আসক্ত, পর্ব-৬

0
1388

আসক্ত?
জান্নাত
পর্ব : ৬

খাটে হেলান দিয়ে আধ শোয়া হয়ে ঘুমন্ত টায়রা, আর পাশেই তার কোমড় জরিয়ে ঘুমচ্ছে লাজুক!
কাল রাতে লাজুকের মাথায় বিলি কাটতে কাটতে কখন যে ঘুমিয়ে পরেছে তা মনে নেই টায়রার!
মাঝরাতের দিকে শীতের কারেনে হয়তো লাজিকের কম্বলের নিচে চলে এসেছিলো!

চোখে আলোর রশ্মাই পরতেই ঘুম ভেঙ্গে গেলো টায়রার! আলসেমি কেটে সোজা হতেই হার্টফেল করার জোগার! লাজুকে এভাবে তার কোমড় জরিয়ে শুয়ে থাকতে দেখতেই বুক ধুকপুক করতে লাগলো!
নিশ্বাস আটকে আসছে! মাথা ঝিম ঝিম করছে!

চারপাশে নজর বুলিয়ে দেখলো সে লাজুকের রুমে! না জানি লাজুক ঘুম থেকে উঠে ওকে এখানে দেখলে কি করবে? হয়তো বোকবে ধমকাবে! আবার চড়ও তো মারতে পারে! কে বলতে পারে তা?

তারাতারি এখান থেকে পালানোর জন্য সে লাজুকের হাতটা কোমড় থেকে ছাড়ানোর প্রোচেষ্টায় লেগে গেলো!
কিন্তু যতই সে লাজুকের হাত সরিয়ে দিতে চাইছে ততোই লাজুক চেপে ধরছে আষ্টেপৃষ্টে!
কাপছে টায়রা লাজুকের এমন কাজে! গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে তার!

এর মধ্যেই হঠাৎ লাজুক চোখ মেলে তাকালো! নিশ্বাস আটকে গেলো টায়রার!এই বুঝি প্রানটা বেরিয়ে যাবে! ভয়ে ততক্ষণাক চোখ চেপে বন্ধ করে ফেললো! লাজুকের দিকে তাকানোর সাহস নেই ওর এই মুহূর্তে !

অনুভব করলো, লাজুক ধীরে ধীরে তার হাতটা টায়রার কোমড় থেকে সরিয়ে নিচ্ছে! তারপর সোজা হয়ে বসে টায়রার মুখের দিকে তাকালো!
– এভাবে বসে না থেকে নিজের রুমে যাও!

টায়রা চোখ খুলে লাজুকের মুখের দিকে তাকালো! যে আপাদত টায়রার দিকে তাকিয়ে! দু হাতে নিজের চুল গুলো আউলাচ্ছে!
নজর সরিয়ে বিছানা থেকে নেমে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো!

টায়রা বেরিয়ে যেতেই বেশ বড় বড় কয়টা নিশ্বাস ফেললো লাজুক! টায়রাকে এভাবে দেখে তার যে কি অবস্থা হয়েছিলো তা কাউকে বোঝাতে পারবে না!
এলো মেলো চুল, ঘুম ঘুম মুখ, আসক্তির শেষ চুড়ায় নিয়ে গেছিলো তাকে! ভয়ংকর মুহূর্ত পার করলো সে আজ!

সেই কখন থেকে তিতলি,রিমপি,রিমি,নিশু টায়রাকে ঘুরে ঘুরে দেখে যাচ্ছে ,আর মিটমিট হাসছে!
তাদের এরকম ব্যাবহার অসহ্য লাগছে টায়রার! রাজ্যের বিরক্তি নিয়ে তাকিয়ে সে তাদের দিক!

রিমপি দুষ্টু হেসে বললো,
– টায়রা তুই কাল ভাইয়ের রুমে ছিলি?

রিমপির কথা শুনে কোনো রকম রিয়াকশন আর ভনিতা ছাড়াই টায়রা জবাব দিলো!
– হুমম!

– বাব বাহ্ ! এত দূর?

তিতলির এমন পিন্চ মারা কথা শুনে চোখ পাকিয়ে তাকালো তার মুখের দিকে!
– মানে?

– মানে বুঝছিস না? কাল যাকে গরু চোর, জমরাজ এই সব বলছিলি তার সাথেই রাত কাটিয়ে এলি?

নিশুর কথা শুনের ওর মাথায় একটা চড় মেরে টায়রা বললো,
– ছিঃ ছিঃ কথার কি ধরন! যা যা গিয়ে গোবর মেশানো গঙ্গা জল দিয়ে মুখ ধুয়ে আয়! ওটা অপবিত্র হয়ে গেছে! আর হ্যা সাথে মাথাটা খুলে সেটাও ধুয়ে নিবি ভালো করে! ওগুলো সব নোংরা হয়ে গেছে!

টায়রার কথা শুনে নিশু বাদে বাকি সবাই হিহি করে হেসে উঠলো!

– কাল রাতে তুই ভাইয়ের ঘরে কি করলিরে?

ঠোট উলটে জবাব দিলো!
– কি আর করবো, তার নাকি মাথা ধরে ছিলো তাই চুল টেনে দিতে বলেছে! আর চুল টেনে দিতে দিতেই কখন যানি ঘুমিয়ে গেছিলাম! আর তারপর সকাল হতেই দেখি….
এতটুকু বলেই টায়রা থেমে গেলো! সকালের ঘটনা মনে পরতেই লজ্জায় গাল দুটো লাল হয়ে উঠলো!

– সকালে উঠে কি দেখলি?

তিতলির প্রশ্নে একটু ঘাবড়ে গেলো টায়রা কি জবাব,দেবে তাদের!
– কি..কি আবার..উ..উঠে দেখি আ..আমি ওখানে তাই চ..চলে এলাম!

– ওওহ !

ড্রইং রুমে বসে টায়রা,তিতলি,রিমপি,রিমি,নিশু,বর্ষা! তারা নানান কথায় বিজি! এর মধ্যেই সেখানে মোর্শেদা এলো একটা প্লেটের মধ্যেই কিছু মিষ্টি নিয়ে!

– একটা খুশির খবর আছে সবার জন্য!

টায়রা মোর্শেদার কথা শুনে জিগ্গেস করলো,
– কি খবর দিদুন?

টায়রার মুখে মিষ্টি পুরে দিয়ে জবাব দিলো!
– বর্ষার বিয়ের তারিখ ঠিক হয়েছে!

কথাটা শুনতেই সবাই চেচিয়ে উঠলো খুশিতে! টায়রা গিয়ে বর্ষাকে জরিয়ে ধরলো!
– কংরেচুলেশন দি!

বর্ষা লজ্জা মাখা হাসি দিয়ে জবাব দিলো,
– থ্যাংক ইউ!

রিমপি মোর্শেদাকে প্রশ্ন করলো,
– দিদুন বিয়ে কয় তারিখ ?

– আগামী সপ্তাহের মঙ্গল বার!

সবাই অবাক মোর্শেদার কথা শুনে!
টায়রা বললো,
– দিদুন তা হলে তো আর ছয় দিন বাকি! এর মধ্যে কিভাবে সব হবে?

– হয়ে যাবে চিন্তা করো না, লাজুক এর মধ্যে বিয়ের সব প্লান রেডি করে ফেলেছে! বাদ বাকিটাও হয়ে যাবে!

– ইয়াহ! ভাই যেহেতু আছে আর টেনশন কি? লাজুক মোজুমদার ইজ রিয়েল হিরো!হি ইজ অ্যা সুপার মেন! দেখবে সব কিছু কত ফার্স্ট আর পরিপাটি করে ঠিক করে ফেলবে!

রিমির কথায় সায় দিলো বাকিরাও!

লাজুক বসে বসে ফাইল ঘাটছে, তখনই দেখলো টায়রা গুটি গুটি পায়ে ওর সামনে এসে দাড়িয়েছে!
টায়রাকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে ভ্রূ কুচকে জিগ্গেস করলো,
– কিছু বলবে?

– আসলে ভা….[ এতটুকু বলে থেমে গেলো ]
তারপর আবার বললো,
– আ..আমার শপিং মলে যাওয়ার ছিলো! কিছু জিনিস লাগবে!

টায়রার কথা শুনে হাতের ফাইল গুলো গোছাতে গোজাতে জবাব দিলো!
– দশ মিনিটে রেডি হয়ে নিচে আসো, আমি গাড়িতে ওয়েট করছি!

– বব..বলছিলাম কি, আমি তিতলিদের কে নিয়ে যাই?
আ..আপনি শুধু শুধু…

কথা শেষ করার আগেই লাজুক ধমকে বললো,
– যা বলছি চুপ চাপ তাই কর, নয়তো মুখে টেপ লাগিয়ে দেবো!

অসহায় টায়রা উপর নিচে মাথা নাড়িয়ে চলে গেলো রেডি হতে! নয়তো আর কিছু বললে হয়তো দেখা যাবে বেলকুনি থেকে তাকে ধাক্কা মেরে নিচে ফেলে দিবে!

গাড়ি থামতেই টায়রা বেরিয়ে গেলো, পাশে তাকাতেই দেখলো লাজুক আসছে! আবার সামনে তাকিয়ে হেটে মলের ভিতরে ঢোকা শুরু করলো!
এর মধ্যেই লাজুক এসে টায়রা হাত ধরে ভেতরে টেনে নিয়ে গেলো!
টায়রা আড় চোখে একবার লাজুকের দিকে তাকিয়ে আবার চোখ সরিয়ে নিলো!

টায়রাকে নিয়ে প্রথমেই ঢুকলো একটা মোবাইলের শপে! টায়রা বোকার মত চেয়ে আছে! এখানে কেনো এলো লাজুক তা ওর জানা নেই!

কিছু মোবাইল ঘেটে একটা ধূসর রঙের আই ফোন নিলো! লেটেস্ট নাকি এটাই এখন! কত ঠিক দেখতে পেলো না, তবে সেলারের মুখে তো শুনলো এটাই!

আই ফোনটা প্যাকিং করে নিয়ে লাজুক সেটা টায়রাকে ধরিয়ে দিলো!
অবাক চোখে তাকিয়ে টায়রা লাজুকের দিকে!

– তোমার ফোন নাকি সেদিন কলেজে হাত থেকে পরে গিয়ে স্কৃন ভেঙ্গে গেছে?

মাথা নাড়ালো টায়রা!

– এখন থেকে এটা ইউস করবে তুমি!

লাজুকের কথা শুনে হা টায়রা! লাজুক ফোন কিনে দিলো ওকে,তাও আই ফোন! ভাবা যায়??

মোবাইল শপ থেকে বেরতেই টায়রাকে জিগ্গেস করলো,
– এবার কোথায় যাবে? আই মিন কি কিনবে বলো?

মাথা নিচু করে জবাব দিলো টায়রা,
– কিছু কসমেটিক’স আর ড্রেস!

– ওকে! বাট লেট করবে না তারা তারি কর!

– হুমম!

– শপিং শুরু কর, আমি দু মিনিটে আসছি!
কথাটা বলে চলে গেলো ওখান থেকে!

টায়রা শপির ভিতরে ঢুকে যা যা দরকার সব নিতে লাগলো! কেনা কাটা প্রাই শেষ তখনই পাশে ম্যানি কুইন কে পড়ানো কালো লেহেঙ্গা নজরে এলো টায়রার! হাতের ব্যাগ গুলো নিয়ে সেটার সামনে গিয়েই দারালো!

খুটিয়ে খুটিয়ে দেখতে লাগলো ড্রেসটা! কালো রঙের সোনালি আর রুপালি সুতোর কাজ, নজর কারা ডিজাইন !

হঠাৎ পাশ থেকে কারোর আওয়াজে সে দিকেই ফিরে তাকালো! একটা ছেলে!

– হ্যালো পিচ্চি আপু! নাম কি?

ভ্রূ কুচকে তাকালো ছেলেটার দিকে, কেমন হ্যাঙ্গলা টাইপের দেখতে!
– কেনো?

– এমনি, একা নাকি সাথে কাউকে দেখছি না যে?

টায়রা কিছু বলতে জাবে এর মধ্যেই কেউ এসে ওর হাত চেপে ধরলো! লাফিয়ে উঠে পাশ মুড়তেই দেখলো লাজুক নাক ফুলিয়ে তাকিয়ে!

ছেলেটার দিকে তাকিয়ে আবার টায়রার দিকে তাকালো লাজুক!

– কি হচ্ছে এখানে?

টায়রা ভয়ে ভয়ে জবাব দিলো,
– ক..কই কিছু নাতো!

– তাহলে দাড়িয়ে আছো কেনো? চলো..

কথাটা বলে আর অপেক্ষা করলো না লাজুক টায়রাকে টেনে নিয়ে গেলো সেখান থেকে!

To be continue ……….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here