একগুচ্ছ_কালো_গোলাপ?পর্ব_৪৪

0
5906

একগুচ্ছ_কালো_গোলাপ?পর্ব_৪৪
#লাবিবা_তানহা_লিজা

?

সল্প সময়ে মোটামুটি ভালোই আয়োজন করা হয়েছে । এতো তাড়াহুড়োর কি আছে সেটাই বুঝতে পারছেনা লাবিবা । বাসার ভিতরে ডুকতেই শারমিনের কান্নার আওয়াজ পায় । ড্রয়িংরুমে দাড়িয়ে এদিকে ওদিকে তাকাতে থাকে । এই বাসায় আজি প্রথম এলো আরো লোকজনের ভিড়ে কোনদিক থেকে কান্নার আওয়াজ আসছে সেটাই বুঝতে পারছে না । তানভীর নুপুর এসে লাবিবাকে দেখে একজনকে জিজ্জাসা করে শারমিনের রুমটা কোনদিকে?দেখিয়ে দিলে এসে রুমে ঢুকে দেখে মাঝখানে শারমিন বসে কাদছে আর চারিদিকে কয়েকজন মেয়ে বসে বসে কান্না দেখছে । লাবিবা শারমিনের কান্না দেখে নিজেও কেদে ফেলে । দু বান্ধুবী গলা ধরে কাদতে বসে। তা দেখে নুপুরো ফুপিয়ে ফুপিয়ে শারমিন লাবিবার গলা ধরে কাদতে থাকে । তানভীর প্রথমে বিরক্ত হলেও পর পর ই মনে পড়ে যায় সে যে একটা পাগলকে বিয়ে করতে চলেছে । পাগলের বান্ধুবী গুলা তো পাগল ই হবে । ওহ সরি পাগলী হবে ওটা । ভেবেই হেসে ফেলে । মেয়ে গুলাকে বলে
— এইযে আপুরা তোমরা অনেক কান্না দেখেছো এবার বের হও তো । বসে বসে মুখ না দেখে বাইরে গিয়ে কাজ করো । বিয়ে বাড়ি অনেক কাজ পড়ে আছে । ওদের মধ্যে একজন বলে উঠে
–আমাদের পাহারা দিতে বলেছে । আপুমনি রাজি হচ্ছিলো না । যদি পালিয়ে টালিয়ে যায় ..
–পালাবে কিভাবে ? আমাদের তো আংকেল পাহারা দেওয়ার জন্য পাঠালো । তোমাদের অন্য কাজে ঢেকেছে ।
মেয়ে গুলো মুখ চাওয়াচাওয়ি করে উঠে চলে গেলো । তানভীর দরজা লক করে সোফায় গিয়ে আয়েশ করে বসে । আপাদত তার কাজ এদের নেকাকান্না দেখা। শারমিনের চোখ থেকে জল মুছে বলে
–দোস্ত তুই কি বিয়ে করতে চাস না ? চল তোকে নিয়ে পালিয়ে যাই ।
ফট করে শারমিনের কান্না স্টপ হয়ে যায় । লাবিবার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে আবার কান্না শুরু করে । নাক টানতে টানতে বলে
–তুই আমার বন্ধু নাকি শত্রু বলতো ? পালিয়ে গেলে বিয়ে হবে কার ? লোকজন শুধু শুধু খেয়ে চলে যাবে নাকি ? আমার বাপকে কি তোর এতো বড় দিলওয়ালা মনে হয় ?
–তাহলে তুই কাদছিস কেনো ? ছেলে পছন্দ হয়নি ? চেঞ্জ করে দিবো ?
–ও মা গো ! আবার কি কস! যে ছেলের সাথে বিয়ে হচ্ছে সেই ছেলের প্রতি লাস্ট ক্রাসটাই খাইছি দোস্ত। নাজমুল হাসান নাম। পাহাড়ে একবার দেখেই ক্রাশ খাইছিলাম । একটু আগেও জানতামনা যে এতো ভালো ভাগ্য আমার । আব্বুকে না করে দিয়ে তো কান্না ‌শুরু করছি তাই বাধ্য হয়ে এখনো ক্রাশ কে দেখে খুশি হয়েও কাদতে হচ্ছে আমাকে। এখন হাসলে তো সবাই সন্দেহ করবে । পরে যদি বিয়ে টা না দেয় তখন তো আর আমার ক্রাশকে পাওয়া হবে না আর ।
–তাই বলে বিয়ে বাড়িতে মরা বাড়ির মতো কাদবি ?
এইভাবে কেউ কাদে?
–কেনো দোস্ত ভালো দেখাচ্ছেনা আমাকে কেদে ? কিভাবে কাদবো একটু দেখিয়ে দে না ..তুই কত স্টাইল করে কাদিস কত্তো চুইট লাগে ।
দৌড়ে আয়নার সামনে দাড়ায় ।
–দোস্ত আমি একেকটা স্টাইল করে কাদবো তুই বলবি কোনটাতে আমাকে চুইট লাগে ।
তানভীর হা করে এদের কান্নার ট্রায়াল দেখতে থাকে। একটা প্রশ্নের উত্তর কিছুতেই মেলাতে পারে না । এদের তৈরী করার সময় টা এক ছিলো নাকি লাবিবার সাথে মিশে এরা এমন হয়েছে ?
সন্ধ্যা হওয়ার সাথে সাথে পুরো বাড়িতে লাইট জলে উঠে । লাল নীল লাইট দেখে লাবিবা নুপুর ওখানেই লাফ দিতে থাকে বাচ্চাদের মতো। তানভীর ধমক দিয়ে লাফানো বন্ধ করে। নুপুর গাল ফুলিয়ে বলে –দোস্ত চল নতুন দুলাভাই দেখে আসি । বলা মাত্রই বরের কাছে দৌড় । সেখানে গিয়ে দেখে বরের শালীরা বরকে খাওয়াচ্ছে আর বরের বন্ধুরা বেয়াইনদের নিয়ে মজা করছে । লাবিবা রেগে নুপুরকে বলে
–এখানে দুলাভাইয়ের আসল শালিকা কে ?
–আমরা ।
–তাহলে ওরা কে ?
–নকল শালিকা ।
–নকল আউট হয়ে আসল ইন হপ্পে এবার ফলো মি ।
হাটতে নিতেই নুপুর ইটে উষ্টা খেয়ে সামনের দিকে পড়ে যেতে নেয় ওমনি একটা ছেলে ধরে ফেলে । লাবিবা পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখে হুয়াট এ রোমান্টিক দৃশ্য? নায়িকা পড়ে যেতে নিলে নায়ক ধরে ফেলে । নায়কের হাতের উপর নায়িকার পিঠ । নায়িকার চোখের দিকে নায়কের চোখ । নায়কের শার্টের কলারের এক অংশ নায়িকার হাতের মুঠোয় । নায়ক নায়িকা দুজনেই কিছুক্ষনের জন্য এডাম স্মিথের স্ট্রেচু হয়ে গিয়েছে । জানালা দিয়ে এই দৃশ্য দেখে কনে তারাহুরো করে বেড়িয়ে আসে । নুপুরকে একটানে সরিয়ে দিয়ে বলে
— ভাইয়া আপনি তো ভারি বজ্জাত লোক । মাইনষের বউয়ের হাত ধরেন ।
লাবিবা দৌড়ে এসে বলে
–আরে ভাইয়া আপনি যে । কি সমস্যা বলেন তো ..ধরতেই পারেন । নিজের জিনিস নিজেই তো ধরবেন । এই শারমিনটা বেশি কথা বলে । নুপুরের সব মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। লাবিবার দিকে কাদো কাদো ফেইস করে বলে
–জানু তুই কি আমাকে বেচে দিচ্ছিস নাকি ? ঐ লোকটার জিনিস হয়ে যাবো আমি । তাহলে আমার মুইনের কি হপ্পে ? । এই কাথা শুনে মুইন হাসতে হাসতে অবস্হা খারাপ । নুপুর কে চোখ টিপ দিয়ে বলে
–তোমার জানু তোমাকে বেচেই দিয়েছে আমার কাছে । এবার থেকে তুমি আমারি জিনিস । মুইন কে ভুলে টুইনের মম হওয়ার কথা ভাবো ।
–একি এতো সরাসরি টুইনে চলে গেলো শাদী করার আগে । এত্তো ফাস্ট!!
তানভীর লাবিবাকে খুজতে গিয়ে কনেকে নিয়েই স্টেজে বসিয়ে দেয় বরের পাশে । নতুন দুইটা ভাইরা ভাই পেয়ে জমপেশ আলাপ শুরু করে দেয় । এদিকে কনে আর লাবিবা চকলেট খেতে খেতে গল্প শুরু করে দিয়েছে । নুপুর হা করে তিন ভাইরার গল্প শুনছে । গল্পের কাস্ট নুপুর আর মুইন । মুইন আর নুপুরের চোখাচোখি হওয়াতে নুপুর বার বার চোখ নামিয়ে নিচ্ছে । বুকের ভেতর এক দমকা হাওয়া বয়ে চলেছে । মুইন তার সপ্নের পুরুষ । দীর্ঘ সাত বছর পর পলকজড়ানো দেখা । অনুভুতিরা সব জড়ো হয়ে আসছে । সেও লাবিবাদের দিকে মনকে ফোকাস করে । কাজি এসে বিয়ে পড়িয়ে দেয় । বিয়ে পড়ানো পর্যন্ত চুপ ছিলো শারমিন । কিন্তু বিদায়ের সময় খেয়াল করে তার গলায় সমস্যা হচ্ছে । লাবিবা হাত ধরে বলে –দোস্ত দেখতো আমার ভয়েজের এসপার ওসপার হয়েছে নাকি ?
— একটু একটু ।
–হায় হায় । বাসর রাতে যদি ভাঙা গলার আওয়াজ শুনে ক্রাস বলে এইটা কাকে বিয়ে করলাম..দেখতে সুন্দর কিন্তু ভয়েজ বেখাপ্পা । তখন কি হপ্পে?
–এখন আর কাদিস না। এক কাজ কর হাত দিয়ে চোখ ধর আর বার বার নাক টান তাহলেই ভাববে বৈ কাদতেছে ।
শারমিন তাই করলো । কনে বিদায়ের পর লাবিবাকে নিয়ে চলে আসবে তখন দেখে একটা বাইকের সামনে মুইন আর নুপুর দাড়িয়ে । তানভীর মুচকি হেসে ডাক ছেড়ে বলে
–শালিকা…পেছনে বসার অভ্যাস করে নাও । আমরা চললাম । বাসায় ফিরে দুষ্টু পুতুলকে জানিও।
বাসায় লাবিবার জন্য বই পাঠিয়ে দিয়েছে তানভীর । দেখতে দেখতে পরিক্ষার সময় চলে আসে । প্রথম পরিক্ষার সময় সবাই একঘন্টা আগেই কেন্দ্রে চলে আসে । সিট খুজতে খুজতে অনেক সময় পার হয়ে যায় । টিচাররাও চলে এসেছে । লাবিবার সিট নাম্বার খুজে বের করে তানভীর । আগেই বলে দিয়েছিল কেন্দ্রে এসেই যেনো অফিস রুমে আসে তানভীরের সাথে দেখা করার জন্য । পরিক্ষার আর আধাঘন্টা আছে তাও লাবিবার দেখা মেলেনি । লাবিবা নয় একটু খামখেয়ালি তাই বলে শারমিন ও কি খামখেয়ালি হবে ! অপেক্ষা করতে করতে বেড়িয়ে যায় গাড়ি নিয়ে । এদিকে শারমিন লাবিবা অটো থেকে নেমে যায় দেড়ি হচ্ছে দেখে। রাস্তায় একপাশে সব গাড়ি দাড়িয়ে অপর পাশ থেকে এদিকে আসছিলো গাড়ি । দেড়ি দেখে নেমে হাটতে থাকে । পাচ মিনিট হাটলেই পৌছে যাবে । ফুটপাতে ভিড়ে একজন লাবিবা জুতোয় পা রাখে । লাবিবা পা তুলতে নিলে জুতোর ফিতা ছিড়ে যায় । জুতোর ফিতা যেনো নয় কলিজা ছিড়ে গেছে । জুতোর দিক তাকিয়েই এক চিৎকার শুরু করে আমার ভালুপাসার জুতা পরানের জুতা বলে । শারমিন পিঠ বুলিয়ে শান্তনা দেওয়ার চেষ্টা করছে কিন্তু লাবিবার চিৎকার থামার নাম নেই । আশে পাশের লোক গুলো ফেল ফেল করে তাকিয়ে আছে ।
–দোস্ত আমার ভালুপাসার জুতা । দুই মাস হয়েছে কিনেছি । আমার তিন হাজার টাকাই জলে গেলো । এবার আমি জুতো ছাড়া হাটবো কি করে ? আমি পরিক্ষা দিবো কি করে ? আমার কি হপ্পে ?
তানভীর রাস্তায় লাবিবাকে এভাবে দাড়িয়ে থাকতে দেখে জানালার গ্লাস নামিয়ে বলে
–শারমিন কি হয়েছে? দুষ্টু পুতুল কাদছে কেনো ?
— জুতো ছিড়ে গিয়েছে তাই আর যেতে পারবেনা পরিক্ষা দিতে ।
তানভীর পায়ের দিক তাকিয়ে বলে
— দুই মিনিট দাড়াও এখানে । আসছি আমি ।
একজোড়া জুতো এনে পায়ে পড়িয়ে দিয়ে বলে –তারাতাড়ি গাড়িতে উঠো । আর পাচ মিনিট টাইম আছে । এতোক্ষনে জ্যাম ও ছেড়ে গেছে ।
পরিক্ষার হলে ডুকিয়ে দিয়ে বের হতে নিয়ে আবারো লাবিবার দিকে ফিরে আসে । বেঞ্চিতে হাত রেখে বলে –এখন তুমি শুধু একজন সাধারন ছাত্রী নও। এখন তুমি ভার্সিটির প্রিন্সিপালের ওয়াইফ। পরিক্ষা দেওয়ার আগে একবার আমাকে স্মরন করে তারপর শুরু করবে । আমার মান সম্মান তোমার রেজাল্টের উপর নির্ভর করছে । অল দ্যা বেস্ট।
পরের পরিক্ষা গুলো নিয়ে লাবিবা খুব ই সিরিয়াস হয়ে পড়ে । মাথায় তানভীরের কথাটি বার বার ঘুরপাক খায় । তানভীর ও খেয়াল করে লাবিবার চেহারার যৌনুস কমে যাচ্ছে । আগে কোন পরিক্ষার সময় এমন চেহারাতো হয়নি । চোখের নিচে কালো দাগ পড়ে গেছে । পরিক্ষা শেষে দাড়াতে বলে লাবিবাকে । লাবিবা ক্যাম্পাসে বসে তানভীরের জন্য ওয়েট করে । শারমিনকে নাজমুল এসে নিয়ে গিয়েছে । কিছুক্ষন পর তানভীর এসে দেখে লাবিবা দুর্বা ঘাসের উপর বসে দুর্বা ফুল তুলছে । ক্যাম্পাস ফাকা দেখে তানভীর ও সামনে গিয়ে বসে । তানভীরের দিকে চুপচাপ তাকায় লাবিবা । তানভীর থুতনি তুলে বলে –দেখি দেখি আমার পুতুল বউটাকে । চেহারার কি অবস্থা করেছে দেখেছো । গাল দুটো শুষ্ক হয়ে আছে । ঠোটের চামড়া উঠে আছে । আই ডার্ক হয়ে গেছে । এই চেহারায় কেউ বিয়ে করবে নাকি ? আমি তো করবোনা ।
–তাহলে আমার থুতনি ছাড়ুন আর দুরে গিয়ে বসুন ।
এমন কথায় মুচকি হাসে তানভীর । এই সময় মেজাজ একটু কড়া থাকবেই ।
–ঐটা কথার কথা বললাম । তুমি যেমনি হওনা কেন আমি তোমাকেই বিয়ে করবো ।
হাত ধরে উঠায় লাবিবাকে । গাড়িতে এনে বসিয়ে একটা রেস্টুরেন্টে এনে বসায় । খাবার অর্ডার করে । লাবিবার হাত দুটো নিজের হাতের মুঠিতে নেয় । চোখে চোখ রেখে বলে
–সকালে খেয়ে আসোনি কেনো ? তুমি এমনিতেই গুড স্টুডেন্ট। এতোটা সিরিয়াস হতে বলিনি আমি । একটু ফোকাস করলেই সবার থেকে ভালো রেজাল্ট করতে পারবে । সেকেন্ড ইয়ারের ইমপ্রুভ দেওয়ার পেছনে যে আমিই দায়ী সেটা অজানা নয় আমার । আর মাত্র দুইটা পরিক্ষা । তুমি কি জানো পরিক্ষা শেষ হওয়ার পর পর ই তুমার বিয়ে হবে ….কনের যদি এই চেহারা থাকে তাহলে কেমন হপ্পে বলোতো ? শারমিনের বিয়ের দিনো কতো সুন্দর লাগছিলো আর তোমার বিয়ের দিন যদি পচা দেখায় কেমন হবে তাহলে ?
–আপনি তো বলেছিলেন বিয়ে এক বছর পর হবে তাহলে এখনি কেনো ?
–যাতে তোমার সপ্ন গুলো খুব তাড়াতাড়ি পূরন করতে পারি । আর আমার পুতুল বউটাকেও আমার করে পাই।

To be continue______

®লাবিবা______?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here