আড়ালে_ভালোবাসি,পর্ব_৪,৫

0
2200

আড়ালে_ভালোবাসি,পর্ব_৪,৫
নন্দিনি_চৌধুরী
পর্ব_৪

“কি খুব কস্ট হচ্ছে?”

পিছন থেকে হঠ্যাৎ এমন একটা কথা শুনে চমকে উঠলাম। সাথেসাথে পিছনে ফিরে দেখি আকাশ দারিয়ে আছে। তার মুখে তাচ্ছিল্যের হাসি। আমি আকাশকে দেখে ওর আড়ালে চোখের পানি মুছে, মুখে শুকনো হাসি রেখে বল্লাল,

স্নেহা:না কস্ট হচ্ছেনা বরং আফসোস হচ্ছে।আফসোস এই ভেবে হচ্ছে যে এতদিন আমি একটা ভুল লোককে ভালোবেসেছি. যে কিনা এক নিমিষেই আমার ভালোবাসাকে পিসে দিয়ে অন্য কাউকে বরণ করে নিয়েছে নিজের জীবনে। আর সবার সামনে আমার ভালোবাসাকে মিথ্যা বলে দিলো। কেন আকাশ কেন এমন করলে। একটা বার তোমার মনে হলোনা এরকম করাতে আমি কতটা কস্ট পাবো?

আকাশ এত্তক্ষন স্নেহার কথা গুলো শুনছিলো এভার আকাশ স্নেহার একদম কাছে এসে বলে,

আকাশ:প্রতিশধ নিলাম। তুমি যেমন আমার ভালোবাসাকে অসস্মান করে অন্য একটা ছেলের সাথে…. ছিহ আমার ভাবতেও ঘৃণা লাগছে তোর মত একটা মেয়েকে আমি ভালোবেসেছিলাম। যে কিনা এত নোংরা।তুই যেমন আমাকে রেখে অন্য কাউকে নিয়ে ছিলি এখন আমিও মিতুকে নিয়ে সেভাবে সুখে থাকবো,আর শুনে রাখ তুই যতই নিজেকে সতি দাবি করিস। এই বাড়ির প্রত্যেকেই এখন জানে তুই একটা নস্টা মেয়ে। তোর মতো চরিত্রহীনা এই বাড়িতে পরে আছে শুধুই বড় বাবার কারনে নাহলে তোকে কালই এই বাড়ি থেকে বের করে দিতাম।

আকাশের কথা গুলো শুনে স্নেহার চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পরছে। স্নেহা আর সয্য করতে না পেরে আকাশকে জোরে একটা থাপ্পর মারলো। আর চেঁচিয়ে বলতে লাগলো,

স্নেহা:খবরদার আমার চরিত্র সম্পর্কে কোনো কথা বলবেনা। আমি জানি আমার আল্লাহ জানে আমি কতটা পবিত্র। আমি তুমি ছাড়া অন্য কোনো ছেলের সাথে মিশাতো দূর কথাও তেমন বলতাম না তুমি জানো তো সেটা। তাও তুমি ওই ছবিগুলো দেখে মেনে নিলে যে আমি অই ছেলের সাথে। ছিহ্, কেমন ভালোবাসা তোমার যে এইটুকুও বিশ্বাস নেই নিজের ভালোবাসার মানুষটার প্রতি। তুমি আমার কাছে আসলেই আমি তোমাকে বুঝাতে পারতাম। তা না করে তুমি মিতুকে বিয়ে করে নিলে। হাহ্! শুনে রাখো আকাশ আজ থেকে এই মূহূর্ত থেকে এই স্নেহার মনে তোমার জন্য শুধুই ঘৃনা থাকবে। সকল ভালোবাসাই মরে গেছে তোমার জন্য। একদিন না একদিম সত্য সামনে আসবেই। সেদিন তুমি বুজবে যে আমি কি।

আকাশ স্নেহার কথা শুনে রাগে গজগজ করতে করতে চলে গেলো আর স্নেহা সেখানে বসেই কাঁদতে লাগলো।

আরাফ আজ অনেকদিন পর তার বন্ধুদের সাথে দেখা করতে গিয়েছিলো। বন্ধুদের সাথে দেখা করে বাসায় এসে। নিজের রুমে যাওয়ার সময় শুনতে পেলো স্নেহার রুম থেকে কান্নার আওয়াজ আসছে। আরাফ দেখার জন্য উকি দিয়ে দেখে স্নেহা মেঝেতে বসে কাঁদছে। অনেক বেশি কাদাঁর কারনে চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে। আরাফ ওর কাছে যেতে নিয়েও গেলোনা। দরজাটা লাগিয়ে তার সাথে হেলান দিয়ে দুইহাত ভাজ করে দাঁড়ালো আর বলতে লাগ্লো,

আরাফ:আর একটু অপেক্ষা কর স্নেহা পাখি। যারা তোমাকে এভাবে কস্ট দিয়েছে তাদের প্রত্যেকেই পাইটুপাই হিসাব দিতে হবে। যে আজ তোমাকে এত কস্ট দিলো। তার আফসোস এর সময় খুব তাড়াতাড়িই আসবে। শুধু আর কিছু সময় এর অপেক্ষা। একবার আমি তোমাকে হারিয়েছি। এভার আর হারাতে দিবোনা এটা আমার প্রমিস।

আরাফ কথা গুলো বলেই আবার নিচে চলে গেলো।

দুপুরে খাবার টেবিলে সবাই একসাথে খাবার খেতে বসেছে। শুধু নেই স্নেহা আর আকাশ।
স্নেহাকে তার মা ঘরেই খাবার দিয়ে এসেছে। আসলে সে চায়না স্নেহা এখানে আসুক আর কেউ তাকে কিছু বলুক। সবাই স্নেহার উপর রেগে আছে সেতা জানে।

আরাফ খাওয়ার এক পর্যায় মিতুর দিকে তাকিয়ে বল্লো,

আরাফ:মিতু আকাশ ক?ই আকাশকে যে দেখছিনা?আমি আসার পর একবারের জন্য আমার কাছে আসেনি।

মিতু:আসলে ভাইয়া কাল আপনি অনেক রাত করে এসেছিলেন। আকাশ আর আপনার সাথে দেখা করেনি। সকালে করতে চেয়েছিলো। কিন্তু অই আম্মু আব্বু আসার পর তাদের সাথে কথা বলেই আকাশ বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেছে। তার কি একটা দরকারি কাজ আছে তাই।

আরাফ:ওহ আচ্ছা। আকাশ ফিরলে আমার কাছে আসতে বলো।

মিতু:জি আচ্ছা ভাইয়া।

আরাফ এভার বড় চাচির দিকে তাকিয়ে মিষ্টি করে হেসে বলে,

আরাফ:বড় কাকিয়া আমি তো জানি তোমার মেয়ে তিনটা। কিন্তু এখানেতো শুধু দুইজনকেই দেখছি। আরেকজন কই তাকে কি ঘর বন্ধি করে রেখে দিয়েছো?

আরাফের কথায় সবাই খাওয়া রেখে চুপ হয়ে যায়। আরাফ এভার সবার দিকে তাকিয়ে বলে,

আরাফ:ছোট থেকে দেখতাম স্নেহাকে তোমরা অনেক আদর করো। কারন ছোট কাকা ওকে রেখে চলে গেছে বলে। বড় কাকা আর কাকিয়া ওকে নিজের মেয়ে করে নিয়েছে। তোমরা সবাইও ওকে কত ভালোবেসেছো। আর আজ ওর একটা কি ছবি তোমরা হাতে পেলে ব্যাস তোমাদের ভালোবাসা শেষ। স্নেহার প্রতি সব বিশ্বাস শেষ। তোমরা জানো তোমাদের বাড়ির মেয়ে কেমন জানোতো। তাহলে কেন তাকে না বিশ্বাস করে অই ছবি গুলোকে সত্যি ভাবছো। যদি এমন হয় ওগুলা মিথ্যা। তখন কি করবে পারবে তোমরা স্নেহার সামনে গিয়ে দাঁড়াতে? স্নেহা কিন্তু তোমাদের দুড়ে করে দেবেনা। ঠিকি কাছে টেনে নেবে। কিন্তু তোমরা তোমরা কি করবে?

আরাফের কথা শুনে সবাই চুপ। আরাফ ভুল কিছুই বলেনি। সত্যিত বলেছে। হতেই পারে ছবি গুলো ভুল মিথ্যা। তাদের স্নেহা তো এমন নয় তারাতো তা জানে। তবে কেন শুধু শুধু তারা মেয়েটাকে কস্ট দিচ্ছে। তাদের বাড়ির মেয়েটা ছোট থেকে বাবাকে কাছে পায়নি। তাদের আকড়ে ধরেই তো সে আছে। আজ তারাও তাকে কস্ট দিচ্ছে। সবার ভেতরেই চাপা কস্ট দিচ্ছে।

আরাফের কথা শুনে এভার ওর বাবা বল্লো,

আরাফ:মানছি যে আমরা ঠিক করছিনা। কিন্তু ছবি গুলা যে মিথ্যা তার কোনো প্রমান তো নেই। আকাশ নিজেই আমাদের ছবি গুলো দেখিয়েছে।

বাবার কথা শুনে আরাফ মুচকি হেসে বলে,

আরাফ:বাবা এখন আধুনিক কম্পিউটারের যুগ। এই যুগে কোনো কিছুই অসম্ভব না। সব কিছু সম্ভব। তবে তুমি চিন্তা করোনা বড় কাকা আর আমি এই বিষয়টা নিয়ে কাজ শুরু করে দিয়েছে। খুব জলদি সব জানা যাবে। তবে এখন তোমরা স্নেহাকে এখন আগলে নেও। এখন ওর তোমাদের খুব প্রয়জন।

আরাফের কথা শুনে সবাই সহমত দিলো। আসলেই এখন স্নেহার পাশে তাদের থাকা দরকার। সবাই নিতুকে বল্লো কাল সকাল থেকে যেন স্নেহাকে নিয়ে সে নিচে খেতে আসে। কাল থেকে তারা আবার কলেজে যাবে। আর নিতু যেন এখম স্নেহার সাথেই থাকে।

_______________________________________

ক্লাবে বসে একের পর এক ড্রিংক করে যাচ্ছে আকাশ। তাকে আটকানোর চেষ্টা করছে নুয়াজ।নুয়াজ আকাশের ছোট বেলার বন্ধু দুই বন্ধু এক সাথেই স্কুল, কলেজ,ভার্সিটিতে পড়েছে।নুয়াজ আকাশ আর স্নেহার ব্যাপারে সব জানতো।নুয়াজ স্নেহাকে নিজের ছোট বোনের মত আদর করতো আর স্নেহাও নুহাজকে ভাইয়া বলে ডাকত।নুয়াজ গত দিনের সব ঘটনা শুনে আকাশের প্রতি অনেক রেগে আছে কিন্তু আকাশ এত ড্রিংক করেই যাচ্ছে নুয়াজ সেটা দেখতে পারচ্ছেনা,

নুয়াজ:আকাশ থাম এবার আর কত খাবি?কার উপর রেগে ড্রিংক করছিস স্নেহা নাকি মিতুর উপর?

আকাশ এবার মদের গ্লাস্টা হাতে নিয়ে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখছে আর মাতাল কন্ঠে বলছে,

আকাশ:আমি স্নেহাকে অনেক ভালোবেসেছি রে অনেক। তবুও ও আমাকে ঠকালো। আমার ভালোবাসায় কোনো কমতিতো ছিলনা। তবে কেন নুয়াজ কেন ও আমার ঠকালো।

নুয়াজ: তুর ভালোবাসায় বিশ্বাসের কমতি আছে। তুই স্নেহাকে না বিশ্বাস না করে ছবি গুলোকে বিশ্বাস করলি। আর মিতুকে বিয়ে করে নিলি। এখন আবার মিতুকে ডিভোর্স দিয়ে দিবি বলছিস। কি করতে চাইছিস কি তুই?

আকাশ এবার মাথা টেবিলে দিয়ে বলে,

আকাশ:আমি শুধু ছবি গুলোকে বিশ্বাস করিনি। একটা ভিডিও দেখেছি তারপর মিতুও বলছে। এগুলা তো আর মিথ্যা না। আর মিতুকে আমি ভালোবেসে বিয়ে করিনি। স্নেহার প্রতি রাগ জেদের বসেই করেছি।আমি মিতুকে ছয় মাস পর ডিভোর্স দেওয়া যাবে। ছয় মাস আমাদের এক সাথে থাকতে হবে তারপরেই ডিভোর্স দিতে পারবো। এরপর চলে যাবো দেশের বাহিরে এখানে আর থাকবোনা।

নুয়াজ আকাশের কথার পর আর কিছু বলেনি। নুয়াজ জানে আকাশ কত বড় ভুল করেছে এর দায় তো ওকে দিতেই হবে।

আকাশ মাত্রারিক্ত ড্রিংক করে ফেলেছে যে ড্রাইভ করাত মত অবস্থায় নেই। তাই নুয়াজ ওকে বাসায় পৌছে দিতে নিয়ে গেলো।

নুয়াজ আকাশকে বাসায় এনে দরজায় বেল দিতেই আরাফ দরজা খুলে দিলো নুয়াজ আরাফকে দেখে সালাম দিলো।

নুয়াজ:আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া। ভালো আছেন?

আরাফ: ওলাইকুমুস সালাম।হ্যা আলহামদুলিল্লাহ।তুমি?আর আকাশের এই হাল কেন?

নুয়াজ:জি আমিও আপনাদের দোয়ায় আলহামদুলিল্লাহ।আসলে ভাইয়া আকাশ আজকে অনেক বেশি ড্রিংক করে ফেলেছে। তাই ড্রাইভ করাত মতো অবস্থায় নেই। তাই আমি ওকে নিয়ে এলাম।

আরাফ:আচ্ছা ওকে আমার রুমে নিয়ে যাও। সিড়ি দিয়ে উপরে গিয়ে ডানে যে রুম আছে ওটা আমার।

নুয়াজ:জি আচ্ছা।

নুয়াজ আকাশকে রুমে দিয়ে আরাফকে বিদায় দিয়ে চলে গেলো।

আরাফ রুমে এসে সোফায় বসে পরলো।আকাশকে ড্রাংক অবস্থায় মিতুর কাছে যেতে দেয়নি যদি নেশার ঘোরে কিছু করে ফেলে। আরাফ জানে যে ওদের ভিতর সব স্বাভাবিক না। আর এম্নিতেও আকাশের সাথে আরাফের কিছু কথাও আছে। তাই তাকে এই রুমেই রাখা।

#চলবে

#আড়ালে_ভালোবাসি
#পর্ব_৫
#নন্দিনি_চৌধুরী

সকালের মিষ্টি রোদে ঘুম ভেংগে যায় স্নেহার।চোখ মুখ কুচকে ফেলে সে।হাতের কাছে ফোনটা নিয়ে দেখে সকাল ৮টা বাজে।স্নেহা আসতে করে উঠে চুলটা ভালো করে খোপা করে ক্লেচার দিয়ে আটকে নেয়।এরপর বিছানা থেকে নেমে সব গুছিয়ে আলমারি থেকে ড্রেস নেয় কলেজে যাওয়ার জন্য।আজকে স্নেহার মনটা কিছুটা ভালো। গতকাল রাতেও তার মন খুব খারাপ ছিলো। কিন্তু আরাফ তার মন একদ্ম ভালো করে দিয়েছিলো।

গতকাল রাতে…….

স্নেহার নিজের রুমে কিছু জিনিশ খুজে পাচ্ছেনা। পরে তার মন পরলো সে প্রায় আকাশের রুমে কিছু না কিছু ফেলে রেখে আসতো। আর আকাশ সেগুলা গুছিয়ে দিয়ে যেতো। হয়ত শেষ যেদিন সে আকাশের রুমে গিয়েছিলো তখন সেগুলো রেখে এসেছে। কিন্তু আকাশ তাকে গুছিয়ে দিয়ে যায়নি। স্নেহা ভাবে আরতো দিয়েও যাবেনা গুছিয়ে।তাই বাধ্য হয়ে স্নেহাকেই যেতে হবে এখন আকাশের রুমে। তার জিনিশ গুলো আনতে। আর না আনলেও হবেনা স্নেহার জরুলি জিনিশ অগুলো।কিন্তু স্নেহা ভাবছে সে কি করে যাবে আকাশের রুমে। আকাশ যদি রুমে থাকে তবে তাহলে আবার তাকে কথা শোনাবে।আর বাড়ির লোকের কাউকেও সে বলতে পারবেনা কেউ তো তার সাথে কথাই বলেনা।তাই অগ্যত্যা স্নেহাকেই যেতে হচ্ছে আকাশের রুমে।

স্নেহা এক পা এক পা করে এগোচ্ছে, আর ভয় পাচ্ছে। সে ভেবে নিয়েছে আকাশ যদি তাকে কিছু বলে তাহলে সে একদম দৌড়ে চলে আসবে।আকাশের রুমে সামনে এসে দেখে দরজা খোলা তবুও সে নক করে। আগেও নক করেই ডুকতো কারো ঘরে সে। নক না করে যায়না। কয়েকবার নক করার পরেও কোনো সারা শব্দ পেলোনা সে। তাই আসতে করে রুমে ডুকে গেলো সে। রুমে গিয়ে দেখে কেউ নেই। তাই স্নেহা তার জিনিশ গুলো খুজতে লাগ্লো আর পেয়েও গেলো। স্নেহা যখন রুম থেকে আসতে নিবে তখন মিতু ওয়াশরুম থেকে তাওয়াল দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে বের হয়ে দেখে স্নেহা দরজার সামনে দাঁড়ানো। স্নেহাকে দেখেই মিতুর রাগ উঠে গেলো। সে স্নেহাকে একদম সয্য করতে পারেনা। স্নেহাকে রুমে দেখে মিতু ওর দিকে এগিয়ে গিয়ে বলে,

মিতু:কি ব্যাপার স্নেহা তুমি এত রাতে এই রুমে কোনো দরকার?

স্নেহার মনেই ছিলোনা যে মিতুও আছে এই রুমে। তাই স্নেহা একটু ঘাবড়ে গেলো। তাও সে হেসে বল্লো,

স্নেহা:হ্যা এইযে কিছু জিনিশ আমার যা এই রুমে ছিলো। সেগুলো নিতে এসেছিলাম। আমি অনেকবার দরজায় নক দিয়েছিলাম কিন্তু তুমি দরজা খুলোনি। তাই আমি রুমে ডুকেগেছি এখন চলে যাচ্ছি।

মিতু স্নেহার হাতের দিকে তাকিয়ে দেখে কিছু জিনিসপত্র মিতু এভার স্নেহার দিকে তাকিয়ে বলে,

মিতু:শুধু এই জিনিসগুলো নিতে এসেছিলে নাকি কাউকে দেখতেও এসেছিলে?

মিতুর এমন একটা কথায় স্নেহা অনেক চমকে যায়। তবুও সে নরমাল ভাবেই উত্তর দেয়,

স্নেহা:মানে?

মিতু এভার বাঁকা হেসে বল্লো,

মিতু:মানে তুমি বুজতে পারলেনা নাকি বুজেও বুজতে চাইছ না। আচ্ছা আমিই বলছি তুমি আকাশকে দেখতে এসেছিলে নাকি,যে আকাশ আমি কেমন আছি সেটা। দেখো যদি সেটা দেখতে আসো তাহলে আমি আকাশকে তোমার থেকে অনেক ভালোরাখবো। তোমার মত ওকে ঠকাবোনা। আমিতো ভেবেই পাইনা স্নেহা যে তুমি কিভাবে পারলে আকাশকে ঠকাতে। যে তোমাকে এত ভালোবাসলো তাকে এভাবে ঠকালে। ছিহ্ স্নেহা।

মিতুর কথাগুলো শুনে স্নেহার চোখের কোণে পানি জমে গেছে এখনি হয়ত পরবে পানি গুলো।স্নেহা আর একটুও সেখানে দাঁড়ায় না ছুটে চলে আসে একদম ছাদে।হাতের জিনিশ গুলো ছুড়ে ফেলে দিয়ে চিৎকার দিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলে,

“কেন আল্লাহ কেন? কেন আমাকে এত কষ্ট দেও। আমি কি এমন পাপ করেছি যার শাস্তি সেই জন্মের পর থেকেই আমাকে দিচ্ছো। জন্মের পর আমাকে মাকে নিয়ে গেলে। মায়ের মৃত্যুর জন্য বাবা আমাকে দায়ী মনে করে আমাকে একবার দেখলেওনা আমাকে ফেলে চলে গেলো। তারপর যাদের কাছে সেই ছোট থেকে মানূষ হলাম তারাও আজ আমাকে ভুল বুজতেছে।আমি জানি বাবাই মা কে কত কিছু সয্য করতে হচ্চে আমার জন্য।আর যেই মানুষটাকে আমি আকড়ে বাচঁতে চাইলাম। যাকে জীবনের সব ভাবলাম, এত ভালোবাসলাম। আজ সেও আমাকে ভুল ভুজে দূরে চলে গেলো। অন্য কাউকে বিয়ে করে নিলো। ও আল্লাহ কেন এমন করলা। আমি কি পারবনা নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে। কবে পারবো আমি আল্লাহ কবে? আমি যে আর পারছিনা নিজের চোখের সামনে ভালোবাসার মানুষ্টাকে অন্য একজনের সাথে দেখতে”।

স্নেহা এভাবে কাদঁতে লাগলো হঠ্যাৎ কাধেঁ কারো হাতের স্পর্শ পেলো। সে পিছনে ফিরে দেখে আরাফকে।আরাফকে দেখে সে আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলোনা।সে আরাফকে জরিয়ে ধরে কেঁদে কেঁদে বল্লো,

স্নেহা:ভাইয়া আমার সাথে কেন এমন হয় বলোতো। আমি কি পাপ করেছি।যার শাস্তি পাচ্ছি আমি। আর এগুলা নিতে পারছিনা। আমার খুব কষ্ট হয়। (কাদঁতে কাঁদতে স্নেহা কথা গুলো বলছে।)

আরাফ স্নেহাকে পরম যত্নে আগলে নিলো নিজের বুকে। আর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলছে,

আরাফ:শান্ত হো স্নেহা পাখি। এভাবে কাঁদতে হয়না।তুই কোনো পাপ করিসনাই বুজলি। এটা আল্লাহর একটা পরিক্ষা। ধৈর্য্যে রাখ সব ঠিক হয়ে যাবে। আমি সব ঠিক করে দেবো। তোকে আর কাঁদতে দিবোনা।প্লিজ কাঁদিস না।

আরাফের কথায় স্নেহা কিছুটা শান্ত হয়। কিন্তু তবুও ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছে। আরাফ স্নেহার মাথা বুক থেকে তুলে ওর দুইগালে হাত রেখে বলে,

আরাফ:আজকের পর আর কাঁদবি না তুই। নিজেকে শক্ত রাখবি বুজলি। যে যাই বলবে তা শুনে চলে আসবিনা। অবশ্যই প্রতিবাদ করবি। একদম মুখের উপর জবাব দিয়ে আসবি। কেউ তোকে অপমান করলে তাকে তার যোগ্য জবাবটা দিবি।

আরাফের কথা শুনে স্নেহা মাথায় নাড়ালো। যার উত্তর ঠিক আছে।

আরাফ এভার হেসে স্নেহাকে বল্লো,

আরাফ:কাল থেকে তুই কলেজে যাবি নিতুর সাথে। আর সবার সাথে নিচে খেতে বসবি।

আরাফের কথা শুনে স্নেহা চমকে যায়। সবার সাথে নিচে কিভাবে যাবে সে। সবাইত তার উপর রেগে আছে। তাহলে সে কি করে যাবে।

স্নেহার চিন্তা দেখে আরাফ মুচকি হেসে বলে,

আরাফ:এত চিন্তা করার কিছু নেই। সবাই তোর উপর রেগে নেই। একটু কষ্ট পেয়েছে আরকিছুনা। সবাই বলেছে তোকে কাল থেকে নিচে আসতে। আর কলেজে যেতে। কয়েদিন পরেইতো এক্সাম তুর। পড়াশুনা কি কিছু করেছিস? না ঘুমিয়ে কাটিয়েছিস হু।?

আরাফের কথা শুনে স্নেহা অনেকটা খুসি হয়ে যায় আর বলে,

স্নেহা:সত্যি কেউ রেগে নেই। সবাই আমাকে ভুল বুজেনি?

আরাফ:হুম কেউ রেগে নেই।

স্নেহা:আচ্ছা তাহলে কাল থেকে আমি কলেজে যাবো। তাহলে আমার মন ভালো থাকবে।

আরাফ স্নেহার কথা শুনে হেসে দেয়। তারপর ওর কপালের চুল গুলু শরিয়ে একটা চুমু দিলো। আরাফের এমন কাজে অনেকটা শকড হয়ে যায় স্নেহা। সাথে লজ্জাও পায়। আরাফ স্নেহার ব্যাপরটা বুজতে পেরে ওর থেকে সরে দাঁড়িয়ে বলে,

আরাফ:যা এখন ঘুমাতে যা। সকালে জলদি উঠতে হবে।

আরাফের ধমক খেয়ে স্নেহা একদম ভো দৌড়। স্নেহার এমন কান্ড দেখে আরাফ হেসে বলে।

“পাগলি একটা”

স্নেহা নিজের রুমে এসে ধপাস করে শুয়ে পরে। আর লজ্জায় বালিস জরিয়ে ধরে ঘুমিয়ে যায়।

বর্তমানে,,,

আয়নায় চুল আচড়াচ্ছে আর কালকের কথা গুলো ভাবছিলো,আর ব্লাশিং হচ্ছিলো। সে জানেনা আরাফের সামনে গেলে তার মনে কি অনুভুতি হয়। তবে সে এটা জানে আরাফ অনেক ভালো একটা মানুষ। কোনোদিন কাউকে কষ্ট দেয়না। স্নেহা রেডি হতে হতে নিতু ওর রুমে এসে ওকে জরিয়ে ধরলো।

নিতু:আপু কি করছিস?

স্নেহা বোনকে কাছে পেয়ে অনেক খুশি হলো।

স্নেহা:এইত রেডি হচ্ছি কলেজে যাওয়ার জন্য। তুই রেডি?

নিতু:হ্যা আমি একদম রেডি। চল নিচে চল নাস্তা করতে। সবাই বসে আছে তোর জন্য।

স্নেহা:আচ্ছা চল।

তারপর নিতু আর স্নেহা মিলে নিচে এলো।

স্নেহাকে নিচে আসতে দেখে ওর সেঝো কাকি উঠে ওর কাছে গেলো। সেঝো কাকিকে নিজের দিকে আসতে দেখে স্নেহা ভাবছে কাকি কি ওকে বকবে। কিন্তু না এমন কিছুই হলোনা ওর কাকি ওর কাছে গিয়ে চোখের কাজল এর থেকে একটু নিয়ে কপালের পাশে লাগিয়ে বলে,

সেঝো কাকি:মাসাল্লাহ আমার মেয়েটার উপর কারো নজর না লাগে।আজকে তো বেশ মিষ্টি লাগছে আকার মেয়েটাকে।

স্নেহা কাকির এই কাজে খুব খুসি হয়ে। তাকে জরিয়ে ধরে। স্নেহা অনেক খুসি যে তার কাকি তার উপর রেগে নেই। স্নেহা আসতে আসতে সবার কাছে গেলো। সবাই তাকে আদর করে কাছে টেনেনিলো। আজকে নাস্তায় স্নেহার পছন্দের খাবার। পরাটা আর মুরগির মাংস। স্নেহার মেঝ বাবা ওকে পরাটা ছিড়ে ছিড়ে খাইয়ে দিচ্ছে। খাবার খাওয়ার মাঝে বড় কাকা সবাইকে উদ্দ্যেশ করে বলেন,

বড় কাকা:আজকে সবাই বিকালে ড্রইং রুমে থেকো। বাড়ির সবাই জেনো থাকে। ছেলে মেয়েরা থেকে শুরু করে বড়রা সবাই। আমার আর ইমরানের কিছু কথা আছে। নাজমাও আসবে আজকে।

বড় বাবার কথা শুনে সবাই আচ্ছা বল্লো।

খাওয়া শেষে নিতু আর স্নেহাকে কলেজে দিয়ে আসতে গেলো জুনায়েদ। জুনায়েদ এবার একটা প্রাইভেট কম্পানিতে জব পেয়েছে। রিতু আপু আর জুনায়েদ ভাইয়ার এক বছরের ছোট।

নিজের শরীলে তরল কিছু পরছে টের পেয়ে চট করে ঘুম থেকে উঠে গেলো আকাশ। চারিপাশে ভালো করে তাকিয়ে দেখে আরাফ ওর গায়ে পানি ঢেলে দিয়েছে। আকাশ চোখ মুখ কুচকে বল্লো,

আকাশ:ভাইয়া এটা কিন্তু একদম ঠিক না। কত সুন্দর ঘুমটা নষ্ট করে দিলি দূর।

আরাফ:সকাল ১০টা বাজে। ভার্সিটিতে কি আর যাবিনা বলে ঠিক করেছিস। তুর লাস্ট ইয়ারের এক্সাম না আছে। তাহলে তুই এক্সাম হলে যাবি কখন। যা এক্ষুনি ফ্রেশ হয়ে নিচে আয়। আমি খাবার টেবিলে অপেক্ষা করছি তোর জন্য।

আকাশ এতখন নেশার ঘোর কাটিয়ে ভালো করে তাকিয়ে দেখে সে আরাফের রুমে। কিন্তু সে এখানে এলো কেম্নে? সেতো ক্লাভে ছিলো।

আরাফ:এত ভাবার কিছু নেই। কাল রাতে মাতাল অবস্থায় তোকে নুয়াজ বাসায় দিয়ে গেছে। আমি রাতে তোকে এই রুমে রেখেছি। এখন নিজের রুমে গিয়ে ফ্রেশ হো।

আকাশ:আচ্ছা?।

আকাশ আর কথা না বাড়িয়ে নিজের রুমে গেলো।

মিতু আজকে এখনো সকালে নিচে নামেনি। জবা এসেছিলো ওকে ডাকতে। শরিল খারাপের বাহানে দিয়ে যায়নি। কারন আকাশ বাসায় নেই কেউ জিজ্ঞেশ করলে কি বলবে সেই ভয়েই জায়নি।

আকাশ রুমে এসে দেখে মিতু বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে। সামনে টেবিলে তার নাস্তা দেওয়া। কিন্তু সে খায়নি। আকাশ এসব গায়ে না লাগিয়ে কাবার্ড থেকে জামা নিয়ে ওয়াশরুমে গেলো ফ্রেশ হতে। হঠ্যাৎ রুমে কারো প্রবেশ করা বুজতে পেরে মিতু রুমে এসে দেখে বিছানায় আকাশের মানিন্যাগ আর ফোন। মিতু বুজতে পারে আকাশই রুমে এসেছে আর এখন ফ্রেশ হতে গেছে। মিতু সোফায় বসে পরলো। আকাশ বেরোলে তার সাথে কথা বলবে।

আকাশ শাওয়ার নিয়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে চুল মুচতেছে। আর মিতু তার দিকে চেয়ে আছে। এক আলদা মুগ্ধতা কাজ করছে আকাশের চেহারায়। মিতু আসতে করে বলে উঠলো,

মিতু:কাল রাতে কোথায় ছিলেন আপনি?

আকাশ মিতুর কথা শুনে চুল মুছা অফ করে। ওর দিকে তাকিয়ে বলে,

আকাশ:তোমাকে আমি আগেও বলেছি আর এখন আবার বলছি। নিজেকে আমার স্ত্রী ভাবা বন্ধ করো। আমি তোমাকে নিজের স্ত্রী মনে করিনা। তাই আমি কি করলাম, কখন আসলাম, আসলাম না কেন, এসব কৈফিয়ত তোমাকে দিতে বাধ্য নই। নিজের সিমার ভিতরে থাকো। সেটা ভালো হবে তোমার জন্য। আমাদের সম্পর্কের মেয়াদ মাত্র ছয় মাস। এরপর তুমাকে আমি ডিভোর্স দিয়ে দেবো। সো আমার ব্যাপারে নাক গলিওনা।

মিতু আকাশের কথার পিঠে কোনো কথা বল্লনা। নিঃশব্দে রুম থেকে আসতে করে চলে গেলো।
আকাশ সেদিকে খেয়াল না করে রেডি হতে লাগ্লো।

খাবার টেবিলে বসে আকাশের জন্য অপেক্ষা করছে আরাফ। আকাশ সিঁড়ি বেয়ে নেমে এসে আরাফের পাসে বস্লো। খেতে খেতে দুই ভাই অনেক গল্প করতে লাগ্লো। কথা মাঝেই আরাফ বলে উঠলো।

“স্নেহার সাথে এমন কেন করলি আকাশ”?

#চলবে

ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন?।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here