একগুচ্ছ_কালো_গোলাপ?পর্ব_২৭

0
5836

একগুচ্ছ_কালো_গোলাপ?পর্ব_২৭
#লাবিবা_তানহা_লিজা

?
আজ প্রথম পরিক্ষা। একদিন অন্তর অন্তর পরিক্ষার ডেট পড়েছে। সকালে সাবিনা রেডি করিয়ে পাঠিয়ে দেয় সবার থেকে দোয়া নিয়ে একাই বেড়িয়ে পরে লাবিবা । ইসমাইল কাজের জন্য সদরে গিয়েছে তাই লাবিবার প্রথম পরিক্ষা হওয়াতেও সাথে যেতে পারেননি । একটা রিকসা ডেকে উঠে পড়েছে । পথের মাঝে রাস্তার পাশে অনেক ভিড় দেখতে পায় । উদ্বিগ্ন হয়ে জিজ্জাসা করে
– রিকসা মামা ..এখানে ভিড় কিসের ?
– মনে তো হয়তাছে বেদেরা আসছে ।
– দাড়াও তো একটু ।
রিকসা থেকে নেমে ভিড় ঠেলে ভিতরে গিয়ে দাড়ায়। বেদের দলের চারজন মেয়ে এসেছে এখানে । চেহারা ভালো । এদের পোশাক আশাক ঠিক থাকে না তাই বেশির ভাগ এদের ডাকে ছেলে রাই বেশি আসে । পাশে গাছের সাথে লেগে হেলান দিয়ে দাড়ায়। এখান থেকে পেছনের দিক ভালোই দেখা যায় । একবার ফিরে দেখলো রিকসা মামা দাড়িয়ে আছে । চলে যায় নি তাহলে । বেদে দুজন মেয়ে উঠে দাড়িয়ে বাটি পেতে টাকা তুলতে লাগলো । বাকি দুজন কতোইনা বয়ান দিচ্ছে সামনে সাপের চারটা বাক্স আর সাদা চাদর পাতা বিভিন্ন জরিপুটি গাছ গাছলার ছাল হরিনের শিং শামুকের খোলস রেখে । বাতের ব্যথা সারাতে ঐষধ দিচ্ছে তারা । লোকজন ও কিনছে । পেছন থেকে রিকসা মামা ডাকে – পরিক্ষার দেরি হয়ে যাবো তারাতারি আও। লাবিবা হাত দিয়ে সবুর করে দাড়াতে বলে। আবার তামাশা দেখায় মন দেয় । দুজন এদের মাঝে হটাৎ করে গান গেয়ে উঠে আর দুজন নাচতে থাকে । বিচ্ছিরি ভয়েজে গানের সাথে হেলে দুলে নাচ দেখলে যে কারো গা গিন গিন করে রাগ উঠে । লাবিবার কিছুই মনে হলো না । এটা নতুন তার জন্য । এমন নাচ টিভিতে দেখেছে খুবই ইন্টারেস্টিং । চোখ পিট পিট করে তামাশাই দেখতে থাকে । পেছন থেকে রিকসা মামা ডাকতে ডাকতে রিকসাতে উঠে নিজেই বসে থাকে ।

পরিক্ষার বেল দিতেই খাতা দিয়ে দেয় । মাঝখানে একটা সিট খালি দেখে গার্ডরত টিচার বলে ঐ স্কুলের হ্যাডটিচারকে বলতে পিয়নকে। পিয়ন এসে অফিসে বসা মুক্তাকে বললে মুক্তা গিয়ে দেখে লাবিবা নেই তার সিট খালি । বিনার ফোনে ফোন লাগায় । বিনাকে বলে – লাবিবা কোথায় ?
– ও তো কখন গিয়েছে । জুলহাস মামার রিকসা করে গেছে।
– মানে কি ? এখনো আসেনি ? কিছু হলো নাতো ।
– তুমি একটু দেখোনা এগিয়ে .. ।
মুক্তা ফোন রেখে বাইক নিয়ে বের হয় । সাবিনাকে জানাতেই ইসমাইলকে ফোন করে আসতে বলে তারাতারি । মুক্তা অর্ধেক রাস্তা এগুতেই দেখে জুলহাস তার নিজের রিকসাতে নিজেই বসে আছে । গাড়ি থামিয়ে – জুলহাস লাবু কই ?
– ঐতো বেদের নাচ দেখে । কতোক্ষন থেকে ডাকছি আসেই না ।
মুক্তার রাগ উঠে যায় । জে এস সি পরিক্ষা তার কোথায় টেনশনে হাত পা কাপবে আর পরিক্ষা না দিয়ে নাচ দেখছে ?। ভিড় ঠেলে গিয়ে হেচকা টানে টানতে টানতে এনে লাবিবাকে বাইকের পেছনে বসায় । হলে গিয়ে রিকুয়েস্ট করে পরিক্ষা দিতে বসায় । অলমোস্ট 30 মিনিট শেষ পরিক্ষার । সৃজনশীল বাংলা পরিক্ষা 3 ঘন্টাতে কত তারাহুরা করে শেষ করতে হয় তার মধ্যে আবার 30 মিনিট গোয়িং। আপ্রান চেষ্টা চালিয়ে পরিক্ষা শেষ করে ।
বাসায় আসতেই ইসমাইল তেড়ে আসে লাবিবার দিকে । মারতে না পেরে বকাবকি শুরু করে দেয় । মুক্তা না থাকলে আজ পরিক্ষাটাই দিতে পারতো না । এরকম বোধাই মেয়ে জন্ম দিয়ে জীবনটাই ত্যানা ত্যানা । লাবিবা চুপচাপ নিচ দিক হয়ে বকা শুনে । সাবিনা এসে কথা ধরে যখন ইসমাইল বলে সব সাবিনার আস্কারাতে লায় পেয়ে এমন হয়েছে । রেগে বলে – তুমি সবসময় তুমার চেয়্যারম্যানি নিয়ে থাকো । মেয়ের দিক কি খেয়াল রাখার সময় আছে তোমার ? আজ কোন ছাত্রীর গার্ডিয়ান সাথে না যায় বলোতো ? তুমি গেলেনা ভালো কথা আমাকে কি যেতে দেওয়া যেতো না ? আমি গেলে কি এমন হতো ?
ইসমাইল উঠে রুমে চলে আসে কিছু না বলে । লাবিবাও রুমে যেতে নিলে সাবিনা টেনে এনে টেবিলে বসায় । সকালেও ভালোকরে খায়নি । এখন খেতেই হবে ।
এর পরের পরিক্ষা গুলোতে ইসমাইল সব কাজ ফেলে লাবিবাকে নিয়ে গেছে আবার পরিক্ষা শেষ হলে নিয়ে এসেছে । একা ছাড়েনি লাবিবাকে ।পরিক্ষা কেমন হয়েছে জিজ্জাসা করলে লাবিবা শুধু ভালো বলে।
পরিক্ষা শেষে রেজাল্ট এর দিন চলে আসে । এগারোটার পর থেকেই ইসমাইল মুক্তার ফোনে কল দিচ্ছে । সময় যেনো আর কাটে না । টেবিলে বসে ডায়েরি নিয়ে লিখছে লাবিবা ।
” আমি যদি ভালো রেজাল্ট করি তাহলে আপনার গুন । আর যদি খারাপ রেজাল্ট করি তাহলে আপনার দোষ । সারাবছর বাদরামি করেছি । কিছুই পড়িনি অন্য স্যারের কাছে । সব প্রথমবার আপনার কাছেই শিখেছি । আপনাকে নিয়ে কিছু লিখতে ইচ্ছা করেনা । আপনি বড়ো স্বার্থপর । ”
ডায়রি বন্ধ করে লাবিবা মনে মনে কাদতে থাকে । এক রেজাল্ট ভালো না হলে ইসমাইলের হাত থেকে কেউ রক্ষা করতে পারবেনা । আর দুই রেজাল্ট ভালো হোক বা না হক তানভীর ভালুপাসেনা ।
মুক্তা সাথে কথা বলেই ইসমাইল জোরে হাসতে হাসতে সাবিনাকে ডাকে । – সাবিনা কোথায় তুমি ? আমার মেয়ে এ প্লাস পেয়েছে । ভাই ভাবি বিনা আমার মেয়ে এ প্লাস পেয়েছে । বেলাল শুনা মাত্রই ছুটে মিস্টির দোকানে । সাবিনা রান্নাঘর থেকে বের হতে হতে বলে – আহা… । আমার মেয়ে প্লাস পেয়েছে । মেয়ের পিছে আমি শ্রম দিয়েছি ।
– আমার মেয়ে প্লাস পেয়েছে । আমিও কম পরিশ্রম করিনি । এই নিয়ে
নিজের রুম থেকে লাবিবা শুনে কেদে ফেলে । টিচার ভালো হলে ছাত্রীও ভালো হয় । আমার টিচার স্বার্থপর ।

বিকাল দিকে খান বাড়ি থেকে সোহানা মমতা আর তানিয়া আসে মিস্টি হাতে । লাবিবাকে ড্রয়িং রুমে ডাকে । লাবিবা এগিযে গেলে সোহানা পাশে বসায় । সখিনা সাবিনা কিচেনে ব্যস্ত অতিথি আপ্যায়নে । সোহানা লাবিবাকে যা যা জিজ্জাসা করছে শুধু তার তার উত্তর দিচ্ছে । যে মেয়েটা একটুতেই খুশিতে লাফালাফি শুরু করে আর আজ এতো ভালো রেজাল্ট করেছে কিন্তু তার মুখে হাসি নেই । দুষ্টু পুতুলের মধ্যে উচ্ছলতা নুইয়ে গেছে । সোহানার ঠিক মনে হয় না ব্যপারটা । লাবিবাকে নিয়ে রুমে চলে আসে। মমতা কিচেনে চলে গেছে সাবিনাকে হেল্প করতে। খাটে বসিয়ে থুতনি ধরে মুখ উপুড় করে তুলে ধরে কিছূক্ষন তাকিয়ে থাকে । পরেই মুচকি হেসে বলে – লাবিবা …এমন অবস্থা করে রেখেছো কেনো মুখটার ? কি হয়েছে মা ?
– কিছুনা শাশুমা ।
– কিছুতো একটা হয়েছেই । মিস ইউ স্যার ভুরিভুরি ??
লাবিবা মাথা নাড়িয়ে হ্যা বলে । সোহানার চোখ দুটো চক চক করে উঠে । এতো নিষ্পাপ একটা মেয়ে ছেলের বউ হবে ভেবেই জল চলে এসেছে । আদর করে কপালে চুমু দিতে গেলে লাবিবা তাড়াতাড়ি করে উঠে পড়ে ।
– লাবি মা .. কি হলো ?
– অন্যের জিনিসে চুমু দিতে নেই ।
-মানে ?
– এখানে শুধু আব্বু আর স্যার চুমু দিবে । আর কেউ না ।
সোহানা ঠোট চেপে হাসতে হাসতে শেষ । নিশ্চয় এটা তানভীর বলে গেছে । ছেলেটা একদম তার বাবার মতো হয়েছে ?।
খাওয়া দাওয়া শেষে সবাই যখন চলে যাবে তখন তানিয়া হুট করে রুমে এসে লাবিবার উড়নার নিচে একটা ফোন ডুকিয়ে দেয় । লাবিবা চমকে উঠলেই তানিয়া ঠোটের সামনে এসে বলে – চুপ..। এটা লুকিয়ে রাখো । কেউ যেনো না দেখে । এগারোটা সময় সবাই ঘুমিয়ে পড়লে ভাইয়া কল দিবে । আমি কাল এসে ফোন নিয়ে যাবো ।
তানিয়া চলে গেলে লাবিবা বুকে হাত দিয়ে হাপায় । পাজি মেয়ে । একদম ভাইয়ের মতো করে ।
সাড়ে এগারোটার দিকে তানভীর ভিডিও কল দেয় । বারান্দায় বসে লাবিবা নিচ দিক হয়ে একের পর এক চোখের পানি ফেলছে ।
– দুষ্টু পুতুল… একবার চোখ তুলে তাকাও আমার দিকে।
– আপনাকে দেখলে আমার ভালো লাগে না । আপনি আরো সুন্দর হয়ে গেছেন । আমার শুধু দেখতেই ইচ্ছা করে ।
– তো দেখো ।
– আমি সরাসরি দেখবো ..আমার আপনাকে ছুতে ইচ্ছা করে । আমাকে এখনো কেনো আপনার কাছে নিয়ে যাচ্ছেন না । আমি আপনার কাছে যাবো ?।
তানভীর এই কান্না আর নিতে পারছে না । নিজের মাথার চুল নিজে ছিড়ে ফেলতে ইচ্ছা করছে।
– দুষ্টু পুতুল আস্তে । সবাই তোমার কান্না শুনে জেগে যাবে ।
– আমি আপনার কাছে যাবো?
– দুষ্টু পুতুল ..তোমার জন্য অনেকগুলো চকলেট পাঠিয়েছি আমি । তুমি দেখেছো ?
– আমি আপনার কাছে যাবো
-দুষ্টু পুতুল তুমি কতো ভালো রেজাল্ট করেছো ..তুমি_
– আমি আপনার কাছে যাবো
– দুষ্টু পুতুল তুমি টিয়া নিবে টিয়া ?
– আমি আপনার কাছে যাবো ?
– ঐ মেয়ে ঐ তুই কি আমাকে থাকতে দিবি না এখানে ? একটু শান্তি কি দিবি না আমায়? তুই কি চাস এখন আমি বিডি চলে যাই ? আমার ক্যারিয়ার সব নষ্ট হয়ে যাক ? ?
– আমাকে নিয়ে গেলেই তো হয়।
এবার তানভীর সত্যি সত্যি কেদে ফেলে । লাবিবা কান্নার শব্দে ফোনের দিকে মুখ তুলে তাকায় । অবাক নয়নে চোখ পিট পিট করে দেখতে থাকে ।
তানভীর চোখ মুছে বলে – ভালো থেকো আমার পুতুল বউ।
_________________
বসার রুমে যেতেই লাবিবা শুনতে পায় আনিস আর ইসমাইল কথা বলছে ।
আনিস – এখানে আর ভর্তি করাবোনা । আখির কাছে পাঠিয়ে দিবো । রাজীব বার বার বলছে ভালো রেজাল্ট করেছে এখানে নিয়ে চলে আসুন ।
ইসমাইল – আমার মেয়ের জানু টাকে হারাবে তাহলে ।
আনিস – দুজনে একসাথে থাকলেই তো মাথায় দুষ্টুমি খেলে‌ । আলাদা হলে আর দুষ্টুমি মাথায় ঘুরবেনা ।
ইসমাইল – যা ভালো বুঝো ।

নুপুরকে বিদায় দিতে এসেছে লাবিবা । দুপুরের ট্রেনে ঢাকা যাবে । যাওয়ার সময় স্টেশনে বসেই লাবি নুপুর অনেকক্ষন জড়িয়ে ধরে কান্না করে । ট্রেনে উঠার সময় পাশেই গভীর চোখে মুইনকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে নুপুর । লাবিবা বাসার দিকে ফিরে । রাস্তা দিয়ে না এসে বড় পুকুর দিয়ে আসে । পূকুরের উপর টং এ বসে চোখের জল ফেলতে থাকে । মুইন এসে বসে। পাশ ফিরে মুইনকে দেখে চোখ মুছে বলে
– মুইন ভাই .. ভালুপাসার মানুষ গুলো স্বার্থপর । চাইলেই থেকে যেতে পারতো । মিস ইউ জানু নুপুরি ভুরি ভুরি ।
– আমিও।
– আমিও কি ?
– মিস ইউ জানু নুপুরি ভুরি ভুরি ।

To be continue ___

®লাবিবা ____?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here