একগুচ্ছ_কালো_গোলাপ?পর্ব_১৯
#লাবিবা_তানহা_লিজা
?
ক্লাস শেষ হওয়ার পর স্যার রা বলে গেলো কিছুক্ষন ওয়েট করতে । আজ কমিটির সবাই এসেছে কি নাকি সম্পর্কে ছাত্রছাত্রীদের বলবে । বসে থাকতে থাকতে জান যায় তবুও স্যাররা আসে না । জানালায় উঠে বসে পেছন দিকে প্রকৃতি দেখছে লাবিবা । পেছনেই সরকারি হাসপাতাল । দু তালায় কোয়াটার সেদিকে তাকাতেই জানালা দিয়ে দেখে টিভিতে সিসিমপুর হচ্ছে । চোখ দুটো উপরে উঠে যায় লাবিবার ।
মানে টা কি ? আজ তো মঙ্গলবার তাহলে সিম সিম পুর হচ্ছে কেন ? আবার একদিন এগিয়ে দিলো । তারমানে এখন মঙ্গল আর বুধবার হবে । আমি এখনো স্কুলে .। আর এক মুহূর্ত নয় দুলাভাই কাকুর স্কুলে । নুপুর তুই থাক আমি উলাল্লা উলাল্লাই এক দৌড়ে পালাই ।
– জানু…উলাল্লা উলাল্লা আমাক সাথে নিয়েই পালা । বলে নুপুরো পিছু পিছু দৌড় ।
কিন্তু বিপত্তি বাজলো মাঠ পেরুতেই । সামনে কামরুল স্যার এসে দাড়ানো তা দেখে লাবিবা নুপুর দুজনেই ব্রেক কষলো । কামরুল স্যার -কিরে কোথায় যাওয়া হচ্ছে হ্যাড স্যারের শালিকারা ?
লাবিবা- স্যার আজকো টিভি পে আছে না ..সিম সিম পুর দেখালিয়া । মে উসকো নেহি মিস কর চাতিহু । আর ইউ বুঝতিহু ? আগার মে নেহি যাতি হিনু ..উসকো সিম সিম পুর সাইসুইড খানালিয়া । সিম সিম পুর সাউট কারতিহু মেনে লাবিবা কেন নেহি দেখলিয়া ..কেন নেহি দেখলিয়া । আর ইউ বুঝতিহু ? টিভিকা সামনে বেঠিহে প্লেস আছিসা উসকো কানতাহু মেরে লিয়া ।মে যাহিতু দেন বঠিহু দেন প্লেস কান্না বন্ধ করতিহু । আর ইউ বুঝতিহু ?
কামরুল মাথা থেকে কেপ খুলে মাথায় হাত বুলিয়ে বলে – কি বলস ? কিছুই তো বুঝতেছিনা ।
নুপুর – আর ইউ নেহি হিন্দি বুঝতাহু ? তো যাও পানিতে সাকিং করে মরতাহু । আপনা বিচলিকেলিয়ে নেহি অধিকার আতিহু ।
লাবিবা ন্যড়া মাথার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে ফিক করে হেসে দিয়ে বলে – জাম্বুরা ।
কামরুল স্যারের জাম্বুরার কথা শুনে জিবে জল চলে আসে ।
– কি জাম্বুরা ? আছেনি তগো গাছে ?
লাবিবা- হ্যা জিয়ে । আপনি দুই মিনিট খারিয়ে মে আপনাকা লিয়ে হামারা বসত ভিটা থেকে জাম্বুরা আনিয়ে । দেন আপনার মুখে মারিয়ে আপ দাত কেলিয়ে পড়ে যাইয়ে । মে আনিয়ে ।
– অয় অয় জাম্বুরা আনবি ।
– হ জাম্বুরা । আনতাছি । আপনি অপেক্ষা করুন । নুপু চল । বলেই হাত ধরে দুটোই দৌড় । এক দৌড়ে লাবিবাদের বাসা । নুপুর দের বাড়ি যেতে অনেক টাইম লাগবে তাই লাবিবার বাসায় এসেছে ।
এদিকে কামরুল স্যার শহীদ স্যারের কাছে গিয়ে বলতাছে – আজকে জাম্বুরা নিয়ে বাসায় যাবো স্যার ।আপনার মেডামের অনেক পছন্দ।
– বাজারে জাম্বুরা উটছে নাকি স্যার ?
– না লাবিবা বলে গেছে জাম্বুরা দিবে ওদের গাছের । তাই বাসায় গেলো জাম্বুরা আনতে ।
পেছন থেকে মুক্তা শুনে অবাক । সাথে সাথে হেসেও ফেললো । কারন লাবিবা ন্যাডা মাথাকে জাম্বুরা বলে । আর আসল ফল জাম্বুরাকে বাতাবী লেবু বলে । শহীদ আর কামরুল মুক্তা স্যারের হাসির দিকে তাকিয়ে থাকে ।
বাসায় এসেই দুজনে চেঞ্জ না করে আগে সিমসিমপুর শেষ করে । তারপর ফ্রেশ হয়ে খেতে বসে ।দুজনেই খাবারে হাত নাড়ছে আর চোখে চোখ রেখে বসে থাকে । নুপুর – জানু ..এগুলাতো বাসাতেও খাই । তুইও এসবি খাওয়াবি ?
– একদম না । স্পেশাল মজা করে খাবো । চল ।
হাত ধুয়ে একটা হরলিক্সের বোয়াম নিয়ে যেটা তানভীর এনেছিলো সেটা নিয়ে বারান্দার কোনে গিয়ে দুজনে ফ্লোরে বসে চেটে চেটে খেতে থাকে । এদিকে আনিস এসে হাজির মেয়েকে খুজতে খুজতে । ইসমাইল ও এসেছে । দুই বন্ধু খুজতে এসে দেখে দুই বান্ধুবী মুখে হাতে হরলিক্স দিয়ে বিড়াল রুপ ধরে আছে । আনিস নুপুরকে নিয়ে চলে যায় ।
পড়তে বসেছে লাবিবা আর নুপুর । সামনে বসা তানভীর । বইয়ের থেকে তানভীরের দিকে চোখ বেশি পড়ছে লাবিবার । তানভীর যখন খেয়াল করে লাবিবা তার দিকে তাকিয়ে তখন ভ্রু কুচকে তাকায় । লাবিবা ঠোট প্রশস্ত করে মিকি হাসি দেয় ।
– স্যার । আজকে আমি সব পড়া শিখছি ।
– সেটা আমি এখানে বসেই তোমাকে শিখিয়ে দেই ।
লাবিবা মাথা নেড়ে পড়ায় মন বসায় ।
কিছুক্ষন পর লাবিবা আবার তাকিয়ে আছে দেখে তানভীর চোখ উপড় করে কি জিজ্জাসা করে ।
– স্যার আপনি কোন স্কুলের টিচার ?
– আমি লাবিবার স্কুলের টিচার । যে স্কুলে মাত্র তিন জন স্টুডেন্ট। লাবিবা নুপুর আর তানিয়া ।
– স্যার আরো কোন স্টুডেন্ট নিবেন ? আর বন্ধু নাঈম পড়বে ।
– জি না । সিট ফিল আপ ।
লাবিবা পড়ায় মন দেয় । পড়া শেষ করে বের হতে নেয় তখন আবার ঘুরে এসে বলে
– ও স্যার স্যার ।
– বলো ।
– আপনার বয়স কতো ?
– তুমি যখন ক্লাস ওয়ানে পড়ো তখন আমি ক্লাস নাইনে পড়ি । বুঝলে ?
– আপনিতো বুইড়া ।
– কিহ ??
– না স্যার কিছুনা । স্যার আপনি বিয়ে কবে করবেন ?
– কেনো ?
– লাবিবা এগিয়ে এসে ব্যাগ থেকে ফোন বের করে গ্যালারিতে ঢুকে একটা ছবি বের করে সামনে ধরে ।
তানভীর দেখে একটা মেয়ের ছবি । বয়স কম ।
– কে এটা ?
– তিথী । আমার ফ্রেন্ড। আপনি সেদিন যখন স্কুলে গিয়েছিলেন তখন আপনার প্রতি ক্রাসিতো হয়েছে । ও অনেক সুন্দর । ফর্সা লম্বা সুন্দর । দেখুন স্যার ছবিতে দেখুন ।
– তো এখন কি করবো আমি ?
– ওর বিয়ের দেখাশুনা চলছে । ও আপনাকে পছন্দ করে । এখন আপনি ওকে বিয়ে করুন ।
তানভীর চুপ ।
ছবি চেঞ্জ করতেই লাবিবার একটা ছবি আসে । তানভীর দেখিয়ে বলে – দুষ্টু পুতুল দেখো তিথীর থেকে এই মেয়েটাকে বেশি ভালো লাগছে । আমি একে দেখে ক্রাসিত । তুমি বরং এক কাজ করো তুমি তিথীর ঘটকালি না করে আমারটা করো । আমি তোমায় অনেক গুলো চকলেট দিবো ।
– ও আমার আল্লাহ ..স্যার এইটাতো আমি ।
– কে বলছে এইটা তুমি ? তুমি দেখতে পাওনা ? এই মেয়েটা কেমন আর তুমি কেমন দেখোনা ।
– না স্যার এটা সত্যি আমি।
– আরে এটা তো বড় একটা মেয়ে । তুমিতো আম্মুনিকা হরলিক্স খাওয়াকা বাচ্চিকা ।
– না স্যার এটা আমি ।
– না এটা তুমি না । আমি একে বিয়ে করবো ।
– স্যার এইটা আমি ।
– না এইটা আমার হবু বউ । নাম্বার দাও আমার হবু বউয়ের । আজি বিয়ের প্রস্তাব পাঠাবো।
– না । এইটা আমি বিশ্বাস করুন স্যার ।
– না এইটা আমার বউ।
এবার লাবিবা কেদে ফেলে
– স্যার এইটা আমি?
– কাদেনা । তুমি বসে বসে কাদলে আমার বিয়ের ঘটকালি কে করবে বলো।
– এইটা আমি?।
কান্না শুনে সোহানা আসে । লাবিবাকে নিয়ে উপরে যেতে থাকে । লাবিবা বার বার পিছু ফিরে ভেজা চোখে পিট পিট করে তানভীর কে দেখে।
লাবিবা চলে যেতেই তানভীর হো হো করে হেসে ফেলে ।
উপরে এনে লাবিবাকে খাটে বসিয়ে একটা শপিং ব্যাগ এনে দেয় সোহানা ।লাবিবা বের করে দেখে একটা রেডিমেট সেলোয়ার কামিজ ।
– এইটা আমার ?
– হ্যা। পছন্দ হয়েছে মা ?
– শাশুমা আমি তো সেলোয়ার কামিজ পড়ি না ।
– পড়িস না তো পড়বি । বড় বড় লাগবে তোকে।
– পড়ে এসে দেখিয়ে যাবি আমাকে ।
– আচ্ছা । এখন বাই।
[ ছোট করেই দিলাম । কাল থেকে ঠিক ঠাক দিবো ইনশাআল্লাহ ]
To be continue ____
®লাবিবা______?