#এই_শহরের_পাখিগুলো_ডানা_মেলে_উড়তে_জানেনা
#পর্ব:০৪,০৫
#লেখিকাঃতামান্না
#চতুর্থ পর্ব
মেহরিন চিৎকার করে কাদছে আর বলছে -” তোমরা আমাকে বাধা দিও না! আমাকে যেতে দাও, ও আমার সন্তান! ও আমার, ও কাদছে! ”
মাহিন- “ও তোর বাচ্চা না!”
মেহরিন রুমের সবকিছু ছুড়ে ফেলে দিচ্ছে,-” আমি মানি না! ওকে তোমরা নিয়ে আসো।”
মেহরিন সারাটাদিন কেদেছে, একটু ও থামেনি।
মাহিন রাতের বেলায় মেহরিনের রুমের দরজা খুলে ঢুকে দেখলো মেহরিন ফ্লোরে পরে আছে। মেহরিনের পাশে বসে ডাকতে লাগলো মাহিন।মেহরিনের ভিজে যাওয়া চোখ দুটো দেখে মাহিনের বুক কেমন কেপেঁ উঠলো। মেহরিন ভাইকে দেখে আবার ডুকরে কেদেঁ উঠলো।
” কাদতে কাদতে ক্লান্ত মেহরিন মাহিনের পা চেপে ধরলো। চেপে ধরে বলতে লাগল –
” আমার বাবুটাকে এনে দেয় না ভাই!”
” আমার কলিজাটাকে এনে দেয়!”
বিড়বিড় করে কিসব বলতে বলতে মাহিনের পায়ের কাছেই পরে গেল সে। মাহিন ও আজ যেন পুরোপুরি নির্বাক। মেহরিনকে বুকে জড়িয়ে ধরলো সে। মেহরিন ভাইয়ের পা জড়িয়ে বসে আছে। আর মাহিন তার মাথা বুকে জড়িয়ে আছে। দরজার পাশেই দাড়িয়ে আছে মাহিনের বছর পাচেঁক বয়সের মেয়ে মৃদুলা। ফুফুকে দেখে সে যেন ভয় পেয়েছে, সামনে আসতে চাইছে না।
গতকাল তার মা তাকে বলে দিয়েছে ফুফু অসুস্থ তাকে যেন বিরক্ত না করা হয়। সেই কথা ভেবেই দূরে দূরে রয়েছে সে। মৃদুলা রুমে ডুকে পরলো, বাবার সামনে দাড়াতেই মাহিন কাছে ডেকে তাকে পাশে বসিয়ে দিলো।
মাহিন- মেহরিন!
মেহরিন- হুম,
মাহিন- ও তোর মেয়ে, এই তোর মেয়ে! মৃদুলা মা ফুফির কাছে যাও! মৃদুলা একটু ভয়ে ভয়ে মেহরিনের পাশে দাড়ালো। মেহরিন ওকে কাছে পেয়ে ঝাপটে জড়িয়ে ধরলো কিছুক্ষণ। পরম মমতায় মৃদুলাকে আদর করতে লাগল। কপালে চুমু খেয়ে বুকে জড়িয়ে রইল। সে এখন অন্য ঘোরে রয়েছে যখন যা মনে আসে তা করে বেড়াচ্ছে। কোথায় কি হচ্ছে তা যেন তার মাথায় ডুকছে না। নরম তুলতুলে হাত দুটো ধরে বসে আছে যেন কেউ তার কাছ থেকে কেড়ে নিবে।
______________________________________
সারা ঘরে যেন একদম হট্টগোল শুরু হয়েগেছে। কিছুক্ষণ আগেই বাড়িতে পা দিয়েছে শাফায়েত। নানার বাড়ি সচরাচর তেমন একটা ঘুরতে আসে না শাফায়েত। বড় কেন ছোটবেলায় শাফায়েত কোথাও সহজে ঘুরতে যেত না। কারন হইহুল্লড় নাকি তার কাছে বিরক্তিকর। নানুমা অসুস্থ বিধায় এসেছে। তাও মায়ের অনুরোধের জেড়ে এসেছে । মা আর তার মেয়ে শিমুকে রাখার জন্য ময়নাকে পাঠিয়ে দিয়েছে আগেই । শিমু খুবই ছোট প্রায় এক হবে বাচ্চা মেয়েটার বয়স । এতটুকু মেয়েকে ছেড়ে থাকতে তার ভালো লাগেনা। তাই অফিস দেরী করে এসে রাতে এখানে থাকার প্রস্তুতি নিয়েছে।
শিমু সারাটাদিন চিৎকার করে কাদলেও বাবাকে পেয়ে যেন একদম চুপ হয়েগেছে। এতটুকু মেয়ে কিভাবে যে এতকিছু বুঝে শেয়ানা হয়েগেছে সে। শাফায়েত মেয়েকে কোলে করে নিয়ে রুমের এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্তে হাটতে লাগল। পিঠ চাপড়াতে চাপড়াতে আর আদর দিতে দিতে মেয়েটিকে ঘুম পারিয়ে দিল। মাঝে মাঝে শিমুর ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকালে তার প্রক্তন স্ত্রীর কথা মনে পরে কতটা মিল মা আর মেয়ের! হয়তো মায়ের সত্বাগুলো মেয়ে তার মধ্যে আপন করে ধারণ করেছে।
ঘুমোলে শিমুর মা ও শিমুর মত দুচোখের উপর হাত রেখে ঘুমাতো। কারন তার চোখে আলো লাগলে নাকি ঘুম হয় না, ঘুমতে কষ্ট হয়। শিমুর কপালে আরেকটা চুমু দিয়ে সে ও পাশে শুয়ে পরলো। মেয়েকে বুকে টেনে পাড়ি দিলো ঘুমের দেশে।
____________________________________
রুমের এককোণে পরে আছে মেহরিন। কারো সাথে সে কথা বলে না। চুপচাপ এক কোণে বসে থাকে, ইচ্ছে হলে দু একটা কথা বলে, তবে তা একদমই খাপছাড়া! যা বলে বেশির ভাগই আবোলতাবোল, মৃদুলাকে পেলে তাকে ছাড়তে চায় না। এ নিয়ে কেউ কিছু বলে ও না।
ও তো আর কোন ক্ষতি করছে না। ও মাতৃত্বের স্বাদটুকু মৃদুলাকে কাছে টেনে আদর করে পায়। এইটুকুতে যদি সে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে পায় সমস্যা কি?
অফিস থেকে ফোন আসলে মেহরিনের বাবা তাদের জানিয়ে দে মেহরিন অসুস্থ, সুস্থ হলে সে চাকরিতে জয়েন দিবে। অফিস কর্তিপক্ষ অবশ্য এ নিয়ে কোন মতামত দেননি , তবে বেশীদিনের ছুটিও দেয়া সম্ভব যে নয় তা তারা জানিয়ে দিয়েছেন।
______________________________________
নিয়ম করে সময় মত আবারো যেন কেদেঁ উঠেছে শিমু। শিমুর কান্না থামাতে ময়না ছাদের ধারে এসে দাড়িয়েছে।
মেহরিন ময়নাকে দেখে ডাকদিল। ময়না মেহরিনের সামনে এসে দাড়িয়ে বলল-
” আফা কেমন আছেন?” শরীল ডা ভালো নি?”
– “খুব ভালো, ভালো আছি!” তোমার বাবুটা কি বেশী কাদেঁ?”
– “হ আফা, কান্দে বেশী!” জ্বালায় বেশী!”
– “আমার কাছে দেও, দেখবে আর কাদবে না!”
– ‘ভাইজান হের মাইয়ারে কারোর কাছে দিতে মানা করছে!” ময়নার কথার মধ্যেই শাফায়েতের মা ছাদে প্রবেশ করলেন।
শাফায়তের মা সুলতানা বেগম-” এই ময়না কার সাথে কথা বলছিস? আর ওকে নিয়ে ছাদে এত ঘোরাফেরা করার কি দরকার? ঘুমিয়ে গেলে রুমে নিয়ে খাটে শুইয়ে দিস যা।
ময়না -” ঐ যে আফার লগে!” সুলতানা বেগম ময়নার দৃষ্টি অনুসরণ করে দেখলেন মেহরিন দাড়িয়ে আছে।
শুকনো মুখ, সেই মুখে লেগে আছে হাসি।
“আরে মেহরিন যে! কি খবর তোমার?”
ময়না- “খালা হের কিন্তু মনে হয় তারছিড়া আছে!”
সুলতানাবেগম – হোয়াট রাবিশ! ময়না তোমাকে না কত করে বলেছি কথাবার্তার পরিবর্তন কিছু করো। এভাবে সরাসরি একজন মানুষের সামনে আজেবাজে কথা বলবে না। না বুঝলে চুপ করে থাকবে। তুমি ওর সমন্ধে এভাবে বলছো, তুমি কি জানো ও কেমন? যাও বাসায় যাও!”
ময়না- “ভয় পেয়ে দৌড়ে বাসায় চলেগেল।”
সুলতানা বেগম মেহরিনের কাছে এসে দাড়িয়ে বললেন – ” ওর কথায় কিছু মনে করো না মেহরিন!”
খুব ছোট ও শাফায়েতের মেয়ে হয়েছে। মা নেই মেয়েটার!” এত ছোট্ট মেয়েকে কে দেখবে! আমি এখনো চাকরি ছাড়িনি। তুমি তো জানো আমি কাজ পাগল মানুষ! কাজ ছাড়া আমার চলেই না। বলেই হেসে দিলেন তিনি। বিকালে তোমাদের বাসায় আসবো অনেক কথা জমে আছে ঠিক আছে।”
মেহরিন কি বুঝলো কে জানে মাথা নাড়িয়ে চলেগেল ভিতরে।
______________________________________
সুলতানা বেগম নাতনিকে নিয়ে এসেছেন মেহরিনদের বাসায়। নিজের গল্প আর সুখ দুখের কথা বলতে এসে যেন নিজেই স্তব্ধ হয়েগেলেন। তার পাশেই শিমুর হাত ধরে বসে আছে মেহরিন। মেহরিন শিমুর হাতদুটো নেড়েচেড়ে সুলতানা বেগমের কোলে থাকা অবস্থায় আদর করে দিচ্ছে। সুলতানা বেগম অবশ্য কিছু বলেননি তবে শিমুকে তিনি কোল থেকে নামিয়ে দেননি।মেহরিন মানসিকভাবে বিপর্যস্ত , এখনো পুরোপুরি সুস্থ নয় শিমুকে তার হাতে ছেড়ে দেওয়া মানে চরম প্রকারের বোকামি করা। আবার এ ও ভাবছেন মেয়েটারই বা দোষ কি? এই মেয়েটার তো কোন দোষ নেই! মেয়েটি পাগল ও নয়! মেয়েটির দরকার –
“ভালোবাসা, ভরসা, আশ্রয়,আর বুকভরা নিশ্বাস! ভালোবাসা, ভরসা, আশ্রয় এই তিন মিলেই তো মানুষের মধ্যে তৃপ্ততা আসে। আর এই তৃপ্তিতেই বুক ভরে একজন মানুষ নিশ্বাস নিতে পারে। ”
যে মানুষটির ভাগ্যে এই তিন জিনিস নেই সে মানুষটির জীবনে কতটুকুই বা পূর্ণতা পাবে?”
সুলতানা বেগমের পাশে বসে কাদছেন মেহরিনের মা।
মেয়ের জীবনের সুখের গল্প যেখানে হেসে বলার কথা।
সেখানে তিনি কেদে বলছেন তার মেয়ের আত্মজীবনী।
সুলতানা বেগম মেহরিনের মুখের দিকে চেয়ে আছেন। আশর্চয্য হয়ে যাচ্ছেন, মিষ্টি আর সুন্দর মুখশ্রীর মেয়েটির মুখে আগের মতই হাসি লেগে আছে। তবে বদলে গেছে তার চেহারা আর শরীর।
চলবে।
#এই_শহরের_পাখিগুলো_ডানা_মেলে_উড়তে_জানেনা
#লেখিকাঃতামান্না
#পঞ্চম পর্ব
“ভালোবাসা, ভরসা, আশ্রয়,আর বুকভরা নিশ্বাস! ভালোবাসা, ভরসা, আশ্রয় এই তিন মিলেই তো মানুষের মধ্যে তৃপ্ততা আসে। আর এই তৃপ্তিতেই বুক ভরে একজন মানুষ নিশ্বাস নিতে পারে। ”
যে মানুষটির ভাগ্যে এই তিন জিনিস নেই সে মানুষটির জীবনে কতটুকুই বা পূর্ণতা পাবে?”
সুলতানা বেগমের পাশে বসে কাদছেন মেহরিনের মা।
মেয়ের জীবনের সুখের গল্প যেখানে হেসে বলার কথা।
সেখানে তিনি কেদে বলছেন তার মেয়ের আত্মজীবনী।
সুলতানা বেগম মেহরিনের মুখের দিকে চেয়ে আছেন। আশর্চয্য হয়ে যাচ্ছেন, মিষ্টি আর সুন্দর মুখশ্রীর মেয়েটির মুখে আগের মতই হাসি লেগে আছে। তবে বদলে গেছে তার চেহারা আর শরীর। বদলেগেছে তার সত্বা ও! মেহরিন শিমুকে আদর করতে করতে সুলতানা বেগমকে বলে উঠলো –
আন্টি – “ওকে একটু কোলে দেও না! ”
সুলতানা বেগম মেহরিনের মুখের দিকে একবার তাকিয়ে দেখলেন মুখে তার আকুল আবেদন। এই মিষ্টিমুখের মেয়েটাকে কি করে না করা যায়! তিনি মেহরিনের কোলে শিমুকে দিয়েদিলেন। শিমুকে মেহরিনের কোলে দিয়ে দেওয়ায় মেহরিনের মুখে একরাশ হাসি উপচে পরেছে। শিমু টুক্কর টুক্কর করে চেয়ে আছে, মেহরিন মুখের কাছে নিয়ে শিমুর কপালে চুমু দিতেই, শিমু চোখ বুজে হেসে দিল। তারপর তার ছোট ছোট নরম দুটো হাত দিয়ে মেহরিনের পুরো মুখ ছুইয়ে দিল।
সুলতানা বেগম চেয়ে আছেন, তার কাছে এ দৃশ্য মনে হচ্ছে কোন পূর্ণ মা তার সন্তানকে নিঃস্বার্থ ভাবে আদর করছে। আর সেই আদরগুলোকে মেখে নিচ্ছে মা হারা এক সন্তান!
সুলতানা বেগম শিমুকে মেহরিনের কাছথেকে নিয়ে নিলেন। মেহরিনের মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন –
“ভালো থেকো মা, তারাতারি সুস্থ হও,সবকিছু ওপরওয়ালার হাতে। এমন হতে পারে আজ যারা তোমার জীবনে তছনছ করে দিয়েছে কাল তারাই তোমার পায়ে এসে পরবে। তোমার জন্য আমার পূর্ণ আশির্বাদ আছে, দোয়া করি জীবন তোমার পূর্ণ হোক! সম্পূর্ণ রুপে আবার নিজেকে তৈরী করো। ”
মেহরিনের মাকে উদ্দেশ্য করে -” ভাবী গেলাম আমি, শাফায়েতকে তো চিনেন ও আমাকে কালকে দয়াকরে এখানে থাকতে দিলেও আজ দিবেনা। হয়তো এখন চলেও এসেছে বাসায়, যাই আমি ভালো থাকবেন। আর মেহরিন মায়ের চিকিৎসা করান যত তারাতারি পারেন।
মেয়েটার সাথে এত কিছু হয়েগেল। এতটুকু বয়সে কত নির্যাতন সহ্য করেছে ও। মেহরিনকে দেখে শিমুকে কোলে করে নিয়ে গেলেন তিনি। মেহরিন শিমুর দিকে চেয়ে আছে। চোখ দুটো ছলছল করছে। মেহরিন তার রুমে দৌড়ে চলেগেল।
_________________________________________
সাইকোলজিস্ট ফজলে এনামুল হক চৌধুরী! বিরাট বড় এবং কঠিন নামের হলেও মানুষটা একদমই সরল প্রকৃতির। হেসে হেসে কথার ছলে যেন মানুষের সঙ্গে মিশে যেতে পারেন খুব সহজে। মেহরিন আজ একমাস তার কাছে আশে, তার পরামর্শ মতে চলে। এই একমাসে মেহরিনের কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে যেমন আগে কিছুই মনে করতে পারতো না। এখন সে স্পষ্ট সব মনে করতে পারে এবং বলতে পারে। তবে আগের মত এখনো কারো সঙ্গে স্বাভাবিক হতে পারেনি সে। এখন এককোণে চুপচাপ বসে থাকে।
এনামুল সাহেব বসে বসে চা খাচ্ছেন। তার পাশে একটা ডিভানে আধশোয়া হয়ে আছে মেহরিন। এনামুল সাহেব প্রশ্ন করলেন –
” তোমার এখন কাকে বেশী আপন মনে হয়?”
– “কেউ না!”
“কেন কেউ নয়? এত বড় পৃথিবীতে কেন কেউ তোমার আপন নয়?”
– “সবই পর!”
– কেন পর? তোমার কি কোন ভালোবাসার মানুষ নেই?”
-নেই, নেই আমার কেউ নেই! আমার বাচ্চা নেই, আমার স্বামী নেই!”
– তোমার স্বামী যদি তোমার কাছে ফিরে আসে তাকে কি তুমি গ্রহণ করবে?”
– “মেহরিন চোখ বন্ধ অবস্থায় ছটফট করতে করতে চিৎকার করে উঠে বসল। আমার কেউ নেই! আমার স্বামী নেই,সে আমার স্বামী না! সে আমার শত্রু! ”
– “রিল্যাক্স! রিল্যাক্স! শান্ত হও মেহরিন!” সে তোমার শত্রু আমি মেনে নিয়েছি। শান্ত হও, আমি ও চাই না তার কাছে তুমি যাও!” মেহরিনের তীব্র উত্তেজনা ক্রমশ কমতে লাগল। ” শুয়ে পরো, আর চোখ বন্ধ করো আমি যা বলছি তা শুনো। মেহরিন চোখ বন্ধ করে শুয়ে পরলো।
এনামুল সাহেব- ” তোমার বিয়ের পর থেকে কি হয়েছে তা আমাকে বলো! ”
মেহরিন- চোখ বন্ধ করে মনে করার চেষ্টা করছে। আমার বিয়ের প্রথমদিকে আকাশ আমার সাথে ভালো আচরণ করলেও শেষে এসে আমার সঙ্গে খারাপ আচরণ করে আমার।
এনামুল – “কখন? ”
মেহরিন- “প্রথম কনন্সিভের সময় আমি তাকে এ ব্যাপারে বললে সে আমার শাশুড়িকে এটা বলতে নিষেধ করে দেয়। তার মতে আমার আর তার কেরিয়ার নাকি বাচ্চাই শেষ করে দিবে। কেরিয়ারে আমরা এগুতে পারবো না। বাচ্চা হলে অফিস সামলাবো কিভাবে?”
” এগুলো সে বলতো সব সময়। সেদিনের পর থেকে সে আমাকে পুরোপুরি সময় কম দিয়ে , অফিস নিয়ে পরে থাকতো। দিন হলে অফিস, রাত হলে বাসায় এসে আমাকে নানা ভাবে কথা শুনাতো, আর টাকা নেওয়া তো নিত্যদিনের কথা!এর মাঝে আমি বুঝেগেলাম তার সাথে কারো সম্পর্ক চলছে। গভীর সেই সম্পর্ক! কিন্তু কার সাথে তা আমি প্রমাণ সহ বের করতে পারছিনা। প্রতিবার কলের পর কল কেটে দেওয়া, মোবাইলে তেমন ইনফরমেশন ও ছিল না। ”
“আর তাছাড়া স্বামীর পিছনে গোয়েন্দা গিরী করার সময় ও আমার ছিল না। সংসার নামক বন্দনায় যে একবার জড়ায় সে অন্যকিছু করার সময়ই বা কোথায় পায়? তারপর আমি আবার দ্বিতীয়বারের মত কনন্সিভ করি। এই সন্তানের বেলায় আমি মানসিকভাবে আরো ভেঙ্গে পরি। তাকে জানালে কি বলবে সেই ভয়ে আমি বলতে চাইনি।”
মেহরিন উঠে বসে পরলো মুখে হাত চেপে ডুকরে কেদে উঠে বলতে লাগল –
-” সে কিভাবে যেন এই বাচ্চার কথা জেনে গিয়েছে এবং সেইদিন আমাকে ঘুমের ইন্জেকশন দিয়ে হাসপাতালে নিয়ে এবোর্শন করিয়ে আনে। আমার সব শেষ করে সে। তারপর কেটে যায় একটা মাস আমি ভিতরে ভিতরে শেষ হলেও, আশাবাদী ছিলাম আমি তাকে যে করেই হোক শাস্তিই দিবো। আর এরমধ্যেই আমার কলিগ সেইদিনের ঘটনার কথা আমায় বলে। তার ফুফাতো বোন শীলার সাথে সম্পর্ক এই বিষয়টা কখনো আমার জানা হতো না যদি না আমি সেদিন হোটেলে যেতাম। আর সেই ঘটনায় আমি প্রমাণ যোগাড় করতে সক্ষম হই।”
মেহরিন কাদতে লাগল। মাহিনের স্ত্রী এসে পাশে বসে পরলো। তাকে সান্ত্বনা দিতে লাগল।
এনামুল সাহেব – “মিসেস মাহিন ওকে কাদতে দিন। আপনি চলুন আমার চেম্বারে ।”
মাহিনের স্ত্রী-” স্যার কি বুঝলেন ওর অবস্থা?”
এনামুল সাহেব-” আপনাদের মত পরিবার, থাকলে কেউই অসুস্থ হয়ে পরে থাকবে না। যাইহোক আমি মেহরিনকে নিয়ে আগেই আশাবাদী ছিলাম। তবে আমার মনে হয় ওকে আরো কিছু সময় দেওয়া উচিৎ। ওর এই একমাসের কোর্সে বুঝলাম ওর যথেষ্ট পরিবর্তন এসেছে।
মাহিনের স্ত্রী – “ধন্যবাদ স্যার! ”
মেহরিনকে টানা একমাস এনামুল সাহেবের কাছে নিয়ে আসা হয় আগের মত উগ্রতা তার কিছুটা কমেছে। তবে পুরোপুরি নয়। মাঝেমাঝে অবশ্য এখনো কেদেঁ উঠে সে।
তবে বাবা- মা, আর ভাই- ভাবীর জন্য সে দিক থেকে সে পূর্ণ হয়েছে।
_________________________________________________
ডিবোর্স লেটারে সাইন করছে মেহরিন। আজ এক ফোটা ও জল তার চোখ থেকে পরছে না। শক্ত হাতে কলম ধরেছে সে। এক সময় স্বামীকে চোখের আড়াল হতে দেখলেই খুজতে খুজতে ক্লান্ত হয়েযেত এখন তা সম্পূর্ণ রুপে বন্ধ। আকাশকে আর এ বাড়িতে আসতে দেননি মেহরিনের বাবা। মাহিন চেয়েছিল আকাশকে পুলিশে দেওয়ার জন্য যেন কঠিন শাস্তি পায়। কিন্তু বাদ সাধলেন মেহরিনের বাবা। তারমতে সব বিচার কাধে নিতে নেই প্রকৃতির শাস্তি বলেও কিছু আছে। মেয়ে আস্তে আস্তে সুস্থ স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসছে এতেই অনেক।
চলবে।