একগুচ্ছ_কালো_গোলাপ?পর্ব_১২
#লাবিবা_তানহা_লিজা
?
রাতে তানভীর বিছানায় শুয়ে এপাশ ওপাশ করতে থাকে । কিছুতেই ঘুমোতে পারে না । চোখবন্ধ করলেই লাবিবার কান্না জড়ানো জলে ভরা চোখ দুটো ভেসে উঠে । উঠে বসে বেলকনিতে আসে । গোলাপ গাছটির দিকে নজর পড়তেই হেসে ফেলে । তারপর আবার মুখে আবার অনুতাপের ছায়া পড়ে।বাচ্চা একটা মেয়ের উপর নিজের রাগ কমানো একদম উচিত হয়নি । রেগে গেলে মাথা একদম ঠিক থাকে না । নিজেকে কেনো যে কন্ট্রোল করতে পারে না বুঝেনা । পড়া যে শিখবেনা এটাতো জানাই ছিলো । শিখিয়ে দেবার জন্যই তো পড়ানো । কেন করলো এটা ? যে মেয়ে ব্যথা না পেয়েই কাদে আর তাকে এতোটা ব্যথা দিলো । কিভাবে পারলো এটা সে ? চোখ দুটো বন্ধ করে নিয়ে ফিসফিসিয়ে বলে “I am sorry…I am sorry..forgive me please ..I never hard you . Sorry for this . ”
বিকালে reading room এ এসে দেখে কেউ আসেনি । লেট হচ্ছে ভেবে বসে পড়ে তানভীর । অপেক্ষা করতে থাকে । তানিয়া ব্যাগ নিয়ে এসে বসে । তানিয়াকে জিজ্জাসা করলে তানিয়া কিছু জানে না বলে । চিন্তায় পড়ে যায় তানভীর । তাহলে কি ইসমাইল লাবিবাকে আসতে নিষেধ করে দিলো ?তানভীর উঠতে নিলে চোখে পড়ে একটা ফোন । হাতে নিয়ে দেখতে থাকে। স্যামসাং ফোনটি খুব সুন্দর পুতুল লাগানো একটি কভার । এবাড়ির কারো নয় বুঝাই যাচ্ছে।তানিয়াকে জিজ্জেস করে – এটা কার ফোন ? তানিয়া ফোন দেখে বলে – ওমা..এটাতো লাবিপুর । তখনি ফোন আসে তানভীরের ফোনে । নুপুরের নাম্বার দেখে রিসিভ করে
নুপু- আসসালামুয়ালাইকুম।
তানভীর- ওয়ালাইকুম সালাম । কোথায় তুমরা ? এখনো আসোনি কেন ?
নুপু- স্যার লাবিবা আর আমি একসাথেই যাবো । ও সুস্থ হোক তারপর ।
তানভীর – কেন? কি হয়েছে ওর ?
নুপু- স্যার ওর অনেক জর ।
তানভীর – ওহ আচ্ছা । ওকে এসো ।
নুপু- আসসালামু আয়ালাইকুম ।
তানভীর উপরে চলে আসে ফোন নিয়ে ।
রাতে আবার ফোনে কল আসে । স্কিনে আখির নাম্বার দেখতে পায় ।রাগ হলেও তানভীর নিজেকে সামলে নেয় । রিসিভ করে রেকর্ড চালু করে ।
তানভীর – হ্যালো
আখি- আপনিতো ভারী লেট ..এতোক্ষন সময় লাগে নাকি ফোন ধরতে ?
তানভীর – আমি নিশ্চয় তোমার ফোনের জন্য বসে ছিলাম না ।
আখি- আপনি এভাবে কেন কথা বলেন ? আমাকে দেখে কি আপনার এমন ভাবে কথা বলতে ইচ্ছা করে ?
তানভীর গা ঝাড়া দিয়ে বলে – তো কিভাবে কথা বলতে হবে শুনি ।
আখি- সোফ্ট মানুষের সাথে সোফ্টলি কথা বলতে হয় ।
তানভীরের লাবিবার কথা মনে পড়ে । খুবই রাফ ব্যবহার করে ফেলেছে ।
তানভীর – তুমি কি আমাকে পছন্দ করো ? দেখো সোজা সাপ্টা উত্তর দিবে । আমি স্পষ্ট ভাষীকে পছন্দ করি ।
আখি মাথা নাড়িয়ে লজ্জা ভাব এনে বলে – জি ।
তানভীর – আমার সাথে রিলেশন শীপে যেতে চাও ?
আখি- জি
তানভীর – রাজিবের সাথে কি ব্রেকাপ করে দিয়েছো ?
আখি এবার আমতা আমতা শুরু করে । সামনে নিয়ে কাপা গলায় বলে – কে কে রাজিব ?
তানভীর – ও এখন রাজিব কে চিনো না ? যার সাথে একবছরের রিলেশন তাকে চিনোনা। যাকে বেলেছো তুমি এইচ এস সি এক্সাম দিবে । সিলেটে তোমার বাসা।তোমার বাবা লন্ডনে অনেক বড় ব্যবসায়ী । কোটি কোটি টাকা তোমার বাবার । তোমার বাবা তোমাকে নিয়ে খুবই কনসান তাই তোমাকে একা ছাড়ে না । তাই তুমি মিট করতে পারছো না । একের পর এক গিফ্ট রিসিভ করছো ।
আখি কাপতে কাপতে বলে -আপনি কে ?
তানভীর- চুপ করো বেয়াদব মেয়ে । ফাজিল থার্ড ক্লাস মেয়ে । লজ্জা করে না তোমার ? এতো মিথ্যা কথা বলে একটা ছেলেকে জালে ফাসিয়ে তাকে ব্যবহার করতে ? ওইটা দুরে হয়ে গেছে তাই এখন আমার সাথে ভাব নিচ্ছো যেন তোমার রুপে আমি পটে যাই । ছোট একটা মেয়ে নাক চাপলে দুধ বের হবে আর সে প্লে গার্ল হোওয়ার রাস্তায় হাটছে । এমপির ছেলে দেখতে হ্যান্ডসাম বড় লোক দেখে লাইন দিতে চলে আসছো । বাজে মেয়ে কথাকার । রাজিবের কাছে যেনে নিবে আমি কে ? ফোন রাখ।
ফোন কেটে রেকডিং টা রাজিবকে সেন্ড করে । বিছানায় ফোন ডিল দিয়ে বেলকনিতে চলে আসে । গোলাপ গাছটির দিকে চোখ পড়তেই লাবিবার ফোনের কথা মনে পড়ে । রুমে এসে ফোন হাতে নিয়ে ক্লিক করতেই কিউট একটা পিক লক স্কিনে ভেসে উঠে সাথে সাথে তানভীরের ঠোটেও মৃদু হাসি ফুটে ওঠে । নিমেষেই বিরক্তির সব আধার কেটে যায় । বালিশে মাথা রেখে শুয়ে পড়ে । ফোনটা লক করা তাই খুলতে পারছে না । অনেক নাম দিয়ে খুলার চেষ্টা করে । লাবিবার নাম বয়স সব কিছু দিয়ে ট্রাই করে বাট পাসওয়ার্ড মেচ করে না । শেষ মেষ লাবিবার খাতার ফেয়ারি❤ডেবিল নামটা মনে হয় । লগ ইন করতেই লক খুলে যায় । লক খুলতেই আরেকটা কিউট পিক স্কিনে ভেসে উঠে । তানভীর ফোন ঘেটে দেখতে থাকে । কল লিস্টে জানু ভাইয়া এই দুই নাম্বারেই বেশি কল । জানু নুপুরের নাম্বার আলষর ভাইয়া মুক্তা স্যারের যদিও মুক্তা স্যারের নাম্বার তানভীর চিনেনা ধরে নিয়েছে । এপ স্টোরে সব গেমস । ভিডিও লিস্টে শুধু কার্টুন- মিনা রাজু, সিসিমপুর, ওগি, ফেয়ারি টেল। এসব দেখে তানভীর হাসতে হাসতে শেষ । মনে হচ্ছে পাচ বছর বাচ্চার একটা ফোন হাতে নিয়েছে । গ্যালারিতে গিয়ে তানভীর শকড। আট হাজার ছাপ্পান্ন পিক দুষ্টু পুতুলের । লাবিবার প্রত্যেকটা পিক দেখে তানভীরের নিশ্বাস বন্ধ হওয়ার অবস্থা । একেকটা কস্টিউম সব গাউন ঠিক যেন পরীর ড্রেস ~ একেকটা স্মাইল দুষ্টুমিতে ভরা দুস্টু পুতুল ~ একেকটা লুক নেশা ভরা ~ একেকটা পোজ মডেলদের থেকে কম না ~ একেকটা এক্সপ্রেশন পাগল করা ~ একেকটা বডি ল্যাংগুয়েজ লাইক হিরোইন। সারারাতের ঘুম হারাম হয়ে যায় তানভীরের । পিকের মেয়েটাকে কিছুতেই পিচ্চি দুষ্টু পুতুলের সাথে মেলাতে পারছে না । মনে হচ্ছে উনিশ বছরের এক যুবতি মডেলের ফটোশুট করা ফটো দেখছে সে । এ যাবত যা খেয়াল করেনি আজ তাই খেয়াল করছে । প্রত্যেকটা পিক খুটিয়ে খুটিয়ে দেখতে থাকে সে । রাত্রি শেষ প্রহরে তার পিক দেখা শেষ হয় । আযানের শব্দ শোনা যায় । মাথা পুরো হ্যাং । পাগল প্রায় অবস্থা তানভীরের । মুখ থেকে আপনা আপনি উচ্চারিত হয় – ইউ আর এ ………..গার্ল দুষ্টু পুতুল । একটু সাজলে তোমায় এত্তো সুন্দর লাগে আমার ধারনার বাইরে । ইউ আর সো কিউট গুলুমুলু ডিয়ার । ইউ আর রিয়েলি সো সোফ্ট। আমার দেখা শ্রেষ্ট সুন্দরীদের একজন মনে হচ্ছে তোমায়। ইউ আর রিয়েলি লাইক ফেয়ারী । তোমাকে সামনাসামনি দেখার খুব লোভ হচ্ছে দুষ্টু পুতুল । আমি দেখতে চাই তোমায় । আমার মিসবিহেবের জন্য আমি সরি ডিয়ার । সরি ।
বেলা এগারটায় মমতা আসে তানভীরকে ডাকতে । যে ছেলে ভোরে উঠে আজ এতোবেলা করে ঘুমোচ্ছে জন্য চিন্তা হচ্ছে । পিছু পিছু সোহানাও এগোয় । মমতা ভিতরে এসে দেখে তানভীর বিছানায় ঘুমোচ্ছে । ডাক দেয় দু একবার কিন্তু সাড়া নেই । সোহানা এসে ঝাকাতে থাকে । তানভীর আধচোখা হয়ে বলে – মম ঘুমোতে দাও ।
সোহানা – ঘুমোতে দাও মানে ? এগারোটা বাজে । উঠ।
মমতা- তানভীর কখন ঘুমিয়েছিস রাতে যে আজ এতো বেলা ঘুমাচ্ছিস ।
তানভীর – সকালে ।
মমতা- সকালে মানে ? সারারাত ঘুমোসনি কেন ? কোন প্রবলেম ? বল বাবা কি হয়েছে ?
তানভীর – উফ কিছুই হয়নি । এমনি জেগেছি । বেশি চিন্তা করো তুমরা ।
সোহানা – একটাইতো ছেলে আমাদের । করবোনা কেন বল ।
মমতা – হাতে কি এটা দেখি ? ফোন ? কার ফোন এটা পুতুল লাগানো ?
তানভীর হেসে ফেলে ।
– দুষ্টু পুতুলের মম । ভুলে রেখে গেছে । যাও ব্রেকফাস্ট দাও টেবিলে আমি ফ্রেস হয়ে আসছি ।
তানভীর নুপুরকে ফোন করে আসতে বলে । নুপুর এলে নুপুরকে নিয়ে বেড়িয়ে পড়ে । উদ্দেশ্য লাবিবার বাসা । বাসা চেনার জন্য নুপুরকে সাথে নিয়ে নেয় । বাজারে এসে নুপুরকে জিজ্জাসা করে – দুষ্টু পুতুল কি বেশি পছন্দ করে ?
নুপু- চকোমো ।
তানভীর – আর তুমি ?
নুপু-আমিও ।
তানভীর দোকানে যায় । চকলেট কেনার সময় উপরের তাক গুলোতে চোখ পড়ে । হরলিক্স , গুড়ো দুধ এর বয়াম দেখে হেসে ফেলে তানভীর । আম্মুনিকা হরলিক্স খাওয়াকা বাচ্চিকা?। মামা দুইটা হরলিক্সের বক্স ও দেন । চিপস ও দেন । ফ্রুটস এর দোকান থেকে কিছু ফ্রুটস কিনে নেয়।
গাড়িতে এসে একটা চকলেট বক্স প্যাকেট থেকে বের করে নুপুরকে দেয় । নুপুর জিজ্জাসা করে – স্যার এতো বড় প্যাক কেন ?
– তোমার জানু তো অসুস্থ। তাই তাকে সুস্থ করার জন্য প্যাকেট বড় হয়ে গেলো ।
লাবিবার বাসায় এসে গাড়ি থেকে নামতেই ইসমাইল বেলাল এগিয়ে আসে ।
বেলাল-আসসালামুয়ালাইকুম ।
ইসমাইল – আরে তানভীর যে । আসো বাবা আসো ।
তানভীর – ওয়ালাইকুম সালাম । কেমন আছেন আপনারা ?
বেলাল – ভালো বাবা । আসো ।
তানভীর বসার রুমে গিয়ে সোফায় বসে । হাতের প্যাকেট টা টি টেবিলের উপর রাখে ।
তানভীর – লাবিবা কেমন আছে কাকা ?
ইসমাইল মাথাটা নিচু করে নেয় । টিচাররা শাসন করবে মারবে পড়া না শিখলে এটাই স্বাভাবিক। এ ব্যপারে তানভীরকে কিছু বলা শোভা পায় না ।
তানভীর – কাকা আমি সরি। আমি আসলে কয়েকজন ছাত্র পড়িয়েছিলাম । তারা পড়া না শিখলে আমি যেভাবে শাসন করতাম লাবিবাকে সেভাবেই করেছি । আমার আসলে মাথায় আসেনি যে এটা ঐ ছাত্ররা নয় । আমি না বুঝে শুনে কাজটা করেছি । আমি সরি কাকা । ওর হাতের কি অবস্থা ? আমি দেখিও নাই ওর হাতটা ।
বেলাল – না বাবা তোমার সরি বলার কিছু নেই । আসলে দোষটা আমাদের ই । আমাদের মেয়ে পড়া শুনা করে না । তুমি তো শাসন করবেই । মার খেয়ে ভয়ে কে না পড়ে বলো ..। কিন্তু ওর একটা সমস্যা আছে । কোন ছেলের হাতের মার ও সহ্য করতে পারে না । হোক সেটা আমি নয় ওর বাবা নয় ওর টিচার ..যে কোন ছেলের হাতে মার খেলেই ও অসুস্থ হয়ে পড়ে । টানা জর চলে আসে । কিছুতেই দু তিন দিনের আগে কমাতে পারি না । মেয়ে আমাদের মূমুর্ষূ অবস্থা হয়ে যায় । এর জন্য কেউ ওর গায়ে হাত তুলে না শত দুষ্টুমি করলেও । ওর বাবা সময় সময় ভূল করে বসে তারপর আমরা মেয়েকে হারাতে বসি । আমাদের ই উচিত ছিলো তোমাকে আগেই বলার যে ওকে না মারতে । আদরের মানুষদের আদর দিয়েই পড়াতে হয় বুঝলে বাবা ? তোমার বাবা আমার বন্ধু মানুষ । ও বলেছিল বলেই আর তোমার মতো বুঝদার ছেলে দেখেই ইসমাইল পড়াতে বলেছে তোমায় । তোমার বাসা থেকে আসার পর রাত থেকেই জর । সকালেও ছিলো । এখন একটু কমেছে ।
– আংকেল আমি আসলে জানতামনা ব্যপার টা ।এরকম ভূল আর কখনো হবেনা ।আমার উপর ভরসা করতে পারেন । আমি দু মাসের মতো আছি । আমি কথা দিচ্ছি ওকে যত্ম নিয়ে পড়াব । বাসায় আর পড়া দিবো না । সামনে বসিয়ে সব পড়া মুখস্ত করাব । রাত যতই গভীর হোক আমি নিজে পৌছে দিয়ে যাবো ।
ইসমাইল – আমার মনে হয় না আর পড়বে তোমার কাছ তানভীর – কাকা ও ছোট মানুষ জিদ তো করবেই । বুঝালেই বুঝবে ।
ইসমাইল – দেখো বুঝে কিনা । আমার একটাই মেয়ে বাবা । মানুষ না করতে পারলে সব শেষ ।
সাবিনাকে ডাক দেয় ইসমাইল । সাবিনাকে বলে লাবিবার রুমে নিয়ে যাও । সাবিনা তানভীরের সাথে কুশল বিনিময় করে লাবিবার রুমের দিকে এগোয় । দরজায় দাড়াতেই দেখে লাবিবা খাটে হেলান দিয়ে বসে টিভিতে ওগি দেখতে দেখতে খিল খিল করে হাসতেছে । শুকনো অসুস্থ মুখে হাসি বড্ড অদ্ভুত লাগছে যেনো । হাতের দিকে তাকাতেই দেখে ব্যন্ডেজ করা । মাথা পুরো খারাপ তানভীরের । এমন মার মারলো যে হাত ব্যন্ডেজ করতে হলো । সাবিনা ভিতরে ডুকেই টিভি অফ করে দিলো । লাবিবা এক চিক্কুর দিল- আম্মুনি…..আমার ওগি ..??।
সাবিনা – আপাদত ওগি রাখ । স্যার আসছে তোকে দেখতে ।
তানভীর – কাকিমা ওর হাতে ব্যন্ডেজ ..
সাবিনা – আর বলোনা বাবা ..হাত দুটো দেখে আর চিৎকার করে কাদে । তাই ডাক্তার ব্যন্ডেজ করিয়ে দিয়েছে যাতে না দেখতে পায় ।
তানভীর – ওহ ।
লাবিবা ভয়ে রাগে শেষ । ডলফিনটা কেনো এলো ? আবার মারবে নাকি? না আর মারবে না । সরি বলতে এসেছে । সরি এক্সেপ্ট করমু না । অভিশাপ দিমু বেশিনা জাস্ট একটা। বেটা ডলফিন তোর কোন দিন বিয়ে হবো না? । অভিশাপ ডান ?
To be continue____
®লাবিবা_____?