একগুচ্ছ_কালো_গোলাপ?পর্ব_৪

0
6500

একগুচ্ছ_কালো_গোলাপ?পর্ব_৪
#লাবিবা_তানহা_লিজা

?
ইসমাইল বাড়িতে এসে দেখে লাবিবা আর জেমি খালা-ভাগনী মিলে খেলছে। কোন কথা না বলেই বাশঝাড় থেকে পাকা বাশের কঞ্চা এনে পিঠে লাগাতে লাবিবা পিঠ বাকিয়ে আম্মুনি বলে চিৎকার করে উঠে । ইসমাইল টেনে এনে আরো মারতে থাকে আর বলতে থাকে – স্যার এর সাথে বেয়াদবি করিস । দিনকে দিন লায় পেয়ে পেয়ে মাথায় চড়ছিস । আজ মেরেই তোর হাড্ডিগুড্ডি ভেঙে ফেলবো । ওদিকে লাবিবার চিৎকারে সাবিনা আর সখিনা দুই জা দৌড়ে এসে ইসমাইল কে থামায় । লাবিবাকে সরিয়ে নিয়ে সাবিনা বলে – মারতেছো কেন আমার বাচ্চাটাকে ? দুষ্টুমি একটু আধটু করবেই তাই বলে মারবে ?
– তোমার মেয়ে আর দুষ্টু নেই । খারাপ হইতেছে খারাপ । স্যারের মাথার চুল ফেলে দিছে মোখলেছের দোকান থেকে রেজার কিনে আনে । চিন্তা কর কতটুকু খারাপ হইছে । সব সময় উল্টাপাল্টা কাজে লায় দিতে দিতে এখন যা ইচ্ছে তাই করছে । এমপির বাড়িতে তাদের সামনে লজ্জায় মাথা হেড আমার । আমার মেয়ে এতো খারাপ কাজ করছে ।
সাবিনা কি বলবে আর.. বলার কিছু নেই। ঘরে এসে দেখে ছখিনা লাবিবার জামা খুলে মলম দিয়ে দিচ্ছে । মারের জায়গাটুকু ফুলে কালো হয়ে আছে যা দেখে সাবিনা কেদে দেয় । সেও কখনো এইভাবে মারে নি ।
সন্ধ্যার পর পর গা কাপুনী জর আসে । ইসমাইল একটা ফুলের টোকাও দিতে পারে না লাবিবার জর চলে আসে । আজতো আরো অনেক মেরেছে । ড. এসে জর মেপে দেখে একশ পাচ ডিগ্ৰই । জেমি ফোনে আম্মু আব্বু বিনা আর মুক্তাকে খবর দেয় । জরের কথা শুনে অরাও চলে আসে । এলাকার ডাক্তার রমিজ মিয়া কে সারারাত এখানে রাখা হয় । জ্বর এই উঠে এই কমে ।লাবিবা আবোলতাবোল করতে থাকে। সখিনা ভেজা কাপড়ে গা মুছে দেয় । বিনা সারারাত পানি ডালে । সাবিনা লাবিবার আবোল তাবোল বন্ধ করতে উঠে পড়ে লাগে । ইসমাইল একটু পর পর পানি খাওয়ায় । লাবিবার পাগলামি বেড়ে গেলে ইসমাইল বসার ঘরে গিয়ে কেদে ফেলে।
– আমার বাবাটারে আমি আর কোনদিন মারমুনা । আল্লাহ তুমি আমার কলিজাটারে ভালো করে দেও । আমার একটা মাত্র বুকের ধনরে আমার বুকে রাইখা দেও ।
বেলাল কাধে হাত রেখে বলে – আহ.. ইসমাইল চুপ করো। এইভাবে কাইদো না । একশ দিন বলছি গায়ে হাত তুলবা না । কি হইল এইটা ? কথা শুনো না তুমি । আরেক দিন দেখি বাচ্চারে মারতে । হাত ভেঙে রেখে দিমু ।
ইসমাইল চুপ করে নিঃশব্দে কাদতে থাকে । সারারাত সবাই এইভাবেই পার করে । সকালের দিকে হালকা জর হয় । সাবিনা ,বিনা লাবিবাকে খাওয়াতে আসে ইসমাইল ও আসে হাতে অনেকগুলো ফল নিয়ে । লাবিবা ইসমাইলকে দেখেই চিল্লাতে থাকে । বেলাল এসে তারাতাড়ি ইসমাইলকে রুম থেকে বের করে । লাবিবাকে চেপে ধরে আছে বিনা । লাবিবা ভয়ে মুখ গুজে আছে । কোন রকম খাইয়ে শুইয়ে রাখে লাবিবাকে।এরকম জ্বর টানা তিনদিন থাকে । লাবিবা স্কুলে যেতে চাইলে ইসমাইল না করে । এমনিতেই তিনদিন থেকে কথা বলে না তার উপর আরো বাধা দিচ্ছে । কথা একদম বন্ধ। সুস্থ হয়ে তারপর যেতে বলে । পাচ দিন পর এবার স্কুলে যায় । ক্লাসে বসে বসে ভোর হচ্ছে । পড়া কিছুই পারে না । মেডাম সবাইকে পড়া ধরছে আর না পারলে কান ধরে এক পায়ে দাড় করিয়ে রাখছে । তা দেখে নুপুর আর লাবিবা দুজনের দিক তাকিতুকি করছে । নুপুর চোখ ইশারা দিয়ে বললো চল । লাবিবাও ইশারা করে বেঞ্চির নিচে ডুকে যায় । হামাগুড়ি দিতে দিতে দরজার কাছে এসে উঠে দৌড় দেয় । ছাত্রীরা দেখে হা করে থাকে । কিন্তু কেউ মেডামকে কিছু বলে না । সবাই ভালো করে যানে যে বলবে তার বিশেষ ক্লাস নেওয়া হবে । বাইরে বেড়িয়ে আরেক মুশকিল এ পড়ে । নতুন বাথরুমের কাজ করা হচ্ছে যেখান দিয়ে পালায় । মুক্তা স্যার মিস্ত্রিদের দেখিয়ে দিচ্ছে । দুজনেই আঙুল কামড়াতে থাকে । মুক্তা ফোন কানে একটু সরে যেতেই দুজনে একসাথে
– উলাললা উলাললা এক দৌড়ে স্কুল পালা । ?‍♀?‍♀
বাজারের মাঝখানে এসে হাপাতে হাপাতে হাটুতে হাত দিয়ে ভর করে দাড়ায় ।
নুপুর – এখন ??বাড়িতেতো যেতে পারবোনা ।
লাবিবা – নদীর পাড়ে চল ।
নুপুর – আংকেল জানলে ?
লাবিবা- হুস হুস …কথা নাই । কেউ ভালুপাসে না।অটো ডাক ।
দুজনে অটো ডেকে উঠে পড়ে । নদীর পাডে এসে থামে । ভাড়া মিটিয়েই দুজনে আনন্দ চিৎকার করতে করতে দৌড় । sandy মধ্যে দিয়ে দৌড়াতে গেলে নুপুর হাত টেনে ধরে ।
– ঐ ঐ কই যাস ? সেলোয়ারে wet sand লাগলে go to home কি করে ? বুঝে যাবে সবাই ।
-idea. সেলোয়ারের নিচে তো আরেকটা সেলোয়ার আছে ।
– আমারোতো আছে ।
– চল।
দুজনে দৌড়ে ব্রিজের নিচে চলে আসে । uniform এর সেলোয়ার খুলে ব্যাগে ভরে নেয় । তারপর দৌড়ে sand এর উপর চলে যায় । dry sand এর উপর লাবিবা গিয়ে jump করতে থাকে আর uff lovely .. Sandy sandy sandy sandy বলে shout করতে থাকে । হাপিয়ে গেলে ঘাটে এসে বসে নদীর পানিতে পা ঝুলিয়ে বসে । পায়ের আঘাতে পানিতে ছলাৎ ছলাৎ শব্দ তুলে ।
নুপুর – দোস্ত অনেক দিন থেকে তোর গান শুনিনা । এই environment এর সাথে match করে sing a song .
লাবিবা – গান is not coming out . But once কলি গাই ।
নুপুর – গা ..
লাবিবা – ” নদীর হাওয়ার তরে …
প্লাজু আমার উডু উডু করে ।
ওরে ওরে প্লাজু উড়িস না রে ..
ঘাটের মানুষ দেখতাছে রে ।
আমার শরম করতাছে রে ..।
লা লা লা লা লা লা লা লা লা ..
রি রি রি রি রি রি আ আ আ ।
নুপুর – হাত তালি হাত তালি হাত তালি । উম্মাহহ..
লাবিবা- উম্মাহহহহ টু । ওই letter গুলা বের কর । পানিতে ভাসিয়ে দেই ।
নুপুর ব্যাগ থেকে কয়েকটা কাগজ বের করে । লাবিবা এক টা হাতে নিয়ে পড়তে থাকে –
” ভালোবাসার নুপুর ,
আমার এক ছাতি ভালোবাসা নিও । মুই তোমাকে মেলা ভালোবাসি । তুমি আমার পায়ের নুপুর কখনোই নোও। তুমি হচ্ছো আমার মাথার নুপুর , আমার চোখের নুপুর , আমার নাকের নুপুর, আমার ঠোটের নুপুর, আমার গলার নুপুর , আমার বুকের নুপুর , আমার পেটের নুপুর । না জানু তোমাকে আর নিচে নামাবো না । তুমি উপরের প্রেম আমার তোমাকে উপরেই রাখবো ।
ইতি তোমার পাগল মুইন ”
Letter টা ভাজ করে নৌকা বানিয়ে নদীতে ভাসিয়ে দেয় লাবিবা । এদিকে নুপুর হাসতে হাসতে শেষ ।
লাবিবা – হিজড়া নাকি ? কিসব লিখছে । ভাভাগো ভাভা ..ভাবা যায় এগ্লা ???? দে পরের লেটার টা দে read করি।
লাবিবা পরের letter টা open করে reading করতে থাকে –
” প্রিয়তমা ,আমার প্রেম নুপুর ,
তুমি আমাকে কেন তুমার বুকে জায়গা দিচ্ছ না ? আমি কি দেখতে সুন্দর নই ? আমি ফর্সা , লম্বা, চিকনা । তুমার favourite কেয়া সাবান দিয়ে গোসল করি । fair and lovely সুনু মাখি । sunsilk shampoo দিয়ে চুল ধুই । তিনশ টাকা দামের pant পড়ি। দেড়শ টাকার চটি পড়ি । তোমার জন্য মুই ফেলাট বাসা কিনার লাগি টাকা জমাইতাছি । তবু কেনো তুমি আমাকে ভালোবাসা দেও না ? কি করলে ভালোবাসবে ? তুমার জন্য আমি কলিজাটা বের করতে পারি । আকাশের চাদ এনে দিতে পারি ।
ইতি তোমার আশিকী ।”
নুপুর হাসতে হাসতে পেট চেপে ধরে বসে বলে
– দোস্ত আর পড়িস না । তাইলে এখানেই আমি শহীদ খামু ।
– আচ্ছা আর পড়ব না । খাতা কলম দে । উত্তর দেই ।
নুপুরের কাছ থেকে খাতা কলম নিয়ে লাবিবা লিখতে শুরু করে –
” প্রিয় মুইন ডারলিং
আমি জানি তুমি আমাকে পেয়ার কিয়া । তুমি যদি আমার কথায় রাজি থাকো তাহলে আমিও তোমাকে পেয়ার কিয়া । তুমি তুমি মাথায় , চোখে, নাকে,ঠোটে,গলায় ,বুকে, পেটে নুপুর পড়ে স্কুল মাঠে সবার সামনে আমাকে প্রেম নিবেদন করবে । তবেই আমি রাজি তোমাকে পেয়ার কিয়াতে ।
ইতি তোমার পেটের নুপুর ।”
নুপুর – দোস্ত আয় আমরা imagine করি মুইনের বাচ্চাক কেমন লাগছে ।
দুজনেই গালে হাত দিয়ে চোখ বন্ধ করে imagine করে । চোখ খুলে দুজনেই হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়ে ।
নদীর পাড় দিয়ে হাত ধরে হেলতে দুলতে হাটতে থাকে ।
লাবিবা- স্কুল ছুটি হোওয়ার পর বাড়ি যেতে হবে ।
নুপুর – অনেক late। কি করবো এতোক্ষন ?
লাবিবা -ওই দেখ ওরা catch fishing . চল আমারাও Fishing.
__________________
এদিকে ইসমাইল আসছে স্কুলে ‌। অফিসে ঢুকতেই teacher রা সমাদর করতে থাকে । ইসমাইল সবার সাথে কথা বলে
– শুনলাম marksheet দিয়েছে । মেয়েতো আমার বড়ই শেয়ানা । নিজে নিয়ে নিজেই সাইন করে জমা দেয় ।
শহীদ স্যার – হা হা । ছেলেমেয়ে তো এসব করবেই । বাবা মা কেই খোজ খবর রাখতে হবে ।
– তার জন্য ই তো আসা । এই হারুন ডাক দেও তো লাবিবা কে ।
Marksheet হাতে নিয়ে ইসমাইল দেখছে । math আর english এ খারাপ mark আর সব গুলোতে ভালো নাম্বার পেয়েছে । কামরুল স্যার ক্লাস নিয়ে এসে ডুকে অফিসে । কামরুল স্যার কে দেখে ইসমাইল মনে মনে জলে উঠে । কি এমন করেছে তার মেয়ে ? মাথাই তো ন্যাড়া করে দিয়েছে । তার জন্য মেয়েটার গায়ে হাত তুলেছে । তিনদিন জরে ভুগেছে । পাচ দিন থেকে কথা বলে না । আর এই স্যার দিব্বি মাথায় ক্যাপ দিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে । ইসমাইল নিজেও তো স্যারের লুঙি খুলে নিয়েছিলো । কই তখন তো কেউ নালিশ করেনি ইসমাইলের বাবাকে । পিয়ন হারুন এসে বলে লাবিবা নেই ।
ইসমাইল – নেই মানে ? ও স্কুলে আসছে । নুপুর ?
হারুন – নুপুর ও নেই । পেজেন্ট দেওয়া আছে কিন্তু ক্লাসে নেই । ক্লাস পালিয়েছে ।
ইসমাইলের মাথায় বাজ পড়ে । পুরো স্কুল খোজায় । লাবিবা নেই । বাসায় ফোন দিয়ে জানে বাসায় যায় নি । নুপুরের বাসায় ফোন দিয়ে জানে সেখানেও যায় নি । খবর শুনে নুপুরের আব্বু আর ইসমাইলের প্রানের বন্ধু আনিস মিয়া ছুটে আসে । পুরো বাজার খুজা হয় নেই । স্যার দের ও টেনশন । মুক্তার মাথায় হাত । এতো গার্ড থাকতে কিভাবে পালায় ছাত্রীরা । তার মধ্যেআবার তার নিজের শালিকা উধাও । স্কুল টিফিন পিরিয়ডে ছুটি দেওয়া হয় । ইসমাইল আনিস পাগল প্রায় । এদিকে বাসায় খবর পেয়ে বাসার সবাই টেনশন । সাবিনাও কান্নাকাটি শুরু করে । রাস্তায় রাস্তায় খবর পাঠিয়ে দেয় । কোথাও নেই । লোকজন আ কথা কু কথা বলতে থাকে । ” সুন্দর মুন্দর মাইয়া ..জীনে নিয়ে গেলো নাকি ” ” রাস্তায় পাইয়া কেউ উঠাইয়া নিয়ে গেলো নাকি ” ” ছেলে ধরা নিয়ে গেলো নাকি ? ব্রিজের নিচে কল্লা দিতে হয় । কল্লাকাটা নিয়ে গেলো নাকি ?”
এসব শুনে ইসমাইলের আর হুস নেই ।

তানভীর চার দিন আগে ঢাকা গিয়েছিলো । ঢাকা থেকে ফিরে ড্রয়িং রুমে বসে পায়ের মোজা খুলছিলো । তানিয়া স্কুল থেকে ফিরে এসে বাড়িতে ডুকেই বলে
– ও বড় মাম্মা মম ভাইয়া জানো লাবিপু নাহারিয়ে গেছে । কল্লাকাটা নাকি নিয়ে চলে গেছে। তাই হাফ পিরিয়ডেই স্কুল ছুটি দিয়ে দিলো ।
সবাই বিচলিত । – কিভাবে ? কখন? এসব জিজ্জাসা করছে । তানিয়া তো কিছুই জানে না তাই উত্তর ও দিতে পারছে না । তানভীরের যেন কলিজাটা কেপে উঠে । বুকে হাত রাখে । খোলা মোজা আবার পড়ে নেয় । গাড়ির চাবি নিয়ে বেরিয়ে যায় । কোথায় যাবে লাবিবা ? ভেবে ভেবে তানভীরের মাথাও নষ্ট । বাজারে এসে দেখে লোকজন ইসমাইলের মাথায় পানি ডালছে । গাড়ির সিটে মাথা রেখে চোখ বুজে বলে-
” কোথায় তুমি দুষ্টু পুতুল ? কোথায় লুকিয়ে আছো ? প্লিজ বেড়িয়ে আসো । প্লিজ ..। ”

To be continue ______

®লাবিবা______?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here