আড়াল_কথা,২৬,২৭ অন্তিম

0
1250

#আড়াল_কথা,২৬,২৭ অন্তিম
#গুঞ্জন_চৈতি
#পর্ব_২৬

আড়াল মনোযোগ দিয়ে বিস্মিত হয়ে তার চাচার কথা শুনছিলো। হটাৎ ঘরের ভেতর বি’ক’ট শব্দ করে ওঠে। ঘর যেনো মাথার ওপর ভে’ঙে পড়লো বলে। সবাই আঁ’ত’কে ওঠে দরজার দিকে চেয়ে। প্রথম বারের মতো আবারও ঝং’কা’র করে ওঠে দরজায় গায়ে। এবার আর সগৌরবে দাড়িয়ে রইতে পারলো না দরজার কপাট জোড়া। খুলে পড়ে গেলো নিচে, শব্দ হলো তুমুল। দরজার কপাট দুটো ভেঙে নিচে পড়ে যেতেই দৃ’শ্য হলো চি’ন্তিত দু’খানা মুখ। শুদ্ধ আর আসিফ সাহেব দরজা বরাবর দাড়িয়ে, পেছনে আছে আশেপাশের দু তিনজন লোক। কৌতুহলী তাদের দৃষ্টি। বাপ ছেলে হুরমুরিয়ে ঘরে ঢুকে এলে আড়াল গিয়ে দুজনের সামনে দাড়ায়। শঙ্কিত তার মুখের আদোল। আসিফ সাহেব তার ভাগনীকে অ’ক্ষ’ত অবস্থায় দেখে বুক ভরা স্বস্তি নিয়ে দম ফেলেন। শুদ্ধ পরিবেশ বোঝার জন্য সবার মুখের ভঙ্গিমা খেয়াল করে। আবিষ্কার করে টুসুর অশ্রুছড়ানো মুখমণ্ডল। টুসুকে দেখে চরম পর্যায়ে অবাক হয় শুদ্ধ। এ ক’দিন কতো খোঁজ করা হলো মেয়েটার কিন্তু কোন হদিস মিললো না। শেষমেশ এখানে এভাবে দেখা মিললো। তার মানে শপিংমল থেকে দেখা সিসিটিভিতে যেই ওরনা মোড়ানো মেয়েটাকে দেখা গেলো সে টুসু ছিলো। তাই আড়াল কোন উচ্চবাচ্য না করে সিএনজিতে বসে গেছিলো। শুদ্ধ সাত্তারের দিকে তীর্যক দৃষ্টিতে তাকায়, যার জন্য এতো ভয় সে তো বিছানায় শুয়ে বিহ্বলিত দৃষ্টি ফেলে তাকিয়ে আছে। যেনো চাইতেই পারছে না চোখ মেলে। চোখ জোড়া বন্ধ হয়ে আসছে বারবার। পরিবেশটা কোনভাবেই বিপ’দ্যু’ক্ত মহল মনে হচ্ছে না। উল্টে সবার চোখেই অশ্রু খেলা করছে। এতোক্ষণ যা জেঁকে বসেছিলো শুদ্ধের মনে এখন সব ধোঁয়াশা হয়ে উড়ে গেলো। বি’প’দের আ’শ’ঙ্কা’য় এতোক্ষণ দম নিতে বড্ড ক’ষ্ট হচ্ছিলো তার, এবার তার অবসান হলো। কিন্তু আসলে হলো টা কি? ওদের এখানে এভাবে আসার মানে টা কি? শুদ্ধের মনের প্রশ্নগুলো শব্দ দিয়ে তুলে ধরার সুযোগ পেলো না তার আগেই আড়াল বলে ওঠলো,

‘আপনারা এখানে কিভাবে এলেন? খোঁজ পেলেন কি করে আমার? আমি এখানে স্বইচ্ছায় এসেছি কেউ জোর করেনি কিন্তু আমায়। শুদ্ধ এদিকে আসুন আপনি চাচাকে দেখুন না, চাচার খুব কষ্ট হচ্ছে। দেখুন না কিভাবে ব্লি’ডিং হচ্ছে। কিছুক্ষণ আগে একটা পেইন কিলার খেয়েছিলো, এখন বোধহয় ব্যাথা খানিক কমেছে কিন্তু ব্লি’ডিং তো হয়েই যাচ্ছে একটুও কমছে না। আপনি প্লিজ চাচাকে হসপিটালে নেওয়ার ব্যাবস্থা করুন।’

টুসু শুদ্ধের দিকে এগিয়ে এসে হাত জোর করে বলে,

‘প্লিজ বাবাকে হাসপাতালে নিয়ে চলুন। বাবার খুব কষ্ট হচ্ছে, কেমন যেনো নেতিয়ে যাচ্ছে ধীরে ধীরে। এতোক্ষণ তাও কথা বলছিলো এখন তো তাও বলছে না। বলেছিলাম আগে হাসপাতালে যেতে তারপর আড়ালের সাথে দেখা করা যাবে। আমার কথাই শুনলো না। আড়ালের সাথে কথা বলার জন্য একাই রওনা হয়েছিলো সিএনজি নিয়ে। আমি আলাদা সিএনজি নিয়ে গিয়েছিলাম আপনাদের বাড়ি পর্যন্ত। আপনার যা যা জানার আছে আর বলার আছে গাড়িতে বসে জেনে নেবেন এখন চলুন।’

টুসুর মুখে সাত্তারকে বাবা সম্বোধন শুনে শুদ্ধ বিস্মিত হয়। ভাবে ভুল শোনেনি তো? টুসু বোধহয় বুঝলো শুদ্ধের মনের অবস্থা তাই আবারও বলে ওঠলো,

‘আমি জানি আপনার মনে অনেক প্রশ্ন। এখন সময় নষ্ট না করে দয়া করে বাবাকে নিয়ে চলুন। আমি গাড়িতে বসে সব বলছি।’

শুদ্ধ তার বাবার সাহায্যে সাত্তারকে নিয়ে গাড়ির পিছনের সিটে শুয়িয়ে দেয়। টুসু তার বাবার মাথা নিজের কোলে উঠিয়ে নিয়ে বসে আর আড়াল বসে পায়ের কাছটাতে। শুদ্ধ গাড়ী স্টার্ট দিয়ে এগোতে থাকে হসপিটালের উদ্দেশ্যে। এতোক্ষণ আড়ালকে সাত্তারের বলা প্রতিটা কথা টুসু আবারও বলতে শুরু করে প্রথম থেকে। শুদ্ধ আর আসিফ সাহেব মন দিয়ে শোনে টুসুর সব কথা। আড়াল চুপচাপ জানালার দিকে ফিরে বসে আছে। ভেবে যাচ্ছে কিছু একটা গভীর ভাবে মগ্ন হয়ে। টুসু কথা শেষ করে কেঁদে ওঠে ঝমঝমিয়ে। শুদ্ধের কাছে জানতে চায় গতকাল রাতে কি হয়েছিলো। আড়ালকে আনতে যাবে করে সুস্থ অবস্থায় বেরোলো, সকালে ফিরলো র’ক্ত’মাখা ব্যান্ডেজ নিয়ে। শুদ্ধ তৎক্ষনাৎ উত্তর দিতে পারলো না। অপরাধ বোধ হলো মনে। খুলে বললো গতকাল রাতের ঘটনা। ক্ষমা চাইলো টুসুর কাছে। আড়াল ফিরে চাইলো শুদ্ধের দিকে, টুসুর হয়ে জবাব দিলো,

‘আপনি আপনার জায়গায় ঠিক ছিলেন। চাচাও চাচার জায়গায় ঠিক ছিলো। এসব আর আলোচনা না হোক।’

তখনই গাড়ি থেমে যায়, হাসপাতালে পৌঁছে গেছে তারা। সাত্তারকে নিয়ে যাওয়া হয় ভিতরে, তৎক্ষনাৎ চিকিৎসাও শুরু হয়। কিছুক্ষণ পরে ডাক্তার জানায় খালি পেটে অতি মাত্রার ক্ষ’মতা’সমপন্ন ওষুধ খাওয়ার কারনে শরীর অ’স্বা’ভাবিক ভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছে। ব্লি’ডিং ও থামানো যাচ্ছে না। শে’লা’ই ছুটে গিয়ে কান আবারও ঝুলে গেছে। আবারও অপারেশন করাতে হবে এক্ষুনি। দেরি হলে হয়তো ব্রেইনেও স’ম’স্যা দেখা দিতে পারে। যাবতীয় ফর্মালিটি শেষ করে শুরু হয় সাত্তার এর অপারেশন। চারজন মানুষ অধীর আকাঙ্খা নিয়ে বসে আছে সাত্তার এর সুস্থতার জন্য।

কিছুক্ষণ পর আড়াল উঠে যায় শুদ্ধের পাশ থেকে। হাসপাতাল থেকে বেড়িয়ে আসে রাস্তায়। শুদ্ধ ও পিছু পিছু এসে দাড়ায় আড়ালের পাশে। আড়াল পাশ ফিরে তাকায় না। শো শো করে চলা রাস্তার গাড়ী গুলোর দিকে চোখ রেখেই বলে ওঠে,

‘সালাউদ্দিন সাহেবকে এই অসুস্থ অবস্থায় নিশ্চয়ই জে’লে রাখা হয়নি। কোথায় আছেন উনি?’

শুদ্ধের মনে হলো আড়ালের গলা ভীষণ কাপছে। এমন একটা সময় এমন প্রশ্ন শুনে বেশ অবাকও হলো। তবে উত্তরটা এড়িয়ে গেলো না।

‘তোমার বাব.. মানে সালাউদ্দিন আহমেদ এর বি’রু’দ্ধে আমিনা বেগম বলেছিলো কোন এক বে’আ’ইনি কাজের সাথে নাকি সে জড়িত। ঠিক কি ধরনের বেআইনি কার্যকলাপ এর সাথে তিনি জড়িত তা ঠিক করে বলতে পারে নি। আমিনা বেগমের বড় ভাই জহির এসব সম্পর্কে মোটামোটি জানতো। সেই বুদ্ধি দিয়েছিলো তোমাকে, টুসুকে আর সালাউদ্দিন কে মে’রে ফেলতে। কিন্তু তাকে এখনো ধরা যায়নি সে এখনো পলাতক। খুব তাড়াতাড়িই ধরা হবে তাকে। পালিয়ে আর যাবে কোথায়? কিন্তু সালাউদ্দিন আহমেদ এর বে’আ’ইনি কার্যের সাথে সং’যু’ক্ততা নিয়ে, কোন প্রমাণ ছাড়া শুধুমাত্র আমিনা বেগমের কথার ওপর ভিত্তি করে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়নি কেসটা। ওপর মহল থেকে ভীষণ চা’প সৃ’ষ্টি হয়েছিলো। তাই ওনার বি’রু’দ্ধে বে’আ’ইনি বিষয়ক কেসটাকে ক্লোজ করে দেওয়া হয়েছে। তবে ফুপির খু’নের সাথে তার স’ম্পৃ’ক্ত’তা নিয়ে পুলিশ অবিশ্বাস করতে পারেনি। কারণ তারা ফুপির শরীরে সালাউদ্দিন আহমেদ এর হাতের ছাপ এবং র’ক্ত পেয়েছিলো। প্রথমে ভেবেছিলো হয়তো ফুপিকে বাঁ’চা’নোর চেষ্টা করেছিলো বলে এমন হয়েছে। কিন্তু আমিনা বেগমের কথার ওপর ভিত্তি করে এখন নতুন করে এই বিষয়টাকে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আর তাছাড়াও এখন আমার হাতে যথেষ্ট প্রমাণ আছে ওনার বি’রু’দ্ধে। প্রমাণগুলো সাবমিট করলে ফুপির খু’নে’র সাথে তার স’ম্পৃ’ক্ত’তা ও মাদক সি’ন্ডি’কে’টের সাথে তার জড়িত থাকা নিশ্চিত করবে ও যথাযথ শা’স্তি পাবে ওই লোকটা।’

‘এখন কোথায় আছে?’

‘পুলিশের দায়িত্বে সরকারি হাসপাতালে রাখা হয়েছে। সেদিন বেশ অসুস্থ হয়ে পড়েছিলো তাই তৎক্ষণাৎ ভর্তি করা হয়েছিলো।’

‘আমাকে সেখানে নিয়ে চলুন।’

শুদ্ধ পারলোনা জোর খাটিয়ে কিছু বলতে। আড়ালের কন্ঠে এক অদ্ভুত প্রবলতা শোনা গেলো। যা দমিয়ে দিলো শুদ্ধকে। ওখানে দাড়িয়ে থেকেই আসিফ সাহেবকে একটা টেক্সট করে দিয়ে রওয়ানা হলো আড়ালকে নিয়ে।

‘আমাদের বিয়ের কাবিনে মোহরানা কত ছিলো?’

শুদ্ধ থতমত হয় আচমকা এমন প্রশ্নে। বৈ’ক্ল’ব্য দৃষ্টিতে ঘার ঘুরিয়ে তাকায় আড়ালের দিকে। আড়াল বসে আছে নি’র্বি’কার হয়ে। দৃষ্টি তার সামন বরাবর। শুদ্ধ গলা খেঁ’কি’য়ে বলে ওঠে, ‘দশ লাখ’।

‘পরিশোধ করেছেন?’

শুদ্ধ এবার আরও এক ধাপ বেশি নাকাল হলো। যথাযথ উত্তর তার কাছে আছে। টাকা দেওয়াটাও কোন সমস্যা নয়। কিন্তু এমন পরিস্থিতিতে এমন প্রশ্নগুলো বেশ ভাবাচ্ছে তাকে। বেশ নড়েচড়ে বসলো শুদ্ধ, কিছু একটার পূর্বাভাস পাচ্ছে সে।ভাবলো সরাসরি জিজ্ঞেস করবে কিন্তু করলো না। চিন্তা ভাবনা করে স্থির করলো আড়ালের কথার সোজা জবাব দিয়ে যাবে। দেখা যাক কি হয়।

‘না করিনি। পরিস্থিতি তেমন ছিলো না।’

‘আমার আজকেই দেনমোহর এর টাকা চাই। আপনার সামর্থ্য আছে বলেই নিশ্চয়ই এতোগুলো টাকা মোহরানা দিয়ে বিয়ে করেছেন। আপনাকে তো আর কেউ জোর করেনি এতো টাকা মোহরানা দিয়ে বিয়ে করতে। সম্পূর্ণ লাগবে না, এক লাখ হলেই যথেষ্ট। কতটা সময় পেলে যোগাড় করতে পারবেন?’

শুদ্ধ নিজের দূরকল্পনা বাদ দিয়ে উত্তর দেয়, ‘আধ ঘন্টা’।

‘আধঘন্টার মধ্যে লাগবে না, আজকের মধ্যে যেকোন সময় পেলেই হবে। এখন আপাতত হাসপাতালে চলুন।’

.

হাসপাতালে আসার পর আড়াল দূর থেকে এক পলক দেখে বাবা নামক অমা’নু’ষ’টাকে। কাছ ঘেঁষে না এক মুহুর্তের জন্যও। তারপর আশেপাশে ঘুড়ে দেখে কিছুক্ষণ। কয়েকজন নার্স এর সাথেও আগ বাড়িয়ে কথা বলে। প্রায় আধ ঘন্টা সময় কাটায় এদিক সেদিক করে। আধ ঘন্টা পর শুদ্ধকে নিয়ে ফিরে যায়, যেখানে তার চাচার অপারেশন হচ্ছে।

____________

রাতের আকাশ এর বুক দখল করে আছে শত সহস্র তারা। অথচ হাজারো তারাদের ভীরে একাই নজর কারছে অর্ধ চন্দ্রিমার মোহময়ী রুপ। কি শুভ্র তার রুপ। কোটি কোটি নজর ধরে রাখার জন্য এই একটা চাঁদই যথেষ্ট। তার কোন সহচরী প্রয়োজন হয় না। ঠিক তেমন সালাউদ্দিন আহমেদ ও একাই সবার জীবন ধ্বংস করে গেছে। সবার জীবনে তার কলুষিত ছাপ রেখেছে একাই। নিজের স্বার্থ সিদ্ধি করতে আপন পর বলতে কিছু মনে করে নি। সে এইটুকু শাস্তি প্রাপ্য নয়। আরও অনেক বড় শাস্তি প্যাপ্য সে।

শুদ্ধের ডাকে হুঁশ ফেরে আড়ালের। শুদ্ধ চিন্তিত কন্ঠে বলে ওঠে,

‘কি হয়েছে তোমার? পুরো বাড়ি খুঁজে এলাম তোমায় কোথাও পেলাম না। ছাঁদে এসে দেখি আকাশের দিকে অপলক তাকিয়ে আছো। কতগুলো ডাক দিলাম। উত্তরই দিলে না।’

‘বলুন কি বলবেন।’

‘তোমার প্রাপ্য বুঝিয়ে দিতে এসেছিলাম। এই নাও, টাকা পুরোটাই আছে। তোমার যেভাবে খুশি খরচ করবে। প্লিজ হিসেব দিতে এসো না কখনো।’

আড়াল টাকাটা হাতে নিয়ে নেমে যায় নিচে। দাঁড়ায় না এক মুহুর্তও। টাকাটা নেওয়ার সময় আড়ালের নজর ঝুঁকে গেছিলো। শুদ্ধ খেয়াল করেছে সেটা। কিছুক্ষণ ছাদের মুক্ত বাতাসে দাড়িয়ে মনটাকে হালকা করে নিয়ে, নেমে যায় নিচে। নামতে নামতে কল করে রিয়াদ এর কাছে। সে এখন টুসুর সাথে হসপিটালে আছে। সাত্তার আহমেদ এখন বি’পদ’মুক্ত আছেন। কয়েকদিন এর ভেতর সুস্থ হয়ে যাবেন। বড় কোন ক্ষতি হয়নি তার। শুদ্ধ সিড়ির নিচে দাড়িয়ে কথা শেষ করে নিজের রুমের দিকে যায়। যাওয়ার পথে আড়ালের রুমে উকি দিয়ে দেখে যায় কিছু একটা লেখালেখি করছে আড়াল।আড়ালকে দেখে শুদ্ধ নিজের রুমে গিয়ে কিছু কাগজপত্র নিয়ে বসে, ঘাটাঘাটি করতে। ঘন্টাখানেক পড় আলো বেগম এসে শুদ্ধকে বলেন, আড়াল কে সারা বাড়িতে কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না। ছাঁদ থেকে শুরু করে প্রতিটা ওয়াশরুম পর্যন্ত খোঁজা হয়েছে কিন্তু কোথাও দেখা মেলেনি আড়ালের। খাবারের জন্য ডাকতে গেছিলেন। তখন দেখেন আড়াল রুমে নেই। শুদ্ধ তার মায়ের কথা শুনে হন্তদন্ত হয়ে বেড়িয়ে যায় আড়ালের খোজ করতে। আসিফ তার ভাগ্নির নিখোঁজ হওয়ার কথা শুনে পাগল প্রায় হয়ে যান। সবাই মিলে সারারাত খোজ করে সম্ভাব্য জায়গা গুলোতে।

শুদ্ধ আশেপাশে খোঁজ করে কিছু একটা মনে করে গাড়ি ঘোরায় হাসপাতালের দিকে। যেখানে আড়ালের বাবা ভর্তি রয়েছে। ভেতরে গিয়ে দেখে আড়ালের বাবা আর বেঁচে নেই তাকে পা থেকে মাথা অবধি ঢেকে নামানো হচ্ছে বেড থেকে। পাশে কয়েকজন নার্স, একজন ডাক্তার আর একজন কনস্টেবল রয়েছে। জিজ্ঞেস করলে জানা যায় হটাৎ করে কেমন হাসফাস করছিলো, তারপরেই বন্ধ হয়ে যায় হৃৎস্পন্দন। ডাক্তার বলছে ব্রেন স্ট্রোক করেছিলো। কিন্তু শুদ্ধর মন বলছে অন্যকিছু। মনটা বড্ড কু গাইছে তার। সব ঘটনা গুলো এক হয়ে ইঙ্গিত করছে কিছু একটা। শুদ্ধ কিছুক্ষণ ভেবেচিন্তে রওনা হয় আড়ালের মাকে যেইখানে রাখা হয়েছে সেখানে। সেখানে যাওয়ার পরেও ফলাফন শুন্য, কেউ কোথাও নেই। ফিরে আসার সময় দেখা হয় সেখানকার আঞ্চলিক নাইট গার্ড এর সাথে। যে রাতের বেলায় ঘুড়ে ঘুড়ে টহল দিয়ে থাকে আশেপাশে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা যায় বারোটার দিকে একটা মেয়ে ক’ব’র’স্থা’নের দেয়ালের এপাশে দাড়িয়ে খুব কান্নাকাটি করছিলো। সে কাছে এসে দাঁড়াতেই মেয়েটা চলে যায়। শুদ্ধ নিজের ফোন বের করে আড়ালের একটা ছবি দেখায়। আড়ালকে অজ্ঞান অবস্থায় গাড়ি করে নিয়ে যাবার সময় তুলেছিলো এটা। ছবিটা দেখে নাইটগার্ড সহমত জানিয়ে বলে এই মেয়েটাই তখন কাদছিলো। সোজা গিয়ে ডানদিকের রাস্তা ধরে হেঁটে গেছে মেয়েটি। শুদ্ধ বুঝে যায় আড়াল ওদের বাড়ি গেছে। গাড়ী ঘুড়িয়ে রওয়ানা হয় আড়ালদের বাড়ির উদ্দেশ্যে। মনে মনে প্রার্থনা করে আড়াল যেনো ও বাড়িতেই থাকে। পথিমধ্যে আসিফ সাহেব ফোন করেন। আড়ালের রুমে একটা চিঠি পেয়েছেন তিনি। চিঠিটার ছবি তুলে পাঠিয়ে দেন শুদ্ধকে। শুদ্ধ পড়তে শুরু করে চিঠিটা..

#চলবে

#আড়াল_কথা
#গুঞ্জন_চৈতি
#পর্ব_২৭(অন্তিম পর্ব)

পথিমধ্যে আসিফ সাহেব ফোন করেন। আড়ালের রুমে একটা চিঠি পেয়েছেন তিনি। চিঠিটার ছবি তুলে পাঠিয়ে দেন শুদ্ধকে। শুদ্ধ পড়তে শুরু করে চিঠিটা।

শুদ্ধ,

কি দিয়ে শুরু করবো বুঝতে পারছিনা। সালাউদ্দিন আহমেদ এর র’ক্ত বইছে তো শরীরে, তাই বে’ই’মা’নি না করে পারলাম না। আপনাদের সবার ভালোবাসা আর স্নেহের সাথে বেইমানি করে চললাম আমি অজানা উদ্দেশ্যে। আপনার টাকাগুলো থেকে এক লক্ষ টাকা নিয়েছি, বাকিটা আলমারিতে তোলা আছে। এই টাকা দিয়ে সালাউদ্দিন আহমেদ এর শেষ করতে যাচ্ছি আমি। তবে নিজ হাতে নয়, আসলে ওনার মতো মানুষের অভাব নেই এই দুনিয়ায়, যারা কিনা টাকা ছাড়া কিছু চেনে না। ওনার মতো লো’ভী কারো হাতেই ওনার স’মা’প্তি ঘটবে আজ। এতোদিন অবধি এতোটাও পা’ষা’ন হয়ে ওঠতে পারিনি, পারিনি এমন ভ’য়ং’কর চিন্তা ধারণ করতে। কিন্তু আজ সকালে চাচার কথাগুলো আমায় নতুন করে ভাবিয়ে তুলেছে। মনে মনে প্রশ্নের আলোড়ন তুলেছে একটি নাম, ‘সিমা’। জানেন, এই নামটি আজ প্রথম শুনিনি, এর আগেও শুনেছি। আসলে ছোটবেলায় টুসুকে আমার খানিক অপছন্দ ছিলো। কারণ আমার সবথেকে কাছের মানুষ আমার মা আর চাচা ওকে খুব আদর করতো। আমার মনে হতো আমার আদরে ও ভাগ বসাচ্ছে। তাই প্রায় সময় ওর সাথে আমার কিছু না কিছু নিয়ে লেগেই থাকতো। যখন আমার বয়স ছিলো বারো বছর তখন একদিন এক বৃদ্ধা মহিলা এসেছিলো আমাদের বাড়ি। সেদিন বাড়িতে ছিলাম আমি, মা, বাবা আর টুসু। চাচি বাপের বাড়ি গিয়েছিলো তার মেয়েদের নিয়ে আর চাচা গিয়েছিলো শহরে। সেই বৃদ্ধা মহিলার সাথে মায়ের অনেক্ক্ষণ কথা হয়। টুসুর নামে কথা হচ্ছিল তাই কৌতুহল বসত লুকিয়ে শুনেছিলাম আমি কথাগুলো। টুসুর মায়ের মৃত্যু স্বাভাবিক ছিলো না। তাকে নাকি একটা লোক হ’ত্যা করার চেষ্টা করেছিলো। তখন ওই বৃদ্ধা মহিলা কোনভাবে বাঁচিয়ে নিয়েছিলো তাকে। কিন্তু পেটে আঘাত পাওয়ায় তখন আট মাস চলাকালীন সময়ে তৎক্ষনাৎ ডেলিভারি করাতে হয়। জন্ম হয় টুসুর, টুসু সুস্থভাবে জন্ম নিলেও টুসুর মা সিমা বা’চঁ’তে পারে নি। অতিরিক্ত র’ক্ত’ক্ষ’রণ এর কারনে দুনিয়া ত্যাগ করতে হয়েছিলো তার। ওই বৃদ্ধা মহিলা ছিলো টুসুর নানি। তিনি দেখেছিলেন তার মেয়ের হত্যাকারীর চেহারা। তিনি এই কথাটি তার স্বামী আর ছেলেকে বলেছিলেন কিন্তু তারা মানসম্মান এর ভয়ে এই কথা বাইরে বের করতে দেননি। এমনকি টুসুর জন্মের কথাও হাতে গোনা কয়েকজন জানতো। স্বামী সন্তান এর ভয়ে টুসুকেও নিজের কাছে রাখতে পারে নি ওই বৃদ্ধা। ফেলে রাখতে হয়েছে অনাথ আশ্রমে। ওইদিন মায়ের কাছে উনি এসেছিলো কিছু টাকা নিয়ে। তার ইচ্ছে ছিলো সেই টাকাগুলো দিয়ে যেনো টুসুকে ভালো ঘরে বিয়ে দেওয়া হয়। ওই বৃদ্ধা মহিলার টাকা মা সেদিন রাখেনি। মা নিজেই সমস্ত দায়িত্ব নিয়েছিলো টুসুর। সেদিন শুধু আমি একাই লুকিয়ে লুকিয়ে কথা শুনছিলাম না, আরও একজন শুনছিলো। সে ছিলো সালাউদ্দিন আহমেদ। মা আমাকে লুকিয়ে কথা শুনতে দেখলে বকবে ভেবে টেবিলের নিচে বসে ছিলাম চুপটি করে। তাই দরজার পিছনে দাঁড়িয়ে থাকা সালাউদ্দিন আহমেদ আমায় দেখতে পায়নি। আমি সেদিন ভেবেছিলাম উনিও হয়তো আমার মতই কৌতুহল হয়ে কথা শুনছে লুকিয়ে। ওনার কাছে নিজের ধরা পড়ে যাওয়ার ভয়ে ওনাকেও জানতে দেইনি যে আমি ওনাকে দেখেছি লুকিয়ে কথা শুনতে। ওই বৃদ্ধা মহিলা বেরিয়ে যাওয়ার সাথে সাথেই সালাউদ্দিন আহমেদ বেরিয়ে পড়েছিলো ওনার পিছু পিছু। আমিও বেরিয়ে এসে মায়ের সাথে বসেছিলাম উঠানে। ঠিক দশ মিনিট পড়েই কয়েকজন লোকের হুল্লোড় শুনে মা আমাকে নিয়ে বের হয় বাড়ির বাইরের মাটির রাস্তায়। আমাদের বাড়ির পিছন দিকে পড়েছিলো ওই মহিলার লা’শ। তাকে গলা টিপে হত্যা করা হয়েছিলো। তখন আমাদের বাড়ির আশেপাশে কোন বাড়ি ছিলো না। ছিলো শুধু সারি সারি গাছের বাগান। তাই হয়তো খু’নী বেশ সাহস নিয়ে নিজের কার্য সিদ্ধি করতে পেরেছে। সেদিন যে বাবা বেড়িয়েছিলো তারপর প্রায় দুই বছরের ভেতর আর ফেরেনি। শুধু ফোন দিয়ে বলেছিলো সে বেড়িয়ে গেছে, জরুরি কাজ থাকায় জলদি যেতে হয়েছে তাকে। তারপর থেকে দেখতাম মায়ের সাথে ওনার খুব ঝ’গ’ড়া হতো। তখন না বুঝলেও এখন আমি বুঝেছি ওই মহিলা সালাউদ্দিন আহমেদ এর হাতেই খু’ন হয়েছিলো। কারণ ওনি যখনই ফোন করতো তখনই ওই মহিলার খুনের সুরাহা সম্পর্কে খোঁজখবর নিতো। জিজ্ঞেস করলে বলতো মানবিকতার খাতিরে জানতে চায়। ফোনে আমার সাথে কথা বলার সময় আমাকেও জিজ্ঞেস করতো, আমি যখন যেটুকু জানতাম বলে দিতাম। আজ চাচার মুখে সব ঘটনা শুনে অতীতের হিসেব মিলাতে খুব বেশি সময় লাগে নি আমার। আর কনফার্ম হওয়ার জন্য ছোট্ট একটা চেষ্টা করেছি । আজ হাসপাতালের এক নার্সের সাথে আসার সময় কথা বলে নাম্বার নিয়ে এসেছিলাম। বাড়িতে আসার পর তার সাথে যোগাযোগ করে প্ল্যান মতো সব বুঝিয়ে বলি, সে আমার কথামতো সন্ধ্যার পর সালাউদ্দিন আহমেদ এর সামনে গিয়ে দুটি কথা বলেছে। প্রথম কথা ছিলো, সে নারী পাচারকারী চক্রের সঙ্গে জড়িত আছে তা ওই নার্স জানে, এখন পুলিশদের সব বলে দেবে প্রমাণসহ। আর দ্বিতীয় কথা ছিলো সিমা আর তার মায়ের হত্যাকারী যে সে তা ওই নার্স জানে। তাও পুলিশদের বলে দেবে। প্রথম কথাটি শুনে সালাউদ্দিন আহমেদ কোন রিয়াকশন দেয়নি। শুধু ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে ছিলো কিন্তু দ্বিতীয় কথাটি শুনে সালাউদ্দিন আহমেদ উত্তেজিত হয়ে পড়েছিলো। গোঙাতে গোঙাতে মুখ দিয়ে ফেনা উঠে গিয়েছিলো তার। আমার শিখিয়ে দেওয়া কথা অনুযায়ী ওনার করা সমস্ত অপরাধের কথাও একে একে নার্স বলে গেছে, দয়া দেখিয়ে থেমে যায়নি এক মুহুর্তের জন্যও। সবগুলো কথা শুনে আরও বেশি উত্তেজিত হয়ে পড়েছিলো সালাউদ্দিন আহমেদ। ভেবে দেখুন ওই একটা মানুষের জন্য কতোগুলো মানুষের জীবন উজার হয়ে গেছে। কতোগুলো মানুষের র’ক্তে রাঙিয়েছে তার ওই কলুষিত হাত। এমন একটা মানুষ এর কি সত্যিই এতো যত্নের সাথে বেঁচে থাকা প্রাপ্য? নার্স বলেছে মধ্যরাতে সবার অলক্ষ্যে গিয়ে কি একটা ইনজেকশন পুশ করবে, তাতে নাকি হার্ট এট্যাক করে মারা যাবে সালাউদ্দিন আহমেদ। সবাই জানবে তার হা’র্ট এ’ট্যা’কে’র দরুন মৃ’ত্যু হয়েছে। এক ল’ক্ষ টাকার বিনিময়ে লোকটার মৃ’ত্যু নির্ধারন করেছি আজ। আমি নার্স এর সাথে কথা শেষ করেই ছুটে গিয়েছিলাম ছাঁদে। সেখানেই আপনার সাথে আমার শে’ষ দেখা হলো। আর কখনো আমাদের দেখা হবে না। আপনি আমাকে ভালোবাসেন, আমি তা জানি। আমি আপনাকে ভালোবাসি না আপনিও সেটা জানেন। তবে যেটা জানেন না সেটা জানাতে চাই। কবুল বলার সময় মন থেকেই উচ্চারণ করেছিলাম শব্দটি। মন থেকে আপনাকে স্বামী হিসেবে গ্রহণ ও করেছিলাম। কিন্তু এখন যে কাজ করতে যাচ্ছি আমি, তা যে বড্ড নীচ কাজ। নিজের বাবাকে হ’ত্যা করতে যাচ্ছি টাকা দিয়ে লোক ঠিক করে। এতো নি’কৃ’ষ্ট একজন আপনাদের জীবনে বড্ড বে”মানা’ন। ও বাড়িতে থাকলে যে কারো চোখের দিকে চাইতেও বড্ড অপরাধী মনে হবে নিজেকে। তবে যাওয়ার আগে সব জানিয়ে গেলাম, যাতে নিজের মনটা খানিক হলেও হালকা হয়। আপনাদের বাড়ির প্রতিটা সদস্যের মন অনেক পবিত্র। আমি সেই পবিত্রতা ন’ষ্ট করতে চাই না। তাই চলে যাচ্ছি। টিকিট কেটেছি রেখেছি সিলেটের, বারোটায় বাস। ভালো থাকবেন।

.

শুদ্ধ চিঠিটার শেষ অংশ পড়ে মনে মনে পণ করলো সে একটুও হাসবে না। চেষ্টা করলো নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করার। কিন্তু পারলো না। হেসেই দিলো শেষমেশ। বউটা তার চা’লা’কি করে আবার বাসের কথাও উল্লেখ করে গেছে। কিছুক্ষণ পর শুদ্ধ গাড়ি থামায় আড়ালদের বাড়ি থেকে খানিক দুরত্ব রেখে। গাড়ি থেকে নেমে মিনিট খানেক পায়ে হেঁটে এগিয়ে গেলো বাড়ির দিকে। ঘরের ভেতরে লাইট জ্বলছে। তারমানে আড়াল ভেতরেই আছে। বাইরে আবার সিএনজি ও দাড়ানে আছে। সিএনজিওয়ালা কে দেখে চেনা চেনা মনে হলো শুদ্ধের কাছে। তারপর মনে পড়লো লোকটার বাড়ি দুই বাড়ি পরেই। নাম রহমতুল্লাহ, বয়স আনুমানিক ত্রিশ পঁয়ত্রিশ এর মধ্যেই হবে। আড়ালকে বোনের নজরেি দেখে। এখানে থাকাকালীন সব খবরাখবর নেওয়া হয়েছিল ছেলেটার ব্যাপারে। আড়াল হয়তো ডেকে নিয়ে এসেছে পালানোর জন্য। শুদ্ধ মনে মনে বলে,

‘ছেঃ! সবগুলো কাজই কাচা কাজ। চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রেখে দিয়েছো সবকটা কাজের ক্লু। এভাবে পালালে তো এক ঘন্টাও লাগে না খুজে বের করতে। সিআইডি অফিসারের বউ হয়ে এমন এঁ’ড়ে বলদামি করলে শেষমেষ। মান সম্মান দেখছি বিনা ডিটারজেন্টে ধুয়ে আবার শুকিয়েও ফেললে গো বউ।’

শুদ্ধ সিএনজিওয়ালার পাশে গিয়ে দাড়ায়। স’ন্দেহ’জ’নক ভাবে জিজ্ঞেস করে,

‘এখানে কি হচ্ছে?’

‘কই কিছু হচ্ছে না তো। আপনি কে মহাশয়? এতো রাতে এখানে কি মতলবে আগাছার মতো গোছা গাড়া হচ্ছে শুনি?’

‘আমার বউকে ভু’তে পেয়েছে তাই ওঝা হয়ে এসছি ভু’ত ছাড়াতে। এইযে আমার ওঝাগিরির আাইডি কার্ড। আপনাকেও ঝা’ড় ফু’ক কিছু দিতে হবে নাকি এমনি এমনি কে’টে পড়বেন?’

শুদ্ধর দেখানো এক হাতে আইডি কার্ড আর আরেক হাতে রিভলবার দেখে রহমতুল্লাহ শ’ঙ্কি’ত নজরে এক পলক দেখেই সিএনজি নিয়ে কেটে পড়ে। এদিক ওদিক আর ফিরে চায়না। শুদ্ধ এবার সরাসরি প্রবেশ করে ঘরের ভেতর। ঘরের দরজা চাপানো ছিলো। আশেপাশে খুঁজতে খুঁজতে আড়ালের মায়ের রুমে গিয়ে উপস্থিত হয় শুদ্ধ। চোখে পড়ে আড়াল তার মায়ের কিছু জিনিসপত্র ব্যাগে ভরছে। হাতে টুংটাং আওয়াজ করছে তার দেওয়া সেই সাদা পাথরের চিকন চুড়ি আর আড়ালের মায়ের মোটা বালা জোড়া। বালা আর চিকন চুড়ির ঘর্ষনে যে টুংটাং আওয়াজ হচ্ছে তাতে যেনো বেশ বউ বউ গ’ন্ধ পেলো শুদ্ধ। কি শ্রুতিমধুর আওয়াজ।

শুদ্ধ ভেতরে ঢুকে আড়ালকে সরাসরি কোলে উঠিয়ে নেয়। আড়াল চমকে ওঠে আচমকা আ’ক্রম’ণে। কিন্তু শুদ্ধের আ’গু’নের গোলার ন্যায় উ’ত্ত’প্ত চেহারা দেখে কিছু বলার দুঃ’সাহ’স করলো না। আড়ালকে কোলে নিয়ে দরজার বাইরে এসে আড়ালকে দিয়ে দরজা লক করায়। তারপর হেঁটে যেতে যেতে বলে,

‘এর আগে দুইবার আমার কোলে উঠেছো তবে তা জ্ঞা’ন হারানোর পর। কিন্তু আজ মনে হচ্ছে কোলে ওঠার পর জ্ঞা’ন হারাবে। যেভাবে চোখ বড় করে চেয়ে দেখছো আমায়! তবে যাই বলো চাল টা কিন্তু খারাপ চালো নি আড়ালবতী। বারোটায় বাস এর টিকিট কেটেছো তাই না? সেটা আবার চিঠিতে উল্লেখ ও করে এসেছো যাতে ওইদিকে আমরা খোজাখুজি করতে করতে এদিক দিয়ে তুমি বেরিয়ে যেতে পারো। বাহ! বেশ ভালো। তবে পালাবেই যখন ওই ছা’গল’টাকে সাথে নিয়ে কেনো পালাচ্ছিলে? আমাকে বুঝি চোখে পড়ে না তোমার? বলো কোথায় যেতে চাও? আজ দুজন মিলে একসাথে পালাবো। হা’নি’মুন’টাও এই ফাঁ’কে সেরে নেওয়া যাবে।’

আড়াল সবগুলো কথাই চুপচাপ শুনে যায় কোন প্রতিউত্তর করে না। তবে শেষের কথাটা ক’র্ণ’পা’ত হতেই অ’ক্ষি’যুগল বন্ধ হয়ে যায়। চেয়ে থাকার সামর্থ হারিয়ে বসে যেনো। শুদ্ধ গাড়ি পর্যন্ত চলে এলে আড়ালকে ভেতরে বসিয়ে দিয়ে নিজেও বসে পড়ে। আড়ালের সিট বেল্ট লাগাতে গিয়ে ল’ক্ষ্য করে আড়ালের দু-চোখ বেয়ে ঢল নামছে নোনা পানিদের। তৎ’ক্ষ’নাৎ গাড়ি স্টার্ট দেয় না শুদ্ধ। পকেট হাতড়ে ফোন বের করে বাবাকে টেক্সট করে দেয় আড়ালকে সে পেয়ে গেছে। তারপর ফোনটা পকেটে রেখে ধীরে সুস্থে আড়ালের দিকে ফিরে বলে ওঠে,

‘তোমার বাবা আর এই দুনিয়ায় নেই, খবরটা দিয়েছে তোমার নার্স?’

আড়াল সচকিত হয় শুদ্ধের কথায়। বি’স্ময়’কর দৃষ্টি ফেলে তাকায় পাশে বসা আপন পুরুষটার চোখে। সবে তো রাত একটা বেজেছে কিনা স’ন্দে’হ। কথা ছিলো রাত দুটো কি তিনটের দিকে ইন’জে’ক’শন পুশ করা হবে। তাহলে এতো তাড়াতাড়ি কিভাবে? শুদ্ধ আবারও বলে ওঠে,

‘তোমার মায়ের মতো ওপরওয়ালাও বোধহয় চাননি তোমার দ্বারা এমন কিছু হোক। তাই তিনি নিজ দায়িত্বেই লোকটার নিঃশ্বাস কে’ড়ে নিয়েছে। ডাক্তার বলেছে ব্রেইন স্ট্রোক করেছিলো, তোমার নার্সের নিজ হাতে কিছুই করতে হয়নি। ওপরওয়ালা নিজেই তার জন্য ওপরের টিকিট কে’টে দিয়েছে। আর বাকিগুলোর শাস্তি নিশ্চিত করার জন্য তোমার বর আছে তো। সে সামলে নেবে বাকিটা।’

শুদ্ধ কথা শে’ষ করে গাড়ী স্টার্ট দেয়। আড়াল নি’রু’ত্ত’র হয়ে সব কথা শুনে আবার নিরাবেগ হয়ে বসে রয়। গাড়ি চলতে থাকে নিরবতার পথের পথিক হয়ে। আধ ঘন্টা পর আড়াল এর খেয়াল হয় তাদের গাড়িটা বাড়ির রাস্তায় যাচ্ছে না। বিচলিত হয়ে পাশ ফিরে তাকিয়ে বলে ওঠে,

‘এটা তো বাড়ির রাস্তা নয়। কোথায় যাচ্ছেন আপনি?’

‘বউ নিয়ে পালাচ্ছি। বউ নাকি আমায় ভালোবাসে না। তাই বউ এর মুখ থেকে ভালোবাসি না শোনা অবদি বউ নিয়ে ফিরবো না। দা মিশন ইজ অন।’

সমাপ্ত

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here