একগুচ্ছ_কালো_গোলাপ?পর্ব_২৬

0
6209

একগুচ্ছ_কালো_গোলাপ?পর্ব_২৬
#লাবিবা_তানহা_লিজা

?
হেলতে দুলতে লাবিবা আসছে রাস্তা দিয়ে । একটু ভেবে দাড়িয়ে পড়ে । তাকে তো আবার ঘুরে আসতে হবে তার চেয়ে একেবাড়ে পড়েই বাসায় যাবে । আজ টেস্ট পেপার থেকে যেগুলো মার্ক করে দিয়েছে সেগুলো পড়বে । টেক্স বুকতো অলরেডি কমপ্লিট করে দিয়েছে । রাস্তা ঘুরে হাটতে থাকে । খান বাড়ির সামনে এসেই চোখ পড়ে ভিতরের দিক। কিন্তু একি ! কালো গোলাপের গাছটা কোথায় ? লাফা লাফি করেও দেখতে পায় না । গাছের কি পা আছে নাকি যে স্থান পরিবর্তন করবে ? প্রতিদিন তো এখান থেকেই দেখতাম । আজ কোথায় গেলো ? সামনের দিকে হাটতে হাতে হন্ত দন্ত হয়ে । রাস্তার পাশে ক্ষেতের উপরে চোখ পড়ে । গাছের ডাল গুলো ফেলে রেখেছে এখানে । তাহলে কি গাছ কেটে ফেলেছে ? চিক্কুর দিয়া দৌড়ে গেটের সামনে আসতেই আকবর ধরে ফেলে ।
– কি হয়েছে আম্মু ? কাদতেছো কেনো ? ভয় পায়ছো ? কি হয়েছে ?
– গাছ কোথায় ?? গাছ ঐখানে পড়ে আছে কেনো ? (চিল্লিয়ে)
– গাছ তো কেটে ফেলেছে মা ।
মাথা টা ঘুরে যায় । মাথায় দু হাত দিয়ে বসে পড়ে লাবিবা । আবার চিল্লিয়ে বলে
– কে কাটলো এই গাছ? কার এতো বড় সাহস ? স্যার কোথায় ?
– ছোট সাহেব তো সকাল বেলাই বিদেশ চলে গেছে । মনে নাই তোমার ?
অবাক হয়ে তাকিয়ে – বিদেশশ…কোন দেশ ?
– ইংল্যান্ড।
– চলে গেলো ..চলে গেলো …আমায় বললোনা কেনো ? কেনো বললোনা ?
গুটি গুটি পা ফেলে ভিতরে ঢুকে । চোখ ঝাপসা হয়ে গেছে ..। এ কেমন শক খাওয়া … দিন দুনিয়াসব ভুলিয়ে যাচ্ছে । মেইন ডোর দিয়ে ড্রয়িং রুমে পা রাখতেই মাথা ঘুরিয়ে যায় । হাটতে না পেরে দাড়িয়ে পড়ে । মমতা কিচেন থেকে লাবিবাকে দেখে চোখবন্ধ করে দাড়িয়ে আছে । দৌড়ে এসে লাবিবাকে ধরে ।
– লাবিবা..কি হয়েছে ? শরীর খারাপ লাগছে ? চোখ বন্ধ করে আছো কেনো ?
– আমার স্যার কই ? আমার কালো গোলাপ গাছ কই?
আমার স্যার কই ? আমার স্যার কই?
ততোক্ষনে সবাই চলে এসেছে । সোহানা এসে বলে
– তানভীর তোমায় বলে যায়নি ?
– স্যার সত্যিই চলে গেছে ..আমায় রেখে চলে গেলো ?
কেনো গেলো ? কেনো বললোনা আমায় ? আমি স্যারেথ কাছে যাবো । স্যার আমায় কেনো দিলোনা কালো গোলাপ ? না দিয়েই চলে গেলো কেনো ? আমাকে নিলো না কেনো ?
একদৌড়ে তানভীরের রুমের সামনে চলে আসে । দরজা লক দেখে চিল্লাতে শুরু করে – দরজা খুলো , দরজা খুলো ।
সোহানা এসে দরজা খুলে দেয় ।লাবিবা ভিতরে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয় । সবাই এমন করাতে ভয় পেয়ে যায় । খাটে বসে ও স্যার ..ও স্যার বলে কাদতে থাকে । সোহানা ইসমাইলকে ফোন দিলে ইসমাইল সাবিনা দুজনেই চলে আসে । ইসমাইল দরজায় নক করে
– লাবিবা দরজা খুলো । এগুলো কি করছো তুমি এখানে এসে ? বাসায় যাবে চলো ।
– আমি যাবো না তোমার সাথে । তোমরা সবাই খারাপ । আমাকে বলোনি স্যার চলে গেছে । ও স্যার গো ..ও কালো গোলাপ গো ..ও স্যার গো ..।
দরজার সামনে সবাই দাড়িয়ে লাবিবার চিৎকার শুনছে । সাবিনা বলে – তোমার স্যার পড়াশুনা করতে গেছে । তোমায় বলেনি বলেইনি …তাই বলে স্যারের রুমে এসে দরজা বন্ধ করে দিবে ? বের হয়ে আসো বলছি ।
– কেন বলবেনা আমাকে ? কেনো ‌? তুমিও বলোনি কেনো? লাগবেনা কাউকে আমার কেউ ভালুপাসে না।
রাগে বিছানার চাদর তুলে ফেলে । সাজানো সো পিচ গুলো আছাড় দিয়ে ভেঙে ফেলছে ।
ফিরোজ এখন আর না পেরে তানভীরকে কল দিতে নিলে মনে পড়ে ও এখন ফ্লাইটে আছে । সারা রাত দরজার সামনে বসে রাত পার করেছে ইসমাইল সাবিনা সোহানা । লাবিবা কাদতে কাদতে ফ্লোরেই ঘুমিয়ে পড়েছে । তানভীর ফ্লাইট থেকে নেমে সোহানা কে কল দেয় । সোহানা ফোন নিয়ে পাশে সরে গিয়ে দাড়ায় । ওপাশ থেকে তানভীর বলে
– মম আমি পৌছে গেছি ।
– হা ভালো । কিন্তু এদিকটা তো খারাপ করে গেছিস । তুই যাওয়ার সময় লাবিবাকে বলে যাসনি কেনো বলতো ?
– ও কান্না কাটি করবে মম ।
– এখনো তো করছে । তুই তো বুঝিয়ে সুঝিয়ে রেখে যেতে পারতি । সারারাত তোর রুমে ফ্লোরে শুয়ে শুয়ে কেদে কেদে ঘুমিয়ে পড়েছে মেয়েটা।
– হ্যা । দুষ্টু পুতুল আমার রুমে ?
– হ্যা । কাল এসে শুনে তুই চলে গেছিস । তারপর থেকে কাদতে কাদতে অবস্থা খারাপ । তোর পছন্দের সমস্ত শো পিচ ভেঙে ফেলেছে । দরজা লক করে রেখেছে । কিছুতেই খুলাতে পারছি না । এখন তুই কথা বল ।
– তুমি ওকে ডাকো মম। আমি এপার্টমেন্টে পৌছে ফোন দিচ্ছি ।
লাবিবাকে ডাকতে ডাকতে বিরক্ত হয়ে দরজা খুলে আবার খাটে গিয়ে বসে । এক রাতেই মুখটার দিকে তাকানো যাচ্ছে না। হাল বেহাল করে ফেলেছে রুমের।
লোক ডাকিয়ে সোহানা রুম পরিস্কার করায় । ইসমাইল সাবিনা শুকনো মুখে ড্রয়িং রুমে বসেছে লাবিবাকে দেখে । সোহানা এসে মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। বুকে নিয়ে বলে
– স্যার চলে আসবেতো । এমন পাগলামো কেউ করে ?
– গাছ কেনো কাটলো ?
– কাটেনিতো । ডাল কেটে ছোট করে দিয়েছে। দু বছর পর পর এভাবে কাটে । তবুও গাছ অনেক বড় হয়ে যায় ।
তখনি তানভীরের ভিডিও কল আসে । সোহানা মুচকি হেসে বলে নাও কথা বলো স্যারের সাথে । যতো রাগ আছে সব ঝেরে নাও । দরজা ভেজিয়ে দিয়ে চলে যায় । তানভীরকে দেখেই লাবিবা ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাদতে থাকে । তানভীর বিরতিহীন চোখে সেই কান্না সিক্ত মুখ পানে তাকিয়ে থাকে ।
– দুষ্টু পুতুল ..ডোন্ট ক্রাই ।
– একশোবার কাদবো । আপনি খুব পচা একটা ডলফিন । রাক্ষসের মতো । আমাকে ছেড়ে চলে গেলেন কেনো ? আমায় নিয়ে যান ‌ । আমি যাবো আপনার সাথে??
– প্লিজ ..ডিয়ার ডোন্ট ক্রাই । লুক হেয়ার আই এম ।
– আমি আপনাকে ছাড়া থাকতে পারবো না । আই মিস ইউ ভুরিভুরি । আমাকে আপনার কাছে নিয়ে যান । আমার কষ্ট হচ্ছে খুব ‌।
তানভীর মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ে । চোখে পানি চিক চিক করছে । নিজেকে সামলে নিয়ে বলে
– নিয়ে আসবো। ওয়েট করতে হবে তোমাকে । পারবেনা আমার জন্য ওয়েট করতে ?
– পারবো । আমায় নিয়ে যান ।
– আমার কাছে আসতে হলে তো তোমাকে আগে ভালো করে পড়াশুনা করতে হবে । আমার মতো বড় হতে হবে । বড় না হলে আমার কাছে তোমাকে কিভাবে নিয়ে আসবো বলোতো ?
– আমি বড় হচ্ছি ।
– হ্যা । সামনে পরিক্ষা । রেজাল্ট যদি ভালো না করো তাহলেতো আমার কাছে আসতে পারবেনা । আমি যে কতো মজার মজার চকলেট কিনে দিবো সেগুলোও তো খেতে পারবেনা । তুমি মন বসাও পড়া শুনায় । আমি ঠিক ই নিয়ে আসবো তোমাকে আমার কাছে । এখন বাসায় যাবে ‌। গোছল করে খেয়ে দেয়ে পড়াশুনা স্টার্ট করবে । কেমন ??
– আচ্ছা । আম সরি ।
– কেনো ?
– আপনার ঘরের জিনিস অনেকগুলা ভেঙে ফেলেছি ।
– ওগুলো তোমারো ছিলো । নিজের জিনিস ভাঙলে কারো যায় আসে না । আবার কিনে নেওয়া যাবে ।
রাখছি ।
লাবিবার চোখের জল উধাও । নিচে নামতেই ছাবিনা ধরে বসায় । নড়াচড়া করার শক্তিও যেনো নেই । তানিয়া বড় একটা টেডি এনে লাবিবাকে দেয় । সোহানা জিজ্জাসা করে কি খাবি মা ?
– ডুডুলস।
নুডুলস রান্না করে এনে খাইয়ে দেয় লাবিবাকে । আব্বু আম্মুনির সাথে বাসায় চলে আসে । পড়া শুনায় মন বসায় । দেখতে দেখতে পরিক্ষা চলে আসে । লাবিবা এখনো মন থেকে তানভীরকে সরাতে পারেনি । পড়ার ফাকে ফাকে ডায়েরী নিয়ে বসে পড়ে । মনের সব হাবিজাবি যতো কথা আছে সব লিখে ।
” ভেবেছিলাম তুমি খুব সুন্দর একটা ডলফিন । তোমার সাথে থাকতে থাকতে আমিও ডলফিনের মতো হয়ে যাবো । তারপর দুজনে সমুদ্রে সাতার কাটবো । আমার কতো দিনের শখ আমি ডলফিনের মতো ঘুরে ঘুরে বেড়াবো । তুমি জেলফিস গুলো ধরে এনে দিবে আমি গপ করে খেয়ে নিবো । ”
” ও স্যার আই মিস ইউ ভুরি ভুরি । কবে আসবেন আপনি ? আপনি এলে আমি গিটার বাজানো শিখবো । গান গাওয়া শিখবো । তার পর বনে বাদাড়ে গান গেয়ে পাখি ধরবো । আমার কতো দিনের শখ ।”
” স্যার আমি আপনার সব কথাই শুনি । আজ নাইমকে ছোট ক্লাসের একটা মেয়ে এসে স্কুলের পেছনে টেনে নিয়ে গেছে । ব্যাগ থেকে একটা গোলাপ বের করতেই আমি বুঝে গেছি নাঈম কে ইভটিজিং করছে মেয়েটা । আমি আর নুপুর দৌড়ে গেছি । ফুল দিয়ে হাটু মুড়ে বসতেই নাঈমকে গিয়ে বলে দিয়েছি নাঈম এই মেয়টা তোকে ইভটিজিং করছে । এটা আইনতো অপরাধ । আমরা ছাত্র সমাজ অপরাধ করা যাবে না । ওকে উপযুক্ত শাস্তি দে। নাঈম পচা মেয়ে বলে চড় দিয়েছে একটা গালে । মেয়েটা ভ্যা ভ্যা করে কেদে দিয়ে চলে গেছে । নাঈমকে সাব্বাস বলতেই আমাকেও চড় দিয়েছে । আর বলেছে আমার জন্য নাকি তার প্রেমটা হলো না । ওও নাকি পছন্দ করতো মেয়েটাকে । আমার কথা না শুনলে আমি তাকে মারতাম ভয়েই মেয়েটাকে মেরে দিছে । এটা কোন কথা হলো ? এর জন্য ই বলে কারো ভালো করতে নেই । যত দোষ নন্দ ঘোষ। ইভটিজিং হলে ভালো হতো তখন?।”
” আজকে একটা সুন্দর পোলা দেখছি । বাপরে বাপ যে কিউটের ফিউট ..সব মেয়েরা হুমড়ি খাইয়ে পড়ছিলো । কিন্তু আমি খাই না । একবার দেখেই চলে আসছি । মাইনসের জামাইরে দেখার এতো শখ নাই আমার । ”
” আপনার কথা অক্ষরে অক্ষরে পালন করি স্যার । শিক্ষকের কথা না শুনলে জীবনেও পরিক্ষাতে পাস নেহি করতা । এর জন্য আমি অনেকগুলা চকলেট পাই আপনার কাছে । অনেক বড় হতে হবে পড়াশুনা করে । এই এক মাসে এক ইঞ্চি লম্বা হয়ছি পড়াশুনা বেশি বেশি করে । ”
” একটা বড়ো মেয়ে আমার একটা জামা উড়না চেয়েছিলো আম্মুনির কাছে । আমি দিতে দেই নাই । কিন্তু কষ্ট লাগতেছিলো । উড়না তো দেওয়া নিষেধ । তার মানে কোন জামাও দেওয়া নিষেধ। তাই আব্বুর পকেট থেকে চুপিচুপি টাকা নিয়ে বাজারে গিয়ে শার্ট প্যান্ট কিনে দিয়ে আসছি । হাতে নিয়ে মেয়েটা মুখ হা করে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে ছিলো । আমি বুঝে গিয়েছিলাম তো খুশিতে মুখ হা হয়ে গেছে তাই থ্যাংকু বলতে পারে নি । আহারে গরীব মানুষ । আমিও একটু হেসে ওয়েলকাম বলে চলে আসছি । ”
” আব্বুর সব কথা শুনি । আব্বু বলছিলো টেস্ট পরিক্ষার রেজাল্ট কার্ড কোথাও যেনো না লুকিয়ে রাখি । আমিও লুকায়নি । একদম আব্বুর পকেটে ভরে দিয়েছি । স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বু বললে বলেছি আব্বুকে দিয়ে দিয়েছি । আব্বু পরে সারা ঘর খুজেছে । সব উলট পালট করে দিয়েছে । বাসায় এলে কড়া করে বলেছে আমি আবার দুষ্টুমি করেছি । এদিকে আমি কিছুই করলাম না । পকেট থেকে পেপারটা বের করে হাতে দিয়ে চলে এসছি রুমে । বোকা আব্বু । ”

To be continue _____

®লাবিবা_____?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here