একগুচ্ছ_কালো_গোলাপ?পর্ব_১৪
#লাবিবা_তানহা_লিজা
?
রাতে আখি রাজীবকে দেখা করতে বলে। রাজীব রাজি না হলে তানভীরের কথায় রাজি হয় । আখির বাড়ির সামনে বাশ বাগানে এসে পৌছায় রাজিব । আখি আগে থেকেই ওয়েট করছিলো । রাজীব সামনে গিয়ে পকেটে হাত দিয়ে অন্যদিকে ফিরে বলে
– বল কি বলবে ।
– আমি এখন বিয়ে করবো না । আমার বিয়ের বয়স হয়নি ।
– ছেলে পাগল করার বয়স তো হয়েছে ।
– দেখো হুট হাট বিয়ে করবো বললেই হয় না । আমার পরিক্ষা শেষ হক । আমার আঠারো বছর পূর্ণ হোক তারপর ধুম ধাম করে বিয়ে করা যাবে । আমি এখনি বিয়ে কি ভাবে সম্ভব ?
– তোর আঠারো বছর পূর্ণ হতে হতে তুই এক নাম্বার থেকে দুই নাম্বার হয়ে যাবি । তিন চার হতেও খুব একটা অসম্ভব কিছু না । রিজেক্ট মাল রাজিব নেয় না । বিয়ে কাল মানে কাল ই । উল্টা পাল্টা কিছু করার চেষ্টা করবিনা । আমি কিন্তু এখানেই আছি । পা মুচরে দিবো । সাথে তোর নায়ক ইসহাক আর জহির কেও । কখন কি কার সাথে টাঙ্কি মেরেছিস সব আমার জানা হয়ে গেছে । বাসায় যা ।
– দেখো তুমি ভুল বুঝছো আমাকে । এসব তোমার কানে দিয়ে বিষ ঢেলেছে আমার নামে । অনেকের নজর আমার দিকে । অনেকেই শত্রুতা করে আমার মতো সুন্দরী মেয়েকে না পেয়ে ।
রাজীব রেগে ঠাস করে গালে একটা চড় বসিয়ে দেয় । আখি একটু দুরে ছিটকে পড়ে । রাজিব এগিয়ে চুলের মুঠি ধরে বলে – এতোদিন যা যা বলেছিস সব গুলো মিথ্যা । এতোকিছু জানার পর যে তোকে আমি বিয়ে করেই এইটা তোর সাত কপাল। সবার নজর না তোর দিকে ? সেই নজর থেকে বের করার ব্যবস্থাই করছি । দু তিন দিন এই বাড়িতে থাকতে পারবি তার পর তুই বন্দি হবি আমার মহলে । শুধু আমার নজর পড়বে তোর দিকে । যা বাসায় যা । ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে আমাকে নিয়ে সপ্ন দেখ ।
রাজিব রাগ দেখিয়ে চলে আসে ।
পরদিন সকালেই ঢাকা থেকে রাজিবের বাবা মা ভাই চলে আসে । ছেলে এই ভাবে বেড়াতে এসে বিয়ে করবে কিছুতেই মানতে পারছে না তারা । ফিরোজ তাদের বোঝিয়ে বলে । তানভীর মেয়ের ছবি দেখানোর পর তারা রাজি হয় । রাজিবের বাবা মা ঢাকা থেকেই কনের শপিং সব করে এনেছে । বেলা এগারোটার দিকে রাজিব কে গায়ে হলুদ করানো হয় । ঘরোয়া ভাবে খুব সুন্দর করে গায়ে হলুদের অনুষ্টান শেষ করানো হয় । ছেলেদের গায়ে হলুদ বেশি নিয়ম নেই । বারোটার দিকে তানভীর ,রাজিবের ভাই রাজন , তানিয়া যায় কনের বাড়ি হলুদ নিয়ে । বাড়ির ভিতর ঢুকতেই আনিস ইসমাইল সাদরে স্বাগতম জানায় ওদের । তত্ব রেখে বউ দেখার জন্য ভেতরের ঘরে আসতেই দেখে লাবিবা খাটে বসে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাদছে সাবিনার আচল ধরে । তানভীর এগিয়ে গিয়ে বলে কাকি দুষ্টু পুতুল কাদছে কেন ?
সাবিনা – আর বলো না বাবা … হাতে সমস্যা তাই মেহেদি দিতে পারছে না । মেহেদি পাতা বেটে সবাই হাতে দিয়েছে ও পারে নি তাই কান্না করছে ।
আচল টেনে বলে – এখন চুপ কর । দেখ স্যারের সামনে কাদে স্যার কি বলবে বল তো ? বলবে লাবি মনি পচা শুধু কাদে । চুপ করে বস তোর আন্টিকে হেল্প করতে হবে তো । সাবিনা চলে যায় । তানভীর ফোন করে কাকে যেন চকলেট আনতে বলে । পাচ মিনিটের ভেতরে এক প্যাকেট চকলেট নিয়ে একটা ছেলে আসে । তানভীর চকলেট লাবিবার সামনে রেখে একটা ছিড়ে খেতে থাকে আর বলে – yammy?? খেতে চাইলে ফেস ফেস কান্না বন্ধ করতে হবে । লাবিবা আস্তে আস্তে চুপ হয়ে যায় । তানভীরের দিক তাকিয়ে বলে – স্যার আপনি ব্যকটেরিয়া খাচ্ছেন কেন ? যান জীবানু দিয়ে হাত ধুয়ে আসুন ? ।
– হ্যান্ড স্যনিটাইজার ইউজ করি আমি । বাই দ্যা ওয়ে আবার হাতে ব্যন্ডেজ করেছো কেন ?
– দেখবো না আমি দাগ গুলো ভয় লাগে ।
– মলম লাগিয়ে দিয়েছিলাম । খুলে দেখো হাত একদম ঠিক হয়ে গেছে ।
– না ।
– হ্যা । হাত দাও দেখি আমি খুলে দিচ্ছি । বেন্ডেজ খুললাম । ওয়াও দেখো তুমার হাত কতো সুন্দর হয়ে গেছে ।
লাবিবা দেখল সত্যিই তো ভালো হয়ে গেছে ।
– স্যার ঐটা কিসের মলম ছিলো ?
– ঐটা ব্যথা + দাগ কমানোর মলম । ফ্রান্স থেকে আনা । আমার ফ্রাকচার বেশি হয় তাই সাথে রাখি সব সময় । সেদিন ই লাগিয়ে দিতাম কিন্তু তুমি আগেই চলে আসছিলে । বিডির টাকায় তিন লক্ষ ছাপ্পান্ন হাজার টাকা।
-?? এতো দামী মলম ।
– জি । কাজ টাও তো দামী করে তাই না ? এখন দাও দেখি তোমার হাতে বাটা মেহেদি নাকি লাগাবে লাগিয়ে দিচ্ছি আমি । আর একদম কাদবেনা । you know what ?? কাদলে তোমাকে কিউটের ডিব্বা লাগে । কিন্তু এই লুকটা সবাইকে দেখানো যাবে না । এখন চুপটি করে বসো আমি তাড়াতাড়ি মেহেদি লাগিয়ে চলে যাবো ।
– এক মিনিট দাড়ান স্যার আমি দুই মিনিটে একটা চকলেট শেষ করি ।
একটার জায়গায় লাবিবা দুই মিনিটে তিনটি চকলেট শেষ করে । বক্স সহ তার ব্যাগে ঢুকিয়ে রাখে । তানভীরের সামনে এসে হাত পেতে দেয় । তানভীর সুন্দর করে দশ আঙুলে ১ম গিরা পর্যন্ত ভরাট করে মেহেদি দিয়ে দেয় আর তালুতে গোল বৃত্ত আকিয়ে দেয় । লাবিবা খুশিতে বাক বাকুম করতে করতে চলে যায় । আখিকে গালে হলুদ লাগিয়ে কয়েকটা পিক তুলা হয় । সব গুলো রাজীবের ফোনে সেন্ড করা হয় । রাজিব সেগুলো ওর বাবা মাকে দেখায় । তারা প্রসংসায় পঞ্চমুখ ।
__________
সন্ধ্যার দিকে ছেলে পক্ষরা কনে পক্ষের বাসায় যায় । আখিকে আগে থেকেই সাজিয়ে রেখেছিলো । দুজন মেয়ে পার্লার থেকে এসে সাজিয়ে গিয়েছে । রুপ যেন আর ধরছে না গায়ে । বিয়েতে এমনিতেই মেয়েদের সৌন্দর্য বেড়ে যায় । রাজিবের বাবা মা আখির মাথায় হাত বুলিয়ে দোয়া করে । ছেলে বউ দেখে তাদের চোখ চিক চিক করছে । এমন রুপসী বউ পেয়ে তারা খুব খুশি । রাজিবের মা নিজের গলার হার খুলে আখিকে পরিয়ে দেয় যদিও গা ভর্তি গহনা আখির । সবাইকে খাওয়ার জন্য ডাকলে সবাই ডাইনিং এ চলে যায় । রেনু মেয়ের কপালে চুমু দিয়ে বলে – অনেক ভাগ্য করে জন্মেছিস রে মা । আল্লাহ বেহেসতের হুরকে আমার ঘরে পাঠিয়েছে । রুপ যেন আর ধরে না । তেমনি রাজপুত্রের মতো বর পেয়েছিস । কতো ভদ্র শ্বশুর শাশুড়ী । কতো বড়লোক ওরা । এমন ঘরে মেয়ে বিয়ে দিবো ভুল করেও যে ভাবিনি কখনো । অনেক সুখী হ মা । বুকে জড়িয়ে ধরে কেদে ফেলে । এদিকে আখিও এতোক্ষনের চাপা কান্না ধরে রাখতে পারে না ।মা মেয়ে একে অপরকে জড়িয়ে কাদে ।সাবিনা এসে রেনুকে সরিয়ে নেয় । সান্তনা দিতে থাকে রেনুকে । রেনু এমনিতেই ব্লাডপ্রেসারের রোগী । পরে না হয় অসুস্থ হয়ে পড়লে আরেক ভেজাল ।
খেতে বসছে সবাই । সাবিনা লাবিবাকে নিয়ে আসে খাওয়ার জন্য । লাবিবা খাবেনা জন্য বায়না ধরেছে । সাবিনা টেনেই নিয়ে আসছে । আসার পর থেকে তানভীরের চোখ দুটো লাবিবাকে খুজছে । দেখতে পায়নি কোথাও । এতোক্ষনে তার চোখে ধরা পড়েছে ।
চোখ আটকে যায় তানভীরের । পিংক কালার বারবি গাউন উইথ পিংক স্টোনের সিম্পল জুয়েলারি । চুল গুলো এক পাশে ছেড়ে রাখা । তাতেই যেন ফেয়ারি লাগছে । আর কোন সাজ নেই মুখে । সাজের কোন প্রয়োজন ই তো নেই । চোখ দুটো এমনিতে গাড় কালো ভাসা ভাসা অসম্ভব সুন্দর । গোলাপি ঠোট দুটো চকলেট খেয়ে চকলেট কালার করে রেখেছে । বড় মেয়েদের মতো লাগছে লাবিবাকে । তানভীর যেন এক নেশায় ডুব দিয়েছে । তৃষ্ণা মেটাচ্ছে চোখের । রাজনের ধাক্কায় হুস ফেরে তানভীরের । সামনে তাকিয়ে দেখে লাবিবা খেতে বসেছে । সাবিনা জোর করে মুখে খাবার পুরছে আর বলছে – সারাদিন না খেয়ে আছিস । একটু আগে ডান্স ও করেছিস । এবার মাথা ঘুরে পড়ে গেলে কেমন হবে বলতো ? বিয়ে দেখবো নাকি তোকে নিয়ে ডক্টরের কাছে দৌড়াদৌড়ি করবো ?
মা মেয়ের খাওয়ানো দেখতে দেখতে নিজেও খেয়ে নেয় তানভীর । লাবিবা খেয়ে উঠেই নুপুরের কাছে চলে যায় দৌড়ে । তানভীর পিছু পিছু যায় । লাবিবা তানভীরকে দেখেই হাত উচু করে দেখিয়ে বলে – স্যার দেখুন আমার হাত । তানভীর এগিয়ে এসে হাত দুটো নিজের হাতে মুঠো করে নেয় । কেন জানি খুব ইচ্ছা করে সব সময় এই নরম হাত দুটো নিজের হাতে আবদ্ধ করে রাখতে । ছুয়ে থাকতে সব সময় । মুখে হাসি ফুটিয়ে বলে – বাহ অনেক সুন্দর রং হয়েছে । সুন্দর লাগছে অনেক । কিন্তু হাতে কিছু পড়নি কেন ? খালি খালি লাগছে । নুপুর তোমার পিংক কালার চুড়ি আছে ?
– আছে তো ।
– লাবিবাকে এনে দাও । তোমার দু হাত ভর্তি চুড়ি কিন্তু ওর হাত যে খালি দেখোনি ?
-ও তো চুড়ি পড়ে না স্যার । তাই ।
– আনো পড়বে ।
নুপুর চুড়ি আনতেই তানভীর হাতে পড়িয়ে দেয় ।লাবিবা হাত নেড়ে চেড়ে দেখে সুন্দর মানিয়েছে অনেক । কাজী সাহেব বিয়ে পড়াবে শুনে তানভীর চলে আসে বর বউয়ের কাছে । লাবিবাও আসে । কাজী এখনো বসে নি । ফুলের মালা নিয়ে আসে রাজন । তানভীর খেয়াল করে মালা দুটো গোলাপী গোলাপের । তানভীর মালা দুটো হাতে নিয়ে যেখান থেকে ফুল নিলে মালা ছিড়বেনা সেখান থেকে দুই মালার দুটো ফুল ছিড়ে হাতে রাখে । বর বউ একে অপরকে মালা পড়িয়ে দেয় । কাজি এসে বসে পড়ে বিয়ে পড়ানোর জন্য । রেজিস্ট্রি কাগজে বর বউ সাক্ষর করে । সবাই দাড়িয়ে উপচে পড়ে দেখতে থাকে । তানভীর আখিকে দেখছে । সুন্দরী মেয়েটা বউ সাজে কতই না সুন্দর লাগছে । আচ্ছা দুষ্টু পুতুলটাকে বউ সাজালে কেমন লাগবে ? পুতুল বউ লাগবে একদম ।দেখার বড় লোভ জাগে তানভীরের । লাবিবার পাশে এসে দাড়ায় ভীড়ের মধ্যে। চুল থেকে ক্লিপ খুলে গোলাপ দুটো কানের পাশে লাগিয়ে দেয় ।
লাবিবা খুশি হয়ে বলে
– স্যার thank you attoogulla onkmuch.
কাজী আখিকে কবুল বলতে বলে । আখি বলতে দেড়ি করছে। তানভীর লাবিবার কানে কানে বলে
– দুষ্টু পুতুল তুমি কি জানো এখন বউ কি বলবে ?
– জানিতো ।কবুল কবুল কবুল ।
আখি কবুল বলে । তারপর কাজী রাজিব কে কবুল বলতে বলে । রাজিব ও বলে । সাথে সাথে তানভীর ও লাবিবার দিকে তাকিয়ে থেকে বলে কবুল কবুল কবুল ।
To be continue ____
®লাবিবা ___?