ইস্ক_সুফিয়ানা #পর্ব – ১৪

0
1702

#ইস্ক_সুফিয়ানা
#পর্ব – ১৪
#লেখনীতে : #Aloñe_Asha (ছদ্ম নাম)
#Kazi_Meherin_Nesa

ওনার প্রশ্নে চোখ নিচু করে ফেললাম আমি, উনি সঙ্গে সঙ্গে আমার থুতনিতে হাত দিয়ে আবার মুখ উচু করে ধরে চোখ গরম করে জিজ্ঞাসা করলেন

“সত্যি করে বলো রুহি, বাবা কি বলেছে তোমাকে? যদি ইনসাল্ট করে থাকে তাহলে সেটা আমার থেকে হাইড করার চেষ্টাও করো না কিন্তু”

“নাহ আরমান স্যার! আপনার বাবা আমায় অপমান করেননি, উনি শুধু বাবা হিসেবে ছেলের ভালোর কথা ভেবে নিজের কর্তব্য পালন করতে এসেছিলেন”

“আমার ভালোর জন্য? রুহি তোমার মনে হয় বাবা আমার ভালোর কথা, আমার খুশির কথা ভাবে? নাহলে কেনো সব জানার পরও উনি তোমাকে মানতে পারছেন না?”

আমি মুচকি হাসলাম, উনি আমার এই অযথা হাসির কারণ বুঝলেন না, ভ্রু কুঁচকে ফেলেছেন ইতিমধ্য..বিরক্ত হয়েছেন কিছুটা

“সবসময় তুমি আমার বাবার সাপোর্ট নিয়ে কেনো কথা বলো রুহি? তুমি বুঝতে পারছো না আজকে ওনার জন্যে আমরা..”

“আপনার বাবার কোনো দোষ নেই, যা বলার আমি বলেছি! তাছাড়া কোনো আফসোস ও নেই আমার! উনি আজ বাড়ি এসে আমায় কিছু প্রশ্ন করেছিলেন! সেগুলোর উত্তর আশা করি দিতে পেরেছি..আপনি আর এইসব নিয়ে অযথা ভাববেন না”

“ওহ রিয়েলী? তুমি বাবার সব প্রশ্নের উত্তর দিয়েছো? তাহলে বাবা এখনও চুপ আছে কেনো? দ্যাট মিনস, বাবা এখনও মানবে না এদের সম্পর্কটা!”

“এই সম্পর্ক নিয়ে সমস্যা নয়, সমস্যা আমায় মানা নিয়ে আর কেনো মানতে পারছেন না সেটা আপনার বাবা বুঝবেন, ওনার দিকটা কিন্তু আপনি বুঝতে পারবেন না..আপনার বাবার চিন্তাধারা আপনি সেদিন বুঝবেন সেদিন আপনি নিজে বাবা হবেন, আপনি নিজেও নিজের সন্তানের জন্যে ভাববেন, তাকে সেরা জিনিসটা দিতে চাইবেন..বাবা হিসেবে কিন্তু আপনার বাবা অনেক ভালো! হি ইজ বেস্ট!”

“সিরিয়াসলি? এইযে এত্তকিছু হচ্ছে তারপরও তোমার এরকম মনে হয়?”

“মনে হবার কি আছে? যা দেখছি তাইতো বলছি! তাছাড়া আপনাকে যতদিন ধরে চিনি বলতে গেলে আপনার বাবাকেও ততদিন ধরেই চিনি! উনি সত্যিই ভীষণ ভালো, তাইতো এত ব্যস্ততার পরেও আপনার কথা ভাবতে ভোলেন না”

উনি বিরক্তিভরা দৃষ্টিতে চেয়ে আছেন আমার পানে, আমার মুখ থেকে হয়তো নিজের বাবার প্রশংসা শোনার জন্যে প্রস্তুত ছিলেন না উনি..

“রুহি, ইউ আর আনবিলিভেবল!”

আমি ঘাড় বাঁকিয়ে মুচকি হেসে বললাম

“আই নো দ্যাট”

“রুহি আমি আর পারছি না! প্লিজ এইসব শেষ করে দাও, দেখবে একবার বিয়ে হয়ে গেলেই বাবা তোমাকে মানবে”

“হুমম! হয়তো উনি আমায় নিজের পুত্রবধূ হিসেবে মানবেন কিন্তু সেটা বাধ্য হয়ে, আমি চাইনা উনি আমায় বাধ্য হয়ে মানুক! আমার ভালবাসা আপনার জন্যে কম হবেনা কখনো, দরকার পড়লে আপনার জন্যে আমি অপেক্ষা করতেও রাজি তবে আমি চাইনা আপনার বাবা কোনো চাপের মুখে পড়ে আমায় মানুক!”

“আমার একটা গভীর বিশ্বাস আছে,নিজের ওপর..আর উনি আমায় যা ভাবেন আসলে আমি সেটা নই তাই আমার মনে হয় যে উনি আমায় মন থেকে একদিন না একদিন ঠিক মানবেন, ভুল বুঝছেন উনি আমায়, সেটা ইনশাআল্লাহ জলদি মিটে যাবে..আরেকটু অপেক্ষা করুন!”

তখনই পাশের মসজিদ থেকে ফজরের আযান ভেসে এলো, আমি আযান শুনে বিছানা থেকে নামলাম, উনিও আমার দেখাদেখি নেমে গেলেন

“ওই দেখুন, ফজরের আজান দিয়েছে..আপনি বরং এখন বাড়ি চলে যান আর হ্যা আপনি আপনার বাবাকে এতটাও ভুল বুঝবেন না, উনি যা করছেন সেটা যেকোনো বাবাই করতো”

“বাবা কি বলেছে সেটা তো বলবে না আমায়, ওকে ফাইন কিন্তু এখন বাবার প্রসঙ্গ কি কিছুক্ষণের জন্যে বাদ দেওয়া যায় এখন প্লিজ?”

“আচ্ছা! আর বলবো না..আপনি তাহলে যান এবার”

কথাটা বলেই আমি অজু করতে যাচ্ছিলাম, ভেবেছিলাম উনি চলে যাবেন কিন্তু ঘিরে দেখি উনি এখনো ওখানেই ঠায় দাড়িয়ে আছেন! আমি হন্তদন্ত হয়ে আবার ওনার কাছে এলাম

“একি! আপনি এখনও এখানে কি করেন? যেতে বললাম না আপনাকে?”

“ও হ্যালো? আমি এখান থেকে যেতে আসিনি! বললাম না তোমাকে আজ এখানে থাকবো? আর তুমি আমাকে সবসময় এভাবে দুরদুর করে তাড়িয়ে দাও কেনো বলোতো? কি শান্তি পাও এসব করে?”

“আরে, আপনি এখানে থাকবেন মানে কি? দেখুন ভালোয় ভালোয় বলছি যান, আমি নামাজে বসবো! তার আগে বেরোন আপনি!”

“হ্যা, তুমি বসো নামাজে, আমি মানা কখন করলাম? ইন ফ্যাক্ট, আমিও তো নামাজে যাবো! ভাবছি! তোমাদের এই পাশের মসজিদ থেকেই নামাজ আদায় করে ফিরবো!”

“ভালো ভেবেছেন! এবার যান”

উনি কি যেনো ভেবে মুচকি হেসে আমার ডান গালে হাতটা রাখলেন, ওনার হাতটা অসম্ভব ঠান্ডা, কিছুটা কেপে উঠলাম আমি..চোখমুখ খিচে বলে উঠলাম

“ঈশ! কি ঠান্ডা, আপনি মানুষ না ভ্যাম্পায়ারের বলুনতো? রক্ত মাংসের গড়া মানুষের হাত এত্তো শীতল হয় নাকি?”

“তুমি বললে ভ্যাম্পায়ারও হতে পারি! দরকার পড়লে দুটো এক্সট্রা দাত লাগিয়ে নেবো! তারপর পূর্ণিমার রাতে তোমার রক্ত শুষে খাবো!

কথাটা বলেই হো হো করে হেসে উঠলেন উনি, আমি তাজ্জব বনে গেলাম ওনার কথায়, মাথাটা সত্যিই খারাপ হয়েছে ওনার!

“কি বলেন এগুলা আপনি..! থামেন তো”

“ওকে লিসেন টু মি.. আগে প্রেম ভালোবাসা বিষয়টা সেভাবে বুঝতাম না, কিন্তু যেদিন থেকে বুঝতে পেরেছি, তোমায় ভালবাসতে শুরু করেছি সেদিন থেকে রিয়ালাইজ করতে শুরু করেছি যে নিজের ভালোবাসার মানুষের সাথে সময় কাটানোর একটা সুযোগ ছাড় দিতে নেই! তাই মাঝে মাঝে বেহায়ার মতো চলে আসি! আর তুমি এমন নিষ্ঠুরের মতো আচরণ করো?”

“আরমান স্যার! আপনি কি জানেন আমার আপনাকে আমার রুমেই ঢুকতে দেওয়া উচিত না? কেউ দেখে ফেললে কি কান্ড হবে সেই খেয়াল আছে আপনার? সেখানে আপনি আমার রুমে দাড়িয়ে আছেন! এটাই কি যথেষ্ট না?

উনি বাচ্চাদের মতো ঠোঁট উল্টে কথাগুলো বললেন, আমি দু হাত ভাঁজ করে চোখ গরম করলাম..উনি বুঝেছেন এবার আর না গিয়ে উপায় নেই!

“আচ্ছা একটা কথা ছিলো.. আমার একটা ইচ্ছা আছে?”

“কি?”

“একদিন যেনো আমরা স্বামী স্ত্রী হিসেবে দুজনে একসাথে বসে আল্লাহর ইবাদত করতে পারি.. আজ না হয় কাল তুমিই আমার লাইফ পার্টনার হবে, তখন আমরা একসাথেই নামাজ পড়বো! আল্লাহর কাছে দোয়া করবো! হোয়াট সে? সুন্দর না আইডিয়াটা?”

আমি পলকহীন দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি লোকটার দিকে, প্রতিটা সময় উনি আমাকে নতুন নতুন ভাবে চমকে দেন, আর চমকগুলো ও এমন যে কেউ ওনার প্রেমে পড়তে বাধ্য হবে! এতো মনোমুগ্ধকর কথা বললেন উনি যে আমি আবার বাধ্য হলাম মানুষটার প্রেমে পড়তে! ভাবতেই অবাক লাগছে যে এই লোকটা এতো বেশি করে চায় আমায়?

“কি বলো এই ব্যাপারে?”

মুচকি হাসলাম আমি

“এর থেকে সুন্দর ভাবনা আর হতেই পারে না..আল্লাহ চাইলে অবশ্যই আসবে এমন সময়”

“হুমম! ইনশাআল্লাহ”

” আচ্ছা এবার তাহলে যান?”

“ওকে ফাইন! আর রাগ দেখাতে হবে না..যাচ্ছি..তার আগে একটু হাসো দেখি?”

“আবার হাসতেও হবে?”

“হুমম হবে! তোমার মুড এভাবে অফ থাকলে আমি বাড়ি গিয়ে শান্তি পাবো না”

ওনার জন্যেই ছোট্ট একটা হাসি দিলাম! সত্যিই উনি একটা পাগল! আমার হাসি দেখে উনিও মুচকি হেসে উঠে দাড়ালেন, জানালার কাছে গিয়ে আমার দিকে ইশারায় একটা ফ্লায়িং কিস ছুড়ে দিয়ে বেরিয়ে গেলেন উনি, আমিও জানালার সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম, উনি সরু গলিটা দিয়ে ততক্ষণে চলে গেছেন..বুঝি না উনি সেদিনই কিভাবে আসেন যেদিন আমি জানালা খোলা রাখি? ভাবতে ভাবতে চললাম আমি অজু করতে, নামাজের সময় পেরিয়ে যাচ্ছে ওদিকে আরমানের বাবাও নামাজ পড়তে উঠেছেন, ওনার একটু ঠাণ্ডা লেগেছে বিধায় মিসেস শাহ অযুর জন্যে পানিটা হাল্কা গরম করতে গেছিলেন তখন মিস্টার শাহ কি ভেবে যেনো উনি আরমানের রুমের দিকে গেছিলেন, ওখানে গিয়ে দেখলেন ছেলে রুমে নেই..বুঝতে এক মিনিটও লাগেনি ওনার যে ছেলে এই রাতে কোথায় যেতে পারে..তখন মিসেস শাহ আসেন

“তুমি এখানে কি করছো? তোমার পানি একটু গরম করে দিয়েছি.. চলো”

“তোমার ছেলের দেখছি এখন রাতেও বাড়িতে মন টিকছে না..রাত বিরাতে একটা মেয়ের বাড়িতে ছুটছে! এরকম করলে মান সম্মান কিছু নাকি থাকবে নাকি?”

মিস্টার শাহ এর কথায় মিসেস শাহ আরমানের বিছানার দিকে তাকিয়ে দেখলেন বিছানা একদম গোছানো আর ও কোথাও নেই!

“ব্যাপারটা তো মনের, আরমান রুহিকে অনেক ভালোবাসে! আর এই দূরত্ব ও মানতে পারছে না তাই হয়তো..”

“একটা সাধারণ মেয়ের জন্যে তোমার ছেলের এই অযথা পাগলামি করার মানে অন্তত আমি বুঝতে পারছি না!”

মিস্টার শাহ চলে আসেন ওখান থেকে, মিসেস শাহ আরমানকে সঙ্গে সঙ্গে ফোন করেন কিন্তু ফোন বন্ধ! মিসেস শাহ ও বুঝেছেন ছেলে কোথায়! তবে উনি নিজের স্বামীর মত ছেলের ভালোবাসার বিরুদ্ধে যেতে চান না, উনি খুব করে চান শীঘ্রই দুজনের দূরত্ব মিটুক!

দুপুরবেলা আরমান তৈরি হচ্ছিলো, আজকে একটু বন্ধুদের সাথে দেখা করতে যাবে, তার আগে রুহির সাথে দেখা করবে ভেবেছে..তখনই মিনাল এসে ওর রুমের দরজা ধরে ঝুলতে ঝুলতে ভ্রু নাচাতে শুরু করে

“তোর আবার কি হলো? এরকম করছিস কেনো?”

“কিরে ভাইয়া! রাতের বেলা চোরি চোরি রুহি আপুর বাড়িতে যাওয়া হুমম? কি হচ্ছে এসব? আর তর সইছেনা বুঝি?”

আরমান অবাক হয়ে তাকায় বোনের দিকে, যতদূর জানে কাল তো ওকে কেউ যেতে দেখেনি, তাহলে ও কিভাবে জানলো?”

“তুই কিভাবে জানিস? রাতের বেলা না ঘুমিয়ে আমার ওপর নজর রাখছিলি নাকি?”

“আমার আর খেয়েদেয়ে কাজ নেই নাকি হ্যা? তাছাড়া শুধু আমি না বাড়ির সবাই জানে তুই কাল রাতে বাড়ি ছিলি না..বাবাই তো প্রথমে দেখেছে তুই ঘরে নেই”

“বাবা..?”

“হুমম! তুই যা করছিস, বাবার তোকে নিয়ে চিন্তা বেড়েই যাচ্ছে..কিযে হবে!”

“তোকে আর পাকামি করতে হবে না এতো! বাবা যা করার করছে তাই আমিও যা করছি করবো!”

“ভাইয়া! তুই তো পাগল হয়ে গেছিস একদম! মাথার স্ক্রু ঢিলে হয়ে গেছে তোর.. দাড়া রুহি আপুকে জানাতে হবে..সাবধান করতে হবে”

“কি বলবি তুই আবার রুহিকে?”

মিনাল আরমানের কথায় কোনো উত্তর না দিয়ে দাত কপাটি বের করে হাসতে হাসতে চলে গেলো..আরমান আর সেদিকে পাত্তা না দিয়ে তৈরি হয়ে নিচে এলো..সিফাত এসেছে, মিসেস শাহ্ ওকে খেতে দিয়েছে!

“তোর খাওয়া শেষ? চল..দেরী হয়ে যাচ্ছে”

“হ্যা শেষ.. চল! অ্যান্টি আসছি তাহলে আজকে”

“হ্যা, আবার এসো!”

সিফাত বেরিয়ে আসে, আরমান ও বেরোতেই যাচ্ছিলো তখন মিসেস শাহ্ ওর হাত ধরে বলে

“আরমান! তুই যা করছিস এগুলো কিন্তু ঠিক না, তোর বাবা এসবে নারাজ হচ্ছে!”

“বাবাও তো আমাকে নারাজ করছে মা, এইসবের সমাধান একটাই আর সেটা তো বাবা জানে!”

ছেলে আর বাবার এই দ্বন্দ আর ভালো লাগছে না মিসেস শাহ্ এর! ছেলেকে উনি বলতে পারবেন না রুহিকে ছাড়তে আর মিস্টার শাহ্ কে উনি মানাতে পারবেন না..কি এক দোটানায় পড়েছেন উনি! আরমান ড্রাইভ করছে, সিফাত পাশের সিটে বসা..হুট করে ও বলে উঠলো

“কিরে আরমান! তোর বোন বললো তুই নাকি মাঝে মাঝে রাতের বেলা বাড়ি থেকে গায়েব হয়ে যাচ্ছিস!”

“শয়তান মেয়েটা তোকে এটাও বলে দিয়েছে?”

“হ্যা বললো তো..আচ্ছা তুই স্লিপ ওয়াকিং করছিস নাকি? এটা কিন্তু মারাত্মক রোগ, এখনও সময় আছে ডাক্তার দেখা”

“এই মাথা নিয়ে তুই প্রেম করিস কিভাবে? তোর গার্লফ্রেন্ড তোকে ছেড়ে চলে যায় না কেনো? দোয়া করি তোর গার্লফ্রেন্ড যেনো ছেড়ে চলে যায় তোকে! গবেট একটা!”

একরাশ বিরক্তি সহিত আরমান দুম করে কথাটা বলে বসলো! বেচারা সিফাত অসহায় দৃষ্টিতে বন্ধুর দিকে চেয়ে আছে! একটাই তো গার্লফ্রেন্ড, সে ছেড়ে চলে গেলে কি হবে? এই আশঙ্কায় বুক চিনচিন করতে শুরু করেছে বেচারার! অনেকদিন হলো আরমান স্যারের কাজটা ছেড়েছি কিন্তু এভাবে বসে থাকলে তো চলবে না..কিছু করতে হবে আমাকে তাই আজকে একটা স্কুলে এসেছি চাকরির ইন্টারভিউ দিতে..আলহামদুলিল্লাহ চাকরিটা হয়ে গেছে আমার, চাচাকে ফোন করে খবরটা জানাতেই যাচ্ছিলাম তখনই আরমান স্যারের ফোন চলে এলো! ভাবলাম ওনাকেই না হয় প্রথমে জানাই! রিসিভ করতেই উল্টোপাশ থেকে প্রশ্ন করলেন উনি

“কোথায় তুমি?”

“এইতো, আমার বাড়ির কাছের একটা প্রাইভেট স্কুলের সামনে দাড়িয়ে আছি”

“স্কুল? হঠাৎ ওখানে কেনো? কাওকে ভর্তি করাতে গেছো নাকি?”

মুচকি হেসে বললাম

“নাহ! নিজে ভর্তি হতে এসেছি”

“হোয়াট? মজা করো না তো রুহি”

“আসলে চাকরির খোজ করছিলাম, এখানে ইন্টারভিউ ছিলো তাই দিতে এসেছিলাম..চাকরিটা হয়ে গেছে!”

“ওহ! আচ্ছা এক্সাকট লোকেশন বলোতো, আমি আসছি ওখানে”

“কিন্তু আপনি এখানে এসে কি করবেন?”

“নতুন জব পেলে, তো কংগ্রাচুলেশন জানাবো না আমি তোমাকে? এতোটা অকৃতজ্ঞ বয়ফ্রেন্ড নই আমি”

“তাই নাকি? আচ্ছা আমি কোনোদিন বলেছি আপনি আমার বয়ফ্রেন্ড নাকি নিজেই ভেবে নিয়েছেন?”

“আমি নিজেই ভেবেছি ওকে? যাই হোক, লোকেশন সেন্ড করো..আসছি আমি”

আমি আর কথা বাড়ালাম না, ওনাকে তো না করলেও কোনো না কোনো ভাবে চলেই আসবেন তাই নিজেই লোকেশন সেন্ড করে দিলাম..তারপর চাচাকে ও জানালাম আমার চাকরির কথাটা, উনিও খুশি হয়েছেন..কিছুক্ষণের মধ্যেই দেখলাম আরমান স্যার চলে এসেছেন, হয়তো আশেপাশেই ছিলেন..গাড়ি থেকে নামতেই সিফাত হেসে আমার দিকে এগিয়ে এলেন

“আরে রুহি, কেমন আছো?”

“এইতো আলহামদুলিল্লাহ! আপনি ভালো আছেন তো?”

“আলহামদুলিল্লাহ..বাই দ্যা ওয়ে শুনলাম চাকরি পেয়েছো নতুন? অভিনন্দন তোমাকে”

সিফাত আমার দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন, আমি হাত মেলাতে যাচ্ছিলাম কিন্তু উনি আটকে দিলেন, চোখ গরম করে সিফাতের দিকে তাকিয়ে বললেন

“রুহি কিসের? ভাবী বল ওকে, আর ভাবির সাথে হ্যান্ডসেক কিসের..সম্মান করতে পারিস না নাকি?”

“আরে আপনি এভাবে বলছেন কেনো? সামান্য ধন্যবাদ তো জানাচ্ছেন মাত্র”

“সেটা মুখেও বলা যায়, হাত ধরাধরি করার কি আছে?”

আমি ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে দেখছি ওনার কান্ড! এইটুকু ব্যাপার নিয়ে নিজের বন্ধুর প্রতিও জেলাস? সত্যিই উনি অনেক পজেসিভ আমায় নিয়ে..সিফাত ওনার কান্ড দেখে হেসে বললেন

“ওকে! ওকে! ভুল হয়ে গেছে আমার..ভাবীর সাথে এখন থেকে সম্মানের সহিত আচরণ করবো, আর রাগ দেখাতে হবে না তোকে”

ট্রিট চেয়েছে সিফাত আমার কাছে, তো আমার হয়ে আরমান স্যার ট্রিট দিচ্ছেন..সিফাতের গার্লফ্রেন্ডের ফোন এসেছে বিধায় উনি একটু উঠে গেছেন কথা বলতে, আমার ঠিক সামনেই আরমান স্যার বসে আছে, কফি কাপে চামচ ঘুরিয়ে চিনি মেশাচ্ছেন, তারপর চামচ রেখে দুটো চুমুক ও দিয়েছেন.. আমার নিষ্প্রভ দৃষ্টি তখনও ওনাকেই দেখে যাচ্ছে.. হুট করে আমার দিকে না তাকিয়েই উনি বলে উঠলেন

“এভাবে তাকিয়ে আছো কেন আমার দিকে? আমি তোমার মতই মানুষ ওকে? কোনো এলিয়েন নই”

“আমি আপনার দিকে তাকিয়ে আছি কিভাবে বুঝলেন? আপনি তো আমার দিকে তাকাননি”

“একটা মেয়ে সামনে বসে একটা ছেলেকে চেক আউট করলে বুঝতে অসুবিধা হয় না বুঝলেন মিস? আমার দিকে না তাকিয়ে কফি খাও ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে”

আমি ছোট্ট হাসি দিলাম, তারপর কফি কাপ হাতে তুলে একটু খেলাম!

“একটা প্রশ্ন করবো?”

“অবশ্যই করবে! তুমি ছাড়া আমি আর কোনো মেয়েকে আমি আমায় প্রশ্ন করার রাইট দেইনি”

“এইযে সারাদিনের এত ব্যস্ততার পর এত রাতের বেলা নিজের ঘুম নষ্ট করে, এই ঠান্ডায় আমার বাড়িতে ছুটে আসেন, কষ্ট হয় না আপনার? কেনো করেন এসব পাগলামি?”

উনি টেবিলের ওপর দু কুণুই রেখে স্নিগ্ধ একটা হাসি দিয়ে বললেন

” তুমি নামক পাগলীটার জন্যেই তো আমার সব পাগলামি! এত্তোটা ভালোবেসে ফেলেছি না তোমায় রুহি! বোঝাতে পারবো না, তোমাকে ছাড়া এক মুহূর্ত থাকতে ভালো লাগেনা আজকাল”

“এত্তো ভালোবাসেন কেনো আমায় আরমান স্যার? আমার তো মাঝে মাঝে নিজেকে আপনার ভালোবাসার যোগ্য বলে মনে হয় না”

কথাটা অনেকদিন যাবত মনের মধ্যে পুষে রেখেছিলাম, আজ বলেই দিলাম! হুট করে উনি সরু সরু দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে রাগ দেখিয়ে বললেন

“মিস রুহি, আপনার সাহস কিভাবে হলো আমার ভালোবাসার মানুষের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার! এই রাইট কিন্তু আমি আপনাকে দেইনি!”

ভাবলেশহীন ভাবে তাকিয়ে রইলাম ওনার দিকে! জানি আমার এইসব কথায় পাত্তা দেননা উনি কিন্তু আমি তো ভাবি! আমার ভাগ্যে এমন একজনের সাথ লিখা থাকবে এ তো আমার কল্পনার বাইরে ছিলো! আমাকে নিরব দেখে উনি আলতো করে আমার হাতের ওপর হাতটা রেখে বললেন

“আমি তোমায় ভালোবেসেছি! তাই তোমার যোগ্যতা আছে কি নেই সেটা যাচাই করার অধিকার আমার আছে তোমার না! তুমি আমায় জাজ করতে পারো তবে নিজেকে না.. এরপর আর এইসব কথা শুনতে চাইনা তোমার মুখে বুঝেছ?”

আমি মাথা নাড়িয়ে হ্যা বললাম! ওনার কোনও কথায় না বলতে যেনো ইচ্ছেই করেনা আমার.. করবেই বা কেনো? একমাত্র উনিই তো আছেন যে আমায় বোঝেন, আমাকে এত্তো সুন্দর করে ভালোবাসার মানে বুঝতে শেখাচ্ছেন, ভালোবাসছেন!

আজকে আমার চাকরির প্রথমদিন ছিলো! প্রথমদিন খুব সুন্দর কেটেছে..স্কুল শেষে ফিরছিলাম তখনই হুট করে কোত্থেকে উনি এসে হাজির হলেন এক গোছা সাদা গোলাপ হাতে নিয়ে! আমি হুট করে ওনাকে দেখে অবাক হয়ে গেলাম

” একি! আপনি এখন এখানে?”

“হুমম! চলে এলাম! ভাবলাম আজকের দিনে যদি তোমার সাথে সময় কাটাতে না পারি তাহলে কিভাবে হবে? সিফাত ও গেছে ওর গার্লফ্রেন্ড কে নিয়ে তো আমিও চলে এলাম তোমার কাছে”

“কিন্তু আপনার না একটা অ্যাড শুট ছিলো আজকে, ওটার কি হলো?”

“হ্যা ছিলো তো..ওটা পোস্টপন করে দিয়েছি! দুদিন পর করে নেবো..আপাতত তোমার কাছে চলে এলাম তাও তোমার পছন্দের সাদা গোলাপ নিয়ে”

“কি! আরমান স্যার আপনি নিজের..”

“এক মিনিট, কি স্যার স্যার করছো এখনও বলোতো? কল মি আরমান..জাস্ট আরমান ওকে?”

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here