উপন্যাসঃ পাহাড়ে মেঘের ছায়া পর্ব – ২৬

0
2980

উপন্যাসঃ পাহাড়ে মেঘের ছায়া
পর্ব – ২৬
(নূর নাফিসা)
.
.
২৬.
নাফিসা খালামনির সাথে তাদের বাসায় চলে গেলো। তাদের বাসা শ্রীমঙ্গলেরই এক প্রান্তে। পরেরদিন মেঘের বাবা এসেছে। সকালেই মেঘ কিছু জামাকাপড় নিয়ে ইকো রিসোর্টে উঠেছে। দুপুরের দিকে বাবা সরাসরি সেখানেই এসেছে। রিসোর্টের রেস্তোরাঁয় বাবার সাথে লাঞ্চ শেষ করে বের হলো তার পছন্দের জায়গাগুলো দেখানোর জন্য। বাবাকে নিয়ে পাহাড়ের ধারে জলাশয়ের পাশ দিয়ে হাটার সময় কোন মেয়ের খিলখিল হাসির শব্দ পেয়ে সে সামনে তাকিয়ে দেখলো বাচ্চারা খেলছে কিন্তু শব্দটা তাদের দিক থেকে আসেনি! মেঘ ডান পাশে তাকিয়ে দেখলো দুটো মেয়ে বসে আছে ঢালুর দিকে! নাফিসাকে চিনতে তার একটুও সময় লাগেনি! তাহলে সে এখানে বেড়াতে এসেছে! খালামনির বাসা তাহলে এখানে আশেপাশে কোথাও। হাসিটা নিশ্চয়ই নাফিসার না, পাশের মেয়েটার। নাফিসা ঘাসের উপর বসে হেসে হেসে মেয়েটার সাথে কথা বলছে। মেঘ মুচকি হেসে আবার বাবার সাথে কথা বলতে বলতে জলাশয়ের অন্যপাশে গিয়ে বাবাকে জায়গাটা দেখাতে লাগলো। বাবা ঘুরে ঘুরে দেখলো। পছন্দ হয়েছে বোধহয়! সেদিক থেকে আবার পেছনের দিকে আসতে নিলে নাফিসা আর মেয়েটির সামনাসামনি হয়ে গেছে! নাফিসা মেঘকে এখানে দেখে হতবাক! আর মেঘের মুখে মুচকি হাসি। মেঘ বাবাকে উদ্দেশ্য করে বললো,
– বাবা, চা বাগানের ওই জমিটা দেখবে না? ওটা আরও বেশি ভালো মনে হয়েছে আমার কাছে।
– চলো, তাহলে সেদিকেই যাই। তারপর সিদ্ধান্ত!
– হুম, চলো।
মেঘ ইচ্ছে করেই নাফিসাকে জানানোর জন্য বাবার সাথে কথা বলছিলো। নাফিসা ওড়না মাথায় দিয়ে একপাশে দাঁড়িয়ে এতোক্ষণ মেঘকে একবার দেখছে আবার তার বাবার দিকে তাকাচ্ছিলো। মনে মনে ভয় ছিলো, না জানি মেঘ তাকে ডেকে বাবার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়! কিন্তু সে ভয়টা বাস্তবায়িত হয়নি। মেঘ তার বাবাকে নিয়ে সামনে এগিয়ে গেছে। মেঘ একটু এগিয়ে পেছনে তাকিয়ে দেখলো নাফিসা তার দিকেই তাকিয়ে আছে। মেঘকে তাকাতে দেখে নাফিসা সাথের মেয়েটিকে নিয়ে বিপরীত পথে তাড়াতাড়ি হাটতে লাগলো।
বাবাকে সাথে নিয়ে বেশ কিছু জায়গা ঘুরে দেখেছে মেঘ। এর মধ্যে বড় বড় পাহাড় গুলোর পাশে সমতল জায়গাটাই তাদের বাবা ছেলের পছন্দ হয়েছে। চারিদিকে সবুজের সমারোহ, এখান থেকে শ্রীমঙ্গলের অপরূপ দৃশ্য খুব সুন্দর উপভোগ করতে পারবে! দুদিকে চা বাগান আছে, একদিকে পানবন আর একদিকে হ্রদ! এটাই পারফেক্ট মনে হচ্ছে, এদিকে প্রতিযোগীর অবস্থান নেই!
বাবা তিনদিন এখানে থেকে জমিটা কিনে নিলেন। মেঘ খুব খুশি হয়েছে বাবা সিলেট জমি কেনায়। এবার মেঘের কাজ শুরু! বাবাকে ট্রেনে উঠিয়ে সে রিসোর্টে এলো। তার ল্যাপটপ আর কাপড়চোপড় নিয়ে সে রিসোর্ট ছেড়ে নাফিসাদের বাসায় এলো। নাফিসা আরও একদিন আগে এসেছে বাসায়। খরগোশ ছানা দুটো আম্মি স্বযত্নেই রেখেছে। আম্মির সাথে দেখা হতেই আম্মি বললো,
– তোমার বাবা চলে গেছে?
– হ্যাঁ, আম্মি। আজ সকালেই ট্রেন পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে এসেছি।
– ওহ আচ্ছা। বিয়ের কথা বলতে পেরেছো কিছু?
– না আম্মি, চেষ্টা করেছি কিন্তু বলার সুযোগ পাইনি! নিজেই বিব্রতবোধ করেছি!
– ঘরে যাও। আমি খাবার নিয়ে আসছি।
– না আম্মি, নাস্তা করেছি আমি। নাফিসা কবে ফিরবে?
– এসেছে তো গতকাল। এখন চা বাগানে আছে।
– ওহ, আচ্ছা।
নাফিসা চা বাগান থেকে ফিরে এসে দেখলো মেঘ গোসল করছে বাথরুমে। খাটে রাখা কাপড়চোপড় সে আলমারিতে গুছিয়ে রাখলো। হঠাৎ চোখ পড়লো টেবিলে রাখা মেঘের ফোনের উপর। সেদিন একটা চমৎকার দৃশ্য তার চোখে পড়েছিলো, কিন্তু ভালো করে দেখতে পারেনি। আজ সুযোগ আছে দেখার। সে ফোনটা হাতে নিয়ে স্ক্রিন জ্বালালো। কিন্তু সেই দৃশ্যটা পেল না! ওয়ালপেপারেই তো ছিলো! নাফিসা টাচ করে স্ক্রিন লক খুললো। এবার সেটা ভেসে উঠেছে! এটা তো সেই দৃশ্য যেদিন তারা পাহাড়ে দাড়িয়ে সূর্যাস্ত দেখেছিলো! খুব চমৎকার একটা মুহূর্ত ছিলো। ছবিটা সূর্য সহ তাদের একপাশ থেকে তোলা হয়েছে। মেঘ তাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে কাধে থুতনি রেখে দাড়িয়ে আছে। দুজনেই সুর্যাস্ত দেখছে! আবছা অন্ধকারে অস্তগামী লাল সূর্য সহ তাদের ছবি দেখে নাফিসার মাঝে সেই অনুভূতিটা হানা দিলো। খুব গভীরভাবে অনুভব করতে পেরেছিলো মূহুর্তটা! অজান্তেই নাফিসার মুখে হাসি ফুটে উঠলো!
মেঘ ঘরে এসে ছবি দেখে তাকে হাসতে দেখে বললো,
– মুহূর্তটা আরেকবার উপভোগ করলে কেমন হয়, মেঘা?
হঠাৎ মেঘের কন্ঠ শুনে চমকে উঠে দ্রুত ফোন রেখে দিলো নাফিসা। মেঘ মুখে হাসি ফুটিয়ে বললো,
– আমার সবকিছু তোমারই। যখন ইচ্ছে ব্যাবহার করতে পারো।
– কোন প্রয়োজন নেই আমার।
– প্রয়োজন হলেই নিবে। মেঘা, আকাশে ভাসমান মেঘ ছুয়েছো কখনো?
– না।
– আমার ইচ্ছে তোমাকে নিয়ে মেঘের দেশে ঘুরে আসার।
– আমার কোন ইচ্ছে নেই।
– তুমি একদম নিরামিষ! কখনো নিজের ইচ্ছে প্রকাশ করো না এমনকি অন্যের ইচ্ছাতেও বাধা দাও! ইচ্ছে দমিয়ে রাখতে নেই। যখন যা ইচ্ছে হবে ভাবার মতো হলে দুতিন বার ভেবে ঝটপট পূরণ করে ফেলবে। তা না হলে কোনো কিছুতেই এক্সপারিয়েন্স আসবে না! শুধু বই পড়ে জ্ঞানী হওয়া যায় না, প্রকৃতির মুখোমুখি হতে হয়। জীবন অতি ক্ষুদ্র, সময়টাকে অবহেলা করে কাটানো সবচেয়ে বড় বোকামি। অবহেলা না করে উপভোগ করতে শেখো, বোরিং জিনিসটা চিরতরে মুছে যাবে।
মেঘের কথাগুলো প্রকটভাবে মুগ্ধ করে নাফিসাকে! এই মানুষটা এতো কথা জানে কিভাবে! এতো সুন্দরভাবে গুছিয়ে কথা বলে কিভাবে! এসব অদ্ভুত অনুভূতি মিশ্রিত কথা শুনলে যে কেউ প্রেমে পড়ে যাবে! সে ও কি প্রেমে পড়ে গেছে! মেঘকে তো শুরু থেকেই তার ভালো লাগে, ইচ্ছে করে দূরে সরিয়ে দিতে চাইছে।
না, নিজেকে কারো মায়ায় জড়াতে পারবে না সে। মায়া খুব খারাপ জিনিস! বিশ্বাস ভেঙে দেয়। কাউকে এতোটা বিশ্বাস করবে না সে!
পরক্ষণে নাফিসা ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো। বিকেলে বাচ্চারা ছুটে এসেছে খরগোশের সাথে খেলা করতে। উঠুনে ছেড়ে দৌড়াদৌড়ি করে আধমরা বানিয়ে ফেলেছে ছানা দুটোকে! নাফিসা ধমকে তাদের বাসায় পাঠিয়েছে। বেশ কিছুক্ষণ সেবা করেছে ছানা দুটোর। অনেক ভালো লাগে খরগোশ ছানাদের। প্রতিদিন সে তাদের গোসল খাওয়াদাওয়ার যত্ন নিচ্ছে। তার অনুপস্থিতিতে আম্মি করে তাদের সেবা।
সন্ধ্যা থেকে মেঘ ল্যাপটপ নিয়ে বসেছে। জমি কেনার কাজ তো শেষ, সে গত দুদিন থেকেই লেগে পড়েছিলো রিসোর্টের নকশার কাজে! এটা শুধু একটা রিসোর্টই হবে না, এটা তাদের বসবাস যোগ্য একটা বাড়িও হবে।
নাফিসা এসে রাতের খাবার দিয়ে গেলো। ভাতের প্লেট রেখে তরকারির বাটি নিয়ে এসেও দেখলো মেঘ খুব মনযোগ দিয়ে কাজ করছে। খাবার এনেছে তা দেখেও নি! সংকেত দেওয়ার জন্য নাফিসা বললো,
– খাবার খেয়ে নিন। ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।
মেঘ ল্যাপটপে তাকিয়েই বললো,
– তুমি খেয়েছো?
– না, খাবো।
– বসো তাহলে, একসাথে খাই।
– না, এখানে আপনার খাবার এনেছি খেয়ে নিন।
– একজনের খাবারই দুজন ভাগ করে খাবো।
নাফিসা আর একমুহূর্তও দাড়িয়ে না থেকে দ্রুত বেরিয়ে গেলো। মেঘ ল্যাপটপে তাকিয়েই মুচকি হাসলো।
নাফিসা খেয়ে ঘুমানোর জন্য এসেও দেখলো মেঘ কাজ করছে। খাবার যেভাবে রেখে গেছে এখনো সেভাবেই আছে।
– আপনি খাননি কেন এখনো?
– তুমি তো আমার সাথে খেলে না তাই!
– এখন কি খাবেন না?
– তুমি কি বলো? খাবো নাকি খাবো না?
– খাওয়ার জন্য কি দিয়ে যাইনি!
মেঘ ল্যাপটপে তাকিয়ে মুচকি হেসে জবাব দিলো,
– কাজটা শেষ করে, তারপর খাবো।
নাফিসা গিয়ে চেয়ারে বসলো। সে ঘুমাবে, এদিকে মেঘকে খাট থেকে নামতেও বলতে পারছে না! পাচ দশ মিনিটের মতো বসে থেকে সে মাদুর বিছাতে লাগলো। মেঘ ল্যাপটপ রেখে খাট থেকে নামতে নামতে বললো,
– মেঝেতে বিছানা করছো কেন? কতক্ষণ টিকবে সেটা?
– খাট আপনি একা দখল করে নিলে ঘুমাবো কিভাবে!
– এতো তারাতাড়ি ঘুমিয়ে পড়ো কেন তোমরা! আমরা ঘুমাতে ঘুমাতে এগারোটা বারোটা বেজে যায়!
নাফিসা কোন জবাব দিলো না। মেঘ হাত ধুয়ে খাওয়া শুরু করলো, নাফিসা মাদুর তুলে বিছানার একপাশে এসে শুয়ে পড়লো। মেঘ খাওয়া শেষ করে প্লেট গুলো টেবিলের একপাশে রেখে রুমেই একটু হাটাহাটি করলো। নাফিসা উঠে বাইরে গেলো সাথে প্লেটও রেখে এলো। আবার এসে শুতেই মেঘ এসে পাশে হাতে মাথা ভর দিয়ে শুয়ে পড়লো। নাফিসা বিপরীত মুখী ঘুরে থাকায় মেঘ তার দিকে ঘুরাতে চেষ্টা করলো। পরপর দুবার চেষ্টা করার পরও নাফিসা মানছে না তাই সে নিজের অর্ধেক ভাড় ছেড়ে দিয়ে তার উপরে উঠে পড়লো। দুহাতে নাফিসার দুহাত আটকে ধরলো। নাফিসা ভয়ার্ত চোখে তাকালো তার দিকে! মেঘ বললো,
– এতো দেমাক কেন তোমার? এইটুকু শরীরে এতো জেদ কেন? আমাকে কি একটুও ভালো লাগে না? কেন মানতে পারছো না আমাকে? সবাই কি তোমার বাবার মতো?
নাফিসা তার বাবার কথা শুনে বড় বড় চোখ করে তাকালো মেঘের দিকে! সে তার বাবা সম্পর্কে জানে কিভাবে! আম্মি কি বলে দিয়েছে! মেঘ আবার বললো,
– মেঘা তুমি যে জেদ নিয়ে আছো সেটা বোকামি ছাড়া কিছুই না! তোমার বাবার জন্য তুমি সবাইকে অবহেলা করছো। পাপ যদি একজন করে তার শাস্তি সবাই কেন পাবে!
– কে বলেছে আমার বাবার কথা? আমার কোন বাবা নেই, আমি আর আমার আম্মিই আমাদের পৃথিবী।
– বাবা ছাড়া তো আর তুমি পৃথিবীতে আসোনি!
– আর একটা কথাও বলবেন না। ছাড়ুন আমাকে।
– উহুম, শুনতে হবে তোমাকে। মানতে হবে বাস্তবতাকে। এভাবে জীবন চলে না। একজন প্রতারণা করেছে বলে সবাই প্রতারক না। সবাইকে তোমার বাবার মতো মনে করো কেন! আশেপাশে তাকিয়ে দেখো তাদের সংসার কি টিকছে না? তারা কি সুখে নেই? তোমার বাবা বিশ্বাস নিয়ে খেলা করেছে তাই বলে তুমি সকল পুরুষজাতিকে নিন্দা করবে! আমরা নতুন সম্পর্কের বন্ধনে জড়িয়েছি মেঘা, এটা মানতে পারছো না কেন! শুধু মাত্র সেই মানুষটার কারনে? একজনের কারনে তুমি নিজের জীবনটাকে অবহেলা করে যাবে! আমাকে দূরে ঠেলে দিচ্ছো শুধু সেই লোকটার কারনে! তোমার চেয়ে নিশ্চয়ই বেশি কষ্ট পেয়েছে আম্মি, কোথায়! তিনি তো এমন না, তিনি তো ঠিকই স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে চাচ্ছে। শুধু মাত্র তোমার জন্য সেটা পারছে না। উনি বুঝ দিলে তুমি মাথায় নাও না! মেঘা আমাদের চেয়ে সবসময়ই বেশি বুঝে বাবা মা। আমরা কাজ করি জেদ আর আবেগ নিয়ে কিন্তু বাবা-মা কাজ করে সবদিক বিবেচনা করে। আম্মি তো তোমার জন্যই বেচে আছে, তোমাকে আগলে রেখে দিন কাটাচ্ছে সেখানে তুমি যদি আম্মির পরামর্শ গ্রহণ করতে না পারো তাহলে কেমন মেয়ে হলে তুমি! আম্মিও চায় আমাদের সম্পর্ক অটুট থাকুক।
– আমি চাই না। শুনতে পেরেছেন, আমি চাই না। মানবো না কখনো আপনাকে। আগেও বলেছি এখনো বলছি। কিসের আশায় পড়ে আছেন এখানে? চলে যাচ্ছেন না কেন! কিসের আশায় পড়ে আছেন!
– জানো না তুমি কিসের আশায় পড়ে আছি!
– ওহ হ্যাঁ! আমি আপনার ওয়াইফ! আমার উপর পুরুষত্ব ফলাবেন তার পরে না যাবেন! আমার দেহটা ভোগ করার জন্যই তো পড়ে আছেন তাই না?
মেঘ স্তব্ধ হয়ে গেছে! এতো চেষ্টার পর এই ফলাফল! সে কি এতোটাই অবুঝ! এটা কি বললো মেঘা! সে কি ভালোবাসার মর্ম বুঝে না! মেঘের মধ্যে কি সে ভালোবাসার কোন দিক দেখেনি! মেঘের চোখ লাল হয়ে আসছে, বুকের ভেতর আঘাত হেনেছে নাফিসার কথা! হাতের বাধন হালকা হয়ে গেছে!
নাফিসা একটা হাত ছুটিয়ে তার গায়ের ওড়না সরিয়ে দিলো। চোখে পানি নিয়ে জেদি কন্ঠে বললো,
– নিন আমি প্রস্তুত। নিজের তৃপ্তি মিটিয়ে আমাকে মুক্ত করে চলে যান।
মেঘের পুরো শরীর রাগে কাপছে! তাকে নিয়ে এমন কিছু ভাবলো কিভাবে সে! এতো ভালোবেসেছে তাকে আর এই তার পরিনয়! মেঘ এক হাতে নাফিসার মুখ চেপে ধরে গলার নিচে বাম পাশে খুব জোরে একটা কামড় বসিয়ে দিলো! নাফিসা চিৎকারও দিতে পারছে না মুখ চেপে রাখায়, শুধু অশ্রু ঝরছে আর যন্ত্রণায় ছটফট করছে ! মেঘ কামড় ছেড়ে দিলে নাফিসা দেখলো, মেঘের চোখে পানি টলমল করছে, মুখে রক্ত লেগে আছে! মেঘ মুখ ছেড়ে দিয়ে বুকের বামপাশে আঙুল দিয়ে ইশারা করে বলতে লাগলো,
– তোর দেহ ভোগ করতে নয়, এখানে যেই ছোট্ট হৃদয়টা আছে না সেটা দখল করার জন্য পড়ে আছি। সেখানে একটু জায়গা পাওয়ার জন্য সেই প্রথম থেকে তোর পিছু পিছু ঘুরে বেড়াচ্ছি! এতো দেমাক কিসের তোর? এতোটাই নিচ মনে হয় আমাকে? ভালোবাসা বুঝলি না! আফসোস করবি জীবনে, খুব আফসোস করবি দেখে নিস। আমি চলে গেলেই তো তুই খুশি, যা তোর খুশিতেই আমার খুশি। চলে যাবো আমি।
মেঘ তার উপর থেকে উঠে পড়লো। চোখের পানি মুছতে মুছতে বেরিয়ে গেলো ঘর থেকে! নাফিসা দ্রুত উঠে বসলো! দাতের আঘাত যে খুব বিষাক্ত! ব্যাথা করছে খুব! রক্তও ঝরছে প্রচুর! সে তার ওড়না হাতে নিয়ে এক কোনা দিয়ে বুকে চেপে রাখলো। ইচ্ছে করছে চিৎকার করে কান্না করতে কিন্তু পারছে না! সহ্যও হচ্ছে না এই ব্যাথা! জগ থেকে পানি নিয়ে ওড়নার একপাশ ভিজিয়ে ক্ষত জায়গায় চেপে ধরে রাখলো!
বেশ কিছুক্ষণ কাটার পর নাফিসা দরজার দিকে তাকিয়ে আছে। এসময় কোথায় চলে গেলো মেঘ! এসব না বললেও পারতো সে!
মেঘের কথাগুলো তার কানে বেজে চলেছে। সে নিজেও তো জানে মেঘ তাকে কতটা ভালোবাসে! মেঘের হাত বাচার জন্য খালামনির বাসায় গেলেও সেখানে সে মেঘকে মিস করেছে! ঘুমাতে গিয়ে মেঘের অভাব বুঝতে পেরেছে! মেঘকে নিয়ে তার মনে যে অন্যরকম অনুভূতি সৃষ্টি হয়েছে সেটা অনেক আগেই বুঝতে পেরেছে সে! তাহলে এভাবে কষ্ট দিলো কেন আজ! ঠিকই তো, তাকে ভোগ করার হলে আরও আগেই সে তা করতে পারতো। এমন অনেক সুযোগ ছিলো তার! কি বলতে কি বলে ফেলেছে তা ভাবতেই নাফিসার খুব কষ্ট হচ্ছে! মেঘকে কেন অবহেলা করছে, তার তো কোন দোষ নেই! যে মানুষটা তাকে প্রতিনিয়ত ভিন্ন জগতের জানান দিচ্ছে তাকে সে কিভাবে কষ্ট দিতে পারলো! এমন একটা মানুষকে কষ্ট দিয়ে এখন নিজেকে খুব অপরাধী মনে হচ্ছে নাফিসার! সে তো তার স্বামী, এটা একদমই ঠিক হয়নি। ক্ষমা চাইতে হবে তার কাছে। কোথায় গেছে এখন, কোথায় খুজতে যাবে তাকে! আবার এদিকে কামড়ের যন্ত্রণা! কোন কিছু ভেবে না পেয়ে দরজা চাপিয়ে ঘরেই চোখের পাতা খুলে শুয়ে আছে মেঘের অপেক্ষায় আর বালিশ ভিজিয়ে দিচ্ছে নোনা জলে!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here