একগুচ্ছ_কালো_গোলাপ?পর্ব_২০
#লাবিবা_তানহা_লিজা
?
লাবিবা প্যাকেট থেকে থ্রি পিচটি বের করে আয়নার সামনে দাড়িয়ে নিজের উপর ধরে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখছে । এইটা পড়লে কেমন লাগবে চিন্তা করতে করতে একসের । মনের সাথে অনেক দ্বিধা দন্দ চুকানোর পর সেলোয়ার আর কামিজ পড়ে ফেললো। ওমা ভালোই তো লাগছে আমাকে । একদম বিনাপুর মতো লাগছে । কিন্তু বিনাপুর তো বেবি হবে আমার তো বেবি নেই । বেবি পেটে জন্য বিনাপু কতো সুন্দর হয়ে গেছে । আমিও সুন্দর হবো । আমারো পেটে বেবি চাই । এক দৌড়ে বিনার রুমে এসে বিনার পাশে ধপ করে বসে পড়ে । বিনা জেমির চুল বেধে দিচ্ছিল সমস্যা হওয়ায় লাবিবার দিকে ফিরে
– এতো লাফালাফি কিসের তোর ? একটা সময় কি একটু শান্তু থাকতে পারিস না ?
– আমাকে কি ছেলে মনে হয় যে ইমি শান্ত হবো ? শান্তর ফিমেল ভার্সন কি হবে ? শান্তি ? হুস হুস ..শান্তি ভালো লাগে না । শান্তির মাও মরছে জেম্মা বলছে । এটা হবে শান্তিনী । উফ লাভলি?।
– বক বক বন্ধ কর। আর এটা কি পড়েছিস ? থ্রি পিচ কই পেলি ? ওড়না কই ? কে দিয়েছে এতো সুন্দর থ্রি পিচ ?
– শাশুমা দিয়েছে ।
– তুই আবার কার সাথে শাশুমা পাতালি ?
– বাদ দাও তো । আগে বলো আমি কি খেলে বেবি পেটে হবে?
– কিহহ? লাবি শোন তোর আজাইরা কথা বলবিনা আমাকে ।
– আমি কি শেখ পাড়ার হাগুরী মুতুরী ছেমড়ি যে আজাইরা কথা বলি?। আগে বলো কি খেয়ে বেবি পেটে হয়ছে । আমি ও খামু । আমারো পেটে হবো । আমিও তোমার মতো সুন্দর হবো ।
– তুই এমনিতেই সুন্দর । বেবি লাগবেনা তোর । আমারটা হলে তোকে দিয়ে দিবো ।
– ওমা তাই ? উফ লাভলি?। আচ্ছা।
নাচতে নাচতে রুমে এসে ব্যাগ গুছায় । চুল আচড়ে পিঠের উপর ফেলে দেয় । আজ আর ঝুট্টি করে না । ঠোটে চিলমিলে লিপলজ দেয় । মুখে হালকা পাউডার । ওড়নাটা একপাশ দিয়ে এনে বুকের উপর রাখে । আয়নায় নিজেকে দেখে দু গালে হাত দিয়ে অবাক হয়ে দাড়ায় । ও আমার আল্লাহ , আমিতো বড় হয়ে গেছি । ব্যাগ নিয়ে এক দৌড়ে সাবিনা আর সখিনার সামনে এসে ঘুরে ঘুরে দেখায় । দেখো আম্মুনি তোমার মেয়ে বড় হয়ে গেছে । এখন আর মারবেনা ।বড় মেয়েদের মারতে হয় না । সখিনা হেসে এসে গাল টেনে দিয়ে বলে – আমাদের এলিজা তো সত্যি বড় হয়ে গেছে । এখনতো বিয়ে দিতে হবে ।
-তিথীকেও বিয়ে দিবে । আমাকেও তোমরা বিয়ে দিবে ? কবে দিবে ? কার সাথে ? পাত্র দেখতে কেমন ? আমি কিন্তু বলে দিচ্ছি আগেই ..পাত্রের ঠোট আমার মতো গুটু গুটু পিলপিলে ছোট সফট সুন্দর হতে হবে নয়তো আমি কিন্তু পাপ্পি দিবো না ?। ভেটকানো ঠোট আমার একদম ভালো লাগে না ।
সাবিনা রেগে মেগে দৌড়ানি দেয় -ঐ তুই গেলি এখান থেকে ? এই মেয়েকে নাকি দিবো বিয়ে ?
লাবিবা রাস্তায় নুপুরের দেখা পায় । নপুর ও আজ থ্রিপিচ পড়েছে । দুজনে মিলিয়ে মিলিয়ে জামা পড়ে । হেলতে দুলতে নতুন জামা পড়ে এগুচ্ছে দুজনে । মোরে দুটো দোকান । একটা চায়ের আরেকটা হার্ডওয়ারের । চায়ের দোকানের সামনে একদল এলাকার অসভ্যরা বসে আছে । নজরে পড়ে নুপুর লাবিবার দিকে । একজন চেলা লিডারকে বলছে ওস্তাদ দেখেন ঐটা আখির বোন নুপুর যাচ্ছে । লিডার সিগারেটে ফু দিয়ে বলে
– তাইতো দেখি । ওরে আখি .. আমার পাখি ..। এক রাইতেই উইড়া গেলি .। ছোট বোনটারে রাইখা গেলি । এইটাও তো দেখি কচি মাল রুপসী। একটা পাখি পাই নাই ,এই পাখিটারে নজরে রাখি সুযোগ পেলে ধরে নিবো। চল একটু কথা বলে আসি কচি পাখির সাথে।
নুপুরের সামনে দাড়িয়ে যায় । নুপুর লাবিবা পিছিয়ে যায় । লিডার বলে উঠে
– কিগো সুন্দরী কেমন আছো ? সুন্দরী ওড়না এইভাবে নেও কেন ? তোমার বোন তো গলায় ঝুলিয়েছে । তুমি কেন ঝুলাও না ?
নুপুর ভয়ে শেষ । এরা যে আখির পিছু সবসময় ঘুরতো তা খুব ভালো করে জানা । লাবিবা অবাক। এগিয়ে গিয়ে বলে – গলায় উড়না নিলে কি হয় ? আর পেচিয়ে উড়না নিলে কি হয় ?
একজন হেসে উঠে বলে – ওস্তাদ এইটা আমাদের চেয়্যার ম্যানের মাইয়া ।।ইসমাইল চেয়্যারমেন ফিরোজ এমপির কলিজা । বোকার হাড্ডি?
লিডার -? হুম শত্রুপক্ষ। শোন মামুনি তোমাদের তো ওড়নাই নিতে হয় না । তোমরা তো ছোট । ওড়নাতো বড়রা নেয় ।
এক জন হেসে বলে – মামুনি আমাদের ওড়নার ভীষন প্রয়োজন ।
লাবিবা – কি করবে ?
একজন – এক মহিলাকে দিবো । মহিলাটা ওড়নার জন্য নিজেকে ঢাকতে পারছেনা । ভীষন গরীব।কাপড়ের বড়ই অভাব ।
লাবিবা – আহারে …গরীব মানুষের কতো কষ্ট। আমার টা নিয়ে যাও উনাকে দিয়ে দিও। বলেই লাবিবা ওড়না খুলে চুল গুলো দু ভাগ করে সামনে এনে বুকের উপর ফেলে দেয় । নুপুর বলতে থাকে জানু দিস না। ওরা খারাপ । মিথ্যা বলে । লাবিবা না শুনে ওদের হাতে উড়না দিয়ে দেয় । লোকগুলোও অবাক ।এইভাবে কেউ ওড়না খুলে দিবে ভাবতেই পারেনি যেখানে সবাই ভয়ে দূরে চলেযায় সেখানে এতো ফ্লিলি কিভাবে এরকম ব্যবহার করছে ? এই মেয়ে কি সত্যিই এতো বোকা?
লাবিবা নুপুরকে নিয়ে হাটা দেয় । পিছু ফিরে দেখে লোকগুলো হা করে তাকিয়ে আছে । নুপুর এখনো বুকে হাত দিয়ে আছে । লাবিবা হাসতে হাসতে শেষ । নুপুর রেগে যায় ।
– হাসবিনা একদম কুত্তি । তুই ভয় পেলি না কেন ?
– কজ আই এম সাহসী?
-সাহসী না ছাই । ওড়না দিলি কেন ?
– ওড়না না দিলে এখনো ওখানেই পড়ে থাকতি । তোকে ছাড়তোই না ।
– তাও ঠিক ।
রিড়িং রুমে এসে দেখে লাবিবা আর নুপুর চলে আসছে । দুজনেই সেলোয়ার কামিজ পড়া কিন্তু লাবিবার ওড়না নেই । চুল সামনে রাখা । কিছু বলে না । পড়ানো শুরু করে ।পড়ার মাঝে লাবিবা বলে
– ও স্যার স্যার ..আমাকে নাকি বিয়ে দিবে । এডভান্স দাওয়াত আপনাকে।
নুপুর আর তানভীর চোখ কুচকে লাবিবার দিকে তাকায় । লাবিবা দাত গুলো বের করে দেয় । তানভীর ও হেসে ফেলে । দুষ্টু পুতুলকে নাকি বিয়ে দিবে এটা জোকস ছাড়া কিছুই নয় । পড়ায় মন দেয় । পড়া শেষে নুপুর বলে – জানু ..আজ আমি অটো দিয়ে বাসায় যাবো । ছেলে গুলো এখনো থাকবে জানি ।
তানভীর চোখ কুচকে বলে – কোন ছেলে ?
নুপুর আমতা আমতা করে । লাবিবা ধাক্কা দিয়ে বলে বলতে । নুপুর সব বলে । তানভীর এক মনে লাবিবাকে কিছুক্ষন দেখে । তারপর নুপুর কে বসতে বলে লাবিবার হাত ধরে সিড়ি দিয়ে উপরে চলে আসে । লাবিবা কিচ্ছু বলে না । মনে মনে ভাবে সিউর বকা খাবে এখন । তানভীর লাবিবাকে সোহানার রুমে এনে বসায় । আলমারি থেকে একটা ওড়না বের করে এনে লাবিবার মাথায় ঘোমটার মতো করে দিয়ে দেয় । বউ বউ লাগছে । মুচকি হাসে তানভীর ।
– তো দুষ্টু পুতুল ..কবে তোমার বিয়ে ?
– জানিনা । জেম্মা বললো আমি বড় হয়ে গেছি বিয়ে দিয়ে দিবে ।
– তো কেমন ছেলে তোমার পছন্দের ? মানে কেমন ছেলে বিয়ে করবে ?
– লম্বা ছেলে । ঠোট সুন্দর ছোট্ট পিলপিলে নরম হলেই চলবে ।
– ও আচ্ছা । আমার ঠোটের মতন কি ?
লাবিবা ঠোটে চোখ আটকায় । তানভীর মুখের সামনে মুখ এনে বলে – ছুয়ে দেখো সফট কিনা ?
লাবিবা আঙুল ছোয়ায় ঠোটে । হালকা স্লাইড করে বলে – হুম অনেক সফট । এরোকম ঠোট হতে হবে ।
সোহানা রুমে চলে আসে । লাবিবাকে দেখে এগিয়ে যায় । – বাহ খুব সুন্দর লাগছে তো আমার মা টাকে । বউ বউ লাগছে ।
লাবিবা- ?? শাশুমা আমাকে বি___
তানভীর – যেতে হবে । দুষ্টু পুতুল চলো নুপু ওয়েট করছে । মম আমি পৌছে দিয়ে আসছি ।
লাবিবাকে কথা না বলতে দিয়ে টেনেই নিয়ে চলে আসে ।
মোরের সামনে এলে দেখে এখনো টং এ একদল ছেলে বসে আড্ডা দিচ্ছে । হাতে লাবিবার উড়না দেখে বুঝতে দেরী হয় না যে এরাই ওরা । নুপুর লাবিবাকে ড্রপ করে মোরে চলে আসে । গাড়ি থেকে নেমে এগিয়ে যায় । ছেলে গুলি তানভীর কে দেখে দাড়িয়ে পড়ে । এগিয়ে আসে তানভীরের দিকে ।
– আরে তানভীর ভাই যে । মামা চা বানাও তারাতাড়ি । ভাই আসেন আমাদের পক্ষ থেকে আপনার জন্য চা ।
– চায়ে লিকার নেই । কড়া করে লিকার টা দিতে এলাম । মহিলাটার জন্য ওড়না কে চেয়েছে ?
– কেন ভাই ? আপনি কি ..
রেগে গিয়ে -কে চেয়েছে ওড়না ?
– ওড়না ওড়না করছেন ওড়না পরবেন নাকি ?
নাক বরাবর এক ঘুসি দেয় রেগে । লিডার নাক ধরে পিছিয়ে যায় ।
– কে চেয়েছিলি ওড়না ? বলেই তানভীর সব গুলোকে আচ্ছা মতো মারতে থাকে । যে ছেলেটি চেয়েছিলো সেই ছেলেটি পা ধরে বলে – ভাই ভাই । মাফ করে দেন আর হবে না । আর চাইবো না ।
– তুই তাহলে সেই মহিলা । শার্ট খুল ।
– ভাই ভাই ..।
– শার্ট খুলতে বলছি তোক । ঐ একজন ওর শার্ট খুল ।
একজন ওর শার্ট খুলে দেয় ।
– এবার প্যান্ট খুল ।
– ভাই ভাই মাফ করে দেন । আর হবে না ভাই ।
– কোন মাফ নেই । ঐ খুলিশনা কেন শালা বলে দেয় এক লাথি ।
লাথি খেয়ে পটা পট প্যান্ট খুলে নেয় । আন্ডার ওয়্যার ছাড়া গায়ে আর কিছুই নেই । রাস্তায় এতোক্ষনে ভিড় জমে গেছে। লোকজন দেখে হাসাহাসি করছে । কেউ কেউ ক্যামেরা ধরে রেখেছে ।
তানভীর গাল চুলকে বলে – এবার শাড়ির মতো করে ওড়না পরা ।
শাড়ির মতো করে ওড়না পরিয়ে তানভীর কয়েকটা ছবি তুলে নেয় । তারপর ঐ ছেলেকে ঐভাবেই লোকজনকে বলে বাজারে নিয়ে গিয়ে ঘোড়াতে । তানভীরের কথা মানে সবাই শুনতে বাধ্য । গাড়িতে বসে লাবিবার বাড়ির পেছনের রাস্তায় আসে । ফোন
দেয় ছাবিনার ফোনে । সাবিনা ফোন তুলতেই বলে
– আসসালামু আলাইকুম কাকি ।
-ওয়ালাইকুম আসসালাম । তানভীর বাবা বলো ।
– কাকি ঐযে দুষ্টু পুতুল ওর একটা বই ফেলে গেছে আমার গাড়ীতে । আমি পেছনের রাস্তায় আছি । ওকে একটু পাঠিয়ে দেন নিয়ে যাক বই। লাবিবাকে বললে লাবিবা আসতে থাকে । আমিতো কোন বই ফেলে আসিনি । তাহলে ? ভাবতে ভাবতেই চলে আসে । পেছনে জঙ্গল তাই একটু ভয় লাগছে । মাগরীবের আযান হয়ে গেছে । গাড়ির পাশে আসতেই তানভীর গেট খুলে ভিতরে আসতে বলে । লাবিবা উঠে বসে । বাইরে থেকে যেন দেখা না যায় তার জন্য লাইট অফ করে দেয় ।
To be continue ___
®লাবিবা _____?