একগুচ্ছ_কালো_গোলাপ?পর্ব_১৫
#লাবিবা_তানহা_লিজা
?
কনে বিদায়ের সময় আখি প্রচুর কান্না করে । নুপুর বোনকে ধরে অনেক কাদে । রেনু আনিস মেয়েকে ছাড়েই না । বিয়ে বাড়িতে মরা বাড়ির মতো কান্নার রোল পড়ে যায় । লাবিবাও আখির মতো চিক্কুর দিয়া কাদতে থাকে । সাবিনা মেয়ের মুখ চেপেও কান্না থামাতে পারে না । আখি কাদতে কাদতে অস্থির হয়ে যখন গলাটা একটু লো মোশনে নামিয়ে নেয় তখন সবাই অন্য কান্না শুনতে পায় । এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখে লাবিবা কাদছে এই ভাবে । ইসমাইল রাগ দেখিয়ে সাবিনাকে বলে – জানোইতো কান্না দেখলে আমার মেয়ে সহ্য করতে পারেনা । ওকে এখানে এনেছো কেন ? আর মুখ চেপে ধরেছো কেন ? শ্বাস বন্ধ করে মেরে ফেলবে নাকি ??
সাবিনা হাত সরাতেই লাবিবা জোরে চিল্লিয়ে বলতে থাকে – আমি বিয়ে করবো না আমি কোথাও যাবো না ,আমি আব্বুকে ছাড়া কোথাও যাবো না, আমাকে তোমরা বিয়ে দিও না , আমি আমার বাড়ি ছেড়ে কোথাও যাবো না , আমি বিয়ে করবো না ??।
কনে সহ সবাই লাবিবার দিক বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে । এর আবার কি হলো ? কেউ কেউ বোঝাতে শুরু করে আখির বিয়ে হয়েছে । তোমার বিয়ে হয়নি । তোমাকে আমরা বিয়ে দিবো না । তুমি কান্না বন্ধ করো । কিন্তু বেচারিকে কেউ চুপ করাতে পারে না । তানভীর এসে আবার মুখ চেপে ধরে । সাবিনা ইসমাইলের দিক তাকালে তারা অসহায় লুক দেয় । তাদের মেয়ে যে এমন সেটা তো তারা ভালো করেই জানে কিন্তু আর লোকজন কি ভাববে ভেবেই টেনশনে মরে যাচ্ছে । তানভীর ইসমাইলকে ইশারা করে লাবিবাকে নিয়ে বাড়ির ভিতরে চলে আসে । নয়তো কনে বিদায়ের অনুষ্টান না হয়ে দুষ্টু পুতুলের উথাল পাতাল কান্নার ভাব দেখতে হবে ।
চেয়ার টেনে বসিয়ে দেয় লাবিবাকে । ব্যাগে তুলে রাখা চকলেট গুলো এনে হাতে দেয় । লাবিবা ফুপাতে ফুপাতে ভেজা চোখে চকলেট খেতে থাকে । তানভীর কান্না ভেজা মুখের পানে চেয়ে থাকে । কাদলে মেয়েটাকে এত্তো কিউট লাগে ..মনে হয় কামড়েই খেয়ে ফেলি । এত্তো কিউট কেন তুমি দুষ্টু পুতুল ? তোমার এই বাচ্চামো স্বভাবের নেশাই পড়ে যাই বার বার । কোমার সরল মনটার মায়াই পড়ে যাই বার বার । তোমার দুষ্টুমি গুলোর প্রেমে পড়ে যাই বার বার । এতো বোকা কেনো তুমি দুষ্টু পুতুল ? কবে বুদ্ধি হবে তোমার ? কবে বড় হবে হবে তুমি ? আচ্ছা বড় হলে কি তুমি এমনি সহজ সরল আমার দুষ্টু পুতুল হয়েই থাকবে নাকি আজকালকার মেয়েদের মতো হয়ে যাবে ? তুমি এমনি থেকো দুষ্টু পুতুল । তুমি পাল্টে গেলে অনেক মিস করবো তোমায় । অবশ্য আমি তো থাকবোই না । ক্যরিয়ার একটা জিনিস জানো যা অর্জন করা কঠিন কিছু নয় আবার সহজ ও নয় । তবে চাইলেই অর্জন করা যায় । এক হলো তকদীর আরেক হলো তদবীর । কিন্তু এর জন্য অনেক কিছু জীবন থেকে বাদ পড়ে যায় । অনেককিছু সেক্সিফাইজ করতে হয় । কিন্তু যা ভাগ্য লেখা থাকে সেটা কিন্তু ঘুরে ফিরে তোমার কাছেই আসবে ।বড় কিছু পাবার জন্য ছোট ছোট অনেককিছু তো সেক্রিফাইজ করতেই হবে বলো । বুঝলে ??
লাবিবা এতক্ষন চকলেট খেতে খেতে তানভীরের কথা গুলো শুনছিল । শেষ কামড় টা দিয়ে হাত ঝাড়া দিয়ে বলে – হুম বুঝলাম। আব্বু বলে ক্যরিয়ারের সাথে নো কম্প্রোমাইজ । ক্যরিয়ার না গড়লে দাম নেই । কিছু একটা না করতে পারলে খাবে কি ?
– তোমার এইম কি দুষ্টু পুতুল ?
– ট্রাভেলার হওয়া ।
– তার জন্য তো অনেক টাকা প্রয়োজন । তুমি তো পড়া শুনা করোনা । জব ও তো পাবে না । আমি যতোদূর জানি কাকা তোমাকে একদম সাপোর্ট দিবে না ।
– আমি পড়বো তো । জব করবো । তারপর ঘুরে ঘুরে বেড়াবো ।
– দেখা যাবে ।
– আই সোয়ার । আমি ভালোভাবে পড়াশুনা করবো ।
– গুড গার্ল। তুমি বসে বসে চকলেট খাও আমি আসছি ।
খান বাড়িতে ফিরে আসে সবাই । বাড়ি ভর্তি লোকজন।রাজীবের আত্মীয়রাও এসেছে। তানভীরের রুমে আখি রাজীবের বাসর সাজানো হয়েছে। আখিকে রুমে এনে যাবতীয় নিয়ম পালন করানো হচ্ছে । তানভীর ফুলে সাজানো খাটের কোনায় বসে ফোন চাপছে । হটাৎ মিষ্টি একটা ভয়েজে চোখ উপরে তুলে সামনে তাকায় ।
লাবিবা ঝুলানো ফুলের মালা গুলো ধরে ধরে দেখছে আর ওয়াওও…ফেনটাস্টিক..নাইস.. উফফ লাভলি?? আওয়াজ করছে । তানভীরের মেরুদন্ড দিয়ে শীতল হাওয়া বয়ে যায় । বুঝতে পারছেনা এটা চোখের ভ্রম নাকি অন্যকিছু ? এতোক্ষন ফোনে আজকের দুষ্টু পুতুলের পিক গুলোই দেখছিলো । যখন ওকে খাওয়াচ্ছিলো তখন তুলেছে ফোনে। তাইকি এমন সব জায়গায় দেখছে ? ইসমাইলের গলা শুনে । ইসমাইল সোহানাকে বলে – আর বলবেন না ভাবী । বাসর সাজানো দেখবে বলে লাফালাফি করছিলো । কিছুতেই আটকাতে পারছিলাম না ।
সোহানা হেসে ফেলে । লাবিবার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয় ।- ছোট মানুষ তো এসবিতো দেখবে । এসেছে যখন আজ থেকে যাকনা ভাইজান । তানিয়া আছে তানিয়ার সাথে থাকুক আজ ।
– না ভাবী তা কি করে হয় ? ওর আম্মুনি চিন্তা করবে ।আজ থাক । অন্য একদিন এসে থেকে যাবে ।
তানভীর ফোড়ন কাটে ।
– কাকা থাকনা আজ । কাল সকালে আরো কতো কি আছে ..তারপর নুপুরো আসবে । আজ থাক ।
ফিরোজ ও বলে । ফিরোজের উপর কথা বলার স্পর্ধা নেই ইসমাইলের । রাজী হয়ে যায় । লাবিবার মুখে বিশ্ব জয়ের হাসি ফুটে উঠে । সেই হাসিতে তানভীর ও হাসে ।খাটে হেলান দিয়ে দুষ্টু পুতুলটাকে দেখতে থাকে । বারবি গাউন ছেড়ে নরমাল গাউন পড়ে এসেছে । চুল গুলো দুপাশে দুটো ঝুটি করে বুকের উপর ছেড়ে দেওয়া । রজনীগন্ধার মালায় নাক ডুবিয়ে সুবাস নিচ্ছে । তানভীরের অচেতন মন খুব করে জানতে চায় দুষ্টু পুতুল তোমার স্মেল কি রজনীগন্ধার থেকেও সুন্দর নাকি খারাপ ? কেমন তোমার স্মেল ?
তানিয়া এসে লাবিবাকে ডেকে নিয়ে চলে যায় । তানভীর আবার ফোনে মন দেয় । রাজীব আখিকে রেখে একে একে সবাই চলে যায় । এতোক্ষন রাজীবের থেকে পাওনা বুঝে নেওয়ার জন্য আটকেছিলো। এখন সবাই সবার পাওনা পেয়ে চলে গেছে । রুমে শুধু আখি , রাজীব আর তানভীর । রাজীব এসে তানভীরের পাশে বসে গলা খাকারি দিতেই তানভীর তাকায়।
– হুয়াট ?
– তুই কি এখানে থাকার প্লেন করেছিস ? তোর সামনেই কি এখন আমি আমার বউকে জড়িয়ে ধরে ঘুমাবো ?
তানভীর আশে পাশে দেখে কেউ নেই ।
– ওহ । তো এতো রাগ দেখানোর কি আছে ? আমার জন্যই তো বউটা পেলি । চাইলে এখন আমিও বউকে বুকে নিয়ে ঘুমোতে পারি ।
– সিরিয়াসলি দোস্ত ?? বিয়ে করবি ? ঢাকা গিয়েই মেয়ে দেখা শুরু তোর জন্য ।
– এখানে কি মেয়ের অভাব আছে নাকি ? বুঝবিনা তুই । তোর ব্রেইন এখন ভাবী ছাড়া কিছুই বুঝতে চাইছে না । ওকে বাই । গুড নাইট । তোরা জেগে থাক । আমি গিয়ে শান্তির ঘুম ঘুমাই ।
– বিদায় হো শালা ।
– বউ পাইয়া মামা আমাক সহ্য করো না । আমিও বিয়ে করমু মামা । দেখিও ।
তানভীর তানিয়ার রুমে এসে দেখে তানিয়া আর লাবিবা ঘুমিয়ে আছে । তানিয়ার ঘুমোলে আর হুস থাকে না । নির্ভয়ে তানভীর দরজা লক করে লাবিবার দিকে গিয়ে বসে । ছোট চুল গুলো মুখের উপর পড়ে মুখ ঢেকে আছে । আলতো হাতে চুল গুলো সরিয়ে দেয় । টমোটোর মতো গাল গুলো দেখে হেসে ফেলে ।
এক হাতে ভর করে লাবিবার পাশেই সোজাসুজি শুয়ে পড়ে । মাঝখানে দু আঙুল ফাক রেখে । ঘুমন্ত মুখটাতে সারাদীনের চঞ্চলতাপূর্ণ বোকা বোকা লুকটা খুজে পাওয়া যাচ্ছে না । এ যেন স্নিগ্ধতা পূর্ণ মায়ায় ভরা ঘুমন্ত এক উচ্ছল কিশোরী । যাকে আজীবন দেখলেও দেখার শেষ হবে না । ঘন কালো ভ্রু জোড়া আরো ঘন লাগছে । বড় বড় পাপড়ি জোড়া খানিক খানিক নড়ে উঠছে । সরু নাকটা নিশ্বাসের সাথে সাথে বার বার ফুলে ফুলে উঠছে । চকলেটের ঠোট টা ভীষন টানছে। কামড়ে খেলেও যেন এর স্বাদ কমবে না । ঠোটের নিচে তিলটা চোখে ঘোর লাগিয়ে দিচ্ছে। আস্তে আস্তে আরো কাছাকাছি চলে আসে তানভীর । লাবিবার গরম নিশ্বাস তানভীরের সারা মুখে আচড়ে পড়ছে । হটাৎ করে লাবিবা দু হাত দিয়ে চেপে ধরে তানভীরকে । তানভীরের পায়ের উপর পা তুলে দেয় । এমন কাজে তানভীর কিছুক্ষনের জন্য থ হয়ে যায় । উঠতে গেলেই লাবিবা জেগে যাবে । এভাবেও তো থাকা যাচ্ছে না । নিজেকে যে কন্ট্রোল করা খুব দায় । লাবিবা আরো চেপে ধরে । তানভীরের খেয়াল হয় লাবিবার বেডে কোলবালিশ , টেডি বিয়ার দেখেছিলো । তার মানে কোল বালিস ছাড়া ঘুমায় না দুষ্টু পুতুল । আর কিছু না ভেবে সেও নিজের বুকে লাবিবাকে চেপে ধরে দু হাতে জড়িয়ে নেয় নিজের মাঝে । নিমেষেই এক অজানা অনেচা না চাইতেই পাওয়ার সুখে আবেশে চোখ বন্ধ করে ফেলে । শরীরের শিরা উপশিরা রন্ধ্রে রন্ধ্রে জোর দিতে থাকে নিজের বুকে পিশিয়ে ফেলতে । অবচেতন মন শায় দে নিজের মন যা চায় তাই করতে । ব্রেইন বলে উঠে ভালবাসার মানুষটাকে ছেড়ে না দিতে । হালকা ঠান্ডায় উষ্ণতা পেয়ে আরো একটু বেশি শক্ত করে জড়িয়ে ধরে লাবিবা । তানভীর ও শক্ত করে ধরে ঘাড় থেকে এক হাতে চুল সরিয়ে মুখ গুজে দেয় । এতোক্ষনের চাওয়া বহু প্রত্যাশিত দুষ্টু পুতুলের গায়ের স্মেল নিতে থাকে । বকুলের সুবাসের মতো ধারালো একটা মিষ্টি স্মেল নাকে আসে । মন ভরে সেই স্মেল নিতে থাকে তানভীর ।
সকালে তানিয়ার ঘুম ভাঙে। চোখ কচলাতে কচলাতে পাশে তাকাতেই চোখ গোল গোল হয়ে যায় । মুখ ও হা হয়ে যায় । এক লাফে উঠে তানভীর কে নাড়াতে থাকে । – ভাইয়া উঠো । ভাইয়া উঠো । লাবিপুকে ছাড়ো । ভাইয়া উঠো ।
তানভীর চোখ খুলে তানিয়ার কথা শুনে লাবিবার দিকে তাকায় । হুস উড়ে যায় । তানিয়াকে বলে
– কেউ আসেনিতো ?
– তুমি লাবিপুকে বুকে নিয়ে ঘুমিয়েছো কেন ?
-আমতা আমতা করে ।আরে আমিতো ভেবেছিলাম এটা তুই । আমি কি জানতাম নাকি ? কাউকে বলিসনা কিন্তু ।
-না বলবোনা ।আগে উঠো তো ।
– উঠছি । দরজা খোল ।
তানিয়া দরজা খুলতে যায় ।
তানভীর শেষ বারের ঘুমন্ত মুখটা দেখে নেয় । সোফ্ট উষ্ণতা ছেড়ে উঠতে মন না চাইলেও উঠতে হয় । কপালে গাড় করে একটা চুমু দিয়ে উঠে যায় ।
To be continue____
®লাবিবা ____?