উপন্যাসঃ পাহাড়ে মেঘের ছায়া পর্ব – ১৮

0
2916

উপন্যাসঃ পাহাড়ে মেঘের ছায়া
পর্ব – ১৮
(নূর নাফিসা)
.
.
১৯.
যোহরের নামাজ পড়ে দুপুরটা ঘুমিয়েই কাটালো মেঘ। বিকেলে নাফিসার আগেই পাহাড়ে এসে বাচ্চাদের জাতীয় সংগীতের পরের লাইন গাইলো। হঠাৎ করেই দুইটা খরগোশের ছানা লাফিয়ে লাফিয়ে পাহাড়ে উঠে গেলো। বাচ্চারাসহ মেঘও অবাক হলো! খরগোশ এলো কোথা থেকে! মেঘ এগিয়ে যেতেই একটি ছানা লাফিয়ে মেঘের কাছে চলে এলো। মেঘ সেটাকে হাতে নিলো। খুব সুন্দর দেখতে। বাচ্চারা কেউ কেউ নিচে থাকা ছানাটা ধরার চেষ্টা করছে আবার কেউ মেঘের হাতেরটা নেয়ার চেষ্টা করছে। ইতোমধ্যে আরও একটা ছানা উঠে এসেছে! ব্যাপারটা বুঝার জন্য মেঘ পাহাড়ের কিনারায় এলো। নিচের দিকে তাকাতেই দেখলো রাস্তায় একটা ভ্যান গাড়ি দাঁড়ানো। গাড়ির উপর যে খাচাটা আছে সেখান থেকে লাফিয়ে খরগোশের ছানা নামছে! পাহাড়ে আরও দু একটা উঠে আসছে! মেঘ বাচ্চাদের দুষ্টুমি করতে নিষেধ করে খরগোশের ছানাটা হাতে নিয়েই নিচে এলো। ভ্যানগাড়ি ওয়ালা লোকটি খাচায় করে ছানাগুলো খামারের দিকে নিয়ে যাচ্ছিলো। উঁচু নিচু রাস্তার ঝাকায় খাচার বাধন খুলে যাওয়ায় খরগোশের ছানা লাফিয়ে নামা শুরু করে। অনেকগুলো নেমে গেছে। একা হওয়ায় এখন না পারছে খাচার বাধন সামলাতে আর না পারছে ছানাগুলোকে ধরে রাখতে! ঘটনা শুনে মেঘ লোকটিকে সাহায্য করতে এগিয়ে এলো। প্রথমে খাচাটা ভালোভাবে বেধে নিচের ছানাগুলো লোকটির সাথে উঠালো খাচায়। তারপর দৌড়ে পাহাড়ে উঠে এলো। এখানে পাচ ছয়টা উঠে গেছে। বাচ্চাদের সাহায্যে দৌড়ে ধরছে ছানাগুলোকে। নাফিসা পাহাড়ে এসে দেখলো মেঘ খরগোশের পেছনে দৌড়াচ্ছে। বাচ্চাদের সাথে তাকেও বাচ্চা মনে হচ্ছে। খুবই ভালো লাগছে দৃশ্যটা! মেঘ একে একে সবগুলো ধরে লোকটির হাতে তুলে দিলো। শেষেরটা হাতে নিয়ে নাফিসার সামনে হঠাৎ করে ভয় দেখানোর ভঙ্গিতে ধরলো। নাফিসা পিছিয়ে গেছে ঠিকই কিন্তু ভয় পায়নি। মেঘ বললো,
– মেঘা, ছানাগুলো সুন্দর না?
– আল্লাহর সৃষ্টি সবই সুন্দর। যার টা তার কাছে ফিরিয়ে দিয়ে আসুন।
মেঘ হেসে নিচে নেমে এলো। নাফিসা বাচ্চাদের পড়ানোর জন্য বসালো। একটু পর মেঘ আবার উপরে এলো কিন্তু হাতে দুইটা খরগোশের ছানা!
বাচ্চারা উঠে আসতে চাইলে নাফিসা ধমক দিয়ে আবার বসালো। মেঘই তাদের কাছে এগিয়ে গেলো। বাচ্চাদের উদ্দেশ্য করে বললো,
– আগে পড়া শেষ করো, তারপর আমরা খরগোশের ছানা নিয়ে খেলবো।
বাচ্চারা রাজি হয়ে গেলো। নাফিসা বললো,
– আপনি এগুলো ফেরত দেননি!
– হ্যাঁ দিয়েছিতো! বেছে বেছে আবার পাচ’শ টাকায় দুইটা কিনে এনেছি।
– পাচ’শ টাকায়!
– হুম, এটা পাইকারি দামে। অন্যকেউ হলে হয়তো দিতো না। আমি হেল্প করায় আমাকেও হেল্প করেছে!
মেঘ একপাশে চলে এসে ছানা দুটোকে নিয়ে খেলছে আর নরম ঘাস ছিড়ে খাওয়াচ্ছে। বাচ্চারা পড়ছে ঠিকই কিন্তু মন তাদের সেই খরগোশ ছানার দিকে! নাফিসারও একই অবস্থা, বাচ্চাদের পড়াচ্ছে আর একটু পর পর খরগোশ ছানার দিকে তাকাচ্ছে। পড়া শেষ হলে বাচ্চারা মেঘের সাথে খেলতে চলে এলো। নাফিসা শাসনস্বরূপ বললো তাদের বাসায় যেতে, না হলে মায়েরা চিন্তা করবে। বাচ্চাদের সেদিকে ভ্রুক্ষেপ নেই। তারা বইখাতা একপাশে রেখে খরগোশ নিয়ে খেলা করছে। মেঘ নাফিসাকেও ডাকলো কিন্তু ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও নাফিসা নেমে গেলো পাহাড় থেকে। চা বাগানে যেতে হবে তাকে।
প্রায় বিশ মিনিটের মতো তারা খেলা করেছে। বাচ্চাদের নামিয়ে মেঘ ছানা দুটো নিয়ে বাসায় ফিরলো। নাফিসা আসরের নামাজ আদায় করছে। মেঘ আম্মির কাছে ছানা দুটো দিয়ে নিজেও ওযু করে নিলো নামাজের জন্য। এতোক্ষণে নাফিসার নামাজ শেষ। মেঘ নামাজ পড়তে পড়তে নাফিসা চা বাগানের জন্য বেরিয়ে গেছে। খরগোশ ছানা দুটোকে আম্মি সযত্নে ঘরের এক কোনে খাচার মতো বেড়া দিয়ে রাখলেন। মেঘ চা বাগানে চলে এলো। নাফিসার কাছে এসে পাতা তুলে ঝুড়িতে রাখছে। নাফিসার বিরক্ত লাগছে আর এদিকে মেয়েগুলো মেঘকে দেখে মিটিমিটি হাসছে। কমবেশি সবাই জানে গতকাল মেঘ নাফিসার বিয়ে হয়েছে। নাফিসা বিরক্তি দৃষ্টিতে তাকাতেই মেঘ বললো,
– এভাবে তাকাও কেন! ভয় পাই তো আমি! আমি তুলে দিলে তোমার কাজ তারাতাড়ি শেষ হবে।
মেঘের কথা শুনে একজোটে মেয়েগুলো হেসে উঠলো। তাদের মধ্যে একজন বলে উঠলো,
– নাফিসা, পরশু আইছ। গান উৎসব আছে বটবৃক্ষের তলায়। ভাইয়া, আইসেন!
বাহ! শুরুতেই একটা দাওয়াত পেয়ে গেলো। নাফিসা কিছু বললো না, কিন্তু মেঘ আনন্দিত! সে বন্ধুদের সাথে বিজু উৎসবে একবার উপস্থিত হয়েছিলো তাছাড়া আর উপজাতিদের কোন প্রোগ্রামে যায়নি।
মেঘ চা পাতা তুলে দেওয়ায় নাফিসার ঝুড়ি তারাতাড়ি ভরে গেছে। নাফিসাকে সাথে নিয়েই সন্ধ্যায় মেঘ বাড়ি ফিরেছে। সাথে কিছু নরম ঘাস তুলে এনেছে। নাফিসা মায়ের রুমের কোনায় খরগোশ ছানাদের দেখলো। পোশাক পাল্টে মা কে রান্নার কাজে সাহায্য করলো। রান্না শেষে হাতমুখ ধুয়ে খরগোশ ছানাদের ঘাস খাওয়ালো। মেঘের জন্য খাবার নিয়ে রুমে যেতেই দেখলো মেঘ জানালার পাশে দাড়িয়ে লাউড স্পিকারে রেখে ফোনে কথা বলছে।
– বাবা, তোমার কক্সবাজারের প্ল্যান ক্যান্সেল করে দাও।
– কেন! ওটা আবার তোর কি ক্ষতি করলো।
– আমার ক্ষতি করেনি। ওটা তুমি ট্রান্সফার করে সিলেট নিয়ে আসো। এখানে সেটা বেশি ভালো হবে। পরিবেশটা অন্যরকম আরও বেশি আকৃষ্ট করবে মানুষদের।
– সেখানে কি তোর বাপ জমি ঠিক করে রেখেছে?
– আমার বাপ সম্মতি দিলেই আমি ঠিক করে ফেলবো। খুঁজে খুঁজে ইউনিক প্লেস বের করবো। আগে বলো কক্সবাজার প্ল্যান ক্যান্সেল করবে।
– না, ওটাই ফিক্সড।
– আমি কিন্তু সেখানে উঁকিও দিবো না। শতভাগ সিলেট সাপোর্টার।
– তাহলে আর কি, তোকে বাদ দিয়ে বৃষ্টিকে দিয়ে দিবো ওটা।
– হাহাহা…. তারপর আবার আমার জন্য আরেকটা করবা। আর আমি সিলেটই বেছে নিবো। ভেবে দেখো, সেখানে করলে আমি নিবো না। আর বৃষ্টিকে যদি আমি সিলেটের কথা বলি, ওকে একবার ঘুরিয়ে নিয়ে যাই তাহলে কিন্তু কক্সবাজার তোমাকেই থাকতে হবে। এর চেয়ে কি ভালো নয়, টাকা বাচিয়ে একটাতেই দুই ভাইবোনকে ফিক্সড করে দাও!
– কিভাবে?
– থাকার জন্য ফ্লোরটা ফ্ল্যাট সিস্টেম হবে। বাকিটা তোমার কাজের। তারাতাড়ি রাজি হয়ে যাও। বৃষ্টিকে জানালে কিন্তু এখনি সিলেট আসতে চাইবে।
– তোরা ভাইবোন সবসময় আমার কাজে প্যাচ লাগিয়ে রাখোছ।
– প্যাচের কি হলো, ওটা তো তুমি ক্রয় করোনি। দেখে রেখেছো শুধু। তো ছেড়ে দিলে ক্ষতি কি?
– ওটা ছেড়ে যদি সিলেট ঠিক না হয়!
– সিলেট ঠিক হলেই ওটা ছাড়বে।
– ওকে আগে দেখ। ওরা কিন্তু তারাতাড়ি করতে চাইছে।
– ওকে।
– বাসায় ফিরবি কবে?
– ইনশাআল্লাহ, সিলেটের প্ল্যান কমপ্লিট করেই ফিরবো।
– বাহ! একজন কুমিল্লা ছেড়ে আসতে চায় না আরেকজন সিলেট!
– বৃষ্টি এখনো ফিরেনি!
– না। বেড়ানো শেষ হয়নি, আরও থাকবে। এক কাজ কর, শশুর বাড়ি খুঁজে ফেল আমরা এসে বিয়ে দিয়ে দেই একজনকে কুমিল্লা আর একজন সিলেট! তারপর সারাজীবন সেখানেই থাক।
মেঘ মাথা চুলকে বললো,
– দাও, দিলে তো ভালোই হয়!
ছেলের উত্তর শুনে রায়হান চৌধুরী হাহাহোহো করে হেসে উঠলেন। তারপর কল কেটে দিলেন। নাফিসা একে একে খাবারের বাটি এনে রেখেছে আর মেঘের কথা শুনছিলো।যদিও কিছু বুঝতে পারেনি তাদের প্ল্যানের কথা কিন্তু বাবা ছেলের সম্পর্কটা কেমন বন্ধুত্বের সেটা বুঝে গেছে। খাওয়াদাওয়া শেষ করে ঘুমানোর জন্য বিছানা ঠিক করতে লাগলো নাফিসা। মেঘ চেয়ারে বসে অনলাইনে সিলেটের ম্যাপ দেখছে। নাফিসাকে দেখলো আলমারি থেকে মশারি বের করছে। মনে হলো কাল রাতের কথা, মাথা যতটুকু কাথার বাইরে ছিলো মশা কামড়ে খেয়েছে মেঘকে। মশারি ছিলো অথচ তাকে দেয়নি কাল! নাফিসা নিচে মাদুর পেতে একটা বালিশ আর একটা কাথা রাখলো। মেঘ কিছু বললো না। নাফিসা মশারিও টানিয়ে দিলো। একটু পর নাফিসা খাটে এসে শুয়ে পড়লো। মেঘ বাইরে এসে ফ্রেশ হয়ে আবার রুমে এলো। কোন অতিরিক্ত শব্দ ছাড়াই খাটে উঠে কাথাটা টেনে সরালো। এক কাথায় দুজনকে ঢেকে মেঘ নাফিসার বালিশে শুয়ে পড়লো। নাফিসা দ্রুত উঠার চেষ্টা করতেই মেঘ দু’হাতে তাকে ঝাপটে ধরে পা দুটোও নিজের দুপা দিয়ে আঁকড়ে ধরে শুয়ে আছে। নাফিসা তাকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতেই মেঘ ধমক দিয়ে বললো,
– চুপচাপ শুয়ে থাকো। কি ভেবেছো তুমি, কাল নিচে শুয়েছি বলে প্রতিদিনই শুবো! আজ হাতের পাশাপাশি তোমার পা-ও আটকানো। একদম নড়াচড়া করার চেষ্টা করবে না।
নাফিসা চোখের পানি ফেলতে ফেলতে ছুটার চেষ্টা করেই যাচ্ছে। মেঘ আবার বললো,
– এখন কিন্তু মাইর লাগাবো। চোখের পানি দেখালেও কোন লাভ হবে না আজ।
নাফিসা মেঘের গায়ে টিশার্টের উপর দিয়ে খামচিও লাগাচ্ছে। নাফিসার মুখে কান্নার পাশাপাশি ভয়ের ছাপও স্পষ্ট। মেঘ মুচকি হেসে ঠোঁটে আর চোখের পাতায় আলতো করে চুমু দিয়ে বললো,
– তুমি আমার শক্তির কাছে পারবে না। শুধু শুধু নিজের শক্তি খরচ করছো কেন! আমি তোমার সাথে কিছুই করবো না। চুপচাপ ঘুমাও।
মেঘ নাফিসার মাথাটা বুকে টেনে হাত পা আটকে রেখেই চোখ বুজে রইলো। নাফিসা তারপরও চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে একসময় শান্ত হয়ে গেল। মেঘ যখন বুঝতে পারলো নাফিসা ঘুমিয়ে পড়েছে তখন খুব বড় একটা নিশ্বাস ছেড়ে নাফিসার মাথায় চুমু দিয়ে সে ও ঘুমিয়ে পড়লো।
নাফিসার আজকের সকালটা শুরু হলো মেঘের বুকে! চোখ খুলার আগে কানে বেজে উঠলো ঢিপঢিপ শব্দ! এ যেন এক মাতোয়ারা গানের সুর তুলেছে! নাকে এসে লাগছে মিষ্টি গন্ধ! যার ঘ্রাণ সারাদিন নিলেও তৃপ্তি মিটবে না! কিসের গন্ধ হতে পারে এটা!
চোখ খুলে তাকালো নাফিসা। চোখের সামনে লাল কাপড় দেখতে পেল। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই বুঝতে পারলো এটা মেঘের টিশার্ট আর সে মেঘের বুকে পড়ে আছে! ঢিপঢিপ শব্দটা মেঘের হৃদস্পন্দনের যেটা তরঙ্গ সঞ্চার করছে! মিষ্টি ঘ্রাণটা মেঘের শরীরে লেগে থাকা ঘ্রাণ যেটা অতৃপ্তি আনতে বাধ্য! মানুষের শরীরের গন্ধ এমন হয় কিভাবে! এটা তো অসহ্যকর হওয়ার কথা!
একটু নড়াচড়া করার চেষ্টা করতেই বুঝতে পারলো মেঘ তাকে বাহুডোরে বেধে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে রেখেছে! আজ সেই প্রথম রাত, যেখানে অজানা এক মানুষের বুকে কাটাতে হয়েছে তাকে! ভাগ্যে কি এটাই লেখা ছিলো! না, সবটা ভাগ্য বলে মেনে নেওয়া যাবে না! সবকিছু মেনে নিতে হলে বারবার ধোকা খেতে হবে!
নাফিসা মেঘের বুক থেকে মাথা সরিয়ে নিজেকে ছাড়ানোর জন্য মেঘকে জোরে ধাক্কাতে লাগলো। মেঘ কপাল ব্রু কুচকে ঘুমঘুম চোখে তাকালো। নাফিসা তার মুখে তাকিয়ে আবার থেমে গেলো! কেউ কপাল ব্রু কুচকে তাকালে এতো সুন্দর লাগে সেটা তার জানা ছিলো না! কেউ ঘুমঘুম চোখে তাকালে দেখতে এতোটা মায়াবী দেখায় সেটা আজ প্রথম দেখলো!
মেঘ ঘুমঘুম কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো,
– নড়াচড়া করছো কেন, কি হয়েছে?
এই কন্ঠ যেন মধুর হয়ে নাফিসার কানে পৌছাল! মেঘ থেকে চোখ সরিয়ে বললো,
– উঠবো আমি।
মেঘ আরো কাছে এসে বললো,
– কোথায় উঠবে?
– ঘুম থেকে উঠবো আমি।
– এখনো ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে কথা বলছো!
নিজেকে বোকা পরিচয় দিয়ে এখন নিজের উপরই খুব রাগ হচ্ছে! কি হয়েছে তার! কি বলতে কি বলছে সে! এবার খুব ভেবে জবাব দিলো,
– সকাল হয়ে গেছে, শোয়া থেকে উঠবো আমি। ছাড়ুন!
– সারাক্ষণ শুধু ছাড়ুন আর ছাড়ুন! কখনো বলেছো একটু কাছে আসুন!
নাফিসা আর কিছু না বলে ছোটার জন্য জোরাজুরি শুরু করলো। মেঘ মুচকি হেসে নাফিসার ঠোঁটে চুমু দিয়ে বললো,
– হ্যাভ এ সুইট মর্নিং, মিসেস মেঘা চৌধুরী!
মুচকি হাসি মুখে নিয়ে মেঘ নাফিসার আগেই বিছানা থেকে নেমে গেলো। সূর্যোদয় হয়নি এখনো, মসজিদ এখান থেকে মোটামুটি অনেক দূর! মেঘ জায়নামাজ চেয়ে ঘরেই নামাজ আদায় করলো। মেঘের পর একই জায়নামাজে নাফিসা নামাজ আদায় করলো। মেঘ ঘরেই বসে ছিলো। নাফিসার নামাজ শেষ হতেই বললো,
– প্রভাতি চাদর পড়বে?
নাফিসা একটু অবাক হয়ে তাকালো! কিছু বুঝতে না পেরে প্রশ্নের উত্তর দিলো না! জায়নামাজ রেখে বিছানা গুছাতে লাগলো। মেঘ উত্তর না পেয়ে বললো,
– কেমন মানুষ তুমি! না বুঝলেও তো প্রশ্ন করবা! প্রভাতি চাদর বলতে সকালের মিষ্টি বাতাস গায়ে মাখবে কিনা সেটা জিজ্ঞেস করেছি। চলো প্রভাতি চাদর পড়ে নির্জন পথে হাটবো দুজন।
– হাত ছাড়ুন, কোথাও যাবো না আমি।
নাফিসা তার নিজের কাজে ব্যাস্ত হয়ে পড়লো! মেঘ হতাশ হয়ে বসে রইলো! মেঘের কথাগুলো গভীরভাবে আকৃষ্ট করে নাফিসাকে! কিন্তু কোথাও এক বাধার কারণে সে গভীরতা থেকে বেরিয়ে আসে! সেটাও মেঘ বুঝতে পারে, কিন্তু তার কারণটা সে বুঝতে পারছে না! এমন কেন করে সে!
মেঘ একাই বেরিয়ে গেলো। একটু পর বাড়ি ফিরলো সাথে বাশ নিয়ে। আম্মির কাছ থেকে দা আর রশি নিয়ে কাজে লেগে গেলো। উঠুনের এক কোনে বসে মাত্র দু’ঘন্টায় বাশ আর রশি ব্যবহার করে মাঝারি আকৃতির একটা খাচা বানিয়ে ফেললো। নাফিসা কাজের ফাকে ফাকে বারবার মেঘের দিকে তাকিয়ে বুঝার চেষ্টা করছিলো মেঘ কি করছে! খাচাটা দেখে বুঝতে পারলো খরগোশ ছানার জন্য এই ব্যবস্থা! তবে খাচাটা খুব সুন্দর হয়েছে, এতে পাচ ছয়টা খরগোশ ছানাও রাখা যাবে! শহুরে মানুষ এতোটা সুশৃঙ্খল কর্মঠ হবে সেটা নাফিসার কল্পনার বাইরে ছিলো! রোকসানা এগিয়ে এসে খাচা দেখে প্রশংসা করলেন আর খাচার তলায় একটা প্লাস্টিকের মোটা কাগজ সাথে পাটের চট বিছিয়ে দিলেন। ছানা দুটো থাকতে আরাম পাবে।
সকালের নাস্তা করার পর নাফিসা চা বাগানে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে। মেঘ ঘরে এসে দেখলো নাফিসা আয়নার সামনে দাড়িয়ে খোপা করছে। মেঘ এগিয়ে এসে তার দুহাতে আচমকা নাফিসার কোমড় জড়িয়ে ধরলো! নিশব্দে ঘটনা সংগঠিত হওয়ায় নাফিসা কেপে উঠলো! নাফিসা কিছু বলতে যাওয়ার আগেই মেঘ খোপার নিচে উন্মুক্ত ঘাড়ে চুমু একে দিলো! মেঘের স্পর্শে নাফিসা শিউরে ওঠে খোপা ছেড়ে চোখ বন্ধ করে ফেললো! সে যেন নিস্তেজ হয়ে পড়ছে! মেঘ কানের কাছে মুখ এনে বললো,
– আজ ফিরতে দেড়ি হবে আমার, পারলে খরগোশ ছানাদের খেয়াল রেখো। আল্লাহ হাফেজ।
মেঘ তাকে ছেড়ে দিয়ে বেরিয়ে গেলো। নাফিসা মনে মনে বলে দিয়েছে “আল্লাহ হাফেজ”। মানুষটা এমন কেন! দূরে সরিয়ে দিতে চাইলে জোর করেই আরও কাছে চলে আসে! হঠাৎ করে এসে মনে ভিন্ন অনুভূতি সৃষ্টি করে আবার হঠাৎ করেই চলে যায়!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here