একগুচ্ছ_কালো_গোলাপ?পর্ব_৩৩
#লাবিবা_তানহা_লিজা
?
মুখ থেকে হাত ছাড়াতেই লাবিবা ওমাগো বাচাও বলে চিল্লানি দেয় । তানভীর মাথার পেছন থেকে হাত এনে মাথা ঝাকিয়ে বলে চুপ চুপ । ঠোটে আঙুল লাগিয়ে জোরে দেয় এক ধমক । এক ধমকে লাবিবা চুপ । চোখ গুলো বড় বড় করে তাকিয়ে পিট পিট করে দেখে তানভীর । মুখ থেকে অস্পষ্ট আওয়াজ করে —স্যা স্যাস্যারস্যা্র বলে সোফায় বসে পড়ে । তানভীর একেবারে কাছে এসে নেশা ভরা চোখে তাকিয়ে বুড়ো আঙুলে চকলেটি ঠোটটা রুডলি চাট করে বলে —-তোমারর যে আমার ঠোটের ছোয়া পেতে ইচ্ছা করছে বললেই তো হতো ।এখন তো আমি কাছেই আছি .. যখন যেখানে যেভাবে ছোয়া পেতে ইচ্ছা করবে জাস্ট ইশারা দিলেই চলবে কষ্ট করে মুখে বলতে হবে না । আমি আমার দুষ্টু পুতুলকে
—না ।
— কি না ? হু?( ক্রমশ এগিয়ে আসতে আসতে )
—-না না কিছুনা ।
—- আমিতো দেখি অনেক কিছু ।
লাবিবা ভয়ে ঠোট কামড়ে ধরে শক্ত করে চোখ দুটো বন্ধ করে নেয় । অনেকক্ষন হয়ে যায় শুধু তপ্ত নিশ্বাস টুকুই মুখে আচড়ে পড়ছে একি ভাবে । লাবিবা আস্তে আস্তে চোখ খুলে । তানভীরের চোখে চোখ পড়ে । অনেক অশান্ত দুটি চোখ । অনেক কথা বলতে গিয়েও যেনো বলছে না । ছটফট করে বের হয়ে আসতে চাইছে তবুও আসতে পারছে না । লাবিবা কাপা গলায় বলে —স্যাস্যারর.. বলুননা….।
–তুমি কি ভেবেছো আমি তোমার লিপে কিস করবো ? যদি করি সহ্য করতে পারেবে তো ? (চোখ টিপ দিয়ে)
লাবিবা ঢুক গিলে। কপালে ঠোট ছুইয়ে গাড় করে চুমু একে উঠে দাড়ায় তানভীর । গলা শক্ত করে বলে — তোমার কপালে যেমন কারো ঠোটের ছোয়া লাগতে দাওনি তেমনি শরীরেও যেনো কারো ছোয়া না পড়ে । মনে রাখবে তোমার শরীরের প্রত্যেকটা পশম পর্যন্ত আমার। ক্লাস মিস করে ফ্রেন্ডকে হেল্প করা হচ্ছে । এর জন্যই মনে হয় পরিক্ষায় ইমপ্রুভ পাওয়া হয় । যাও এখন সোজা হোস্টেলে যাবে । উঠো ।
লাবিবা পা দুটো সোফায় তুলে আরো পাকাপোক্ত হয়ে বসলো । যাবে না এখান থেকে । হোটেলে কেনো এসেছে ? বিলাতি বধু কি জানে স্যার হোটেলে এসেছে ? আর আমার পশম গুলোও নাকি উনার । এদিকে আরেক বান্দর পিছু লেগে আছে সেদিকে কি হবে ? খুব উচ্ছাস নিয়ে বলে
—স্যার । আপনি কি এখনো ফাইট করেন?
—নাহ । এখন আর করিনা । ঐগুলো ভালো না । কেনো বলোতো ?
লাবিবার মুখটা চুপসে যায় । তানভীর হাত ধরে লাবিবাকে উঠিয়ে নিয়ে হাটতে থাকে । বাইরে এসে একটা রিকশা ডেকে উঠিয়ে দেয় । লাবিবা কলেজে এসে নামতেই মিলি দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরে । লাবিবাও জড়িয়ে ধরে ।
—থ্যাংক ইউ দোস্ত। তোর ভাই তোর জন্য গিফট পাঠিয়েছে নিবিনা ?
—উফফ.. লাভলি?গিফটতো নিতেই হবে চল।
__________________
শারমিন লাবিবা জবা রাস্তা দিয়ে হাটছে । হটাৎ জবার চোখ পড়ে গাছের ডালে পাখির বাসার দিকে ।
—-দোস্ত…টিয়া পাখি ?। এইটা আমার লাগবেই ।
লাবিবা—-না এইটা আমার লাগবে ই ।
শারমিন —এই পাখি আমার কাছে আসতে চাইছে । এইটা আমার ই লাগবে ।
এই নিয়ে তিনজনের ঝগড়া লেগে যায় । শারমিন কোমড়ে উড়না গুজে সাথের হেলানো গাছ বেয়ে উঠে পড়ে । পিছু পিছু লাবিবা জবাও উঠতে থাকে । অনেকটুকু উঠার পর বাসার কাছাকাছি এসে শারমিন যেই বাসায় হাত দিতে যাবে সেই পাখি ফুরুৎ । শারমিন পেছন দিক তাকিয়ে দেখে জবা চোখ পাকিয়ে তাকিয়ে আছে যেন এখনি খেয়ে ফেলবে হাতের নাগালে পেলেই । আর লাবিবার চোখ টলমল করছে যেন এখনি কেদে ফেলবে । তারাতারি নেমে পালাতে হবে ভেবেই সেই গাছ বেয়েই নেমে পড়ে । জবাও লাবিবাকে রেখেই তাড়াতাড়ি নেমে পড়ে শারমিনকে ধরার জন্য । তিনটা মেয়ে গাছে উঠেছে দেখে কলেজের অনেকেই ভিড় জমিয়েছে নিচে । লাবিবা নামতে গিয়ে নিচের দিকে তাকতেই মাথা ঘুরতে শুরু করে । ও যে গাছে উড়তে পারলেও নামতে পারে না এটা ভুলেই গিয়েছিলো । এখন নামবে কিভাবে ? গাছের উপর বসেই কাদতে থাকে । নিচ থেকে সবাই নাম নাম বলে চিল্লাতে থাকে আর লাবিবা কেদে কেটে চোখ ঝাপসা করে রাখে । বাবুর দল দূর থেকে দেখে হাসতে হাসতে পেট ব্যথা করে ফেলে । হাসা হাসি শেষ করার পর বাবু শার্টটা ভালো করে পড়ে নিয়ে বলে
–সুন্দরীরে নামিয়ে নিয়ে আসি । কি বলিস ?
সবাই —হ ভাই যান । আপনিই পারবেন ভাই । আপনি ছাড়া কেউ পারবেনা । হিরো ভাই আমাদের আপনি।
বাবু গাছের নিচে আসতে আসতেই তানভীর গাছে উঠে যায় । —দুষ্টু পুতুল হোল্ড মাই হেন্ড। কাম স্লোলি । লাবিবা চোখ মুছে হাত এগিয়ে দেয়।আস্তে আস্তে নেমে আসে গাছ থেকে।গাছের ফাকে পা পড়ে মচকে যায় । শব্দ করে ব্যথায় কেদে উঠে । তানভীরের হাত শক্ত করে ধরে আবার পা ফেলতে নিলেই ব্যথায় পা আটকে রাখতে না পেরে পড়ে যায় তানভীরের কোলে । তানভীর আগেই নিচে নেমে ছিলো বলে ধরতে পেরেছে। হাত দিয়ে পা ধরে কাদছে লাবিবা । তানভীর ভয়ার্ত মুখে তাড়াতাড়ি করে গাড়ির সামনের দিকে বসিয়ে দেয় । বেশ ব্যথা পেয়েছে বুঝতে বাকি নেই।
–দুষ্টু পুতুল কোথায় ব্যথা পেয়েছো দেখি দেখি । পায়ে মচকে গেছে । ও সিট চামড়ার ছাল ও তুলে ফেলেছো । তানভীরের ব্যস্ততা দেখে সবাই অবাক । প্রিন্সিপালের কিছু হয় নাকি এই মেয়ে ? চেনা কেউ ? এমন গুঞ্জন শুরু হয় । বাবু রাগ চোখে তানভীরকে গিলে খাবে এমন ভাবে তাকিয়ে থাকে । জবা শারমিন ভয়ার্ত চোখে দাড়িয়ে আছে । তানভীর শারমিনকে বলে –গাড়ির ভিতরে দেখো ফাস্ট এইড বক্স আছে । শারমিন এনে দিলে পায়ে ঐষধ লাগাতে নিলেই লাবিবা চিৎকার শুরু করে । তানভীর আশেপাশে তাকিয়ে পরিবেশ টা একবার চোখ বুলিয়ে নেয় । লাবিবার দিকে তাকিয়ে দেখে মুখ লাল হয়ে আছে । এখানে আর থাকা যাবে না । শারমিনকে বলে
— বক্সটা ভিতরে রাখো । আমি ডক্টরের থেকে ব্যান্ডেজ করিয়ে আনছি ।
—স্যার আমিও যাবো ।
—প্রয়োজন নেই । সামান্য ইনজুরি হয়েছে । হোস্টেলে চলে যাও ।
লাবিবাকে কোলে নিয়ে গাড়িতে বসায় । নিজেও ড্রাইভিং সিটে গিয়ে বসে । ভাগ্যিস এই সময় এই রাস্তায় যাচ্ছিলো নয়তো কি হতো !! দুষ্টু পুতুলকে কি ওভাবেই বসে কাদতো ! নাকি অন্য কেউ দুষ্টু পুতুলকে নামাতো ? এটা হতে পারে না । লাবিবা পা ধরেই কেদে চলেছে।গাড়ি স্টার্ট করে একটা ফাকা রোড়ে নিয়ে গিয়ে গাড়ি থামায় । নিচ থেকে পা দুটো হাটুর উপর তুলে । ডান পা মচকে গেছে । গাউনটা একটু উপরে তুলে পা ধরে জোড়ে একটা মোচর দেয় । লাবিবা আকাশ কাপানো চিৎকার দিয়ে তানভীরের শার্ট টেনে ধরে বোতাম ছিড়ে দিয়ে জোরে কাদতে থাকে আর চিল্লাতে চিল্লাতে বলে — আমার পা ভেঙে দিলো গো ..আমি আর হাটতে পারবো না গো ..ও আম্মুনি গো …তোমার মেয়ের আর বিয়ে হবে না গো ..আমার আর বালবাচ্চার মুখ দেখা হলো না গো ..আমার নাতি নাতির ঘরের পুতি পুতির ঘরের হুতি হুতির ঘরের__উম উম..।
তানভীর মুখ চেপে ধরে বলে –চুপ একদম চুপ। লাবিবা বিলোপ বন্ধ করে কাদতে লাগলে মুখ থেকে হাত সরিয়ে চমকে যায় । অতিরিক্ত চিল্লানিতে যে লাবিবার মাথায় রক্ত উঠে যায় সেটা ভুলেই গিয়েছিলো । মুখ লাল হয়ে আছে । তানভীর হিযআপ এর পিন খুলতে থাকে । লাবিবা হাত ধরে বলে
–আমি খুলবোনা । আমি উড়না পড়িনি ।
—চুপ করো ।কে আছে এখানে যে উড়না লাগবে ?
—আপনি আছেন । আপনি ছেলে মানুষ । আমার শরম করে ।
—চুপ থাকো । একটা কথা বলবানা। কি অবস্থা করেছো নিজের দেখেছো ? আর একটা কথা বললে ঠাটিয়ে চড় দিবো একটা।আজ বাদে কাল আমার বউ যখন হবে তখন দেখবো কেমন শরম।
—আমি আপনার দুই নাম্বার বউ হবো না। কক্ষনোনা । বাচাও বাচাও এই ডলফিন স্যার টা আমার হিযআপ কেড়ে নিচ্ছে ..আমার শরম কেড়ে নিচ্ছে ..আমায় জোর করে বিয়ে করে নিচ্ছে বাচাও বাচাও ?
দু একটা বাইক যাচ্ছে ক্ষনে ক্ষনে । চেচানো শুনে গাড়ির দিক তাকিয়ে তাকিয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ বলে যাচ্ছে দিন দুপুরে গাড়িতে ফুর্তি। তানভীরের রাগ উঠে যায় ।
—দুষ্টু পুতুল চুপ করো ..আমি কিন্তু রেগে যাচ্ছি ।
—বাচাও বাচাও ..এই ডলফিনটা আমার শরম নিয়ে নিচ্ছে ।
—দুষ্টু পুতুল এটা রোড় ইউ লুক । এখানে হচ্ছেটাকি এসব ? আই সে কিপ ইউর মাউথ সাট ।
—আমি চুপ করবোনা । আপনি আমার পা ভেঙে দিলেন । আমার শরম কেড়ে নিছেন । আমাকে দুই নম্বর
—ঠাসসসস…..
গালে হাত দিয়ে ভ্যা ভ্যা করে কেদে দেয়।এতোক্ষনের চিল্লানি এখন ভ্যা ভ্যা তে পরিনত হয়েছে ।
—চুপ একদম চুপ । এখনি ভ্যা ভ্যা বন্ধ না করলে আরেকটা থাপ্পর খাবে । ফালতু চিল্লানি শুধু । পা সোজা করো । দেখো একদম ঠিক । নাড়াও বলছি ।
লাবিবা পা নাড়িয়ে দেখে ব্যথা নেই । একদম ঠিক । নিচে নামাতেই পা আটকে ধরে তানভীর । মলম বের করে যত্ম করে লাগিয়ে দেয় । জ্বলা শুরু হতেই লাবিবা কান্না শুরু করে দেয় । এবার আর চিল্লানোর সাহস পায় না । আস্তে আস্তেই কাদতে থাকে । তানভীর পায়ে ফু দিতে থাকে যতক্ষন পর্যন্ত জ্বলা না কমে ।
—আর জলছেনা। এখন ঠান্ডা লাগছে ।
—কিন্তু আমার গরম লাগছে ।
গাড়ির গেইট খুলে দেয় । উপরের দিকে বোতাম ছিড়ে ফেলেছে তিনটা । শার্ট একটু আগলা করে দেয় । রাস্তার পাশে খোলা ফসলের মাঠ । হালকা ফ্রেশ বাতাস আসছে । সবুজের সমারোহে চোখ আটকে যায় তানভীরের । পানির বোতল হাতে নিয়ে গলা ভিজিয়ে নেয় । লাবিবার দিকে তাকিয়ে দেখে হেচকি তুলে তুলে নিশ্বব্দে কাদছে । মুখটা এখনো লাল হয়ে আছে । পানির বোতল এগিয়ে দেয়। লাবিবা ঢক ঢক করে পানি খেয়ে বোতল রেখে দেয় । তানভীর কাধ ধরে একহাতে বুকের সাথে চেপে নেয় লাবিবাকে।
— কান্না থামাও । এখন তো আর ব্যথা করছে না ।
লাবিবা মুখটা উচিয়ে গালটা তানভীরের মুখের সামনে ধরে বলে —এখানে ব্যথা করছে । আর কোথাও না ।
ব্যথাতো করবেই লাল হয়ে গেছে যে । আলতো করে কয়েকটা চুমু খায় সেই গালে । গালের নিচে ছোট্ট একটা কামড় দিতেই চমকে উঠে লাবিবা । বুকের মাঝে দু হাতে জড়িয়ে ধরে কানের কাছে মুখ এনে বলে —- টমেটো পেকে লাল হয়ে গেছে দুষ্টু পুতুল ।এখন খাওয়ার একদম উপযুক্ত সময় । আমার বাসায় পাঠাবে নাকি আমি নিজেই গিয়ে নিয়ে আসবো ? আমার কিন্তু টমেটো চাই চাই ।
—ব্যথা দেন কেনো ? রাক্ষস লোক টমেটো ভয় পায় ।
—এতো সফট কেনো তুই বলতো ? একটু ব্যথাতেই এমন করিস । তোকে কন্ট্রোল করতে গিয়ে আমার অবস্থা খারাপ হয়ে যায় ।এই পুতুল ..তোর কি বিয়ে হবে না ? বাচ্চার মম হবি না ? তখন আমার দেওয়া ব্যথা আর বাচ্চার দেওয়া ব্যথা কি করে সহ্য করবি বলতো ? তখনো কি তোকে ঠান্ডা করার জন্য আমার এরোকম অবস্থা হবে ?
To be continue___
®লাবিবা___?