ইনসাইড দ্যা ডোর,পর্ব-২

0
2303

ইনসাইড দ্যা ডোর,পর্ব-২
লেখিকা-সাইবা চৌধুরী।

সোহানের ডাক শুনে তাবিয়া কিছুটা কেঁপে ওঠে। সাহেরা বেগমকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই দৌড়ে ভেতরে চলে যায় সে।
পুরো বিষয়টা সাহেরা বেগমের অনেক অদ্ভুত লাগে। নিজের কাছেই নিজে প্রশ্ন রাখে,
” তাবিয়া কি চোখের ভাষায় কিছু বোঝাতে চেয়েছিলো আমাকে? যদি তাই হয় তাহলে কি বলতে চায় সে যা সরাসরি মুখে বলতে পারছে না?”
হাজার প্রশ্ন মাথায় নিয়ে সাহেরা বেগম গভীর চিন্তায় হারিয়ে যান। “তাবিয়া” চলে যাওয়ার পরে ডাঃ সোহান হাসিমুখে দরজার কাছে এসে দাঁড়ায়। সাহেরা বেগমকে বেশ কয়েকবার ডাক দেয় ডাঃ সোহান। কিন্তু ভাবনায় বিভোর সাহেরা বেগমের মাঝে কোনো প্রতিক্রিয়া পায় না। একটু জোরে ডাক দিতেই সাহেরা বেগম কিঞ্চিৎ কেঁপে ওঠেন। ডাঃ সোহানকে হাসিমুখে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে সাহেরা বেগম বলেন,
-তোমাদের পরিচয়পত্র নেয়ার জন্য এসেছিলাম। তোমরা এসেছো তো বেশ কয়েকদিন হলো কিন্তু কাগজপত্র গুলো এখনো নেওয়া হয়নি।
সাহেরা বেগমের কথা শুনে সোহান “ওহ আচ্ছা আন্টি,আমি এখনই দিচ্ছি” বলে দরজা আঁটকে ভেতরে চলে গেল। বাইরে দাঁড় করিয়ে কথা বলার বিষয়ে এবারও বেশ বিরক্তবোধ করলেন সাহেরা বেগম। “এখন তো আর তারা নতুন আসেনি একজন মানুষকে এভাবে বাইরে দাঁড় করিয়ে কেউ
কথা বলে? আসলেই তাদের ভদ্রতার অভাব। ”
দরজার সামনে দাঁড়িয়েই মনে মনে বিরবির করতে থাকেন সাহেরা বেগম। এরইমধ্যে ডাঃ সোহান ফিরে আসায় আবারও মুখে হাসি টেনে ডাঃ সোহানের দিকে ফিরে তাকান তিনি।
ডাঃ সোহানের দিকে তাকিয়ে কথা বলার সময় সাহেরা বেগমের চোখ চলে যায় ডাঃ সোহানের বাসার ভেতরে।
ভেতরে তাকিয়ে থাকতে দেখে ডাঃ সোহান তড়িঘড়ি করে ফাঁকা জায়গাটুকু আড়াল করে দরজার সাথে একদম মিশে দাঁড়িয়ে সাহেরা বেগমের দিকে কাগজপত্রগুলো এগিয়ে দেয়।
সব কাগজপত্রগুলো ঠিক আছে কি না দেখে নিতে বলে।
সোহানের এমন আচরণে সাহেরা বেগম বেশ অবাক হন। সোহানের হাত থেকে কাগজপত্রগুলো নিয়ে উল্টেপাল্টে দেখে ডাঃ সোহানকে বলেন,
-এখানে তো দেখছি সবই তোমার ইনফরমেশন। তোমার স্ত্রী “তাবিয়ার” কোনো কাগজপত্র তো দেখতে পাচ্ছি না।
সাহেরা বেগমের কথায় ডাঃ সোহান এবার একটু বিরক্ত হয়। বিরক্তি কন্ঠস্বর নিয়েই সাহেরা বেগমকে বলে,
-স্বামী স্ত্রী থাকলে যেকোনো একজনের কাগজপত্র দিলেই তো হয়, উভয়ের ইনফরমেশন দিতেই হবে এমন তো কোনো কথা নেই।
সাহেরা বেগম আর কোনো কথা বাড়ান না। আচ্ছা এখন তাহলে আসি বলে সিঁড়ির দিকে পা বাড়ান তিনি।
সিঁড়ির দিকে যেতেই পেছন থেকে ঠাস করে দরজা আঁটকে দেয় ডাঃ সোহান। দরজাটা বেশ রাগ নিয়েই যে আঁটকেছে শব্দতে সেটা স্পষ্ট। কিন্তু এই রাগের কোনো কারণ খুঁজে পেলেন না সাহেরা বেগম।
_____________
__________________
-কি গো! আজ এমন মুখ গোমড়া করে বসে আছো কেন? কোনো সমস্যা হয়েছে! হলে আমাকে জানাও?
সাহেরা বেগমকে মুখ ভার করে বসে থাকতে দেখতে তার দিকে প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন আতিক সাহেব।
আতিক সাহেবের কন্ঠস্বর শুনে একটু নড়েচড়ে বসে সাহেরা বেগম বলেন,
-আজ সুমনের কথা খুব মনে পড়ছে জানো তো। কতোদিন ওকে দেখিনা,একটু ছুঁয়ে আদর করতে পারছি না। জানিনা কোথায় আছে ও। একবার আসুক খুব করে বকে দেবো, দেখো।
সুমনের কথা বলে দু’চোখের পানি ছেড়ে দিলেন সাহেরা বেগম। আতিক সাহেব উঠে সাহেরা বেগমের পাশে বসে তার হাত ধরে বলল, “সব ঠিক হয়ে যাবে। পুলিশ খোঁজখবর নিচ্ছে তো, খুব শীঘ্রই সুমন আমাদের কাছে ফিরে আসবে। ”
আতিক সাহেবের কথা শুনে সাহেরা বেগম চোখের পানি মুছে তার দিকে ফিরে বলে উঠলেন,
-জানো আজ আমি একটা বিষয় লক্ষ্য করেছি । দোতলার ভাড়াটিয়াদের কাছে কাগজপত্র আনতে গিয়েছিলাম। আজ শুরুতে দরজা খুলেছিলো ডাঃ সোহানের স্ত্রী “তাবিয়া”।
মেয়েটার কি মায়াবী চেহারা। কিন্তু মেয়েটা মনে হয় কোনো সমস্যায় আছে। আমার দিকে ছলছল দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলো। ডাঃ সোহানের ডাক শুনে কেঁপে উঠে ভেতরে চলে গেল। একটা কথাও বলল না আমার সাথে।
সবচেয়ে বড় বিষয় কি জানো? ডাঃ সোহান যখন কাগজপত্র নিয়ে এলো তার পাশ থেকে আমি তাদের বাসার ভেতরে তাকিয়ে কয়েকমুহূর্তের জন্য আমি থমকে গেছিলাম। যতদূর দেখলাম বাসার ভেতরে একদম অন্ধকার, মাঝে মাঝে দুই একটা লাল লাইট জ্বলছে। লাল লাইটের সামান্য আলোতে আমি একটা বড় পুতুল দেখেছি। দেখতে অনেকটাই সুমনের মতো। তখন থেকে আমার সুমনের কথা খুব মনে পড়ছে। আমার ওই পরিবারের কোনোকিছুই ঠিক লাগছে না। তাদের আচার-আচরণ অনেক সন্দেহজনক। এমনকি তাবিয়ার কাগজপত্র চাইলে ডাঃ সোহান আমার উপর মনে মনে বেশ রেগে যায়। এর পেছনের কারণ কি হতে পারে বলো?

সাহেরা বেগমের কথায় এবার বেশ রেগে যান আতিক সাহেব। সাহেরা বেগমের হাত ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে ভাড়ি কন্ঠে বলেন,
-তোমার কি আর কোনো কাজ নেই? কে কি করলো না করলো, কার পরিবারে কি হলো এসব খবরাখবর নিয়ে তোমার কি লাভ। তাদের সাথে আমাদের বাড়িওয়ালা ভাড়াটিয়ার সম্পর্ক। তারা বাসার ভেতরে কিভাবে থাকে,কি করে এসব জেনে তোমার কি লাভ বলো তো?
বাকি রইলো সুমনের মতো দেখতে পুতুলের কথা!
তুমিই তো সেদিন বললে তাদের বড় বড় দু’টি পুতুল আছে। হতেই পারে তারমধ্য থেকে একটা তুমি দেখেছো,সুমনের কথা তোমার মাথায় ঘুরপাক খাওয়ায় তার মতোই দেখতে মনে হয়েছে তোমার। অন্যদের নিয়ে মাথা ঘামানোর অভ্যাসটা পরিবর্তন করো। নইলে এর জন্য একদিন তোমাকে অনেক পস্তাতে হবে দেখো।

এক নাগাড়ে কথাগুলো বলে রুম থেকে হনহনিয়ে বের হয়ে গেলেন আতিক সাহেব।
সাহেরা বেগম নির্বাক হয়ে আতিক সাহেবের চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলেন।
.
.
.
সকাল থেকে জানালা দিয়ে বাইরের গেটের দিকে নজর রেখেছেন সাহেরা বেগম। তিনি চাইলেও মাথা থেকে তাবিয়ার সেই কান্না মাখা মুখ ঝেড়ে ফেলতে পারছেন না।
যে করেই হোক তাকে জানতেই হবে তাবিয়ার চোখের গভীরতা কি বোঝাতে চেয়েছিলো।
সকাল গড়িয়ে দুপুর হয়ে গেছে। সাহেরা বেগম ডাঃ সোহানকে গেট থেকে বের হতে দেখে খুব খুশি হলেন।
সিদ্ধান্ত নিলেন এই সুযোগে তাবিয়ার সাথে কথা বলে নিবেন। ভাবামাত্র তিনি দ্রুত দোতলার উদ্দেশ্যে বের হয়ে গেলেন।
.
.
.
দোতলায় গিয়ে সাহেরা বেগম আশাহত হলেন। তিনি গিয়ে দেখলেন ডাঃ সোহানের বাসা তালাবদ্ধ। কিন্তু একটু আগে তো তিনি ডাঃ সোহানকে একাই বের হতে দেখেছিলেন।
“এরমানে যদি আমি ভুল না হই তাবিয়া এই বদ্ধ বাসার ভেতরেই আছে।”
ভাবামাত্রই সাহেরা বেগম কলিংবেল প্রেস করেন। বেশ কয়েকবার কলিংবেল প্রেস করার পরেও ভেতর থেকে কোনো সাড়াশব্দ পেলেন না। অগত্যা তিনি দরজায় নক করে বললেন,
-আমি জানি তাবিয়া তুমি ভেতরেই আছ। তোমার যদি কোন সমস্যা থেকে থাকে আমাকে তুমি খুলে বলতে পারো। হতেও পারে আমার দ্বারা তোমার কোনো উপকার হলো।
এবার ভেতর থেকে হালকা কাঁশি দিয়ে তাবিয়া উত্তর দেয়,
-আমার কোনো সমস্যা নেই। তবে আপনি যদি চান আমার কোন সমস্যা না হোক তাহলে সোহানের অবর্তমানে বাসার সামনে কখনো না আসার অনুরোধ রইলো।
তাবিয়ার কথায় নিজেই নিজের কাছে বেশ অপমানিত হলেন সাহেরা বেগম। তবুও তাবিয়ার কথার মাঝে একধরনের পিছুটান অনুভব করলেন।
তখনের মতো আর কথা বাড়ালেন না তিনি। অনেক কিছু জানার ছিলো তার। অনেক প্রশ্ন করার ছিলো তাবিয়াকে কিন্তু তাবিয়ার এভাবে বলার পরে কথা আগানোটা বুদ্ধিমানের কাজ মনে করলেন না তিনি।
ফিরে যাওয়ার সময় সাহেরা বেগমের চোখ পড়লো ডাঃ সোহানের বাসার দরজার নিচে।
তিনি স্পষ্ট দেখতে পেলেন দরজার নিচ থেকে কয়েক ফোটা তাজা রক্ত গড়িয়ে চলে এসেছে এপাশে। রক্ত দেখে বেশ ঘাবড়ে গেলেন সাহেরা বেগম। কার বা কিসের রক্ত হতে পারে সেটা নিয়ে গভীর চিন্তায় পড়ে গেলেন তিনি।
.
.
.
চলবে………
– Saaiba Chowdhury

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here