একগুচ্ছ_কালো_গোলাপ?পর্ব_৫
#লাবিবা_তানহা_লিজা
?
একটা লোক এসে জানায় সকালে ব্রিজের নিচে uniform পড়া দুইটা মেয়েকে দেখেছে। সবাই মিলে ছুটে সেই দিকে । লাবিবা আর নুপুর দুটো বরশি কিনে নদীতে মাছ ধরতে থাকে । বড় কচু পাতায় কয়েকটা মাছ ও জমিয়েছে ।
লাবিবা – দোস্ত এইগুলা ভাজমু । তার পর হিন্দু জঙ্গলে ঠিক দুপুর বেলা গিয়ে চারিদিক ছিটায়ে ভুত শিকার করমু ।
নুপুর : আল্লাগো ভুত । ভুত যদি ভয় দেখিয়ে ঘাড় মড়কে দেয় ?
লাবিবা : চুপ থাক । I am সাহসী? । ভুতের সাথে পুতুল খেলমু আমার কত্তো দিনের শখ ☺।
নুপুর : আমাক নিবি না খেলায় ?
লাবিবা : হ নিমু । তুই ভুতের বাচ্চার খালা আর আমি শাশুডি ।
ইসমাইল – আনিস : লাবিবা……?? নুপুর ??
দুজনে পেছনে তাকিয়ে দেখে সবাই আসতেছে ।
লাবিবা-নুপুর: আব্বু ..ধরা খাইছি । উলাললা উলাললা মাছ নিয়ে এক দৌড়ে পালা ।
দৌড়ে লাভ হলো না । তার আগেই মুক্তা সামনে দিয়ে ধরে ফেলে । ইসমাইলের হাতে না ফেলে বাইকে বসিয়ে turn করে । লাবিবা আমার মাছ ..ভুতে মাছ খাবো ..আমার মাছ ..ভুতরে কি দিয়ে ধরমু ..মাছ … বলে চিল্লাতে থাকে । মুক্তা মুখ চেপে ধরে বাইক চালিয়ে বাড়ি চলে আসে । পেছন পেছন সবাই চলে আসে নদীর পাড় থেকে । তানভীর দাড়িয়ে দাড়িয়ে লাবিবাকেই এতোক্ষন দেখে । লাবিবার কার্যক্রমে রাগ পাবে নাকি হাসবে সে কনফিউশন সব সময় নিয়েই থাকে ।
রাতে ঘরে ইসমাইল লঙ্কাকান্ড শুরু করেছে । এমন মেয়ে আর সে ছেড়ে রাখবেনা । দড়ি দিয়ে বেধে রাখবে । স্কুলে নিজে নিয়ে যাবে নিজে আনবে । মেরে চাম তুলে দিবে । সাবিনা শুধু ঢুব গিলছে ।
ইসমাইল : কই ? বাদরের বাচ্চাটা কই লুকিয়েছে ? বের করো ওটাকে । আজকে ওর একদিন কি আমার একদিন । চাপিয়ে পিঠের ছাল তুলে দিবো ।
সাবিনা : শোন । মাথা ঠান্ডা করো । আমি শাসন করেছিতো ।
ইসমাইল : বের করো ওটাকে ।
সাবিনা : ভাইজান নিয়ে গেছে ।
ইসমাইল বেড়িয়ে যায় । কিছুক্ষন পর এসে বলে নেই । তুমি লুকিয়ে রাখছো । এখানেই আছে । বলে ইসমাইল ঘরের একোনা ওকোনা খুজতে থাকে । সাবিনা তো ভয়ে শেষ ।এবার বুঝি ধরা পড়লো। খাটের নিচে চুপটি করে লাবিবাকে লুকিয়ে রাখছে । খাটের নিচে দেখতে গেলেই তো ধরা । এদিকে লাবিবার এসব চিল্লানি আর ভালো লাগছে না । খাটের নিচে বসে বসে বোর হচ্ছে । সাথে তো মশার কামড় ফ্রি । তারমধ্যে আবার ক্ষিধাও লাগছে । সহ্য করতে না পেরে হামাগুডি দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায় । ইসমাইল খাটের নিচে চেক করে । পুরো রুম চেক করে পায় না । সাবিনাকে অনেক বকা ঝকা করে । সকালে যেন মেয়েকে সামনে পাই বলে রাগ দেখিয়ে নিজের রুমে চলে আসে । বিছানায় শুয়ে পড়ে । এদিকে সাবিনার মাথায় হাত । মেয়েকে সে নিজে খাটের নীচে ডুকিয়ে পাহারা দিচ্ছে । এর মধ্যে কই উধাও হবে ? পুরো রুম সেও খুজে ।মেয়েকি এবার সত্যি সত্যি হারিয়ে গেলো ? দুটো মানুষ রুমে অথচ এর মধ্যেই লাবিবা ভেনিস হয়ে গেলো । তার পরান যায় যায় অবস্বা । ওখানে বসেই চিন্তায়চিন্তায় শেষ ।
ইসমাইলের চোখে তন্দ্রাভাব চলে আসছে । ভীষন ক্লান্ত সে । এরি মধ্যে চপ চপ শব্দ কানে আসে । শব্দ হতেই থাকে । কিসের শব্দ দেখার জন্য উঠে বসে ইসমাইল । পুরো রুম খেয়াল করে দেখে খাটের নিচ থেকে শব্দটা আসছে । চাদর সরিয়ে ফোনের flashlight জালিয়ে ধরতেই দেখে লাবিবা । হাতে হরলিক্সের বোয়াম । হাত দিয়ে হরলিক্স বের করছে আর চপ চপ শব্দ করে চেটে চেটে খাচ্ছে । এদিকে যে তার দিকে লাইট ধরে রাখছে তার হুস নেই । ইসমাইল হাসবে নাকি কাদবে বুঝতে পারে না । হাত ধরে টেনে খাটের নিচ থেকে বের করে । সারা মুখে হরলিক্স লেগে বিড়ালের মতো লাগছে । ইসমাইল পানিতে কাপড় ভিজিয়ে মুখ মুছে দিয়ে বলে – আমার বিড়াল ছানা । লাবিবাকে পানি খাইয়ে বুকে নিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে । সাবিনা কেদে কেটে এসে দেখে বাপ বেটি সুন্দর করে ঘুমিয়ে আছে । চোখ জল জল করে উঠে সাবিনার । চোখ মুছে মেয়েকে জড়িয়ে সেও ঘুমিয়ে পড়ে ।
পরদিন স্কুলে গেলে লাবিবাকে assembly তে কান ধরে দাড় করিয়ে রাখা হয় । সাথে আরো যারা পালিয়েছে ওদের সহ দাড় করিয়ে রাখা হয় । নুপুর আর লাবিবা don’t care ভাব নিয়ে দাড়িয়ে থাকে । মুক্তা কামরুল স্যারের সামনে আসতে বলে লাবিবা আর নুপুর কে । দুজনে সামনে এসে দাড়ালে মুক্তা বলে
– স্যারের সাথে বেয়াদবি করেছো । যা আজ পর্যন্ত কেউ করেনি । পা ধরে মাফ চাও ।
লাবিবা নুপুর তাকিতুকি করতে থাকে । চোখে দুজনের কথা হয় – এই কামলার বাচ্চার পা ধরমু ..। পচা পা । কয়দিন থেকে জানি ধুই না ..yack …. .
কামরুল স্যার বত্রিশ পাটি খুলে দেয় । হলুদ কেড়াবেড়া দাত গুলো নিয়ে close up এর add করতে থাকে । লাবিবা নুপুরের গা জ্বলে যায় ।
মুক্তা : কি হলো মাফ চাও। সবার সামনে পা ধরে মাফ চাবে এটা তোমাদের শাস্তি ।
লাবিবা নিচু হতে গিয়েও থেমে যায় ।কামরুলকে বলে
– স্যার পা ধুয়ে আসেন । ব্যাকটেরিয়া ময়লা হাতে লাগামুনা ।
কামরুল ভ্রু কুচকে তাকায় । মেডামরা আর student রা হেসেই ফেলে । কামরুল থরিসে অপমান ভুগ করে । না পেরে পা ধুয়ে আসে । লাবিবা নুপুর পা ধরে মাফ চায় । লাবিবা সরে না এসে কামরুলের পাশে দাড়িয়ে পড়ে । আস্তে আস্তে বলে
– এটা না করলেও পারতেন। করেই যেহেতু ফেলেছেন তখন ডোজ তো বাড়াবোই । আপনার গোফটা আমার ইত্তোগুলা পছন্দ। পা ধরে মাফ না হয় আবার চাইবো।
কামরুল ঢুক গিলে । রাগ দেখিয়ে বলে – বেয়াদব মেয়ে সর এখান থেকে। আমার পিছে লাগবেনা একদম ।
– আইচ্ছা স্যার ।
ক্লাসে গিয়ে বসতেই সাদিয়া, তিথী , নুরেজা এসে বলে
– দোস্ত …তোরা দুইটা কাল কই গেছিলি ? আমাদের নিলি না কেন ? জানস তোরা আসার আগে মুইন্না আসছিলো । যা দেখতে লাগতাছিলো দোস্ত ??।
নুপুর- কেমন লাগতেছিল ? ইস আমি কেন একটু আগে আসলাম না ?
সাদিয়া – আর বলিস না । পরসু দিন আমি দ্যা খলিল কাক্কুর দোকানে এগারটা নুপুর পছন্দ করে আসছি আমরা সবাই এক নুপুর কিনব জন্য । কিন্তু আজ গিয়ে দেখি একটাও নাই ।এক ছেলে নাকি সব কিনে নিছে । স্কুলে এসে দেখি মুইন ঐ নুপুর গুলা মাথায়, নাকে ,ঠোট দিয়ে চেপে ধরে , গললায় ..?? পুরো জোকার ফেইল দোস্ত।
লাবিবা – তারপর ??
নুরেজা – মুক্তা স্যার এসে বাইক রেখে অফিসে যাবে তখন চোখ পড়ে মাঠের দিকে । স্যার তো দেখে বেহুস । আমরাও দেখে হাসতে হাসতে প্রান যায় যায় অবস্থা । স্যার রেগে গিয়ে মুইনের সামনে গিয়ে বলে ” কিরে তোর এই অবস্থা কেন ? কি সাজছস এগুলা ? কেমন লাগতাছে জানোস ? জোকার লাগতাছে জোকার । ”
” স্যার আমাকে অনেক সুন্দর লাগছে আমি জানি । আজ এই ভরা মাঠে আমার ভালোবাসার বীচি থেকে কুড়ি দিয়ে গাছ জম্মাবে । আমার বুকের নুপুর আমার আমাকে তার বুকে জায়গা দিবে ।”
” ঐ জোকার পাগল কোন নুপুর তোরে বুকে জায়গা দিবো ?”
” আমার চোখের মনি বুকের খনি পেটের নুপুর ।আপনার বিদ্যালয়ে এইটে পড়ে । ”
” ঐ তোর আব্বারে ফোন দে । ছেলে মেন্টাল অথচ স্কুলে পাঠাইছে ।”
সবাই একসাথে – ???????
লাবিবা – তারপর তারপর ?
তিথী – তারপর স্যার ধমকা ধমকি করে বাসায় পাঠিয়ে দিয়েছে।
তখনি ম্যাডাম চলে আসে ।যে যার সিটে বসে গিয়ে বসে পড়ে ।
স্কুল ছুটির পর লাবিবা আর নুপুর কাধে কাধ রেখে হেলতে দুলতে বাসায় ফিরছে । তানিয়া কে ওর পাপা আনতে গিয়েছে । তানিয়া লাবিবা কে দেখে বলে
– লাবিপু আমার সাথে চলো । আমার পাপা পৌছে দিবে । আসো আসো ।
লাবিবা থমকে দাড়ায় । সে একা । নুপুর বাসা উল্টো রাস্তায় থাকায় নুপুর চলে গেছে ।
মিনার ও বললো – আসো আম্মু। তুমি তো আবার ভেনিস হয়ে যাও মাঝে মাঝে । হা হা হা ..ভীষন দুষ্টু ।
লাবিবা তানিয়াও চব্বিশ পাটি খুলে হাসে । লাবিবা গাড়িতে উঠে বসে ।
তানিয়াদের বাসার সামনে আসতেই তানিয়া বলে – লাবিপু চলোনা আমাদের বাসায় । আসোনা । ঘুরে আসো একটু ।
লাবিবা একটু ভাবে । চোখের সামনে গোলাপ গাছ টা চক চক করে উঠে । তানিয়ার দিকে ফিরে বলে
– আমি একটা জিনিস নিবো । দিবি ?
– হ্যা দিবো ।
– ok go .
লাবিবা নেমে গেইট দিয়ে ঢুকে । তানিয়া হাত ধরে বাসার ভিতরের দিক নিয়ে যেতে থাকে । লাবিবা আসে পাশে দেখতে থাকে । সামনের দিকটা পুরোটা ফুলের বাগান । অনেক সুন্দর । আর কোনার দিকে সেই কালো গোলাপ ভর্তি গাছটা সৌন্দর্য দিগুন বাড়িয়ে দিয়েছে। লাবিবার মনে অসংখ্য প্রশ্ন উকি ঝুকি দিতে থাকে ।
আচ্ছা এই বাসাটা এতো সুন্দর কেন ? আমাদের টা এমন না কেন ? আমি চেয়ারম্যানের মেয়ে না হয়ে এমপির মেয়ে হলে কি এই বাসাতে আমি থাকতাম ? এই গোলাপ গুলো আমার হতো । আমি গোলাপ পড়ী সেজে বসে থাকতাম । আমি যে এই ফুল নিতে এসেছি তা শুনে কি তানিয়া রাগ করবে ? নাকি আমাকে ফুল পেডে দিবে ?
তানিয়া – কি হলো লাবিপু ? চলো ।
লাবিবা – আগে এদিকে আয় ।
তানিয়ার হাত ধরে গোলাপ গাছের নিচে এনে বলে
– আমি এই ফুল নিতেই এসেছি । তোকে না কতো আদর করি আমি ? তাহলে এই ফুল পেড়ে দে আমায় ।
তানিয়া – আল্লাহ সম্ভব ই না । এটা ভাইয়ার গাছ । আমরা কেউ এই গাছে হাত দেই না । ফুল গুলো ফুটে ঝরে যায় । ভাইয়া মেরে ফেলবে দেখলে ।
লাবিবা – কিন্তু আমার যে একটা চাই চাই । আমার misson success must do .
তানিয়া – লাবিপু এইটা কইরো না । ভাইয়া জানলে আমি শেষ ।
লাবিবা আশে পাশে তাকিয়ে দেখে । দৌড়ে দারোয়ানের কাছে গিয়ে দারোয়ানের টুল নিয়ে আসে গাছের নিচে রেখে উঠে দাড়ায় ।
– তানিয়া । শক্ত করে ধর । আমি যেন না পরে যাই ।
তানিয়া শক্ত করে ধরে । লাবিবা টুলের উপর উঠেও ফুলের কাছে পৌছতে পারে না । তাই লাফালাফি শুরু করে ।
তানভীর ছাদে পুশ আপ দিচ্ছিলো । গাছ নড়তে দেখে নিচের দিকে খেয়াল করতেই দুজনকে দেখতে পায় । ত
রেগে গিয়ে নিচে নেমে সামনে এসে দাড়ায় । তানিয়া তানভীরকে দেখে ভাইয়া বলে চিৎকার করে টুল ছেড়েই দৌড় ?♀। লাবিবা লাফাচ্ছিল তাই চিৎকার শুনে সেও টুল ছেড়ে মাটিতে ধপাস । তানভীরের দিকে তাকিয়ে ভয়ে চুপ চাপ তাকিয়ে দেখতে থাকে । নড়া চড়া করার শক্তিও যেন হারিয়ে ফেলেছে । তানভীরকে পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখতে থাকে । ইয়া লম্বা , টাওজার পড়া , স্লিভলেস শার্ট পড়া , বলিষ্ট দেহি । লাবিবার মনে হতে থাকে এই লোক তাকে এক পারাতেই মেরে ফেলবে ।
” ও আমার আল্লাহ ..বাচাও ডলফিন ।” বলে চিৎকার করে উঠে দৌড় দেয় । কিন্তু তানভির তাকে যেতে না দিয়ে পেছন থেকে কোমড় চেপে ধরে আটকে দেয় ।
To be continue ______
®লাবিবা ______?