একগুচ্ছ_কালো_গোলাপ?পর্ব_২৫

0
5877

একগুচ্ছ_কালো_গোলাপ?পর্ব_২৫
#লাবিবা_তানহা_লিজা

?
দুপুর দুটোর দিকে লাবিবা স্কুল থেকে বাসায় আসে ।তিনটার দিকে খান বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হয় । বাসায় ঢুকতেই দেখে সবাই ড্রয়িং রুমে বসে আছে । লাবিবাকে দেখে তানিয়া লাবিপু লাবিপু বলে দৌড়ে আসে । লাবিবাকে নিয়ে সোহানা আসতে বলে ওদের কাছে । লাবিবাকে পাশে বসিয়ে দেয় ।
– দেখো আমার মা টার চাদ মুখ খানা । কতো মায়াবী ।
ফিরোজ মাথায় হাত বুলিয়ে বলে
– লাবিবা আম্মু কেমন আছো ?
লাবিবা- আলহামদুলিল্লাহ । আপনি ? শাশুমা …আমার চাদ মুখ হবে কেন ? চাদ তো হুয়াইট কালার । আর কতো উজ্জল । আমি তো তেমন না ।
সবাই হেসে ফেলে । মমতা বলে – তুমিতো উজ্জল শ্যামা । উজ্জল শ্যামা মেয়েরাই প্রকৃত সুন্দর । মাটির ঘ্রান রুপ পাওয়া যায় ।
সোহানা – তানভীর উপরে আছে । যাও দেখা করে আসো ।
লাবিবা উঠে সিড়ি বেয়ে উপরে চলে আসে । দরজায় নক করে সাড়া না পেয়ে ভিতর দিক ঠেলে রুমের ভিতরে চলে আসে । পুরো রুমে খোজে দেখে তানভীর নেই । বাথরুম থেকে আওয়াজ আসছে । তারমানে স্যার গোছল করছে । রুমের একেকটা আসবাব পত্র ধরে ধরে দেখতে থাকে লাবিবা । অতি সুন্দর কারুকার্যপূর্ন আসবাব পত্র যাকে বলে সেই আসবাব পত্রে পুরো রুম সাজানো । লাক্সারিজ আসবাব পত্র।
হটাৎ চোখ পড়ে দেয়ালে একটা বড় গিটারের উপর । হাত দিয়ে ছুয়ে দিতে গিয়েও ছুয়না । যদি পড়ে গিয়ে ভেঙে যায় তখন আস্ত চিবিয়ে খাবে ডলফিনটা। দরজার শব্দে পেছন দিকে ফিরে । তানভীর সদ্য গোছল করে টাওয়েল দিয়ে মাথা মুছতে মুছতে বের হচ্ছে‌ । পড়নে থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট আর একটা হুয়াইট কালার টি শার্ট। সাথে ফ্রেশ একটা লুক । তানভীর লাবিবাকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে টাওয়েলটা সোফায় ফেলে ডোর টা লক করে লাবিবার পাশে এসে দাড়িয়ে
জিজ্জাসা করে – কখন এসছো ?
– তিন মিনিট । স্যার একটা কথা বলবো ?
– হাজারটা বলো ।
– আপনি গান পারেন ?
– একটু একটু । কেন ?
– গিটার ……..(আঙুল দিয়ে দেখিয়ে) । আমাকে শেখাবেন স্যার ?
– শিখবে ?
– হু। গান ও শুনবো ।
– আচ্ছা । খাটে গিয়ে বসো ।
লাবিবা বসে। তানভীর মাঝারি বড় একটা বক্স দেয় লাবিবার হাতে । লাবিবা আনবক্স করতেই দেখে চকলেটর পৃথিবী । খুশিতে বসেই দেয় এক লাফ । তানভীর বসে লাবিবাকে টেনে কোলে বসিয়ে দেয় । দু হাতের উপর হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে বলে
– দুষ্টু পুতুল ..গিফ্ট পছন্দ হয়েছে ?
– এত্তোগুলা ?।
লাবিবা হাত ছাড়িয়ে নিয়ে চকলেট খেতে থাকে । তানভীর কোলে বসিয়েই লাবিবার চকলেট খাওয়া দেখতে থাকে । ঠোট দুটোও চকলেটের মতো হয়ে গেছে । পেটের দিক দিয়ে হাত দিয়ে নিজের সাথে লাগিয়ে নেয় লাবিবাকে । ঘাড় থেকে একপাশে চুলগুলো সরিয়ে কাধে নিজের থুতনি রাখে ।
— দুষ্টু পুতুল ..
লাবিবা তাভীরের দিকে আড় চোখে তাকায় । ঘাড় ফিরিয়ে তাকাতে পারে না কাধে থুতনি রাখায় ।
– আমাকে মিস করো তুমি আমি যখন তুমার সাথে না থাকি ?
– এখন মিস করি না । কিন্তু যখন ঢাকায় গিয়েছিলেন কয়েকদিন আগে তখন মিস ইউ ভুরিভুরি । আপনাকে দেখতে ইচ্ছে করছিলো বার বার । আমার কাছে ছবি থাকলে দেখে নিতাম । আপনি অনেক সুন্দর । সবাই বলে আমার মামাতো ভাই তাঈফ অনেক সুন্দর । কিন্তু আপনি ওর থেকে আরো সুন্দর ।
– তুমার কি তোমার মামাতো ভাঈকেও দেখতে ইচ্ছা করে দুষ্টু পুতুল ?
– হুম । আমিতো ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে থাকি ।
– কিহহ?? ?সুন্দর হলেই তাকিয়ে থাকতে হবে নাকি ? ছেলেদের দিকে একদম তাকাবেনা । ভাইকে সব সময় ভাইয়ের মতোই মনে করবে । কারো দিকে তাকাবেনা । আমি তোমায় আমার অনেকগুলা পিক দিবো । তুমি শুধু আমাকেই দেখবা । আর কখনো তাকাবেনা ওর দিকে বলে দিলাম ।
– কিন্তু ওর দিকে না তাকলে ও তো কাদবে । আমাকে অনেক ভালুপাসে । আমিও ভালুপাসি ।
কোল থেকে ধাক্কা দিয়ে উঠিয়ে দেয় । লাবিবা স্তম্ভিতো হয়ে যায় । তানভীরের রাগে ভয় পেয়ে চোখে জল টলমল করতে থাকে ।
– ভালুপাসি মানে ? এইটুকুন মেয়ে তুই ভালোবাসার কি বুঝিস ? তোর তো দেখা যায় গোড়েই সমস্যা। আরেকবার কাউকে ভালোবাসার কথা বলবিতো থাপ্পিয়ে গাল ফাটিয়ে দিবো । বেদ্দপ মেয়ে । দেখি তোর তাঈফের কতো রুপ ..ছবি আছে না ? ফোন বের কর । কর বের !!
লাবিবা কেদে দিয়েছে । ব্যাগ থেকে ফোন বের করে ছবি বের করে তানভীরের দিকে দিতেই ছো মেরে নেয় । ছবি দেখে তানভীর চুপ । লাবিবার দিকে তাকিয়ে আছে । লাবিবা অনবরতো কাদতেই আছে । হাত দিয়ে সামনের চুল গুলো পেছনে নিয়ে বললো
– এটা তাঈফ ?
– হামম।
– ওহহ। কিউট অনেক । কতো বছর চলছে ?
– তিন বছর সাত মাস চলছে ( কাদতে কাদতে)।
ফোনটা ব্যাগে ঢুকিয়ে লাবিবার কাছে আসে । লাবিবা দু পা পিছিয়ে যায় । আর পেছোতে না দিয়ে পাজাকোলে তুলে নিয়ে বিছানায় এসে বসে । লাবিবা শক। বুকের সাথে চেপে নিয়ে চোখের পানি হাত দিয়ে মুছে দেয় । নাকটা লাল হয়ে গেছে । ঠোট দুটো চকলেটের মতো। লোভ সামলাতে না পেরে চকলেটি ঠোটে আলতো ভাবে ওষ্ঠ ছোয়া দেয় ।
– কথায় কথায় একদম কাদবেনা । আমিকি মেরেছি তোমায় ? চকলেট দিলাম এতো আদর করে তাও মন ভরে না ?
– বকা দিল আবার কথা ..(গাল ফুলিয়ে)।
– আর বকা দিবো না । কেমন ? তাকাও আমার দিকে ।
গাল ধরে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিয়ে চোখে চোখ রাখে
– আমি কি সব সময় বকি তোমায় ? একটুও কি ভালোবাসি না ?
– ভালুপাসেন আমার আব্বুর মতোই । বকাও দেন ভালুওপাসেন ।
– হুম । আব্বুর কথা যেমন শুনবে তেমনি আমার কথাও শুনবে । তোমাকে অনেককিছু বলতে চেয়েছিলাম । কিন্তু বললাম না । তোমাকে বলে লাভ নেই । শুধু বলবো আব্বু জেঠ্যুর কথা শুনে চলবে সব সময় । দুষ্টুমি কম করবে । বুদ্ধি খাটিয়ে যেটা ভালো কাজ সেটা করবে আর যেটা খারাপ কাজ সেটা করবেনা । ভালো ভাবে পড়া শুনা করবে ।
– আর ?
– কেউ টিজ করলে সাথে সাথে উত্তর দিবে নয়তো ওখান থেকে চলে এসে আব্বুকে বলবে । বোকার মতো গা থেকে উড়না খুলে দিয়ে আসবেনা ।
– আর ?
– ছেলে অনেক গুন সুন্দর হলেও নজর দিবে না । কথায় কথায় কাদবেনা প্যাচ প্যাচ করে । বড়ো হচ্ছো তুমি ।
– আর ?
আপাদতো এটুকুই । বাসায় যাও । বক্স নিতে না পারলে বলো পৌছে দিয়ে আসি ।
– হাটতে পারবোনা। পা ব্যথা করে ।
– কোথায়?দেখি?
– আআআ পা ধরেন কেন ? বড় মানুষ আপনি ।
– হা হা চলো ।
__________________
বড় ছড়ানো ফিরোজা কালারের মধ্যে কালো মিক্স ঘাঘরা, ফিরোজা কালারের মধ্যে ব্লাক স্টোন বসানো টপ, ফিরোজা কালো মিক্স জরজেট দোপাট্টা পড়েছে লাবিবা । স্টেজে একে একে সবার পারফরমেন্স দেখানো হচ্ছে । মুক্তা লাবিবার সিরিয়াল শেষের দিকে দিয়েছে একদম । সেজে গুজে কর্নারে বসে বসে চাটুনি খাচ্ছে । আর দরজার পর্দা সরিয়ে পারফরমেন্স দেখছে । বিশেষ অতিথি হিসেবে ইসমাইল ও আমন্ত্রিতো। তানভীর গেইটের সামনে গাড়ি দাড় করিয়ে গাড়ির ভিতর থেকেই তাকিয়ে আছে স্টেজের দিকে । এখান থেকে বেশ ভালোই দেখা যাচ্ছে । বিকালের দিকে লাবিবার সিরিয়াল পড়েছে । নুপুর দৌড়ে এসে মুখ থেকে চাটুনি নিয়ে ফেলে দিয়ে লাবিবাকে বসা থেকে উঠে দাড় করালো ।
– এই গান টা শেষ হলেই তোর ডাক পড়বে । তারাতাড়ি রেডি হ । শোন রিয়ার্সেল তো করিস নি । কতো করে বললাম ..তোর নাকি রিয়ার্সেল করতে হবে না এমনিতেই পারিস । দেখি আরেকটু উচিয়ে নেয় ঘাঘরাটা নয়তো পায়ের সাথে লেগে যাবে । দেখি আর দুইটা পিন লাগিয়ে দেই ।
– এতো অস্থির হচ্ছিস কেন তুই ? মনে হচ্ছে আমি বিশ্বজয় করতে যাচ্ছি আর তুই আমার রন সাজিয়ে দিচ্ছিস।
তিথি একগ্লাস শরবত হাতে এনে বলে – এটা খা তো তারাতারি । অস্থির তো হবোই । উর্মি আপু ফিট খাইছিলো একটু আগে নাচতে গিয়ে । তুই তখন চেঞ্জ করছিলি ।
লাবিবা শরবত শেষ করে ভ্রু উচিয়ে বলে – উর্মি আপু নাচতে জানে !!!!কোন জনমে তো জানলাম না। যাই হোক আই এম ওকে ।
সবাই একসাথে – অল দ্যা বেস্ট।
লাবিবার ডাক পড়তেই স্টেজে উঠে । সবাই হৈ হৈ শুরু করে দেয় । লাবিবা পুরো থানার মধ্যে ডান্স টপার এটা সবাই ভালো করে জানে । যে অনুষ্টানে লাবিবা ডান্স করবে সেই অনুষ্টানে এলাকার মানুষ ভেঙে পড়ে । সামনে একসাথে বসা ইসমাইল ,মুক্তা, মেম্বারগন আর বাকি টিচার । ইসমাইলের দিকে তাকিয়ে লাবিবা না গুনা দাত বের করে একটা হাসি দিলো । পাগলী মেয়ের এমন হাসি দেখে অন্যদিকে ফিরে একটু হেসে নিলো । মুক্তা ইশারায় বুড়ো আঙুলে অল দ্যা বেস্ট জানালো । তানভীর গাড়ি থেকে নেমে এলো । চোখে চশমা মুখে মাস্ক পড়া ছিলো । ঐভাবেই দর্শকের সাথে ভিড়ে মিশে দাড়ায় । মিউজিক অন হওয়ার সাথে সাথে লাবিবার ডান্স শুরু ।
দাইয়া দাইয়া দাইয়া রে ~ ছাম্মা ছাম্মা~ কাজরারে কাজরারে~ওরে পিয়া ..~ আজা নাচলে ~ ছমাক ছমাক ছম বাজে পায়েল ~ বারসরে মেঘা মেঘা ~ দোলারে দোলারে ………..মিক্স গানের টানা আধা ঘন্টা ডান্স করে নামলো স্টেজ থেকে । চারিদিকে হৈ হৈ পড়ে গেছে । ইসমাইল এতোক্ষনে এসে গেছে লাবিবার কাছে । বোতল দিয়ে মাথায় পানি ডালছে নুপুর । ইসমাইল বকা দিচ্ছে এতোক্ষন নাচ করার জন্য আর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। টাওয়েল দিয়ে মুছতেই লাবিবা লাল মুখটা নিয়ে ঘাড় উচিয়ে বলে
– আমি ফিট খাইছি তাই না ? আমার এদিকে কিছুই হলো না আর তোমরা এমন করছো যেন আমি ফিট খাইছি ।
ইসমাইল রেগে দেয় ধমক
– চুপ কর । আর একটা কথাও বলবিনা । মাথায় রক্ত উঠে গেছে বুঝা যাচ্ছে ।
লাবিবা হা হয়ে মনে মনে বক বক করতে থাকে । আমার তো কিছুই হয়নি । আরো একঘন্টা এভাবে নাচতে পারবো আমি । শুধু শুধু ভয় পায় এরা ।
তানভীর পাশে এসে দাড়িয়ে বলে
– কাকা লাবিবার মনে হয় মাথা ঘুরাচ্ছে । ওকে বাসায় দিয়ে আসি ।
ইসমাইল বলে
– হা বাবা । আমার যেতে দেড়ি আছে । লাবিবার হাত ধরে তানভীর গাড়ির কাছে নিয়ে আসে । গাড়িতে বসিয়ে দেয় । লাবিবাতো অবাক । গাড়ি স্টার্ট দিলে বলে
– স্যার ..আপনি কোথা থেকে এলেন ?
– এখানেই ছিলাম । তোমার পারফর্মেন্স দেখলাম । অনেক ভালো ডান্স করো তুমি । দেখে বুঝাই যায় না যে তুমি ডান্স পারো ।
– আমার কিন্তু কিছুই হয়নি ।
– তোমার তেজ দেখে বুঝা যাচ্ছে । গাউন ছাড়া ঘাঘরাতে তোমাকে দেখলাম । দারুন লাগছে ।
– হা । সুন্দর না ?? এটা ডান্স করার জন্য মামাকে দিয়ে গাঙ্গিনাপাড় বাটারফ্লাই থেকে কিনে এনেছি অনেক ঘুরিয়ে ছয় হাজার টাকা দিয়ে ।
– আচ্ছা..। নামো বাসায় এসে গেছি তোমার ।
লাবিবা নামতে গেলে তানভীর ডাক দেয় ।
লাবিবা আবার বসে পড়ে । দুজনের চোখ এক হয়ে যায় ।
– দুষ্টু পুতুল ..একটা হাগ দিবে আমায় ?
লাবিবা হা করে তাকিয়ে ।
– একটা হামি দিই ?
কপালে দেখিয়ে বলে এখানে দিন ।এখানে আমার আব্বু দেয় ।
একটানে লাবিবাকে জড়িয়ে নেয় নিজের বুকে । লাবিবা অবাক হয়ে যায় তানভীরের হার্ট বিট শুনে । এতো ফাস্ট কারো হার্টবিট হয় এই প্রথম ফিল করছে লাবিবা । নিজের হাতে আকড়ে ধরে তানভীর কে । তানভীর কপালে নিজের ঠোট ছুইয়ে থাকে কিছুক্ষন । লাবিবার বেশ ভালো লাগছে এভাবে থাকতে । কপাল ছেড়ে কানের কাছে মখ এনে বলে
– এই কপালে যেন শুধু আমার আর তোমার আব্বুর আব্বুর ছোয়া লাগে । আর কারো না । আর এই পুরো বডিতে যেন একটা কাকপক্ষীর ছোয়াও না লাগে সব সময় মনে রাখবে । আর …ভুলোনা আমায় ।
লাবিবা মাথা নাড়ায় । গাড়ি থেকে নেমে যেতে নিলে আবার ডাকে। লাবিবা দাড়িয়ে পড়ে ।
– কিছুনা যাও ।

To be continue ____

®লাবিবা____?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here