নি! বাবাকে ফোন করতে হবে?

টায়রা হাসতে লাগলো ওদের কাহিনী দেখে!
________________
লাজুকের রুমের পাশ থেকে যাচ্ছিলো টায়রা, হঠাৎ কিছু শুনে থমকে গেলো সেখানেই!

– তুই ওকে ভালোবাসিস ভাই! এটা মেনে নে!

– কি বলছিস দি এই সব?হ্যাভ ইউ গন অ্যা ম্যাড! ঐ পিচ্চি মেয়েটাকে আমি কি করে ভালোবাসতে পারি?

– ভাই ভালোবাসা কখনো কোনো কিছু বিচার করে হিসেব করে হয় না! তুই মানিস আর না মানিস,ঐ পিচ্চি মেয়েটা নিজের অজান্তেই তোর মনে জায়গা করে নিয়েছে!

চুপ করে গেলো লাজুক! বর্ষা আবার বললো,
– তুই ভালোবাসিস ভাই ওকে! শুধু শুধু কেনো নিজেকে কষ্ট দিচ্ছিস বল?

– দি প্লিজ! ও একটা নাবালিকা মেয়ে, আমার সাথে কখোনো যায় না ওর! আমি ওর লাইফ নষ্ট করতে পারবো না!
[ লাজুকের কথায় একটা চাপা কষ্ট প্রকাশ পেলো ]

– তুই এমন টা কেনো ভাবছিস বলতো? একবার ওর কাছে নিজের মনের কথা গুলো প্রকাশ করলেই তো পারিস! আর শোন তুই ওকে যতটা পিচ্চি ভাবছিস ও ততোটাও পিচ্চি না! মেয়েরা ওনেক আগেই এ্যাডাল্ট হয়ে যায়! সব কিছু বুঝতে শিখে!

চুপ করে বিছানায় গিয়ে বসে পরলো! দু হাত দিয়ে নিজের চুল গুলো মুঠি বেধে ধরে মাথা ঝুকিয়ে নিলো লাজুক!

– ও আমার বোন হয় দি! যেখানে বাকি সবাইকে আমি নিজের ছোট বোনের নজরে দেখি সেখানে, ওকে নিজের বোন ভাবতেও নিশ্বাস আটকে আসে! স্বপ্নেও আমি তাকে নিজের বোনের জায়গায় বসাতে পারি না!
আমি জানি না কি করবো! আমি একটা পিচ্চি মেয়েতে আসক্ত, ভাবতেই নিজেকে শেষ করে দিতে ইচ্ছে করে!

লাজুকের গলাটা কেমন ধরে ধরে আসছিলো, কথা গুলো পেছিয়ে যাচ্ছে! মনে হচ্ছে পাহাড় সমান কষ্ট বুকে চেপে রেখেছে!
বর্ষা এগিয়ে গিয়ে ভাইয়ের পাশে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো!

– ভাই এভাবে কষ্ট পাশ না! দুনিয়ার কথা ভাবিস না, নিজের মনের কথা ভাব! ওকে ছাড়া তুই কখনো ভালো থাকবি না! তোর ভালো থাকা তো….

টায়রা সরে এলো ওখান থেকে! বাকি কথা গুলো আর শুনলো না! হয়তো শুনতে চাইনি! মেয়ে টা কে জানে না ও আর জানতেও চায় না! কারনটা যে অজানা ভয় তা বুঝতে পারলেও ঠিক কিসে ভয় পাচ্ছে? লাজুক অন্য কোনো মেয়েকে ভালোবাসে এটা শুনতে চায়নি! নাকি নিজের…

নাহ আর ভাবতে পারছে না ও!হাত পা কাপছে, শরীরে বিন্দু মাত্র শক্তি পাচ্ছে না! চোখ দিয়ে টপটপ পানি পরছে!
কেমন যেনো অগোছালো লাগছে চারিদিক!
আচ্ছা ওর কষ্ট কেনো হচ্ছে, যেনো কেউ গলা চেপে ধরেছে!
_______________
রিমপির দিকে আতংকিত হয়ে তাকিয়ে রিমি, নিশু ,তিতলি! ভুত দেখার মত চমকে আছে তারা!

অবাকের সীমানা পেরিয়ে তিতলি বললো,
– রিমপি হাও ইজ পসিবল? রুহান ভাইয়া এই কথা কি ভাবে বললো? ভাই টায়রাকে লাইক করে?

রিমপি চিন্তিত মুখ করে বললো,
– রুহান তো তাই বললো! আর আমিও ভেবে দেখলাম, সাম হাও..রুহানের কথাটা সত্যি হয় তো! তোরাই ভেবে দেখ ভাই আমাদের সবাইকে নিজের ছোটো বোনের মত ভালোবাসে, আর শেখানে টায়রা ভাইকে ভাইও বললে রেগে যায়!
টায়রাকে কোনো ছেলের সাথে কথা বলতে দেয় না! আর কাল কি রিয়াক্ট করলো!
আমরাও তো ছিলাম কই আমাদের তো কিছু বললো না!

রিমপির কথা শুনে চুপ মেরে রইলো সবাই! তাদেরও মনে হচ্ছে কথাটি সত্যি! এতদিন এসব ওরা ভাবেই নি! ভাববেই বা কেনো? ৩০ বছরের একটা ছেলে সে১৭ বছরের একটা পিচ্চিকে ভালোবাসে! এটা কি আদোও কারোর ভাবার কথা? আর তার উপরে সে তার বোন হয়, সে যেমন বোনই হোক না কেনো!

আর তাছাড়া লাজুক আর টায়রাকে নিয়ে ভাবা তো অসম্ভব, যে কিনা টায়রাকে দেখতে পর্যন্ত পারে না সে কি করে….? আর এই যাবত লাজুকের সব গার্ল ফ্রেন্ড ছিলো হইলি এডুকেটেড,স্টাইলিশ, মডেল টাইপ’স! তাদের লাজুকের সাথে এইজ ডিফরেন্স বেশি হলে 3-4 ছিলো বা তার থেকেও কম!
মাথা ঘুরাচ্ছে সবার ভাবতে ভাবতে!

রিমি আহতো গলায় বললো,
– আচ্ছা ভাই যে টায়রাকে ভালোবাসে তোদের কি মনে হয় যে টায়রা কখনো বুঝবে এটা?

রিমির কথার জবাবে নিশু বললো,
– কি ভাবে বুঝবে? টায়রা তো ভাইকে ওর জমরাজ ভাবে! আর তাকে নিয়ে এই সব চিন্তা ও ভুলেও মাথায় আনবে না!

– ভাই আর টায়রার বিষয়টা সত্যিই ভাবাচ্ছে আমাকে?

তিতলির কথায় বাকিরাও সায় দিলো! এর মধ্যেই রুমে এলো টায়রা! আর তাকে দেখতেই চুপ করে ঘুর ঘুর নজরে চোখ বোলাতে লাগলো পা থেকে মাথা পর্যন্ত!

– কি হলো এমন ভাবে কি দেখছিস সবাই?আমি কি এলিয়েন ?

তিতলি মুখ ফসকে বলে ফেললো,
– এই মুহূর্তে এলিয়েনের থেকেও বেশি কিছু মনে হচ্ছে !

তিতলির কথা শুনে চোখ গুলো ছোট ছোট হয়ে এলো টায়রার!

রিমি তিতলিকে কনুই দিয়ে খোচা মেরে চুপ করিয়ে দিলো! তারপর টায়রার কাছে গিয়ে বললো,
– ওর কথা বাদদে! তোকে তো এই স্কার্টটাতে দারুন লাগছে! এটা কবে নিলি বলতো?

টায়রা মুখ বেকিয়ে জবাব দিলো,
– কেনো মনে নেই? সেদিননা জোমরাজ আনলো!

– তুই আমাদের ভাইটাকে এমন জমরাজ জমজার কেনো বলিস বলতো? ভাই কতো হ্যান্ডসাম দেখতে দেখিস না! তার হাটার স্টাইল কথা বলার স্টাইল সব একদম বাধিয়ে রাখার মত!

রিমির কথায় মুখ বেকালো টায়রা!
পাশ থেকে তিতলি বললো,
– হ্যা ঠিকই তো! তুই জানিস কত মেয়ে ভাইয়ের জন্য পাগল! আর তুই কিনা তাকে এই সব বলিস?

টায়রা ভ্রূ কুচকে সবার দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো,
– ব্যাপারটা কি বলতো? পুরো ভাই ভক্ত বোন হয়ে গেছিস! আজ তোরা সবাই মিলে তোদের ভাইয়ের নামে ফুলঝুরি খুলে বসেছিস কেনো?

– না মা..মানে ও আর কি!

তিতলির কথা শেষ হতেই আবার নিশু বলা শুরু করলো,
– এমন ভাবে বলছিস যেনো আমরা মিথ্যা প্রশংসা করছি? আমরা যা বলছি তাতে কি কোনো ভুল আছে? হ্যা মানছি ভাই একটু রাগি, তাছাড়া তো সবই ঠিক আছে!

নিশুর কথা শুনে চোখ পাকিয়ে ওদের দিকে তাকালো টায়রা!
অবাক হওয়ার ভঙ্গি করে বললো,
– শুধু একটু রাগি? [ নিজের গেলের দিকে আঙুল ঘুরিয়ে দেখিয়ে ] এই দেখ সেই একটু রাগির ছাপ এখনো আছে!
তোদের ভাই আস্তো একটা খাটাশ! জমরাজ, মামদো ভুত, ব্যাটা গরু চোর!

টায়রার কথা শুনে আহতো চোখে তাকালো তার দিকে! লাজুকের সম্পর্কে যার এই সব চিন্তা ভাবনা সে কি করে বুঝবে তার ভালোবাসা?
____________________
বেলকিনিতে দাড়িয়ে রাতের আকাশ দেখতে ব্যাস্ত টায়রা!
গা হীম করা ঠান্ডা বাতাস গুলো যেনো মোটা জ্যাকেটের আস্তরন ভেত করে ভিতরে ঢুকে যাচ্ছে!

ছোট ছোট তারার ভিতরে এক ফালি চাদ! যেনো আধ খাওয়া রুটির মতন!
কোথাও একটা শুনে ছিলো, “সবার কাছে পূর্নিমার পূর্ন গোল চাদটা অতি রোমান্টিক হলেও, না খাওয়া অনাহারে ভোগা মানুষের কাছে একটা আস্ত রুটি”
আপন মনে হেসে উঠলো টায়রা! কথাটা সত্যি, কিন্তু কেনো জানি হাসি পায় ব্যাপারটা নিয়ে ভাবলে!

তবে আজ পূর্নিমা নয়! তবুও এক অদ্ভুত ভালো লাগা ঘোরে আটকে আছে সে! কিন্তু তার এই ঘোর ভেঙ্গে গেলো রিমপির ডাকে!

– কি হয়েছে?

– তোকে তোর গরুচোর ডাকছে!

টায়রা অবাক হয়ে তাকালো রিমপির দিকে!
– মানে ?

– আরে ভাই ডাকছে! তুই তো বিকেলে বললি না সে নাকি গরু চোর!
কথাটা বলেই হাসতে লাগলো!

এই মুহূর্তে এক অসহ্য বিষস্বাদে মেজাজ টা ভরে গেলো টায়রার!ডাকার আর সময় পেলো না?
রিমপিকেও কিছু বলতে মন চাইছে, কিন্তু না বলে সোজা চলে গেলো লাজুকের রুমে!

দরজা চাপানো দেখে ঢেলে ভিতরে ঢুকলো! বিছানায় তাকাতেই দেখলো, লাজুক খাটের সাথে হেলান দিয়ে উপরে মুখ করে চোখ বন্ধ করে রেখেছে!
তা দেখে গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে দাড়ালো তার সামনে!
– ডে..ডেকে ছিলেন?

টায়রার কথা শুনে চোখ খুলে তার দিকে তাকালো লাজুক!
আতকে উঠলো টায়রা লাজুক কে দেখে! চোখ গুলো ভয়ংকর দেখাচ্ছে! লাল হয়ে ফুলে আছে, চোখে ভিতরের নালি গুলো দিয়ে যেনো রক্ত বের হচ্ছে!
উষ্কখুষ্ক চুল! মুখ শুকিয়ে আছে! সব সময় পরিপাটি থাকা মানুষটাকে আজ যেনো খুব অচেনা লাগছে তার কাছে!

লাজুকের শান্ত দৃষ্টি টায়রার মুখের দিকে!
মাথা নিচু করে নিলো টায়রা!

– আমাকে কেনো ডেকেছেন?

টায়রার কথার প্রতি উত্তরে লাজুক বললো,
– মাথা ধরেছে, টিপে দেও!

কথাটা বলে বিছানায় চোখ বন্ধ করে শুয়ে পরলো!
টায়রা অবাক হয়ে কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলো লাজুকের দিকে, তারপর লাজুকের মাথার পাশে বসে কাপা কাপা হাতে ওর কপাল ছুয়ে দিলো!
থরথর করে কেপে উঠলো টায়রা, কেনো সে যানে না! বড় সড় একটা ঢোক গিলে আলতো হাতের স্পর্শে টিপে দিতে লাগলো লাজুকের মাথা!

ধীরে ধীরে চুলে হাত বলাতে লাগলো টায়রা, লাজুকের চুল গুলো বেশ সফট, দেখতেই ছুতে মন চায়!

লাজুকের মুখের দিকে তাকিয়ে সে! মানুষটা আসলেই অদ্ভুত! যেমন সুন্দর দেখতে, তেমনি ভয়ংকর অদ্ভুতও সে!
ছোট খাটো রহস্যর বই যেনো সে! যার প্রতিটা পাতা পাতা রহস্যে ভর পুর! কিন্তু এই রহস্যের বই টি কবে খুলার সুযোগ পাবে সে? আদও কি পাবে কখনো?

To be continue…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here