একগুচ্ছ_কালো_গোলাপ?পর্ব_১৬

0
6019

একগুচ্ছ_কালো_গোলাপ?পর্ব_১৬
#লাবিবা_তানহা_লিজা

?
সকাল নয়টায় নুপুর বই খাতা নিয়ে হাজির । লাবিবা এখনো ঘুম থেকে উঠেনি ।কেউ ডাকেও নি ওকে । নুপুর এসেই আখির কাছে চলে যায় । দুবোন কিছুক্ষন দুজনাকে জড়িয়ে ধরে রাখে । রাজিব দেখেই হেসে ফেলে । গলা কেশে বলে – বুঝলে শালিকা ..তোমার আপু যেভাবে তোমাকে ধরেছে মনে হচ্ছে কলিজার ভেতর ঢুকিয়ে ফেলবে । কতো ভালোবাসে তোমায় । আর আমি যে সেই কাল থেকে বলছি আমাকে একটু এমন করে ধরো ..এখনো ধরলোই না । একটুও ভালোবাসে না আমায় ।
নুপুর ফিক করে হেসে ফেলে । আখিতো লজ্জায় মরে যায় যায় অবস্থা । তানভীর রুমে ডুকতে ডুকতে বলে
– ভাবী না ধরলেও তুইতো ছাড়িস নি । ছোট ভেবে ভুল করিস না । সবি বুঝে । দাত বের করে হাসছে । এই কথাটা আমার দুষ্টু পুতুলের সামনে গিয়ে বল ..বেচারি কিছুই বুঝবে না । হা করে তাকিয়ে থাকবে । নুপুর যাও তো দুষ্টু পুতুলের ঘুম ভাঙাও।
রাজিবের দিকে তাকাতেই দেখে রাজীব ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে ।
তানভীর – কি?
রাজীব- তোর দুষ্টু পুতুল ?
তানভীর- কিছুনা ।
রাজীব- ডালমে কুচ কালা হে । শেষ মেষ ঐ বাচ্চাটার সাথে ?? কিভাবে পসিবল এটা ? বুদ্ধিসুদ্ধি থাকলে নয় তো মানা যেত । কিন্তু ঐটাতো ক্লাস থ্রির কিড মনে হয় ।
তানভীর – আই ডোন্ট নো ।

নুপুর এসে লাবিবাকে ঘুম থেকে তুলে । ফ্রেশ হয়ে নিচে আসতেই সোহানা ডাকে । লাবিবা সোহানার কাছে গিয়ে দাড়ায় । সোহানা কিচেনে কাজ করতে করতে বলে – আমার মা টা কি খাবে শুনি ?
লাবিবা পেছন থেকে সোহানার কোমড় জড়িয়ে ধরে বলে – শাশুমা ডুডুলস খাবো । তোমার ডুডুলস অনেক মজা ।
– জানি এইটাই বলবি । তাই আগেই করে রেখেছি ।
টেবিলে বসিয়ে সোহানা লাবিবাকে খাওয়ায় । নুপুর এসে দাড়ালে নুপুরকেও খাইয়ে দেয় । তানভীর ও এসে বসে । সে নিজেও ব্রেকফাস্ট করেনি। মমতা এক বাটি সুপ দিয়ে যায় তানভীর কে । লাবিবা আর নুপুর তাকিয়ে আছে তানভীরের খাওয়ার দিকে । সকাল বেলা সুপ খাচ্ছে কেমন করে ! লাবিবা নুপুর উঠে রিডিং রুমে চলে আসে । তানভীর ও খেয়ে চলে আসে । টানা দু ঘন্টা পড়া মুখস্ত করায় । তার পর লাবিবা বাসায় চলে আসে । নুপুর আখির সাথে থেকে যায় ।
তানভীর ড্রয়িং রুমে আসতেই রাজন বলে – ভাইয়া এলাকাটা ঘুরে দেখতে চাই । তানভীর হেসে বলে – বাইক বের করবো নাকি গাড়ি ?
রাজিব – বাইক চলবে ব্রো ।
তানভীর – ডান ।

লাবিবা বাসায় এসে গেইটে ডুকবে তখনি দেখে বেলাল হাতে করে মাছের ঝুড়ি আনছে। পায়ে কাদা লেগে আছে । লাবিবা সামনে গিয়ে দেখে ঝুড়িতে বড় বড় মাছ ।
– জেঠ্যু মাছ ??
– বড় পুকুর সিচছে ।
– ও আমার আল্লাহ , তাই নাকি ? আগে বলবেনা?
এক দৌড়ে লাবিবা বড় পুকুরের দিকে যেতে থাকে । বেলাল অনেক ডাকা ডাকি করেও কাজ হয় না । বাসায় গিয়ে সখিনার হাতে মাছ দিয়ে বলে সাবিনাকে বলো দুষ্টুটা পুকুর সিচার কথা শুনে বাড়ির ভিতরে না এসেই দৌড় দিছে ।

লাবিবা পুকুরের ধারে বসে বসে মাছ ধরা দেখছে । মাঝিরা মাছ ধরা শেষে মাছ নিয়ে চলে যায় । অল্প পানির কাদায় এখনো অনেক মাছ । ইসমাইল ছেলেমেয়েদের কাদায় নেমে মাছ ধরে দিতে বলে। অর্ধেক যারা ধরে দিবে তাদের আর অর্ধেক নিজেদের । লাবিবার বয়সী জুই , গোলাপী, রিমিরাও নেমেছে মাছ ধরতে । লাবিবা ওদের মজা করে মাছ ধরা দেখে ছটফট করতে থাকে । বার বার এদিক ওদিক তাকাতে থাকে । ইসমাইলকে লক্ষ্য করে জেলেদের মাছ বুঝিয়ে দিতে ব্যস্ত । কাজ না শেষ হোওয়া পর্যন্ত এদিকে আর তাকাবেনা । লাবিবা একটু একটু করে পাড় বেয়ে পুকুরে নামতে থাকে । জামা একটু উপরে তুলে কাদায় পা রাখে । এক পা রাখতে একটু ডুবে । কিন্তু দু পা রাখতেই অনেকটুকু পা চলে যায় গভীরে । থ হয়ে ওমনি দাড়িয়ে থাকে । আস্তে আস্তে এগুতে থাকে। ছেলেমেয়েরা ততোক্ষনে কাদা ছুড়া ছুড়ি করছে । বেচারা লাবিবা এগুতেও পারছেনা মাছ ও ধরতে পারছেনা কাদার জন্য । হটাৎ ওর জামাতে একটু কাদা এসে পড়ে । লাবিবা কাদা দেখে চিল্লাতে থাকে -ঐ ঐ হাতির হালুয়া ,মুরগির বাচ্চা , পেয়াজের কাচামরিচ, হলুদের রসুন কাদা দিস কেন আমায় ? আম্মুনি দেখলে যখন বকা দিবে তখনকি তোরা বকা শুনবি ??
সুজন – ওখানে দাড়িয়ে থাকলে কি মাছ ধরতে পারবি ? এদিকে আয় । জামা প্যান্টে গুজে কাদায় হাত লাগা ।
লাবিবা – কিন্তু আমার গায়ে কাদা ছুড়বিনা । যদি কাদা লাগে একটা মাছ ও তোদের দিবো না ।
গোলাপী – তোর খালি হুমকি দামকি তাইনা? পুকুরের মালিক চেয়্যারম্যানের মাইয়া হইছস তাই সব সময় পাওয়ার দেখাস ‌
লাবিবা- ঐ ঐ আসছে..লাল গোলাপী hate you. পাওয়ার আছে জন্য ই পাওয়ার দেখাই । তোদের থাকলে তোরাও দেখাইতি। আমি চেয়্যারমেনের মাইয়া ..in the আসিতেছে future দেখিস এমপি মন্ত্রীর বউ ও হমু । তোরা হইতে পারবি ? তোরা সবসময় এমন কথা বলিস । তার জন্য ই তোদের সাথে মিশিনা ?।
হে হে এইটা কে ??…
আওয়াজ শুনে লাবিবা পাড়ে তাকাতেই দেখে রাজিব রাজন তানভীর ভেটকি দিতেছে লাবিবাকে দেখে ।
তিনজনে ঘুরতে বেড়িয়ে বড় পুকুরের ধারে অনেক মানুষ দেখে দেখতে আসছিল কি হচ্ছে এখানে । এসে দেখে মাছ বিক্রি করছে । পুকুরের দিক তাকাতেই দেখে লাবিবা নিচে । হাতে পায়ে জামাতেও কাদা লেগেছে দেখে রাজন সেখানেই হাসতে হাসতে শেষ ।তানভীর রাজিব ও হাসে । লাবিবা রাগ দেখিয়ে বলে
– close up মার্কা add দিতে চাইলে মিডিয়াতে যান । এখানে কি ?
– দুষ্টু পুতুল তোমাকে দারুন লাগছে ।
– খবরদার আমাকে দুষ্টু পুতুল বলবেন না । আপনাকে দাড়ান দেখাচ্ছি …
হাতে কাদা নিয়ে রাজনের দিকে ডিল দেয় । রাজন সরে যাওয়াতে কাদা লাগে না ।
সাবিনা লাবিবাকে ডাকতে এসে দেখে পুকুরে নেমে কাদা লাগিয়েছে গায়ে । রাগে লাবিবা বলে চিল্লানি দিয়ে সামনের জড়ো করে রাখা বাশ থেকে কাচা কঞ্চা ছিড়ে ধেয়ে আসে । লাবিবা সাবিনার কঞ্চা নেয়া দেখে উল্টা দিকে কাদার মধ্যে দিয়েই দৌড় । সবিনা পেছন থেকে বলছে – দাড়া , দাড়া একবার তোর একদিন কি আমার যতোদিন লাগে । লাবিবা আরো দৌড় । সামনে অনেকেই আটকাতে চাইলে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দৌড়ে । সামনে কে আছে তার দেখার বিষয় না । তার মাথায় একটাই কথা ঘুরছে তাকে এই মুহূর্তে বাসায় গিয়ে বাথরুমে ঢুকে দরজা লক করতে হবে । সাবিনা তানভীরকে ইশারায় ধরতে বললে তানভীর এগোতেই ধাক্কা লেগে দুজনেই ধপাস । লাবিবা তানভীরের উপড়ে ধপাস । কোন মতে উঠে এক দৌড়। এদিকে তানভীরের গায়ে কাদা লেগে গেছে । রাজীব রাজন দুজনেই হাসতে হাসতে শেষ । সাবিনা এসে হায় হায় করতে থাকে । ইস বাবা তোমার গায়ে জামায় কাদা লাগিয়ে দিলো পাজিটা ।
রাজিব – ইস…এই অবস্থায় বাসায় যাবি কি করে ? বেলাল এসে বলে আসোতো বাবা কাদা ধুয়ে নিবে । চলো ।
লাবিবা মাত্রই গোসল করে বাইরে আসছে । এসে দেখে তানভীররা বাসায় ঢুকছে । গায়ে কাদা মাখা ।লাবিবা দৌড়ে এসে বলে – ওমা ..? স্যার আপনার গায়ে কাদা দিলো কে ? আপনিও আমাদের মাছ ধরতে আসছেন ?? আপনি বললে তো আব্বু এমনিতেই বড় বড় মাছ গুলো পাঠিয়ে দিতো । কষ্ট করে মাছ ধরতে এলেন কেন ?
তানভীর রাগে কটমট করে সেট আপ বলে দেয় এক ধমক । ইচ্ছা করছে তুলে ধরে দেই এক আছাড় । ডাফার গার্ল কথাকার । পানি আনো আমার জন্য। লাবিবা ধমক খেয়ে দৌড়ে যায় পানি আনতে । ছোট বালতি করে পানি এনে মগ দিয়ে হাতে পায়ে পানি ঢেলে দেয় । উপরের জ্যকেট খুলে লাবিবার হাতে দিয়ে বলে – এটা কুইক ক্লিন করো । লাবিবা কিচেনে এসে সাবিনার হাতে জ্যেকেট দেয় ধুয়ে দেওয়ার জন্য । সাবিনা জ্যেকেট নিয়ে বেড়িয়ে আসে ধুয়ার জন্য । তানভীরদের বসতে বলে বাথরুমে চলে যায়। ধুয়ে রোদে মেলে কিচেনে এসে লাবিবাকে ফল কাটতে বলে । জুস বানিয়ে বিস্কিট নিয়ে ফ্রুটস নিয়ে ট্রে সাজিয়ে লাবিবার হাতে দেয় । লাবিবা ড্রয়িং রুমে এনে টি টেবিলে রেখেই বাইরে চলে আসে । উঠোনে বুছির মা কে দেখে শিং মাগুর মাছ কেটে দিতে । লাবিবাও টুল নিয়ে এসে বসে বসে মাছ কাটা দেখে । পানি থেকে একটা একটা করে সাবধানে মাছ বুছির মাকে তুলে দিতে থাকে ।
বুছির মা – আম্মাগো তুমি আর ধইরো না । এইগুলা একবার গালি দিলেআর রক্ষে নাই । তুমি কোমলা হাতে ধইরো না । পরে তোমার আম্মুনি বকা দিবো আমারে ।
লাবিবা – হুস হুস । কিচ্ছু করবো না । I am সাহসী?
আমিও শিং মাগুর ধরতে পারি । এইটা সবার জানা দরকার । আহহহ…………?
বুছির মা – কি হ ইল,কি হ ইল ? গালি দিছে তাই না । ও সাবিনা ভাবি ?? আইলেন না ? আম্মাডারে শিংএ গালি দিছে ।
লাবিবা – ???
ঘর থেকে সবাই বাইরে আসে লাবিবার চিক্কুরে । সাবিনা বকতে বকতে রুমে নিয়ে আসে । হাত দুটো ভালো করে ধুইয়ে দেয়। লাল হয়ে গেছে যেখানে গালি দিয়েছে । সখিনা গিয়ে বুছির মাকে ধোলাই দিচ্ছে কথায় বকে । মলম লাগিয়ে সাবিনা ফু দিতে থাকে । ইসমাইল হাত পাখায় বাতাস দিতে থাকে উপরে ফেন চললেও । তানভীররা নিরব দর্শক হয়ে লাবিবাকে দেখতে থাকে । কিছুক্ষন পর লাবিবা চিৎকার করা বন্ধ করে ফুপিয়ে ফুপিয়ে বলে – আব্বু ব্যতা কলে .?
লাবিবার এই বাচ্চামো ফেস আর কথায় তানভীরের ও চিক্কুর দিয়ে কাদতে ইচ্ছা করে । কাদো কাদো গলায় বলে – কাকা…কাকী..আপনারা সামলান কি করে একে ? কিভাবে এতো ধৈর্য আপনাদের ?
ইসমাইল সাবিনা অসহায় লুক দিয়ে তানভীরের দিকে তাকিয়ে থাকে ।
________________
তানভীররা রাত করে বাড়ি ফিরেছে । তিনজনে ডিনার করে ড্রয়িং রুমে বসে মুভি দেখছে । আখি এইমাত্র এদের দেড়ি দেখে রুমে চলে যায় । রাজন মুচরামুচরি করে বলে – ভাইয়া .. এই দুষ্টু পুতুলটাকে আমার সেই লাগে । তানভীর প্রজেক্টরের দিক থেকে চোখ ঘুরিয়ে রাজনের দিকে তাকায়।
– কিরকম সেই ? আর দুষ্টু পুতুল বলছো কেন ? ওর নাম লাবিবা তানহা এলিজা ।
– আরে ভাইয়া তুমিও তো বলো । শোননা আমি এইচ এসসি দিবো দুষ্টু পুতুল জে এস সি দিবে ।
রাজিবের টনক নড়ে উঠে । রাজন চুপ কর ।

আরে ভাইয়া তুমিও শোন । আমি তোমাদের একমাত্র ছোট ভাই । আমি তো সব তোমাদের কাছেই আবদার করবো তাই না ?

রাজন তোকে চুপ করতে বলেছি ভাই আমার । প্লিজ চুপ কর ।

ইস ভাইয়া আমি না বললে কেমনে হবে ? তানভীর ভাইয়াকে তো বলতেই হবে । ভাইয়াই পারে আমাদের সেট করে দিতে ।

রাজন চুপ কর ।
তানভীর রাজিব কে থামিয়ে বলে বলতে দে ওকে । রাজীব তানভীরের শক্ত হয়ে থাকা চেহারা দেখে রাজনকে বলে ভাই চল উপরে চল । কাল সকালে যখন চলে যাবো তখন বলিস ।

আরে ভাইয়া এখনি বলি ।
রাজন তানভীরের সামনে এসে বসে বলতে থাকে – ভাইয়া দুষ্টু পুতুলের সাথে কিন্তু আমার পারফেক্ট মেচ হবে । আমার জোস লাগে দুষ্টু পুতুলকে । বড় হলে এই মেয়ে যা সুন্দর হবে না .. নায়িকাদের মতো চেহারা । একটু গুলুমুলু বাট ব্যপার না সফট হবে অনেক উফফ শান্তি । আমি পাগল হয়ে গেছি ওকে দেখে । উজ্জল শ্যমলা রং আই লাইক ইট ,বড় বড় চোখ দেখলেই প্রেমে পড়তে ইচ্ছা করে , রসগোল্লার মতো গাল দেখলেই কামড় দিতে_____
আর বলতে পারে না রাজন । তার আগেই তানভীর ডুসুম করে নাক বরাবর ঘুসি লাগায় ?। রাজন চটকে পড়ে যায় । রাজিব আটকানোর সাহস পায় না । চুল ধরে টেনে তুলে বলে এতোদূর চলে গেছিস তুই ..আমার জিনিসে কামড় দিতে চাস ? তোর স্পর্ধা দেখে অবাক আমি । আমার জিনিসে নজর দেস ?
ওকে দুষ্টু পুতুল শুধু আমি বলবো আর কেউ না । কারন ও আমার ” পুতুল বউ “। মাইন্ড ইট ।
রাজীবের দিকে তাকিয়ে বলে – এই এলাকার জামাই তুই । আসতেই পারিস । বাট এটাকে যেন আমি আর কখনো এই এলাকায় না দেখি । দেখলে কি হবে ভালো করেই জানিস ।

To be continue___

®লাবিবা_____

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here