একগুচ্ছ_কালো_গোলাপ?পর্ব_২৪

0
5890

একগুচ্ছ_কালো_গোলাপ?পর্ব_২৪
#লাবিবা_তানহা_লিজা

?
রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় চোখ পড়ে রাস্তার পাশে দু চার জন ছেলেমেয়ের দিকে । হাতে লম্বা কোটা আর খড়ের পাকানো বিরা নিয়ে হেটে যাচ্ছে । কোথা থেকে একটা মেয়ে মাথায় খাচা নিয়ে দৌড়ে এসে তাদের মাঝখানে ঢুকে পড়ে । মাথাটা একটু হেলিয়ে দেখে খাচামাথায় মেয়েটি আর কেউ নয় স্বয়ং দুষ্টু পুতুল। রাস্তা ছেড়ে কাঠবাগানে ঢুকে পড়ে সবাই । তানভীরের কিউরিসিটি জাগে ।ওরা কেনো ঐ দিকে যাচ্ছে?
গাড়ি সাইড করে নেমে পিছু পিছু যায় । একটা বড় গাছের নিচে লাবিবারা দাড়ায় । একে একে ছেলেমেয়েরা গাছে উঠতে থাকে । লাবিবা নিচ থেকে গাছের ডালে পাখির বাসা দেখে আনন্দে লাফাতে থাকে ।
– উফ লাভলি…আমার টিয়া পাখি…আই ভালুপাসি। আজকে থেকে তুমি আমার কাছে থাকবে । আর গাছে গাছে কষ্ট করে থাকতে হবে না ।
তানভীর এগিয়ে এসে গাছের ডালে তাকায় । একসাথে দুটো পাখির বাসা। বাচ্চা সহ মা ও আছে। বাচ্চা গুলো বাসা থেকে মুখ তুলে নিচের দিকে তাকাচ্ছে বার বার । উপর থেকে একজন ডাক দেয়
– এই লাবু ..উঠে আয় । দেখ কি সুন্দর ।
লাবিবা মাথা থেকে খাচা মাটিতে রেখে হেলানো গাছ টায় উঠতে থাকে । একটু উঠে আর উঠতে পারে না ।
– কি হলো লাবু তারাতারি আয় ।
– উফফ বাবা ..আমি কি পারি নাকি ? আমি কখনো গাছে উঠেছি ? এখন তো পেলতে হবে । আমি তো পারি না ।
– ওও আমরা কষ্ট করে পাখি পারবো আর তুই নিয়ে পালবি ? দিবো না তোকে ।
– আমি কাদবো কিন্তু ।
– কাদোই । দেবো না তোকে । আচ্ছা আয় হাত ধর ।
লাবিবা হাত ধরে একটু একটু করে এগুতে থাকে । শ্যাওলা জমে আছে গাছে তাই পা বার বার পিছলে যাচ্ছে । কোন রকম কষ্ট করে উঠে । পাখির কাছে যেতেই পাখি ফুরুৎ। পাখির সাথে সাথে বাচ্চারাও ফুরুৎ । এবার লাবিবা কান্না জুড়ে দেয় ডালে বসেই ।
– কাদিসনা । কাল আবার আসবে । বাসা ছেড়ে কোথায় যাবে বল ? আবার ধরে দিবো ।
– আমার টিয়া??
– ভ্যা ভ্যা করিস নাতো ।চল নামি । দুপুর বেলা হয়ে গেছে । জায়গা ভালো না ।
সবাই একে একে নামতে থাকে । লাবিবাও পিছলে নামতে থাকে । সমস্যা দেখা দেয় সেই জায়গায় । পিচ্ছিল জায়গা আর পেলে নামতে হয় । অন্যরা অনেক নিচে নেমে গেছে । লাবিবা নিচের দিকে তাকাতেই মাথা ঘুরে যায় । অনেক উপরে উঠে গেছে । নামবে কিভাবে ।
– আমাকে নামাও ।
– আরেকটু এগিয়ে আয় । হাত দিচ্ছি ।
পিচ্ছিল গাছে বার বার পা স্লিভ খাচ্ছে । ডালের সাথে লেগে হাতে ব্যথাও পায় । ছিলে গেছে একদম । হাত ধরেই কাদতে থাকে ।
– আরে না কেদে আরেকটু এগিয়ে আয় ।
লাবিবা আরেকটু এগিয়ে হাত ধরার জন্য ঝুকে গেল ।পা বার বার স্লিভ খাচ্ছে ।এই বুঝি পরে যাবে যাবে ভাব দেখে আর চুপ থাকতে পারে না তানভীর ।
-দুষ্টু পুতুল পরে যাবে সাবধানে ।
তানভীরের কন্ঠ শুনে নিচের দিক তাকাতেই হাত আর পা দুটোই ফসকে যায় ।
আআআআআ…..
নিচে পড়ে যেতে দেখেই তানভীর দৌড়ে লাবিবাকে ধরে নেয় । অন্য রা চিৎকার শুরু করে । তাড়াতাড়ি গাছ থেকে নেমে আসে । তানভীর বলে – পানি আনো তোমরা । সবাই পানি পানি করে বড় পুকুরের দিক ছুটতে থাকে । লাবিবা ভয়েই চোখ বন্ধ করে কাদতে থাকে । তানভীরের ডাকে চোখ খুলে দেখে তানভীরের কোলে । ব্যথায় ভয়ে আরো জোরে কেদে দেয় । কোলে নিয়েই গাড়িতে চলে আসে । গাড়িতে বসিয়ে দেয় এক ধমক – গাছে উঠতে কে বলেছিলো তোমায় ? পাখি চাই কাউকে বললেই তো এনে দে । আমাকে বললেই তো এনে দিতাম । এখন পড়ে গেলে বাচতে ? দেখি কোথায় ব্যথা পেয়েছো ? হাত পায়ে ছিলে গেছে অনেকটা জায়গা । ছেলে মেয়েরা পানি ভর্তি জগ আর গ্লাস নিয়ে আসে । একটু পানি খায় লাবিবা । ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাদতে কাদতে বলে
– শোন তরা । আমি যে পড়ে গেছি কাউকে বলবিনা । আম্মুনিকেও না ।
– আচ্ছা । গেলাম আমরা ।
তানভীর তাকিয়ে আছে লাবিবার দিকে । কি মেয়েরে বাবা ..উল্টা পাল্টা কাজ ও করবে আবার বাসায় বলতেও না করবে । এদিকে তানভীর ও ভয় পেয়ে গিয়েছিলো । কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম স্পষ্ট।
ফাস্ট এইড বক্স বের করে হাতে ওষুধ লাগাতে নিলে লাবিবা লাফানো শুরু করে দেয় – জ্বলে জ্বলে ।
অগত্যা তানভীর সামনের দিক করে কোলে ভ‌বসিয়ে চেপে ধরে ওষুধ লাগায় যেন লাফাতে না পারে । এদিকে হাতে পায়ে ওষুধ লাগানোতে কামড় ধরায় লাবিবা চিল্লাতে থাকে । তানভীর মলম টা রেখে মুখ চেপে ধরে । আরেক হাতে এসির পাওয়ার বাড়িয়ে দেয় । লাবিবার মুখ লাল হয়ে গেছে কাদতে কাদতে । ঘেমেও গেছে । তানভীর মুখের উপর থেকে চুল সরিয়ে ফু দিতে থাকে ।
– কামড় ধরা ভালো তো । এখনি ঠান্ডা লাগবে । আর জলবে না । জাস্ট দুই মিনিট ।
জ্বলা বন্ধ হলে ঠান্ডা লাগতে থাকে । লাবিবার কান্না একটু একটু করে বন্ধ হয় । তানভীর মুখ ছেড়ে দেয় ।
লাবিবা কে নিজের সাথে হেলান দিয়ে বসিয়ে দেয় । লাবিবা এখনো ফুপাচ্ছে । তানভীর কি বলবে ভেবে পায়না । এতটুকু ব্যথাতেই এই অবস্থা ।
– এতো ছোট কেন তুমি দুষ্টু পুতুল ? কিছুই কি বুঝো না ? আজ যদি পা দুটো ভেঙে যেতো তাহলে তুমি স্কুলে পারফর্মেন্স করতে কিভাবে ? চলো এখন বাড়ি যাবে ।তোমাকে সামলাতে সামলাতে আমি নাজেহাল।পেছনের প্যাকেটে তোমার ইউনিফর্ম আছে । টেডি টাও তোমার ।
লাবিবা একবার পেছনে তাকিয়ে বলে
– আমি বাড়ি যাবো না । আম্মুনি হাতে এগুলা দেখলে মারবে ।
– মারবেনা । আমি আছি । নুপুরকে বলে দিচ্ছি । আজ তোমার বাসায় পড়াবো । রাত পর্যন্ত পড়াবো । লাস্ট লেসনটা আজি শেষ করাবো।
– আজি!!! আচ্ছা ।

লাবিবার বাসায় এসে রাত নয়টা পর্যন্ত পড়ায় দুজনকে । আনিস এসে নুপুর কে সাথে করে নিয়ে যায় । তানভীর বেরোতে নিলে ইসমাইল আটকে দেয় । না খেয়ে বেরোতে দিবে না । সাবিনাকে বলে খাবার রেডি করতে । মুক্তাও আছে বাসায় । সবাইকে খাবার দেয় টেবিলে । খেয়ে দেয়ে রাত বারোটা পর্যন্ত গল্প গুজব করে সবার সাথে । সোহানার ফোন পেয়ে বলে
– কাকা কাকি এখন আমাকে যেতে হবে । ভাইয়া আমাদের বাসায় আসবেন। আমি নেই তো কি হয়েছে কাকার সাথে আসবেন ।
ইসমাইল – আজ থেকে গেলে হতো না ?
– মম ফোন দিচ্ছে । উঠি এবার । আআ আমার ওয়ালেট ….দুষ্টু পুতুলের রুমে ..দুষ্টু পুতুল ঘুমিয়ে পড়েছে মনে হয় । সরাদিন যা যা করে…সাবধানে রাখবেন কাকা ।
সাবিনা- তুমি বসো আমি আনছি ।
– না কাকি আমিই আনছি । আমিতো রেখেছি আমি আনছি ।
ওয়ালেট পেকেটেই আছে । শুধু যাওয়ার সময় মায়াবী মুখটা দেখে যাওয়ার বাহানা । লাবিবার রুমে এসে দেখে তানভীরের দেওয়া টেডি জড়িয়ে ঘুমোচ্ছে । পাশে বসে চুলে হাত বুলিয়ে দেয় । কানের কাছ মুখ নিয়ে কয়েকবার ডাক দিতেই লাবিবা চোখ খুলে তাকায় । মাথার নিচ দিয়ে হাত দিয়ে মুখটা একটু উপরে তুলে ঘুমু ঘুমু চোখ দুটোয় ঠোট ছুয়ায় । কপালে নিজের কপাল লাগিয়ে বলে – কাল রিয়ার্সেল শেষ করে আমার সাথে দেখা করবে । বাসায় থাকবো আমি । একাই যাবে । নুপুরকে সাথে নিও না । কাল পড়াবো না।
– তাহলে কেনো যাবো ?
– চকলেট নিবে না ?
– হুম ।
– ওকে ঘুমাও । গুড নাইট ।
_________________
লাবিবা গুটি গুটি পায়ে স্কুলের দিকে এগুচ্ছে । আজ বড় রাস্তা ধরেই এসেছে । খান বাড়ির সামনে এসে সেই কালো গোলাপের গাছটার দিকে একবার তাকায় । পরক্ষনেই চোখ ফিরিয়ে নেয় । গেইটের সামনে বসে এই ঠান্ডায় কাপছে আকবর । আজ ঠান্ডা পছেড়ে খুব । সকাল হোওয়ায় ঠান্ডা লাগে । আকবরের সামনে গিয়ে কোমড়ে হাত রেখে বলে
– তুমি তো ভালো না । ঠান্ডায় গরম কাপড় পরোনা কেন ? সিজন পরিবর্তন । যদি ঠান্ডা লেগে যায় তখন কি করবে ? শাশুমা সেদিন তোমায় দুটো গরম কাপড় দিয়েছে ।
– কি আর করবো বলো মা । বাড়িতে নিতেই ছেলে নিয়ে গেল জ্যাকেট আর বউ নিলো চাদর । আমার জন্য কিছু থাকে না ।
– ওকে নো সমস্যা । এইটা নাও তোমার ।
গা থেকে শাল টা খুলে দিলো ।
– একি ! তোমার ঠান্ডা লাগবে মা । আমি নিবো না ।
– নিবা ধরো । এইটা কাউকে দিবা না । আম্মুনি অনেক খুজে বাইশশত টাকা দিয়ে কিনে এনেছে আমার জন্য ।
– আল্লাহ!!
– হুম। এইটা আমি তোমাকে দিলাম । আর কাউকে দিবা না । গেলাম ।
কিছুটা এগুতেই দেখে তানভীর আসছে জগিং করতে করতে । ঘেমে নেয়ে অস্থির । হাপাতে হাপাতে সামনে এসে হাটুতে দু হাতে ভর করে হেলে মুখ উপুড় করে লাবিবার দিকে তাকায় ।
– স্যার..সকাল নয়টায় আপনি জগিং করেন?
তানভীর দাড়িয়ে বলে – আরে নাহ। ঐ দিকে গিয়েছিলাম । কয়েকজন পরিচিত কে দেখলাম তারাও জগিং করছে । চা খেলাম টং এ বসে । গল্প করতে করতে দেরি হয়ে গেলো ।
– ওও।
– গরম কাপড় পরোনি কেন ? ঠান্ডা লাগছেতো ।
– আকবর কাকাকে দিয়ে দিয়েছি । উনি ঠান্ডায় কাপছিলো ।
তানভীর উকি দিয়ে দেখে সত্যিই তাই । জ্যেকেট খুলে লাবিবার হাতে দিয়ে বলে – এটা পড়ো। কট জেক্যাট জেন্টল লেডিস উভয়ের জন্য ই ।
– আমি পড়বোনা । বলেই লাবিবা হাটা ধরে জেক্যাট তানভীরের হাতে দিয়ে । তানভীর পেছন থেকে জোর করে জেক্যাট পড়িয়ে দেয় ।
– ওকে যাও এখন স্কুলে ।
লাবিবা এগুতে থাকে । তানভীর ও বাসার দিকে হাটা দেয় । কিছুটা যেতেই আবার ফিরে দৌড়ে লাবিবার কাছে যায় । লাবিবা দাড়িয়ে পড়ে ।
– দুষ্টু পুতুল শোন আমি একটা কাজে এক জায়গায় যাচ্ছি । তুমি কাল এসো প্লিজ । তোমার জন্য চকলেট আনবো আজ ।
– ওকে?।
– চলো তোমায় এগিয়ে দেই ।
দুজনে হাটতে থাকে ।
-স্যার একটা কথা বলবো ?
– বলো ।
– একটা গোলাপ দিলে কি হয় …
– একটাই নিবে ?
– হুম ।
– গাছ কষ্ট পাবে । পারবোনা । সরি ।
– ইটস ওকে । জানি দিবেননা । কিপটুস।
– স্কুল এসে গেছে। যাও ।

To be continue _____

®লাবিবা____?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here