ইস্ক_সুফিয়ানা #পর্ব – ১২

0
1652

#ইস্ক_সুফিয়ানা
#পর্ব – ১২
#লেখনীতে : #Aloñe_Asha (ছদ্ম নাম)
#Kazi_Meherin_Nesa

বাড়ি পৌঁছাতেই আরমানকে ওর বাবার প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়

“কোত্থেকে ফেরা হচ্ছে?”

“রুহির সাথে দেখা করতে গেছিলাম”

“এখনও ওখানেই আটকে আছিস তুই? আমি তো ভেবেছিলাম রুহির কথা তোর মাথা থেকে বেরিয়ে গেছে”

তাচ্ছিল্যের হাসি হাসলো আরমান, এতকিছুর পরও ওর বাবা যে এইরকম কথা বলে বসবে সেটা ভাবতে পারেনি ও

“যাকে ভালোবাসি তার চিন্তা এতো ইজিলি যদি ভুলেই যাই তাহলে সেই ভালোবাসার ভ্যালু কি রইলো? তাছাড়া আমি ওকে ভুলে যাওয়ার জন্য ভালোবাসিনি”

“বেশ গুছিয়ে কথা বলা শিখে গেছিস দেখছি! ভেবে দেখ তো আমার সামনে দাড়িয়ে আগে কোনোদিন এভাবে কথা বলেছিস তুই?”

“তুমি বাধ্য করছো আমাকে এভাবে কথা বলতে, কেনো আমাদের দুজনে মধ্যে দেয়াল হয়ে দাড়ালে তুমি?”

“আরমান তুই কিন্তু এবার বাড়াবাড়ি করছিস? বাদ দে এইসব! স্বাভাবিক হয়ে যা আগের মতো”

“ফাইন! আমি আবার আগের মতো হয়ে যাবো, আই প্রমিজ কিন্তু তোমাকেও কথা দিতে হবে যে রুহিকে তুমি মেনে নেবে”

“এই ব্যাপারে কোনো কথা শুনতে চাইনা আমি”

“তুমি জেদ করে কি পাচ্ছো বাবা? কেনো এসব করে আমাকে কষ্ট দিচ্ছ? এদিকে তুমি ওদিকে রুহি, তোমরা দুজনে কেনো এমন করছো?”

“আমি কেনো ওকে মানবো না সে কারণ কিন্তু পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছি তোমাকে, এরপরও এই প্রশ্নের কোনো মানে আছে বলে আমার মনে হয় না”

“আমার ভালোর জন্য এসব করছো তো? কিন্তু এতে আমার কি ভালো হচ্ছে? মধ্যে থেকে তো আমিই কষ্ট পাচ্ছি..সেটা তোমার নজরে পড়ে না?”

যে” জেদ ধরে বসে আছিস সেটা তোর ছেলেমানুষী আরমান, আমাকে না বুঝিয়ে তুই নিজেকে বোঝা!”

আরমান আর এক মুহুর্ত দাড়ালো না ওখানে, নিজের ঘরে চলে গেলো.. মিস্টার শাহ্ কিছুতে নিজের সিদ্ধান্ত থেকে পিছু পা হবেন না, আরমান ও এসব নিয়ে কথা বাড়াতে চায় না, আবার কথা না বলেও তো থাকতে পারছে না কারণ যাকে ও ভালোবাসে সে যে ওর বাবার অনুমতি ছাড়া ওর জীবনে আসবে না, আর আরমান ও রুহিকে ছাড়া থাকতে পারবে না..দুপুরের রান্না টা আমি করি রোজ, তো সবদিনের মতো আজও রান্না করছিলাম তখন চাচী এসে বলতে শুরু করলেন

“কিরে রুহি, চাচার মুখে শুনলাম তোর বস, মানে ওই ছেলেটা, আরমান শাহ্! ওকে নাকি তুই ভালবাসিস..কথাটা কি সত্যি?”

“এরকম কিছুনা চাচী, আমরা একে অপরকে পছন্দ করি শুধু এইটুকুই! এর বেশি কিছুনা”

“আজকাল পছন্দ মানেই তো ভালোবাসা, এসব বুঝি আরো আগে থেকে চলছিল তোদের মধ্যে? এইজন্যেই বুঝি ওই ছেলেটা তোর বিয়ে ভাঙার জন্যে আটঘাট বেঁধে নেমেছিলো?”

আমি কোনো উত্তর দিলাম না, চুপচাপ রান্নায় মন দিলাম..অবশ্য এখন আমারও এটাই মনে হয় উনি হয়তো আমাকে আগে থেকেই ভালোবাসতেন, নাহলে আমার জন্যে এতকিছু করতে যাবেন কোন লাভে?

“শোন রুহি, আগে যা হবার হয়ে গেছে ভুলে যা..এখন খাসা সুযোগ আছে তোর কাছে, ছেলেটা যখন তোকে ভালোবাসে বিয়ে করে ফেল না! শুনেছি অনেক টাকা পয়সা আছে আরমান শাহর!

“চাচী প্লিজ! তুমি ভালোভাবে জানো টাকার লোভ আমার নেই আর ওই বাড়ির বউ হবার স্বপ্ন ও আমি দেখিনা”

চাচী আরও অনেকভাবেই আমাকে ম্যানিপুলেট করার চেষ্টা করলেন, জানি উনি কোন লোভে এসব বলছিলেন..কিন্তু আমি তার কথায় কোনো পাত্তা দেইনি..ওদিকে সন্ধ্যাবেলায় আরমান রুমে বসেছিলো, রোজ ডায়রি লিখাটা এখন ওর একটা অভ্যাসে পরিণত হয়েছে, আজও তাই লিখছিলো..আরমানের ছোটো বোন তখন ওর ঘরে আসে, ইদানিং আরমান এত্তো মুড অফ করে রাখে যে ওর সাথেই ঠিকমতো কথা বলে না

“কি করছিস রে ভাইয়া?”

মিনাল তাকিয়ে দেখে ডায়রি লিখছে আরমান, ও ফিক করে হেসে বলে

“ওহ, ডায়রি লিখছিস? বাব্বাহ! বেশ ভালো অভ্যাস করেছিস, রোজ ডায়রীতে মনের কথা লিখলে দেখবি মন ভালো হয়ে যাবে”

এবারও নিশ্চুপ আরমান, মিনাল জানে ওর ভাইয়ের মন খারাপ.. ও তখন আরমানের কাধে হাত রেখে শান্তনার স্বরে বলে

“ভাইয়া, তোর কি মন খারাপ? দেখ মন খারাপ করিস না..দেখবি রুহি আপু ঠিক রাজি হয়ে যাবে”

“তোর রুহি আপু কি পরিমান জেদী সেটা জানা নেই তোর মিনাল, বারবার মেয়েটা আমাকে ফিরিয়ে দিচ্ছে..আর এদিকে বাবা জেদ ধরে বসে আছে..আমার পেইন কারো চোখেই পড়ছে না”

“রুহি আপুও তো তোকে ভালোবাসে তাইনা? তাছাড়া আমার মনে হয় না রুহি আপু ভুল কিছু বলেছে..দেখছিস তো বাবাকে, আপু না করেছে তাও এতো ঝামেলা করছে..হ্যা বললে জানিনা কি করতো”

“বাবাকে আজ না হয় কাল হ্যা তো বলতেই হবে মিনাল, আমি আর কিছুদিন অপেক্ষা করবো..যদি দেখি দুদিক থেকেই একই জেদ আকড়ে বসে আছে তাহলে আমাকেই কিছু করতে হবে”

আরমানের মনেও ধীরে ধীরে একটা জেদ চেপে বসছে, ও ঠিক করেছে কিছুদিন ধৈর্য্য ধরবে তারপর যখন ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে যাবে তখন আর কারো পরোয়া করবে না..রুহিকে নিয়ে আসবে, সেটা ওর ইচ্ছায় হোক বা অনিচ্ছায়! দেখতে দেখতে এভাবেই সময় কাটলো আরো কিছুটা, আজ ধরতে গেলে এক মাস হলো আরমান স্যার আর আমার সম্পর্কের! আজ থেকে একমাস আগেই আরমান স্যার আমাকে নিজের ভালোবাসার কথা বলেছিলো..দিনটাকে কোনোদিন হয়তো ভুলতে পারবো না আমি! আজ সকালেও আরমান স্যার টেক্সট করেছিলেন আমাকে! সিন করে রিপ্লাই করিনি! গত একমাস ধরে এই তো চলছে আমাদের মধ্যে..কিছুটা ডিস্টার্ব ছিলেন উনি কিছুদিন, এখন আস্তে আস্তে আবার কাজের দিকে মন দিয়েছেন উনি! গতকাল ও একটা অ্যাড শুট করে এসেছেন! সিফাত এর থেকে সব খবরই নেই আমি ওনার ব্যাপারে..এখন আরমান স্যারের বাড়িতে যাইনা তাই বিকেলে নয়নাকে কোচিং থেকে আনতে চলে যাই! আজও গেছিলাম..আজকে হুট করে সেখানে আরমান স্যার এসে উপস্থিত হয়েছে.. মাঝে মাঝেই উনি এভাবে আসেন আমার সাথে দেখা করতে, যখন আসেন তখন বুঝতে পারি থাকতে পারছিলেন না আর দেখা না করে..মনে মনে অনেক খুশি হই আমি কিন্তু প্রকাশ করিনা! ঐযে আমি যে এক জায়গাতেই আটকে গেছি! ওনার বাবা যে এখনও মানেনি আমায়

“আপনি এখানে কি করছেন?”

“তুমি যখন যাবেনা তাহলে তো আমাকেই আসতে হবে এখানে তাইনা? এতো অবাক হবার কি আছে?”

“মানে? কোথায় যাবো আমি?”

উনি কিছুটা বিরক্ত হয়ে আমার হাত ধরে বললেন

“এমনভাবে বলছো যেনো কিছুই জানো না? তুমি কিন্তু এখনও আমার আন্ডারে জব করো..তাহলে এতদিন হয়ে গেলো, আসছো না কেনো তুমি?”

“ওইসব বাদ দিন আরমান স্যার! আমি আর কাজটা করতে পারবো না, ওই বাড়িতে যেতে চাইনা আমি”

“আচ্ছা? তাহলে আমার দরকারি কাজ যেগুলো তুমি করতে সেগুলো কে করবে! সিফাত এর দ্বারা এসব তো হচ্ছে না.. ও পারছে না”

“কেনো পারবে না? আমি তো ওনাকে ভালোভাবেই সব বুঝিয়ে দিয়েছিলাম আর এগুলো তো কঠিন কোনো কাজ না”

“রুহি প্লিজ, আমি আর মানতে পারছি না এসব! কতদিন হলো ভালোভাবে আমরা একটু কথা বলি না সেটা ভেবে দেখেছো? কাজের বাহানায় হলেও অন্তত তুমি তো আমার সামনে থাকবে”

“কাজের ব্যাপারে যদি খুব সমস্যা হয় তাহলে অন্য কাউকে রেখে নিন আমার জায়গায়”

উনি কিছুক্ষণ আমার দিকে অদ্ভুতভাবে তাকিয়ে রইলেন, তারপর হুট করে মুখে বাঁকা হাসি ঝুলিয়ে বলে ফেললো

“হুমম আমিও তাই ভাবছি! এভাবে আর কতদিন চলবে বলোতো? যাকে ভালোবাসি সেও আমাকে পাত্তা দিচ্ছে না, আমার মতো একটা হ্যান্ডসাম ছেলের এই হাল কি মেনে নেওয়া যায়?”

আমি কোনো উত্তর দিলাম না, ওনার কথার ধরন শুনেই বুঝেছি এবার আমাকে রাগানোর জন্যে অনেককিছুই বলবেন, তখনই উনি বলে উঠলেন

“ভাবছি একটা মেয়ে ম্যানেজার আনবো! ইউ নো হোয়াট, ম্যানেজার মেয়ে হলে আমার একটু সুবিধা হবে আর কি, আমার কিছু বলার আগেই বুঝে নেবে”

আমার একটু রাগ হলো ওনার কথায়, লোকটা এমন কেনো? সবার মতো এই ধরনের কথা আমাকে জেলাস ফিল করার জন্য না বললেই কি হতো না?আমি আস্তে করে হাত ছাড়িয়ে ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললাম

“আনুন না, আমি বারণ করেছি নাকি?”

“আচ্ছা? তাহলে তার সাথেও আমি সেভাবেই বিহেভ করবো যেভাবে তোমার সাথে করি, তাকেও সেভাবে সময় দেবো যেভাবে তোমাকে দিতাম, সমস্যা নেই তো তোমার?”

“আমার সমস্যা কেনো থাকবে? আপনি নিজের সুবিধার জন্যে হায়ার করবেন তাতে আমার কি?”

“ভেবে নাও, আমার ওপর তোমার আর কোনো রাইট কিন্তু থাকবে না”

আমি নাক ফুলিয়ে একবার ওনার দিকে তাকিয়ে সামনের দিকে হাটা দিলাম, উনিও আমার পেছন পেছন হাটতে শুরু করলেন! আমাকে মানাচ্ছেন আর কি! যেতে যেতে নয়নার কোচিং অব্দি পৌঁছে গেছিলেন উনি

“সরি সরি! আর মজা করবো না..দেখো এমনিতেই আমি অনেক স্যাড, আর স্যাডনেস দিও না আমাকে”

“সরি বলতে হবেনা! আমি রাগ করিনি আর না আপনাকে কষ্ট দেবার কোনো ইচ্ছে আছে আমার, সবসময় শুধু এটাই চাই আপনি ভালো থাকুন”

উনি কিছু বলতে যাচ্ছিলেন তখনই নয়না বেরিয়ে আসে, আরমান ওর সাথে বেশ ফ্রাংকলি কথা বললো, নয়না ও গল্প জুড়ে দিয়েছে ওর সাথে..মধ্যে থেকে আমি হা করে দেখছি! লোকটা কত সুন্দর মিশে যেতে পারে সবার সাথে, প্রচণ্ড মিশুক স্বভাবের উনি

“আচ্ছা নয়না, চলো তাহলে আজকে তোমাদের ট্রিট দেই? ফুচকা খাবে নাকি?”

“দরকার নেই! কোনো ফুচকা খাওয়া হবেনা এখন, নয়না বাড়ি চল অনেক কাজ আছে আমার”

“মিথ্যে বলছো কেনো আপু, বাড়িতে এখন কোনো কাজ নেই! চলো উনি আমাদের ফুচকা খাওয়াবেন!”

“রুহি! কাজ তো তোমার সবসমই থাকে, আজ এই ফুচকা খাওয়ার সুযোগে একটু আমাকে সময় দাও! এমনিতেও তো কিছুদিন যাবত দূরে দূরে পালাচ্ছো!”

“কিন্তু..”

উনি আমার আর কোনো কথায় পাত্তা দিলেন না, নিয়ে হলেন ফুচকা স্টলে, আমি জানি উনি এসব খাবার খেতে অভ্যস্ত নন শুধু আমার জন্যে খেলেন, আমাকে একটু খুশি করার জন্য..কষ্ট হয় আমার ওনার জন্যে, কতকিছু করছেন উনি আর আমি পাষাণের মতো চুপ করে আছি! নিজেকে বড্ড অপরাধী মনে হয়..!! একসময় নিজের হাতে উনি নয়নাকে ফুচকা খাইয়ে দিলেন তারপর আমাকে খাওয়াতে এলেন, আমি অবাক হয়ে দেখছিলাম ওনার দিকে, তখন উনি মুচকি হেসে আমার কানের কাছে মুখটা এনে বললেন

“আমাকে যতো ইচ্ছে হয় পরে দেখো, আই অ্যাম অল ইউরস, আপাতত ফুচকার দিকে নজর দাও!”

লজ্জা পেলাম ওনার কথায়, ঈশ! ইদানিং বড্ড লাগামছাড়া কথা বলতে শুরু করে দিয়েছেন উনি..লোক সম্মুখে এসব কথা বললে যে মাথা কাটা যাবে..আমি চুপ করে খেয়ে নিলাম ফুচকা! তখনই নয়না অভিমানী স্বরে বলে উঠলো

“কি ফিসফিস করো গো তোমরা? আমাকেও একটু শোনাও, আমিও কিন্তু বড় এখন!”

আমি নয়নাকে কিছু বলতেই যাচ্ছিলাম তার আগে নির্লজ্জের মতো দুম করে বলে বসলেন

“তোমার আপুর সাথে একটু প্রেমালাপ করছি আর কি! সবার সামনে তো আর বলা যায় না সব কথা”

আমি চমকে তাকালাম ওনার দিকে, উনি সঙ্গে সঙ্গে চোখ মারলেন..নয়না এসব দেখে হাসছে আর আমি লজ্জায় শেষ হয়ে যাচ্ছি! ঈশ! আল্লাহ গো, কি করছেন উনি এসব!

আজকে আরমানের কিছু দরকারী কাজ আছে তো তাড়াহুড়ো করছিলো অনেক, তাই ওর মা খাইয়ে দেয় ওকে

“রুহির সাথে যোগাযোগ বন্ধ নাকি তোর? কথা বলতে দেখিনা তোকে ওর সাথে”

“যোগাযোগ তো আমি করতে চাইছি! ট্রাই করছি কিন্তু রুহি কেমন সেটা তো জানো, আর আমার বাবাও! মধ্যে থেকে আমি স্যান্ডউইচ হয়ে যাচ্ছি”

“তোর বাবাকে তো বলেছি আমি অনেকবার কিন্তু শুনলে তো, আচ্ছা আমি বলি কি তুই তোর বাবার সাথে আরেকবার কথা বলে..”

“মা প্লিজ, অনেক বলেছি এবার অন্তত রিকোয়েস্ট করতে পারবো না কাওকে, রুহির সম্পর্কে না জেনেই যে এতর ভুল ধারণা নিজের মনে পুষে রেখেছে তার সাথে কথা বলে কোনো লাভ আছে কি?”

আরমান কিছুটা বিরক্ত হয়ে উঠে বেরিয়ে যায়, ছেলের এই বিরক্তির কারণ বুঝতে অসুবিধা হয়নি ওর মায়ের! মিস্টার শাহ্ ও তখন অফিসে যাওয়ার জন্য বেরোচ্ছিলেন তখন মিসেস শাহ্ বলে ওঠেন

“শোনো, ছেলের এই ডিপ্রেশন আমি আর দেখতে পারছি না, কিছু একটা করো তুমি”

“কি করবো?”

“এমনকিছু করো যাতে তোমার মনে রুহিকে নিয়ে যতো সন্দেহ আছে সব দুর হয়ে যায়, ওকে যাতে সামনাসামনি জেনে জাজ করতে পারো তুমি”

“আবারো এই কথা তুলছো?”

“হ্যা তুলছি কারণ আরমানকে এভাবে কষ্ট পেতে আর দেখতে পারবো না, অনেক জেদ করেছো! এবার ছেলের খুশির জন্যে কিছু করো, অনুরোধ রইলো তোমার কাছে”

মিস্টার শাহ্ কিছু বললেন না, বেরিয়ে এলেন তবে উনি ভেবে নিয়েছেন কি করবেন..এদিকে আমি ধোয়া জামাকাপড় গুলো ভাঁজ করে আলমারিতে তুলছিলাম! আজ আবার ওনার মিউজিক ভিডিও ও রিলিজ করেছে, আমার চাচাতো বোনকে দেখলাম ধেই ধেই করে ফোন হাতে আমার রুমে আসতে, এসেই বলতে শুরু করলো

“আরমান ভাইয়ার মিউজিক ভিডিও রিলিজ করেছে আজকে! দেখেছো আপু? কি হ্যান্ডসাম লাগছে ভাইয়াকে”

ওর মুখে “ভাইয়া” ডাকটা শুনে ভ্রু কুঁচকে ফেললাম আমি

“তুই আবার ভাইয়া ভাইয়া করছিস কেনো? আরমান স্যার তোর কোন জন্মের ভাই লাগে শুনি?”

“কোনো জন্মের না, কিন্তু এই জন্মে তো আমার দুলাভাই লাগে, সেই হিসেবে ভাই বলে সম্মান তো করতেই হবে তাইনা?”

“এই, কিসের দুলাভাই? নয়না আমি কিন্তু আগেই বলেছি তোকে এইসব নিয়ে কোনো কথা বলবি না তুই”

“উফফ আপু, আমি কি ডাকলাম না ডাকলাম এই নিয়ে এতো ভাবো কেনো তুমি হ্যা? তুমি ভিডিও দেখো”

নয়না আমাকে দেখাতে আসছিলো ভিডিও, তখন আমি ওকে সরিয়ে দেই!

“তুই দেখ! আমার অনেক কাজ আছে.. আজ পুরো ঘর পরিষ্কার করতে হবে, তারপর তুই না আমার হাতের ভুনা খিচুড়ি খেতে চেয়েছিস? সেটাও তো বানাতে হবে”

তখনই শুনতে পেলাম কলিং বেজে উঠলো, চাচা সামনের ঘরেই ছিলেন তাই আমি আর এগিয়ে গেলাম না..নিজের কাজে ব্যাস্ত ছিলাম, নয়না ও আমাকে জ্বালাচ্ছে, একটু বাদেই চাচা আমার রুমে এলেন

“কলিং বাজলো যে! কে এসেছে চাচা?”

“আরমানের বাবা এসেছে, তোর সাথে কথা বলতে চান!”

খানিকটা চমকে উঠলাম আমি! বুঝলাম না আরমান স্যারের বাবা আমার সাথে দেখা করতে এসেছেন কেনো? ভয় করছিলো এটা ভেবে যে ওনাদের বাবা ছেলের মধ্যে কোনো ঝামেলা হয়নি তো আবার? মিস্টার শাহ্ আমাকে দোষারোপ করতে আসেননি তো?

“ক..কি নিয়ে কথা বলবেন কিছু কি বলেছেন?”

“নাহ, শুধু বললেন তোর সাথে কথা বলতে চায়..চল আমিও যাচ্ছি তোর সাথে”

“না চাচা, আমি একাই যাবো, উনি আমার সাথে কথা বলতে এসছেন, আমিই কথা বলবো..তুমি শুধু দেখো চাচী যেনো কোনো কথা বলে ঝামেলা না করে”

চাচা মাথা নাড়ালেন! হুট করেই চিন্তায় মাথা ভার হয়ে আসছে আমার, জানিনা উনি কি বলবেন, কি প্রশ্ন করবেন আমায়, কি বলবেন আমাকে! আস্তে আস্তে আমি এগিয়ে এলাম বসার ঘরের দিকে, উনি তখন আমাদের বাড়িটা পর্যবেক্ষণ করছিলেন

“আসসালামু আলাইকুম”

“হুমম ওয়ালাইকুম আসসালাম! তোমাদের বাড়িটা দেখছি বেশ ছোটো বাট, ওয়েল ডেকোরট! নট ব্যাড!”

আমি কিছু বললাম না, হুট করেই উনি বলে উঠলেন

“আমার ছেলের চয়েজ নিয়ে আমার গর্ব হতো সবসময়! কেনো জানো? কারণ ও বেস্ট জিনিসটা পছন্দ করতো কিন্তু লাইফের এতো বড় একটা জিনিষ পছন্দ করতে গিয়ে যে ও ঠকে যাবে সেটা ভাবিনি”

এতক্ষণে উনি আসল কথা বলা শুরু করেছেন, আমার ধারণা ছিলো উনি এগুলোই বলবেন..আমি চোখ নিচু করে আছি, এই প্রশ্নগুলো হয়তো ওনার জায়গায় যেকোনো ছেলের বাবাই থাকলে করতেন, সবাই তো নিজের ছেলেমেয়ের জন্যে সেরা জিনিসটাই খোজে তাইনা! সে হোক কোনো সামগ্রী বা লাইফ পার্টনার!

“বুঝলাম না তোমার মধ্যে কি এমন দেখেছে যার জন্যে ওর চোখে তুমি বেস্ট, কি করেছো ওকে তুমি বলোতো?”

চলবে….

[ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন..!!]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here