ইস্ক_সুফিয়ানা #বোনাস_পর্ব

0
1533

#ইস্ক_সুফিয়ানা
#বোনাস_পর্ব
#লেখনীতে : #Aloñe_Asha (ছদ্ম নাম)
#Kazi_Meherin_Nesa

আমার খুব করে ইচ্ছে করছে ওনাকে জড়িয়ে ধরতে কিন্তু না, আমি তো নিজেই ওনার ভালোবাসা প্রত্যাখ্যান করেছি, একটু একটু করে নিজেকে সামলাচ্ছি, এখন সেখান থেকে পিছিয়ে যেতে পারিনা আমি

” এটা পাবলিক প্লেস, সবাই দেখছে!”

আরমান স্যার আমাকে ছেড়ে দাড়ালো, কাতর নজরে তাকিয়ে আছেন উনি আমার দিকে যেনো কতো কাল পর দেখছেন আমায়.. কতো যন্ত্রণা ওনার ওই দু চোখে, ওনার এই নজর আমার হৃদয়ে গিয়ে বিধছে! চোখ সরিয়ে বললাম

“কেমন আছেন আপনি?”

উনি ডান হাতে আমার গালটা ধরলেন, আমার মুখ ওনার দিকে ফিরিয়ে প্রশ্ন করলেন

“সাত সাতটা দিন, রুহি! তোমাকে ছাড়া কেমন থাকতে পারি বলো? আচ্ছা তুমি কি আমাকে ছাড়া ভালো ছিলে? না তো, তাহলে কেনো করছো আমার সাথে এমন?”

আমার গলায় দলা পাকিয়ে আসছে, ওনার এই অবস্থা দেখে সাথে কথা বলার সাহস নেই আমার! গাল থেকে ওনার হাতটা সরাতে যাচ্ছিলাম কিন্তু পারলাম না, হাতটা কাপছে আমার! কি করবো? আমার ভালোবাসার মানুষটা সামনে দাড়িয়ে আছে, তাকে এতটা অবজ্ঞা করতে পারছি না

“দেখো না, কি ছিলাম আমি..কি হয়ে গেছি এই কদিনে.. শুধু তোমার খেয়ালে কতগুলো রাত নির্ঘুম কাটিয়ে দিয়েছি জানো?

কথা বলতে গিয়ে আটকে আটকে যাচ্ছিলেন উনি, আমার বুঝতে একটুও সমস্যা হয়নি কতটা কষ্ট নিয়ে বলছেন উনি এগুলো কারণ গত সাতদিন ধরে আমিও তো একই কষ্ট বুকে চেপে রেখেছি..আমি ইচ্ছে করে অন্যদিকে তাকিয়ে ছিলাম, ওনাকে এভাবে যে দেখতে পারছি না আমি.. এবার উনি দু হাতে আমার গাল ধরে আমার কিছুটা কাছে এলেন

“আমাকে দেখে তোমার কষ্ট হচ্ছে না রুহি? মন বলছে না সব ভুলে আমাকে মেনে নিতে?”

আমি এবার নিজেকে কিছুটা শক্ত করলাম, এভাবে আমি দুর্বল হয়ে পড়লে আমি ওনাকে কিভাবে আমার থেকে দূরে সরাবো? পারবো না তো! গাল থেকে সরিয়ে দিলাম এবার ওনার হাত দুটো!

“আরমান স্যার, প্লিজ! আমি সেদিনই বলে দিয়েছিলাম এই নিয়ে আমাদের মাঝে আর কোনো কথা হবেনা”

“কথা হবেনা! ব্যাস..! এইটুকুতেই কি সব ভুলে যাওয়া যায়? এতে কি অনুভূতিগুলো চাপা দেওয়া যাবে? আমার তোমার প্রতি যে ভালোবাসা আছে সেটা শেষ করে দেওয়া যাবে? এতোই সহজ নাকি?”

“সহজ নয়, তবে অসম্ভব ও নয়! সময়ের সাথে মানিয়ে নিতে পারবেন সব”

“কিন্তু আমি তো এখনি মানতে পারছি না..পারছি না তো নিজেকে সামলাতে..আচ্ছা তোমরা মেয়েরা পারো কিভাবে বলোতো? এতো সহ্য ক্ষমতা কি আল্লাহ শুধু তোমাদেরই দিয়েছেন? আমাদের কেনো দেননি?”

ঠোঁট কামড়ে ওনার দিকে তাকিয়ে আছি আমি, কান্না থামিয়ে রাখতে চাইছি কিন্তু চোখের পানি কি আর আমার কথা শুনবে? বেহায়ার মতো টপটপ করে পড়েই যাচ্ছে..আমার চোখে পানি দেখে উনি মলিন একটা হাসি দিলেন

“দেখেছিস সিফাত! এই মেয়ে নাকি আমাকে ছাড়া থাকতে পারবে! আচ্ছা তোর তো গার্লফ্রেন্ড আছে তাইনা? মেয়েরা এত্তো জেদী কেনো তাহলে তুই তো বলতেই পারবি”

আমি ফুপিয়ে কান্না করে দিলাম এবার, উনি বিরক্তি ভরা দৃষ্টিতে দেখছেন আমায়, আমার চোখের পানি হয়তো ওনার এই বিরক্তির কারণ.. সিফাত এগিয়ে এসে আরমানের কাধে হাত রাখলো

“কন্ট্রোল ইউর্সেলফ আরমান..কি করছিস!”

“আমি কি করছি? ও কি করছে সেটা জিজ্ঞাসা কর..কি শান্তি পাচ্ছে ও এসব করে?”

“তোর কথা আমি বুঝতে পারছি.. তুই ওরদিকটা বোঝার চেষ্টা কর! ওর কথাও কিন্তু যুক্তিসঙ্গত! এখনকার সময়টাই এমন যে..”

“আই ডোন্ট কেয়ার সিফাত! ও একবার এগিয়ে আসুক আমার কাছে, তাহলেই আর কোনোকিছুর পরোয়া করবো না আমি..আমার শুধু ওকে চাই!”

ওনার কথা শুনে আমার কান্নার গতি ক্রমশ বেড়ে যাচ্ছে, এতো ভালোবাসেন উনি আমায়? উনি আমার দিকে তাকিয়ে ধমক দিয়ে বলে উঠলেন

“কান্না বন্ধ করো রুহি!”

“তুই ওকে বকছিস কেনো? শান্ত হ..!”

উনি সিফাতের কথায় পাত্তা দিলেন না, আমার কাছে এসে চোখে পানি মুছে বললেন

“কাঁদবে না একদম! নিজেই তো পিছিয়ে গেলে..এখন আবার চোখের পানি ফেলছো কেনো হ্যা? খুশি হবার কথা তো তোমার! অলরেডি শেষ করে দিয়েছো তুমি আমাকে আর কি চাও..নিজেও শেষ হবে এবার?”

আমি চোখ নিচু করে আছি! উনি লম্বা একটা নিঃশ্বাস নিলেন তারপর দু হাতে আমার মুখটা উচু করে ধরে বললেন

“তুমিও পারবে না রুহি, কষ্ট তুমিও পাচ্ছো! তাহলে কেনো তুমি অন্যদের কথা ভেবে আমাদের কষ্ট দিচ্ছ? কি শান্তি হচ্ছে তোমার?”

আর পারছি না আমি, নিজের সাথে আমি যে ওনাকেও কষ্ট দিচ্ছি! ভুল করে ফেললাম না তো কোনো? কিছু ভাবতে পারছি না এই মুহূর্তে..আপাতত বাস্তবতাকে দূরে ঠেলে একটু শান্তি পেতে চাই আমি! নিজেই জড়িয়ে ধরলাম ওনাকে! ওনার বুকে মুখ গুঁজে কান্না করলাম কিছুক্ষণ! উনিও আমাকে পরম আবেশে জড়িয়ে নিলেন নিজের সাথে কিন্তু আমার কান্না একবারের জন্যেও থামানোর চেষ্টা করছেননা উনি! শুধু শক্ত করে নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়েছেন আমায়..ওদিকে মিসেস শাহ্ আজ অফিসে যাননি, বাড়িতে থেকেই কাজ করছেন..ঐদিনের পর আরমান ওর বাবার সাথে আর একটাও কথা বলেনি, মিস্টার শাহ্ ও আর চেষ্টা করেননি ওর সাথে কথা বলার..মিসেস শাহ্ তখন আসেন, ছেলের এই অবস্থা উনি আর মানতে পারছেন না

“আরমান বাড়িতে নেই নাকি?”

“নাহ! সিফাত এর সাথে বাইরে গেছে..কদিন ধরে তো ছেলেটা বাড়ির বাইরেই বেরোয়নি..গুম মেরে গেছে একদম”

মিস্টার শাহ্ প্রতিউত্তর দিলেন না, ছেলের অবস্থা তো উনিও দেখছেন কিন্তু ঐযে নিজের সিদ্ধান্ত থেকে তো নড়বেন না উনি

“আরমানের এই অবস্থা দেখতে পারছি না আর আমি.. সাতদিনে কি অবস্থা হয়ে গেছে ছেলেটার!”

“আরমান ইচ্ছে করে নিজের এই অবস্থা করেছে..মেয়েটা না করে দিয়েছে ইটস ফাইন! এর জন্যে এতো শোক পালন করার কি আছে?”

“এতো নিষ্ঠুরের মতো কথা বলো না তুমি, রুহিকে অনেক ভালোবাসে আরমান..ওকে দেখে বুঝতে পারছো না? রুহির ও জানিনা কি অবস্থা এখন”

“তোমার ছেলে এখানে বসে শোক করলেই যে ওই মেয়েটা ও ওখানে বসে শোক করবে তার মানে নেই! আরমান এতো ওভার ইমোশনাল সেটা তো জানতেই পারতাম না আমি এই ইনসিডেন্ট না হলে”

“তুমি এসবই দেখলে? ওর মণের অবস্থাটা কি একবারও বোঝার চেষ্টা করবে না? তোমার মন হয় না ছেলের সিদ্ধান্তে সমর্থন করা উচিত তোমার? ওইসব ফ্যামিলি স্ট্যাটাস ভুলে মেয়েটার দোষগুণ বিচার করো..রুহি মেয়েটা কিন্তু একদম খাটি!

“তোমার কাছে খাটি মনে হতেই পারে কিন্তু আমার পারফেক্ট চাই! আবেগী হয়ে ছেলের বিয়ের ডিসিশন নেবার কোনো মানেই হয় না আর তুমি অন্তত ওকে এত মদত দিও না..পারলে বোঝাও ওকে”

“তুমি যতো সহজে কথাগুলো বলছো, আরমানের পক্ষে এগুলো মেনে নেওয়া ততো সহজ না! অবশ্য তুমি এসব বুঝবে না..তুমিও তো আধুনিক সমাজের নিয়ম কানুনের নিচে পিষে গেছো! ছেলের ভালো থাকাটা কার সাথে সেটা বোঝার চেষ্টা নেই তোমার”

মিস্টার শাহ্ এসব কথার উত্তর দিলেন না, তবে মিসেস শাহ্ ভীষণ চিন্তায় আছেন ছেলেকে নিয়ে..উনিও চান আরমান আর রুহির বিয়েটা হোক! দুজনেই এই কষ্ট থেকে মুক্তি পাক! একসাথে ভালো থাকুক দুজনেই

পার্কের বেঞ্চে বসে আছি আমি আর আরমান স্যার! দুজনের মাঝেই নিরবতা বিরাজমান.. নিরবতা কাটিয়ে উনি বললেন

“আমরা কেউই ভালো নেই রুহি! তাহলে কেনো এই জেদ?

“আপনার কাছে তো কিছুই গোপন করিনি আমি তবুও কেনো এই প্রশ্ন করছেন?”

“হুম জানি তো! সবার কথা ভাবছো তুমি শুধু আমার কথা ছাড়া! আমার যন্ত্রণা বুঝতে কেনো চাও না বলোতো? ভালোবাসো না আমায়? নাকি আমার কষ্ট দেখে আনন্দ পাচ্ছো?”

আমি কথাগুলো শুনেও না শোনার ভান করে আছি! আমি জানি উনি বারবার এসব কেনো বলছেন, আমাকে দুর্বল করার জন্য.. হঠাৎ উনি উঠে আমার সামনে হাঁটু ভাঁজ করে বসলেন, এক হাতে আমার হাতটা ধরে বললেন আকুতির স্বরে বললেন

“সব ভুলে যাও, সবকিছু! আর চলে এসো আমার কাছে.. আমি হাত বাড়িয়ে আছি তোমার দিকে..প্লিজ আমার হাতটা ধরে নাও!”

“হাত ধরলেই তো সমস্যার সমাধান হবেনা..আমি চাইনা আমার জন্যে কোনো প্রকার মনোমালিন্যতার সৃষ্টি হোক, কোনো সমস্যা হোক!”

“আচ্ছা? এতে তো তুমি মহান হয়ে যাবে! তারপর আমার কি হবে রুহি? আমি এখনি পারছি না এসব সহ্য করতে..তোমার প্রত্যাখ্যান আমাকে গত সাতদিন ধরে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে! আর কতো?”

“আপনি কি ভাবেন কষ্ট শুধু আপনার হচ্ছে? আমার হচ্ছে না? হচ্ছে স্যার! তবুও আমি আপনার কথা ভেবেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি! আপনি আপনার বাবার অপ্রিয় হন আর তার কারণ আমি হতে চাই না”

“আমার বাবা কি চায় সেটার এতো চিন্তা কেনো তোমার?”

“আপনার বাবা আছে তাই আপনি বুঝবেন না, আমার তো নেই! আর আমি চাইনা আমার জন্যে কোনো বাবা আর তার সন্তানের মধ্যে তিক্ততার সৃষ্টি হোক!”

কথাটা বলেই আমি উঠে দাড়ালাম! উনিও উঠে দাড়ালেন আমার মুখোমুখি!

“একটা কথা জিজ্ঞাসা করবো রুহি! হ্যা বা না তে উত্তর দেবে..তুমি ভালোবাসো আমায়?”

“স্যার আবার..”

“জাস্ট ইয়েস অর নো! আর কিছু শুনতে চাইনা”

থেমে গেলাম আমি! কিছুক্ষণ চুপ থেকে হ্যা সূচক মাথা নাড়লাম! ওনার কাছে উত্তরটা এক্সপেকটেড ছিলো তাই বেশি অবাক হলেন না

“তাহলে? আমি তোমাকে ভালোবাসি, তুমি আমায় ভালোবাসো! আর কি চাই?”

“এর বাইরেও অনেককিছু আছে!”

উনি ভ্রু কুঁচকে ফেললেন! আমি মলিন একটা হাসি দিয়ে বললাম

” একটা কথা কি জানেন? আমাদের সম্পর্ক অনেকটা আকাশ আর মাটির মতো, একে অপরের মুখোমুখি তো থাকে কিন্তু কোনোদিন মিল হয় না তাদের”

উনি কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে চোখ সরিয়ে ফেললেন! হয়তো রেগে গেছেন..আমিও আর কিছু বললাম না, আর কথা না বলাই ভালো আমাদের..ভাবলাম চলে আসবো তখনই আমাকে চমকে দিয়ে উনি বলে উঠলেন

“আমি সেদিন বাবাকে সব বলে দিয়েছি আমাদের ব্যাপারে..এন্ড ইউ নো হোয়াট? বাবাও সেই একই কথা বললেন যেগুলো তুমি আমাকে বলেছিলে সেদিন”

“কিহ! আপনি..আপনি আপনার বাবাকে এসব কেনো বলেছেন? স্যার আমি তো বলেছি যে আপনার বাবাকে এসব..”

“কেনো বলবো না? আরে তুমি তাকে কতো ঠিক চিনেছ আর সে তোমাকে কতটা ভুল জাজ করেছে সেটা জানাতে হবে না?”

“কি বলেছেন আপনি তাকে? আপনাদের মধ্যে কোনো ঝামেলা হয়নি তো? স্যার আপনাকে কে এইসব নিয়ে আলোচনা করতে বলেছিল ওনার সাথে? আমাদের ব্যাপার আমাদের মধ্যেই থাকতো!”

“সমস্যা যার জন্যে হচ্ছে তাকে তো সব জানাতে হতো রুহি! তাছাড়া এসব নিয়ে এখন তোমাকে ভাবতে হবে না! যদি কিছু ভাবার হয় সেটা আমার বাবাকে ভাবতে দাও”

“কিন্তু আপনি..স্যার শুনুন..”

উনি আর দাড়ালেন না, হনহন করে চলে এলেন! আমাকে যে আরেক চিন্তায় ফেলে গেলেন উনি! এতদিন শুধু ওনার চিন্তা ছিলো আর এখন আরেক চিন্তা এসে জুটলো.. জানিনা কি হয়েছে ওনাদের বাবা ছেলের মধ্যে..আল্লাহর কাছে এই মুহূর্তে একটাই মিনতি করছি আমি, ব্যাস ওনাদের বাবা ছেলের মধ্যে সব ঠিক থাকুক..যে সমস্যার আশঙ্কায় আমি সরে এলাম সেটা যেনো সত্যি না হয়

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here