#ইস্ক_সুফিয়ানা
#পর্ব – ০৫
#লেখনীতে : #Aloñe_Asha (ছদ্ম নাম)
#Kazi_Meherin_Nesa
হেসে হেসে গল্প করছেন আরমান স্যার আর তার বান্ধবী সারা, আর তৃতীয় ব্যক্তির মতো চুপ করে বসে তাদের কথা শুনছি আমি..মাঝে মাঝে আমাকে কোনো প্রশ্ন করলে রোবটের মতো শুধু এক – দু কোথায় উত্তর দিয়ে দায় সারছি..এরই মধ্যে আবার দেখলাম আরমান স্যার আহ্লাদ করে ওই মেয়েটাকে দু চামচ পাস্তা খাইয়ে দিয়েছে, মেয়েটাও উল্টে ওনাকে খাওয়াচ্ছেন..এইসব দেখে মারাত্মক অসস্তি হচ্ছে আমার, মনে মনে আরমান স্যারকে অনেক গালিগালাজ ও করেছি..কেনো উনি এনেছেন আমাকে এখানে? নিজের কেলোর কীর্তি দেখাতে? কিন্তু মুখে কিছুই বলতে পারিনি..প্রায় ত্রিশ মিনিট পর ওনাদের এই আলাপচারিতার অবসান হলে সস্তি পেলাম আমি, যাওয়ার সময় সারা আমার সাথে হ্যান্ডশেক করলো
“আসছি তাহলে আজ, তবে হ্যা তোমাকে একটা কথাই বলবো..এই আরমানের মাথার স্ক্রু একটু ঢিলে আছে, সামলে রেখো”
আমি মলিন হাসলাম, সারা আরও বললো
“তুমি সত্যিই অনেক ভালো মেয়ে, আরমান যতোটা বলেছিলো তার থেকেও বেশি, নাইস চয়েজ আরমান”
“থ্যাংক ইউ ডিয়ার, বাই দ্যা ওয়ে বাসায় আসিস আর হ্যা ওই ব্যাপারটা একটু হ্যান্ডেল করিস..আমি হ্যান্ডেল করতে গেলে তো আবার প্রবলেম”
“চিন্তা করিস না, আমিই যা করার করে দেবো”
কোন ব্যাপারে কথা বলছেন ওনারা? ধুর আমার এসব জেনে কি হবে? সারা এতক্ষণে চলে গেছে,আমরাও বেরোব ভাবছিলাম কিন্তু উনি আবারও বসে পড়লেন যেখানে প্রথমে বসেছিলেন, আমি ভ্রু কুচকে বললাম
“আবার বসলেন কেনো? যাবেন না?”
“এতক্ষণ তো ওর সাথে কথা বললাম, এবার একটু তোমার সাথে কথা বলতে চাই, বসো”
“অনেক বসেছি আর বসতে পারবো না.. এবার চলুনতো এখান থেকে”
“এই তোমার সমস্যা কি বলোতো? এখানে ডাকাত পড়েছে নাকি তোমার ট্রেন ছুটে যাচ্ছে যে এখানে থাকতে চাইছো না? আর এত্তো তাড়া কেনো দেখাচ্ছো? বসো চুপচাপ!”
উনি কিছুটা ধমকিয়েই বললেন, তাকিয়ে দেখলাম আমাদের পাশের দুই টেবিলে বসা লোকেরা তাকিয়ে আছে আমাদের দিকে.. উফফ এই লোকটা যে কি করে! আর উপায় না পেয়ে বসে পড়লাম, সারা শুধু একটু ফ্রুট জুস ছাড়া আর কিছু খায়নি, ডায়েট এ আছে বলে তাই কিছু অর্ডার ও করা হয়নি, এখন আরমান স্যার আমাকে কিছু জিজ্ঞাসা না করে পাস্তা, বার্গার, কফি অর্ডার করে দিলেন..আমিও চুপ করে আছি!
“তোমাকে ওর বেশ পছন্দ হয়েছে, তোমার তো অনেক প্রশংসা করছিলো কিন্তু তুমিই একদম সাইলেন্ট মুডে ছিলে, ভালো লাগেনি নাকি ওকে?”
ওনার কথা আমার কানে আসেনি, আমি তো অন্যমনস্ক হয়ে আছি..সারার সাথে উনি যেভাবে কথা বললেন তাতে দুজনকে বেশ ক্লোজ মনে হয়েছে আমার, না চাইতেও কেনো যে বারবার এসব নিয়েই ভাবছি কে জানে..উনি আমার সামনে আঙ্গুল দিয়ে তুরি মেরে বলে উঠলেন
“আমি তোমার সাথেই কথা বলছি রুহি, আর ইউ লিসেনিং?”
হকচকিয়ে উঠলাম আমি
“জ্বি..? না মানে কিছু বলছিলেন?”
“তুমি কোন ধ্যানে আছো?”
“কিছুনা তো, আমি এমনি একটা কথা ভাবছিলাম, আপনি কি বলছিলেন যেনো?”
“তোমার কি হয়েছে আগে সেটা বলো”
কি বলবো ওনাকে যে উনি যে ওই মেয়েটার সাথে এতো কোজি হচ্ছিলেন বিধায় আমার অসস্তি হচ্ছে? উনি তো হাসবেন আমার কথায়..তাই আর বলার কিছু খুঁজে না পেয়ে গতকালের প্রসঙ্গ তুললাম
“আসলে গতকালকের কথা ভাবছিলাম, ওইটুকু সময়ে এতকিছু হয়ে যাবে কল্পনাই করতে পারিনি, আর আপনি..কিভাবে কি করলেন কিছু বলতেও চাইলেন না”
“তুমি এখনও ওইসব নিয়ে ভাবছো? রুহি তুমি জাস্ট ভুলে যাও ওই বিয়ে নামক ইনসিডেন্ট টা, ধরে নাও এরকম কিছুই হয়নি, ভেবে নাও গত দুদিন তোমার জীবনে আসেইনি..সব আগের মতো আছে, এনজয় ইউর প্রেজেন্ট টাইম!”
ওনার কথা শুনে প্রতিবার যেনো একটা সাহস পাই, অনুপ্রেরণা পাই.. কতো সুন্দর করে উনি অতীত ভুলে বর্তমান নিয়ে ভাবার রাস্তা বের করে দেন, সবকিছু কতো সহজ করে দিচ্ছেন উনি আমার জন্যে..কথাগুলো ভেবেই মুচকি হাসলাম
“হুমম! আপনার সব কথা মানবো আমি, এবার বলুনতো কি বলছিলেন একটু আগে?”
“ওহ হ্যা, তোমার সারাকে কেমন লাগলো?”
আবার আমার হাসিমুখটা ছোট্ট হয়ে গেলো..কি জবাব দেওয়া উচিত আমার এখন? তবুও যতটুকু দেখলাম সেটাই বিবেচনা করে উত্তর দিলাম
“সি ইজ পারফেক্ট ফর ইউ”
উনি মুচকি হাসলেন, আমিও জোর করে মুখে হাসি আনলাম, ওনাকে বুঝতে দিলাম না যে আমি আপসেট হয়ে গেছি
“আই নো”
আমি এক হাত আরেক হাতের মধ্যে নিয়ে রাবিং করছি, চোখের সামনে সব দেখার পরও মন চাইছে সরাসরি জিজ্ঞাসা করি ওনাকে মেয়েটা কে..আমি আবার বেশিক্ষণ কথা চেপে রাখতে পারিনা তাই প্রশ্ন করেই বসলাম
“উনি কি আপনার গার্লফ্রেন্ড?”
“ওকে দেখে তোমার ছেলে মনে হলো নাকি?”
“এ কেমন কথা?”
“তো তুমি কেমন কথা বলছো? সি ইজ অ্যা গার্ল, আর মেয়ে বন্ধু হলে তাকে তো গার্লফ্রেন্ডই বলে তাইনা?”
উনি বরাবর এমন ত্যাড়া উত্তর দেন, একটা নরমাল কথাকে ঘুরিয়ে প্যাচিয়ে আমসত্ত্ব বানিয়ে দেন! এখনও তার ব্যতিক্রম ঘটলো না আর আমিও আমার প্রশ্নের উত্তর পেলাম না
“আমি সেটা বলিনি..আমি ভাবলাম উনি আপনার, যাই হোক আপনার কোনো কাজ না থাকলে বলুন আমি বাড়ি চলে যাই..গত কিছুদিন রেস্ট নেওয়ার সময় পাইনি”
আমি ব্যাগটা কাধে তুলে উঠে দাড়াতেই উনি আচমকা আমার হাত ধরলেন, চমকে উঠলাম! প্রথমবার উনি আমাকে স্পর্শ করলেন ভেবেই অদ্ভুত এক অনুভূতি হলো..সঙ্গে সঙ্গে হাত ছাড়িয়ে নিলাম ওনার থেকে..আমাকে অপ্রস্তুত অবস্থায় পড়তে দেখে উনি সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠলেন
“সরি! আমি এইভাবে তোমার হাত ধরতে চাইনি.. তুমিই বাধ্য করলে”
আমি জানি উনি কেমন তাই এই বিষয়টা আমি খারাপভাবে নেইনি
“ইটস ওকে”
তখনই ওয়েটার এলো অর্ডার করা খাবারগুলো নিয়ে, টেবিলে সাজিয়ে দিয়ে গেলেন সবকিছু
“নাও! খাবার ও চলে এসেছে..এবার তো খেয়েই যেতে হবে তোমাকে, এন্ড ইয়েস তোমার ডিউটি কিন্তু শেষ হয়নি, বিকেলের আগে বাড়ি যেতে পারবে না”
“কিন্তু আপনি তো ফ্রি বসে আছেন, আমি এখানে কি”
উনি খাওয়ার জন্য কাটা চামচ তুলেছিলেন, আমার কথা শুনে বসা অবস্থাতেই কাটা চামচ টা আমার দিকে তাক করে রাগী চোখে তাকালেন
“আরেকবার যাওয়ার কথা বললে আর বাড়ি ফিরতেই দেবো না, এবার ভেবে নাও তুমি কি করবে? বাড়ি ফিরতে চাও নাকি দিনরাত ২৪ ঘণ্টা আমার ডিউটি করতে চাও”
অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম আমি ওনার দিকে, ইদানিং যেনো একটু বেশিই করছেন উনি, সন্ধ্যা হয়ে যাওয়ার পরও ছাড়তেই চান না..আজকে তো আবার হুমকিও দিয়ে বসলেন, কি এক সাইকো লোকের পাল্লায় পড়লাম আমি? উনি ততক্ষণে মনের সুখে খেতে শুরু করে দিয়েছেন, আমি মিনমিন করে বললাম
“কি বললেন আপনি এইগুলা? ২৪ ঘণ্টা কেউ একটানা কাজ করে নাকি?”
উনি খেতে খেতেই উত্তর দিলেন
“আমি তোমাকে অপশন দিয়েছি এখন তুমি চুজ করো কি করবে”
ওনাকে দিয়ে বিশ্বাস নেই, যা খুশি করতে পারেন..তাই আর কথা না বাড়িয়ে বসে পড়লাম, খাবার ও খেয়ে নিলাম..তারপর তো সারাদিন ওনার সাথে আজকে ঘুরতে হয়েছে আমাকে, বেকার খাটনি করালেন আমাকে কারণ আজকে কোনো কাজই ছিলো না..বিকেলে বাড়ি ফিরেই ফোন বন্ধ করে দিয়ে ফ্রেশ হয়ে ঘুম দিয়েছি, ভীষণ ক্লান্ত লাগছে আজ! ওদিকে আরমান বসেছে আজ রুহির ডায়রিটা নিয়ে, যদিও ডায়রি লিখার অভ্যাস নেই তবে আজ লিখবে..আজকের তারিখ দিয়ে ও লিখে ফেললো ডায়রির প্রথম পাতায়..কিছুটা যেনো শান্তি লাগছে ওর, নিজের
ডায়রি লিখার পর নিচে আসে আরমান, ওর মা সবার জন্যে স্ন্যাকস এনেছে, ওর বাবাও বসা ড্রইং রুমে..কিছুটা আপসেট দেখাচ্ছে ওনাকে আর এটা দেখেই আরমান বুঝে গেছে কাজ হয়ে গেছে.. ও নেমে এসে বসলো
“কিরে, আজ স্ন্যাকস টাইমে মিনাল কোথায়? ঘুমিয়ে গেলো নাকি মেয়েটা?”
“মা, তোমার মেয়েকে চেনো না, স্ন্যাকসের গন্ধ নাকে গেলেই সুরসুর করে চলে আসবে..ডাকতে হবে না ওকে”
“তোদের দুইভাই বোনকে নিয়ে আর পারিনা, খাওয়া শুরু কর তোরা আমি ডেকে আনছি ওকে..আর হ্যা শোন কালকে রুহিকে আসতে বলিস তো”
“কাল তো ফ্রাইডে, ওর অফ”
“হ্যা জানি, আসলে কালকে পিঠা বানাবো ভাবলাম, শীত তো প্রায় চলেই যাচ্ছে.. ওকে আমার হয়ে আসতে বলে দিস, মেয়েটা পাটিসাপটা খেতে খুব পছন্দ করে”
আরমানের বিষয়টা দেখে ভালো লাগলো যে ওর মা রুহির কথা এতোটা ভাবেন, ওর পছন্দ সম্পর্কে কিছুটা হলেও জানেন, রুহিও এতে খুশী হবে
“আচ্ছা বলে দেবো”
এরপর মিসেস শাহ্ মেয়ের ঘরে গেলেন, আরমান ও খেতে শুরু করলো তখনই ওর বাবা মুখ খুললেন
“শোন আরমান, তোকে বলেছিলাম না সারাকে তোর জন্যে পছন্দ করেছি?”
“হ্যা তো? কি হয়েছে? আমি তো রাজি হয়েছি”
“হুমম! তবে একটা সমস্যা হয়ে গেছে..আসলে ওর বাবা ফোন করেছিলো আমাকে..সারা নাকি তোকে শুধু বন্ধু ভাবে এর বেশি না তাই ও তোকে বিয়ে করতে চায় না”
এটাই তো শুনতে চাইছিলো আরমান, কথাটা বলার সময় ওর বাবা যতোটা গম্ভীর ছিলো, ওর বেলায় তার উল্টো হলো.. প্রশস্ত হাসির রেখা ফুটে ওঠে ছেলেটার মুখে
“ইয়েস”
“কিসের ইয়েস?”
আরমান না সূচক মাথা নাড়লো,নিজেকে স্বাভাবিক রেখেই উত্তর দিলো
“ওকে ফাইন! সারা না চাইলে তো আর জোর করে হবেনা কিন্তু এতে তুমি এতো আপসেট কেনো হচ্ছো বাবা?”
“সারাকে আমি পারসোনালি তোর জন্যে খুব পছন্দ করেছিলাম..ভেবেছিলাম ওর সাথে তোর বিয়েটা দেবো কিন্তু ও তো না করে দিলো”
“ওহ কাম অন বাবা, এইটুকু ব্যাপার নিয়ে এতো আপসেট হবার কি আছে? আমরা বন্ধুই ভালো আছি, এর বেশি হবার দরকার নেই”
“এই নিয়ে তিনবার এমন হলো, দুবার আমি দুটো মেয়ে পছন্দ করেছিলাম তুই না করে দিলি আর আজ তো মেয়েই তোকে না করলো”
“আমি এখন বিয়ে করতে চাইনা, তাছাড়া আমার জন্যে তোমাকে আর মেয়ে দেখতে হবে না, যখন সময় হবে আমি নিজেই নিজের লাইফ পার্টনার চুজ করে নেবো..জোর করে বিয়ে দিলেই তো হবেনা”
“ঠিকই বলেছিস, জোর করে তো আর সংসার হয় না.. যাই হোক, বাদ দে এসব.. পরে ভাবা যাবে এই ব্যাপার নিয়ে!”
আরমান মনে মনে অনেক খুশি..!! আসলে গতকাল রাতে আরমানের বাবা ওকে পার্টিতে নিয়ে গেছিলো, সেখানেই ওর বাবার বিজনেস পার্টনার + বন্ধু মানে সারার বাবার সামনে সারা আর আরমানের বিয়ের প্রস্তাব রাখেন মিস্টার শাহ্..কিন্তু আরমান তো সারাকে বিয়ে করবে না আর ও না করলে ওর বাবা হাজার প্রশ্ন করবে কারণ এর আগেও দুবার এরকম কেস হয়েছে, তখন তো আরমান কোনোরকম বেচে গেছে কিন্তু এবার ও চাইছিলো মেয়ের দিক থেকেই এই বিয়েতে না করানোর জন্যে..আরমান আর সারা ও নিজেদের বাবাদের মতোই অনেকদিনের পুরোনো বন্ধু, তাই গত রাতেই সারার সাথে কথা বলেছে ও..কারণ হিসেবে দেখিয়েছে যে রুহিকে পছন্দ করে ও..সারা রুহির সাথে দেখা করতে চেয়েছিল তাইতো আজকে রুহিকে নিয়ে গেছিলো রেস্টুরেন্টে..সবশেষে সারা নিজেই বিয়ের জন্যে না করে আরমানের সমস্যার সমাধান করে দিলো..কিন্তু রুহি তো কিছু না জেনেই পুরো উল্টোটা বুঝে নিয়েছে
খাবার টেবিলে সবাই বসে একসাথে খাবার খাচ্ছি, চাচী যে ভীষণ রেগে আছে সে আমার বুঝতে বাকী নেই কিন্তু চাচার জন্যে আমাকে কিছু বলতে পারছেন না..খাওয়ার এক পর্যায়ে চাচা আমাকে বলেলেন
“রুহি, তোকে ওই বাড়ি থেকে যেসব জিনিস দিয়েছিলো সব গুছিয়ে দিস, আমি ফেরত দিয়ে আসবো”
“ঠিক আছে”
চাচী তখন উত্তেজিত হয়ে বলে উঠলেন
“ওগুলো আবার ফেরত দেবার কি দরকার? রয়েছে থাক না! ভবিষ্যতে কোনো না কোনো সময় তো রুহির কাজে লাগবে”
“চুপ করো তুমি, এই ব্যাপারে তোমার কোনো রায় শুনতে চাইনা, ওই বাড়ির কোনো জিনিস আমি রাখবো না..কোনোদিন যাতে তারা কোনো দাবি করতে না পারে সেই ব্যবস্থা করবো”
চাচার ধমক শুনে চাচি আর কিছু বললেন না, আমিও খাওয়া শেষে চাচার কথামতো আজকেই সব গুছিয়ে রেখেছি..রাত হয়েছে কিন্তু আমার ঘুম আসছে না..আমার পড়ার টেবিলের উপর উবু হয়ে বসে ছিলাম, সারা আর ওনার কথা মাথা থেকে অনেক কষ্টে ঝেড়ে ফেলেছি, ওইসব নিয়ে যেভাবে ভাবছিলাম আমি তো পাক্কা ডিপ্রেশনে চলে যেতাম..তখনই ফোনটা বেজে উঠলো, ফোনের দিকে তাকাতেই দেখলাম আরমান স্যারের নামটা ভেসে উঠেছে, আবার ফোন করেছেন উনি? রাগ হচ্ছে অনেক, কিন্তু কি করার? উনি আমার বস, ফোন রিসিভ না করলে আবার স্যালারির সময় যদি ব্যাগ্রা দেন? এমনিতেই আজকাল ওনার মতিগতি সুবিধার লাগছে না, আমি ফোন রিসিভ করে চুপ রইলাম, উনিই ওই পাশ থেকে জবাব দিলেন
“ডিস্টার্ব করলাম নাকি?”
“ফোন তো করেই ফেলেছেন, বলুন কি বলবেন”
“কালকে একটু আসতে হবে তোমাকে এই বাড়িতে”
হুট করে মনে পড়লো কাল তো অফ ডে, তারপরও আমাকে যেতে বলছেন? লোকটা করতে কি চাইছে?
“কালকে তো শুক্রবার, আমার ছুটি..! আপনি কি শুক্রবারেও আমাকে একটু স্থির থাকতে দেবেন না? আজ তো বিনা কারণে এতো ঘোরালেন আমাকে”
“বিনা কারণে আমি কোনো কাজ করি না, যে কাজের জন্যে তোমাকে নিয়েছিলাম সেটা হয়ে গেছে”
আমি খানিকটা অবাক হলাম, উনি কোন কাজের কথা বলছেন? আমার জানামতে তো আমাকে দিয়ে কোনো কাজই করাননি তাহলে?
“মানে?”
“অতকিছু জানার দরকার নেই তোমার, যেটা বললাম সেটা মনে রাখো, কাল সকালে চলে এসো”
আমি অসহায় কণ্ঠে বললাম
“স্যার প্লিজ, আমাকে কালকের দিনটা ছেড়ে দিন না”
“আমি তোমাকে ধরিনি আবার আসতেও বলিনি, মা বলেছে তোমাকে ইনভাইট করেছে কালকে, পিঠাপুলি বানাবে আর কি”
“ওহ! কিন্তু আপনি আন্টিকে বলে কোনোভাবে ম্যানেজ করতে পারলেন না? এমনিতে তো কতকিছু ম্যানেজ করেন”
“ম্যানেজ কেনো করতে যাবো? আসতে বলেছে আসবে ব্যস, আর এটাকে ওভারটাইম হিসেবে ধরে নাও”
চুপ রইলাম আমি, এই লোকটাকে আমি এতদিন ভদ্র ভাবতাম এখন তো দেখি বজ্জাতের হাড্ডি! তবে অ্যান্টি যে আমার জন্যে এতটা ভাবেন সেটা ভাবলেই সত্যিই আমার আমার মন ছুঁয়ে যায়.. আগেরবার ও উনি আমাকে পিঠে খাইয়েছিলেন, আমিও আর এই সুযোগ হারাতে চাইলাম না
“ঠিক আছে আসবো, তবে জুমার নামাজের পর আসবো..বাড়িতে কিছু কাজ আছে”
উনি ফোন রেখে দিলেন, আমিও পড়েছি মহা মুশকিলে..শান্তি পাচ্ছি না কোথাও, অবশ্য আরমান স্যার এমনভাবে আমাকে কন্ট্রোল করতে চাইছেন যে সত্যিই পাগল হবো এবার আমি..টেবিল থেকে উঠে লাইট বন্ধ করে গিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লাম
“আরমান স্যারের প্ল্যান এবার ধরেছি আমি, উনি সাহায্য করেছেন না আমাকে সেটারই ফায়দা উঠাচ্ছেন.. এত্তো খাটাচ্ছে আমাকে, মজা নিচ্ছেন! আমিও তো ভাবি এত্তো কিছু কেনো করলেন আমার জন্যে? এখন দেখি সব সাহায্যের পাওনা সুদে আসলে তুলছেন! শয়তান লোক একটা”
মনে মনে এভাবেই কিছুক্ষণ বকবক করতে করতে চোখ বন্ধ করলাম, এরপর কখন যে চোখ লেগে এলো জানিনা
চলবে….
[ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন..!!]