#এই_শহরের_পাখিগুলো_ডানা_মেলে_উড়তে_জানেনা
#পর্ব-০২,০৩
#লেখিকাঃতামান্না
#দ্বিতীয় পর্ব [ বোনাস পর্ব]
মেহরিন দৌড়ে তার রুমে চলেগেল। ঠাস করে দরজাটা বন্ধ করে দিলো। অসহ্য লাগছে তার, মনে হচ্ছে বিষ! বিষ খেয়ে নিজেকে শেষ করে দেয়, আরেকবার মনে হয় শরীর টাকে আগুনে ঝলসে পুড়িয়ে দিলে মনে হয় জ্বালাটা কিছুটা কমতো। কেন এত কষ্ট? স্বামীর সঙ্গে পরনারী দেখায় কেন এত কষ্ট? এত কষ্ট করে নিজের স্বপ্ন দিয়ে গড়া সংসার অন্য আরেকজন কেড়ে নিচ্ছে। সেখানে তো সে জোড় গলায় অনেক কথাই শুনিয়ে এলো। কিন্তু কিভাবে সে এসব সহ্য করবে?কিভাবে সে সহ্য করবে?মাথা যেন তার চরম ভাবে খারাপ হয়েগেছে। হাতের কাছে কিছু খুজতে খুজতে নজর পরলো টেবিলে রাখা ছুরি!..
বাহির থেকে দরজা যেন একদম ভেঙ্গে ফেলবে।মার সাথে তাল মিলিয়ে ভাই, বাবা, ভাবী ও যেন ডেকে সারা হয়েগেলেন। আচ্ছা এরা এমন করছে কেন? শান্তিতে কি মরতেও দিবে না এরা? ছুরিটা হাতে নিয়ে দেখলো খুব ধারালো, এই ছুরির একটা দাগ টেনে দিলে হাতের শিরা উপশিরা থেকে রক্ত গুলো টগবগিয়ে পরবে হয়তো, মেহরিন ছুড়িটা নিয়ে চোখ বন্ধ করে একটা টান দিয়ে দিল। সঙ্গে সঙ্গে গলগলিয়ে তাজা রক্ত গুলো বেরিয়ে পরলো। মুখে তার অজস্র যন্ত্রণাময় হাসি।হৃদয়ে তার শত ক্ষতবিক্ষত গ্লানি। আচ্ছা মেয়েরা বুঝি এমনি হয়?জীবনের সবকিছু সহ্য করলেও স্বামীর প্রতরণা সহ্য করা যায় না। এই যন্ত্রণা বিষের থেকেও বেশি বিষক্রিয়ায় শরীরে ছড়িয়ে পরে।এই যন্ত্রণার থেকেও তার কাছে এখন সন্তান হারানো কষ্টটাই বেশি। হাজার হোক সে তো মা! দুটো শিশু যেন তাকে কাছে ডাকছে। তাকে মা বলে ডেকে তার পাশে বসে আছে।
মেহরিন তার সবকষ্ট সব স্মৃতি যেন চোখের সামনে পুনরাবৃত্তি দেখছে। স্মৃতিগুলো ও না যেন সময় বুঝেই
আসে চোখ বেয়ে প্রচন্ড আক্রোশে পানি পরে যাচ্ছে।
রক্ত গুলোর দিকে নজর পরতেই শরীর শিরশির করে উঠলো তার, দাড়ানো অবস্থায় দপ করে পরে গেল সে।
বাহির থেকে মেহরিনের বড় ভাই চেচামেচি শুরু করে দিয়েছেন। মেহরিনকে অনেকবার ডেকেও যখন কিছুই করতে পারেননি তখন দরজা ভেঙ্গে রুমের ভিতর ঢুকে পরলেন। হুড়মুড়িয়ে রুমের ভিতর ঢুকে পরলো সবাই।
মেয়েকে নিথর ভাবে পরে থাকতে দেখে মেহরিনের মা চিৎকার করে উঠলেন। বড় আদরের মেয়ে তার, দুই ছেলের পর এই ছোট মেয়েই আদরের চোখের মণি। সেই মেয়েকে এভাবে নিথর হয়ে পরে থাকতে দেখে তার যেন আত্মা কেপে উঠলো। মেহরিনের বাবা মেয়ের কাছে গিয়ে বসে পরলেন। স্তব্ধ হয়েগেল সবাই, এটা কি হলো! হাসিখুশি মেয়েটা এমন একটা কান্ড ঘটিয়য়ে ফেলবে কেউ ভাবতেই পারেনি।
মেহরিনকে স্ট্রেচারে করে এম্বুল্যান্সে ঢুকানো হচ্ছে। অজ্ঞান মেহরিনের হয়তো জানা নেই তার আশেপাশে কি হচ্ছে! কিন্তু পরিবারের সব সদ্যসের তো ঠিকই মাথা খারাপ হয়েগেছে। প্রত্যেকের চোখে পানি, সবাই যেন একটা ঘোরের মধ্যে আছে। হসপিটালে আনার পর এটেম্প টু সুসাইড কেসের জন্য ডাক্তাররা নিতে না চাইলেও, মেহরিনের চাচাতো ভাই ওসি, তার সুপারিশের জন্য ডাক্তাররা বাধ্য হলো।
_________________________________________
কেবিনে শুয়ে আছে মেহরিন খুব শান্তিতে ঘুমিয়ে আছে।
বাহিরে হট্টগোল চলছে মেহরিনকে নিয়ে, তার শশুর বাড়ির একাংশ চলে এসেছে। মেহরিনের স্বামী আকাশ এখনো আসেনি। মেহরিনের শাশুড়ি কেবিনের বাইরে কেদেকেটেঁ একাকার করে ফেলছেন। তিনি যে করেই হোক এই বউকে নিয়ে যাবেন।আকাশের কুকির্তী জানলেও তিনি মেহরিনের পরিবারের সামনে বললেন তিনি কিছুই জানেন না। কেন কি হয়েছে সব এরিয়ে গেছেন তিনি। মেহরিনের বাবা- মা তাকে প্রশ্ন করেও কোন উত্তর যখন পাননি তখন বুঝলেন মেহরিনের স্বামীই কিছু করেছে। মেহরিনকে হাতছাড়া করা যাবেনা। মেহরিনই তার সংসারটাকে চালিয়েছে, তার কুলাঙ্গার ছেলে তো বাহিরে ঘুরে ঘুরে সব শেষ করে দিয়েছে।ছেলেকে তাই কাল রাতে ইচ্ছে মত শাসিয়ে এসেছেন।
এদিকে… আকাশ পরেগেছে মহা চিন্তায়, একদিকে তার সম্পত্তি আরেকদিকে শীলা! শীলাকে পেলে সম্পত্তি পাবে না,আবার সম্পত্তি পেলে শীলাকে পাবেনা।মা তাকে রাতে বলে দিয়েছে সে যদি মেহরিনকে হাতছাড়া করে শীলাকে ঘরে তুলে তাহলে তার সবকিছু তার ছোটমেয়ের নামে উইল করে দিবে।এটা কোনকালেও সে হতে দিবে না। বাধ্য হয়ে সবকিছু মাটিচাপা দিয়ে মেহরিনকে বেছে নিতে হবে তাকে। যতকিছুই হোক শীলাকে সে ছাড়বে না।মায়ের কথা ভেবে নাহয় মেহরিনকে আবার ঘরে তুলবে।সুযোগ বুঝে সব হাসিল করে সময়মতো সব ছেড়ে দিবে।
_________________________________________________
কিছুক্ষণ আগেই আকাশ এসেছে। আকাশের মা জোড় করে পাঠিয়েছে মেহরিনের কাছে।
আকাশ দাড়িয়ে আছে সিটের পাশে আর মেহরিন চেয়ে আছে ছাদের দিকে।
আকাশ- “মেহরিন আমি যা করেছি ভুল করেছি। আমাকে ক্ষমা করা যায় না?”
মেহরিন তার দিকে এবার তাকালো। আকাশ যেন এটারই অপেক্ষা করছিলো। মেহরিনকে যদি একটু গলানো যায় একটু থামানো যায়। মেহরিনের চোখে অশ্রু অসহায়ের মত চেয়ে আছে সে আকাশের দিকে।আকাশের মনে হলো মেহরিন তাকে ক্ষমা করে দিবে।আকাশ আরেকটু পাশে বসে মেহরিনের হাতজোড়া নিজের হাতের ভাজে নিয়ে নিলো। মেহরিন কেমন করে উঠলো, নড়েচড়ে হাত সরিয়ে দিতে চাইলো।আকাশ আরো জোর করে চেপে ধরতেই। মেহরিন অসুস্থ শরীর নিয়ে উঠতে চাইলো। উঠতে খুব কষ্ট হচ্ছে তার, শরীর টা প্রচন্ড ম্যাজম্যাজ করছে। মাথা ঘুরে উঠছে, তবুও সবকিছু তোয়াক্কা না করে অনেক কষ্ট করে উঠে বসল।
আকাশ – আরে কি করছো, অসুস্থ শরীর, এমন করো না!
মেহরিন তার দিকে চেয়ে মুখ ফিরিয়ে নিলো।
আকাশ আবার কাছে এসে হাত ধরতে চাইলে মেহরিন কিছু খুজতে লাগল। খুজতে খুজতে নজর পরলো বেড সাইড টেবিলের উপর বেন্ডেজ আর বেন্ডেজ সিজার।কোন কিছু না ভেবে বেড সাইড টেবিলে থাকা বেন্ডেজ সিজার টা হাতের কাছে পেয়ে আকাশের গলায় আঘাত করতে চাইলো। আকাশ সরে যেতেই আকাশের হাতে আঘাত করলো।
আকাশের হাত থেকে রক্ত পরছে। তা দেখে মেহরিন অট্টহাসিতে মেতে উঠলো। চিৎকার করে বলল-
“আমার সন্তানকে মেরেছিস তুই! খুনি তুই! তোকে খুন করবো নইলে আমি আমার নিজেকে শেষ করবো।”
আকাশ ডেকে উঠলো সবাইকে। খুব ভয় পেয়েছে সে, হাত-পা কাপছে তার কেচিঁটা সামান্য হাতে লাগাতে যেভাবে কেটে রক্ত পরছে। গলায় লাগলে তো সর্বনাশ হয়েযেত। মেহরিন গলায় কেচিঁ বসানোর আগেই সে হাত দিয়ে ধরে ফেলেছে।ডাক্তার এসে দেখলেন, মেহরিন আকাশকে আঘাত করতে চাইছে। আকাশকে না পেরে তারপর মেহরিন নিজের শরীরে আচড় কাটতে লাগল। নার্সরা কেউ ধরে রাখতে পারছে না। অবশেষে ডাক্তার গিয়ে একটা ঘুমের ইন্জেকশন দিয়ে দিলো মেহরিনকে।মেহরিন কিছুক্ষণ ধস্তাধস্তির পর নিস্তেজ হয়ে বেডে শুয়ে পরল।কিছুক্ষণ আগের রুদ্রময়ী মেহরিন ইন্জেকশনের কারনে শান্ত হয়েগেল। মেহরিনের মা এসব দেখে কান্না করতে লাগলেন। ভালো শান্ত শিষ্ট মেয়েটাও তার কেমন অদ্ভুত আচরণ করছে।
___________________________________________
মেহরিনের বাবা আর ভাইকে ডেকে নিয়ে গেলেন ডাক্তার তার কেবিনে।
ডাক্তার ইভা- “আন্কেল আমার মনে হয় আপনাদের কিছু কথা জানানো উচিৎ । এই মুহূর্তে অবশ্য আপনারা তা সহ্য করতে পারবেন বলে মনে হয়না। তবুও আমাকে বলতে হবে।”
মেহরিনের বাবা-” কি কথা? ”
ডাক্তার ইভা – “আসলে আন্কেল মেহরিন মানসিক ভাবে অনেক আঘাত পেয়েছে। অনেক টর্চার ওকে করা হয়েছে। আর আমি যতটুকু বুঝলাম মেহরিন প্রেগন্যান্ট ছিল। একবার নয় পরপর দুবার। একটা সন্তান সম্ভাবা নারীর থেকে যদি তার সন্তানকে অকালে শেষ করে দেওয়া হয় তাহলে তার কি হবে বুঝতে পারছেন?”
মেহরিনের বাবা আর ভাই যেন আকাশ থেকে পরলেন। মেহরিনের সঙ্গে এতকিছু ঘটে গেল।
ডাক্তার ইভা- “আন্কেল মেহরিনের কন্ডিশন এখন অনেক খারাপ। ও এখন পুরোপুরি মানসিক ভাবে আঘাত পেয়েছে। ওর অবস্থা এমন যে যেকোন সময় ও কিছু ঘটিয়ে ফেলতে পারে। মেহরিন নিজেকে নিজে শেষ করতে দুবার ও ভাববে না। ”
মেহরিনের বাবা – কি হয়েছে ওর?
ডাক্তার ইভা- “আন্কেল আপনি বুঝতে পারছেন না?
ওর মস্তিষ্কে এই ঘটনার এতই প্রভাব পরেছে যে এখন ও মানসিক রুগী হয়েগেছে। ওকে একজন ভালো সাইক্রিয়াক্টিকের কাছে কাউন্সিলিং করান আপনারা।
ইমেডিয়েটলি যা করার করুন। এভাবে যদি চলতে থাকে তাহলে আপনারা মেহরিনকে কোনভাবেই সুস্থ করতে পারবেন না। ও এমনিতেই দূর্বল, দুবার অপারেশন, অফিসের কাজের চাপ! সাংসারিক চাপ, তারপর আবার স্বামীর দিনের পর দিন অত্যাচার মেয়েটাকে ভিতরে ভিতরে শেষ করে দিয়েছে।”
মেহরিনের ভাইয়ের বুকের উপর দিয়ে যেন বিরাট বড় রকমের পাথর কেউ চাপিয়ে দিয়েছে। কি ভাবে এত কিছু হয়েগেল মেয়েটার সাথে। এত অমানুষ ও আজকাল আছে?
চলবে।
#এই_শহরের_পাখিগুলো_ডানা_মেলে_উড়তে_জানেনা
#লেখিকাঃতামান্না
#তৃতীয় পর্ব
ডাক্তার ইভা- “আন্কেল আপনি বুঝতে পারছেন না?
ওর মস্তিষ্কে এই ঘটনার এতই প্রভাব পরেছে যে এখন ও মানসিক রুগী হয়েগেছে। ওকে একজন ভালো সাইকোলজিস্টের কাছে কাউন্সিলিং করান আপনারা,
ইমেডিয়েটলি যা করার করুন। এভাবে যদি চলতে থাকে তাহলে আপনারা মেহরিনকে কোনভাবেই সুস্থ করতে পারবেন না। ও এমনিতেই দূর্বল, দুবার অপারেশন, অফিসের কাজের চাপ! সাংসারিক চাপ, তারপর আবার স্বামীর দিনের পর দিন অত্যাচার মেয়েটাকে ভিতরে ভিতরে শেষ করে দিয়েছে।”
মেহরিনের ভাইয়ের বুকের উপর দিয়ে যেন বিরাট বড় রকমের পাথর কেউ চাপিয়ে দিয়েছে। কি ভাবে এত কিছু হয়েগেল মেয়েটার সাথে। এত অমানুষ ও আজকাল আছে?
মেহরিনের বাবা স্তব্ধ! মেয়েটার বিয়ের সময় কত আশা করে দিয়েছিলেন। মেহরিন চেয়েছিল অন্তত বিসিএস টা দিয়ে ভালো কিছুতে চান্স পাওয়ার পর কোথাও কিছু করতে। তারপর বিয়ের কথা না হয় পরে ভাবলে হতো।কিন্তু এতে অনেকটা বেকেঁ বসলেন তিনি, বিয়ের পর যা করার করো মাস্টার্স তো শেষ! ভালো ব্যাংকে চাকরি করছে তাহলে আর সমস্যা কি? বিয়ের পর না হয় পড়াশুনায় মন দিবে!সেখানেই তো তিনি চরম রকমের বোকামি করে ফেললেন! মেয়েটার স্বপ্নভঙ্গ করে দিলেন, আজ নিজের কাছেই যেন বড় অপরাধি হয়েগেলেন তিনি।
ডাক্তার ইভা-” আন্কেল আমি কি বলছি তা শুনতে পারছেন?”ডাক্তার ইভার কথায় ভাবনার রাজ্য থেকে বেরিয়ে এলেন তিনি। চোখে তার অশ্রু! চোখ মুছে, ইভার দিকে তাকালেন। ভাঙ্গা গলায় বলে উঠলেন –
“বলো মা কি করতে হবে আমাকে? আমার মেয়ের জন্য আমি সব করতে রাজি! তোমরা শুধু বল মেয়েটা আমার আবার সুস্থ স্বাভাবিক জীবনে ফিরবে তো?”
ডাক্তার ইভা-” জ্বী ফিরবে, ওর সমস্যাটা তেমন বেশি সিরিয়াস ও নয় আবার হেলাফেলা ও করা যাবে না।তাই বলছি ভালো কোন সাইকোলজিস্টের মাধ্যমে সমস্যা টা সমাধান করুন।”
মেহরিনের বাবা আর ভাই উঠে দাড়ালেন। দাড়াতে ও খুব কষ্ট হচ্ছে তার। ডাক্তারের চেম্বার থেকে বেরিয়ে মেহরিনের কেবিনের সামনে এলেন। মেহরিনের মা মেয়ের জন্য বসে আছেন সিটে। কখন কি হয়, মেহরিন ঘুম থেকে জেগে আবার কোন কান্ড গঠায় তার জন্যই ভিশন চিন্তায় ছিলেন তিনি।
কেটেগেল দুটো দিন, হাসপাতালের কেবিনে থাকতে থাকতে মেহরিন বিরক্তবোধ করছে অনেকটা। একটু
পরপর নার্স ও আয়াদের দেখলেই বলছে –
“আমি বাড়ি যাবো! আমার না দুটো বাবু আছে!
তোমরা দিবে আমাকে যেতে?”
ডাক্তার আর নার্সগুলো তখন কোন জবাব দিতে পারেনা। মেহরিনকে শান্ত করে বেরিয়ে যায় তারা। কি জবাব দিবে তারা? দুটো বাচ্চা, বাবু, এটা সেটা বলে যেই মেয়েটা পাগলামি করছে সে নিজেও হয়তো ভুলে গেছে।
বাচ্চাদুটোর একটি ও এই পৃথিবীর বাসিন্দা নয় এখন!
অনর্থক মিথ্যে আশ্বাস দিয়েও তো লাভ নেই।
হাসপাতালে যখন কোন বাচ্চার চিৎকার সে শুনতো।
অনেকটা হুড়মুড়িয়ে বিছানা ছেড়ে উঠার চেষ্টা করতো।
কখনো বা বলতো – “আমার বাবুটার কাছে নিয়ে যাবা?
বাবুটা কাদছে! মাথার চুলগুলো সব যেন ছিড়ে ফেলবে সে।”
তাই ডাক্তার ইভার কথামতো তাকে বাসায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
_______________________________________
আকাশ সেদিনের পর আর আসেনি। তারমতে এখনই সুযোগ বুঝে মাকে গলানোর। এখন তো মেহরিন ও অসুস্থ, মেহরিন আর সুস্থ হবে বলে মনে হচ্ছে না। আর মাকে বুঝিয়ে বললে মা হয়তো মেহরিনকে আর এই বাড়িতে রাখতে চাইবে না। তাই সে ভেবেনিলো যেভাবেই হোক সে মাকে রাজি করিয়ে ফেলবে।এখন শুধু ডিভোর্স পেপারটা রেডি করার বাকি!মেহরিনের বাবা তাকে কাল কল করে জানিয়ে দিয়েছেন খুব শিঘ্রই ডিভোর্সের ব্যবস্থা করবেন তিনি। মেয়েকে আর শেষ হতে দেখতে পারবেন না। যে ভুল তিনি করেছেন সেই ভুল তিনি সংশোধন করে ফেলবেন।
আকাশ এ নিয়ে কিছুই বলেনি, মেহরিনের বাবা নিজ থেকে ডিভোর্স করাবেন এতে তার ঝামেলা কমলো।মেয়েতো পাগল তাকে দিয়ে আর কি লাভ হবে! চুলোয় যাক সব!
বেলকনিতে দাড়িয়ে আছে মেহরিন। চোখ তার পাশের বিল্ডিং এ দাড়ানো একটি মেয়ে আর তার কোলে থাকা বাচ্চাটির দিকে। এক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে সে।অনেকক্ষণ ধরে বাচ্চাটি চিৎকার করে কেদেঁ চলেছে।মেহরিন বেলকনি থেকে বাচ্চাটিকে কোলে নিয়ে দাড়িয়ে থাকা মেয়েটিকে হাতের ইশারায় ডাকছে। মেয়েটি তাকে যেন একদমই দেখছে না। মেহরিন এবার ডেকে উঠলো সেই মেয়েটিকে –
“এই শুনছো! এই মেয়ে! শুনো না ওকে একটু দিবে আমার কাছে? দাও না,
– মেয়েটি শুনার জন্য আরেকটু কাছে এসে দাড়িয়ে পরলো। আর বলল -” কি কন আফা শুনি! ”
” আরে বলছি ওকে একটু নিয়ে আসো না!.”
– “আমি পারুম না, ভাইজান আমারে বকবো! ”
মাথা চুলকে মেহরিন হেসে বলে উঠলো- “তোমার ভাইজানকে আমি মেরে দিবো!”
মেয়েটি এই কথা শুনে হেসে, আরেকটু কাছে এসে বললো – “ভাইজানের মেলা রাগ বুঝছেন, এই বাবুটার ও মেলা রাগ! হের মত হইছে! আমি পারুম না নিতে। আমনে আইয়া নেন ” বলেই মেয়েটি ভিতরে চলেগেল।
মেহরিন মেয়েটির চলে যাওয়া দেখতে লাগল। মেয়েটিকে অনেকবার ডাকলো। কিন্তু মেয়েটি একবার ও তার দিকে ফিরলো না। কিছু একটা মনে পড়তেই মেহরিন বেলকনি ছেড়ে দৌড়ে মেইন দরজা দিয়ে বেড়িয়ে গেলো। বিকেলের এই সময়টা সবাই ঘুমেই থাকে। তাই কেউ নজর দিতে পারেনি। মেহরিন নিচে গেইট খুলে দেখলো তার ভাই দাড়িয়ে আছে।
মাহিন- “মেহরিন তুই এখানে? তোর শরীর তো খারাপ, কোথায় যাচ্ছিস তুই?”
মেহরিন-” বাবুটাকে নিয়ে আসতে, ঐ বাবুটা কাদছে ভাইয়া!”
মাহিন বুঝলো মেহরিন বাচ্চা দেখে আবার পাগলামি করবে। তাই মাহিন তার হাত ধরে বললো-
মাহিন-“বাবুকে এখন দেখতে যাওয়া যাবে না।
-” না,আমি যাবো! দেখিসনি ও কিভাবে কাদছে?
মাহিন- “সম্ভব নয় তুই চল আমার সাথে। ”
মেহরিনকে জোড় করে ঘরে এনে বসিয়ে দিলেন। আর সবাইকে ডেকে বলেদিলেন মেহরিনের বাইরে বের হওয়ার কথা।
মাহিন মেইন দরজা বন্ধ করে দিয়েছে। মেহরিনের রুমে ভিতর যত ধরনের কেচিঁ,ছুরি, আঘাত করার মত সব জিনিস বের করে মেহরিনকে রুমে ঢুকিয়ে দিয়েছে।
মেহরিন চিৎকার করে কাদছে আর বলছে -” তোমরা আমাকে বাধা দিও না! আমাকে যেতে দাও, ও আমার সন্তান! ও আমার, ও কাদছে! ”
মাহিন- “ও তোর বাচ্চা না!”
মেহরিন রুমের সবকিছু ছুড়ে ফেলে দিচ্ছে,-” আমি মানি না! ওকে তোমরা নিয়ে আসো।” মেহরিন সারাটাদিন কেদেছে, একটু ও থামেনি।
মাহিন রাতের বেলায় মেহরিনের রুমের দরজা খুলে ঢুকে দেখলো মেহরিন ফ্লোরে পরে আছে। মেহরিনের পাশে বসে ডাকতে লাগলো মাহিন।
মেহরিনের ভিজে যাওয়া চোখ দুটো দেখে মাহিনের বুক কেমন কেপেঁ উঠলো। মেহরিন ভাইকে দেখে আবার ডুকরে কেদেঁ উঠলো।
” কাদতে কাদতে ক্লান্ত মেহরিন মাহিনের পা চেপে ধরলো।
চেপে ধরে বলতে লাগল –
” আমার বাবুটাকে এনে দেয় না ভাই!”
” আমার কলিজাটাকে এনে দেয়!”
বিড়বিড় করে কিসব বলতে বলতে মাহিনের পায়ের কাছেই পরে গেল সে। মাহিন ও আজ যেন পুরোপুরি নির্বাক। মেহরিনকে বুকে জড়িয়ে ধরলো সে।
চলবে।