একগুচ্ছ_কালো_গোলাপ?পর্ব_২২
#লাবিবা_তানহা_লিজা
?
স্কুলের কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচে একটা একটা করে অনেকগুলো ফুল কুডিয়ে নিয়ে বসে বসে মালা গাথে। তানিয়াকে মাথায় হাতে মালা পড়িয়ে দেয় । আঙ্গুলে বড় বড় নখ বানিয়ে দেয় । তারপর তানিয়া লাবিবার মাথায় মালা পড়িয়ে দেয় । হাতে মালা পড়ে । তারপর আবার ফুল কুড়াতে থাকে নখ বানানোর জন্য আর গলার মালা বানানোর জন্য । তানিয়া হটাৎ ভাইয়া বলে চিৎকার করে । লাবিবা সামনে তাকিয়ে দেখে তানভীর গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে এদিকেই তাকিয়ে আছে । উজ্জল হাসি মুখে ছেয়ে যায় ।
তানভীর দাড়িয়ে দাড়িয়ে দুই পরীর কৃষ্ণচূড়ায় নিজেকে সাজানো দেখছিলো । তানিয়ার হলুদ জামায় লাল কৃষ্ণচুড়া অনেক সুন্দর মানিয়েছে । লাবিবার লাল গাউনে লাল কৃষ্ণচূড়ার ক্রাউন পড়ে লাল পরীর মতো লাগছে । প্রকৃতি তার সৌন্দর্যে প্রাকৃতিক ভাবে মানুষকে এতো সুন্দর করে তুলতে পারে তা তানভীরের জানা ছিলো না । আজ যেন প্রথম এই সৌন্দর্যের খেলা দেখছে । লাল পরীর উজ্জল হাসিটা ভোরের প্রথম সূর্যের আলোর মতো লাগছে । ছোট বেলা যেমন খেলার ছলে হা করে আলো খেয়ে নিতো সেভাবে এই হাসিটুকু মন খেতে চাইছে । এগিয়ে আসতেই তানিয়া জড়িয়ে ধরে । তানিয়াকে গাড়ি থেকে চকলেট আনতে বললে তানিয়া চলে যায় গাড়িতে । তানভীর লাবিবার সামনে দাড়াতেই লাবিবা ইয়া বড় এক সালাম দেয় । তানভীর সালামের স্টাইল দেখে হেসে ফেলে । উত্তরে বলে
– ওয়ালাইকুম সালাম ওয়া রহমাতুল্লহি বরকাতুহু । কে গো আপনি ?
লাবিবা কোমড় বাকিয়ে বাকিয়ে বলে
– আই এম লাবিবা তানহা এ..লিজা। ডটার অফ ইসমাইল সাবিনা ।
তানভীর হেসে ফেলে । লাবিবাও হাসে । তানিয়া এসে লাবিবার হাতে চকলেট দেয় । তানভীর এগিয়ে গিয়ে কৃষ্ণচূড়া ক্রাউনটা ঠিক করে পড়ায় । তানিয়াকে পাশে দাড়াতে বলে । দুজনকে অনেকগুলো ছবি তুলে দেয় । তানিয়ার হাতে ফোন দিয়ে লাবিবার পাশে এসে দাড়ায় । তানিয়া পটাপট কয়েকটা ছবি তুলে দেয় তানভীর?লাবিবা কে । বাই বলে তানিয়াকে নিয়ে চলে আসে ।
বাসায় এসে দেখে মুক্তা এসেছে । সাথে তার বাবা মাও । ওদের সাথে কথা বলতে বলতে জেমিকে নিয়ে বিনার কাছে আসে । বিনা আর মুক্তা বসে বসে গল্প করছিল । সখিনা তাকের উপর কি কি জানি রাখতেছে। বিছানায় বাবুর জিনিসপত্র, কাপড় দেখে বুঝতে পারে বাবু হোওয়ার আগেই সব রেড়ি বাবুর জন্য । এদিক ওদিক শুধু চোখ ঘুরাচ্ছে । বিনার পাশে বসে পেটে চুমু দেয় । ফিসফিস করে বলে – খালামনি .. তাড়াতাড়ি করে চলে আসো । আমার সাথে খেলবে । লাভ ইউ এত্তোগুলা । মিস ইউ ভুরি ভুরি । মুক্তা লাবিবার কান্ড দেখে হাসে ।বিনাকে জিজ্জাসা করে
– দুষ্টুটা এরোকম করে নাকি সবসময় ?
– হুম । আরো অনেক কিছু করে । দেখলে মাথা ঘুরবে তোমার ।
বিনাকে খাওয়াতে মুক্তা নিয়ে ডাইনিংএ চলে যায় । লাবিবা তাকে কি আছে দেখার চেষ্টা করে । কাপড় দিয়ে ঢাকা তাই দেখতে পাচ্ছে না । টুল এনে উপরে দাড়িয়ে কাপড় সরিয়েই দেয় এক লাফ টুলের উপরেই । -? 5 can NIDO? 5 can Lactrozen?
একটা ক্যান খুলে ফেলে । ভেতরের প্যাকেট দাত দিয়ে ছিড়ে জেমি দেখে যে লাবিবা বাবুর জন্য আনা নিডো চামচ দিয়ে নিয়ে চেটে চেটে খাচ্ছে ।
এক চিৎকার দেয় – আম্মু……..খালামনি ভাইয়ার দুধ সব খেয়ে নিলো ?
হটাৎ ঝটকায় হাত থেকে প্যাকেটটা ফ্লোরে পড়ে যায়। ভয়ে হাত দিয়ে বুক চেপে দেয় এক দৌড় । সাবিনা বিনা এসে দেখে যে ফ্লোরে জেমি বসে বসে কাদছে আর তার সারাসরীর সহ ফ্লোর ছড়িয়ে গুড়া দুধ পড়ে আছে । সাবিনা জেমিকে নিয়ে গিয়ে গোছল করায় ।
দেখতে দেখতে তানভীরের লন্ডনে যাওয়ার দিন চলে এসে গেছে। কয়েকদিন পর ই চলে যাবে ছেলেটা । ফিরোজ সোহানার এর জন্য মন খারাপ । তানভীর শুধু দেখে যাচ্ছে । তার ও ভীষন মন খারাপ করে । তানিয়া কে সোফায় কোলে বসিয়ে ইংরেজী পেসেজ পড়াচ্ছিলো তানভীর । সামনে ফিরোজ আর মিরাজ এসে বসলো । তানভীর একবার তাকিয়েই আবার পড়াতে থাকলো । মমতা হাতে এক প্লেট চিকেন কোরমা উইথ রাইস এনে বসে লোকমা পাকিয়ে মুখের সামনে তুলে ধরে
– হা কর তো বাবা ।
– ছোট মাম্মা আমি একটু আগে শর্মা খেলাম ।
– অনেকক্ষন হয়ে গেছে বাবা । হা কর ।
– কয়েকদিন থেকেই তোমরা এমন করছো আমার সাথে । এতো খাওয়া যায় নাকি ?
আচলে চোখ মুছে বলে
– আরতো মাত্র দু তিন দিন ই খাওয়াবো । চলেই তো যাবি ।
– আমি কি আর আসবো না ফিরে ?
– তুই আসতে আসতে যদি না থাকি আর আমি ।
– ছোট মাম্মা ভালো লাগে না কিন্তু এসব ।
মিরাজ – আহহহ মমতা চুপ করো তো । ভাবির মতো ফেস ফেস করতেছো । মেয়ে মানুষ মানেই গলে যাওয়া ।
তানভীর – তোমরাও তো কম না । মুখের উপর মেঘ নামিয়ে অন্ধকার করে আছো । আমি কি বুঝতে পারি না ? তানিয়াতো থাকবেই । এতো সফট হলে চলে ?
ফিরোজ- বাচ্চাই মাত্র দুটো । একটা তলে গেলে সেই শূন্যতা কি ভরবে?
সোহানা আসতে আসতে বলে – মমতা খাওয়ানো শেষ ? এই যে তোর ব্লাক কফি ।
তানভীরের কান্না চলে আসে । বেলা বাজে এগারটা । এর মধ্য চারবার খেয়ে নিয়েছে তাও সব রিচফুড । এতো কিভাবে আটবে পেটে ?
– মম আমি এখন খাবো না । তো কি করতে বলো তোমরা ? থেকে যেতে বলো আমায় ?
সোহানা – একটা বউ রেখে গেলেই তো পারিস ।
-কিহহ? কিভাবে সম্ভব মম ?
– সবি সম্ভব । তুই চাইলে এখনি বিয়ে করাতে পারি । অনেক ভালো ভালো মেয়ের খোজ রেখেছি । কি বলিস ?
– মম …কি আজগুবি বলো এসব ? আচ্ছা দাও একটু একটু খাচ্ছি তাও পাগলের মতো কথা বলো না । দুই লুকমা মুখে নিয়ে এক চুমুক কফি গিলে চলে যেতে থাকে । মিরাজ পেছন থেকে বলে – কথাটা আজগুবি বলে উড়িয়ে দিলি । ভাবী কিন্তু ঠিক ই বলেছে ।
থেমে গিয়ে পেছন ফিরে সোহানার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দেয়। সোহানা উৎসুক চোখে তাকিয়ে থাকে ।
– ভালো ভালো মেয়ের খোজ না রেখে ভালো মেয়েটার খোজ রাখার দায়িত্বটা তোমায় দিয়ে গেলাম মম। শাশুমা তো অলরেডি হয়েই আছো ।
সোহানার মুখটা হা হয়ে যায়। এক মুহূর্তে চোখ দুটো বড় বড় করে ফেলে । সবার চোখজুড়া সোহানার দিকেই সীমাবদ্ধ হয়ে যায় ।
তারমানে এটা সত্যি ?? সত্যি সত্যিই আমি শাশুমা হয়ে গেছি?
ভাবী কিছুইতো বুঝতেছিনা । কি হয়েছে সরাসরি বলোনা ।
আমাদের ছেলের বউ ইসমাইল চেয়্যারম্যানের মেয়ে লাবিবা হতে যাচ্ছে ।
কি বলছো এসব ? বাচ্চা মেয়ে । তুমি ডিফারেন্স টা দেখেছো ? এতো এতো মেয়ে রেখে শেষ মেষ এই বাচ্চাটাকেই চোখে পড়লো তানভীরের ? না না ভাবী এটা মেনে নেওয়া যাচ্ছে না । তানভীরের সাথে কথা বলতে হবে।
মমতা আগ বাড়িয়ে বলে – মেয়েটা ভালোই লাগে আমার কাছে । খুব সুন্দরী না ..আবার অসুন্দরীও না । অনেক মায়া কাজ করে । গায়ের রং টা একটু ভালোই ঘোলাটে ।
সোহানা – এদের বয়সের ফাড়াক নয় দশ বছরের । ইসমাইল ব্যপারটা জানলে কি ভাবে নিবে ?
মিরাজ – তোমার আর ভাইয়ের বয়স ও তো দশ বছরের ই ফাড়াক ভাবী । বলেই ফিরোজের দিকে তাকিয়ে আছে । সাথে সবাই তাকিয়ে । ফিরোজ যদি এ কথা শুনে রেগে যায় তাহলে তো অবস্থা খারাপ । এখনো চুপ চাপ আছে দেখে আরো ভয় লাগছে । সোহানা বলে – শুনছ ?? কিছু বলো । ছেলে যে পছন্দ করে নিয়েছে ।
মিরাজ – দেখো ভাইয়া রাগ করো না । ছেলের পছন্দ।বললেই তো বিয়ে হচ্ছে না । আল্লাহ জানে সব।
ফিরোজ সামনে রাখা কফিটা হাতে নিয়ে শেষ করে । রাজিবের বিয়ের দিনের সমস্ত ঘটনা তার জানা । তানভীর রাজীবের সাথে শেয়ার করেছে । আর রাজিবের থেকে ফিরোজ জানতে পেরেছে । বরাবর এটাই হয়ে আসছিলো । রাজীবের থেকে তানভীরের সব খবর নিয়ে ছেলেকে সঠিক পথে রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা করে গেছে যা তানভীরের অজানা । ছেলে মেয়ে বড় হলে যা বাবা মার সাথে না বলতে পারে তা সহ সবটুকুই বেস্ট ফ্রেন্ডকে বলে। এতোদিন ঠিক ই খেয়াল রেখেছে দুজনের উপর । শেষ বার সেদিন তানভীরের ক্ষত পরিস্কার করার সময় দেখে তৃপ্ত হয়েছেন। লাবিবাই যে তানভীরের জন্য সেটা ভালো ভাবে বুঝে গেছেন । দাড়িয়ে বলে – তোমাদের কি কোনো অসুবিধা আছে লাবিবাকে তোমাদের একজন ভাবতে ?
এমন প্রশ্নে সবাই অবাক । মাথা নাড়িয়ে না জানায় । সোহানা বলে – তুমি রাজি?
– তানিয়া তানভীরকে যে চোখে দেখো লাবিবাকেও সেভাবে দেখা শুরু করো । শাশুমার দায়িত্বটা বেশিই পড়লো। রাজি কথা বললে ঠিক হবে না । সত্যি বলতে আমি যা জানি তোমরা তা জানো না ।
চশমা চোখে দিয়ে ফোনটা নিয়ে বেড়িয়ে পড়ে বাসা থেকে ।
লাবিবা আর নুপুর এসেছে পড়ার জন্য । তানভীর পড়াচ্ছে আর লাবিবার দিকে তাকাচ্ছে । নুপুরকে বলে – কবে এসেছো নুপুর ?
– গতকাল স্যার । বই নিয়েই গিয়েছিলাম । এই লাবুর জন্য আসতে হলো ।
– কেনো ?
– পরশু স্কুলে সাংস্কৃতিক অনুষ্টান । তাই । লাবু নাচ দিবে ।
তানভীর ভ্রু কুচকে বলে – স্টেজে দেখার কি আছে ? ও তো সারাদিন ই নেচে নেচে বেড়ায় ।
এদিকে লাবিবা গাল ফুলিয়ে বলে – দোষটাতো আমাকেই দিলি । তুই যে ফোন দিয়ে কাদতি আমি নাচব আর তুই দেখতে পারবিনা সে জন্য । ?
– রাগিস কেনো ? গোয়াল কি বলে তার দই টক ?
তানভীর তানিয়া হেসে ফেলে কথা শুনে ।
পড়ানো শেষে নুপুর বেড়িয়ে যায় । লাবিবা তানভীরের সাথে লেগে লেগে মাপ দিচ্ছে নিজের । বুক পর্যন্ত পৌছায় । তানভীর ভ্রু কুচকে পকেটে দু হাত রেখে বলে – কি ??
– ও স্যার আপনি এতো বড় কেন ? ডলফিনের মতো । আমার বড়ো মানুষ দেখলে ভয় লাগে ।
– আমাকে ভয় লাগে ? আমি কি তোমায় কামড় দেই ?
– না । আপনি কামড় দিলে আমি সাথে সাথেই শহীদ খামু ।
– ট্রাই করা যাক ।
হাত টা ধরে কবজির দিকে কামড় বসায় । লাবিবা এক চিক্কুরে হাত ছাড়িয়ে দৌড় দিয়ে বাইরে চলে আসে । চোখে পানি ছল ছল করছে । হাতের দিকে তাকিয়ে দেখে কিছুই হয়নি । ব্যথাও তো করছে না । পেছন দিকে তাকিয়ে দেখে জানালার কাচে হাত রেখে দাড়িয়ে হাসছে তানভীর । জোরে জোরে বলে
– দুষ্টু পুতুল ভিতুর ডিম ।
– আপনি খরগোসের ডিম ।
– তবেরে ….
– নাহহহ…… এক দৌড়ে গেটের বাইরে চলে আসে ।
To be continue ______
®লবিবা_____?