একগুচ্ছ_কালো_গোলাপ?পর্ব_৪০
#লাবিবা_তানহা_লিজা
?
লাবিবা আর শারমিন রাস্তায় হেলতে দুলতে শপিং এ যাচ্ছে। স্টাডি টুর এর শপিংকরবে শারমিন । লাবিবা চিল মুডে চকলেট খাচ্ছে । তার তো শপিং করা হয়েই গেছে শুধু জুতো কিনবে আজ । শারমিন কি কি কিনবে বক বক করেই যাচ্ছে । লাবিবার চকলেট খাওয়া দেখে হাত থেকে চকলেট কেড়ে নিয়ে এক বালতি রাগ নিয়ে বলে —আমি যে কিছু বলছি কানে দিয়ে যাচ্ছে তোর ? খাদকের মতো সারাদিন এতো চকলেট চিবুস কেমনে তুই ? ভাত খেতে গেলে তো কতো রকমের ডং শুরু হয় । জোর করে খাইয়ে দিতে হয় তোকে আমার ।
—ইউ নো হুয়াট জানু ??চকলেট খেতে খেতে আমি একদম চকলেটের মতো হয়ে যাবো । তারপর তোর ফিউচার ভাইয়া আমাকে …আল্লাহগো কি শরম?
–তুই শরম ও পাস?। তুই যে গুলুগুলু আমার ফিউচার ভাইয়া এমনিতেই তোকে চোখে হারাবে । এবার রিকসা নেই চল। আমি আর হাটতে পারছি না ।
লাবিবা একটা রিকসা ঢেকে দুজনে উঠে পড়ে । মলে এসে নেমে রিকসা ভাড়া দিতে গিয়ে বাজে বিপত্তি । শারমিন নেমেই উঠে গেছে সিড়ি বেয়ে উপর তলায় । লাবিবার হাজার টাকার নোট ভাঙানো হয়নি এখনো।নিচের দোকান গুলোও বন্ধ। মামার কাছেও ভাংতি নেই । এদিক সেদিক তাকিয়ে বলে –মামা আপনি একটু দাড়ান আমি আমার বান্ধবীর কাছে ভাংতি টাকা নিয়ে আসছি ।
–না না আমার জানা আছে সব । ভাংতি আনার নাম করে আপনি আর টাকাই দিবেন না আমাকে ।
—দিবো মামা দিবো । এরকম ভাববেন না আমাকে । আচ্ছা আপনি দাড়ান আমি রাস্তার ওপাশের দোকান থেকে ভাঙিয়ে আনছি ।
–না না আপনি এখান থেকে গেলে আর আসবেন না । আমার টাকা দিয়ে তারপর যাবেন । আপনাদের মতো বড় লোকেরা ভাংতি আনার নাম করে টাকা না দিয়েই উধাও হয়ে যায় । অপেক্ষা করতে করতে জান যায় আমাদের ।
—আমাকে দেখে কি আপনার ওমন মনে হয় ?
–আজকাল ভদ্র লোকেরাই এমন করে । মানুষ চেনা দায় ।
আচ্ছা মামা আপনি এক মিনিট দাড়াবেন বলে থ
দৌড় দেয় উপর তলায় লাবিবা । পেছন পেছন রিকশা মামাও ডাকতে ডাকতে উপরে উঠতে থাকে । লাবিবা খুজতে খুজতে কসমেটিকসের দোকানে গিয়ে শারমিনকে পায় । তারাহুড়ো করে বলে –দোস্ত ভাংতি আছে তোর কাছে ? তারাতাড়ি দে রিকশা মামাকে দাড় করিয়ে এসেছি । বেটা বহুত নাছোড়বান্দা ।
—জানু আমার কাছে তো নেই । তোর সামনেই তো আমি বিকাশ থেকে টাকা তুললাম । আমাকে রিচার্জ মামা কড়কড়া হাজার টাকার দশটা নোট দিলো ।
কি করবে ভেবে না পেয়ে দোকানদারকে বলে –মামা ত্রিশ টাকা দেনতো তাড়াতাড়ি শারমিন দিয়ে দিবে । টাকা নিয়ে নিচে এসে দেখে রিকশা মামাও নেই রিকশাও নেই । লাবিবা হতভম্ব.. আরেব্বাস চলে গেলো ? এই জান যাওয়া আপেক্ষা..এখন কি করবো ?বেটা চলে গেলি কেনো ..আমি নাকি ভদ্র নই শালা তুই অভদ্র। টাকা না নিয়ে আমাকে দেনায় ফেলে চলে গেলি। তোর কোন দিন বিয়ে হবে না হুহহ।
উপরে এসে মামকে টাকা ফেরত দিয়ে দেয় । লাবিবা শারমিন ঘুরে ঘুরে শপিং করতে থাকে । শারমিনের শপিং করা শেষ হলে খেয়াল হয় লাবিবাতো কিছু কিনলোনা । –জানু তুই শপিং করবিনা? —আমার শপিং করা আছে । শুধু জুতো কিনবো চল।–হুম চল ।
জুতোর দোকানে বসে এটা না ওটা ..ওটা না এটা দেখান বলে জুতোমামদের অস্থির করে তুলে । অবশেষে মামা বলে –আপনি পায়ে দিয়ে দেখেন এবার । সব গুলোই সুন্দর । সব কালেকশন আমরা দেখিয়ে ফেলেছি। লাবিবা জুতো নিয়ে পড়তে গিয়ে পড়তে পারে না । মামা বলে –আপু দাড়ান পড়িয়ে দিচ্ছি । যেইনা পায়ে হাতে দিতে যাবে তখনি বলে –ওয়ান মিনিট । ডোন্ট টাচ ।
সবাই উপরে তাকিয়ে দেখে তানভীর দাড়িয়ে । জুতো মামা বসা থেকে উঠে পড়ে। তানভীর একটার উপর থেকে আরেকটা জুতো সরিয়ে সরিয়ে দেখে চারজোড়া জুতো চুজ করে। পকেট থেকে ফোন বের করে লাবিবার হাতে দিয়ে হাটু ভাজ করে হালকাভাবে বসে পড়ে । লাবিবা পা হাতে নিয়েই মুচকি একটা হাসি দেয় । এতো সফট কেনো তুমি দুষ্টু পুতুল ….। তানভীরের হাসি তে লাবিবার মুখেও হাসি ফুটে । তানভীরের মুচকি হাসিটা মারাত্মক কিউট । অসম্ভব ভালো লাগে লাবিবার । জুতো গুলো পড়িয়ে দেখে একজোড়া বাদে বাকি তিনজোড়া একদম পারফেক্ট। জুতো মামাকে বলে –মামা এইটা এক সাইজ বড় পাওয়া যাবে ? –দেখছি মামা । তানভীর শারমিনের দিকে তাকিয়ে বলে –শারমিন ..জুতো নিবেতো । চুজ করো । শারমিন আমতা আমতা করে বলে –স্যার আমার লাগবেনা জুতো । লাবিবার লাগবে ওই নিক।
–দুজনেই নাও । আমি চুজ করে দিবো নাকি ? ওকে ওয়েট । তানভীর শারমিনের জন্যেও জুতো চুজ করে
এদিকে শপিং করে সব টাকা শেষ করা শারমিন। স্যারকে কিভাবে বলবে এই কথা যে তার কাছে টাকা নেই । লাবিবাকে চুপি চুপি বলে –দোস্ত সব টাকা তো শেষ…কসমেটিকস কিনেছি তিন হাজার দিয়ে । টুরের জন্য জামা নিয়েছি দুইটা সাত হাজার দিয়ে । গেঞ্জি পেন্ট কিনেছি দুই হাজার দিয়ে । বারো হাজার টাকা সবটাই শেষ করেছি । এখন ?? স্যারকে কিভাবে বলবো আমার আর টাকা নেই ।
—চিন্তা করছিস কেনো? আমি তো আছি ।
দেখা গেলো লাবিহার জন্য চার জোড়া আর শারমিনের জন্য দুই জোড়া জুতো হাতে ধরিয়ে তানভীর নিজেই পেমেন্ট করে দিলো । শারমিন তো অবাক। লাবিবাকে পেছন থেকে টেনে ধরে বলে –দোস্ত তোর ও টাকা লাগলোনা আমারো না স্যার ই দিয়ে দিলো । কি মজা…?
লাবিবা মনে মনে —হিসাব মতো টাকাটা আমার ই গেলো । স্যারের টাকা মানে আমারি টাকা সেটা তো আর জানিস না । চার হাজার টাকার জুতো ফাউ পেলি । মজাতো লাগবেই ।
তানভীর বলে –এখন থেকে জুতো পড়া শিখে নিবে দোকানিকে যেনো পা না ছুতে হয়। আর হবেও না । তোমার জুতোর মাপ জেনে গেলাম । সেদিন জানতামনা জন্য কিনতে পারিনি । গাড়িতে উঠো পৌছে দিচ্ছি ।
শারমিনের অবাক হওয়ার আর শেষ নেই । স্যার লাবিবার শপিং করে দিয়েছে। ভবিষৎ এও দিবে । হায়রে কপাল. আজ যদি আমার একটা এমন বড় মনের স্যার থাকতো..সব গুলোতো কিপ্টার চেঙ্গুস কথাকার ..হুহহ। লাবিবা শারমিনকে নিয়ে হোস্টেলের সামনে এসে পড়ে তানভীর । লাবিবা গাড়ি থেকে নামার সময় তানভীর বলে –দুষ্টু পুতুল..পেছনে দেখো একটা টেডি আছে নিয়ে যাও । টেডির কথা শুনে লাবিবা খুশিতে আটখানা হয়ে যায় । টেডি নিয়ে হোস্টেলে চলে আসে । হোস্টেলে এসেই তুতুকে খাবার দেয় । ফ্রেশ হয়ে এসে জুতো পড়ে পুরো রুম হেটে হেটে দেখে । দু গালে হাত দিয়ে বলে
–উফফ লাভলি? আমার ডলফিন স্যারটাও যেমন কিউট তেমনি তার পছন্দ..না হলে কি আর আমাকে পছন্দ হয়??। টেডিটা নিয়ে আদর করতে থাকে । টেডির পিটে গাম দিয়ে একটা সাদা খাম লাগানো এটাতো আগে খেয়াল ই করেনি । খাম খুলে তো অবাক.. একদম নতুন চকচকে নোটের কয়েকটা বান্ডিল। দশটাকার নোটের বান্ডিলের উপর চিরকুটে লেখা
“এগুলো ঝালমুডি আর প্রান চাটুনি খাওয়ার জন্য ”
বিশ টাকার নোটের বান্ডিলের উপর চিরকুটে লেখা
” এগুলো টক জাতীয় ফলের ভর্তা আর চটপটি খাওয়ার জন্য”
পঞ্চাশ টাকার নোটের বান্ডিলের উপর চিরকুটে লেখা
” এগুলো রিকশা ভাড়া আর ফুসকা খাওয়ার জন্য”
তার মানে রিকশা মামাকে স্যার টাকা দিয়ে দিয়েছে???
একশটাকার নোটের বান্ডিলের উপর চিরকুটে লেখা
” এগুলো ফাস্টফুড আর কোন আইসক্রিম খাওয়ার জন্য । চকলেট এর জন্যেও। ”
পাচশটাকার নোটের বান্ডিলের উপর চিরকুটে লেখা
” এগুলো চাইনিজ ফুড আর তানভীর খানের বাচ্চিকা বধুর গুড়ো দুধ আর হরলিক্স চেটে চেটে খাওয়ার জন্য”
একহাজারটাকার নোটের বান্ডিলের উপর চিরকুটে লেখা ” এগুলো আমার দুষ্টু পুতুলের গাউন , ওড়না , কসমেটিকস ,আর জুতো কেনার জন্য ”
বান্ডিল গুলো গুছিয়ে রেখেই লাবিবা খাটের উপর উঠে দেয় এক লাফ । কি করলো ভেবেই চুপটি হয়ে দাড়িয়ে পড়ে । যদি খাট ভেঙে যায়? তখন কি হপ্পে? প্রিন্সিপাল যদি নতুন খাট না দেয়? প্রিন্সিপাল দিবে নাতো আমার হবু জামাই দিবে আমার শশ্বুরের কি?
ইচ্ছে করছে দৌড়ে গিয়ে একটা পাপ্পি দিয়ে আসি । ফোন নিয়ে হুয়াটসএপে কয়েক ডজন পাপ্পির ইমুজি সেন্ড করে । সাথে সাথেই কল আসে । কল ধরবে নাকি ধরবেনা ভাবতেই মনে পড়ে প্রথম কলেই ধরতে বাধ্য সে । রিসিভ করে কানে ধরতেই তানভীর ইয়া লম্বা একটা উম্মাহহহহহহহহ? দিয়ে দেয়। লাবিবার শরীরের সমস্ত লোম এক ঝটকায় দাড়িয়ে পড়ে । ফোনেই এতো ডিপলি কিস করা যায় তা লাবিবা প্রথম জানলো । দুরত্ব বহু হলেও অনুভব এতো গভীর কিভাবে হয় । তানভীর শুধু নিশ্বাসের শব্দ পাচ্ছে যা আস্তে আস্তে ঘন হয়ে আসছে ।
–দুষ্টু পুতুল…
—হু হুহমম….
—সরাসরি কিস চাইছো ? আসবো আমি ?
–না… আপনি ঘুমোন ।
টুপ করেই ফোন কেটে সুইচড অফ করে ফেলে । নয়তো তানভীর কল দিবে যা লাবিবা চাইলেও ধরতে পারবেনা। পরে যদি কিছু বলে তখন বলে দেওয়া যাবে যে ফোনে চার্জ ছিলো না তাই অফ হয়ে গেছে ।
_______________
সন্ধ্যায় স্টাডি টুরের বাস ছাড়বে সীতাকুন্ডের উদ্দ্যেশে। সারারাতে পৌছে যাবে সীতাকুন্ডে । ইসমাইল এসেছে মেয়েকে বাসে তুলে দিতে । তানভীর আছে যেহেতু সেহেতু সে নিশ্চিন্ত। এই প্রথম মেয়েকে ছাড়ছে সে । এতোদিন কোথাও যেতে দেয়নি..সেখানে গিয়েছে সাথে করে নিয়ে গিয়েছে । একেতো কখন কি হয় রাস্তাঘাটে একা ছোট বোকা মেয়ে ভেবে আরেক তো সুন্দরী মেয়ে দেশের অবস্থা ভালো নয় সেটি ভেবে। এখনো একা ছাড়ছে না ..হবু জামাতার হাতেই ছাড়ছে ভেবেই বুকটা শান্তিতে ভরে যায় । তবুও রাস্তাঘাটে কি না কি হয় টেনশন রয়েই যায় । তানভীর ইসমাইলকে আসস্ত করে বাসায় পাঠিয়ে দেয় । লাবিবা শারমিন তাড়াহুড়ো করে এসে দুটি বাসের একটিতে উঠে পড়ে । সামনের সিট পেতেই হবে বলে মনোভাব। পেয়েও যায় । এবার লাবিবার ঘ্যান ঘ্যান শুরু হয় দোস্ত আমিতো চাটুনি কিনি নি ..সারা রাস্তা কিভাবে কাটবে আমার ? চলনা ..চাটুনি না খেলে আমি বমি করবো টু হান্ড্রেট পার্সেন্ট সিউর ।
—দোস্ত এখন উঠা যাবে না । উঠলেই সিট পাবো না আর । রাস্তা থেকে পরে কিনে নিবো ।
লাবিবা শারমিন দুজনাতে জোরাজুরি করছে আর এদিকে জানালা দিয়ে তানভীর তার দুষ্টু পরীটাকে একমনে দেখছে । দুষ্টু পরীটা তার দেওয়া ব্লু-ইয়েলো কম্বিনেশনের ড্রেসটা পড়ে এসেছে । মাথায় ইয়েলো হিযআপ । আজ দুষ্টু পুতুল সেজেছেও একটু । তার মুখ ভর্তি হালকা পাউডার দেওয়া চোখের পাতার উপর ব্লু কাজল ঠোটে গোলাপী লিপিস্টিক হাতে ব্লু স্টোনের ব্যাসলেট সবটাই তানভীরের দেওয়া । এটুকুতেই তানভীরের হার্টবিট বেড়ে যায় । তার দুষ্টু পুতুলকে হিরোয়িনদের মতো মেকভার করলে কেমন লাগবে ভেবেই মাথা ঘুরিয়ে যায় । প্রোগ্রামের দিন দেখেছিলো সেই রুপমীনির রুপকে আজো ভুলেনি । প্রতিদিন ই নতুন লাগে তার দুষ্টু পুতুলকে তার কাছে । যেন আজি প্রথম এই মায়াবতী তার চোখে ধরা দিয়েছে।
বাবুর দল লাবিবা যে বাসে উঠেছে সেই বাসে উঠে পড়ে। তানভীর চিন্তায় পড়ে যায় । একবাসে বাবুর সাথে লাবিবাকে রাখতে চাইছে না । এদিকে সে নিজে গাড়ি করে যাবে । চ্যেয়ারম্যান স্যার আর প্রিন্সিপাল গাড়ি করে যাবে আর বাকি সব স্যার মেডাম বাসে । চ্যেয়ারম্যান স্যারের ফুল ফেমেলি যাচ্ছে । এদিকে তানভীর নিজের গাড়িতে লাবিবাকেও আনতে পারছে না । চ্যেয়ারম্যান স্যারের সাথে কথা বলে বাস থেকে সব স্টুডেন্ট কে নামানো হয় । সিদ্ধ্যান্ত অনুযায়ী মেয়েরা এক বাসে আর ছেলেরা একবাসে বসানো হয় । তানভীর মিলনকে বলে লাবিবা আর শারমিনকে বাসের প্রথম দিকের সিটে বসিয়ে আসার জন্য আর লাবিবাকে জানালার পাশে বসানোর জন্য। মিলন বাসের ২য় সিট থেকে মেয়েদের উঠিয়ে দিয়ে লাবিবা কে জানালার পাশে বসায় আর শারমিনকে পাশে। বাস ছাড়ার আগে আগেই তানভীর জানালা দিয়ে লাবিবাকে ডাকদেয় । লাবিবা ফিরে তাকাতেই হাতে অনেকগুলো চকলেট আর চাটুনি ধরিয়ে দেয় । লাবিবা ওগুলো শারমিনের কাছে রেখেই তানভীরের দিকে তাকিয়ে বলে
–স্যাররর।
—আমি আছি ওকে ? কোন প্রবলেম হলে বলবে । রাতের জার্নি হাত বাইরে দিয়ে রাখবেনা ।
To be continue _____
®লাবিবা_______?