একগুচ্ছ_কালো_গোলাপ?পর্ব_২৮

0
5907

একগুচ্ছ_কালো_গোলাপ?পর্ব_২৮
#লাবিবা_তানহা_লিজা

?
লাবিবার মনের মতো ফ্রেন্ড আর হয়ে ওঠে নি নুপুরের পর । মাঝে মাঝে ফোনে কথা হয় এই আর কি । বছরে দুই ঈদে দেখা হয় । একসাথে আর হেলে দুলে ঘুরে বেড়ানো হয়না । স্কুল জীবন অনেক আগেই শেষ । কলেজ জীবন শেষ করে সে ভার্সিটি স্টুডেন্ট। থাকার জন্য হোস্টেলকে বেছে নিয়েছে । সেকেন্ড ইয়ারের পরিক্ষা দিয়েই হোস্টেলে উঠেছে । হোস্টেলে উঠার পর শারমিনের সাথে মনের মিল পেয়েছে । মেয়ের নিরাপত্তার জন্য ইসমাইল ভার্সিটির হোস্টেলই চুজ করেছে । কিন্তু তার চিন্তার শেষ নেই । মেয়ে কখন কি করে তার ঠিক ঠিকানা নেই । আশে পাশের আত্মীয়দের সহ বলে রেখেছে লাবিবাকে দেখে রাখার জন্য । বাড়িতে এসেছে লাবিবা । সাথে করে কয়েকটা ড্রেস নিয়ে যাবে । গুছিয়ে রাখতে কাবার্ড খুলে। কিউট মিউট টিউট গাউন গুলো দেখেই ফিদা। একেকটাতে একটা করে ফ্লাইং কিস দিচ্ছে আর ব্যাগে তুলছে । কাবার্ড এর এক কোনা থেকে একটা থ্রি পিচ বের হয় । লাবিবা হাতে তুলে নেয় । থ্রি পিচ বলা ভুল হবে । দু পিচ উইথ ওয়ান পিস। তার শাশুমা দিয়েছিলো তাকে এই টু পিচ টা আর ওয়ান পিচ মানে ওড়নাটা দিয়েছিলো …….। স্বার্থপর মানুষের কথা না বলাই ভালো। জে এস সি রেজাল্টের দিন স্বার্থপর স্যার টার সাথে শেষ বারের মতো কথা হয়েছিলো । স্বার্থপর না হলে এরপর একদিনো কথা বললোনা কেন ? কে রাখে কার খোজ ? আমিই বা কে যে আমার কথা মনে রাখবে ? নিচের কাবার্ড খুলে জুতা নিতে গিয়েই চোখে পড়ে প্যাকেট করা পিংক টেডি টা । ডলফিনটা দিয়েছিলো । স্বার্থ পর । জুতা গুলো টান দিতেই বেরিয়ে পড়ে অনেকগুলো চকলেট বক্স। সে বাড়ির মানুষ তেমন আর খোজ রাখে না । শাশুমাটা মাঝে মাঝে খোজ নেয় । এতো খুজ নিয়ে কি হবে ? আপনিতো আর সত্যি সত্যি এলিজার শাশুমা নন। আপনার বিলেতের প্রিন্স ছেলের বিলাতি বধুর শাশুমা আপনি । শুধু শুধু আব্বু নাম রেখেছিলো এলিজা ।
—– রানী এলিজাবেথ আমি কি আমার বিলেতের প্রিন্স ভাইয়ের বিলাতি বধুর রুমে ডুকিতে পারি ??
—– আসুন মহোদয়া ..নিশ্চয় চকলেট নিয়ে এসেছেন আপনার বিলেতের প্রিন্স ভাইয়ের পাঠানো । শোন তানিয়া তোর চকলেট নিয়ে তুই চলে যা । কয়েকদিন পর পর আমাকে যেগুলো দেস সেগুলো বাচ্চাদের দিয়ে দিয়ে হাপিয়ে যাই আমি । বাকি আরো অনেকগুলো কাবার্ডে পরে আছে ।
তানিয়া কোন হেলদুল না দেখিয়ে কাবার্ডে এসে চকলেট গুলো রেখে দেয় । আগের চকলেট গুলোর এক্সপায়ার ডেট দেখে নেয় ।
—– লাবিপু..আগের গুলোর মেয়াদ আর দু বছর আছে । এখনের গুলো আরো চার বছর আছে । রেখে দাও । জানিতো খাবে না । না খেলে তোমার কাবার্ড ই খাক।
—– তোর বিলেতের ভাইয়ের কি খবর ?
—— ভাইয়া বলেছে ভাইয়ার কোন খবর তোমাকে আর না বলতে । কারন তুমি পড়াশোনা করো না আজকাল । সেকেন্ড ইয়ারে ইমপ্রুভ খেয়েছো ।
—- তোকে বুঝি এই খবর নাঈম দিয়েছে ? আমিতো দেই নি ।
তানিয়া একটু লজ্জা পায় ।
—-লাবিপু তুমি বেশ রেগে রেগে কথা বলছো । আমি তোমাকে চিনতেই পারছিনা । হটাৎ করে এমন করছো কেনো তুমি ? ভাইয়াকে নিয়ে এতো কেনো চিন্তা তোমার ?
—- তোর ভাইয়া কবে আসবে ? পুতুল বউকেও নিয়ে আসবেতো ? আমার খুব দেখতে ইচ্ছা করে স্যারের সাথে পুতুল বউকে কেমন মানিয়েছে । আমি দোয়া করে দিবো এত্তোগুলা তাদের জন্য ।
লাবিবা খাটের কোনে এসে হাটু ভাজ করে মুখ লুকায় । তানিয়া সিউর লাবিবা এখন কাদছে । মুখ তুলে ভাঙা গলায় বলে – কেউ ভালুপাসেনা ।
তানিয়া বেরিয়ে আসে কিছু না বলে । গাড়িতে বসতেই নাঈমের কল ।
—- আমার জানুটাকি আমাকে মিস করছিলো ?
—-তোমার জানু এত্তোখন তোমার প্রান প্রিয় বোনের মতো বান্ধুপির কাছে ছিলো ।
—-ওহ তাই নাকি ? তো বিলাতি বধু কি বলে ? চকলেট নিয়েছে?
— রেখে এসেছি । ভাইয়ার খবর দেয়নি । এতোবার ওকেই বিলাতি বধু ডাকি তবুও বোঝে না । ?
—তোমার ই তো দোষ । বলেছো কেনো ভাইয়া বিয়ে করেছে ? পুতুলের মতো বউ । ভাইয়ার খবর দেওয়া উচিত ছিলো ।
—ভাইয়াই বলবে । আমি গাড়িতে । রাখছি । বাই।
_____________
হোস্টেলে এসেই দেখে শারমিন গেইটে দাড়িয়ে অপেক্ষা করছে । লাবিবা সাইড ব্যাগ ইসমাইলের হাতে দিয়ে এক দৌড়ে জড়িয়ে ধরে শারমিনকে
— দোস্ত….কত দিন পর দেখা । আয় বুকাবুকি করি ।
গেইটের সামনেই পাবলিক প্লেসে এমন করা লাবিবার পক্ষেই সম্ভব। ইসমাইল আর কিছু বলেনা । ব্যাগ পত্র টাকা গুছিয়ে হাতে দিয়ে চলে আসে ।
রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে দু বান্ধুবী মিলে বারান্দায় গিয়ে বসে । চারদিনে অনেক কথা জমে আছে । রাত একটা পর্যন্ত এই আড্ডা চলে। সাথে ক্লাসমেট ও কয়েকজন জয়েন করে ।

কলেজে যাওয়ার সময় হেলতে দুলতে রাস্তার এপাশ থেকে ওপাশ ..ওপাশ থেকে এপাশ করে হাটছে তারা । আর বাহারি গান তো আছেই —

?? রিকশা চলে রাস্তা দিয়ে
আমি রিকশায় উঠি না
রিকশা মামা রিকশা নিয়া চইলা যায়?

??ও মোর আটো মামারে ..
কুন্দুরে..
তুমি কেনো বন পাড়ার ভেনওয়ালা হইলানা?
ভার্সিটি ঢুকতেই জবা মিলি দৌড়ে আসে । মিলি এসে জড়িয়ে ধরে কান্না কান্না শুরু করে দেয় । জবাও ভাড় মুখ করে আছে । লাবিবা মুখ তুলে চোখ মুছিয়ে দিয়ে বলে – মুলা তোর কি হয়ছে ? চোখে সাগরের উতালপাতাল কেনো ?
মিলি কাদতে কাদতে হেচকি তুলতে তুলতে বলে
– দোস্ত..আমারে সুমন খাইয়া দিছে ??
শারমিন লাবিবা- কিহহহহ!!!!!
– হ । আমার কি হপ্পে??
লাবিবা শারমিন ঘাসের উপর মাথায় দু হাত চেপে বসে পড়ে । জবাও বসে পড়ে – তুই আমাদের রানী । আমাদের এলিজাবেথ । এখন তুই এর উপযুক্ত শাস্তি দে ঐ পোলাক । ব্রেকাপ করতে চায় ।
লাবিবা চিন্তিত মুখ নিয়ে বসে আছে । মিলির দিক তাকিয়ে বলে – দোস্ত তুই কি খাওয়ার জিনিস ? তোরে কেমনে কেমনে খাইলো ? তোর কই কই খাইলো ?
মিলির কান্না থামিয়ে বলে – আমার বারো হাজার টাকা খাইয়া দিছে । এখন ব্রেকাপ করতে চায় ।
শারমিন জবার মাথা ঘুরে গেছে । পায়ে এক লাথি দিয়ে মিলিকে চিৎ পটাং করে শারমিন চিল্লিয়ে উঠে – শালী কুত্তি এতোখনে বলতেছিস টাকা খাইছে ? আর আমরা কতো কি ভেবে চিন্তায় এখনি কিডনি পচাইয়া ফেলতাম।?
লাবিবা গিয়ে মিলিকে তুলে বলে – মুলা কাদিস না । সুমন তোরে খাইছে । এখন আমরা সবাই মিলে সুমনরে খামু । ফলো মি । ?‍♀?‍♀
রেস্টুরেন্টে বসে আছে মিলি জবা লাবিবা শারমিন সুমন । শালীদের গদগদানিতে সুমন আকাশে ভাসছে । জবা কনুই দিয়ে ধাক্কা দিয়ে বলে – ভাইয়া….শালীকাদের জন্য অর্ডার না করে বসে আছেন কেনো ? দিননা অর্ডার । এভাবে না খাইয়ে বসিয়ে রাখছেন । পরে কিন্তু আমরা ইনভাইট করে মজার মজার ডিস বানিয়ে খাওয়াবনা ।
সুমন শালীদের গুতা গুতি মিস্টি হাসি খেয়ে খেয়ে অর্ডার দেয় । মেনু কার্ডে বেশী প্রাইজের খাবার গুলো বেছে বেছে অর্ডার করা হয় । বড় টেবিলে কোন মতে কষ্ট করে স্থান নিয়ে আছে ডিস গুলো । ওয়েটারের দাত গুলো কেলানো । হবেইতো । এতো খাবার আজ পর্যন্ত কেউ অর্ডার করেছে কিনা ডাউবট আছে । সুমনকে টেবিলের দিক তাকাতেই দিচ্ছে না কেউ । তুলে তুলে খাইয়েও দিচ্ছে । লাস্টে দেখে যে কেউ এতো খেতে পারে না । শারমিন ওয়েটারকে দিয়ে প্যাকেট করায় সব । ব্যাগে ভরে নিয়ে বিলটা সুমনের হাতে ধরিয়ে দিয়ে চলে আসে । সুমন বিল দেখে চক্ষু চড়ক গাছ । বারো হাজার টাকা বিল আসছে । এক টাকা কম ও না বেশিও না । এখন এতো টাকা কই পাবো । বন্ধুদের ফোনের উপর ফোন করে কিন্তু কেউ দিতে রাজি না । ওয়েটার ম্যানেজার কানের উপরে বিল দিন দিন করে পাগল করে দিয়েছে । শেষ মেষ উপায় না পেয়ে কাপা হাতে বাবার কাছে ফোন দেয় ।
—-হ্যালো আব্বা??
—-কি হয়ছে বাপ। কান্দস কেন ? কোনো সমস্যা ?
—- আমাকে বারো হাজার টাকা দেন আব্বা । এইটা না পাইলে আমি আর বাচমুনা ।
—- কেন আব্বা ? তুই কি এক্সিডেন্ট করছিস ? আমার কসম লাগে সত্য করে বল কি হয়ছে । আমার একমাত্র পোলা তুই । তোর কিছু হয়লে আমি শেষ।
—- আব্বা সত্য কথা বলতে বললেন কসম দিলেন যেহেতু তাহলে তো আর মিথ্যা বলতে পারবোনা। আব্বা শালীরা বারো হাজার টাকার খাবার গিলছে ?
— কিহহ?? তুই বিয়ে করছিস আমারে না জানাইয়া। এখন আবার শালীদের খাওয়ানোর জন্য টাকাও চাইছিস ? তোরে ত্যায্য করলাম আমি । তোর মতো পোলা লাগবোনা আমার । সুমনের মাওও তুমি এখন নাই পোলার মাও হইলা গো ?
– আব্বা আব্বা ..।
________________
গত পরশু প্রিন্সিপাল স্যারের ট্রান্সফার হয়েছে । আজ নতুন প্রিন্সিপাল এন্ট্রি নিতে যাচ্ছে ভার্সিটিতে। রমরমা পরিবেশ । সব সাজানো গোছানো । বড় বড় লোকের ভিড়। ছাত্রছাত্রীদের মাঝে উৎসব লেগে গেছে । অবশ্য কয়েকদিন পর ই উৎসব হবে পহেলা ফাল্গুনের । যে যার মতো নতুন জামা আর সেজেগুজে আসছে । নতুন প্রিন্সিপালের আগমনের অধীর অপেক্ষারত সবাই ফুল হাতে। গোলাপের পাপড়ির থালা হাতে দাড়িয়ে আছে লাবিবা । তার এই মুহুর্তে মনে হচ্ছে লাল পাপড়ি গুলো কালো কালো রং ধারন করছে বার বার । চোখ ঢলে আবার দেখে লাল । আবার কালো লাগে । নাহ আর তাকিয়ে থাকা যাবে না পাপড়ির দিকে । চারিদিক শোরগোল পড়ে গেলো প্রন্সিপাল
ড. তানভীর খান ইজ নাউ হেয়ার । নাম শুনে চমকে তাকায় লাবিবা । ডিপ ডিপ করা বুকে হাতুড়ি পেটানো আওয়াজ হতে থাকে । চোখ সহ পুরো শরীর যেনো পুড়ে ছানাবড়া হতে থাকে । একেকটা পা ফেলার সাথে সাথে একধাপ একধাপ করে শরীর নিস্তেজ হতে থাকে । এতো দিনের দেখার তৃষ্ণা কমার বদলে চারগুন বেড়ে যায় । অভিমানীনী হৃদয় আর এক মুহূর্ত দাড়িয়ে থাকতে দেয় না। পা পেছোতে থাকে একটু একটু করে । হাতের ফুলের পাপড়ি গুলো এখন কড়া কালো রংয়ের দেখা যাচ্ছে । মাথা ঘুরিয়ে পেছন ফিরে গন্তব্যহীন ভাবে নিস্তেজ দেহ নিয়ে দৌড়ে বের হয়ে আসে ।

To be continue___

®লাবিবা___?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here