একগুচ্ছ_কালো_গোলাপ?পর্ব_১৭
#লাবিবা_তানহা_লিজা
?
লাবিবা পড়তে এসেছে । বাসায় না ঢুকে গোলাপ গাছটার দিকে তাকিয়ে আছে । গাছের নিচে দাড়িয়ে হাটা হাটি করছে ।
উফফ ও ফুল তুমি এতো উপরে কেন ফুটো ? নিচে ডাল গুলো যে তোমার জন্য মন খারাপ করে পাতাও দেয়া বন্ধ করে দিয়েছে সেদিকে কি তোমার খেয়াল নেই ? তুমি এতো নিষ্টুর কেনো গো ? আমি যে প্রতিদিন এসে দাড়িয়ে থাকি তুমি কি দেখোনা ? আমার প্রতি কি মায়া হয় না ? আমি এতো ডিল দেই একটাও কি পড়তে পারো না ? আজকে একটা পড় আমার জন্য প্লিজ ।
নিচে থেকে ইটের কনা নিয়ে ডিল ছুড়তেই তানভীর বলে উঠে – আমার গাছে আঘাত করার সাহস কোথায় পেলে তুমি দুষ্টু পুতুল ?
লাবিবা উপরের দিকে তাকিয়ে দেখে তানভীর পকেটে দুহাত দিয়ে উদাম গায়ে দাড়িয়ে আছে । লাবিবা দেখেই হা হয়ে যায় তানভীরের বডি দেখে । এমন কেনো বডি বুজতেই পারে না । আব্বুর জেঠ্যুর তো এমন না । এক দৌড়ে বাসার ভিতর ঢুকে যায় । ব্যাগ রেখে বসে একটু । নুপুর আসতে দেড়ি করছে দেখে পা টিপে টিপে তানভীরকে যেদিকে দেখেছিলো সে দিকে যেতে থাকে । দরজায় একটু ধাক্কা দিতেই দরজা খুলে যায় । ভিতরে উকি দিয়ে দেখে ইয়া বড় হলের মতো । এক কর্ণারে দেখে তানভীর একটা যন্ত্রের দুটো হাতল ধরে টানছে আর পেশি গুলো ফুলে ফুলে উঠছে।লাবিবা অবাক ।এসব কি ? । ভয় পেয়ে ডেকেই ফেলে স্যারর.. তানভীর তাকায় ।হাতে টাওয়েল নিয়ে মাথা মুখ মুছতে মুছতে লাবিবার দিকে এগোয় । লাবিবা তাকিয়ে থাকে অবাক হয়ে । তানভীর সামনে এসে ভ্রু নাচিয়ে ইশারা করলে লাবিবা চুপ থেকে চোখ পিট পিট করে । তানভীর মুচকি হেসে বলে
– আজ সকাল সকাল যে …. ? এই সময়ে আমি জিমে থাকি । কাল থেকে একটু পরে আসবে কেমন? চলো ।
তানভীর ডোর লক করে হাটতে থাকে । লাবিবাও পিছু পিছু যায় । বাড়ির পেছন সাইডে চলে আসে । লাবিবার চোখ পুরো ধাধিয়ে যায় ।
– উফফ লাভলি..? সুইমিং পুল?
তানভীর মুচকি হাসে । লাবিবা দৌড়ে গিয়ে বসে পড়ে পা ভেজায় । তানভীর ও লাফ দেয় । পুরো পুলে উল্টা সাতারে ঘুরে আসে । লাবিবা মুখে একরাশ হাসি রেখে তানভীরের সাতার কাটা দেখতে থাকে । তানভীর ঘুরে আসে লাবিবার কাছে । হাতে পানি নিয়ে ছুড়ে মারে ।
– আহহহ … আমি ভিজে যাবো তো ।
– সাতার পারো ? এখানে সেইফ । মন চাইলেই কাটতে পারো তানিয়াকে নিয়ে ।
– আমি সাতার পারি না ।
– কিহহ?
– হুম । আমি পুকুরে নামলেই জর আসে । আমাদের পুকুরের জায়গাটা ভালো না।
– তাহলে সেদিন নেমেছিলে কেন ?
– সবাই মাছ ধরছিল দেখে আমারো নামতে ইচ্ছা হয়েছিল তো আমি কি করব ?
– নুপুর মনে হয় চলে আসছে । যাও গিয়ে পড়তে বস ।
লাবিবা দৌড়ে চলে যায়। তানভীর সেই কিউট কিউট পায়ের দৌড়ানো দেখে ।
রিড়িং রুমে এসে দেখে নুপুর । লম্বা একটা টান দেয় -দোস্ত………………
– জানু……………….
– কত ঘন্টা পর তোকে পেলাম ..আয় আমরা বুকাবুকি করি
– আয় জানু বুকে আয় বুকাবুকি করি ।
তানভীর রুমে ঢুকতেই দেখে এরা ইদের দিনের মতো কোলাকোলি করছে ।
– এখানে কি হচ্ছে ?
নুপু,লাবি- বুকাবুকি স্যার☺
– what is বুকাবুকি ?
– হাগ স্যার হাগ ।
– হাগ দেওয়াকে বুকাবুকি বলছো । এর ইংলিশ ভার্সন কি হবে? হাগা-হাগি।
তানিয়া মুখ ঢেকে হেসে বলে – খাস বাংলায় পটি করা?।
– সেট আপ?। যাও গিয়ে পড়তে বসো সবাই ।
পড়া শেষে নুপুর লাবিবা হেলতে দুলতে রাস্তা দিয়ে হেটে যায় । রাস্তার এপাশ থেকে একবার ওপাশে যায় আবার ওপাশ থেকে এপাশ থেকে ওপাশে যায় । পিছু পিছু তানভীর ও বের হয় দুষ্টু দুইটা বাসায় ঠিকমত যাচ্ছে কিনা দেখার জন্য । রাস্তায় দুজনের কান্ড দেখে রাগে মাথা ফেটে যাওয়ার অবস্থা । বেশি গাড়ি না চললেও মোটামুটি ভালোই গাড়ি চলছে । মেইন রোড বলে কথা । গাড়ি থামিয়ে জোরে হেটে ওদের পিছনে যেতেই শুনতে পায়
?? বাপে দেই না বিয়া ..
মায়ে দেইনা সাইরা…
কিযে করি আমি একলা একটা মাইয়া ..
ঘটক দেইখা পরান যায় ..
পাত্রের ছবি দেইখা কান্দন পায় ??
নুপুর – জানু তারপরে কি গাইমু ?
লাবিবা- দারা আবিষ্কার করতেছি ।
?? হই হই
রাস্তা দিয়া যখন আমি যাই
মাঝে মাঝে একটা পোলা দেখতে পাই
আলতা রাঙা পায় আবার শাড়ি পড়েছে
পোলারে দেখতে কিযে সুন্দর লাগতাছে
কিউট কিউট আমার বউ মনে হইতাছে ??
নুপু,লাবি- হাততালি .??
নুপু- দোস্ত চল আমরা ঢাকা যাইগা । ক্ষুদে গান রাজে গানগাইমু । দেখবি নোবেল টা আমরাই পামু ।
লাবিবা- তুই না পাইলেও আমি সিউর পামু । গিয়ে বলমু আমি সাবিনা ইয়াসমিন শিল্পির মেয়ে । সবাই ভাববো শিল্পি ..আমি তোমাদের এই গান শুনাবো ..তোমাদের মন ভরাবো এই গানের শিল্পি সাবিনা ইয়াসমিনের মেয়ে । তারপর দেখবি সবাইকে বাদ দিয়ে আমাকেই নোবেল দিবো। আমার মানেই তোর জানু । উম্মাহ হহহ?
নুপুর – ??
লাবিবা- ও আমার আল্লাহ কান্না করিস কেন ? কি হইলো ?
নুপুর – তোর গান শুইনা মুইনের কথা মনে হইল । ওরে আর দেখি না । পেটের নুপুর ,মনের নুপুর, বুকের নুপুর আর বলে না ।
এদিকে লাবিবা মুইনের কথা শুনে ফুটপাতেই বসে হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাওয়ার অবস্থা । পেছনে এতোক্ষন তানভীর মুখ চেপে হাসি আটকে রাখলেও এবার আর পারে না । সেও হাসতে হাসতে ফুটপাতের ঘাসের উপর বসে পড়ে । তানভীরকে দেখে নুপু লাবি দুজনেই অবাক । তানভীরের দিক মুখ করে দুজনেই বসে হা করে চোখ পিট পিট করে হাসি বন্ধ করে তানভীরের হাসি দেখতে থাকে । কেউ দেখলে নিশ্চিত বলবে রাস্তার পাশে সাধু বাবা বসে আছে আর তার সামনে দুটো চেলা বসে আছে । তানভীর অনেক কষ্টে পেট চেপে ধরে হাসি থামায় । ওদের দিকে তাকিয়ে বলে – এগুলা তোদের গান ? ভাবাগো ভাবা ..ইচ্ছে করতেছে আমিই দুইটা নোবেল কিনে এনে তোদের হাতে ধরিয়ে দেই । আর কি ??পেটের নুপুর? মুইন ? হা হা হা ..এই মুইনটাকে তো দেখতে ইচ্ছা করতেছে এখন ।
দুজনেই- do you follow আমাদের ?
– সন্ধ্যা হয়ে গেছে । চল বাসায় পৌছে দেই ।অটো নিলে কি হয় ?
লাবি- স্যার দেখেন নুপুর কতো সুন্দর । একবার নুপুর অটোতে উঠেছিলো । একটা বুইড়া third gender খালাম্মা বলছিলো ” হেই বেবি ..তুমি অনেক সুন্দর । তোমাকে আমার ছেলের বউ বানাবো । চলো আমার বাসায় যাই ।” অটো ওয়ালা ভালো ছিলো জন্য তখনি গাড়ি থামিয়েছে আর সাথে সাথেই ভয়ে নুপুর দৌড় দিছে । একবার ভেবেছেন ঐ খালাম্বা যদি নিয়ে যেতো তখন আমার ভালুপাসাটাকে কই পেতাম ?
তানভীর – সব সময় তো এক হয় না । আর থার্ড জেন্ডার রা এরকমি করে । একবার এক মেয়ে ফ্রেন্ডের সাথে দিয়াবাড়ি ঘুরতে গিয়েছিলাম । সেখানে একদল এসে বলেছিল টাকা দে নয়তো দুজনের থেকে একজন কে নিয়ে যাবো । আমি না করেছিলাম জন্য আমাকেই চ্যাং দোলা করে নিয়ে যাচ্ছিলো আর বলছিলো সুন্দর পোলা পাইছি ..সুন্দর পোলা পাইছি। আমার ফ্রেন্ড তো ভয়ে টাকা যা ছিলো সব বের করে দিয়ে দিচ্ছিলো । আমি বার বার বলছিলামম টাকা না বের করতে । অবশেষে আমাদের কলেজের ই কয়েকজন বড় ভাইয়ের দেখা পেয়ে ডাক দেই । ওরা এসে আমাদের বাচায় ।
নুপু লাবি – ??
আযানের আওয়াজ আসে কানে । তানভীর জিজ্জাসা করে – নামায পড়ো না তোমরা ?
লাবিবা – আমি পড়ি কিন্তু নুপুর পড়ে না ।
– নুপুর নামায পড়বে । আমি যেন আর না শুনি তুমি নামায পড়ো না ।
নুপুর – আমি পড়ি । কিন্তু মিসদেই বেশি । এখন তো পড়তে পারবোনা । একেবারে এশার সময়ে কাযা পড়ে নিবো ।
তানভীর – গাড়ি তে গিয়ে বসো ।
তানভীর ওদের কে নিয়ে সামনে একটা মসজিদের সামনে গাড়ি থামায় ।
– শোন । চুপটি করে বসে থাকবে । আমি নামায শেষ করে আসছি ।
তানভীর গাড়ি লক করে মসজিদে চলে যায় । ফিরে এসে দেখে লাবিবা আর নুপুর দুদিক হয়ে বসে আছে ।
– কি হয়েছে ? ঝগড়া করেছো ?
দুজনেই মাথা নাড়ায় ।
– ঝগড়া করা ভালো না । মিল হয়ে যাও এখনি ।
দুজনেই মাথা নাড়ে ।
– এখনি ভাব করে নিলে দুজনেই গিফ্ট পাবে ।
– গিফ্ট.. উফ লাভলি?
দুজনেই দুজনকে জড়িয়ে ধরে । তানভীর শব্দ করে হেসে গাড়ি স্টার্ট দেয় । বাজারের পাশে দু মিনিটের জন্য গাড়ি থামিয়ে দু প্যাকেট চকলেট বক্স এনে দুজনকে দেয় । নুপুরের বাসার সামনে নুপুরকে নামিয়ে দিয়ে গাড়ি ঘোরায় । লাবিবাকে চুপচাপ নিজের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখেও কিছু বলে না । লাবিবার বাসার একটু আগে গাড়ি থামিয়ে নেমে পেছনের গেইট খুলে বলে নামো । লাবিবা চকলেট খাচ্ছিলো । খাওয়া বন্ধ করে ব্যাগে ঢুকাতে যায় ।
তানভীর – দুষ্টু পুতুল ..তোমাকে কেমন জানি লাগছে । তুমি কি কিছু বলবে আমাকে ?
লাবিবা উপর নিচে মাথা ঝাকিয়ে আবার ডানে বামে মাথা ঝাকায় । তানভীর বুঝতে পারে ।
– তুমার যা মনে আছে সব বলতে পারো নির্ভয়ে । আমি কিছুই বলবোনা তোমাকে । যদি বলো তাহলে কাল আরেক বক্স চকলেট দিবো । বলবে তাহলে ?
লাবিবা উপর নিচে মাথা ঝাকায় । তানভীর গাড়িতে উঠে বসে গেট বন্ধ করে মুখোমুখি অনেক কাছে আসে লাবিবার ।
– বলো ।
– স্যার আপনি এতো মারামারি জানেন তাহলে ঐ third gender লোকগুলো আপনাকে নিয়ে চলে গেলো আপনি কিছুই বলতে পারলেন না কেনো ?
– তখন আমি ছোট ছিলাম তোমার মতো । তখন ক্লাস টেনে পড়তাম ।
– ওও..স্যার আপনি সত্যিই অনেক সুন্দর । আমার অনেক ভালো লাগে ।
– কি ভালো লাগে ?
– অনেককিছু ।
– বলো ।
– এই খোচা খোচা দাড়ি গুলো ।
– ধরবে ? ধরে দেখো । তানভীর নিজেই হাত দুটো দাড়িতে নিয়ে রাখে । লাবিবা হালকা ছুয়ে বলে
– এতো সফট কেন ? দেখে তো মনে হয়না এতো সফট
– আর কি ভালোলাগে বললে নাতো।
– আপনার চোখ দুটো । যখন রেগে গিয়ে লাল করে ফেলেন তখনো ভালো লাগে । কখনোই খারাপলাগে না ।
– আর ?
– আজ দেখেছি আপনার মাথা থেকে টুপ টুপ করে যখন পানি পড়ে তখন অনেক সুন্দর লাগে ।
– আর ?
– আপনার ভেজা পায়ের লোম গুলো অনেক সুন্দর লাগে ফর্সা পায়ে । আপনি এতো ফর্সা ..আমি এতো কালো কেন ? আমি কেন ফর্সা হলাম না ?
– তুমি যে নিজেই নিজের তুলনা তাই ফর্সা হওনি । তুমি যদি বড় হতে তাহলে এগুলা না দেখে দুইটা জিনিস দেখতে ।
– কি ?
– বড় হোও তারপর নিজেই জানবে । নিজেই বলবে স্যার আপনার এইগুলা খুব সুন্দর ।
– আপনি সত্যিই খুব সুন্দর ।
-বাসায় যাও । ওকে ?
– হামম।
To be continue ______
®লাবিবা ______?