আড়াল_ভালোবাসি,পর্ব_২,৩

0
2372

আড়াল_ভালোবাসি,পর্ব_২,৩
নন্দিনি_চৌধুরি
পর্ব_২

রাত ১২টা,,

আকাশ নিজের রুমের বেলকোনির ইজি চেয়ারে বসে সিগারেট টানছে। এই নিয়া এক পেকেট সিগারেট শেষ করলো সে। তার চোখ দুটো লাল হয়ে আছে। এক মনে বাহিরের দিকে তাকিয়ে আছে। সে আজকের ঘটনা গুলো মনে করে যাচ্চে। সে যত যাই হোক সে তো ভালোবেসেছিলো, কিন্তু স্নেহা তাকে এভাবে ঠকালো। সে এটা কল্পনাই করতে পারছেনা। সে রাগ জেদের বসে যতই নিচে বিকেলে বলেছে সে মিতুকে ভালোবাসে। কিন্তু আসলে তো সে স্নেহার উপর রেগে মিতুকে বিয়ে করেছে। সে কোনোদিন স্নেহার জায়গা মিতুকে দিতে পারবেনা। আর মিতুকে নিজের স্ত্রি হিসেবেও মানতে পারবেনা। হয়ত শুধুই দায়িত্ব পালন করতে পারবে।

আজ সকালেও আকাশ অনেক খুসি ছিলো। নিজের ভালোবাসা, নিজের স্নেহাকে নিজের করে পাবে সেই খুসিতে। আকাশ অনেক খুসি ছিলো। সে তার রুমে বসে স্নেহার ছবি দেখছিলো। এমন সময় ওর ফোনে একটা ম্যাসেজ আসে ম্যাসেজে লিখা থাকে,

“যাকে ভালোবেসে নিজের জীবনসজ্ঞি করছেন, তার ব্যাপারে আগে পুরো জেনেনিন। নাহলে পরে জেনে হয়ত কস্ট পাবেন।”

আকাশ ম্যাসেজটা দেখে খুব অবাক হলো। আকাশ কোনো রিপ্লে দেবে তার আগেই আরো একটা ম্যাসেজ আস্লো,

“আমি জানি আপনি অবাক হচ্ছেন। অবাক হবেননা। আপনাদের বাড়ির পাসের পার্কে আজ বিকেলে আসবেন। ওখানে একটা ছেলে আপনাকে একটা পার্সেল দেবে। সেই পার্সেল খুলে নিজেই নাহলে দেখে নিবেন। যে আমি কি বলতে চাচ্ছি। আপনার আমাকে বিশ্বাস না হলে আপনি এসেই দেখে নিবেন।”

আকাশ ম্যাসেজর লোকটার কথা মানবে কিনা ভাবছে। পর্ক্ষনে ভাবে তার স্নেহা এমন কিছু করবেনা যাতে সে কস্ট পায়। সেটা আকাশ জানে। তাই আকাশ দেখতে চায় কে এই লোক যে আকাশ আর স্নেহার মাঝে দন্দ লাগাতে চায়। তাই আকাশ বিকেলে ম্যাসজের দেওয়া ঠিকানায় গেলো।কিছুখন পরেই একটা ছেলে এসে আকাশের হাতে একটা পার্সেল দিয়ে চলে গেলো। আকাশ পার্সেল্টা খুলে দেখে একটা খাম। খামটা খুলে দেখে তার ভিতর কিছু ছবি। ছবি গুলো হাতে নিয়ে অবাক হয়ে যায় আকাশ। স্নেহার সাথে একটা ছেলে তার দুজন একে অপরকে আষ্টেপৃষ্ঠে জরিয়ে ধরে কিস করছে। তাদের গায়ে কাপড়টাও নেই। আকাশ এসব দেখে থমকে যায়। এর মাঝেই আকাশের ফোনে একটা কল আসলো,

আকাশ ফোন হাতে নিয়ে দেখে একটা unknown নাম্বার থেকে কল এসেছে। আকাশ কল রিসিভ করলে অপাশ থেকে একটা পুরুষ কন্ঠে কেউ বলে উঠে,

অপরিচিত:দেখলেন তো তাহলে যাকে আপনি অনেক ভালোবাসেন সে কিভাবে আপনাকে ঠকালো। আমি জানি আপনি হয়ত এই ছবি গুলো বিশ্বাস করবেন না। তাই একটা ভিডিও দিচ্ছি, সেটা দেখলে বিশ্বাস করবেন।

আকাশ কল কেটে দেখে তার what’sapp এ একটা ভিডিও এসেছে। সেই নাম্বারটা থেকে। যেখানে দেখা যাচ্ছে একটা মেয়ে আর একটা ছেলের আপত্তিকর মেলামেশা। যদিও মেয়েটার মুখ স্পস্ট না, কিন্তু ছেলেটার মুখ অই ছবির মুখটা সেম। তাই আকাশ মেনে নিলো যে মেয়েটাও হয়তো স্নেহাই। আকাশ রাগে ফোন্টা একটা আছাড় মারলো। আর বেরিয়ে পরলো পার্ক থেকে উদ্দ্যেশ স্নেহার কাছে যাওয়ার,আর জবাব চাওয়া কেন সে এমন করলো। পথে মধ্য আকাশের সাথে দেখা হয় মিতুর।মিতু মেয়েটা স্নেহার ক্লাসমেট। তাছাড়া মিতুর বাড়িও আকাশদের বাড়ির এড়িয়াতেই। তাই প্রায় মিতুকে সে দেখে। স্নেহার ক্লাসমেট দেখে মাঝে মাঝে সে কথা বলতো। তবে সেটাও মিতু বললে সে বলত। মিতুদের বাসা আকাশদের বাসার পাশাপাশি হওয়ায় মিতু রোজ আকাশকে দেখতো। দেখতে দেখতেই আকাশকে মিতুর ভালোলেগে যায় যা একদম ভালোবাসার পরিনত হয়। কিন্তু মিতু তার মনের কথা আকাশকে বলার আগে একদিন কলেজে আকাশ আর স্নেহাকে একসাথে দেখে। পরে সে জানতে পারে আকাশ স্নেহাকে ভালোবাসে। এর পর থেকেই মিতুর স্নেহার প্রতি এক চাপা রাপ থাকে। সে স্নেহাকে সয্য করতে পারতোনা।

মিতু আকাশকে এভাবে রাস্তায় দেখে অবাক হয়ে যায়। মিতু যতদূর জানে আজ আকাশ আর স্নেহার এংগেজমেন্ট। তাহলে আকাশ রাস্তায় কি করছে। এরপর মিতুর চোখ যায় আকাশের হাতের ছবি গুলার দিকে। আকাশের থেকে ছবি গুলা নিয়ে সে অবাক। আকাশ এতক্ষন দাঁড়িয়ে ছিলো মিতুকে দেখে। কারন মিতু একদম আকাশের সামনে একটা দেয়ালের মতো দাঁড়ানো। তাকে পার করে সে যেতে পারছেন। আকাশ যেতেই নেবে এর মধ্য মিতু ছবি গুলা ওর হাত থেকে নিয়ে নেয়। এভার আকাশের রাগ উঠে যায় আকাশ কিছু বলবে তার আগেই মিতু বলে,

মিতু:আকাশ ভাইয়া এটা স্নেহা আর এই ছেলেটাতো। সেই ছেলে যাকে প্রায় ওর সাথে দেখি আপনার অবর্রতমানে।

আকাশ মিতুর কথা শুনে আরেকদফা অবাক হলো।

আকাশ:মানে?

মিতু এবার একটু জোর গলায় বল্লো,

মিতু:এই ছেলের সাথেও মনে হয় স্নেহার সম্পর্ক ছিলো আপনি থাকা অবস্থায়। তাইত এত মেলামেশা করতো। আমিত ভাবতাম হয়ত ওর বন্ধু। কিন্তু এই ছবি গুলো দেখে তো আমার সন্দেহ একদম সত্য দেখছি।

মিতু ইচ্ছা করেই এই মিথ্যা কথা গুলা বলছে। আসলে তো সে জানেইনা এই ছেলেকে বা এর সাথে স্নেহার কি রিলেশন। সে শুধু ছবি গুলা দেখেই একটা ফন্দি আটলো আকাশকে স্নেহার থেকে, দূর করার আর তার নিজের করে নেওয়ার।

আকাশের রাগে গা থরথর করে কাপছে। আকাশ নিজেক কোনোভাবে কন্ট্রল করে মিতুর হাত ধরে নিয়ে গেলো কাজি অফিসে। সেখানেই তারা বিয়ে করে নিলো। মিতু যেনো কোনো সপ্ন দেখছে। আজ সে তার ভালোবাসাকে নিজের করে পেয়েছে। কিন্তু সে যে মিথ্যা বলেছে, তা যদি আকাশ কোনোদিন জানে তবে সেদিন কি হতে পারে তা তার জানানেই।

এভাবেই মিতুর বিয়ে হয় আকাশের সাথে। তারপর আকাশ মিতুকে নিয়ে চলে যায় ওদের বাড়ি।

আকাশ এগুলা বেলকোনিতে বসে ভাবছিলো। হঠাৎ ওর কাধে কারো হাতের স্পর্শ পায়। আকাশ বিরক্তি নিয়ে তাকিয়ে দেখে মিতু দাঁড়িয়ে আছে। আকাশ ঝাজালো কন্ঠে বলে,

আকাশ:কি চাই? কিসের জন্য এখানে এসেছো?

মিতু ভয়ে ভয়ে বলে:আপনি ঘরে আসছিলেন না দেখে দেখতে এলাম আপ্নাকে।

আকাশের মিতুর এসব আদিক্ষ্যেতা সয্য হচ্ছিলনা। তাই আকাশ মিতুর হাত নিজের কাধ থেকে শরিয়ে শান্ত গলায় বল্লো,

আকাশ:দেখো মিতু আমি তোমাকে ভালোবেসে বিয়ে করিনি। ইভেন কোনোদিন বাসতেও পারবোনা। আমি বিয়েটা শুধু স্নেহার প্রতি রাগ ক্ষোভে করেছি। স্নেহা যাই করেছে আমিত স্নেহাকে ভালোবেসেছিলাম। কিন্তু ও আমায় ঠকালো। সুতারং নিজেকে আমার স্ত্রি ভাবা বন্ধ করো। আমরা স্বামী স্ত্রি শুধুই এই বাড়ির লোক আর সমাজের লোকের চোখে। তাদের সামনে আমরা হ্যাপি কাপল এর অভিনয় করবো। কিন্তু এই চার দেওয়ালের মাঝে তোমার আমার কোনো সম্পর্ক নেই। তাই আমার কাছে কোনো অধিকার আশা করোনা। তোমার সব দায়িত্য আমি পালন করবো। আর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তোমায় ডিভোর্স দিয়ে দেবো। তারপর আমি চলে যাবো ইতালি।

আকাশ কথা গুলো বলে বেরিয়ে গেলো রুম থেকে। যাওয়ার আগে যদি দেখতো একজোরা অস্রু ভেজা চোখ তার দিকে তাকিয়ে আছে। মিতু মাটিতে বসে কেঁদে যাচ্ছে আর ভাবছে সেকি আকাশের ভালোবাসা কোনোদিন পাবেনা। তাকে পাওয়ার জন্য কত বড় মিথ্যা সে স্নেহার বিরুদ্ধে বল্লো। আর সেই আকাশ তাকে আজ ও প্রত্যাক্ষান করছে।

__________

ভোরের দিকে হাল্কা হাল্কা করে চোখ মেলে তাকালো। স্নেহা চোখ খুলেই দেখে তার মাথার কাছেই তার মামনি বসে বসে ঘুমাচ্ছে। তারপর সামনে তাকিয়ে দেখে বাবাই নামাজ পড়ছে। স্নেহা নিজের মাথায় হাত দিয়ে দেখে মাথায় জল পট্টি দেওয়া। স্নেহা বুজতে পারছেনা সে তো ওয়াশরুমে ছিলো তাহলে এখানে আস্লো কেমন করে। স্নেহাকে লড়তে দেখে ওর মায়ের ঘুম ভেংগে গেলো। সে জলদি করে উঠে স্নেহার মাথায় হাত দিয়ে দেখলেন জর কমেগেছে। তিনি জলদি তার স্বামীকে ডাক্লেন,,,

মা:স্নেহার বাবা দেখেন স্নেহার জ্বর কমেছে। স্নেহা চোখ খুলেছে।

নামাজে মোনাজাত করা অবস্থায় কথাটা শুনেই মোনাজাত শেষ করেই স্নেহার পাশে বস্লেন তিনি।অভিমান কন্ঠে বললেন,

বাবা:মামনি কেন এভাবে নিজেকে এভাবে কস্ট দিতে চাও বলোতো। তুমি জানো কাল সারারাত তুমি জ্বরে অজ্ঞান হয়ে ছিলে। তোমার মা আমি কতটা অস্থির হয়েছিলাম। শাওয়ারে গিয়ে কেউ এভাবে বসে থাকে পানির নিচে। আজ যদি কিছু একটা হয়ে যেতো তোমার তাহলে আমরা কিভাবে থাকতাম বলোতো?

বাবার কথা শুনে স্নেহা বুজতে পারলো সে কাল রাতে শাওয়ারের নিচেই অজ্ঞান হয়েগেছিলো। স্নেহা খুব আস্তে করে বল্লো,

স্নেহা:সরি বাবাই সরি মা এমন আর হবেনা প্রমিস।

স্নেহার মা মেয়ের কপালে চুমু দিয়ে বলেন,

মা:এখন ভালো লাগছে মা তোর শরিলটা? কাল থেকে না খাওয়া তুই এখন কিছু খেয়ে নে। তারপর ঔষুধ খেতে হবে।

স্নেহার মা স্নেহার জন্য খাবার আনতে চলে যান। একটু পর খাবার এনে স্নেহাকে দুজনে ধরে বসিয়ে। খাবার অল্প করে খাইয়ে মেডিসিন খাইয়ে দেয়। স্নেহার শরীল ক্লান্ত থাকায় ও আবার ঘুমিয়ে যায়।

সকাল ৯টা

স্নেহার ঘুম ভাংগে রোদের আলো ওর চোখে পড়ায়। স্নেহা আড়মোড়া দিয়ে উঠে বসে। আস্তে করে উঠে ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে এসে বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়ায়। চারিপাশে চোখ বুলাতে বুলাতে হঠাৎ চোখ যায় গার্ডেনে একজনের দিকে। তার দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে যায় স্নেহা। মুখ থেকে আপ্না আপ্নি বেরিয়ে আসে “আরাফ ভাইয়া”।

চলবে
#আড়ালে_ভালোবাসি
#পর্ব_৩
#নন্দিনি_চৌধুরি

নিজের শরীল কি সবাই কে দেখিয়ে বেরাতে ভালো লাগে নাকি তোর?

হঠ্যাৎ পিছন থেকে কারো কর্কশ গলায় এমন কথা শুনে, অবাক হয়ে পিছনে তাকিয়ে দেখি আরাফ ভাইয়া দুইহাত ভাজ করে ব্রু কুচকিয়ে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।আমি আরাফ ভাইয়ার এমন কথা শুনে নিজের দিকে তাকিয়ে লজ্জায় লাল হয়ে যাই। আমি প্লাজু আর গেঞ্জি পরা অবস্থাতেই নিচে নেমে এসেছি। একটা ওড়নাও নেইনি সাথে করে। লজ্জার আমার জান বের হয়ে যায়। আমি আর কোনো কথা না বলে সোজা এক দৌড়ে নিজের রুমে চলে আসলাম।রুমে এসে হাপাচ্ছি বুকে হাত দিয়ে। ইসসস কি লজ্জা কি লজ্জা। আমি এভাবে নিচে আরাফ ভাইয়ার সামনে ছিহ্। আরাফ ভাইয়া না জানি আমাকে কি ভাবলেন।উফফফ সত্যি আমার মাথা পুরাই গেছে দূর!

আসলে তখন স্নেহা আরাফকে গার্ডেনে দেখে অবাক হয়ে যায়।আরাফ দেশে আসবে সেটা সে জানতোনা। কারন আরাফ প্রতি বছর এক বারই দেশে আসে তাও তখন যখন স্নেহার এক্সাম থাকে। সে বাড়িতে বেশি থাকতে পারেনা। কচিং, এক্সট্রা ক্লাস সব করে একদম রাত হয় বাড়ি আসতে।আরাফের এই ব্যাপারটা স্নেহা একদম বুজেনা কেন সে অন্য সময় আসেনা।আরাফ গত দুইবছর হলো একজন প্রফেশনাল ডাক্তার হয়েছে।এই দুইবছর সে এক বার ও আসেনি দেশে সেঝ চাচি অনেক মন খারাপ করতো তার জন্য।কিন্তু এখন হঠ্যাৎ কি করে এলো আরাফ সেটাই ভাবছে স্নেহ।স্নেহা আর ও ভালো করে দেখার জন্য দৌড়ে গার্ডেনে যায় কিন্তু গিয়ে দেখে সেখানে আরাফ নেই।

স্মেহা:এমা!এইত এখনি এখানে ছিলো এর মধ্য গেলো কই?

স্নেহা চারপাশে তাকিয়ে দেখতে লাগলো।এর মধ্যই পিছন থেকে আরাফ ওই কথাটা বলে উঠলো।

উফফ এখন আমি আরাফ ভাইয়ের সামনে যেতেই পারবোনা লজ্জায়।স্নেহা এরকম আকাশ পাতাল ভাবছে এর মধ্য স্নেহার মা তার জন্য খাবার নিয়ে রুমে আস্লো।তিনি স্নেহাকে এভাবে বসে থাকতে দেখে বলেন,

মা:কিরে কি ভাবছিস এভাবে?

স্নেহা মায়ের কথায় ধ্যান ভাংগে।

স্নেহা:না মা কিছুনা।আচ্ছা মা শুনো অই আরাফ ভাইয়াকে দেখলাম উনি কখন আসলেন?

মা:অহ আরাফ অতো কাল রাতে এসে বাংলাদেশে পৌছেচে। তোর মেঝ কাকা আর সেজ কাকা গেছিলো ওকে আনতে। ওই তো এসে তোর ট্রিটমেন্ট করলো। নাহলে ওতো রাতে কই পেতাম ডাক্তার। আল্লাহর রহমত আল্লাহ ওকে পাঠিয়েছিলো।

স্নেহা:অহ আচ্ছা।

মা:আচ্ছা এইনে তোর খাবার। খেয়ে মেডিসিন খেয়ে নে। আমার আবার ও দিকে অনেক কাজ পরে আছে। আকাশের বউয়ের বাড়ির লোকেরা আসছে। আকাশের আক্কেল্টা কি বিয়ে করেছে যেই মেয়েকে তার বাড়িতে এখনো জানাইনি। মেয়েটার বাড়ির লোকেরা যে চিন্তা করে সেটা কি ও বুজেনাই।

মায়ের কথা শুনে গতকালকের সব ঘটনা মনে পরে গেলো। নিমিষেই মনের আকাশে আবার মেঘ জমাট বাধতে লাগলো।

স্নেহা:মিতুর বাড়ির লোকেরা কখন আসবে?

মা:এইত কিছুখনের ভিতরেই আসবে। আর শোন তুই নিচে যাস না কেমন এসব সয্য করতে পারবিনা তুই।

স্নেহা:আমি এসব সয্য করতে পারবোনা নাকি আমাকে নিচে কেউ সয্য করতে পারবেনা কোনটা মা?

আমার কথা শুনে মা চুপ হয়ে গেলো। তারপর আসতে করে রুম থেকে চলে গেলো। আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ছেরে বেলকনিতে গেলাম।এই বেলকোনিতে বসেই অনেক হাজার শত মান অভিমান ভালোবাসার ঘর বেধেছিলাম আকাশের সাথে আর আজ সেই আকাশ….।

নাহ আমি কাঁদবোনা আকাশের জন্য। কেন কাঁদবো ওই বেইমানের জন্য। যে আমাকে সবার সামনে চরিত্রহীনা বলে। যে আমাকে বিশ্বাস না করে অই ছবি গুলোকে বিশ্বাস করেছে। যে আমার ভালোবাসাকে পায়ে ঠেলে অন্য কাউকে নিজের আপন করে নিয়েছে।তার জন্য আমি কাঁদবোনা।আমি ঠিক নিজেকে নির্দোষ প্রমান করবই।সেদিন আকাশ বুজবে ও কি হারিয়েছে।না অভিশাপ না আমি চাই ও ভালো থাক কিন্তু ওর জানা দরকার কারো মনে আঘাত করে কেউ ভালো থাকতে পারেনা।

মিতু সেই সকাল থেকে রুমে বসে আছে আর আকাশ এক মনে ল্যাপ্টোপে কি জানি করছে মিতু বারবার আড়চোখে আকাশের দিকে তাকাচ্ছে মিতু জানেনা এই ছেলেটার মাঝে কি যাদু আছে যা তাকে ওর দিকেই টানে।তবে মিতু এটুকু জানে সে ভালোবাসে তার সামনে থাকা এই মানুষটাকেই সে ভালোবাসে আর যেকোনো কিছুর বিমিময়ে সে তার কাছেই থাকবে আর তার মন জয় করবেই।মিতু কাল রাতেই ভেবে নিয়েছে একবার যখন আল্লাহর কালাম পরে তার স্ত্রি হয়েছে সে মরন ছাড়া আর কোনোদিন তার থেকে সে আলাদা হবেনা।সে আকাশের মনে তাত জন্য জায়গা তৈরি করবেই।

মিতু খুব টেনশোনে আছে কিছুখন পর তার মা বাবা আর বড় ভাই আসবে। সে কিভাবে তাদের মুখামুখি হবে। কাল হুট করে সে বিয়ে করে নিলো। তাদের জানালো না। কাল সারারাত হয়ত তার ওর জন্য চিন্তা করেছে।মিতুর বড় ভাই বেশ রাগি যদি রাগের বসে কিছু করে বসে তাহলে মিতু এই নিয়ে খুব চিন্তিত।

আকাশ অনেক্ষন যাবত মিতুকে এভাবে চিন্তিত দেখে ল্যাপ্টোপের দিকে তাকিয়ে থেকেই বল্লো,

আকাশ:এত চিন্তার কিছু নেই। তোমার ফ্যামিলিকে আমি সামলে নেবো। তুমি শুধু ঠিক ভাবে ওদের সামনে থেকো।

মিতু মাথা নিচু করে বল্লো আচ্ছা।
এর মধ্য জঁবা আকাশের রুমে আসলো

জঁবা:আকাশ ভাইয়া মিতু ভাবিকে নিয়ে সেঝ মা তোমায় নিচে আসতে বলেছে। ভাবির বাবা মা আর ভাই এসেছে।

জঁবার কথা শুনে আকাশ মিতুর দিকে তাকিয়ে বল্লো,

আকাশ:আচ্ছা তুই যা আমরা আসছি।

জবা চলে যাওয়ার পর আকাশ সোফা থেকে উঠে মিতুর কাছে এসে বল্লো,

“চলো। আর হ্যা যা বলতে বলেছি তাই বলবে মনে থাকে যেনো।”

মিতু:জি।

ডাইনিং রুমে সোফায় বসে আছে মিতুর বাবা মা আর বড় ভাই মারুফ।

তাদের সামনে বসা সেঝ চাচা আর বড় চাচা।

মিতুর বাবা:আমি বুজতে পারছিনা কাল পর্যন্ত যেই ছেলের অন্য একজনের সাথে এংগেজমেন্ট ছিলো। সে এভাবে হুট করে আমার মেয়েকে বিয়ে করলো কেনো?

মারুফ:আপনাদের বাড়ির ছেলের সাহস কত সে মাঝ রাস্তা থেকে আমার বোনকে তুলে নিয়ে গিয়ে বিয়ে করেছে। আপ্নারা জানেন আমরা মিতুর বিয়ে অন্য এক জায়গায় ঠিক করেছিলাম। সব কথা ফাইনাল হয়ে গেছিলো। শুধু আপনাদের ছেলের জন্য উলটাপালটা হয়ে গেলো। আমাদের পুরা পরিবারকে অপমানিত হতে হয়েছে।

কথা বলার মাঝেই আকাশ আর মিতু নিচে নেমো এলো,,,

মিতুকে দেখে ওর মা ওর কাছে এসে জরিয়ে ধরলো। মিতুও মাকে পেয়ে জরিয়ে ধরে কেঁদে দিলো। আকাশ এসব দেখে মিতুকে ছেড়ে ওর বাবা ভাইয়ের কাছে গেলো।

আকাশ:আসসালামু আলাইকুম।ভালো আছেন আপনারা?

মারুফ:ওলাইকুমুস সালাম।ভালো কি তুমি আমাদের রেখেছো?কোন সাহসে তুমি আমার বোনকে জোর করে বিয়ে করে এবাড়িতে নিয়ে এলে?

আকাশ:ভালোবাসার অধিকারে। আমি মিতুকে ভালোবাসি মিতু আমাকে ভালোবাসে। তাই বিয়ে করে নিয়েছি।

মারুফ:কিন্তু কাল তোমার একটা মেয়ের সাথে এংগেজমেন্ট ছিলো। আর আমার জানা মতে তার সাথে তোমার সম্পর্ক ছিলো। তাহলে তাকে ছেড়ে একদিনে কিভাবে আজকে আমার বোনকে ভালোবাসো বলছো?

আকাশ:দেখুন আমার ফ্যামিলি আমার সাথে আমার চাচাতো বোনের বিয়ে দিতে চেয়েছে। আমরা দুইজনেই বিয়েতে রাজি ছিলাম না। কারন আমি মিতুকে ভালোবাসি।আর স্নেহা অন্য একজনকে।আর রইল সম্পর্ক স্নেহার সাথে আমার শুধু ভাই বোনের সম্পর্ক। এর বাহিরে কিছুই নেই।

মারুফ এভার মিতুর কাছে এগিয়ে এসে বল্লো,

মারুফ:তুই কি সত্যি ওকে ভালোবাসিস?

মিতু এভার মায়ের থেকে সরে ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বল্লো,

মিতু:হ্যা ভাইয়া আমি আকাশকে অনেক ভালোবাসি। আমি ওকে ছাড়া অন্য কাউকে স্বামি হিসাবে মানতে পারবোনা।তোমরা আমার বিয়ে অন্য কোথাও দিয়ে দিচ্ছিলে। আর আমিও ভয়ে তোমাদের কিছু বলতে পারছিলাম না। তাই কাল আমরা বিয়ে করে ফেলেছি। যাই হোক আমি আকাশকে অন্য কারো হতে দিতে পারতাম না। তুই আমাকে ক্ষমা করে দিস প্লিজ ভাইয়া।

মারুফ আর কিছুই বল্লোনা সে বুজতে পারছে তার বোন সত্যি আকশকে ভালোবাসে।

এরপর মিতুর পরিবার আর আকাশদের পরিবার মিলে আলোচনা করে ঠিক করলেন তারা ওদের আবার বিয়ে দেবে। এটা শুনে আকাশ অনেক ভরকে যায়। যত যাই হোক সে সারাজীবন মিতুকে নিজের স্ত্রি করে রাখবেনা। একসময় তাকে মুক্ত করে দেবেই সে। তাই আকাশ এখন নানার অজুহাত দেখিয়ে বিয়ে আটকে দিলো। তবে সবাই বলে দিয়েছে আকাশ নিজের পায়ে দাড়ালেই ওদের ধুমধাম করে বিয়ে দেবে।

এত্তক্ষন উপরে দাঁড়িয়ে আড়াল থেকে আকাশের কথা গুলো শুনছিলাম। কতটা নিখুত ভাবে মিথ্যা বলতে পারে আকাশ। তাই দেখছি। এত গুলা দিনের সম্পর্ক এক নিমিসে মিথ্যা বানিয়ে দিলো। হাহ্! আর এই লোকটাকেই নাকি আমি ভালোবেসেছিলাম। নিজের প্রতি নিজের করুনা হচ্ছে।

আমি আর ওখানে না দাঁড়িয়ে রুমে চলে আসলাম।গিয়ে বেলকনিতে গিয়ে আবার দাঁড়ালাম। এখম এইটাই আমার একমাত্র জায়গা যেখানে বসে কাঁদলেও কেউ দেখবেনা।চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পরেই যাচ্ছে। যত চাই আকাশকে ভুলতে আর ও বেশি মনে পরে যায় ওকে।দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কাঁদছিলাম তখন পিছন থেকে কেউ বলে উঠে,,,,

“কি কস্ট হচ্ছে খুব?”।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here