এই_মন_তোমাকে_দিলাম পর্বঃ১২

0
1697

এই_মন_তোমাকে_দিলাম
পর্বঃ১২
#Arshi_Ayat

পৃথিবীতে সবচেয়ে কষ্টের হলো একতরফা ভালোবাসা।অপরপক্ষ থেকে কোনো সাড়া না এলেও অবাধ্য মন কিছুতেই মানতে চায় না শত উপেক্ষা আর অবহেলা নিয়েও ভালোবেসে যায়।

প্রণয় শার্টের হাতায় চোখের পানি মুছে ক্যান্টিন থেকে বেরিয়ে গেলো।ভালো লাগছে না।পাঁজরটা ভেঙে যাচ্ছে।চোখে পানিরা বাধ মানছে না।প্রণয় গেটের সামনে আসতেই মিনহা ওর সামনে এসে বলল”কি রে যাচ্ছিস কই?ক্লাস করবি না?”

“না রে।ভালো লাগছে না।”

মিনহা প্রণয়ের চেহারার দিকে তাকিয়ে আৎকে উঠে বলল”কি রে কি হইছে তোর?এই অবস্থা কেন তোর?”

“কিছু না।ছাড়।বাসায় যাচ্ছি।”

“নাহ!এভাবে তুই যেতে পারবি না।কি হয়েছে বল।না বললে এক পা ও নড়াতে পারবি না।”

প্রণয় কিছু বলতে যাবে তার আগেই ফারদিন এসে বলল”কি রে তোরা এখানে কি করছিস?”

“দেখ না ওর জানি কি হইছে।কিছু বলছে না।আজকে নাকি ক্লাস করবে না।”

ফারদিন প্রণয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে দেখলো প্রণয় নিচের দিকে তাকিয়ে ঠোঁট কামড়ে ধরে আছে।ফারদিন প্রণয়কে হালকা ঝাঁকিয়ে বলল”কি হইছে তোর প্রণয়?”

“কিছু না।তোরা ক্লাসে যা।আমাকে যেতে দে।”

“ওই মেয়েটা কি কিছু বলেছে তোকে?”মিনহা রেগে বলল।

” চল তো আজকে ওরে যদি দুই চারটা থাপ্পড় না লাগাইছি।”এটা বলে ফারদিন অরুণীর ক্লাসের দিকে হাটা ধরলেই প্রণয় ফারদিনর হাত ধরে ফেললো।তারপর ফারদিনকে জড়িয়ে ধরে বলল”দোস্ত ওর বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে।কি করবো আমি বল!আমার দমবন্ধ হয়ে আসছে।ও আমায় ভালোবাসে নি।”

ফারদিন অনুভব করলো ওর ঘাড়ের ওপর প্রণয়ের দু ফোটা চোখের পানি পড়েছে।সেই সাথে বন্ধুর কষ্টটাও বুঝতে পারছে।বস্তুত আর কেউ জানুক আর না জানুক ওরা জানে তাদের এই বন্ধুটি ওই মেয়েটাকে কতোটা ভালোবাসে।তবু তার সাথেই কেনো এমন হচ্ছে?স্বচ্ছ ভালোবাসা কি সবসময় অপূর্ণ রয়ে যায়?

ফারদিন প্রণয়ের চোখ মুছে দিলো।মিনহা প্রণয়ের হাত ধরে বলল”চল,ওর বাবা মায়ের সাথে কথা বলি।”

“না রে।দরকার নেই।আমি চাই ও সুখে থাকুক।আমাকে তো ও ভালোই বাসে না।আমার সাথে ও সুখে থাকবে না।ও যার সাথে থাকুক ভালো থাকুক।আমি যাচ্ছি।তোরা ক্লাসে যা।”

এটা বলেই প্রণয় ভার্সিটি থেকে বের হয়ে নিজের বাসার দিকে চলে গেলো।
—————–
নাতাশার কল ওয়েটিং দেখাচ্ছে প্রায় একঘন্টা ধরে।এতো কার সাথে কথা বলছে মেয়েটা?আকাশ মনেমনে ভাবলো এবারই শেষ বার এবার না রিসিভ করলে ওর হসপিটালেই চলে যাবে।এটা ভেবে কল দিতেই এবার নাতাশা রিসিভ করলো।নাতাশা রিসিভ করতেই আকাশ রেগে বলল”ওয়েটিং এ কেনো তোমার ফোন?কার সাথে কথা বলছিলে?”

“ভাইয়ার সাথে।আর তুমি এভাবে চিল্লাচ্ছো কেনো?ফোন ওয়েটিং এ থাকা মানে এই না যে আমি অন্য ছেলের সাথে কথা বলছি।” নাতাশাও পাল্টা রেগে জবাব দিলো।

“আচ্ছা সরি।আচ্ছা আজকে ডেট এ যাবা?”

“না আজকে পারবো না।ডিউটি আছে।”

“আমারও তো অফিস ছিলো কিন্তু আমি ছুটি নিয়েছি।তুমিও নাও।”

“সম্ভব না আকাশ।আজকে পারবো না।কালকে হলে পারবো।কাল ছুটি নিও।ওকে বাই পেশেন্ট আসছে।”

এটা বলেই নাতাশা কুট করে ফোনটা কেটে দিলো।নাতাশা ফোন রাখার পর আকাশ মন খারাপ করে বসে রইলো।ইদানীং নাতাশা ওকে প্রচুর ব্যাস্ততা দেখাচ্ছে।কিন্তু আগে এমন হতো না।আকাশ কথা না বলতে চাইলেও নাতাশা জোর করে কথা বলতো।
————————–
প্রিয়ম একটা ফাইল দেখতে দেখতে হঠাৎই রিসাদকে ডাক দিলো।

“রিসাদ”

“জ্বি স্যার।”

“তোমাকে যে কাজগুলো দিয়েছিলাম সেগুলো করেছো?”

“জ্বি স্যার।কিন্তু মেয়েটার কললিস্ট চেক করে সন্দেহজনক কোনো রেকর্ডিং পাই নি।”

“আচ্ছা রিসাদ তোমার কি মনে হয় মেয়েটাকে কে মারতে পারে?”

“আমার তো মাথায় কিছুই ঢুকছে না স্যার।”

“কিন্তু আমার মনে হচ্ছে মেয়েটাকে ওর কাছের কেউ মেরেছে কারণ যখন মেয়েটাকে মারা হয় তখন বাসায় কেউ ছিলো না।আর মেয়েটাও একা ছিলো।কেউ কি করে জানবে যে মেয়েটা বাসায় একা?আর তুমি খেয়াল করেছো কি না জানি না মেয়েটার রুমে যখন ইনভেস্টিগেশনের জন্য গিয়েছিলাম তখন টেবিলে দুটো চায়ের কাপ দেখেছিলাম।যদি অচেনা কেউ হয় তাহলে ও কেনো চা করবে?বুঝতে পারছো?”

“জ্বি স্যার।তাহলে কাপ দুটো ফরেনসিক টেস্ট করতে দিলেই তো হয়।”

“দিয়েছি।কিন্তু একটা কাপে মেয়েটার ফ্রিঙ্গার প্রিন্ট পেলেও অন্য কাপে কারো ফ্রিঙ্গার প্রিন্ট পাওয়া যায় নি।যেই খুনটা করেছে খুব চালাকি করে করেছে।”

“আচ্ছা স্যার আমরা আরেকবার মেয়েটার ঘরটা দেখতে পারি যদি কিছু পাওয়া যায়!”

“হ্যাঁ হাতের কাজটা শেষ করি।তারপর যাবো।”

“জ্বি স্যার।”

রিসাদ গিয়ে নিজের চেয়ারে বসলো আর প্রিয়ম একটা ফাইল ঘাঁটতে শুরু করলো।
———————–
রুহি মাত্রই শাওয়ার নিয়ে বের হলো।চুল মুছতে মুছতে ঘরে এসে আয়নায় সামনে দাড়াতেই নিজের মলিন মুখটা দেখতে পেলো।সারাদিন যতোই স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করুক না কেনো একা হলেই ভেতরটা মুচড়ে উঠে।একাকীত্ব ভেতরটা গ্রাস করে ফেলে।কি অদ্ভুত যন্ত্রণা না বলা যায় আর বা সওয়া যায়!পৃথিবীতে এমন কিছু যন্ত্রণা আছে যেটা বলাও যায় না সওয়া ও যায় না গলার কাছে কাটার মতো বিঁধে থাকে।

রুহি একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে চুল ঝাড়তে লাগলো।হঠাৎ ড্রয়িং রুমে কারো গলার আওয়াজ পেয়ে রুহি বাইরে বের হতেই দেখতে পেলো ওর বড় ফুপু এসেছে।ও ফুপুকে দেখে সালাম দিয়ে ভেতরে চলে যেতে নিলেই ওর ফুপু বলল”কি রে রুহি কি অবস্থা তোর?জামাই নাকি ঘর থেকে বাইর কইরা দিছে।”

ফুপুর কথা শুনে সাথে সাথে রুহির চোখে পানি চলে এলো।রুহি চোখ বন্ধ করতেই একফোঁটা পানি ওর চিবুক বেয়ে নিচে পড়লো।রুহি বাম হাতে নিজের চোখ মুছে ঘরে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলো।রুহি দরজা বন্ধ করতেই রুহির ফুপু রুহির মাকে বলল”কি গো ভাবি এখন মেয়ে রে নিয়া কি করবা?ঘরে রেখে দিবা নাকি?ওই ছেলে কি আর নিবো তোমার মেয়েরে?”

রুহির মা রেগে বলল”কি শুরু করলে মালতী।বাসায় আসছো ভালোমন্দ খাও। আরাম করো।আমার মেয়েরে নিয়া পড়ছো কেনো?আমার মেয়েরা ঘরে রেখে দেই নাকি আবার বিয়ে দেই তা তোমার দেখতে হবে না।ওর বাপ মা মরে নাই।”

রুহির মায়ের কথা শুনে রুহির ফুপু মুখ বাঁকা করে বলল”আমি কি ওর খারাপ চাই নাকি?এমন জোয়ান মেয়ে ঘরে রাখা ঠিক না।আবার বিয়ে দাও আর নাহলে ওর স্বামীরে নিয়ে মিমাংসা করো।”

রুহি মা এ কথার আর কোনো উত্তর না দিয়ে কিচেনে চলে গেলো।আর রুহির ফুপি রুহির বাবার রুমে গেলো ওর বাবার সাথে কথা বলতে।
.
.
কাঁদতে কাঁদতে কখন ঘুমিয়ে গেছে রুহি মনে নেই।ফোনের শব্দে রুহির ঘুম ভেঙেছে।ফোন হাতে নিয়ে দেখলো অরুণী কল দিয়েছে।রুহি ঘড়িতে দেখলো বিকেল পাঁচটা বাজে।ও ফোন রিসিভ করতেই অরুণীর রাগী কন্ঠ ভেসে এলো।

“কি রে, কই তুই?আমার বিয়ের পরের দিন আসবি নাকি?”

“দোস্ত ঘুমিয়ে গেছিলাম।একটু ওয়েট কর আসতেছি।”

“আচ্ছা তাড়াতাড়ি আয়।”

“আচ্ছা।”

রুহি ফোনটা রেখেই ফ্রেশ হয়ে নীল রঙের শাড়ি পড়লো।শাড়ির সাথে ম্যাচিং করে হিজাব পরে।ঘরের বাইরে আসতেই দেখলো ওর ফুপু আর মা একসাথে বসে টিভি দেখছে।রুহি মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল”মা অরুণীর বাসায় যাচ্ছি।আজ ওকে দেখতে আসবে।ও যেতে বলেছে।”

“আচ্ছা যা তাড়াতাড়ি আসবি।”

“আচ্ছা।”

এটা বলে একটু এগোতেই রুহির ফুপি বলল”এমন আধ সন্ধ্যায় কোনো মেয়ে বাসা থেকে বের হয় না।আর যেগুলো বের হয় সেগুলোই ধর্ষণ হয়।রুহি তুই ঘরে যা বের হওয়া লাগবে না।বান্ধবীরে তো দেখতে আসতেছে।বিয়ে তো আর হচ্ছে না।ঘরে যা তুই।”

রুহি মা কিছু বলার আগেই রুহি বলল”ফুপু,বাসায় আসছেন ভালো কথা।ভালো ভাবে থাকেন তবে খবরদার আমার বিষয়ে একদম খবরদারি করবেন না।যেখানে আমার বাবা মায়ের সমস্যা নেই সেখানে আমি আপনাকে গুণিও না।”

এটা বলেই রুহি বেরিয়ে গেলো।আর রুহির ফুপি বলল’তোর মতো মেয়ের কপালে এইজন্যই সুখ নাই।এইজন্যই তোর নাগর তোরে ঘর থেকে বাইর কইরা দেয়।”

পায়েল চৌধুরী আর রাহাত চৌধুরী প্রিয়মের ওপর রেগে আছে ও নাকি আসতে পারবে না।তাদেরকে যেতে বলেছে।পছন্দ হলে কথা পাকাপাকিও করতে বলেছে।
——————-
ছেলে পক্ষ সামনেই বসে আছে।তবে ছেলে আসে নি।কি একটা কাজ নাকি পড়েছে তাই।ছেলের বাবা মায়ের পছন্দ হলে আজকেই আংটি পরিয়ে যাবে।অনেক্ক্ষণ কথাবার্তা বলে অরুণীকে ছেলের মা আংটি পরিয়ে দিতেই সবাই আলহামদুলিল্লাহ বলে উঠলো।

চলবে….

(ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।পরবর্তী পর্ব কাল রাত ৯.০০ টায় পাবেন)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here