একগুচ্ছ কালো গোলাপ?part_1

0
12280

…ও আমার আল্লাহ গো ..মরে গেলাম গো ….ভেঙে সব গুড়া গুড়া হয়ে গেলো গো ..আমার কোমড়ে ফাটল ধরলো গো ..আমার আর বিয়ে হবে না গো ..কোমড় ভাঙা মেয়ে কেউ ঘরে নিবে না গো ..ব্যথায় মরে গেলাম গো …আমি আর বাচবো নাগো ..ও আম্মুনিগো আমায় ক্ষমা করো গো ..তুমি আর মেয়ে জামাইয়ের মুখ দেখতে পারবেনা গো ..??
পেছন থেকে জেমি দৌড়ে এসে – খালামনি খালামনি কোথায় ব্যথা পেয়েছো ? উঠো উঠো ।
হাত ধরে টেনে তুলতে নিয়ে শক্তিতে না কুলাতে পেরে সেও ধপাস ।
গাড়ি থেকে নেমে দৌড়ে এসে এক ধকম – hey little girl stop your non stop shout. দেখি কি হয়েছে ? কোথায় লেগেছে ? রাস্তার ভিতরে এইভাবে দৌড়াদৌড়ি করো কেনো fool girl ??
ধমক খেয়ে পিছিয়ে গিয়ে রসে ভরা টইটুম্বুর চোখে ভিতু ফেইস নিয়ে চুপসে গিয়ে তাকিয়ে থাকে । বড় পাপড়িসহ চোখের পাতা পড়তেই চোখ থেকে জল গড়িয়ে পড়ে । উজ্জ্ল শ্যামা গায়ের রং । হালকা ঢেউ খেলানো এক গোছা লম্বা চুল ছড়িয়ে আছে কাধে পিঠে । মাথায় বিড়ালের কান ওয়ালা কিউট একটা round band . Yellow colour একটা round জামা পড়া । পায়ের গোড়ালি পর্যন্ত black colour চুরি সেলোয়ার । হাতে একটা barbie doll . ভীষন মায়াবী এক জোড়া বড় বড় চোখ । সুন্দর একটা নাক, ছোট্ট একটা ঠোট । ঠোটের নিচে সুন্দর একটা কালো তিল।গুলুমুলু চেহারা। পুরোটা মিলিয়ে একটা doll মনে হয় বসে আছে। বাচ্চা ফেইসটা দেখেই প্রচুর মায়া হয়। ব্যথা পেয়েছে এটা সিউর ।
– উঠো দেখি হাটতে পারো নাকি?
জেমি হাত ধরে ঝাকিয়ে বলে উঠে – খালামনি উঠোনা …উঠতে পারো না তুমি ?
হাত ধরলে উঠে পড়ে দাড়িয়ে এক দুই তিন বলে তিনটা লাফ দিয়ে বলে – হি হি i am ok .কিচ্ছিকা নেহি হ সাকতা । ও আমার আল্লাহ .. লাভ ইউ উম্মাহহহহ??। চল জেমি ।
– খালামনি তুমি না ব্যথা পেয়ে কাদলে এতোক্ষন ?(অবাক হয়ে )
– চুপ থাক। i am শক্তিশালী? । আম্মুনিকা হরলিক্স খাওয়াকা বাচ্চিকা☺ ।
এক দৌড়ে রাস্তা দিয়ে চলে যায় । একটু আগে রাস্তায় দৌড়া দৌড়ি করতে করতে হাত থেকে barbie dool পড়ে যায়। সেটা নিতে গিয়েই অল্প থেকেই তানভীর খানের car সাথে accident হয় না । পড়ে গিয়ে ব্যথা ঠাহর না করে ভয় পেয়ে shout করতে থাকে লাবিবা।
পরে দেখে ব্যথা করছেনা তাই লাফায় ।
এদিকে ভ্রু কুচকে এক ভ্রু আরের ভ্রু য়ের উপরে তুলে অবাক চোখে দেখে দৌড়ে যাওয়া লাবিবা আর জেমিকে দেখতে থাকে তানভীর । তানভীর খান- the most most most handsome, brilliant and active boy . এই এলাকার এমপি ফিরোজ খানের একমাত্র ছেলে । খান বাড়ির একমাত্র উত্তরাধিকারী ।
গাড়ির ড্রাইভারকে জিজ্জাসা করে – uncle, do you know this girls ? কে পিচ্চি দুটো ?
– বড় মেয়েটা হইলো মোল্লা বাড়ির মেয়ে । এই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ইসমাইল মন্ডলের একমাত্র মেয়ে । ছেলেমানুষ বড্ড । ক্লাস এইটে পড়ে। আর ছোটটা হইলো সরকার বাড়ির মেয়ে । টনকী জোবেয়দা জব্বার হাই স্কুলের হেড টিচার মুক্তা মাষ্টারের মেয়ে । 4/5 এ পড়ে হয়তো । চেয়ারম্যানের ভাতিজিরে মুক্তা মাষ্টারের কাছে বিয়ে দিছে।
– ভালোই জানেন দেখছি ।
– হয়। এলাকার মানুষ এলাকার খোজ খবর তো জানতেই হয় । ছোট সাহেব আপনার দেড়ি হয়তাছে।
– oh, ok . চলেন।

ইস..সোহানা তোমার এই nonstop ফেস ফেস করা stop করবে please ? . আমার ছেলেটা এসে যদি দেখে তোমার এই ফেস ফেস করা তাহলে তো আমার উপরেই এটোম বম টা ফেলবে । বলবে আমিই কিছু করেছি ।
-করেছো তো ।
– কি ?
– আমার ছেলেকে উপরে পাঠানোর যড়যন্ত্র। যখনি কোন গন্ডগোলের আবাশ পাও তখনি কেন আমার ছেলেকে নিয়ে আসো ? তুমি কি চাও আমার ছোট্ট ছেলেটা লোকের হাতে পরপারে চলে যাক আর আমি সন্তান শোক করি ?
– হা হা হা । তুমি ছেলেকে এখনো ছোট্ট ভাবো ? শোন ফিরোজ খানের একমাত্র ছেলে তানভীর খান কে কেউ ঘায়েল করতে পারে না । বিরোধী দলের ছেলেপুলে গুলো তানভীর খান এর কাছে হাতের মোয়া । ও একাই একশ জন কে ঘায়েল করতে পারে ।
মম ..পাপা..।
পেছন ঘুরে তাকায় সোহানা আর ফিরোজ । তানভীর কে বুকে জড়িয়ে পিঠে দু চড় দিয়ে বলে “মেরা বেটা” ।সোহানা এগিয়ে যায় ছেলের দিকে । বুকে জড়িয়ে নিয়ে অভিমানের স্বরে বলে – পাপা আসতে বললেই চলে আসতে হয় তাইনা ? বাপের সাথে রাজনীতি করার প্লেন করেছিস নাকি ? বিয়ে করিয়ে দিবো কিন্তু এই প্লেন করলে । বউ এলে দেখবি তখন মারামারির ভিতরে তোকে টেনেও নিয়ে যাওয়া যাবে না ।
সোহানাকে ছেড়ে তানভীর সোফায় বসে পা থেকে জুতো খুলতে খুলতে বলে
– মম , পাপা ডাকে বলে আসিনা ..কোন অসৎ দলের লিডার এমপি হয়ে সমাজের ক্ষতি যদি না করতে পারে তার জন্য সেই দলটাকে একটু সাইজ করতে আসি । আর আমার স্টাডির এখনো সিক্স ইয়ারস বাকি । ভিসা টা হয়ে গেলেই ফুস করে উডে একদম লন্ডন।
সোহানা আবার কাদতে শুরু করে । ফিরোজ ঝাঝিয়ে বলে – আবার তোমার ফেস ফেস করা শুরু হলো ?
এদিকে তানভীর সোহানার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে । আজ সে দুই ধরনের কান্না দেখেছে ১.ভয়ে চিল্লানো কান্না ২. আবেগে ফেস ফেস করা কান্না । সোহানার দিকে তাকিয়ে থেকেই বলে
– পাপা, মম তো খুব সুন্দর করে কাদছে । সুন্দর লাগছে দেখতে । তুমি এইভাবে মমকে শুধু কাদাবে কেমন ?
ফিরোজের অবাকতার পালা ? । যে ছেলে মমকে কাদতে দেখেলেই পাপার উপর দিয়ে ঝড় বইয়ে দেয় সেই ছেলে বলছে কাদাতে ।
– তানভীর ……???
– really papa ,you look . Mom looks so pretty .
ফিরোজ খেয়াল করতেই সোহানা চুপ হয়ে যায় । গলা ঝাঝিয়ে বলে – সুন্দর লাগছে শুনে নজর দিতে আসছে হুহ..?। তানভীরকে বলে – ফ্রেশ হয়ে আয় । টেবিলে খাবার দিচ্ছি ।

লাবিবা বাড়ি এসে হালকা পা বাকিয়ে বকিয়ে হাটতে হাটতে উহ আহ করতে করতে সাবিনার কাছে আসে ।সাবিনা মেয়ের a to z scan করে বলে
– উহ আহ করিস কেন ? তোর তো কিছুই হয় নাই । drama off দে ।
– আম্মুনি ..কি যে ব্যথা ..তোমায় আর কি বলবো ..একটা বড় সড় গাড়ি এসে আমার পায়ের উপর কোমড় এক হাত নিচে দিয়ে going .
– চুপ যা । বলছিনা drama off করতে ? একটা গাড়ি গেলে তোর পা এখনো জিবীতো আছে ? আমারে কি পাগলা কুকুর কামড় দিয়েছে যে তোর কথা বিশ্বাস করে নাচবো ?
– হুস হুস । তুমি কি নাচতে পারো নাকি ? নাচে তো আমার নানু । উফ যা সুন্দর করে নাচে না ..নানু ভাই তো হা হয়ে দেখে ? । তুমি তো কিচ্ছু পারো না
– হয়ছে আপনাকে আর কল্পনায় ডুব দিতে হবে না । সন্ধ্যা লাগছে গিয়ে পড়তে বসেন ।
– এমন করো ক্যা ? হুস হুস কেউ ভালুপাসে না ।

পড়ার টেবিলে বসে স্কুলের পড়া সব শিখে নেয় একঘন্টার মাঝে । but দশটার আগে তো টেবিল থেকে উঠা নিষেধ । এখন তো নয়টা বাজে । এই একঘন্টা কি করবে ? ভাবতে ভাবতে রাস্তার কথা মনে পড়ে যায় । ডায়রিটা বের করে লিখতে থাকে –
আজকে আমি আর এক ডলফিনের গাড়ি দুইসিডেন করেছি । বড় ব্যপার হলো গাড়িটি সুরক্ষিত আছে । কিন্তু আমার আত্মা উড়ে গিয়েছিলো । আত্মা টেনে ধরতেই ডলফিন টা সামনে চলে আসলো আর আমার ফুলানো আত্মা চুপসে নুইয়ে পড়েছিলো । ডলফিন তার রাগের এক সমুদ্র নোনা পানি আমার উপর ঢেলে দিয়েছিলো । ডলফিনটা দেখতে ইয়া বড় । শরীরে অনেক মাংস । হাড্ডিগুলা দেখতে খুব শক্ত। ডলফিনটার অনেক বয়স তাই দাড়ি গজিয়েছে । ডলফিনের চোখ দুইটা মাছের রক্ত খাইতে খাইতে লাল হয়ে গেছে । কচি কচি মাছ খেয়ে খেয়ে ডলফিন টার গায়ে প্রোটিনে ভরপুর । ডলফিনটার অনেক তেজ । ডলফিনটার মোটা মোটা চামড়ায় মোটা মোটা আইশ । ডলফিনটা অনেক স্টাইলিশ । ডিজিটাল ডলফিন । চোখে কালো চশমা পড়ে?। ডলফিন টারে ভাল্লাগছে । কিউট ডলফিন ।
কাধে কারো ছোয়া পড়ে । লাবিবা সরিয়ে দেয় । আবার হাত পড়ে । সরিয়ে দিয়ে বলে – উফ distrub নষ্ট করো নাতো।
” ডলফিন টারে ভাল্লাগছে।‌‌‌ কিউট ডলফিন ”
একলাফে উল্টা দাড়িয়ে পড়ে আমতা আমতা করে বলে – আব্বু …।
– হ্যা আব্বু। পড়তে বসে কি করা হচ্ছে এসব ? ?
– লিখতেছিলাম তো ..ডলফিন । ডলফিনের composition . Home work .
– ডলফিনের composition কোন বইয়ে লেখা আছে দেখি ? আর composition এ কেউ লিখে ডলফিন টারে ভাল্লাগছে ??
– ওমা তুমি জানো না ? জানবে কি করে তোমাদের সময় তো এসব পড়াই আসে নাই । তাইতো তুমরা আধুনিক বিশ্বের invention don’t know. সমুদ্রের নিচ থেকে যে এত্তো বড় বড় ডলফিন তুলে বিদেশে বাড়ি গাড়ি করে দিচ্ছে সেই খবর কি রাখো ? ডলফিনদের আমেরিকা অনেক বড় বড় বাড়ি গাড়ি আছে । ডলফিনদের পেটের থেকে মানুষের বাচ্চা বের হয়। আর বাচ্চা গুলা বের হয়েই বিরিয়ানী খায় দশ প্লেট করে । ডলফিন গুলা খুব কিউট । পুতু নামের এক ডলফিনের জন্য বিল গেটস এর মেয়ে সাইসুইভ খাবো বলছিলো । কিন্তু পুতু রাজি ছিলো না তাই পুতুর ভাই ফুতু বিল গেইটসের মেয়েকে দিয়ে বিয়ে __
– shut up . ? ফাজলামি করস আব্বুর সাথে ?? পুতুর ভাই ফুতু ? ডলফিনের বাচ্চা মানুষ ? পড়া শেষ হলে খেয়ে ঘুমাবি এইগুলা কি লিখস ?? পাগলের ছানা কথাকার ।
লাবিবা চুপ ।
ইসমাইলের চিল্লানি শুনে সাবিনা তাড়াতাড়ি করে হাতে দুধের গ্লাসটা নিয়ে আসে । যদি মেয়েটা ভয় পেয়ে দুধ টুকু খায় ।ভাত তো খাবে না ভালো করেই জানে।সাবিনার হাতে দুধের গ্লাস দেখে এক দৌড়ে বাথরুমের দিক যেতে থাকে । কিন্তু ইসমাইল ধরে ফেলে । উয়ায়ন্তর না পেয়ে উয়াক উয়াক করে । ইসমাইল বলে
– ভাত খেয়েছো ?
– ভাত কি মানুষ খায় নাকি ? হুস হুস ..ছাড়ো না বমি আসতেছে তো । উয়াক ..
– ভাত মানুষ খায় না । গরু ছাগল খায় । বমি আসতাছে তো ..নাক বন্ধ কর ।
ইসমাইল মেয়ের নাক টিপি দিয়ে ধরে ছাবিনা মাথা টেনে মুখ উচিয়ে মুখে জোর করে দুধ ঢেলে দেয় ।
বেচারা লাবিবা?
.

একগুচ্ছ কালো গোলাপ?part_1
#লাবিবা_তানহা_লিজা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here