আড়ালে_ভালোবাসি,পর্ব_১৩,১৪

0
1680

আড়ালে_ভালোবাসি,পর্ব_১৩,১৪
নন্দিনি_চৌধুরি
পর্ব_১৩

দেখতে দেখতে এক সপ্তাহ চলে গেলো।স্নেহা আরাফের বিয়ের দিন চলে এলো।আগামিকাল স্নেহা আর আরাফের বিয়ে।আজকে ওদেএ গায়ে হলুদ।ঘরোয়া ভাবেই হচ্ছে বিয়ে।স্নেহা এই এক সপ্তাহে একবার ও আকাশকে দেখেনি।সেদিনের পর আকাশ আর আসেনি তার সামনে।স্নেহাত এতে ভালো লেগেছে।আকাশ তাকে ভুলে গেলেই ভালো।সেদিনের পর থেকে আকাশ একদম বদলে গেলো।নেশায় একদম ডুবে গেছে সে।সকালে বাড়ি থেকে বের হয় আর অনেক রাতে বাড়ি ফেরে নেশা করে।কোনোদিন ফেরেও না।ছেলের এমন অবস্থা মেনে নিতে পারছেন না মোতালেভ ও তার স্ত্রী।আকাশের মা আঁচলে মুখ লুকিয়ে মাঝে মাঝে কাদে।এ ছাড়া আর কি করবেন তিনি।আকাশ তো তার করা ভুলের শাস্তি পাচ্ছে।

সন্ধ্যায় স্নেহাকে সাজাতে বিজি রিতু,নিতু,জবা।তিনজন মিলে স্নেহাকে সাজাচ্ছে।স্নেহাকে একটা হলুদ শাড়ি সাথে কাচা ফুলের গহনা পরিয়েছে সাথে হাল্কা সাজ।বেস এতেই স্নেহাকে অনেক সুন্দর লাগছে।

রিতু:আজ স্নেহাকে যা লাগছে না। আরাফ ভাইয়া তো পাগল হয়ে আজকেই তোকে বিয়ে করতে চাইবে মনে হয়।

রিতু কথা শুনে জবা হেসে বল্লো,

জবা:যা বলেছো রিতুপু। আজকের থেকেও কালকে স্মেহাপুকে আর ও সুন্দর লাগবে।

নিতু:আর সেই সুন্দর্য নষ্ট করবে আরাফ ভাইয়া বাসর রাতে তাইনা আপুনি।

স্নেহা সবার কথা শুনে লজ্জায় লাল হয়ে বল্লো,

স্নেহা:যাহ তোমরাও না দূর।

তিনজনে হেসে দিলো স্নেহার অবস্থা দেখে।

আকাশ নিজের রুমে বসে বসে মদ খাচ্ছে।আজ তার স্নেহা হলুদ পরী সেজেছে।কাল সাজবে লাল টুকটুকে বউ।কিন্তু সেটা তার জন্যনা তার ভাইয়ের জন্য।কোনো প্রেমিক হয়ত এটা মেনেনিতে পারবেনা তার ভালোবাসার মানুষটাকে তার নিজের ভাইয়ের বউ রুপে।ঠিক আকাশ ও মানতে পারছেনা।খুব কষ্ট হচ্ছে।সে আজ রুম থেকে সকাল থেকেবের হয়নি।এই রুমেই ছিলো এখন নেশায় মত্ত্য হয়ে গেছে।

সোফায় পাশাপাশি বসে আছে স্নেহা আরাফ।সবাই তাদের হলুদ লাগিয়ে দিচ্ছে।ইমরান সাহেব মেয়েক হলুদ লাগানোর সময় কেঁদে দিয়েছিলেন।কত ভালোনা হতো আজ যদি মেয়েটার মাও থাকতো।হলুদে সবাই আকাশকে খুজেছিলো কিন্তু পায়নি।তারা বুজতে পেরেছিলো কেন আকাশ এখানে নেই।কিন্তু তাদের কিছু করার নেই।

রাত ১২টায় হলুদ ষেষ হলো।যে যার রুমে গেলো ফ্রেশ হতে।

মোতালেভ সাহেব খাটে হেলান দিয়ে শুয়ে ছিলেন তার স্ত্রী তার কাছে এসে কাধে হাত রেখে বললেন,

আকাশের মা:কি হইছে তোমার?
মোতালেভ:কিছু ভাল্লাগছেনা।
আকাশের মা:বুজতে পারছি খারাপ আমার ও লাগছে।আচ্ছা আরাফের বাবা আকাশকে যদি আবার একটা বিয়ে দেই তাহলে হয়না?
মোতালেভ:এই মূহূর্তে এসব মাথাও এনোনা।আকাশের মাত্র ডিভোর্স হয়েছে মিতুর সাথে।তার ওপর ওর চোখের সামনে স্নেহার বিয়ে হচ্ছে আরাফের সাথে।ওকে এখন এসব বললে হেতে বিপরীত কিছু হয়ে যেতে পারে।আর তাছারাও মিতুকে এখনো খুজে পাওয়া যায়নি।কিছু একটা ভালো মন্দ হয়ে গেলে কি হবে ভেবেছো।সব দোষ পরবে আকাশেএ ঘারে।কারন আকাশ মিতুর হাজবেন্ড ছিলো।যেমনেই হোক হয়েছিলো ওদের বিয়ে।এখম ডিভোর্স হয়েগেছে।কিন্তু মিতু নিখোজ।এখন এই দোয়া করো অই মেয়ে যেনো ভালোয় ভালোয় নিজের বাপের বাড়ি ফেরে।
আকাশের মা:দেখো গিয়ে ওই মেয়ে নিশ্চই অন্য কারো সাথে পালিয়েছে।আমার আকাশের সাথে বেইমানি করলো।যার জন্যই আজ আকাশ সব হারালো।
মোতালেভ:দোষ কি শুধু মিতুর তোমার ছেলের নেই?কলেজের নেহার ব্যাপার থেকে শুরু করে মিতুর ব্যাপার অব্দি তোমার ছেলের অনেক ভুল আছে।যাক সেসব কথা এখন শুয়ে পরো কাল আবার বিয়ের কাজ বাকি আছে সেগুলো দেখা লাগবে।
আকাশের মা:হুম আচ্ছা।

আকাশ মা বাবার রুমে বাহিরে দাঁড়িয়ে সব কথা শুনলো। আসলে সে নিচে এসেছিলো বরফ নিতে। মা বাবার রুমের পাশ থেকে যাবার সময় সব কথা শুনলো সে। মনে মনে ঠিক করে নিয়েছে সে কি করবে।

পরেরদিন

আজ স্নেহা আরাফের বিয়ে। কাংক্ষিত দিনটি চলেই এলো।সবাই যার যার কাজে ব্যাস্ত।স্নেহা,রিতু,নিতু,জবা স্নেহার রুমে আছে।তিনবন মিলে হুরাহুরি করছে আর নিতু বসে বসে দেখছে।নিতু প্রেগন্যান্ট তাই সে বেশি দৌড়ঝাপ করতে পারবেনা।তাই বসে বসে দেখছে আর হাসছে।

বিকেলের দিকে পার্লারের মেয়েরা এসে স্নেহাকে সাজাতে লাগ্লো।সাজ কম্পলিট হলো ৬টায়।স্নেহাকে একটা লাল আর গোল্ডেন কালার মিক্স শাড়ি পরানো হয়েছে।সাথে মেচিং জুয়েলারি।অপূর্ব লাগছে স্নেহাকে।স্নেহাকে রুম বসিয়ে রেখে গেছে সবাই।স্নেহা একা আয়নার সামনে বসে আছে আর লজ্জা পাচ্ছে।আজ তার ভালোবাসার সাথে তার বিয়ে।এই দিনটার অপেক্ষায় ছিলো সে।আজকে সে চিরদিনের মতো আরাফের হয়ে যাবে।ভাবতেই কি খুশি লাগছে।

স্মেহা এসব ভাবছিলো তখন আয়নায় দেখলো আকাশ দাঁড়ানো দরজায়।আকাশকে দেখে অবাক হলো স্নেহা চেহারার কি অবস্থা করেছে।কত রাত জেগে ছিলো আকাশ।আকাশ ধির পায়ে এগিয়ে এলো স্মেহার কাছে।স্নেহার থেকে একটু দুড়ে দাঁড়িয়ে দেখে যাচ্ছে স্নেহাকে।খুব সুন্দর লাগছে স্নেহাকে।এরকম ভাবেই তো স্নেহাকে চেয়েছিলো সে জীবনে।কিন্তু হায়!আজ সব সপ্ন সপ্ন রয়ে গেলো একটা ভুলের জন্য।

আকাশ ধির কন্ঠে বল্লো,

আকাশ:মাসাল্লাহ সুন্দর লাগছে অনেক তোমাকে আজকে স্মেহা।
স্নেহা:ধন্যবাদ আকাশ।
আকাশ:এই নেও এই গিফট আমার তরফ থেকে।
স্নেহা ভাবছে নেবে নাকি নেবে না।আকাশ স্নেহার হাত ধরে গিফট দিয়ে বল্লো,

আকাশ:ভয় নেই বন্ধু হিসেবে দিলাম।আসি ভালো থেকো নতুন জীবনের জন্য অনেক শুভ কামনা রইল।

কথাগুলো বলেই চলে গেলো আকাশ।আকাশের চোখে পানি স্পষ্ট।স্নেহা একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো।একটু পর জবা এসে ওকে নিচে নিয়ে গেলো কাজী এসে গেছে বিয়ে পড়ানো শুরু হবে এখন তাই।

বিয়ে পরানো শুরু হলো। কাজী যখন স্নেহাকে কবুল বলতে বল্লো স্নেহা খুব নার্ভাস হয়ে গেছিলো। কবুল মুখ থেকে বের হচ্চিলোনা। কিছুক্ষন চুপ থেকে আস্তে করে বলে দিলো,

“কবুল,কবুল,কবুল”

এরপর আরাফকে বলতে বল্লো আরাফ বলে দিলো।তারপর রেজিস্টারি পেপারে সাইন করে দিলো।

অবষেষে আজকে স্নেহা আরাফ এক হয়ে গেলো।ভালোবাসে এক অপরকে আজ তারা পেয়ে গেলো।

দূর থেকে আকাশ শেষ দেখা দেখে নিলো স্নেহাকে।আজ থেকে তার ভালোবাসা অন্য কারো স্ত্রী।আজ থেকে আর কোনো অধিকার নেই স্নেহার উপর তার।আকাশ নিঃসব্দে নিজের লাকেজ নিয়ে বেরিয়ে গেলো।চলে যাচ্ছে সে আজীবনের জন্য চলে যাচ্ছে সে।

আরাফের রুমে বসিয়ে রাখা হয়েছে স্নেহাকে।স্নেহার খুব নার্ভাস লাগছে।ইসসস কেন জানি আজ খুব লজ্জা লাগছে।

কিছুক্ষন পর আরাফ রুমে আসলো।রুমে ডুকে স্নেহাকে দেখে মুখে হাসি ফুটে উঠলো তার।
আরাফ ধীর পায়ে গিয়ে খাটে স্নেহার সামনে বসলো।স্নেহা তখন মাথা নিচু করে বসে আছে।আরাফ স্মেহার থুথনিটা উঠালো।স্নেহাতো লজ্জায় চোখ বন্ধ করে রেখেছে।আরাফ তা দেখে বলে, মাসাল্লাহ আমার লজ্জাবতীটা”
স্নেহা আরাফের কথা শুনে চোখ মেলে তাকায়।আরাফ আবার হেসে বলে,

আরাফ:যাও ফ্রেশ হয়ে এসো।এগুলা চ্যাঞ্জ করে নেও।
স্নেহা:হুম
স্নেহা উঠে ওর লাগেজ থেকে একটা সুতির শাড়ি নিলো।স্নেহার সব কিছু গুছিয়ে আরাফের রুমে দেওয়া হয়েছে। যেহুতু দুইদিন পর ওরা চলে যাবে কানাডা। তাই স্নেহার মা সব একদম লাকেজে প্যাক করে দিয়েছে।

স্নেহা একটা সবুজ কালার শাড়ি পরে বেরোলো ওয়াশ্রুম থেকে।শাড়িটা পাতলা হওয়ায় পেট কিছুটা দেখা যাচ্ছে।আরাফ বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে।স্নেহা আস্তে করে বারান্দায় গিয়ে আরাফের পাশে দাঁড়ায়।

আরাফ স্নেহাকে পিছন থেকে জরিয়ে ধরে ঘারে মুখটা রেখে বলে,

আরাফ:আজ আমি অনেক খুশি আজ আমি আমার স্নেহা পাখিকে পেয়েগেছি।জানো এই দিনটার জন্য আমি অনেক অপেক্ষা করেছি।

স্নেহা কিছু বলছেনা আরাফের নিঃশ্বাস ওর ঘারে পরায় বার বার কেপে উঠছে ও।

আরাফ স্মেহাকে নিজের দিকে ফিরালো।স্নেহা তখনো মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।আরাফ স্নেহার কপালে একটা চুমু দিয়ে বলে,

আরাফ:ভালোবাসি বউ।

আরাফের মুখে বউ কথাটা শুনে একটা হিমশতল বাতাস বয়ে গেলো তার ভিতরে।

আরাফ স্নেহার কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে,

আরাফ:স্নেহা আজকে কি আমি……

স্নেহা বুজতে পারছে আরাফ কি বলতে চাইছে শে আজ কোনো বাধা দেবেনা আরাফকে নিজেও আজ হারাবে আরাফের মাঝে।তাই সে আরাফের গলা জরিয়ে ধরলো।আরাফ বুজতে পারলো স্নেহা রাজি আরাফ পরম আদরে জরিয়ে ধরলো স্নেহাকে স্নেহার ঠোঁটে বসিয়ে দিলো তার ঠোঁট।স্নেহাও তাল মিলাচ্ছে আরাফের সাথে।এরপর কলে তুলে নিলো স্মেহাকে খাটে নিয়ে শুয়ে দিলো।

তারপর কি হইলো বলা যাবেনা শরম লাগেতো আমার??।

#চলবে

#আড়ালে_ভালোবাসি
#পর্ব_১৪
#নন্দিনি_চৌধুরী

দেখতে দেখতে চারটা বছর চলে গেলো।এই চার বছরে অনেক কিছু পাল্টে গেছে।হাসান বাড়িতে অনেক পরিবর্তন এসেছেন।ইমরান হাসান মারা গেছেন আজ এক বছর।হার্ট এট্যাকে মারা যান তিনি।এর পর তিন ভাই খুব ভেংগে পরে তবুও সবাইকে সামালানোর জন্য শক্ত থাকেন।স্নেহা আর আরাফ বিয়ে এক সপ্তাহ পর চলে যায় কানাডায়।ইমরান হাসানের মৃত্যুর খবর শুনে পরের দিন বাংলাদেশে আশে তারা।স্নেহার জন্য ইমরান হাসানের লাশ রেখে দেওয়া হয়েছিলো।স্নেহা এসে বাবাকে জরিয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদেছে।জাফর হাসান খুব কষ্টে ওকে সামলেছে।এরপর দুইমাস পর আরাফ স্নেহা আবার চলে যায়।স্নেহা কানাডা বসেই পড়াশুনা করছে।রিতু রাতুল এর ঘরে একটা কিউট ছেলে হয়েছে।নিতুর এক মেয়ে হয়েছে এখন সে আবার প্রেগন্যান্ট।

জানালার পর্দা সরিয়ে দিতেই রোদ এসে পরে স্নেহার মুখে স্নেহা চোখ মুখ কুচকে আবার পর্দা টেনে দেয়।বিছানার পাসে ফিরে দেখে আরাফ তুলতুল কে জরিয়ে ধরে ঘুমিয়ে আছে।স্নেহা মিষ্টি হেসে ফ্রেশ হতে চলে যায় ওয়াশরুমে।

আরাফ স্নেহার বিয়ের চার বছর পেরিয়ে গেছে তাদের ভালোবাসা আগে যেমন ছিলো এখন আরোও বৃদ্ধি পেয়েছে।তাদের ভালোবাসার নিসানি নুসাইবা ইসলাম তুলতুল।তাদের আদরের মেয়ে।১০ মাস বয়স হয়েছে হয়েছে মেয়েটার।আদো আদো বুলিতে বাবা আর মা বলতে পারে।আরাফের তো জান তার মেয়ে সারাদিন হাসপাতাল থেকে এসে মেয়ের মুখ দেখে সব ক্লান্তি ভুলে যায়।ফ্রেশ হয়ে মেয়ের সাথে খেলায় মজে যায়।স্নেহা এসব দেখে অনেক খুশি হয়।সে সব সময় দোয়া করে তার পরিবারটা যেনো এরকমি থাকে।স্নেহারা দেশে এসে এক সপ্তাহ আগে।জাফর সাহেব অসুস্থ শুনেই তারা চলে এসেছে।

স্নেহা ফ্রেশ হয়ে এসে আরাফকে জাগালো।

স্মেহা:এই শুনো উঠো।
আরাফ:উম…আরেকটু ঘুমাইনা।
স্নেহা:না উঠো নিচে একটু পর ডাক পরবে উঠো।
আরাফ:হুম
স্মেহাকে এক টানে নিজের বুকে নিয়ে এলো।স্নেহা আরাফের এমন কাজে প্রথমে ভয় পেয়েযায়।
স্নেহা:আরে আরে কি করছো ছাড়ো যাও ফ্রেশ হৌ।
আরাফ:উহুম কোনো ছাড়া ছাড়ি নাই কত দিন বউটাকে আদর করিনা।
স্নেহা:দূর দেখো তুলতুল কিন্তু এখনই উঠে কান্না করে দিবে।
আরাফ:উহুম আমার মামনি এখন ঘুমাচ্ছে। এখন তার বাবা তার মাকে আদর করবে যাতে তার আরেকটা খেলার সাথি আসে।
স্নেহা:ইসসস বললেই হলোনা।নেক্সট দুই বছরের আগে আর না। একটা কে সামলাতেই আমার জান যায় আবার আরেকটা হু।
আরাফ:কোনো ব্যাপার না আমি আছিনা আমি সামলাবো।
স্নেহা:এউ ছাড়োতো আর উঠো।

এর মাঝেই তুলতুল উঠে কান্না শুরু করে দেয়।

আরাফ অসহায় মার্কা ফেস করে বলে,

আরাফ:মাম্মাহ্ তুমিও মায়ের দোলে যোগ দিলা তোমার ভাইকে আনার সুযোদ দিচ্ছনা
স্নেহা আরাফের কথা শুনে দাঁত কেলিয়ে হাসতে লাগ্লো।

আরাফ উঠে ফ্রেশ হতে যায়। আর স্নেহা তুলতুলকে খাওয়াতে শুরু করে।আরাফ ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে স্নেহা নাই। বুজলো স্নেহা নিচে গেছে।তুলতুল এদিকে কান্না করছে আবার তাই মেয়েকে কোলে নিয়েই নিচে গেলো আরাফ।

নিচে এসে দেখলো স্নেহা মায়ের সাথে হাতে হাতে কাজ এগিয়ে দিচ্ছে আরাফ খাবার টেবিলে গিয়ে বসে।জাফর সাহেব আরাফেএ কোল থেকে নাতনিকে কোলে নিয়ে আদএ করতে লাগলেন।আজকে আরাফের আম্মু খিচুরি, মুরগির মাংস পাঁচ রকম ভর্তা শুটকি ভর্তা,আলু ভর্তা,বেগুন ভর্তা,টোমেটো ভর্তা,কালো জিরা ভর্তা করেছে সাথে ডিম ভাজা।আরাফের মায়ের হাতের খিচুরি সবার পছন্দ।আরাফ জাফর সাহেবের থেকে মেয়েকে কোলে নিলো কারন জাফর সাহেবের খেতে কষ্ট হচ্চিলো তুলতুল বেশি নরাচরা করছিলো তাই।আরাফ নিজে খাচ্ছে পাসাপাশি মসলা ভালো মতো ক্লিন করে একটু করে মাংস মেয়ের মুখে দিচ্ছে।তুলতুল কূটকুট করে খাচ্ছে আর দুস্টুমি করছে।জুনায়েদ নিতু গেছে কুমিল্লা।জুনায়েদের ওখানে ট্রান্সফার হয়েগেছে।নাজমারা প্রায় এসে থাকেন এখানে।

খাওয়ার মাঝে জাফর সাহেব বলে উঠেন,

জাফর:পরশু আকাশরা দেশে আসছে।

জাফর সাহেবের কথায় সবাই চুপ হয়ে যায়।আরাফের মা খুশিতে কিছু বলতে পারছেনা।মোতালেভ সাহেব অনেক খুশি অবশেষে আসতে চলেছে তার ছেলে।

মোতালেভ:অবশেষে আসছে তাহলে।
জাফর:হুম
ইকবাল:আর ওকে সাথে আনবেনা?
জাফর:আনবেনা কেন এখন ওরা স্বামী স্ত্রী। তাহলে আকাশ আসলে ওর স্ত্রীকে তো সাথে করেই আনবে তাইনা।
ইকবাল:হুম ভালোয় ভালোয় আসলেই ভালো।

স্নেহাও মনে মনে খুশি হলো। এবার হয়ত সব আগের মতো হয়ে যাবে এই ভেবে।

?

ইতালি,,,
নিজের রুমে জানালার পাশে ইজি চেয়ারে বসে ল্যাপ্টপে কাজ করছে আকাশ।আজ চার বছর হলো ইতালি চলে এসেছে সে।স্নেহার থেকে দূরে সবার থেকে দূরে।বাংলাদেশে থাকলে স্নেহাকে দেখলে যে নিজেকে ধরে রাখতে পারতোনা সে তাই চলে এসেছে সে।এখানে এসে সে নিজের বিজনেস শুরু করেছে।দুই বছরের মাথায় অনেক উন্নতি করেছে সে।আকাশ ল্যাপ্টোপে কাজ করছিলো তখন একজন কফির মগ এগিয়ে দিয়ে মিষ্টি কন্ঠে বলে,

“তোমার কফি”

আকাশ ল্যাপ্টপ থেকে মুখ উঠিয়ে তাকালো। মুখে হাসি রেখে নারীটির দিকে তাকালো সে। পিংক কালারের একটা টপস আর ব্লাস্ক কালারের প্লাজু সাথে ব্লাক ওড়না পরে হাতে কফি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে নারীটি।আকাশ মেয়েটির হাত থেকে কফিটা নিয়ে চুমুক দিয়ে বললো,

আকাশ:উম আজকে ঠিক আছে জবু মিষ্টিটা।
জবা হেসে দিয়ে আকাশের পাসে বসে বল্লো,
জবা:এত বছর ধরে বানাচ্ছি। এখনো যদি ঠিক না হয় তাহলে কি হয় হুম।
আকাশ হেসে দিলো।ইদানিং তার হাসির কারন হয়ে গেছে এই মেয়েটা।এই মেয়েটার প্রতি তার ভালোলাগা শুরু হয়েছে হয়ত।আর হবে না কেন তার স্ত্রীতো এই নারী।আকাশ কফি খেতে খেতে জবা কে বলে,

আকাশ:সব প্যাকিং করা হয়ে গেছে?
জবা:হ্যা হয়গেছে।আমি তুলতুল,নাফিসা,রিয়ানার জন্য অনেকগুলা জামা কাপড় আর খেলনা নিয়েছি।
আকাশ জানে স্নেহার একটা মেয়ে হয়েছে।স্নেহা আকাশের দেওয়া নামটাই যে রাখবে তার মেয়ের ভাবেনি সে।অনেক খুশি হয়েছিলো সে।স্নেহা আকাশের প্রেমের সময় তারা এটা ঠিক করেছিলো তাদের প্রথম মেয়ে হলে নাম রাখবে তুলতুল।

আকাশ:আচ্ছা কালকেই আমার বেরিয়ে পরবো।
জবা:আচ্ছা।

ভাবছেন তো সবাই যে এটা কি হচ্ছে চলুন বলি যে কি হয়েছে,,,,।

চার বছর আগে,,,,,

স্নেহার বিয়ের পরের দিন সকালে।স্নেহা আরাফ যখন নিচে আসে তখন দেখে সবাই সোফার গম্ভির হয়ে বসে আছে।স্নেহা আরাফ তাদের কাছে এগিয়ে গিয়ে জানতে চায় কি হয়েছে।

আরাফ:কি হয়ছে বাবা তোমাদের মুখ এরকম গম্ভির কেন?
জাফর সাহেব:আকাশ আর জবা কে খুজে পাওয়া যাচ্ছেনা।
আরাফ:খুজে পাওয়া যাচ্ছেনা মানে?
ইকবাল:কাল রাতের পর থেকে কেউ আকাশ জবাকে দেখেনি আজ সকালে জবার মা রুমে গিয়ে দেখে জবা নেই কিন্তু ওর সব জিমিশ রুমে শুধু পাসপোর্ট আর ভিসাটা নেই।
মোতালেভ:তোর মা আকাশের রুমে গেছিলো গিয়ে দেখে আকাশ এর রুম খালি সব জিনিশ গায়েব শুধু টেবিলে একটা চিঠি রেখে গেছে যেখানে সে লিখেছে ও একেবারের জন্য ইতালি চলে যাচ্ছে।
ইকবাল:কিন্তু জবা গেলো কোথায়?ও কি আকাশের সাথে গেছে?
আরাফ:তোমরা টেনশন করোনা আমি দেখছি।

স্নেহা বুজতে পারলোনা আকাশ চলে গেলো কেন। স্নেহার তখন মনে পরলো আকাশের সেই উপহারের কথা।

স্নেহা নিজের রুমে এসে দেখে কাল যেখানে যেই গিফট রাখা সেখানেই সব আছে।ড্রেসিং টেবিলে রাখা আকাশের সেই গিফট।স্নেহা গিয়ে গিফটটা হাতে নেয়।গিফটের প্যাকেট খুলে দেখে সেখানে একটা জোরা পায়েল,লাল একটা শাড়ি,লাল দুই হাত ভোরা চুরি,টিপ।সাথে একটা চিঠি।স্নেহা চিঠিটা খুলে পড়া শুরু করলো।

প্রিয় বাবুই,
জানিনা প্রিয় বলে ডাকার অধিকার কি আমার আছে কিনা তবে বাবুই ডাকাটা আমি ছাড়তে পারবোনা।ভালোবেসে রেখেছিলাম এই নাম তোমার।আজকে তোমার বিয়ে। আজকে তোমাকে অপরূপ সুন্দর লাগবে জানি।আজকে তুমি অন্য কারো ভালোবাসার রং এ রাংজ্ঞাবে নিজেকে।কিন্তু স্নেহা আমিতো তোমায় ভুলতে পারবোনা।খুব ভালোবাসি তোমায়।আর কে পারে বলো তার ভালোবাসার মানুষ্টাকে নিজের ভাইয়ের বউ রুপে দেখতে আমিও পারিনি আর পারবোনা।তাই চলে যাচ্ছি অনেক দূরে।যেখানে গিয়ে আমি তোমায় ভুলতে পারবো।জানিনা এটা পারবো কিনা তবে এখানে থাকলে আমার বোড্ডো লোভ হবে তোমায় পাওয়ার।নিজের ভাইয়ের শত্রু হতে চাইনা আমি।ভালো থেকোভাইয়া তোমায় খুব ভালোবাসে।তোমাদের নতুন জীবনের জন্য দোয়া আর ভালোবাসা রইল।

ইতি
আকাশ

স্নেহার চিঠিটা পড়ে অনেক খারাপ লাগে।আসলে মানুষ যখন তার ভুল বুঝে ফিরে আসতে চায় তখন অনেক দেরি হয়ে যায়।আকাশের সাথেও তাই হলো।

আকাশ জবা বাড়ি থেকে চলে যাওয়ার তিনদিন পর জবা বাসায় ফোন করে জানায় সে আকাশের সাথেই আছে।এখানে পড়াশুনা করবে আর আকাশকে দেখে রাখবে তারা যেনো চিন্তা না করে।

সেদিন রাতে জবা আকাশকে দেখে যে আকাশ সব গুছগাছ করে বেরোচ্ছে। তখন সে বুজে আকাশ হয়ত চলে যাচ্ছে। তখন জবাও আকাশের সাথে যাওয়ার জেদ ধরে আকাশ তো নেবেইনা তবুও জোর করে এসেছে আকাশের সাথে।ইতালি এসে আকাশ ওর ওক ফেন্ড এর এপার্টমেন্ট ওঠে।আর জবা কে ওএ আরেক মেয়ে ফ্রেন্ড এর এপার্টমেন্ট রাখে।এরপর আকাশ জবা নিজেদের মতো করে জীবন আগানো শুরু করে।দেখতে দেখতে আকাশ বড় একজন বিজনেসম্যান হয় নিজেএ বাড়ি গাড়ি সব হয়।আকাশ মনে মনে ঠিক করে নেয় বেঁচে থাকতে সে আর কোনো সম্পর্কে জরাবেনা।এদিকে জবাও তার পড়াশুনা ধুমছে করছে।কিন্তু একদিন সব উলটাপালটা হয়ে গেলো।আকাশের এক ফ্রেন্ডের নজর পরে জবার উপর।সানের নজর পরে জবার উপর।সানের কেরেক্টার ভালোনা মেয়েদের সাথে ইন্টিমেট হওয়াই ওর কাজ।জবাকেও ওর চোখে লেগেযায়।একদিন ও জবার সাথে জবরদস্তি করতে লাগে তখন আকাশ জবাকে বাঁচিয়ে নেয়।কিন্তু সান তাতেদমেনি।জবার ক্লাসের পথে ওকে তুলে নিয়ে যায় জোর করে বিয়ে করার জন্য।সেদিন আকাশ পুলিশের সাহায্যে জবাকে উদ্ধার করে।আকাশ উপায় না পেয়ে জবাকে বিয়ে করে নেয়।ও কিছুতেই রাজি হচ্ছিলোনা কিন্তু আকাশের ফ্রেন্ড্রা ওকে অনেক বুজায়,জীবনে অনেক কিছু হয় তাই বলে থেমে থাকেনা জীবন। তুই জবাকে বিয়ে করলে ও এখানে সেফ থাকবে। আর তুইও নরমাল হতে পারবি। আর এখন জবাকে দেশেও দিয়ে আসতে পারবিনা জবার এক্সাম সামনে।মিতু যা করছে তার জন্য কেন তুই নিজেকে কষ্ট দিবি।আকাশ তাই বাধ্য হয়ে বিয়ে করে নেয়।কিন্তু এই চার বছরে কোনো স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক গড়ে ওঠেনি।প্রথম এক বছর আকাশ জবার থেকে একদম দূরে থাকতো।এরপর আসতে আসতে ওদের ভিতর বন্ধুক্তের সম্পর্ক হয় কিন্তু হাজবেন্ড ওয়াইফের সম্পর্ক ওদের মাঝে এখনো হয়নি।জবাও এই নিয়ে কোনা অভিযোগ করেনা।থাকনা আকাশতো তার পাশেই আছে তাতেই সই।বিয়ের দুই বছরের মাথায় জবা বাসার সবাইকে এই কথা জানায়।প্রথম এই কথা শুনে ইকবাল আর মোতালেভের মধ্য মনোমালিন্য হয় কিন্তু অতঃপর তারা মেনে নেয় এটা তাদের ছেলেমেয়েরা যদি এতে খুশি হয় তাহলে তাদের সম্যসা নেই।কিন্তু আকাশকে নিয়ে তাদের মাঝে চিন্তা রয়েই গেছে।

রাতে স্নেহা বেলকনিতে বসে আছে তুলতুলকে খাইয়ে ঘুম পারিয়ে রেখেছে।স্নেহা বেলকনির সোফায় বসে আকাশ দেখছে এর মাঝে আরাফ এসে তাকে জরিয়ে ধরলো।

আরাফ:আমার বউটা কি করছে?
স্নেহা:কিছুনা এইতো বসে আছি।আচ্ছা আরাফ একটা কথা জিজ্ঞেস করতে চাই তোমাকে?
আরাফ:হুম বলো।
স্নেহা:আরাফ তুমি কি জানো যে মিতু কোথায়? দেখো মিথ্যা বলবেনা আজকে আমি তোমার ফোনে দেখেছি মাহিন নামের একটা ছেলে মিতুর ব্যাপারে ম্যাসেজ দিয়েছে।
আরাফ:আমি তোমাকে জানাতাম তবে সঠিক সময় আসলে। আকাশ আসুক তখন না হয় জানাবে।
স্নেহা:মানে?
আরাফ:আছে বলা যাবেনা এখন।এখন আমি আমার বউকে আদর করবো।
স্নেহা:এই একদম না আরা….

স্নেহাকে আর কিছু বলতে না দিয়ে ওর ঠোঁট দুটো দখল করে নিলো আরাফ।

জবা আকাশের রুমে এসে দেখে আকাশ খাটে হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে আছে হাতে বই।জবা এসে হাত থেকে আসতে করে বইটা সরিয়ে আসতে করে শুইয়ে দেয় আকাশকে।জবা আকাশের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে আর ভাবছে,

জানো আকাশ কিশোরি কালে যখন ভালোবাসা কি জিনিশ বুজতে শিখলাম তখন মনের কোঠায় তোমাকে জায়গা দিয়ে ফেলি।কিন্তু তখন তো জানতাম যে তুমি স্নেহা আপুকে ভালোবাসো তাই মনের অনূভূতি মনেই মাটি দিয়ে দেই।কিন্তু তবুও মন মানতে চায়না তবুও #আড়ালে_ভালোবেসেছি। যেদিন দেখলাম তুমি স্নেহাক আপুকে রেখে মিতুকে বিয়ে করলে সেদিন তোমার উপর রাগ ঘৃণা লাগছিলো।তোমাকে দেখলেই রাগ লাগতো।তাই চলে গেলাম নানুবাসায়।কিন্তু পরে শুনলাম এগুলা সব ফাঁদ।তবুও ফিরিনি চেয়েছিলাম তুমি স্নেহা আপুর হয়ে যাও।কিন্তু পরে জানলাম আরাফ ভাইয়ার সাথে আপুর বিয়ে।তখন মনের কোথাও একটু আশা হচ্চিলো তবুও প্রকাশ তা করিনি।আপুর বিয়ের দিন যখন তুমি আপুকে বিদায় দিয়ে তোমার রুমে গিয়ে জিনিস গুচ্ছাছিলে আমি বুজেগেছিলাম তুমি দূরে কোথাও যাচ্ছো।তাই সেদিন আমি তোমায় একা আসতে দেইনা আমি জানতাম স্নেহা আপুর বীরোহে তুমি খুব পুড়বে।মিতুর সাথে যা করছো তার অনুসুচনাও তোমার হবে।আর আমি জানি তোমার তাই হচ্ছে।আমি কোনোদিন তোমার কাছে স্ত্রীর অধিকার দাবি করবোনা।আমাদের সম্পর্ক যেমন আছে তেমনি ভালো আছে।তুমি আমার পাশে আছো আর আমি তোমার পাশে এটাই অনেক।আমি তোমাকে #আড়ালে_ভালোবাসি।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here