উপন্যাসের_সারাংশ_প্রহর,৩,৪ বোনাস পর্ব

0
1124

#উপন্যাসের_সারাংশ_প্রহর,৩,৪ বোনাস পর্ব
#Sadiya_Jannat_Sormi (লেখিকা)

ওয়াশ রুমে এসে মেঘা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল, ভয়ঙ্কর এক বিপদে পড়েছে সে। এই শাড়ি ও নিজে কখনো ঠিক করে পড়তে পারবে না, যতোক্ষণ পর্যন্ত কেউ ওয়াশ রুমে না আসছে ততক্ষণ পর্যন্ত ওকে এই অবস্থায় এখানে থাকতে হবে। ইচ্ছে হচ্ছে অহনাকে কান ধরে পুরো ভার্সিটি তে ঘুরাতে,নিজে তো মজা করছে শুধু মাঝখান থেকে ওর সব মজা নষ্ট করে দিয়েছে।আজ শাড়ি পরে না আসলে ও অহনার মতো ঘুরে বেড়াতে পারতো,যা কিছু হয় ওর জীবনে সব দোষ অহনার।

এদিকে অহনা পুরো ভার্সিটি জুরে মেঘা কে খুঁজে বেড়াচ্ছে, কোথাও খুঁজে পাচ্ছে না।একে ওকে জিজ্ঞেস করল কিন্তু কেউ মেঘার কোনো খোঁজ দিতে পারলো না,মেঘার ফোন টাও বন্ধ দেখাচ্ছে। শেষে ওর ধারণা হলো মেঘা হয়তো রাগ করে বাসায় চলে গেছে আর ফোন টাও বন্ধ রেখেছে যাতে অহনা ওকে খুঁজে না পায়। অহনা ওকে আর না খুঁজে অনুষ্ঠান দেখতে বসে পড়লো, অনুষ্ঠান শুরু হয়ে গেছে এখন।

প্রায় এক ঘন্টা পার হয়ে গেছে কিন্তু এখনো কারো দেখা পেল না মেঘা,আর দেখা পাবে কি করে সবাই তো অনুষ্ঠান দেখতে ব্যাস্ত। হঠাৎ করে বাইরে কারো পায়ের আওয়াজ শুনতে পেল ও, মনে হচ্ছে কোনো মেয়ে আসছে, হিলের টকটক শব্দ হচ্ছে। আস্তে করে দরজা খুলে বাইরে উকি দিয়ে দেখলো ওদের ক্লাসের লিরা এই দিকেই আসছে। ওকে আসতে দেখে মেঘা ডাকলো,লিরা মেঘার ডাক শুনে ওই ওয়াশ রুমে ই এলো। এসে মেঘার অবস্থা দেখে বললো,,,

তুমি এই ভাবে এখানে দাঁড়িয়ে কি করছো মেঘা আর আমাকেই বা ডাকলে কেন?

আমি না শাড়ি টা ঠিক করে পড়তে পারছি না তাই ওয়াশ রুমে আটকে আছি। তুমি কি আমাকে একটু শাড়ীটা পড়িয়ে দিবে প্লিজ?(মেঘা)

আচ্ছা ঠিক আছে, আমি তোমাকে শাড়ি পড়িয়ে দিচ্ছি।(লিরা)

কিছুক্ষণের মধ্যেই লিরা মেঘা কে সুন্দর করে শাড়িটা আবার পরিয়ে দিলো।শাড়ি পড়া শেষ হওয়ার পর মেঘা ওর সাথে টুকটাক কথা বলতে বলতে ওয়াশ রুম থেকে বেরিয়ে এলো। বাইরে এসে দেখে অহনা বেশ চিল মুডেই আছে ক্লাসমেট দের সাথে কথা বলছে আর হাসাহাসি করছে, মনে হচ্ছে মেঘা কে নিয়ে অহনার বিন্দু মাত্র চিন্তা ভাবনা নেই।মেঘা পা টিপে টিপে অহনার পিছনে এসে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করল,, খুব হাসাহাসি হচ্ছে তাই না অহনা?
অহনা পিছন থেকে মেঘার গলার আওয়াজ শুনে চমকে উঠলো,মেঘা বাসা থেকে আবার চলে এলো কেন? ঘুরে তাকিয়ে দেখে মেঘা ওর দিকে খাইয়া ফালামু লুক নিয়ে তাকিয়ে আছে।মেঘার গায়ে শাড়ি রয়েছে তার মানে মেঘা বাসায় যায় নি, অহনা মেঘার লুক দেখে একটু কষ্ট করে হাসার চেষ্টা করে বললো,,,

না হাসাহাসি হবে কেন?আমি তো তোর জন্য অপেক্ষা করছিলাম বাসায় যাবি না তুই?

আচ্ছা, তুই আমার জন্য অপেক্ষা করছিলি?কই তোকে দেখে তো মনে হচ্ছে না যে তুই আমার জন্য অপেক্ষা করছিলি, আমাকে বিপদের মুখে ঠেলে দিয়ে দিব্যি ভালো মজা করছিস।(মেঘা)

অহনা মেঘার কথা শুনে ওকে ওখান থেকে টেনে ফাঁকা জায়গায় নিয়ে এলো। তারপর বললো,,সরি মেঘু, আমি ভাবছিলাম তুই বাসায় চলে গেছিস, আমি তো তোকে ফোন ও করেছিলাম কিন্তু তোর ফোন টা বন্ধ ছিল।

ওয়াশ রুমে নেটওয়ার্ক আছে কি যে ফোন বন্ধ দেখাবে না?(মেঘা)

তুই ওয়াশ রুমে কি করতে গিয়েছিলি মেঘু?(অহনা)

নাচ করতে গিয়েছিলাম ওয়াশ রুমে। তুই কিভাবে শাড়ি পরিয়ে দিয়েছিলি আমাকে একটু পরেই খুলে পরেছিল,তাই শাড়ি ঠিক করতে ওখানে গিয়েছিলাম আর ওখানে গিয়ে,,,(মেঘা)

ওখানে গিয়ে কি?নিজে নিজেই শাড়ি পরে ফেললি না কি?(অহনা)

চুপ কর তুই। নিজে নিজে শাড়ি পরিনি একটা অসভ্য ছেলের সাথে ধাক্কা খেয়েছি আর কতগুলো উল্টো পাল্টা কথা শুনে এসেছি শুধু মাত্র তোর জন্য। তুই আজ বাসায় চল খালামনির হাতে যদি তোকে বকা না খাইয়েছি তাহলে আমার নাম ও অনুমেঘা রহমান না হুহ।(মেঘা)

মেঘা কথা গুলো বলে হনহন করে হেঁটে চলে গেল, জোরে যাওয়ার কারণে একবার শাড়িতে প্যাচ লেগে পড়তে গিয়েও পড়লো না। পিছনে ঘুরে অহনার দিকে একবার আগুন চোখে তাকিয়ে আবার হাঁটতে লাগলো। অহনা মেঘার এই রাগের কারণ কিচ্ছু বুঝতে পারলো না,ও আবার কি করলো যে মেঘা ওই ভাবে রিয়েক্ট করলো?
__________________________________________

বাসায় এসে মেঘা খালামনির কাছে বসে কাঁদতে শুরু করল, খালামনি শায়লা বেগম বারবার জিজ্ঞেস করছে কি হয়েছে কিন্তু মেঘা কিছু না বলে কেঁদেই চলেছে। শায়লা বেগম চিন্তায় পড়ে গেলেন মেঘার কান্না দেখে, এইভাবে কাঁদার মেয়ে তো মেঘা নয়। নিশ্চয়ই কেউ মেঘা কে খুব বাজে কথা বলেছে যার দরুন ও এইভাবে কাঁদছে, অহনা ও এখনো বাসায় আসেনি তাই শায়লা বেগমের চিন্তা আর কমলো না। চিন্তিত মুখে তিনি মেঘার পাশ থেকে উঠে গেলেন, ওনার উঠে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মেঘা চোখ মুছে মুচকি হাসি হাসলো।ওর কাজ হয়ে গেছে, এখন অহনা বাসায় আসার পর খালামনি ওকে আচ্ছা করে বকবে, ওকে জোর করে শাড়ি পরিয়ে দেওয়ার শাস্তি অহনা ঠিক ঠাক পেয়ে যাবে।
একটু পরেই অহনা বাসায় চলে এলো,মেঘার ভাবনা মতো অহনা বাসায় আসার সাথে সাথে শায়লা বেগম অহনার খেয়াল না রাখার জন্য বকতে শুরু করলেন। অহনা বেশ বুঝতে পারছে মেঘা নিশ্চিত কিছু চাল করেছে যার কারণে মা এতো বকছে। শায়লা বেগম বকাবকির এক পর্যায়ে অহনাকে জিজ্ঞেস করলেন,,,,

মেঘা এতো কাঁদছে কেন, কে ওকে কি বলেছে ঠিক করে বল তুই।
অহনা মায়ের কথা শুনে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইল মায়ের দিকে,মেঘা কাঁদছে এই ব্যাপারটা ওর মাথার উপর দিয়ে গেল। মাকে কিছু না বলে অহনা মেঘার রুমে এসে দেখে ও নিজের মনে বই পড়ছে। দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো অহনা, এই মেয়ে টা ভয়ঙ্কর বিপদজনক, অন্য কে শাস্তি দেওয়ার খুব ভালো উপায় জানে সে।ও ওকে জোর করে শাড়ি পরিয়ে দিয়েছিলো, ওর জন্য মেঘা কোনো ছেলের কাছ থেকে কথা শুনেছে, সেটা তো আর ছেড়ে দেওয়া যায় না।তাই মিথ্যেমিথ্যি কান্না করে মায়ের হাতে বকা খাওয়ালো ওকে।

________________

অন্ধকার একটা রুমের মধ্যে পায়চারি করছে ইশতিয়াক। কোনো কিছুতেই শান্তি পাচ্ছেনা সে, ভার্সিটি থেকে আসার পথে একটা গাড়ির সাথে এক্সিডেন্ট হয়েছে ওর।ওর বিশেষ কিছু হয় নি কিন্তু যেই লোকের সাথে ওর এক্সিডেন্ট হয়েছে ওর অবস্থা খারাপ হয়ে গেছে। ইশতিয়াক নিজেই লোকটাকে হাসপিটালে ভর্তি করিয়ে দিয়ে এসেছে, ওর বাবার বয়সী হবে লোকটা। গাড়ি তে থাকা লোকটার কাগজ পত্র দেখে জানতে পারে ওনার নাম লাবীব রহমান। এখন ওর চিন্তা হচ্ছে লোক টা আবার মরে না যায়,মরে গেলে ওকে বিপদে পড়তে হবে।ডক্টরকে বলে এসেছে যাই হোক না কেন লোক টা কে সুস্থ করে তোলা চাই মানে চাই। হঠাৎ করে ই রুমের দরজা খুলে গেল, একটা অপরুপা সুন্দরী মেয়ে রুমে এসে লাইট জ্বালিয়ে দিয়ে ইশতিয়াকের কাছে এগিয়ে এলো আর আদুরে গলায় বললো,,,,

কাম ডাউন বেবি, এতো টেনশন করছো কেন তুমি?যার এক্সিডেন্ট হয়েছে ও তো তোমার কিছু হয় না তাহলে ওকে নিয়ে এতো চিন্তা করছো কেন?

মেয়েটার কথা শুনে ইশতিয়াক রাগি চোখে তাকালো ওর দিকে। এই মেয়ে টা হচ্ছে ওর হবু বউ আয়শি, প্রচুর ন্যাকা একটা মেয়ে। সবসময় চিপকে চিপকে থাকে ওর সাথে,ও যেইসব জিনিস পছন্দ করে না ওগুলোই ও বেশি করে। দাঁতে দাঁত চেপে ইশতিয়াক বললো,,,

Get out of the room right now, I don’t want to talk to anyone right now. Please leave me alone please.

আয়শি ইশতিয়াকের কথা শুনে গটগট করে রুম থেকে বেরিয়ে গেল।

চলবে ইনশাআল্লাহ

#উপন্যাসের_সারাংশ_প্রহর [বোনাস পর্ব]
#sadiya_jannat_sormi

ইশতিয়াকের রুম থেকে বেরিয়ে এসে আয়শি সোজা ওর মায়ের কাছে গেল। গিয়ে ফোঁস ফোঁস করতে করতে বললো,,, মামনি এইভাবে আর কতো, আমার কিন্তু এইসব কিছুই আর সহ্য হচ্ছে না। ইশতিয়াক দিন দিন আমার থেকে দূরে সরে যাচ্ছে আমার উপস্থিতি ওর মোটেও ভালো লাগছে না এখন। তুমি হয় তাড়াতাড়ি তোমার ছেলের সাথে আমার বিয়ে দাও নাহলে আমি পাপা কে বলে তোমার এমন অবস্থা করবো যে তুমি স্বপ্নেও ভাবতে পারবে না। ইশতিয়াকের মা ইলিনা আহমেদ আয়শির কথা শুনে কিছু টা ঘাবড়ে গেলেন তারপর মুখে একটু হাসির রেখা টেনে আয়শি কে ওনার পাশে বসিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন,,,

এইভাবে বলছিস কেন মা?ইশতিয়াকের সাথে তো তোরই বিয়ে হবে আর তোদের তো বিয়েও ঠিক হয়ে আছে। ইশতিয়াকের তো এখন কাজের খুব চাপ এইজন্য ই ও তোকে সময় দিতে পারছে না বলে তুই এরকম টা ভাবছিস।

ইলিনা আহমেদের কথা শুনে আয়শি ওনার বুকে মাথা এলিয়ে দিয়ে আদুরে গলায় বললো,, তারপরও আমার খুব ভয় হয় মামনি, ইশতিয়াক যদি আমাকে বিয়ে না করে তাহলে আমি বাঁ’চ’বো না মামনি, আমি ওকে খুব ভালোবাসি। ওকে ছাড়া তো আমি আর অন্য কিছু চিন্তাও করতে পারি না। তুমি একটু তোমার ছেলে কে বলে দিয়ো যেন আমাকে একটু হলেও ও সময় দেয়, তাহলেই আমি খুশি থাকবো।
আয়শির কথা শুনে ইলিনা আহমেদ মনে মনে বললেন, তুই ম’রে গেলেই তো আমার চিন্তা শেষ, ঝামেলা মুক্ত হই আমি।না পেরে শুধু মাত্র ইশতিয়াকের সাথে বিয়ে দিচ্ছি তোর,যদি পারতাম তাহলে নিজের হাতে মে’রে ফেলতাম। এইসব ভাবতে ভাবতেই ইলিনা আহমেদ আয়শির গলার কাছে হাত নিয়ে এলেন, তখনি আয়শি বললো,,,,

কি হলো মামনি, তুমি আমার গলায় হাত দিচ্ছো কেন?

ইলিনা আহমেদ একটু অপ্রস্তুত হয়ে গেলেন, একটুর জন্য ওনার ভাবনা টাকে সত্যি তে পরিনত করতে যাচ্ছিলেন তিনি।

কই নাতো,তোর গলার এই নেকলেস টা খুব সুন্দর লাগছে তাই হাত দিয়ে দেখছিলাম আর কি।(ইলিনা আহমেদ)

আয়শি আর কিছু বললো না। ইশতিয়াক কে ও নিজের করে পাবে এই ভাবনাতেই মগ্ন হয়ে গেছে এখন, ইশতিয়াক ওর ভালোবাসা নয় জেদ।ওর যা চাই তাই আদায় করে নেয় যে কোনো মূল্যেই হোক না কেন, বাবার পলিটিক্যাল পাওয়ারের জন্য কোনো সমস্যাই হয় না ওর। ইশতিয়াক কে যখন ওর বার্থডে পার্টি তে দেখেছিল তখন থেকেই ও ইশতিয়াক এর পিছনে লেগে রয়েছে। প্রপোজ করেছিল কিন্তু ইশতিয়াক রাজি হয় নি বরং ওর প্রপোজাল সবার সামনে রিজেক্ট করে দিয়েছিল। সেই কারণেই ওর জেদ চেপে গেল, ওর ইশতিয়াক কে চাই মানে চাই।ওর বাবার হু’ম’কি ধা’ম’কি তে ইশতিয়াকের মা ইলিনা আহমেদ বিনা বাক্য ব্যয়ে আয়শি আর ইশতিয়াকের বিয়ে দিতে রাজি হয়ে গেছেন। মায়ের জোরাজুরিতে ইশতিয়াক আয়শি কে বিয়ে করতে রাজি হওয়ার পর থেকেই আয়শি ইশতিয়াকদের বাসায় থাকে আর যখন তখন গিয়ে ইশতিয়াককে বিরক্ত করে।
____________________________________________

এই মুহূর্তে ইশতিয়াক হসপিটালের একটা আই সি ইউ এর কেবিনের সামনে বসে আছে। ঘড়ির কাঁটা জানান দিচ্ছে এখন রাত দশটা বাজে, বাসায় মন টিকছিল না তার, ওর জন্য একটা লোক বিনা দোষে হসপিটালাইজ হয়ে আছে সেটা ও মানতে পারছিল না তাই এই রাত দশটার দিকে হসপিটালে এসে হাজির হয়েছে।ও আসার কিছুক্ষণ আগেই লোকটির জ্ঞান ফিরেছে, ওনার পরিবারের সদস্যদের সাথেও কথা হয়েছে ইশতিয়াকের। একটু শান্ত স্বরে লোকটিকে জিজ্ঞেস করল সে,,,,

এখন কেমন আছেন আঙ্কেল?
লাবীব রহমান ইশতিয়াকের প্রশ্ন শুনে ওর দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো তার পর হাতের ইশারায় কি যেন একটা বললো। ইশতিয়াক সেটা বুঝতে না পেরে আবার জিজ্ঞেস করতে গিয়েও থেমে গেল, ওর মাথাতেই আসেনি যে উনি এখন কথা বলতে পারবেন না। মানুষ টা ওর দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে দেখে ইশতিয়াকের খারাপ লাগলো খুব, আজ ও যদি ঠিক ভাবে ড্রাইভিং করতো তাহলে হয়তো মানুষটার এই দুরাবস্থা হতো না।ও মুখ কালো করে কেবিনের বাইরে বেরিয়ে এলো,ও বাইরে আসার পর একটা মেয়ে ওকে জিজ্ঞেস করল,,,

বাবা কেমন আছেন এখন?ডক্টর তো আমাদের কে ঢুকতে দিলেন না তাই প্লিজ আপনি বলুন আমার বাবা কি এখন সুস্থ আছেন?
ইশতিয়াক ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করল,, আপনি কি ওনার মেয়ে?

হ্যা আমি ওনার মেয়ে লিরা রহমান। বলুন না বাবার কি অবস্থা এখন (লিরা)

ওনার অবস্থা মনে হয় খুব একটা ভালো না, কথা বলার মতো অবস্থাতে উনি নেই। আপনি প্লিজ আমাকে ক্ষমা করবেন, আমার জন্যই আজ আপনার বাবার এই অবস্থা হয়েছে। কিন্তু আপনি কোনো চিন্তা করবেন না, ওনার চিকিৎসার জন্য যতো টাকা লাগবে সব আমি দেবো, আল্লাহ চাইলে উনি আবার সুস্থ হয়ে উঠতে পারেন।(ইশতিয়াক)

কথা গুলো বলে ইশতিয়াক আর এক মুহূর্তও ওখানে দাঁড়ালো না, তাড়াতাড়ি করে হসপিটাল থেকে বেরিয়ে গেল। ইশতিয়াকের কথা গুলো শুনে লিরা বসে পড়ল ওখানেই, বাবার এই অবস্থার কথা শুনে হু হু করে কেঁদে উঠলো লিরা। মাত্র কয়েক দিন হলো তার মা ক্যা’ন্সা”রে আক্রান্ত হয়ে মা’রা গেছেন,আর আজ আবার বাবার এই অবস্থা হলো। মায়ের চিকিৎসার জন্য খরচ চালাতে গিয়ে লিরা দের বিষয় সম্পত্তি যা কিছু ছিল সবকিছু শেষ হয়ে গেছে,লিরার ভালো ভাবে বাঁচার জন্য এখন বাবা এবং তার ছোট খাটো একটা চাকরিই ছিল একমাত্র ভরসা কিন্তু আজ তো সেটাও শেষ হয়ে গেছে।ওই ছেলেটার টাকায় নাহয় বাবা সুস্থ হয়ে উঠবেন কিন্তু লিরা আর তিনি চলবেন কিভাবে, সমস্ত কিছু হারিয়ে পথের ফকির বনেছেন তিনি আগেই।লিরা এইসব ভাবতে লাগলো আর আই সি ইউ এর সামনে বসে কাঁদতে লাগলো, মা চলে যাওয়ার শোক কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই বাবার চলে যাওয়ার আশঙ্কা মনের মধ্যে ঘিরে বসেছে লিরার।ও জানে না ওর পরবর্তী জীবন টা কিভাবে যাবে,এক ভয়াবহ ভবিষ্যত অপেক্ষা করছে তার জন্য সেটা লিরার অজানা।

_____________________

এই রাতের বেলায় তুই আমাকে ছাদে নিয়ে বসে আছিস কেন মেঘু? আমার কিন্তু খুব ঘুম পাচ্ছে এখন, আমি ঘুমাতে যাই তুই একা বসে চন্দ্র বিলাস কর। অহনা ছাদ থেকে নেমে গেল আর মেঘা ওর কথায় পাত্তা না দিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে রইলো। কিছুক্ষণ পর আপন মনে বললো,,,,

তুমি কেমন আছো মা? আমি জানি তুমি তোমার এই অনুমেঘা কে ছাড়া একটুও ভালো নেই,জানো মা আমিও তোমাকে ছাড়া ভালো নেই।খালামনি আমাকে খুব আদর করে, একটুও কষ্ট দেয় না, আমি যা চাই তাই দেয় আমাকে কিন্তু তারপরেও আমি শুধু তোমাকেই চাই মা।জানো মা আমার না খুব ইচ্ছে করে মা বলে ডাকতে, মায়ের আদর পেতে, মায়ের গলায় নিজের নাম শুনতে কিন্তু আমার ইচ্ছে তো আর পুর্ণ হবার নয় তাই না মা?কারণ তুমি তো ওই আকাশের চাঁদের দেশে চলে গেছো যেখান থেকে তুমি আর কখনো আসবে না।আর তোমার চলে যাওয়ার জন্য দায়ী ওই লাবীব রহমান, আমি তোমাকে কথা দিচ্ছি মা,ওই লাবীব রহমান কে আমি কখনো ক্ষমা করবো না। আগে ইচ্ছে হতো বাবা বলে ডাকার কিন্তু আমি এখন বাবা শব্দ টাকে ঘৃনা করি মা আর বাবা নামের মানুষটাকে ও।হ্যা আমি জানি পৃথিবীর সব বাবারা খারাপ হয় না কিন্তু আমার বাবা পৃথিবীর সবচেয়ে খারাপ বাবা। আমি কখনো আর ওই শব্দ টার সাথে পরিচিত হতে চাই না মা, তুমি ওপারে ভালো থাকো মা, তোমার এই অভাগা মেয়ে টা তোমার কাছে যাওয়ার অপেক্ষায় থাকবে সবসময়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here