#উপন্যাসের_সারাংশ_প্রহর [১৭]
#sadiya_jannat_sormi ( লেখিকা )
একটা ডুপ্লেক্স বাড়ির সামনে গাড়ি দাঁড় করালো মাহদী। দু’জনেই গাড়ি থেকে নেমে এলো, বাড়ি টা দেখে মেঘা কিছু টা বিস্মিত হয়ে গেলো। বাড়ির সামনে গেইটের দুই পাশে দুটো বড় কৃষ্ণচূড়া গাছ লাগানো রয়েছে,এর আগেও মেঘা একবার মাহদী কে ফলো করতে করতে ওর বাসায় এসেছিল কিন্তু তখন কোন কৃষ্ণচূড়ার গাছ দেখতে পায়নি সে।মেঘা কে ওমন অবাক হতে দেখে মাহদী মুচকি হেসে বললো,, এতো অবাক হওয়ার কিছু নেই মেঘ পাখি। আমি জানি তোমার কৃষ্ণচূড়া ফুল পছন্দ তাই গেইটের সামনে এই গাছগুলো আমি এই কিছু দিন আগেই লাগিয়েছি। সুন্দর না?
মেঘা প্রতি উত্তরে একটা মুচকি হাসি উপহার দিলো মাহদী কে। তারপর বাসার ভিতরে ঢুকলো দুজন, হালকা একটু ভয়ে মেঘার বুক শুধু ধুকপুক করছে।না জানি মাহদীর মা ওকে দেখে কি রিয়েক্ট করেন, ওর জন্য না জানি আবার মাহদী কে মায়ের কাছে কথা শুনতে হয় আবারো। বাসায় ঢুকে মাহদী মেঘা কে সোফায় বসতে বললো, ওকে বসতে বলে মাহদী মা’কে ডাকতে ভিতরে চলে গেল।মেঘা চারপাশে একবার দেখে সোফায় গিয়ে বসল, পুরো বাসা টা অদ্ভুত সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। বাসার ভিতরে ও যেন সবুজের ছোঁয়া লেগেছে, বসার ঘর টা অনেক সুন্দর করে সাজানো।দেখেই বোঝা যাচ্ছে মাহদীর মা খুব সৌখিন, তবে মাহদী নয়। একটা অগোছালো ছেলে হচ্ছে মাহদী, কোনো কিছু সাজানো দূরে থাক, অগোছালো করতে বেশি এক্সপার্ট সে। মিনিট পাঁচেকের মধ্যেই আফরোজা চৌধুরী বসার রুমে এলেন, তিনি একাই এসেছেন। মাহদী কে বলে দিয়েছেন সে যেন তার রুমে থাকে,মেঘার সাথে তিনি একান্তই কথা বলতে চান, সেখানে আর কারো উপস্থিতি থাকুক সেটা তিনি চান না। মাহদী মায়ের কথার দ্বিমত করেনি, চুপচাপ রুমে চলে গেল। আফরোজা চৌধুরী কে দেখে মেঘা উঠে দাঁড়াতে যাচ্ছিলো কিন্তু আফরোজা চৌধুরী তাকে হাতের ইশারায় উঠতে বারন করলেন।
ব্লাক শার্ট আর একটা ব্লাক জিন্স পরলো ইশতিয়াক। পায়ে ব্লাক কালারের সু, হাতে ব্র্যান্ডের ব্লাক কালার ফিতার ঘড়ি, চোখে ব্লাক সানগ্লাস। এখন ইশতিয়াক কে পুরো একটা নায়কের মতো লাগছে, সবকিছুই ব্লাক কালার শুধু মাত্র সে ছাড়া।ড্রেসিনের সামনে দাঁড়িয়ে শার্ট টা ইন করে নিয়ে গলার টাই টা ঠিক ঠাক করে নিলো। তারপর একটা হোয়াইট কালারের কোট গায়ের উপর জড়িয়ে নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে এলো ইশতিয়াক, অফিসে যাওয়ার জন্য পুরোপুরি রেডি সে। নিচে আসতেই ইশতিয়াক কে দেখে অবাক হলেন ইলিনা আহমেদ, আজকে অনেক দিন পর ইশতিয়াক অফিসের জন্য রেডি হয়েছে।দেখে মনে হচ্ছে সবকিছু যেন ঠিক আগের মতই আছে, কোনো কিছুই যেনো হয়নি। মা’কে এইভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে ইশতিয়াক হালকা হেসে বললো, অনেক দিন অফিসে যাওয়া হয় না। বিজনেসের যে কি হাল হয়েছে কে জানে, বাবা তো ঠিক মতো সবকিছু সামলাতেও পারেনা।তাই ভাবলাম আজকে থেকে আবার অফিসে জয়েন করবো, সবকিছু এখন থেকে আমিই দেখাশোনা করবো, বাবা কে আর কিছু ভাবতে হবে না।বাসা থেকে বেরিয়ে গেল ইশতিয়াক, ছেলের যাওয়ার দিকে ইলিনা আহমেদ অশ্রু ভেজা চোখে তাকিয়ে রইলেন। সবসময় ইশতিয়াক বাসা থেকে বের হওয়ার আগে ওনাকে পায়ে হাত দিয়ে সালাম করে তারপর বেরুতো,আর আজ নিজের মুখে মা ডাকটাও দিলো না ইশতিয়াক। সত্যিই কি তিনি এতো টা অবহেলার যোগ্য, ইশতিয়াক কি একবারও মায়ের দিক টা ভাববে না। কেন মা আয়শির মতো একটা বাজে নোংরা চরিত্রের মেয়ের সাথে ওর বিয়ে দিচ্ছে সেটা কি একবারও জানতে চাইবে না ইশতিয়াক? চোখ মুছে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন ইলিনা আহমেদ, মুহূর্তেই ওনার চোখ গুলো রাগে দপদপ করে উঠলো। অনেক হয়েছে আর নয়, এবার আয়শির কিছু একটা তাকে করতেই হবে নাহলেই নয়।
ইশতিয়াক বেরিয়ে যাওয়ার পর পরই ইলিনা আহমেদ তাড়াহুড়ো করে বাসা থেকে বেরিয়ে গেলেন কোনো এক জায়গার উদ্দেশ্যে।
?
এক মাস ধরে মানসিক হাসপাতাল থেকে পালানোর চেষ্টা করে চলেছে লাবীব রহমান। কিন্তু তাতে কোন লাভ তো হয়ই নি উল্টো হাসপাতালের দায়িত্বে থাকা লোকজন লাবীব রহমান কে লোহার শিকল দিয়ে একটা বন্ধ রুমে আটকে রেখেছে।লাবীব রহমান তাদের কে বারবার চিৎকার করে বলেছেন যে তিনি পাগল নন, তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ একজন মানুষ। কিন্তু হাসপাতালের লোকজন তার কোনো কথাই কানে নেয়নি।কারণ মানসিক ভারসাম্য হীন লোকজন এইরকম কথা প্রায়ই বলে থাকে। বন্ধ ঘরে লাবীব রহমানের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে এখন, মেয়ে লিরা কে কতদিন ধরে দেখেন না তিনি। সম্পূর্ণ সুস্থ একজন মানুষ কে পাগল বানিয়ে দিয়েছে এরা, এইরকম বন্দি থাকতে থাকতে লাবীব রহমান নিজেই আস্তে আস্তে পাগল হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছেন। এখন বুঝতে পারছেন তিনি, অতীতে মেহেরের সাথে করা পাপের শাস্তি পাচ্ছেন তিনি।মেহের কে ঠকিয়ে ছিলেন,যেই সময়টাতে ওর মেহেরের দরকার ছিল সবচেয়ে বেশি সেই সময় তিনি মেহেরের হাত ছেড়ে দিয়েছিলেন। নিজের স্ত্রী সন্তান কে ফেলে আরেক জন কে নিয়ে সুখের সংসার করতে চেয়েছিলেন। বন্ধ ঘরে বসে এখন অতীতের সব হিসেব করেন আর দেয়ালে কপাল ঠুকেন।
?
সবার জীবনের সবকিছু এলোমেলো হয়ে গেছে আবার অনেক কিছু ঠিক ও হয়ে গেছে। দুদিন অহনা কে আ/ধ ম/রা করে বাসার সামনে ফেলে দিয়ে গেল আয়শি, শুধু জা/নে মা/রে/নি ওকে তাছাড়া ওর বাঁচার সমস্ত হাল শেষ করে দিয়েছে।তাকে বখাটে কিছু ছেলেদের সাথে একটা রুমে আটকে রেখেছিল দু ঘন্টা, এই সময়টুকুই অহনা কে শেষ করার জন্য যথেষ্ট ছিলো। বিকাল বেলা শায়লা বেগম চিন্তিত মুখে বাসার বাইরে বেরুচ্ছিলেন হঠাৎ দেখেন বাসার সামনে একটা মেয়ে পড়ে রয়েছে। কাছে এগিয়ে গিয়ে দেখলেন এতো তারই অহনা, তখন তাড়াতাড়ি করে হসপিটালাইজ করেন তাকে। অহনা কে হসপিটালে ভর্তি করিয়ে মেঘা কে ফোন করেছিলেন শায়লা বেগম কিন্তু তাকে ফোনে পান নি, এমনকি আজ দুই দিন ধরে ওর কোনো খোঁজ খবরও পাচ্ছেন না তিনি।যখনই ফোন করেন তখনই শুধু বন্ধ দেখায়, একদিকে অহনার এই অবস্থা আরেক দিকে কলিজার টুকরা টার কোনো খোঁজ খবর নেই, এই চিন্তায় হাই প্রেশার বাড়লো শায়লা বেগমের, শরীর খারাপ করলো খুব। ওনাকে জরুরী ওয়ার্ডে ভর্তি করিয়ে মাহদী মেঘা কে ফোন করলো, এই কয়দিন সে নিজেই মেঘা কে সবার থেকে আলাদা করে রেখেছে। কিন্তু আজকে না আনলেই নয়, খালামনির শরীর খারাপ আর সেখানে মেঘা কে না আনলে ব্যাপার টা ভালো হবে না।
ঘন্টা খানেকের মধ্যে মেঘা লিরা কে নিয়ে হসপিটালে পৌঁছে গেলো। হসপিটালে এসে মেঘা একবার শুধু অহনা কে গিয়ে দেখে এলো, দেখে চেনা যায়না অহনা কে। মুখের অবস্থা বিকৃত হয়ে গেছে অনেক টা,যদিও ব্যান্ডেজ করা তারপরও কেমন লাগছে তাকে দেখতে। যখন মেঘা গেল তখন অহনা ঘুমাচ্ছিল,হাই ডোজের ইনজেকশন দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছে তাই অহনা আর মেঘা কে দেখতে পেল না। অহনা কে দেখে মেঘা গিয়ে খালামনির সাথে দেখা করলো, শায়লা বেগম মেঘা কে দেখে কাঁদতে শুরু করেছেন। সবকিছুই তো শেষ হয়ে গেছে ওনার, একমাত্র মেয়ের এই অবস্থা ওনার আর সহ্য হচ্ছে না। কিছুক্ষণ খালামনির পাশে বসে ওনাকে শান্তনা দিয়ে মেঘা লিরা কে নিয়ে হসপিটাল থেকে বেরিয়ে এলো, ওকে আসতে দিতে চাইছিলেন না শায়লা বেগম কিন্তু আবার আসার প্রতিশ্রুতি দিয়ে মেঘা বেরিয়ে গেল।সে কোনো কিছুতেই মন বসাতে পারছে না আজকাল, তার জীবনে এতো কিছু ঘটে চলেছে প্রতিনিয়ত যে সে তার জীবনের মানে টাই হারিয়ে ফেলেছে।
#চলবে