একগুচ্ছ_কালো_গোলাপ?পর্ব_৩

0
5859

একগুচ্ছ_কালো_গোলাপ?পর্ব_৩
#লাবিবা_তানহা_লিজা

?
তানভীর বাসায় গিয়ে সোজা নিজের রুমে চলে যায় । সোহানা ডাকলেও শুনে না । ছেলের হাত ,কাধ দেখে সোহানা ফেস ফেস করে কান্না শুরু করে দেয় । ফিরোজ বিরক্ত হয়ে উঠে যায় সোহানার পাশ থেকে । তানভীরের রুমে এসে দেখে তানভীর রেগে wall এ boxing করছে। ফিরোজ আটকে দিয়ে বলে
– এমনি হাতের বারোটা বাজিয়ে এনেছিস । এখন আবার তেরোটা বাজাতে চাইছিস ।
– leave me alone papa .
– alone থাকার জন্য full night পরে আছে তার আগে দেখি তোমার কোথায় লেগেছে ?
ড: রশিদের কথায় ফিরে তাকায় দুজনে । ফিরোজ রাগ দেখিয়ে বলে – এতোক্ষন লাগে আসতে ?
– আরে বাবা তুই কি আমাকে সবসময় রকেট ভাবিস নাকি ? সর তো এখন , আমার ভাতিজা কে দেখতে দে । ফিরোজ সরে দাড়ায় । রশিদ তানভীরকে বসায় । হাতের জখম দেখে । ট্রিটমেন্ট করে চলে যায় । সোহানা খাবার হাতে আনে । সোহানার সাথে তানিয়া ও আসে । তানিয়া ফিরোজের ভাই মিনারের মেয়ে । ওরা সবাই নানু বাড়ি গিয়েছিলো আজ এসেছে। তানভীর তানিয়াকে ইশারায় ডেকে কোলে নিয়ে বলে
– কখন আসছিস ?
– বিকালে ।
– পাপা মম কোথায় ?
– পাপা জেঠুর সাথে । মমের মাথা ব্যথা করছে তাই ঘুমিয়ে পড়েছে।
– লাবিবাকে চিনিস ? তোর এক ক্লাস উপরে পড়ে । এইটে। গুলুমুলু পুতুলের মতো ।
– ও লাবিপু .. চিনিতো । লাবিপু আমাকে খুব আদর করে । আমাকে ওর চকলেট দিয়ে দেয় তারপর ওর মারবেল ও দেয় আবার কৃষ্ণচূড়া ফুল কুড়িয়ে হাতের নখ বানিয়ে দেয় ।
– তাই নাকি ? দুই দুষ্টু এক জায়গায় হস । মিলবে ভালো তদের । যা খেয়ে ঘুমিয়ে পর ।

পড়তে পড়তে চকলেট খাচ্ছে লাবিবা । কান্না বন্ধ করানোর জন্য ইসমাইল আসার পথে অনেকগুলা চকলেট কিনে দিয়েছে । সেই চকলেট যে তখন থেকে খাওয়া হচ্ছে এতো চলবেই চলবেই । ইসমাইলের রাগ হচ্ছে । এ চকলেটি খাবে নাকি পড়বে ? খেতে খেতে কখনো পড়া হয় নাকি ? কিন্তু কিছুই বলছে না । বললে যাও পড়বে সেটুকুও পড়া হবে না । সাবিনা রাগ দেখিয়ে দেখিয়ে ইসমাইলের প্লেটে ভাত দিচ্ছে ।
– আহ. আস্তে দাওনা । এতো তেজ কিসের ?
– দিলে তো আমার বাচ্চাটার খাবার নষ্ট করে । এমনিতেই ভাত খাওয়াতে পারিনা তার মধ্যে আবার চকলেট পেয়েছে । চকলেট খেয়েই পেট ভরিয়ে রাখবে । যে পর্যন্ত চকলেট শেষ না হবে সেই পর্যন্ত মুখ টা একটু শান্তি পাবে কিনা সেটা ভাবছি । রাতে ঘুমোবে তো ?
লাবিবা শুনে বলে – আম্মুনি আমি ঘুমোবো । আমার ভীষন ঘুম পাচ্ছে । গুডু গুডু নাইট ।
সাবিনা আসস্ত হলো । চকলেট গুলো রুম থেকে সরানো দরকার ভেবে লাবিবার রুমে আসতে নিলে দেখে দরজা বন্ধ করে দিয়েছে । অনেক ডেকেও দরজা খুলাতে পারে না ।

সকালে বেলকনির জানালা দিয়ে উকি দেয় সাবিনা । লাবিবা বিছানায় উবু হয়ে পড়ে আছে । বিছানায় চকলেটের খালি প্যাকেটের ছড়াছড়ি । গালের একপাশেও চকলেট লেগে আছে । ঠোট তো দেখাই যাচ্ছে না । সাবিনা কি আর বলবে এই মেয়েকে ..কত রাতে যেন ঘুমিয়েছে কে জানে ? দরজা ধাক্কিয়ে লাবিবাকে তুলা হয় । ঠেলে বাথরুমে পাঠানো হয় । আবার সেই লেইট । বাথরুমের দরজা ধাক্কা দিতে থাকে সাবিনা । ইসমাইল শব্দ পেয়ে আসলে সাবিনা দাত কটমট করে বলে – তোমার মেয়ের জন্য আজকে নতুন লেপ তোষক বানিয়ে আনবে । ওকে বাথরুমেই থাকার ব্যবস্থা করে দিচ্ছি আমি । ওর আর কষ্ট করে বের হতে হবেনা বাথরুম থেকে । খাবার ও পাঠিয়ে দিবো তিনবেলা করে । ইসমাইল গিয়ে দরজায় হাত রেখে বলে – বাবা ..বের হোও ।
ইসমাইলের গলা শুনে লাবিবা বের হয় । খেয়ে রেডি হয়ে দুলতে দুলতে স্কুলে যেতে থাকে । স্কুলে না গিয়ে পাশেই বাজারে যায় । বাজারে গিয়ে নোটনের হোটেলের সামনে এসে বেঞ্চিতে বসে বলে
– ও নোটন ভাই .. বড্ড ঘুম পাচ্ছে। একটা হরলিক্স চা দাওতো । নোটন হাসতে হাসতে সামনে এসে বলে – হরলিক্স তো বাসায় রেখে আসছো বইনা ।
– ওহ তাই তো । তাহলে একটা নীল চা দাও ।
– কিহ ?? নীল চা আবার আছে নাকি ? আগেকার মানুষ তো কাপড় সাদা রাখার জন্য নীল চাষ করতো । ঐটাতো সোডা ।
– উফফ ঐটা টা । আমিতো নীল অপরাজিতা ফুলের চায়ের কথা বলছি ।
– কিহ?? ফুল দিয়ে চা ? এগুলা কেমন চা ? আমার দোকানে ঐসব পাবে না ।
– আচ্ছা তা হলে হলুদ চা দেও । গুচ্ছগাদারটা দিও।পাতলা গাদার টা ভাল্লাগেনা ।
– এগুলা আমার দোকানে পাওন যাবো না ।
– আচ্ছা তাহলে সাদা গন্ধরাজ চা , গোলাপী গোলাপ চা, বেগুনী নয়নতারা চা, সবুজ জবা চা , সাদা-কমলা শিউলী চা , হলুদ সূর্যমুখী চা , খয়ারী পাতাবাহার চা , লাল শাপলা চা, কালো গোলাপ চা? এর যে কোন একটা দিলেই চলবে ।
নোটনের মাথা ঘুরার উপক্রম । নিজেকে সামলিয়ে বলে
– বইনে..তুমি কি আগে এর কোন চা খাইছো ?
– আমি খাই নাই । তবে আমার পুতুল খেয়ে বললো খুব মজা । তাই ভাবলাম আজকে আমি একটু টেস্ট করি ।
নোটন এবার সত্যি সত্যি মাথা ঘুরিয়ে ধপাস করে বেঞ্চিতে বসে পরে । পেছনে বসে বেলাল ভাতিজির এসব আজাইরা কথা শুনে আর বসে থাকতে পারলো না । সামনে এসে ডাক দিলো
– লাবিবা..।
– জেঠু ?
– কি চা খেতে আসছো ?
– দুধচা?
– ঐ এক কাপ দুধ চা দে ।
লাবিবা দুধ চা শেষ করতেই বেলাল বিল মিটিয়ে লাবিবার হাত ধরে স্কুলের দিক হাটা দেয় ।
এতোক্ষন বসে বসে চায়ে চুমুক দিতে দিতে সবটা দেখছিলো তানভীর । এখানে আসলে নোটনের দোকানে প্রায়ই চা খেতে আসা হয় । এই দোকানে নিন্মশ্রেনী থেকে উচ্চশ্রেনী সবারি বসা হয় । অবাক হয়ে বসে আছে তানভীর । তবে মৃদু হাসিও পাচ্ছে তার । বিল মিটিয়ে সেও চলে যায় ।

স্কুলের assembly start হয়ে গেছে এতোক্ষনে । এই সময় কাউকে ডুকতে দেওয়া হয় না । কিন্তু হেড টিচারের শ্বশুর হেড টিচারের শালিকে নিয়ে আসছে দেখে physical teacher কিছু বলে না । বরং বেলালকে সম্মান প্রদর্শন করে অফিসে গিয়ে বসতে বলে । বেলাল কাজের কথা বলে চলে আসে ।

ক্লাসে বসে বসে নুপুর আর লাবিবা আলোচনা করছে
– দোস্ত। আজকে তো math খাতা দিবো ।
– এতো চিন্তা করিস না । বাড়িতে বলমু না ।
– কিন্তু ঐ কামলা (কামরুল) স্যার কে তো বলতেই হবে ।
– প্রাইভেট ই পরুম না । নো চিন্তা ডু ফুর্তি ।
লাবিবার টেনশন দুর হয় না । অবশেষে খাতা দেয় । শহীদ স্যার সামনে এসে বলে
– কি ? ব্যপার টা কি ? দুইটায় মিলে দেখাদেখি করে লিখিস আর সেম নাম্বার পাস । এর পর থেকে একটা পরিক্ষাতেও দুইটারে একসাথে বসতে দিমু না । দেখি কেমনে বসিস ।
লাবিবা,নুপুর মনে মনে – আহা…বাপের বাড়ির আবদার ..দেখি কেমনে বসিস(ভেঙিয়ে) । একবারো তো আলাদা বসাতে পারলি না । কচু কাটা তোর সাহস আছে আমাদের আলাদা করার ? চিল্লিয়ে এই তিনতালা স্কুল সহ তোকে উগান্ডা ঢিল দিবো । হুহহ..।
লাবিবা – স্যার খাতাটা দেন । কতো পাইছি একটু দেখি
স্যার খাতা দিয়ে হন হন করে চলে যায় । লাবিবা নুপুর mark দেখে মাথায় হাত। নুপুর তো পারে কান্না করে দেয় । 32 mark পেয়েছে দুজনেই । এক নাম্বারের জন্য ফেইল । লাবিবা মনে মনে শহীদ স্যারের বউয়ের বারো গোষ্ঠী উদ্দার করতে থাকে। আর বলে শালা কচু কাটা ব্যঙের ডিম মুরগীর ছাতা হাসের বাচ্চা তোর কোনদিন বিয়ে হবে না দেখিস । একটা নাম্বারের কিপ্টামির জন্য তোর বউ চলে যাবে দেখিস । তোর গরু গুলার পাতলা পটি হবে আর ঐ গুলা চটপটি বানিয়ে চেটে চেটে তুই খাবি ..yack ..thu আম্মুনি.. বমিকা আগায়া ?…

কামরুল স্যারের প্রাইভেট এ স্যারের সামনে খাতা ধরে আঙুল কামড়াচ্ছে লাবিবা । নুপুর নিচের দিকে মুখ করে বসে আছে । পড়ানো শেষে সবাই চলে গেছে । শুধু লাবিবা আর নুপুর ই আছে। চশমা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে ৩২ mark কে উল্টা পাল্টা করে বার বার দেখছে স্যার । সোজা রাখলে হয় ৩২ উল্টো করলে হয় ২৩ । কামরুল স্যার গলা খাকারি দিয়ে বলে
– আহ হা হা রে…….তোরা তো ডাসা ফেল । তোদের কোন ভাবেই পাশ দিতে পারতাছি না আমি । ৩২ এও ফেল ২৩ শেও ফেল । আমার ছাত্রী হয়ে তোরা কিভাবে ফেল করিস ? জানিস math এ কত নাম্বার করে পাইছি আমি ? তোদের মাথা ভর্তি গোবর । তদের দ্বারা পড়া লেখাই হবো না ।
নুপুর মাথা তুলে বলে – স্যার আপনিতো পড়াচ্ছে চার মাস থেকে । এই চার মাসে আপনি গড়ে দুই মাস ও পড়াননি । তার মধ্যে আবার এক দুইটা math ছাড়া কোন দিন তিনটা math করাননি । আর syllabus এ huge lesson . আমরা পারবো কিভাবে ? আপনার জন্য ফেল করেছি ।
স্যার – কিহ?? মুখে মুখে তর্ক?? বাপ মায়ে এই শিক্ষা দিছে ? তোদের বাপ মায়ের শালিসি বসামু আমি । বাপ মা বেয়াদব হইলে পোলাপান বেয়াদব হয় ।
লাবিবা – ঐ কামলা একদম বাপ মা তুলে কথা বলবেন না । আমার বাপ মা বেয়াদব তাই না ? চিনেন আমার বাপকে ? দ্বারান ভাইয়াকে বলে আপনার চাকরি খাওয়ার ব্যবস্থা করতেছি ।
স্যার – কেমন বেয়াদব মাইয়া । আমারে ডাকে কামলা । চেয়ারম্যানের মাইয়া হইছো জন্যে আমাকেই হুমকি ধামকি দেয় ।
নুপুর – আমরা ছাত্রী আমাদের যা বলার বলবেন । বাপ মা কে বেয়াদব বলেন ক্যা ? মূর্খ শালা কামকুন্নির জামাই বিচি ভর্তার মরিচ । আপনি এর আগেও এরকম উল্টাপাল্টা বেয়াদবি করেছেন আমাদের সাথে । আমরা কিছু বলিনি । আজ আপনার একটা শিক্ষা দেওয়া উচিত । জানু এরে কি করা যায় বলতো ?
লাবিবা – এক মিনিট দ্বারা আমি পাচ মিনিটে আসতেছি । চার মিনিট পর লাবিবা হাতে একটা রেজার নিয়ে আসে । লাবিবা নুপুরের চোখ দুষ্টুমিতে চকচক করে উঠে । দুজনে শয়তানি হাসি হেসে একসাথে বলে
– উলাললা উলাললা কামলাকে ছিলা মাথা কইরা ফালা ।
__________________
ফিরোজ , মিনার, ইসমাইল ,কাদের মিলে মিটিং এ আছে। এরি মাঝে দারোয়ান এসে বলে – কামরুল স্যার আসছে চেয়ারম্যানের সাথে দুটো কথা বলতে । বলছে এখনি বলতে হবে ।
ফিরোজ – আমরা মিটিং এ আছি । আচ্ছা কামরুলকে পাঠাও কথা বলে চলে যাক ।
দারোয়ান চলে যায় । তানভীর নিচে নেমে দেখে ড্রয়িং রুমে কয়েকজন বসে । ডাইনিং এ যেতেই দেখে কামরুল চুল ছাড়া মাথা নিয়ে এগোচ্ছে। কামরুলের দিকে চোখ পড়াতে সবাই হেসে ফেলে । কিন্তু ইসমাইল ঠিক ই আবাস পেয়েছে । আমতা করে বলে -মাথা …।
ফিরোজ – কি ব্যপার কামরুল তোমার মাটির পাতিল হইতে ইচ্ছা করলো নাকি ?
– আমি করিনি । সব ঐ চেয়্যারমেন আপনার মেয়ে করছে ।
তানভীর পানি খাচ্ছিলো লাবিবার কথা শুনে বিষম খায় । ইসমাইল নিচের দিক মুখ করে রাগ কন্ট্রোল করছে । ফিরোজ সহ বাকিরা অবাক ও হয় আবার শব্দ করে হেসে ফেলে ।
কামরুল – চিন্তা করেন একবার কি বিচ্চুর বিচ্চু মেয়ে স্যারের সাথে বেয়াদবি ‌। শুধু বলছিলাম math এ 32 mark পেয়েছো । মাথা ভর্তি গোবর । তাতেই আমার এই অবস্থা করে দিলো ।
ইসমাইল : স্যার ছোট মানুষ ভুল করে ফেলেছে । ওকে আমি দেখতেছি । মাফ করবেন । জানেন তো একটু দুষ্টু আর কি ।
ফিরোজ সহ সবাই স্যারকে বুঝিয়ে পাঠিয়ে দেয় । তানভীর চেয়ার টেনে বসে বসে লাবিবার কথা ভাবে কিছুক্ষন । তারপর উঠে উপরে যেতে যেতে বলে
– হায়রে ..দুষ্টু পুতুল ।

To be continue___

®লাবিবা_____?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here