ইনসাইড দ্যা ডোর,পর্ব ৫

0
1999

ইনসাইড দ্যা ডোর,পর্ব ৫
লেখিকাঃ Saaiba Chowdhury

দরজা খুলে ভেতরে ঢুকেই থমকে দাঁড়ায় সোহান। তাবিয়াকে বেড রুমে যেতে বলে গম্ভীর ভাবে ড্রয়িং রুমে দাঁড়িয়ে থাকে সে। কিছুক্ষন এদিক সেদিক তাকিয়ে,বাতাসে গন্ধ শুঁকে সোফায় বসে থাকা পুতুলটার দিকে দৌড়ে যায় সোহান। পুতুলের পাশে বসে হাত ধরে বলে,
-তোমাদের বিরক্ত করতে আবার বাসায় কেউ এসেছিলো তাই না মা?
তুমি রাগ করো না, এতে তো ভালোই হলো তোমাদের মাঝে আরও একজন সদস্য বাড়তে চলেছে।
সোহান এমন আরও নানাধরণের গল্প করতে থাকে পুতুলের সাথে। সোহানের বলা কথাবার্তা এবং করা কাজ সবকিছুই ভিডিওতে দেখছিলো আরিকা। স্পাই ক্যামেরা সেট করে আসায় ভালোই হয়েছে তার। রহস্যের অনেক জট খুলতে সাহায্য করবে এটি। সোহানের কথাবার্তা ও কাজ দেখে আরিকা বুঝতে পারে সোফায় বসা একজন মহিলার অবয়বে তৈরি পুতুলটা ডাঃ সোহানের মায়ের। তবে একটা বিষয়ে আরিকা বেশ অবাক হয়৷
“বাসায় কেউ ঢুকেছিল সেটা কি করে জানতে পারলো ডাঃ সোহান?
তাহলে কি তাড়াহুড়োয় কোনো প্রমাণ রেখে এসেছি আমি!” নিজের কাছে নিজেই প্রশ্ন রাখে আরিকা।
“যদি তাই হয় তাহলে রহস্যের শেষ পর্যন্ত যেতে অনেক বিপদের মুখোমুখি হতে হবে।”
.
.
.
.
পরদিন সকাল।
ঘুম থেকে উঠে পাশ ফিরে তাবিয়াকে দেখতে না পেয়ে সোহান খুব বিরক্ত হয় । রুমের চারপাশে চোখ বুলিয়েও তাবিয়ার দেখা পায় না। বিছানা ছেড়ে উঠে সোহান বেলকনির দিকে পা বাড়ায়।
সেখানে গিয়ে সোহান দেখতে পায়, তাবিয়া বেলকনির গ্রীল ধরে দাঁড়িয়ে আছে। তার দুচোখ বেয়ে অনবরত পানি পড়ছে। তাবিয়াকে এভাবে কান্নারত অবস্থায় দেখে সোহান প্রচন্ড রেগে যায়। পেছন থেকে তাবিয়ার চুল মুঠো করে ধরে টানতে টানতে রুমের ভেতরে নিয়ে আসে। আচমকা ঘটনাটি ঘটে যাওয়ায় তাবিয়া বেশ ঘাবড়ে গেলো। সোহান সচরাচর এতো তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে ওঠে না। সকাল সকাল ঘুম ভেঙে যাওয়ায় বেলকনিতে এসে দাঁড়িয়েছিলো তাবিয়া।
“সকাল সবার জীবনে আনন্দ বয়ে আনে না। কারও কারও কাছে প্রতিদিনের মতো আরও একটি বিষাদময় দিনের শুরু মাত্র। ”
তাবিয়াকে ধাক্কা দিয়ে ফ্লোরে ফেলে দেয় সোহান।
এরপর এক হাত দিয়ে তাবিয়ার ঠোঁট দুটো চেপে ধরে বলে,
-“তোমার প্রাক্তন রাকিবের কথা খুব মনে পড়ছে তাই না! খুব কষ্ট হয় তার জন্য? এজন্যই সকাল সকাল বেলকনিতে এসে কান্না করা হচ্ছিল?
তাহলে কাটা গায়ে নুনের ছিটা তো একটু দিতেই হয়। ”
কথাগুলো বলে বড় একটা চাকু নিয়ে আসে সোহান। তাবিয়ার চুল আবারও মুঠো করে ধরে টানতে টানতে ওকে নিয়ে মাঝ বয়েসী চেহারার ছেলে-পুতুলটার কাছে নিয়ে আসে।
তাবিয়ার চুলের মুঠি ছেড়ে দিয়ে ওকে দেখিয়ে দেখিয়ে পুতুলটার শরীরে এলোপাতাড়ি ভাবে চাকু দিয়ে আঘাত করতে থাকে সোহান। চাকুর আঘাতে পুতুলটির শরীর থেকে পঁচা কালো মাংস বের হয়ে আসে। এমন নৃশংস দৃশ্য দেখে তাবিয়া কাঁপতে থাকে, কেঁপে ওঠে আরিকাও।
যতটা সম্ভব আরিকা সবসময় মোবাইলে চোখ রাখার চেষ্টা করেছে। সকাল সকাল এমন নৃশংস দৃশ্য হয়ত আশা করেনি সে ও।
তবে একটা বিষয় আরিকা নিশ্চিত যে, এগুলো অবয়বে তৈরি কোনো পুতুল নয়, বরং প্রতিটি পুতুল এক একজন মানুষের মৃতদেহ।
“কিন্তু এই মৃতদেহগুলো এতো জীবন্তরূপে কিভাবে সংরক্ষণ করছে ডাঃ সোহান? ”
চিন্তার ভাঁজ পড়ে আরিকার কপালে।

তাবিয়াকে কাঁপতে দেখে চাকু ফেলে দিয়ে সোহান আবার তার দিকে এগিয়ে যায়। তাবিয়ার কাছে গিয়ে,আগের দিনের হাতের কাটা জায়গায় শক্তভাবে পা দিয়ে চাপ দেয়। মাত্রাতিরিক্ত ব্যাথায় তাবিয়া গোঙানি দিয়ে ওঠে। কাটা জায়গা থেকে ছিটকে রক্ত বের হয়ে দেয়ালের উপরে পরে।
পায়ের চাপ আরও বাড়িয়ে দিয়ে সোহান বলতে শুরু করে,
-“ভালোবাসায় কি কোনো কমতি রেখেছিলাম আমি? আমার সবটুকু দিয়ে তোমাকে ভালোবেসেছিলাম। নতুনভাবে বাঁচার স্বপ্ন দেখেছিলাম। তুমি মানে আমার কাছে পুরো একটা পৃথিবী ছিলো। কিন্তু তুমি কি করেছিলে?
আমার বিশ্বাস, ভরসা, ভালোবাসার খুন করে আমার অবর্তমানে তুমি রাকিবের সাথে নষ্টামিতে মেতে উঠেছ।
কেমন লাগছে যন্ত্রণাটা? এর থেকে শতগুণ যন্ত্রণা আমি সেদিন পেয়েছিলাম, যেদিন নিজ চোখে তোমাকে আর তোমার প্রাক্তন প্রেমিককে শারিরীক সম্পর্কে আবদ্ধ অবস্থায় দেখেছিলাম। রাকিবকে তো আমি তার কর্মের সাজা নিজ হাতে দিয়েছি, এখন আমি চাই তুমি কিছুটা হলেও আমার ভেতরের যন্ত্রণাটা অনুভব করো। তিলে তিলে তোমার পাপের শাস্তি আমি তোমাকে দেবো।

সোহানের কথা শুনে অনুরোধের স্বরে তাবিয়া বলে,
-“আমি আমার ভুলের জন্য সত্যি খুব লজ্জিত। সারাক্ষণ অপরাধবোধে ভুগি। ভুলের জন্য কম শাস্তি ও তো তুমি দাওনি। আমি আবারও ক্ষমা চাচ্ছি তোমার কাছে, সবকিছু ভুলে গিয়ে আমাকে আর একবার সুযোগ দাও। আমি তোমার স্বপ্নের মতোই আমাদের জীবন সাজিয়ে তুলবো।”

তাবিয়ার কথা শুনে হো হো করে হেঁসে ওঠে সোহান৷
তীব্র ঘৃণার চোখে তাবিয়ার দিকে তাকিয়ে বলে,
-“ভালোবাসার জগতে সবচেয়ে ঘৃণিত অপরাধ কি জানো? “বিশ্বাস হনন”।
বিশ্বাস অর্জনে যেমন ভালোবাসা মধুময় হয় তেমনই বিশ্বাস হননে হয় তীব্র বিষাদময়।
এমন ভালোবাসার খুনিদের একটাই শাস্তি ” মৃত্যু”।
যেটা আমি তোমাকে দেবো তবে একবারে নয় তিলে তিলে। কথাটা বলেই হাতের কাছে থাকা ফুলদানি দিয়ে আঘাত করে তাবিয়ার মাথায়।

ওহ শীট! বলে হাতের মোবাইলটা ছুঁড়ে ফেলে আরিকা। কাল ফুলদানির ভেতরেই স্পাই ক্যামেরা সেট করে এসেছিলো সে। ফুলদানি দিয়ে তাবিয়াকে আঘাত করায় ফুলদানির সাথে স্পাই ক্যামেরাও ভেঙে যায়। বাসার ভেতরের খবর জানার এখন অন্য কোনো উপায় নেই।
তবে যতদূর জেনেছে এটাই ধীরে ধীরে রহস্যের দিকে এগিয়ে যেতে অনেক সাহায্য করবে।
সোহানের কথায় যতদূর বুঝলাম, প্রতিটি পুতুলেরই রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন গল্প।
একটা পুতুলের গল্প তো জানা গেলো বাকিগুলোর বিস্তারিত আমাকে জানতে হবে।
সবার আগে জানতে হবে সুমনের ব্যাপারটা। পুতুল রূপি মৃতদেহ যদি সুমনের হয় তাহলে সুমনের গল্পটা কি ছিলো?
নিজেই নিজের কাছে প্রশ্ন রাখে আরিকা।
সুমনের সাথে ডাঃ সোহানের কি সংযোগ থাকতে পারে এটা ভাবতে ভাবতে চিন্তার জগতে হারিয়ে যায় আরিকা।
সুমন ও ডাঃ সোহানের ভেতরের আসল কাহিনি জানতে হলে আমাকে একদম প্রথম থেকে শুরু করতে হবে। আজ সুমনের রুমটা সার্চ করতে হবে। পেলেও পেতে পারি কোনো ক্লু, যা আমাকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করবে।
ভাবামাত্রই আরিকা সুমনের রুমের উদ্দেশ্যে বের হয়ে যায়।
.
.
.
.
সাহেরা বেগমকে কোন ঘটনার আদ্যোপান্ত জানায় না আরিকা।
সুযোগ বুঝে সতর্কতার সহিত আরিকা সুমনের রুমে প্রবেশ করে। রুমের সব জায়গা তন্নতন্ন করে খুঁজে খুঁজে দেখে আরিকা। তবে ডাঃ সোহানের সাথে সংযুক্ত কোনোকিছু খুঁজে পায় না সে। তবে একটা ঔষধের বক্সের ভেতর বেশ কিছু সন্দেহভাজন ঔষধ দেখতে পায় সে। ঔষধগুলো দেখে আরিকা বুঝতে পারে সুমন একজন ড্রাগস এডিক্টেড ছেলে ছিলো।
কিন্তু আশানুরুপ কিছু না পেয়ে বেশ হতাশ হয় যায় আরিকা। তবে এতো সহজে হাল ছাড়ার পাত্রী সে নয়। বুকশেলফ, টেবিলের ড্রয়ার থেকে শুরু করে বিছানায় তোষক ও উল্টে দেখে।
হঠাৎই আরিকার নজর পরে খাটের কোণায় রাখা ছোট একটা ব্যাগের উপর। ব্যাগ টা খুলে সে বেশকিছু থ্রিডি ভিডিও ডিভাইস ও ছোট কয়েকটা সাউন্ড রেকর্ডার দেখতে পায়। সাউন্ড রেকর্ডার প্লে করতেই ভেসে আসে ভয়ংকর কিছু আওয়াজ।
থ্রিডি ভিডিও ডিভাইসটা চালু করার পরে সামনের দেওয়ালে ভেসে ওঠে বিভৎস কিছু চেহারা। চেহারাগুলো এতোটাই ভয়ংকর ছিলো যে আরিকার শরীরের প্রতিটা পশম দাঁড়িয়ে যায়।
দেখে একদমই বোঝার উপায় নেই এটা কোনো ভিডিও। আরিকার মাথায় সব ঘটনা গুলো ঘুরপাক খেতে থাকে। শুরু থেকে সবকিছু মেলানোর চেষ্টা করে সে। হঠাৎ আরিকা ঠোঁটের কোণে বাকা হাসি টেনে মনে মনে বলে,
“আরও একটা পুতুলের রহস্য আমার কাছে পরিষ্কার। এখন শুধু অপেক্ষা সময় বুঝে আরও একবার ডাঃ সোহানের বাসায় যাওয়ার। বাকিটা না হয় তাবিয়ার কাছ থেকেই জানা যাবে।”
ভিডিও ডিভাইস, সাউন্ড রেকর্ডার ও সুমনের কিছু ঔষধ নিয়ে খুশি খুশি মনে রুম থেকে বের হয়ে যায়।
.
.
.
চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here