একগুচ্ছ_কালো_গোলাপ?পর্ব_১১
#লাবিবা_তানহা_লিজা
?
বিকালে লাবিবা এসে বসে আছে খান বাড়িতে । তানিয়া পড়া শুরু করেছে বসেই । একটু পর নুপুর ও এসে বসে । তানভীর এখনো নিচে reading room এ আসে নি । নুপুর এসেই লাবিবাকে জড়িয়ে ধরে ।
নুপুর – দোস্ত ফোন আনছিস ? ছবি গুলো দেখা ।
বলেই নুপুর ফোন হাতে নেয় । লাবিবা আটকিয়ে দিয়ে বলে
– যাওয়ার সময় দেখাবো । পড়া তো শিখি নাই দোস্ত । অনুষ্টানের জন্য। এখন কি হপ্পে ?
নুপুর – আরে দোস্ত no tention be cool . স্যার একটু বকা দিবে তারপর শেষ । আমি শিখেছি রাতে ।
লাবিবা- কিহহহ!! তুই না বললি তুই শিখিস নি ?
নুপুর – আব্বু শিখিয়েছে । আব্বু পড়িয়েছে কাল ।
লাবিবা মন খারাপ করে । নুপুর শিখেছে ও শিখতে পারলো না। কিছুক্ষনের মধ্যেই তানভীর নিচে আসে । লাবিবা চেহারা দেখেই পিট পিট করে তাকায় । চোখ দুটো আজ ও লাল হয়ে আছে । ভয়ংকর লাগছে তানভীরকে। দেখেই মনে হচ্ছে ও ঠিক নেই । নুপুরকে বলে – আমার ফোন নাম্বার তোমার কাছে কিভাবে গেল ?
নুপু – লাবিবার কাছ থেকে নিয়েছি ।
তানভীর – তো তোমার বোন কেন কল দেয় আমায় ? সাবধান করে দিবে কল দিতে । নেক্সট টাইম যেন আমি তার ফোন না পাই ।
নুপুর মাথা নাড়ায় । কাল রাতে নুপুরের কাছ থেকে আখি তানভীরের নাম্বার চেয়ে নেয় । তারপর তানভীরকে কল দেয় । তানভীর ঘুমাতে যাচ্ছিলো আননোন নাম্বারের ফোন পেয়ে দুবার কেটে দেয় বিরক্তিতে ।ঘুম পাচ্ছিলো তার খুব। তিনবারের মাথায় কানে ধরে বলে – Md. Tanvir khan speaking .
আখি – সুন্দরী মেয়েদের ফোন পাওয়ার জন্য সবাই অপেক্ষা করতে থাকে । আর আপনি দেখছি ফোন কাটেন । I like it .
তানভীর – who are you bloodyy girl . এতো রাতে ফোন করে আজেবাজে কথা বলো ?
আখি – রেগে গেলেন তো হেরে গেলেন ।আজিতো আমাদের দেখা হলো । ভুলে গেলেন নাকি আমাকে ? এতো সুন্দর মেয়েকে কি কেউ ভুলে ? হা করে তো তাকিয়ে ছিলেন ।
তানভীরের বুঝতে বাকি রইল না আর এইটা কে ।
– আখি রাইট ? কেন ফোন দিয়েছো ?
– ভালো লাগছিলো না । তাই ভাবলাম একটু কথা বলি । বিরক্ত হচ্ছেন ? আমার ভয়েজ কি খারাপ ?
– bf নেই ?
– খুজছি …যদি মনের মিল হয় ।
– গুড নাইট । ঘুমাও ।
তানভীর ফোন অফ করে চার্জে দিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে ।
তানভীর বইয়ের পাতা উল্টাচ্ছে শুধু । লাবিবা ভয়ে ভয়ে জিজ্জাসা করে – স্যার আপনি কি রেগে আছেন ? মার পিট করেছেন ?
লাবিবার জিজ্জাসা টা ঠিক নিতে পারলো না তানভীর । ওর এখন সব কিছু কটাক্ষ লাগছে । পড়াতেও ইচ্ছা করছে না । একটু আগে ফোনে ——
তানভীর – হ্যালো রাজীব । তোর সাথে কথা ছিলো । কিন্তু কি ভাবে বলবো বুঝতে পারছিনা ।
রাজীব – আরে দোস্ত বল ।
তানভীর – তুই তোর জি এফ এর সাথে ব্রেকাপ করে দে ।
রাজিব- পাগল নাকি তুই ? ও আমার জান দোস্ত। অনেক একটা ভালো মেয়ে । ওর মতো একটা মেয়ে আজকাল পাওয়া দুস্কর। তুই ছবি দেখেছিস তার ।
তানভীর – শুধু ছবি দেখিনি সামনাসামনিও দেখেছি । ঐ মেয়ে ক্লাস টেনে পড়ে । আমাদের এলাকার এক মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে । ওর বাবা কৃষি কাজ করে। কিসের কোটিপতির মেয়ে ? কিসের মিল কিসের ফ্যাক্টরি ? কিসের মার্জিত মেয়ে ? সব ভূয়া । তোকে মিথ্যা বলেছে সব । ঠকিয়েছে তোকে । আমার সাথে ভাব দেখাচ্ছে । সুন্দর করে সেজে আসছে যাতে আমি তার দিকে তাকাই । পুরো খেলোয়াড় ভাই । এক্ষূনি ব্রেকাপ কর তুই।
রাজিব- দেখ আমি জানি আমার আখি সুন্দর । তার দিকে আমার সব ফ্রেন্ডের নজর। তোকে আলাদা ভেবেছিলাম। কিন্তু তুই ও দেখি ওদের দলে ।
তানভীর – ঠিক ভাবে কথা বল রাজিব। তোকে নিজের মনে করি তাই তোকে এই মেয়ের থেকে সাবধান হতে বলছি ।
রাজিব- চুপ কর তুই । তোর থেকে আমি এইটা আশা করিনি । কক্ষোনোনা। সব গুলার মতো তুইও শালা । শোন এর পর আমার আখির সম্পর্কে আর একটা কথাও বলবিনা । সব গুলার সাথে আগেই সম্পর্ক শেষ করেছি আজ তোর আর আমার সম্পর্ক শেষ । গুড বাই ।
তানভীর -রাজিব শোন ..শোন আমার কথা ।
রাজিব ফোন কেটে দেয় । তানভীরের প্রচুর রাগ হচ্ছে। এর জন্যই হয়তো কারো ভালো করতে নেই কখনো । সালার একটা বাজে মেয়ের জন্য রাজিব ওকে ভুল বুঝলো । সোহানার ডাক পড়াতে পড়াতে আসে । পড়াতে এসে নুপুরকে দেখে আরো রাগ লাগছে তার ।
তানভীর লাবিবার দিকে বই এগিয়ে দিয়ে বলে complete the Rearenge .
লাবিবা এখন কি করবে ? একবার চোখ বুলায় প্রশ্নটার দিকে । কি কঠিন কঠিন word. এর meaning গুলোও তো পারে না । তাহলে করবে কিভাবে ? এখন তো বলতেও পারছেনা যে পারবেনা । তবুও খাতা কলম নিয়ে বসে । নুপুরের দিকে তাকিয়ে দেখে নুপুর দিব্বি লিখে যাচ্ছে । এদিকে লাবিবা টেনশনে কলম কামডাতে থাকে । কলম সরিয়ে নুপুরের খাতায় উকি দিয়ে দিয়ে লিখছে । তানভীর এক নজরে লাবিবার দিকে তাকিয়ে দেখছে । এবার চুপ থাকতে না পেরে বলল – পড়া শিখ নি ?
লাবিবা চুপ ।
– answer me .
লাবিবা আমতা আমতা করতে লাগলো ।
টেবিলে জোড়ে হাতে বাড়ি দিয়ে চিল্লিয়ে উঠল তানভীর । – যতোদিন থেকে পড়তে আসছো একটা দিন ও পড়া দিতে পারোনি । ব্যাপার টা কি তোমার ?
তোমার আব্বু এমনি এমনি আমার কাছে পাঠায়নি । অন্যান্য স্যারের মতো আমাকে ভেবে ভুল করেছো তুমি । সব সময় দুষ্টুমি করবে পড়ায় ফাকি দিবে পরিক্ষায় ফেল করবে সেই দায় আমার উপর উঠবে সেটা আমি আমি হতে দিচ্ছি না । শেষ মেষ তোমার আব্বু বলবে যে তানভীর কিছু পড়ায়নি আমার মেয়েকে শুধু শুধু salary নিয়েছে । যদিও আমি এমনি পড়াচ্ছি তোমাকে কোন salary নিবো না । আমার কাছে তোমার আব্বু যাস্ট হাতের ময়লা ছাড়া কিছুই নয় । সোজা আঙুলে অনেক চেষ্টা করেছি এবার বাকা আঙুলে সোজা করবো তোমায় । তোমার জন্য punishment ছাড়া কাজ হবে না । আমি সেটাই করবো । তোমার মতো অনেক কে মানুষ করেছি আমি ।
তানভীর এদিক ওদিক তাকিয়ে স্কেল পায় । স্কেল সামনে ধরে বলে – হাত পাত । আজকে থেকে এই দাগ গুলো দেখবে আর পড়বে।
লাবিবা নুপুর তানিয়া ভয়ে কাপা কাপি অবস্থা । তানিয়া এক দৌড়ে মম মম বলে চলে যায় । পিছু পিছু নুপুর ও দৌড় । লাবিবা বেচারি কাপতে কাপতে হাত এগিয়ে দেয় । তানভীর ইচ্ছা মতো যত রাগ সব লাবিবার দুই হাতে ঝাড়ে । লাবিবা এদিকে ব্যথায় চিৎকার করে কাদতে থাকে
– আম্মুনিগো মরে গেলাম গো । হাত দুটো শহীদ খাইলো গো । ও শাশুমা গো তোমার ছেলে বউ হাত ছাড়া হয়ে গেলো গো । তোমাকে আর রেধে বেড়ে খাওয়াতে পারবে না গো । আমি জানি তুমি এই ছেলের বউ ঘরে তুলবেনা গো । ও আমার গো বিয়ে হবে না গো । আমি কি করবো গো । ও শাশুমা গো আমাকে তুমি ছেলের বউ করে ঘরে তুলবেনা গো । ও শাশুমা গো হাত ছাড়া বউ দিয়ে কি করবে গো …আমি আর বাচবোনা গো ।
সোহানা মমতা এসে তানভীর কে সরায় । লাবিবাকে ধরে । লাবিবার এইসব চিল্লানো শোনে তানভীরের আরো রাগ উঠে গেছে । এই মেয়ের জন্য ই এতো কিছু । সোহানা রাগে তানভীরের গালে চড় বসায় ।
এতোটা খারাপ হয়ে গেছিস তুই । তোকে কতবার বোঝাতে হবে ঐটা তোর বাপের বিরোধী দল নয় । ঐটা একটা বাচ্চা মেয়ে যাকে আদর করতে হয় মারতে না । দিক বেদিক হুস জ্ঞান হারিয়ে বসে আছিস তুই । মেরে কেউ কখনো কাউকে পড়াতে পারে ? ইসমাইল ভাই এমনি এমনি তোর কাছে পড়তে দিয়েছে ? পড়াতে পারবিনা না করে দে । এভাবে মারছিস কেন ?
তানভীর নিভল ।
মমতা আগেই লাবিবাকে নিজের রুমে নিয়ে চলে এসেছে । তানিয়া মলম এনে দিয়েছে । হাতে মলম দিয়ে দিচ্ছে। ব্যথায় আরো চিল্লাচ্ছে লাবিবা। সোহানা এসে বুকে চেপে কান্না বন্ধ করতে চাচ্ছে । কিন্তু লাবিবা আম্মুনিগো শাশুমাগো বলে চিল্লাতেই আছে । সোহানা অনেক বুঝ দিতে থাকে
– মা টা আমার চুপ করো । কোথায় ব্যথা করছে দেখি দেখি । খুব মরেছে ও । ওকে বকে দিবো । মার দিবো । চুপ করো মা । দরকার হলে আমিই তোমাল
র শাশুমা হবো । তোমাক রেধেবেড়ে খাওয়াবো মা । তোমার কিছু করতে হবে না । লক্ষী মা টা আমার । ভালো হয়ে যাবে হাত । আমি আছিতো তোমার কোন কাজ করতে হবে না । আমিই সব করবো । তুমার আব্বু এসে তোমাকে কাদতে দেখলে কষ্ট পাবে তো । আব্বুও কাদবে । তুমি কান্না বন্ধ করো মা । ব্যথা কমে যাবে ।
লাবিবা কাদতে কাদতে সোহানার বুকেই চুপ হয়ে যায় । সোহানা মাথায় হাত বুলিয়ে দেয় । মমতা টেবিল ফ্যান ছেড়ে দেয় । তানিয়া হাত দুটো উচু করে বাতাসে ধরে রাখে । বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামতে থাকে । লাবিবা মুখ তুলে বলে – শাশুমা ক্ষুধা পেয়েছে ।
সোহানা – কি খাবে আমার মা টা ?
লাবিবা- ডুডুলস ।
সোহানা- কিহহ?
লাবিবা- ডুডুলস খাবো ।
তানিয়া -নুডুলস খাবে ?
লাবিবা মাথা নাড়ায় ।
সোহানা উঠে চলে যায় কিচেনে । নুডুলস করাই ছিলো । ওগোলো গরম করে একটু । তানভীর এর মাথা এতোক্ষনে ঠান্ডা হয়। কি করেছে ও ভাবতেই খারাপ লাগতে থাকে । দুষ্টু পুতুল টাকে মেরেছে ভাবতেই বুকে ব্যাথা অনুভব করে । কিচেনে সোহানাকে দেখে বলে
– মম দুষ্টু পুতুল চলে গেছে ?
– না ও আছে । নুপুর চলে গেছে ।
– ওর হাতে মেডিসিন লাগিয়েছো ?
সোহানা একবার ছেলের দিকে তাকিয়েই চোখ ফিরিয়ে নেয় । নুডুলস নিয়ে উপরে চলে আসে । পিছু পিছু তানভীর ও আসে । সোহানা চামচে করে লাবিবাকে খাইয়ে দেয় । তানভীর ভিতরে রুমে ঢুকতেই লাবিবা শাশুমা শাশুমা বলে ভয়ে সোহানাকে জড়িয়ে ধরে । সোহানা ইশারা করলে তানভীর রুমের বাইরে চলে যায় ।
তানভীর বলে – ওকে পাঠাও। বাসায় দিয়ে আসি ।
সোহানা – তোমাকে দিয়ে আসতে হবে না । কেউ একজন দিয়ে আসবে । তুমি যাও এখান থেকে ।
তানভীর চলে যায় । যাবার সময় একবার লাবিবার দিকে তাকায় । লাবিবা সোহানার বুকে মুখ গুজে তানভীরের দিকে তাকিয়েই চোখ পিট পিট করে ।
To be continue _______
®লাবিবা______?